আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩ (২)

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩ (২)
প্রীতি আক্তার পিহু

রাতের অন্ধকার আরও ঘন হয়ে চারপাশকে আচ্ছাদিত করেছে। দূরের আকাশের কালো মেঘ ছিঁড়ে আসা সমুদ্রের গর্জন রাতের নীরবতাকে বিধ্বস্ত করে কাঁপিয়ে তুলছে। জানালার পাশে দাঁড়ানো আনায়ার চুল বাতাসের প্রবল তীব্রতায় উড়ছে। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ঘন জঙ্গলের অন্তর্গহ্বরে। হঠাৎ আনায়া তার কোমরে শীতল স্পর্শ অনুভব করে শিহরিত হয়। অতঃপর গভীর পরিচিত পুরুষের কম্পমান কণ্ঠ তার কানে প্রতিধ্বনিত হয়,

“সুইটি।”
আনায়া আবেশে চোখ বন্ধ করে নরমস্বরে প্রতিউত্তর বলে,
“হুম…”
সঙ্গে সঙ্গে ইউভান স্পর্শ আরও নিবিড় করে আনায়ার কোমর দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে। মুখটি আনায়ার ঘাড়ের কাছে নামিয়ে উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে সে জিজ্ঞেস করল,
“একলা একলা কী ভাবছিস?”
“তেমন কিছু না! কিন্তু আমরা বাসায় ফিরব কখন?”
আনায়ার জবাব ইউভানের পছন্দসই হয় না;তার মুখমণ্ডল কিছুটা কঠোর হয়ে উঠে। তবু সে নিজেকে সংযত করে মুখ খুলল,
“এত তাড়া কিসের? আমার সঙ্গে থাকতে ভালো লাগছে না তোর?”
আনায়া চমকে পিছনে ফিরে ইউভানের দিকে তাকায়। সে উপলব্ধি করে ইউভান তার কথার অর্থ ভিন্নভাবে নিয়েছে, তাই সে পুনরায় শান্ত কণ্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি ভুল বুঝছেন। আমি সেটা বলতে চাইনি, ইউভান ভাই।”
ইউভান আচমকা আনায়ার বাহুদ্বয় দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে, তার নিকটে টেনে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফিসফিস করে বলল,
“তোর মুখে ভাই ভাই ডাক শুনে যে, আমার হৃদয় ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে, তা কী জানিস তুই?”
আনায়া নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবে; সে নিজেও তো চায় না ইউভানকে ভাই বলে ডাকতে, তবু সম্পর্ক রক্ষার্থে বলে। ভালোবাসার মানুষকে ভাই ডাকতে গিয়ে তার বুক ফেটে যায়।সে মুখ উঁচিয়ে উন্মুখ কণ্ঠে জানতে চাইল,
“তাহলে কি নামে ডাকবো আপনাকে?”
ইউভান বাঁকা হাসি টেনে সামান্য ঝুঁকে মাদকের মতো স্বরে বলল,
“কল মি ড্যাডি, সুইটি!”

ইউভানের এহেন উক্তিতে আনায়া ভীষণভাবে কেঁপে উঠে। নামটির অর্থ সে আগেই জানে তাই লজ্জার প্রভাবে তার গাল রক্তিমময় হয়ে উঠে। চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে সে অজান্তেই ফিসফিস করল,
“নাউজুবিল্লাহ।”
কিন্তু কথাটি ইউভানের কানে পৌঁছায়নি। আনায়ার লজ্জা দেখে ইউভান ঠোঁটে তীর্যক হাসি ফেলে পুনরায় মুখ খুলল,
“ওয়াট হ্যাপেন, সুইটি? তুই লজ্জায় গোলাপী হয়ে যাচ্ছিস কেন?”
আনায়া লজ্জা সামলে আড় চোখে তাকিয়ে, ক্ষিপ্ত কণ্ঠে উত্তরে বলল,
“আপনি কিন্তু দিন দিন ভীষণ নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন।”
ইউভান আনায়ার দৃষ্টির সঙ্গে নিজের দৃষ্টি মিলিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,
“জাস্ট ফর ইউ, ডার্লিং।”

আনায়ার চোখ-মুখে হতাশার আভা ফুটে ওঠে অর্থাৎ সে বুঝে ইউভান শুধরাবার নয়।তখনই ইউভান অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আনায়ার সামনে হাত বাড়িয়ে দৃঢ়ভাবে বলে,
“ক্যান আই ডান্স উইথ ইউ?”
আনায়া কিছুক্ষণ ইউভানের নীল সমুদ্রসদৃশ চোখের দিকে স্থিরভাবে চেয়ে রইল। অতঃপর সে তার হাত ইউভানের হাতে রেখে ক্ষুদ্র কণ্ঠে উত্তর দেয়,
“ইয়েস, ইউ ক্যান।”

এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে ইউভান তার হাত দৃঢ়ভাবে ধরে আনায়াকে নিবিড়ভাবে নিজের দেহের নিকটে টেনে আনে। অবচেতনে আনায়ার মুখ ইউভানের প্রশস্ত বুকে স্পর্শ করে। বাতাসে ভেসে আসা শুকনো ফুলের অদ্ভুত সুগন্ধে আনায়ার অন্তঃকর্ণ শিহরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ইউভান গান চালু করে তার কোমর দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে আরও ঘনিষ্ঠভাবে টেনে নেয়। আনায়াও নিজের কোমল হাত তার কাঁধে রেখে ইউভানের সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে।সেই মুহূর্তে পাশ থেকে কোরিয়ান পপ আইডল জিওন জাংকুক এর ‘সেভেন ডেই’ গানের কয়েকটি লাইন ভেসে আসে,

❝Weight of the world on your shoulders
I’ll kiss your waist and ease your mind
I must be favored to know ya
I’ll take my hands and trace your lines
গান শুনতে পেয়েই আনায়া মুহূর্তকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। গানের সব অন্তরঙ্গ বাক্যাগুলি শুনে তার বক্ষগহ্বরের ধুকপুকানি কয়েকগুণ তীব্র হয়ে উঠে। ইউভান যে আজ তাকে লজ্জায় জর্জরিত করে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, তা সে সুস্পষ্টভাবেই বুঝেছে। আনায়ার এমন অস্থির অবস্থা লক্ষ্য করে ইউভান ঠোঁটের প্রান্তে মৃদু হাসি এঁকে কণ্ঠস্বর আরও গাঢ় করে জিজ্ঞাসা করে,

“কী হলো? গানটা পছন্দ হলো না নাকি?”
আনায়া সংকোচ ও অস্বস্তিতে দৃষ্টি অন্যত্র স্থির রেখেই ইউভানকে লক্ষ্য করে বলল,
“একটু বেশি ডিপ হয়ে গেল না?”
ইউভান নিঃশব্দে হেসে তার আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে আনায়ার ললাট স্পর্শ করে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনে কণ্ঠদেশ পর্যন্ত। সঙ্গে সঙ্গেই ইউভানের গুমোট স্বর ভেসে এলো,
“তুই চাইলে আমি এর থেকেও ডিপ কিছু করতে পারি।”
এমন সাংঘাতিক কথায় আনায়া বাকরুদ্ধ হয়ে, পরনের এক হাতে মুঠো করে ধরে নিজেকে সংবরণ করে। ইউভান এবার তাকে পেছনে ঘুরিয়ে মুখ গুঁজে তার উন্মুক্ত চুলের মাঝে এবং নাক দিয়ে চুলে দীর্ঘ সুবাস টেনে নেয়। ঠিক সেই মুহূর্তেই আবারও ভেসে এলো গানের সুর,

It’s the way that you can ride
It’s the way that you can ride (oh-oh, oh-oh)
Think I met you in another life
So break me off another time (oh-oh, oh-oh)
You wrap around me and you give me life
And that’s why night after night
I’ll be loving you right
গানের সুরের সাথে সাথে ইউভানের স্পর্শ আরও বেসামাল হয়ে উঠছে।সেই প্রতিটি স্পর্শের মায়াবন্ধনে আনায়া অজান্তেই আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে ইউভান নীচু কণ্ঠে উচ্চারণ করল,

“কিছু অনুভব করতে পারছিস সুইটি?”
“হুম,আপনার প্রতিটি হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছি আমি।”
আনায়ার জবাবে ইউভান শীতল হাসি হেসে তার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“যা কেবল তোর জন্যই ধুকপুক করে।”
মুহূর্তেই আনায়ার শরীরজুড়ে বিদ্যুত ছড়িয়ে পড়ে। ইউভান এবার তাকে কোলে তুলে নিয়ে আবর্তিত করল। মৃদুমন্দ হেসে আনায়া চোখ তুলে তাকায়, আর ইউভানের চোখে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে তার হৃদপিণ্ড আরও জোরে ধকধক করে। সেই মুহূর্তে গানের অন্তিম সুর তাদের কসনে প্রতিধ্বনিত হয়,

Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday
Saturday, Sunday (a week)
Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday
Seven days a week
Every hour, every minute, every second
You know night after night
I’ll be loving you right, seven days a week❞

ইউভানের নির্বাক প্রেমে আনায়া বিমোহিত হয়ে আবেগের প্লাবনে ভাসছে। কিন্তু ইউভানের অব্যক্ত ভালোবাসার আড়ালে নিহিত ভয়ংকর সত্য কতদিনই বা গোপন থাকবে? ইউভানের সেই বিভীষিকাময় ভালোবাসার মুখোমুখি আনায়া যেদিন হবে, সেদিন হয়তো প্রলয় নামবে। ঠিক তখনই আকাশের কালো মেঘ বিদীর্ণ করে গর্জনের সাথে ঝরঝরে বৃষ্টি মাটিতে আছড়ে পড়ে। আনায়া তড়িঘড়ি বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
“এবার আমরা বাসায় ফিরব কীভাবে?”
ইউভান আনায়াকে আস্তে কোলে থেকে নামিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,
“বাসায় ফেরার দরকার নেই?”
“কী বলছেন?আমার ফিরতেই হবে।”

ইউভান শীতল দৃষ্টিতে আনায়ার দিকে তাকিয়ে আবেগপূর্ণ কণ্ঠে শুধালো,
“যাওয়া কী খুব দরকার সুইটি?এই ঝুম বৃষ্টির রাতে তুই থেকে যা আমার নীরব আকাশ জুড়ে,আমি আদরের চাদরে মুড়িয়ে নিবো তোকে শত বর্ষার ফোঁটার ভিড়ে।”
ইউভানের এই ভয়াল প্রস্তাবে আনায়ার রূহ কেঁপে ওঠে।ইউভানের ‘তুমি’ সম্বোধন করায় তার হৃদয় আবারও ঝড় বয়ে যায়।আনায়ার মনে হচ্ছে তাদের এই সম্পর্ক বহু পূর্বের।কতটা মায়া,আবেগী আর আপন!অস্থির আনায়া অবশেষে মুখ খুলে বলল,
“আজকের আপনিটা ভীষণ অপরিচিত লাগছে আমার কাছে ইউভান ভাই।এর কারণ কী?”
“কারণ আজকে দিনে তোমায় আমি বন্দী করেছিলাম।”
“কোথায়”

ইউভান আনায়ার প্রশ্নমুখর মুখশ্রীতে কিছুক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে রহস্যময় হাসি ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“আমার #আত্মার_অন্তরালের মাঝে।”
আনায়া ইউভানের রহস্যময় কথার অর্থ আগের ন্যয় বুঝে না।তবে সে আর প্রশ্ন করেনা কারণ সে জানে ইউভান তার প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে দিবে না।তার মনে উদ্ভূত শতশত প্রশ্ন মিলিয়ে যা বাইরের বর্ষণের গর্জনে। তারা দু’জন নিস্তব্ধতায় নিমগ্ন হয়ে একে অপরের চোখের গভীরতায় ডুবে রইল।
সেই মুষলধারে বর্ষণের মাঝে, ঘন অন্ধকারে গাছ-পালার আড়াল থেকে এক জোড়া হিংস্র চোখ দীর্ঘক্ষণ ধরে নিবদ্ধ ইউভান ও আনায়ার উপর। ব্যক্তি কাঁচের জানালার ওপারে দাঁড়িয়ে কামুক দৃষ্টিতে আনায়াকে লক্ষ্য করে হিসহিস স্বরে উচ্চারণ করল,

“বেবিডল।”
সে আর কেউ নয়, বরং নেক। ইউভান ও আনায়াকে পাশাপাশি দেখে সে ক্রোধান্বিত হয়ে পুনরায় বলল,
“আজ তুমি ইউভানের হলেও অতি শীঘ্রই তুমি নেকের শয্যায় থাকবে।”
এ কথা বলে নেক হঠাৎ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে। তার হাসির আওয়াজে নিকটস্থ বাদুড়েরা আতঙ্কিত হয়ে উড়ে যাশ। পরক্ষণেই সে হাসি থামিয়ে হিংস্র কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
“তারপর তোমার ওই কোমল দেহখণ্ডের উপর আমি রাজত্ব করব।তুমি যন্ত্রণায় ছটফট করবে আর আমি তা দেখে তৃপ্তি পাব।”
নেক রুষ্ট দৃষ্টিতে ইউভানের দিকে তাকাল। আজ একমাত্র ইউভানের কারণেই সে আনায়াকে হাতে পায় না। কিন্তু কতদিনই বা? সিংহের গুহা থেকে নেকড়ে একদিন শিকার ছিনিয়ে আনবেই। নেক ক্রোধ সামলাতে না পেরে বৃক্ষের বাকল হাত দিয়ে ভেঙে পেছন ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। হঠাৎ সে থেমে তাদের দিকে তাকিয়ে ঘাড় কাত করে কটমট স্বরে বলে উঠে,
“নেক আাবারও আসবে।”

অতীত,সুইজারল্যান্ড।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ছোট্ট এক ঘরে হাঁটু মুড়ে বসে আছে আলিসা। আজ ক্যাসিনো তাকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে। শরীর কিছুটা বিশ্রাম পেলেও তার বুক ভরা কষ্ট একটুও কমছে না। আ্যশারকে হারানোর যন্ত্রণা তার ভেতরটা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। আলিসা কান্নায় ভেঙে পড়ে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি ছিলে আমার একাকী জীবনের একমাত্র সুখ বাবা। অথচ আজ তুমি নেই বলে আমি ভালো নেই। শুনতে পাচ্ছ কি আ্যশার? তোমার রোজ মা একদম ভালো নেই।”

এই কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আলিসা। কান্নার ভেতর দিয়ে বুকের সমস্ত যন্ত্রণা বেরিয়ে আসে তার। আ্যশার আর নেই এটা তার মন কোনোভাবেই মানতে চাইছে না। আবার ডুকরে উঠে ভাঙা গলায় বলল,
“ফিরে এসো আ্যশার, তোমার রোজ মায়ের কাছে। তোমার শূন্যতা আমি কি দিয়ে পূর্ণ করব? ফিরে এসো!”
এ কথা বলতে বলতেই আলিসা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে তার মায়ের শেষ স্মৃতির চিহ্ন গলার লকেটটা। চোখ আরও ভিজে উঠল। অভিযোগভরা কণ্ঠে বলল সে,
“মা, দেখো তোমার মতো সবাই আমায় ছেড়ে চলে গেল। আমাকে কেউ ভালোবাসে না মা। সবাই শুধু হারিয়ে যায় আমার জীবন থেকে।”

বলে শ্বাস রুদ্ধ কণ্ঠে লকেটটিতে আলতো চুমু দেয় আলিসা। ঠিক তখনই ঘরের আলো জ্বলে উঠে। আলিসা মুখ তুলে দেখে, খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাসিনো। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সে আলিসার পাশে বসে নরম কণ্ঠে বলল,
“নিজেকে সামলাও রোজ।”
আলিসা বুক ভরা কষ্টে ফেটে বলল,
“আমি কীভাবে নিজেকে সামলাই ক্যাসিনো? ওর শেষ চিহ্নটুকুও আমার কাছে নেই।”
ক্যাসিনো কোনো কথা না বলে আলিসাকে এক হাতে জড়িয়ে নরম স্বরে বলল,
“তুমি যদি নিজেকে কষ্ট দাও, আ্যশারও কষ্ট পাবে রোজ। তুমি কি চাও, আ্যশার কষ্ট পাক?”
আলিসা মাথা নাড়ায়। ক্যাসিনো মৃদু স্বরে খাবার তার মুখের কাছে ধরে বলল,
“তাহলে খেয়ে নাও।”
“আমি খাব না।”

“তুমি না খেলে আ্যশার কি ফিরে আসবে রোজ?”
এই প্রশ্ন শুনে আলিসা মুহূর্তে ক্যাসিনোকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল,
“আমার মন কিছুতেই মানতে পারছে না ক্যাসিনো।”
ক্যাসিনো আলতো হাতে তাকে আঁকড়ে ধরে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বলল,
“এটাই কঠিন সত্য রোজ, আ্যশার আর কখনো ফিরবে না।”
আলিসা ক্যাসিনোর প্রশস্ত বুকে ভর করে সমস্ত দুঃখ উজাড় করে দেয়। বুক ভরা বেদনা নিয়ে আর্তনাদ করে উঠে,
“আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? আমার কেউ নেই। কেউ না! কেউ না!”
এ কথা শুনে ক্যাসিনোর বুকটা হালকা ব্যথায় কেঁপে উঠে। অজান্তেই আলিসার মাথায় চুমু খেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“কেন? আমায় নিয়েই বাঁচবে রোজ। আমি আছি তো তোমার পাশে। আমি-ই যথেষ্ট তোমার জন্য, আর কাউকে তোমার প্রয়োজন নেই।”

এ কথা বেরিয়ে আসতেই থমকে যায় ক্যাসিনো। সে কী বলল! আলিসার দুঃখ বা সুখে তার কী আসা-যাওয়া? তখনই টের পেল সে আলিসা আর কোনো কথা বলছে না। অর্থাৎ, আবার জ্ঞান হারিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্যাসিনো আলিসাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে আলো নিভিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।

ক্যাসিনো সোজাসুজি গুপ্তদ্বার অতিক্রম করে তার বৈজ্ঞানিক ল্যাবরেটরিতে আসে ;যেখানে আ্যশার আছে। অন্তঃপ্রবেশ করেই সে লক্ষ্য করে একপাশে কুণ্ঠিত ভঙ্গিতে শুয়ে আছে আ্যশার, আর অপর প্রান্তে কাঁচের পাত্রে আবদ্ধ থমাস। বিস্ময়ের বিষয়! একই ছাদের নীচে আলিসা ও আ্যশার রয়েছে, অথচ মা–ছেলে কেউই একে অপরকে দেখতে কিংবা স্পর্শ করতে পারছে না। ক্যাসিনো ত্বরিত পদক্ষেপে এগিয়ে এসে আ্যশারের মুখে জল ছিটিয়ে দেয়, ফলে আ্যশার চমকে উঠে সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে চারপাশে তাকায়। ছেলেটির মুখমণ্ডল রঙ হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ক্যাসিনোকে দেখে ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে যায় সে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাসিনো হাঁটু গেড়ে বসে ভয়াল স্বরে উচ্চারণ করে,

“কেমন লাগছে এখানে থাকতে?”
আ্যশার আতঙ্কাকুল নয়নে ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে বলল,
“আমায় রোজ মায়ের কাছে নিয়ে যেও।”
আ্যশারের মুখে আলিসার নাম উচ্চারিত হতেই ক্যাসিনোর চেহারায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে। ক্রোধে ফেটে পড়ে সে আ্যশারের গালে এক চড় মারে চড় খেয়ে আ্যশার ছিটকে দূরে পড়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে। ক্যাসিনো দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে গর্জে উঠল,
“ক্যাথরিন এক্সপেরিমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু করো।”
মুহূর্তান্তরে দুইজন গার্ড ছুটে এসে আ্যশারের হাত–পা শক্ত করে চেপে ধরে। তখনই ছটফট করতে থাকা আ্যশারের চিৎকারের আওয়াজ শোনা যায়, ,
“রোজ মা! মা আমাকে বাঁচাও!”
ক্যাসিনো চিৎকার করে ক্যাথরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ক্যাথরিন, তার মুখ বন্ধ করো!”

তড়িৎবেগে ক্যাথরিন এগিয়ে এসে একটি ইনজেকশন আ্যশারের হাতে পুশ করে আর মুহূর্তেই সে অচৈতন্য হয়ে যায়। নিস্তেজ আ্যশারকে এবার ধাতব টেবিলে শুইয়ে তার হাত-পা বিশেষ রিস্ট্রেইন সিস্টেমে আটকে দেয় ক্যাথরিন।মাথায় লাগানো হয় ইলেক্ট্রোড ক্যাপ, যাতে মস্তিষ্কের প্রতিটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মনিটরে ধরা পড়ে।ক্যাসিনোর হাতে সূক্ষ্ম স্টিলের সিরিঞ্জ ধরা, এর মধ্যে থাকা ভেক্টরের মাধ্যমে সে আ্যশারের শরীরে তার তৈরি ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দেখতে চাই এর কার্যকারিতা।অর্থাৎ তার তৈরি করা ভাইরাস মানবদেহে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে এটাই ক্যাসিনো আ্যশারের শরীরের উপর এক্সপেরিমেন্ট করবে।এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সে প্রথম ডোজ আ্যশারের শরীরে সিরিঞ্জ দ্বারা প্রবেশ করায়।
প্রায় কিছুক্ষণবাদ ক্যাসিনো মনিটর স্ক্রিনে খেয়াল করে আ্যশারের মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে প্রতিটি সিগন্যালের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে।ফলে আ্যশারের হৃদস্পন্দন অনিয়মিত, রক্তচাপ ওঠানামা করছে।তখনই ক্যাসিনো উচ্ছ্বাসে বলে উঠল,

“ওহ্ মাই গড!”
ক্যাসিনোর ঠোঁটে কুৎসিত হাসি দেখে ক্যাথরিন বুলি ছুঁড়ে দিল,
“স্যার আমার মনে হচ্ছে তিনটি ডোজ কমপ্লিট করার পর ছেলেটির মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যাবে।”
ক্যাসিনো ঠোঁটের হাসি আরও প্রশস্ত করে বলল,
“আদৌ সেটি সম্ভব নাকি তা দেখার জন্য তো এক্সপেরিমেন্ট করা ক্যাথরিন।আর হে নেক্সট ডোজ কাল রেডি থাকে যেন।”
ক্যাথরিন মাথা নারায়।ক্যাসিনো প্রস্থান করার আগে আদেশ দেশ,
“আমার থমাসকে খাবার দাও।আর আ্যশারের জ্ঞান ফিরলে তাকে থমাসের খাওয়া অবশিষ্ট পচা মৃতদেহংশ খাবার হিসেবে দিবে।”

এই নির্দেশ উচ্চারণ করেই ক্যাসিনো ঝড়ের মতো সেখান থেকে প্রস্থান করে। ক্যাথরিন স্থবির হয়ে তাকায়। কীভাবে একটি মানুষ আরেকজন মানুষকে পচা মাংস খেতে পারে? চিন্তাতেই তার শরীর শিউরে উঠে! সে আ্যশারের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে, এতো ছোট্ট প্রাণ কেমন করে এত নির্যাতন সহ্য করবে?

বর্তমান,
বহিরের ঝুমঝুম বর্ষণ থামবার নামই নিচ্ছে না।জানালার স্ফটিককাচ বরাবর টুপটাপ জলের স্রোত বইছে ।নিদ্রাহীন আনায়া রুমের অভ্যন্তরে পায়চারি করছে। তার পরনে হাঁটু অব্দি ইউভানের সাদা শার্ট।ওত ভারী জামা পরে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি,তাই ইউভানের শার্ট পরে নিয়েছে।এই অবিরাম বর্ষায় তাকে বাধ্য হয়ে ইউভানের সাথে থাকতে হলো।এত বড় প্রাসাদে সে আর ইউভান কেবল একা।
হঠাৎই বাইরে মেঘ গর্জে উঠায় আনায়া দু’হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঠিক তখনই দরজার স্ফটিক খোলার শব্দে সে ভয়ের মিশ্রিত চাহনিতে তাকিয়ে দেখল মোমবাতি হাতে ইউভান দাড়িয়ে আছে। আনায়াকে দাঁড়ানো দেখে ইউভান ভেতরে প্রবেশ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“এত রাতে না ঘুমিয়ে কী করছিস?”
“আসলে আমার ঘুম আসছে না।”
ইউভান ভেতরে প্রবেশ করে মোমবাতি পাশের টেবিলে রেখে ধীরে জিজ্ঞাসা করল,
“তাহলে কী আসছে, শুনি?”
আনায়া আনমনে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“প্রেম প্রেম আসছে।”
কিন্তু উক্ত শব্দ ইউভানের শ্রবণে পৌঁছতেই সে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ওঠে।পরবর্তীতে ধীর পদক্ষেপে আনায়া নিকটে এসে দাঁড়িয়ে নেশালু স্বরে বলল,
“আমি প্রেম দেখানো শুরু করলে তোকে হসপিটালের ভর্তি করা লাগতে পারে।”
এহেন কথায় আনায়া হকচকিয়ে তাকিয়ে কম্পিত কণ্ঠে আওড়াল,

“ম মানে?”
ইউভান তার কপালে ধরা চুলগুলি কানের পাশে সেঁকে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“মানে অন্য একদিন বোঝাব।আজ নয়!এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।”
বলেই ইউভান পশ্চাদপদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হল।কিন্তু আনায়া তাকে বাধা দিয়ে ডেকে উঠল,
“মিস্টার ক্রিমিনাল শুনুন।”
ইউভানের পা থমকে যায়।কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করে সে আনায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ স্বরে বলল,
“কি বললি?”
“শুনুন বলেছি।”
“না, তার আগে কী নাম ব্যবহার করলি?”
“মিস্টার ক্রিমিনাল কেন পছন্দ হয়নি?”
“হুট করে এমন নামে ডাকার কারণ কি?”

“আপনি তো বললেন ভাই ডাকলে নাকি আপনার হৃদয় ছিদ্র হয়ে যায়।তাই ভাবলাম এই নামেই ডাকব।”
আনায়ার কথায় ইউভান নিঃশব্দে হেসে দৃঢ় গলায় বলল,
“ভেরি ইন্টারেস্টিং নেম।বাই দ্যা ওয়ে কি বলতে চেয়েছিলি তুই?”
আনায়া এক গাল হাসি নিয়ে ইউভানের নিকটে আবদার করে বসল,
“চলুন না একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি।”
ইউভান একনজরে হাতঘড়ির দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে স্থির স্বরে বলল,
“এত রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে।তাই চুপচাপ ঘুমা।গুড নাইট!”

উক্ত শব্দকণ শুনে আনায়ার অন্তর শূন্যতায় ভরে ওঠে।ইউভান একটিবারও তার পানে না তাকিয়ে ঘরের প্রাঙ্গণ ত্যাগ করল।বেচারা আনায়া একা একা ঘরে থেকে কী করবে?রাগ দুঃখ অভিমান কষ্টে সে কটমট কন্ঠে বলল,
“আনরোমান্টিক ব্যাটা!একবার আমার দিকে ফিরেও তাকাল না কী এটিটিউড বাব্বাহ!
এরপর সে আর রুমের একাকিত্ব সহ্য করতে না পেরে সরাসরি প্রাসাদের ছাদে আসল।একাই বৃষ্টির বিলাস করবে সে।ছাদে পৌঁছে চারপাশে নজর দিতেই বুকের ভিতর অদ্ভুত স্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে আনায়ার।পুরনো প্রাচীরের মুখে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু প্রবাহ ধীরে ধীরে নামছে।আনায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ছাদের মাঝ বরাবর দাড়ায়।মুহূর্তের ভেতরই ভিজে যায় তার সমগ্র শরীর, আর সাদা শার্টটি বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে শরীরে লেপ্টে যায়।আনায়া যখন দু’হাত মেলে বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করছিল তখনই পেছন থেকে এক কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,

“আনু।”
আনায়া চমকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখল ইউভান দৃঢ় অভিব্যক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইউভান ছাদের ধারায় দাঁড়িয়ে দূর থেকেই গর্জে উঠল,
“সাহস হলো কীভাবে একা একা ছাদে বৃষ্টিতে ভেজার? ভেতরে আয় বলছি।”
তৎক্ষণ আনায়া দুষ্টু কৌশল আঁটল,সে ইউভানকে তার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে বাধ্য করবে।এই উদ্দেশ্যে সে রাগান্বিতভাবে চিৎকার করল,
“আসব না আমি। আরও ভিজব। যা করার করেন।”
এমন জেদী উত্তর শুনে ইউভান ক্রুদ্ধ হয়ে বৃষ্টির মধ্যে পা রাখে ;আনায়াকে ধরার জন্য।ইউভানকে এগোতে দেখে আনায়া ছাদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে লাগে।পেছন থেকে ইউভান চিৎকার দিয়ে বলল,
“আনু স্টপ!একবার ধরতে পারলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“আগে ধরুন তো তারপর দেখা যাবে।”

অন্ধকার আকাশের অন্তর্গহ ছেদ করে অবিরাম বৃষ্টি প্রবাহিত হচ্ছে।সেই জলরাশির মাঝেই দুজন মানব-মানবী ছুটছে; একজন পালাচ্ছে, আরেকজন তাড়া করছে।হঠাৎ ইউভান আনায়ার হাতে হেচকা টান প্রয়োগ করে তাকে নিজের বুকে টেনে নেয়।পরবর্তীতে সামান্য ক্রুদ্ধ হয়েবলল,
“এখন পালাবি কীভাবে আমার কাছ থেকে?”
আনায়া আর্দ্র নয়নে তার দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়ানোর প্রয়াসে বলল,
“ছাড়ুন বলছি।ছাড়ুন!”
কিন্তু ইউভান ছাড়ার পরিবর্তে বলিষ্ঠ হস্তে তাকে ছাদের প্রাচীরের সংলগ্ন প্রান্তে ঠেসে ধরল।আনায়া ভয়ের মিশ্রিত চাহনিতে তাকায়।ইউভানের চুলে জমে থাকা বর্ষার ফোঁটাগুলি টপটপ করে তার গাল বরাবর পড়ছে।সেই ক্ষণে ইউভান আরও নিকটে এসে ধীরে উচ্চারণ করল,
“ছাড়ার জন্য কখনো ইউভান হাত ধরে না ম্যাডাম।”

আনায়ার নিশ্বাস ক্রমাগত ভারাক্রান্ত হয়ে আসছে।বর্ষার প্রতিটি ফোঁটা তার কোমল ঠোঁট, নাক, মুখমণ্ডল ও শরীর স্পর্শ করছে।এটি পরোক্ষ করে হঠাৎ ইউভানের অন্তর আগুনে জ্বলে ওঠে।তার সুইটিকে কেন বর্ষার জল স্পর্শ করবে?তৎক্ষণাৎ সে আনায়ার বাহু বলিষ্ঠভাবে আঁকড়ে ধরে দাঁত চেপে বলল,
“বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কিভাবে সাহস করল তোর শরীর স্পর্শ করার?”
ইউভানের বলিষ্ঠ হাতেরবন্ধনে ব্যথায় আনায়া সামান্য কুঁকিয়ে ওঠে।অতঃপর বিস্মিত চাহনিতে সে জিজ্ঞাসা করল,
“আপনি সামান্য বৃষ্টির উপরও জেলাস ফিল করছেন?”
ইউভান বাঁকা হেসে আনায়ার মুখের ধারে সামান্য ঝুঁকে বলল,
“হ্যাঁ, তোকে স্পর্শ করা প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটাকে আমি ঘৃণা করি।”
ইউভানের জেলাসির তীব্রতা দেখেই আনায়া অতিসংকোচিতভাবে বিস্মিত হয়।একজন মানুষ কতটা উন্মত্ত হতে পারে যে বর্ষাকেও হিংসার চক্ষু দিয়ে দেখবে! ঠিক তখনই ইউভানের নজর পড়ে আনায়ার ভিজে বস্ত্রের আড়ালে দৃশ্যমান দেহরেখার উপর।মুহূর্তে সে অচেতন হয়ে কানে ঠোঁট ছুঁয়ে নেশাভরা কন্ঠে বলল,

“আই ওয়ানা টাচ ইউ সুইটি।”
মুহূর্তের মধ্যেই শীতল স্রোত আনায়ার শিরা-উপশিরা বয়ে যায়।ইউভানের এলোমেলো স্পর্শে আনায়ার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠে।সে দুই হাত দ্বারা ঠেলে ইউভানকে সরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে কোনো ফলপ্রসূতা হয় না।ইউভান তার এই ছটফটানি লক্ষ্য করে সতর্ক স্বর উচ্চারণ করল,
“ছোটাছুটি করে কোনো লাভ নেই।আজ ছাড়ছি না।”
“ই ইউভান এটা ঠিক না।প্লিজ ছাড়ুন!”
কিন্তু ইউভান ছাড়ার পরিবর্তে আনায়ার শার্টের দুটি বোতাম বিচ্ছিন্ন করে, উন্মুক্ত কণ্ঠনালীর অন্তর্গহে বিনা সংকোচে অধর ছুয়ে দেয়।আনায়া স্থবির হয়ে পাথরের মতো জমে যাওয়ার উপক্রম।ইউভান সেখানে কয়েকটি কোমল চুম্বন দিয়ে উচ্চারণ করল,

“আজ না হয় কিছু বেঠিক হয়ে যাক।”
বলেই সে আনায়ার উন্মুক্ত ত্বকে অসংখ্য চুম্বন এঁকে দেয়।আনায়া স্থবির হয়ে দু’হাত ইউভানের পশ্চাৎমুখে আঁকড়ে ধরল।তার অন্তরে উত্তেজনার তরঙ্গ উচ্ছ্বাসিত হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।ইউভানের স্পর্শে তার নাজেহাল অবস্থা স্পষ্ট।সে ইউভানকে প্রতিহত করার সামর্থ্য হারিয়ে তার অন্তরায়ে নিমজ্জিত হয়।ছাদের আর্দ্র মেঝেতে বসে ইউভান তার ঠোঁটের নিকটে ঝুঁকে নিমিষেই অধর মিশিয়ে দিল।দুজনের এলোমেলো নিশ্বাস পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে একাত্ম রূপ ধারণ করেছে।তীব্র বর্ষার স্পর্শে আনায়ার বক্ষ ঘনভাবে উত্তোলন-পতন করছে।ইউভান এবার স্থির হয়ে আনায়ার অস্থির চাহনির সঙ্গে চক্ষু মিলিয়ে বলল,
“আর ইউ রেডি সুইটি?”

মুহূর্তের মধ্যে আনায়ার মুখশ্রী রক্তিম আভায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠে।ইউভান সেই দৃশ্যে নিঃশব্দে হেসে তার ললাট, নাক, মুখে অসংখ্য চুমু দেয়।সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় আনায়া আরও সংকুচিত হয়ে যায় ইউভানের বাহুদ্বারের মাঝে।সে মুখ উঁচিয়ে আলতোভাবে ইউভানের গ্রীবাদেশে চুম্বন দেয়।আনায়ার নিঃসৃত স্বীকারোক্তি উপলব্ধি করে ইউভান বাঁকা হেসে তার উন্মুক্ত কোমর ও উদরের সমতলে আঙ্গুল স্পর্শ করে পৃষ্ঠতলের শীর্ষ থেকে নীচ অবধি সূক্ষ্ম হাতে প্রবর্তন করে।এরপর ইউভান আবারও বলল,
“তোমায় অনেক ভালোবাসি আমার প্রাণপাখি।”

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৩

বলেই তার সমস্ত ভার আনায়ার শরীরের ওপর দিয়ে অধরে অধর মিশিয়ে দিল।মুহূর্তের মধ্যেই দুজনের উষ্ণ শরীর পরস্পরের আলিঙ্গনে নিমজ্জিত হয়ে মেতে উঠে।ছাদের আর্দ্র মাটিতে আনায়ার ছটফটানো হাত ইউভান আঁকড়ে ধরে।ঝরে পড়া বর্ষার মধ্য দিয়ে কেবল দুই দেহের সংঘাত ও উত্তল নিশ্বাসের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।বর্ষাও তাদের এই আবেশের নীরব সাক্ষী হয়ে রইল।

আত্মার অন্তরালে পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here