ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৪

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৪
মাহিরা ইসলাম মাহী

প্রফেসর জাওয়াদকে কবুল বলতে বলা হয়।
চোখের পলকে তিন কবুল বলে ক্ষান্ত হয় সে।
যেন বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার বড্ড তাড়া তার।একটুকু তর সইছে না।প্রশ্নই উঠে না্ আর অপেক্ষা কিসের? অনেক তো হলো অপেক্ষা।
এবারে এই দীর্ঘ অপেক্ষা’র অবসান ঘটুক।
বেশি লবনে তরকারি তেতো হয়।
কি দরকার তেতো তরকারি ভক্ষণ করার?
তৃপ্তি খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মেয়ের সুখ দেখতে ব্যস্ত।
দেখ সকলে দেখ তার অতিথি পাখির কতগুলো দিনের কান্না’রা আজ এই লগ্নে মূর্ছা গিয়েছে কেমন। ধরা দিয়েছে তা আজ আনন্দ অশ্রু রুপে।

কোনোদিন শাড়ী না পরিহিত মেয়েটা আজ কেমন ভারী শাড়ী পরে পরী সেজে বসে আছে।
ঠিক যেন সে রুপকথার রাজকন্যা।
মেয়েকে চোখ জুড়িয়ে দেখে তৃপ্তি।
দেখ মেয়েটার শাড়ীটা খানিকটা এলো মেলো হয়ে আছে কি?
সে কি একটু ঠিকঠাক করে গুছিয়ে দিয়ে আসবে? চোখের কাজল লেপ্টেছে।নতুন করে নিজ হাতে লাগিয়ে দিয়ে আসবে কি?
সজ্জিত চুল গুচ্ছ এলোমেলো ভঙ্গিতে কানের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, জাওয়াদকে কি একবার বলে দেখবে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ ওগোওওও শুনো জামাই বাবা আমার অদিতি পাখির এলো চুলগুলো গুছিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব নেবে কি তুমি?
তার ঝরা অশ্রুগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব নেবে কি তুমি?
তার এলোমেলো শাড়ীরশশ ভার নেবে কি তুমি?বাবা গোওও যদি নাও তবে বলে দাও।শেষ নিঃশ্বাস টুকু আনন্দে ত্যাগ করি।”
এবারে আসে অদিতির পালা।
জাওয়াদের লিটল বার্ডকে কবুল বলতে বলা হয়।
অদিতি একি সঙ্গে, লজ্জা,মনের মৃদু সংশয়,নতুন জীবনের সূচনার উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে।
বুকে কম্পন বাড়ছে উচ্চমাত্রায়।

রমণীর পাশে বসে জাওয়াদ সবটা টের পাচ্ছে।
তার কি এখন উচিত না দুহাতে মেয়েটাকে আগলে নেওয়া?
কিন্তু সে জাপ্টে ধরার মতন সম্পূর্ণ অধিকার যে এখনো আদায় হলো না। তবে কি করে ধরবে?
মেয়েটা যে বড্ড নিষ্ঠুরতা করছে তার হতে।
অদিতি কবুল বলে না বরং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার নিঃসঙ্গ মায়ের পানে চায় চট করে।
সে চলে গেলে তৃপ্তি মা পুরোপুরি একা হয়ে যাবে।
একা একটি ফ্লাটে তাকে ব্যতীত কি করে থাকবে তৃপ্তি।
সেই তো ছিলো মায়ের একমাত্র বেঁচে থাকার সম্বল।তৃপ্তির দুনিয়ার যতো ধ্যান ঘ্যান সবই তো তার অতিথি পাখিকে নিয়ে।

বাবা গত হয়েছেন কতগুলো বছর হলো।অথচ রুপ, যৌবন,অর্থ সব থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ে করেনি তৃপ্তি।
অদিতি যখন ছোট সময়ে আবদার করতো, বড্ড জেদে বায়না ধরতো,
“ আমাকে বাবা এনে দাও মা। সবার মতো আমারও বাবা চাই।
স্কুলে সবার বাবা আসে আমার বাবা কেন আসে না মা? আমার ওওএকটা বাবা চাই।চাই, চাই,চাই।”
তৃপ্তি’র জবাব ছিলো,
“ এই যে আমিই তো তোমার বাবা এবং মা।নতুন করে বাবার দরকার নেই তো আমাদের ।
যখন বাবার কথা মনে পরবে আমি তোমার বাবা হয়ে যাবো।
আমাদের এই ছোট জীবনে আর কোনো পুরুষের কোনো দরকার নেই যে মা।সব পুরুষ ভালো বাবা ভালো হয় না। যেমন সৎ বাবারা।যেমন ছিল না আমার বাবা।ভালো মানুষ ছিল সে। শুধু ভালো বাবাই হতে পারে নি।শুধু টাকার পিছে ছুটে মেয়ের সুখ দুঃখের কথা ভুলে বসেছিল এই যা।”
অদিতি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,

“ কি করে হবে তুমি আমার বাবা? তুমি তো আমার মা, বাবা হবে কেমন করে?তুমি তো মেয়ে জেন্ডার। হবে না। নাআআআ।”
অদিতি ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করে দিলো।
তৃপ্তি সে কান্না সহ্য হলো না।
সে চট করে ঢুকে গেল ওয়াশরুমে।
তৃপ্তি আসলেই মেয়েকে বাবা হয়ে দেখিয়েছে।
তার দীঘল কালো লম্বা চুলগুলো কালো ক্যাপের আড়ালে লুকিয়েছে।
গায়ে জরিয়েছে আলমিরা’র ভাঁজে ভাঁজে অতি যত্নে রাখা নিখিলের প্যান্ট-শার্ট।
ওয়াশরুম থেকে তৃপ্তি যখন বাবা হয়ে বের হলো।
অদিতি হাতে তালি দিয়ে খিলখিল করে হেসেছে।

“ ইয়েএএএ বাবা পেয়েছি।বাবা পেয়েছি।”
বাবা হয়ে তৃপ্তি মেয়েকে পিঠে চরিয়ে ঘোড়া সেজেছে ।
কাঁধে নিয়ে আইসক্রিম বানিয়েছে।
বাব্বাহ সে আইসক্রিমের যে বড্ড দাম বিক্রি করা তো যাবেই না।
আর আজ সে আইসক্রিম কিনা অন্য কেউ এসে টুক করে দাম না দিয়েই তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কি করে থাকবে তাকে ছাড়া তৃপ্তি মা?

“মাআআ?”
“ জ্বী মা? বলো মা?””
অদওতি অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে।
তৃপ্তি জবাব দেয় সঙ্গে সঙ্গে ।
দুজনের চোখ হতে ঝড়ে বৃষ্টি কণা।
আনন্দ, দুঃখ উভয়ে মিলে মিশে একাকার সেথায়।
অদিতি এক দৌঁড়ে এসে মাকে জরিয়ে ধরে।
আমি যাবো না মা।তোমায় ছেড়ে আমি যাবো না।কিছুতেই না।বিয়ে করবো না আমি।
তৃপ্তি শক্ত হয়ে থাকে।

সে ছেলেমানুষ নয়, তাকে ছেলেমানুষী করলে মানায় না।
মেয়ের পাগলামো তে তার সায় দিলে চলে না।গোটা ভবিষ্যৎ পরে তার অতিথি পাখিটার।
মেয়ের মাথায় নিরবে আদুরে হাত বুলায় তৃপ্তি ।
শান্ত করে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসায়।
নিজে বসে অপর পাশে।
জাওয়াদ অদিতির বাম হাতটা শক্ত করে ধরে।
সুযোগ থাকলে এই মুহুর্তে তার লিটল বার্ডকে বক্ষমাঝে ঢুকিয়ে নিতো।
অশ্রুসিক্ত বদনে অদিতি একপলক জাওয়াদের পানে চায়।
একহাতে মায়ের হাত অপর হাতে তার পাশে বসা এত অপেক্ষিত প্রিয় মানুষটার হাত চেপে ধরে অদিতি তিন কবুল বলে।
সকলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে।

মনে হলো জাওয়াদের চারপাশে ঠান্ডা শীতল সমীরণ বয়ে যায় নিঃশব্দে। কেউ টের পায়না তা।
জাওয়াদ তৃপ্তিতে চোখ বুঁজে।
তার লিটল বার্ডের চোখের অশ্রু সহ্য হয় না তার।
সে ঘোষণা করে। এখনি উঠিয়ে নেবে না অদিতিকে।
গ্র্যাজুয়েশন কম্পিলিট না করা পর্যন্ত তার লিটল বার্ড আম্মাজানের কাছেই থাকবে।
কিন্তু তার এই পণ কতকাল স্থির থাকবে কে জানে।তবুও তাই সই।
অদিতির মুখে হাসি ফুটে।
জাওয়াদ নির্নিমেষ সে মিষ্টি হাসির পানে চেয়ে।
এই হাসিটুকুই যে আজীবন কাল দেখে যেতে চায় সে প্রিয়তমার ঠোঁটে-মুখশ্রী জুড়ে।

নীলাদ্র’র সঙ্গে সাফওয়ান ক্যামপাসের বটগাছটার নিচে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ।
অদূরে তিয়াশা তামিমের সঙ্গে হেসে হেসে কিছু বলছে।
তামিম তাদের ভার্সিটির ধনীর দুলালের বখে যাওয়া ছেলেপেলেদের মাঝের একজন।
সাফওয়ান এক দৃষ্টিতে সে দিকে চেয়ে।
নীলাদ্র চেয়ে আকাশপানে।
তার হাতে জলন্ত সিগারেট। বাঁধা দেওয়ার জন্য আজ প্রফেসর জাওয়াদ নেই।
তো খেতে নিষেধ কোথায়।সে থাকলেই বা কি? নীলাদ্র বুঝি তাকে তোয়াক্কা করে? উহু মোটেও না।
সাফওয়ান নিঃশব্দে নীলাদ্র’র হাত থেকে জলন্ত সিগারেট খানা কব্জা করে নিয়ে নিজ মুখে পুরলো।বিষাক্ত ধোঁয়া আকাশপানে ছেড়ে দিলো নির্দিধায়।অথচ একবারো চিন্তা করলো না এই বিষাক্ত ধোঁয়ার কুন্ডলী তাদের মানব জীবনকে ক্ষতির মুখোমুখি করে।শরীরে বাঁধা বাঁধে মরণব্যাধি রোগ।
নীলাদ্র তাতে ভাবান্তর দেখা গেল না।
বরং পকেট থেকে আরেকখানা সিগারেট বের করে তাতে আগুন দিলো।
হেসে বলল,

“সিগারেট নিলি যে বড়?”
“ মা তো নেই এখানে খেতে দোষের কি?”
“ তাইইইই?”
নীলাদ্র বক্র হাসে।
সাফওয়ান ধরা পরে যাওয়া চোরের ন্যায় মাথা নাড়ে।
নীলাদ্র গান ধরে,
“ যদি বারে বারে একি সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়।
যদি দিশে হারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায় তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়।
যদি ছলনাময়ী নারী তোমাকে কাঁদায় তবে,
তবে প্রেমে পরার কি দরকার আর কাঁদার কি দরকার?
যদি কষ্ট পাও বেশি তবে ওই ছলনাময়ী নারীকে ধরে ছুঁড়ে ফেল বুড়িগঙ্গায়।
তাকে মাছে খাক,জোঁকে খাক, খাক হাঙরে তাতে তোমার কি আসে যায়।”
যদি…

সাফওয়ান করুণ চোখে বন্ধু’র পানে চেয়ে।
নীলাদ্র’র গান শেষ হাওয়ার পূর্বেই সেথায় তিয়াশা এসে হাজির হয়।
“ কাকে উদ্দেশ্যে গাইছিস এমন গান? “
“ পাশ দিয়ে যে হেঁটে যাবে, যার গায়ে লাগবে ঠিক জোঁকের গায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার ন্যায় তাকেই গেয়ে শোনাচ্ছি।”
“তাই নাকি। “
“ অবশ্যই। গায়ে লাগলো নাকি নুনের ছিটে তিয়াশা।”
তিয়াশা রেগে গেল।
“ ফাজলামো করবি না নীলাদ্র।”
“ তো কি করতে বলছিস?”

“ নাথিং। এই সাফওয়ান আজ জাওয়াদ স্যার আসেনি কেন বলতো ভার্সিটিতে? ওপাশের সাদাফ,নীবিড়,নিস্তব্ধতা কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না যে।জানিস কিছু?নাওমী,কাশফি,অদিতি বপয়াদব মেয়ে তিনটাকেও তো দেখছিনা।সবগুলো একসঙ্গে উধাও হলো কেমন করে বলতো?”
সাফওয়ান মাথা নাড়লো,
“ জানিনা, তোর কি মনে হয় আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্পাই গিরি করি?”
“ আশ্চর্য এভাবে বলার কি আছে।তাছাড়া করতেই পারিস।
আমার হয়ে করে দিস টাকা দেব তোকে।করবি?”
সাফওয়ান স্পষ্ট বুঝলে সে সারাক্ষণ নীলাদ্র’র পিছু পিছু ঘোরে বিধায় তিয়াশা তাকে খোঁচা মারলো।

“তোর টাকা চেয়েছি আমি? আমাকে টাকা দেখাস তুই? তোর টাকার ভুক্কা আমি? নিজেকে কি রানী ভিক্টোরিয়া ভাবিস? অসভ্য,
ইতর মেয়ে।”
সাফওয়ান রেগে গেছে।
“ কি বললি তুই আমি অসভ্য, ইতর? তোর মা ইতর,অসভ্য। “
“ সাটআপ।”
ঠাস করে শব্দ হলো।
তিয়াশা নিজ বাম গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে সাফওয়ানের কাঁপতে থাকা সুদর্শন মুখের পানে।
ছেলেটা এখনো কাঁপছে।
নীলাদ্র ধমক দিলো দু’জনকে,

“ স্টপ দিস ননসেন্স। কি শুরু করেছিস তোরা? বাচ্চা তোরা।হাউ রিডিকিউলাস।”
“তুই আমাকে থাপ্পড় মারলি? কত্ত বড় সাহস তোর তোকে আমি দেখে নেব সাফওয়ান।”
তিয়াশা রাগে কাঁপছে।
সাফওয়ান পুনরায় রাগে তেড়ে যায় তিয়াশা কে মারতে।
নীলাদ্র তাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে,
“ ছাড় আমায়।ওর সাহস হয় কি করে আমার মাকে অসভ্য বলার? ওর ওই দেমাগী ঠোঁট আমি কাঁচি দিয়ে কাটবো।কত্ত বড় কলিজা ওর আমার মাকে গালি দেয়।
ওর কোনো ধারণা আছে আমার মা সম্পর্কে?বিচ্ছিরি মেয়ে মানুষ। “
তিয়াশা রেগে মেগে গজগজ করেতে করতে চলে যায় ওখান থেকে।
নীলাদ্র সত্যিই হতভম্ব। হুট করে এমন কিছু করবে দুজনে সে ভাবতেই পারেনি।
সাফওয়ান এখনো ফুঁসছে।
ইশশ ভাইরাসজনিত কাশিকে আজ সে সত্যিই মিস করছে।
মেয়েটা থাকলে এতক্ষণে সাফওয়ান হাসতে শুরু করতো ওর অদ্ভুত কর্মকান্ডে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর নেমেছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল এখন সন্ধ্যা নামার পালা।
আঁধফাকা তৃপ্তির ফ্লাটের ছোটখাট্ট ড্রয়িংরুমটা পুনরায় ভরে উঠেছে মানুষের সমাগমে।
অবশ্যই সেই মানুষগুলো না চাইতেও তৃপ্তি’র খুব আপনজন।খুব।
সদ্য বিবাহিত কাপলযুগলের অবস্থান এমুহূর্তে সোফার এক কোণায়।
অথচ বর্তমানে সকলের চোখ তদের দুজনের উপর নেই।
বরং সকলের উৎসুক চোখ দুটো ঘুরে ফিরে পড়ছে সামনের দুটো চেয়ারে বসা দুই সান্ডা এবং পান্ডার উপর।
নিস্তব্ধ মেয়েকে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ করবে বিয়ে? কাজী রেডি, মিয়া-বিবি কি রাজী?”
“ মিয়া রাজী কিনা জানিনা তবে যেনে রাখ বিবি রাজী নয়।”
নিস্তব্ধ সকলকে চমকে দিয়ে মেয়ের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

“ আঙ্কেলললল।”
সাদাফ চিৎকার করে উঠে তেড়ে যেতে ন্যায় নিস্তব্ধ’র দিকে।
নিস্তব্ধ গরম চোখে চেয়ে এবারে সাদাফের অপর গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
“ অনেক নাটক দেখেছি তোমাদের আর নয়।
বহুত ফাজলামো করেছ আর নয়।যে কোনো জিনিসের মিলিট থাকাটা অনন্ত জরুরি। তোমরা সেই লিমিট ছাড়িয়ে গেছ।”
নিস্তব্ধতা ভেজা চোখে ছলছল দৃষ্টিতে বাবা’র পানে চেয়ে।
বাবা তাকে মারতে পারলো? হাউ দিস পসিবল?

“ থাপ্পড়টা তোমাদের দু’জন কে সেদিনই মারা উচিত ছিলো আমার যেদিন সুজন আর তাসফি তোমাদের দু’জনের বিয়ের কথা উঠালো।
এই যে তোর পাশে বসে থাকা অসহায় ছেলেটার দিকে তাকা নীরু,
যেই আমি মারতে নিয়েছি তোকে প্রটেক্ট করতে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে চায়।কত্তবড় সাহস।
বলি ওকি তোর বউ? না আমার মেয়ে?
তোর কোনো অধিকার আছে ওর উপর?
আরে ব্যাটা ভালো যদি বাসিসই তবে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেল।কেমন পুরুষ তুমি আমার মেয়ে তোমায় রিজেক্ট করে দেবে কিনা সেই ভয়ে তুমি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করো না।আরে ব্যাটা রিজেক্ট করলে সোজা নিয়ে গিয়ে হাজির হবি কাজী অফিসে।কিসের পুরুষ মানুষ। এতটুকু শক্ত মেরুদণ্ড তৈরি করতে পারো নি ভেতরে?
যে ভালোবাসা দেবে না তার থেকে ভালোবাসা আদায় করে নেব।
তার যদি আমি ব্যতীত সেকেন্ড চয়েজ থাকতো তবে তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে দিয়ে আসতাম বুড়িগঙ্গায়।কারণ অপরের ব্যবহৃত জিনিস এই নিস্তব্ধ ইয়াসার কখনো গ্রহণ করে না।প্রশ্নই উঠে না।
যা আমার তা আমারই।আর যা আমার না তা করোর না।”
নিস্তব্ধ সাদাফের বাহু ধাক্কায়।

“আরে ব্যাটা ওঠ। তোর ভালোবাসার মানুষটা এখনো কারো সেকেন্ড চয়েজের পাল্লায় পরে নি। সুযোগ থাকতে তা লুফে নে।
ভালোবাসা বাসি, রিজেক্ট ফিজেক্টের চিন্তা পরে করিস।আগে নিজের তো কর।”
আদ্রিত সাদাফ কে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলো।
নিচু হয়ে সাদাফের মুখের দিকে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল
“ বিয়ে যখন করবি তখন বউকে নিজের কব্জায় নিয়ে কর, খবরদার আমার মতন ভুল কাজ করে জোড় করে পরে বাসরের অভাবে শুকিয়ে যাস না তাহলে তো মহা বিপদ। সাংঘাতিক বিপদ। বাসর ছাড়া জীবন কাঠফাটা প্রখর রৌদ্দুরে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে থেকে পানির আশা করার ন্যায়।বুঝলি কিছু?”
হঠাৎ সাদাফের কি হলো কে জানে।

নীবিড় সহ সকলে দেখলো, সাদাফ চট করে উঠে দাঁড়ালো। ফট করে নিস্তব্ধতা কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে এক দৌঁড়ে গেল বেলকনিতে।
সকলে হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে।
কাজী সাহেব ফিসফিস করে বলল,
“ কাজী এখানে বাজান।ওদিকে যায় না সোনা বাজান এখানে এসো বিয়ে পড়াই।তারপর বাড়ি যাই বউ যে অপেক্ষা করছে।”
রহিমা খালা তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“যাবেন ক্যান কাজী সাহেব থাইক্যা যান মরিচ বাটা দিয়া করা ভাত খাইয়া যাইয়েন।অনেক তো খাইলেন মিষ্টি এবারে একটু চট ঝাল ওও ভেতরে হান্দান।

আরে চিন্তা নাই ক্যা।বিয়া বাড়িতে সকল কিছু খাওন ফরজ। এই রহিমার মা সকল কিছু জানে।”
কাজী সাহেব আসতাগফিরুল্লাহ পড়ে দুরুদ পাঠ করে বুকে ফুঁ দিলেন।
এই মহিলা ক্ষণে ক্ষণে তার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।সাংঘাতিক মহিলা।
মিষ্টি’র পর টক ঝাল খেলে এখন নির্ঘাত তাকে অক্কা পেতে হবে।
কিন্তু তার যে এত দ্রুত অক্কা পেলে হবে না।বাড়িতে বউ অপেক্ষায় যে।
সাদাফ নিস্তব্ধতা কে নিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেল বেলকনি’র রেলিংয়ে।
নিস্তব্ধতা চিৎকার করে উঠলো।
“ কি করছিস তুই সাদাফ।পরে যাবো, পরে যাবো।নিচে নামা।ইয়া আল্লাহ..”
সাদাফ তার কথার তোয়াক্কা করলো না বরং
কাজী সাহেব কে চিৎকার করে ঢাকলো।

“কাজী সাহেবববব বিয়ে , বিয়ে পড়ান দ্রুত। হাতে সময় কম। যে কোনো সময় অক্কা যাবো।তার আগে বিয়েটা সেরে নেই।অন্তত পরকালে একত্রে তো থাকতে পারবো।”
সাদাফের হাঁক ডাকে চমকে উঠার দরুণ কাজীর হাত থেকে কাঁচের মিষ্টির প্লেট টা ঝনঝন শব্দ তুলে নিচে পরে খণ্ডবিখণ্ড হলো মুহুর্তে।
সে দিকে কারো হুঁশ হলো না।
কাজী সাহেব দৌড়ে গিয়ে খাতা কলম নিলো।লিখলো কিছুমিছু।
সাদাফ তিন কবুল বলে দিলো চোখের পলকে।নিস্তব্ধতা বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে।
সে এখনো ঘোরের মাঝে।
নিস্তব্ধতা কে কবুল বলতে বলা হলো।সে বলছেনা।
কেন বলছেনা।সাদাফের সহ্য হচ্ছে না।তার নীরু কবুল বলুক।তারপর নাহয় তাকে মারুক,ধরুক, কাটুক, সে একটুও মাইন্ড করবে না।
সাদাফ চিৎকার করে বলল,

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৩

“ নীরুরেএএএএ আজ তুই কবুল বলবি নয়তো এই তিন তলার ছাঁদ থেকে আমি ঝাঁপ দেব।
মনে রাখিস আমি মরলে আমার আত্মা তোকে শান্তি তে বাঁচতে দেবে না।
আমি একা কেন মরবো।তোকে সঙ্গে নিয়ে মরবো।
কবুল বলবি? নয়তো দিলাম ঝাঁপ।নিরুরেএএএএ
কবুল বল নয়তো…”

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here