না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৩
মাইশা জান্নাত নূরা
নিজরুমে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে পিহু। দু’পা ভাঁজ করে হাঁটুর সাথে থুতনি ঠেকিয়ে রেখেছে। নীরব মুখশ্রীর অংশ দু’চোখের কোণ ভরে উঠেছে নোনাজল দ্বারা। চোখের পলক ফেললেই নোনাজলগুলো বাঁধ ভে*ঙে পিহুর উজ্জ্বল শ্যমলা রঙা দু’গাল ভিজিয়ে দিতে সক্ষম হবে। পিহুর বয়স আর কিছুদিন পর ২২ বছরে পড়বে। এই বয়সেই জীবনের উপর একপ্রকার বিতৃষ্ণা চলে এসেছে যেনো ওর। পিহুর দু’চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে উঠলো ১৩ বছর আগের সেই দিনগুলো তখন পিহুর বয়স ছিলো ৯ বছর৷ ওর জন্মদাত্রী মা প্রিয়ন্তি বেগম তখন বেঁচে ছিলেন।
💥………অতীত……..💥
আঙিনায় পিঁড়িতে বসে প্রিয়ন্তি পিহুর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলেন। পিহু বললো….
—”মা, আমার নামটা এতো কঠিন রেখেছো কেনো তুমি?”
প্রিয়ন্তি বললেন….
—”কঠিন কোথায়?”
—”আমার স্কুলের বান্ধবীরা আমায় বলে আমার নামটা নাকি ওদের উচ্চারণ করতে সমস্যা হয়। তার মানে তো দাঁড়াচ্ছে আমার নামটা কঠিন-ই।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—”তোর নামটা আমার নামের অক্ষরের সাথে মিলিয়ে রেখেছিলাম আমি। তোর বাবা আর আমি তোর জন্মের আগেই ঠিক করেছিলাম ছেলে হলে রাখবো প্রহর আর মেয়ে হলে প্রহেলিকা। আদর করে মেয়েকে পিহু বলে ডাকবো। প্রহেলিকা অর্থ ‘রহস্য’ আর পিহু নামটা জুড়ে তোকে ‘রহস্যময়ী’ বানিয়ে দিয়েছে। কতোসুন্দর শোনায় তোর নামটা।”
—”হুম ঠিক বলেছো। আমার কিন্তু তোমার দেওয়া নামটা অনেক ভালো লাগে মা। কাল স্কুলে যাওয়ার পর আমি ওদের সবাইকে আমার নামের অর্থ বলবো। তাহলে ওদেরও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।”
—”ঠিক আছে।”
পিহুর জীবনের সবথেকে সুখকর সময় গুলো ছিলো যতোদিন ওর বাঁচা ছিলেন ততোদিন৷ এরপর হঠাৎ ওর সুখের চাঁদকে কালো দুঃখের মেঘ নিজ চাদরে মুড়িয়ে নিলো। প্রিয়ন্তির ব্রেইন ক্য*ন্সা*র ধরা পড়লো। পিহুর বাবা একজন দিনমজুর ছিলেন। দিন এনে দিন খাওয়ায় কোনো রকমে ওদের সংসার চলতো। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় প্রিয়ন্তির সুচিকিৎসা করা জবরুলের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে নি। ধীরে ধীরে পিয়ন্তি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ছোট্ট পিহু নিজের মা’কে য*ন্ত্র*ণা*য় কাঁ*ত*ড়া*তে দেখে কেবল হু হু করে কাঁদতো। প্রিয়ন্তির হাঁটু ছেড়ে যাওয়া সব চুল উঠে গেলো। খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দেওয়ায় শরীরের সব হাড় স্পষ্ট দেখা যেতো৷ এরপর দেখতে দেখতে প্রিয়ন্তি একেবারে বিছানায় পড়ে গেলেন। বিছানাতেই প্র*সা*ব-ট*য়*লে*ট করতেন। ছোট্ট পিহু নিজের ছোট ছোট হাত দিয়েই কোনোরকমের মায়ের কাপড় ও শরীর পরিষ্কার করার চেষ্টা করতো। ক্য*ন্সা*রে আক্রান্ত হওয়ার ১ বছর পর মৃ*ত্যু*র কাছে হার মেনে চিরতরের জন্য প্রিয়ন্তি পরপারে চলে গেলেন দুনিয়ার সব বাঁধন ছিঁ*ড়ে।
প্রিয়ন্তির মৃ*ত্যু*র পর জবরুল বাড়িতে আসাই ছেড়ে দিয়েছিলেন বলা চলে। ছোট্ট পিহু বাড়ি জুড়ে একা এক কোণে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকতো, কান্না করতো। মাঝে মাঝে নিজের মায়ের ক*ব*রে*র পাশে গিয়ে শুয়ে কান্না করতে করতে বলতো…..
—”মা, বাবা কেমন বদলে গিয়েছে জানো! আমায় আর ভালোবাসেন না। বাসায় আসেন না। মা, আমার না খুব জ্বর জ্বর লাগছে। কিন্তু তোমার মতো করে কেউ আমার যত্ন নেয় না আর। কেউ আমার মাথার পাশে বসে ঘুম জেগে জলপট্টি দিয়ে দেয় না।এখন যদি সারাদিন না খেয়ে থাকি একজন কেউ-ও আমার কাছে এসে আমায় খাবার উঠিয়ে খাওয়ায় না। মা, মা গো! আমায় ছেড়ে তুমি কিভাবে এই মাটির নিচে ঘুমিয়ে আছো? ও মা! তোমায় ছাড়া তো আমার একটুও ভালো লাগে না। মা! তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে না! একটু কষ্ট লাগে না! তোমার মেয়েটা কেমন একা হয়ে গিয়েছে তা কি তুমি দেখতে পাও? মা! আমার এখন কেমন দ*ম*ব*ন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় কেউ যদি আমার পাশে বসে আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতো আমি তাকে জড়িয়ে ধরে খুব করে কাঁদতাম। আর আমার ভিতরে জমে থাকা সব অভিযোগ তার কাছে জমা করতাম। মা! আমার তো তেমন কেউ নেই। যখন তুমি ছিলে আমার সারাদিনের জমে থাকা কথাগুলো তোমাকে বলতাম। এখন তো আর বলতে পারি না। জানো মা! আমার বুকের ভিতরটাতে অনেক কষ্ট জমে আছে। মা! ও মা! তোমার হাতের পায়েস খেতে আমার খুব ইচ্ছে করছে। আমি তো আর কখনও তোমার হাতের কোনো খাবার খেতে পারবো না। আমার বুকের ভিতরটাতে অনেক ব্য*থা করছে মা। অনেক ব্য*থা করছে।”
প্রিয়ন্তির মৃ*ত্যু*র মাসখানেক পর…..
পিহু আঙিনায় দাঁড়িয়ে ছিলো। সেইসময় নিজের বাবা জবরুলকে অপরিচিত একজন নারীর হাত ধরে বাড়ির ভিতরে আসতে দেখে পিহুর ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগে তাকে নিয়ে। জবরুল পিহুকে জানান….
—”ওর নাম সোমা৷ তোর নতুন মা পিহু।”
পিছন থেকে আরো একজন মেয়ে এসে জবরুলের অন্যহাত জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে তাকে ‘বাবা’ বলে ডাকলে পিহুর সাথে ওরও পরিচয় করিয়ে দেম জবরুল।
—”পিহু, ওর নাম সোনালী। তোর বড় বোন হয়৷ এখন থেকে তোকে আর এ বাড়িতে একলা থাকতে হবে না রে মা। তোর খেয়াল রাখার জন্য, তোর মা প্রিয়ন্তির মতো করে তোকে ভালোবাসার জন্য সোমা থাকবে আর তোর সাথে খেলাধুলো করার জন্য তোর বড় বোন সোনালী থাকবে। আমরা আবার নতুন করে পরিপূর্ণ পরিবার হয়ে যাবো এখন থেকে।”
পিহুর মন মানতে চাইলো না এই আকস্মিক বাস্তবতাকে। পিহুর মন ওর মস্তিষ্ককে শুধালো….
—”মায়ের জায়গা কি কেউ নিতে পারে? মায়ের মতো করে কি কেউ কখনও ভালোবাসতে পারে? আদর-যত্ন করতে পারে?”
সোমার ১ম সংসার ছিলো ৭ বছরের। বিয়ের ১ বছরের মাথায় তার কোল আলো করে সোনালী এসেছিলো। সোনালীর যখন ৬বছর বয়স পূর্ণ হলো তখন সোনালীর বাবা এ*ক্সি*ডে*ন্টে মা*রা গেলেন। সোমার শ্বশুড় বাড়ির ওর সোমাকে তাদের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন এরপর। সোমা তার নিজ বাবার গৃহে এসে উঠলে সোমার বড় ভাইয়েরা সোমাকে ২য় বার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পরে লাগলেন। সোমা সোনালীকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত জবরুলের সন্ধান তারা পান এবং পারিবারিক ভাবে জবরুলের সাথে সোমার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। সোনালীকে নিয়ে জবরুলের কোনো সমস্যা ছিলো না।
নতুন সংসার, জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে এখন আর দিনমজুরি করে সংসারের ভার বহন করা সম্ভব না ভেবে জবরুল তার একজন বন্ধুর সহায়তায় চট্টগ্রামে একটা নামি বেসরকারি কোম্পানিতে সিকিউরিটির পদে চাকরি নিতে সক্ষম হন। সেই চাকরির বদৌলতে তার জীবনে শারিরীক কষ্টের পরিমাণ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। শুরু সময়ে জবরুলের বেতন ছিলো মাসিক ১৫০০ টাকা। কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা ঢাকায় নিজ বাড়িতে অর্থ্যাৎ সোমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। সোমা সেই টাকা দিয়ে নিজের ও সোনালীর জন্য ভালো ভালো পোশাক কিনতেন। ভালো ভালো খাবার খেতেন। সোমা ১ম থেকেই জবরুলের অনুপস্থিততে উঠতে বসতে পিহুর সাথে দূর্ব্যবহার করতেন৷ পিহুকে দিয়ে সংসারের যাবতীয় কাজ করাতেন।
রান্না করা থেকে শুরু করে ওদের দু’জনের পরিধানের কাপড় পর্যন্ত পিহুকেই ধুয়ে দিতে হতো রোজ দিন। জবরুলের ছুটির পরিমাণ অনেক কম ছিলো। ৪-৫মাস অন্তর অন্তর ৪-৫ দিনের জন্য ঢাকায় নিজ বাড়িতে আসতে পারতেন তিনি। জবরুল আসার সময় পিহু, সোমা, সোনালী তিন জনের জন্যই নতুন নতুন পোশাক কিনে আনতেন নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী। ১ম বার যখন জবরুল ছুটিতে বাড়ি আসলেন তখন সোনালীর জন্য যে জামা জবরুল এনেছিলেন তা ওর পছন্দ হয় না। কিন্তু পিহুর জন্য জবরুল যে জামা এনেছিলেন তা সোনালীর বড্ড মনে ধরে। তাই সোনালী ইচ্ছে করে নিজের জামা কেঁ*টে-ছিঁ*ড়ে নষ্ট করে সেই ন*ষ্ট করার দায়ভার পিহুর উপরে দিয়েছিলো। সোমাও সোনালীর কথায় সমর্থন করেছিলেন।
ছোট্ট পিহু সেবার অনেক চেষ্টা করেও বাবার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে নি। জবরুলের মনটা সোমা ও সোনালী মিলে এতোটাই বা*জে ভাবে বি*ষি*য়ে দিতে শুরু করেছিলো দিনের পর দিন যে পিহুর কোনো মূল্যই জবরুলের নজরে ছিলো না। পিহুকে কেবল প্রিয়ন্তির স্মৃতি মনে করে এ বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন তিনি নয়তো অনেক আগেই বের করে দিতেন এমনও কথা পিহুর মুখের উপর বলেছিলেন জবরুল। নিজের বাবার চোখে নিজের জন্য এতো রাগ-ঘৃ*ণা দেখতে দেখতে পিহু বড় হতে হতে অভিযোগ করার ভাষা ভুলে গেলো। সব কষ্ট, সব অভিযোগ পিহু নিজের মনের মধ্যে জমিয়ে রাখতে শুরু করে। সোমা জমজ দুই ছেলের জন্ম দিতে সক্ষম হলে পিহুর মূল্য এ বাড়িতে একেবারে শূন্য হয়ে দাঁড়ায়। তখন পিহু নিজের মনকে এই বলে বুঝ দেয় তার এ পৃথিবীতে এখন আর আপন বলতে কেউ নেই। যিনি ছিলো পিহুর মা প্রিয়ন্তি তিনি মা*রা গিয়েছেন। আর পিহুর বাবা বলে লোকসমাজ যাকে চিনেন সে আসলে পিহুর বাবা না সে তার ২য় স্ত্রীর তরফের সন্তানদের বাবা।
💥………বর্তমান……….💥
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই পিহুর হুস ফিরলো। ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখের পানিটুকু মুছে বিছানা থেকে নামলো পিহু। অতঃপর দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই সামনে একজন ২৫+ বয়সী অপরিচিত মহিলাকে হাসি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিহু বললো….
—”জ্বি! কে আপনি?”
মেয়েটি বললো….
—”আগ্গে আমার নাম কমলা বানু। আমারে সাহেব পাঠাইছেন আপনের যত্নআত্তিতে যেনো কোনো ত্রু*টি না হয় সেই খেয়াল রাখতে।”
পিহুর ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো….
—”দেখুন কমলা আপা, আমি একজন যথেষ্ট বুঝদার বয়সী মেয়ে। আমার যত্নআত্তি আমি নিজেই করতে পারি। এতোবছর ধরে করে এসেছি আগামীতেও পারবো। আপনাকে আমার যত্নআত্তি করতে হবে না। আপনি এই কথাটা আপনার সাহেবকে বলে দিবেন কেমন?”
কমলা বললো…..
—”ও মাগো মা! আমারে কি পাগলা কু*ত্তা*তে কা*ম*ড়া*ই*ছে যে আমি সিং*হে*র মুখের সামনে দাঁড়াইয়া তার দেওয়ার হুকুম মাইনা চলতে পারমু না এই কথা কইতে যামু! শোনো আপামনি, আমার নিজের জীবনের প্রতি মেলা মায়া আছে। এহনও বিয়া করি নাই। তাই সাহেবরে যদি কিছু কওনেরই থাকে তো তুমি নিজে কইও। আমি কইতে পারমু না৷ ক্ষেমা চাই।”
রা*গে-বি*র*ক্তি*তে পিহুর শরীর এখন রিতীমত জ্বা*লা করছে। এই লোকটা তাকে পেয়েছে টাকি! যা ইচ্ছে হবে তার তাই তিনি করবেন আর বাকিদের মন চাক বা না চাক তা মেনে নিয়ে চলতে হবে! যদি একবার না বলা হয় তো কলিজা কাঁ*পা*নো ধ*ম*কি দিয়ে বসেন। এসব কি সহ্য করার মতো বিষয়!
কমলা পিহুর পাশ কাটিয়ে ওর রুমের ভিতর প্রবেশ করলো। পুরো রুমটাতে একবার চোখ বুলাইয়া আবার বাহিরে এসে দরজার সামনে পরে থাকা সব সপিংব্যগগুলো একসাইড করে বাহিরে চলে গেলো। কিছুসময় পর কয়েকজন পুরুষ লোক সামনে-পিছনে করে দু’টো বিশাল সাইজের সুন্দর আলমারী নিয়ে ভিতরে আসতে শুরু করলেন। সেইসময় সোনালী ও সোমাও তাদের রুম থেকে বের হয়ে আসলেন। আলমারী দু’টো নজর কাড়ার মতো সুন্দর ছিলো। সোমা খুব করে ইচ্ছে করছিলো একটা তার নিজরুমে নিতে ও আরেকটা সোনালীর রুমে নিতে। কিন্তু মনের ইচ্ছে মনের মধ্যেই ক*ব*র দিয়ে দিতে হলো সোমাকে। এখন তো সারফারাজের পাঠানো কাজের মেয়েটা থাকবে তাদের পাশে। এই কাজের মেয়ের কাজ যে কেবল পিহুর প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা নয় পাশাপাশি ওদের মা-মেয়ের উপর নজর রাখার কাজ সে করবে তা খুব ভালো ভাবেই বুঝে গিয়েছেন সোমা। এখন থেকে খুব হিসেব করে প্রতিটা কথা বলতে হবে সোমা-সোনালীর।
কমলা পিহুর কাছে এসে ওকে সরতে বললে পিহু কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না বুঝে সরে আসলো। অতঃপর লোকগুলো পিহুর রুমের ভিতর আলমারী দু’টো খুব সুন্দর করে সেট করে দিলো। পিহুর রুমটা মোটামুটি বড়ই ছিলো। কিন্তু রুমের উপর একটা সিংগেল সাইজের চৌকি, একটা টেবিল-চেয়ার আর একটা পুরোনো দিনের আলনা ছিলো। এখন এই নতুন আলমারী দু’টোর কারণে পিহুর রুমের রূপ-ই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে অনেকটা৷
সোমা-সোনলী দাঁতে দাঁত চেপে এসব সহ্য করতে নিজ ঘরে আবারও চলে যান। লোকগুলো নিজ কাজ শেষ করে চলে গেলে কমলা রুমের বাহিরে থাকা সব সপিংব্যগ একে একে ঘরের ভিতরে নিয়ে আসে। এরপর প্যকেট থেকে সব বের করে গুছিয়ে রাখতে শুরু করে। গুছাতে গুছাতে একটা মোবাইল এর ব্যগ হাতে আসে কমলার। পিহু নিরব হয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসেছিলো। কমলা মোবাইল এর ব্যগটা নিয়ে পিহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—”আপমনি এইটা কি দেখেন! মোবাইলফোন।”
পিহু ব্যগটা হাতে নিলো। কমলা আবারও কাপড় গোছানোর কাজে লেগে পড়লো। পিহু ব্যগ থেকে মোবাইল এর বক্সটা বের করলো। বক্সটা যে আগেই আনপ্যাক করা হয়েছে সিল উঠানো দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। পিহু বক্স থেকে ফোনটা বের করলো। বক্সের গায়ে লেখা ছিলো ‘Samsung Galaxy S25 ultra’…ফোনটা দেখতে কি যে ভিষণ সুন্দর তা বলার মতো না। পিহু কৌতুহল বশত ফোনের সাইড বাটনে চাপ দিলে ফোন স্ক্রিনটা অন হয়ে যায়। সেকেন্ড ১০ যেতে না যেতেই ফোনে কল আসে। পিহু দেখলো ‘I love you’ দিয়ে সেইভ করা একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে। পিহুর ভ্রু কুঁচকে এলো। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চেনা পুরুষালি কন্ঠটি ভেসে এলো…..
—”অবশেষে ফোনটিকে বাক্সমুক্ত করলে প্রিটিহার্ট!”
সারফারাজের মুখে প্রিটিহার্ট নামে নিজেকে যখনই সম্বোধিত হতে শুনে পিহু তখুনি ওর বুকের ভিতরটা কেমন যেনো করে উঠে। নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে আসে ওর। পিহু বললো…..
—”আপনার নাম কবে থেকে ওটা হলো?”
—”কোনটা?”
—”যেটা দিয়ে ফোনে নিজের নাম্বার সেইভ করে রেখেছেন সেটা।”
—”সেটা কোনটা?”
—”সব জেনে বুঝেও না বোঝার ভান করছেন?”
—”মুখ ফুটে বললেই পারো।”
—”ওটা আমি উচ্চারণ করতে পারবো না।”
—”কোনটা!”
—”জানি না।”
—”কয়দিন পর আমার বউ হবে অথচ এখনও নিজের কিপ্টেমি স্বভাবটা ছাড়লে না। দিস ইজ নট ফেয়ার প্রিটিহার্ট।”
—”আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি নাকি যে বিয়ে হবে বলছেন?”
—”তুমি রাজি না হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ #না_চাইলেও_তুমি_শুধু_আমারই। তাই আমার বউ তো তোমাকে হতেই হবে।”
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২
পিহু আর কিছু বললো না৷ কান থেকে ফোনটা সরিয়ে খট করে কল লাইন কেটে দিলো। ফোনটা নিজের থেকে কিছুটা দূরে বিছানার উপর রেখে দিয়ে দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করলো পিহু। এই লোকটা আচমকা পিহুর দুঃখে ভরা জীবনে এসে হাজির হয়েছে। যার আসাটাকে পিহু কখনও কল্পনাও করতে পারে নি। পিহুর চোখের সামনে ভেসে উঠলো গতকাল রাতের সেই দূ*র্বি*ষ*হ ঘটনার ছাপ। যেই ঘটনার ফলস্বরূপ আজ পিহুর জীবন সারফারাজ ইউসুফ খান নামক একজন ক্ষমতাসম্পন্ন এমপির হাতে ব*ন্দী হয়ে গিয়েছে।