সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১১

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১১
Jannatul Firdaus Mithila

রাত ১১ টা।বাড়ির সকলেই ডিনার শেষে নিজেদের রুমে চলে গিয়েছে। জুবাইদা বেগম ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছেন আর একমনে গুনগুন করে যাচ্ছেন। খাটে হেলান দিয়ে বসে থেকে
প্রিয়তমার কাজগুলো একমনে দেখে যাচ্ছেন কবির সাহেব। ভাবছেন এ-ই যে তার বউটা,কতটা ধৈর্য এই রমনীর মাঝে,কতটা প্রতিকূল মুহূর্তেও তার পাশে থেকে তাকে সাহস জুগিয়েছেন অথচ বিনিময়ে আজ পর্যন্ত তার কাছে কিচ্ছুটি চায়নি।আচ্ছা এমন কেনো তার জবা? কেনো সে কিছু চায় না তার কাছে? তিনি যতো ঐ মুখটির দিকে তাকান ততই মুগ্ধ হন।কতটা স্নিগ্ধ সেই মুখশ্রী! এ-ই যে এখন বয়সের ছাপ পড়েছে কিছুটা মুখে,চুলে পাক ধরেছে এতেও যেনো তিনি জুবাইদা বেগমের এক অন্যরকম সৌন্দর্যর খোঁজ পেলো। আয়নার ফাক গলিয়ে স্বামীর পানে তাকান জুবাইদা বেগম,দেখতে পান কবির সাহেব তার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। জুবাইদা বেগম একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আয়নায় চোখ রেখেই স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন,

— কি জনাব! এভাবে কি দেখছেন শুনি?
স্ত্রীর কথায় বিন্দুমাত্র ভড়কায় না কবির সাহেব। তিনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসেন স্ত্রীর কাছে,স্ত্রীর হাত থেকে চিরুনিটি নিয়ে নিজেই আঁচড়ে দিতে লাগলেন স্বযত্নে। জুবাইদা বেগম এখনো তাকিয়ে আছেন স্বামীর দিকে,৩০ টা বছর ধরে এই মানুষটার সাথে সংসার তার।স্ত্রী হিসেবে এই মানুষটাকে যে তার বড্ড চেনা।জুবাইদা বেগমের ভাবনার মাঝেই কবির সাহেব নরম স্বরে বলেন,
— আচ্ছা জবা, আমাদের রোদের জন্য তুমি কেমন বউ আনতে চাও?
— যেমনটা আমার রোদ চাইবে!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কবির সাহেব আর কিছু বললেন না,চুল বেধে দিয়ে পরম মমতায় স্ত্রীর মাথায় আলতো চুমু খান তিনি। ঠিক এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। কবির সাহেব দরজার আওয়াজে স্ত্রীর কাছ থেকে সরে এসে বিছানার একপাশে বসে পড়েন,জুবাইদা বেগম উঠে দরজা খুলে দেন,দরজার ওপাশে রৌদ্র কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা চমকে উঠেন তিনি, কেননা ছেলে তার এতরাতে এখানে আসার নয়,তিনি দরজা ছেড়ে ছেলেকে ভেতরে নিতে নিতে কিছুটা ব্যতিব্যাস্ত কন্ঠে বলতে থাকে,

— বাবা কিছু লাগবে তোর? হঠাৎ এতরাতে যে!.
— হুম, আসলে মা আমি তোমার আর বাবার সাথে কিছু জরুরি কথা বলতে এসেছি।
কবির সাহেব ছেলের এমন কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসলেন অতঃপর বললেন,
— হ্যা বলো কি কথা বলবে।
— বাবা তুমি কি রুহির জন্য ঐ ছেলেটা কে কথা দিয়ে ফেলেছো?
— আকাশের কথা বলছো নাকি?
— হুম।
— না কথা এখনো পাকা করিনি,তবে তারা বলেছে এ সপ্তাহে আসবে রুহিকে দেখতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেদিনি রুহিকে আংটি পড়িয়ে যাবেন তারা।
— তার আর কোন দরকার নেই আব্বু। তাদের কে তুমি না বলে দাও কেননা রুহি অন্য কাওকে পছন্দ করে। বেশ শান্ত কন্ঠে কথাগুলো বললো রৌদ্র।
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলতে থাকে কবির সাহেব,

— কিসব কথা বলছো তুমি রোদ? রুহির অন্য কাওকে পছন্দ মানে? আমিতো কাল ওকে জিজ্ঞেস করেই এই সম্বন্ধের ব্যাপারে এগিয়েছি।কই তখন তো ও বললো ওর কাওকে পছন্দ না।
— কারন তোমরা ওর বাবা-মা। আর একটা মেয়ে কখনোই নিজের মনের কথা নিজের বাবা-মাকে খোলাখুলি করে বলতে পারে না।ও হয়তো ভেবেছে তুমি ওর অন্য কাওকে পছন্দ করার বিষয় টা নিয়ে রিয়েক্ট করবে তাই হয়তো বলেনি ভয়ে।
— এসব কথায় কি রিয়েক্ট করার কথা নয় রোদ?
ছেলে এবং স্বামীর এমন বাক বিতর্কে অসহায়ের ভুমিকা পালন করছে জুবাইদা বেগম,হয়তো ভাবছেন কাকে, কি বলে সামলাবেন।এরই মাঝে কবির সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— কে ছেলেটা?
— রেহান।
— রেহান! অবাক কন্ঠে বলে উঠেন জুবাইদা বেগম ও কবির সাহেব।
কবির সাহেব এবার উওেজিত কন্ঠে বলে উঠেন,
— কতদিন ধরে চলছে এসব? আর রেহানের সাথে কিভাবে কি হলো!
— সেটা আমি ঠিক বলতে পারছিনা।তাছাড়া এখন তো সব শুনলেই,মেয়ে যেহেতু অন্য একজনকে পছন্দ করে সেহেতু এই সম্বন্ধ আর না আগানোই বেটার। নিরলস ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচিয়ে কথাগুলো বলে থামে রৌদ্র। কবির সাহেব গম্ভীরমুখে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলেন। অতঃপর বলে উঠেন,

— ঘরে যাও তুমি এখন।আমি দেখবো পরে বিষয় টা।আপাতত অফ থাকুক সবটা।
— না আব্বু। রেহানরা কালকেই আমাদের বাড়িতে আসতে চাচ্ছে।
— কালকেই মানে? মগের মুল্লুক নাকি সবটা,বললেই হয়ে গেলো?
— সেটা তুমি জানো।
— ইয়ার্কি করছো আমার সাথে?
— আজব! তোমার সাথে কি আমার ইয়ার্কির সম্পর্ক নাকি! রেহান যেটা বললো আমিতো তোমায় সেটাই জানালাম।

— ও বললো বলেই তুমি আসতে বলবে নাকি?তারওপর আকাশদেরও” না” বলা হয়নি।তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা বাড়ির কাওকেই বিষয়টা জানানো হয়নি, এরমধ্যে হুট করে রেহানরা আসলে…
কবির সাহেবের কথা শেষ হবার আগেই দরজার কাছ থেকে সাব্বির সাহেব হালকা গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠেন,
—” ভাইজান কে বললো আমরা জানিনা? রৌদ্র আমাদের সবটা জানিয়েছে।”
বলেই ভেতরে প্রবেশ করলেন তিনি, তার পিছুপিছু বাকি সদস্যরাও ভেতরে প্রবেশ করেন।কবির সাহেব এরূপ অবস্থায় কিছুটা স্তব্ধ হয়ে থাকেন। পরে নিজেকে ধাতস্থ করে তাদের সকলকে জিজ্ঞেস করেন,
— তোরা জানিস মানে? তোরা রুহি আর রেহানের ব্যাপারটা আগে থেকেই জানতিস?
— না না ভাইজান আগে থেকে না।আসলে তোমার জানার মাত্র ১ ঘন্টা আগে জেনেছি। চটপট কন্ঠে বললেন তাশরিক সাহেব।
— ব্যাপারটা আসলে হয়েছে কি ভাইজান, রৌদ্র তোমার এখানে আসার আগে আমাদের সবটা জানিয়েছে। অত্যন্ত বিনম্র স্বরে বললেন তায়েফ এহসান।

— আর তাছাড়া ভাইজান রেহান ছেলেটাও বেশ ভদ্র। দেখতে শুনতেও বেশ ভালো। আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের রুহি মামনিও তাকে পছন্দ করে।তাই বলছিলাম কি! তুমি আর অমত করো না।
ভাইয়ের হাতদুটো আঁকড়ে ধরে কথা গুলো বললেন সাব্বির সাহেব।
কবির সাহেব সকলের কথাগুলো শুনে গেলেন গম্ভীর মুখে কিছু বললেন না তিনি। অতঃপর সকলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন,
— ঠিক আছে তবে তাই হোক। সবাই যেহেতু রাজি তাহলে আমি আর অমত দিয়ে কি করবো কিন্তু কথা হচ্ছে তারা কালকেই আসলে কিভাবে কি করবো বলতো?

— ও নিয়ে তুমি মোটেও টেনশন করো না ভাইজান আমরা আছি না।কাল সবটা আমরাই সামলে নিবো।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। তায়েফ সাহেব আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন কথাগুলো।
কবির সাহেব ভাইদের এরূপ কথায় মৃদু মাথা ঝাকিয়ে বললেন,
— ঠিক আছে তাহলে,এবার সবাই গিয়ে শুয়ে পড়।কাল আবার অনেক কাজ।বলেই তিনি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।জুবাইদা বেগম এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন,যাক রোদের বাবা ওতো টাও হম্বিতম্বি করেনি।
একে একে সকলেই তাদের ঘরে চলে গেলেন।রৌদ্রও চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই যাবে এমন সময় তার মা তার ডানহাত আঁকড়ে ধরে,রৌদ্র স্বাভাবিকভাবে পিছনে ফিরে তাকায়।জুবাইদা বেগম পরম স্নেহের সাথে ছেলের মাথায় হাত রাখেন, বলে উঠেন,

— আমার ছেলেটা কবে থেকে ওতো বড় হয়ে গেলো বাবা।
মায়ের কথায় মুচকি হাসলো রৌদ্র, মায়ের হাতটা মাথা থেকে নামিয়ে হাতের উল্টো পিঠে আলতো চুমু খায় সে,বলতে থাকে,
— যবে থেকে তার মা এমন বাচ্চাদের মতো করে তবে থেকে।
ছেলের এমন বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর শুনে লম্বা হাসি দেয় জুবাইদা বেগম। অতঃপর ছেলেকে বিদায় দিয়ে ঘরে আসেন তিনি, এসে দেখেন কবির সাহেব বিছানায় শুয়ে পড়েছেন কপালে হাত ঠেকিয়ে। তিনি নিঃশব্দে স্বামীর পাশে বসলেন, স্বামীর হাত আলতো করে ধরে জিজ্ঞেস করেন,

— এতো চিন্তা করছো কেন? রেহানকে কি তোমার পছন্দ না?
স্ত্রীর কথায় কপাল হতে হাত সরিয়ে তার দিকে তাকায় কবির সাহেব, পরে কিছুটা চিন্তিত স্বরে বললেন,
— না বিষয় টা তেমন না।আসলে ভাবছি আকাশদের কিভাবে বিষয় টা বলবো।তাদের কে তো আমি কথা দিয়েছিলাম তাদের ছেলের সাথে আমার বাড়ির মেয়েকে বিয়ে দিবো।কিন্তু এখন…
এতক্ষণে স্বামীর চিন্তার কারন বুঝলেন জুবাইদা বেগম। কিছুটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললেন,
— এই নিয়ে এতো চিন্তা করোনা তো।আর তুমি তো বললে এ বাড়ির মেয়ে কে বিয়ে দিবে।আমাদের তো মেয়ে আর একজন না তাইনা?
— মানে তুমি বলতে চাইছো অরিন?
— হুম আমাদের অরিন।যদি ও রাজি থাকে তবেই।

রৌদ্র নিজের ঘরে যাবার সময় আবারও থমকে দাড়ায় অরিনের দরজার সামনে।আজও কেমন সামান্য ফাঁকা দরজা টা।কিন্তু আজকে অরিনের পড়ার আওয়াজ আসছে না।রৌদ্র একবার ভাবলো দরজায় টোকা দেবে কেননা এখনো ঘরের লাইট জ্বলছে কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো এতরাতে ওকে ডিস্টার্ব না করাটাই বেটার।এই ভেবে সামনে এগুতেই পেছন থেকে মিনমিনে স্বরে ডেকে উঠে একজন তাকে।রৌদ্র ভ্রুযুগল কুচকে পেছনে ফিরে দেখে অরিন তার দিকেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।রৌদ্র কিছু বলবে তার আগেই অরিন হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— রোদ ভাই নিচে কি হয়েছিল? আপনারা সবাই বড় আব্বুর রুমে একসঙ্গে কি করছিলেন? বড় আব্বু কি ঠিক আছেন?
রৌদ্র অরিনের এমন লাগাতার প্রশ্ন শুনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

— তুই থামলে না বলতাম। একসাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো বলতো?
নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিভ কাটে অরিন, আবারও মিনমিনিয়ে বলতে থাকে,
— সরি রোদ ভাই। আসলে ওভার এক্সাইটেড হয়ে একসঙ্গে সব প্রশ্ন করে ফেলেছি।আপনি শুধু নাহয় বলুন কি হয়েছে নিচে?
— তোর দেখছি খুব কিওরিসিটি।
— না মানে..
— হইছে, তোর মানে বাদদে।নিচে সবাই রুহির বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলো,কালকে ওকে দেখতে আসবে তাই।
—কিহ! কালকে?
— এত অবাক হচ্ছিস কেনো তুই?
— না, আসলে এত তারাতাড়ি হচ্ছে তাই আরকি!
— ওহ।আচ্ছা তুই এতরাতে এখানে কি করছিস? আর এতক্ষণ ছিলি কই?
— ওহ আমি? আমিতো রুহিপুর ঘরে ছিলাম। সেইতো আমায় পাঠালো জানতে কি হয়েছে ওখান….

বলতে বলতেই নিজের মুখ চেপে ধরে অরিন,চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে রোদের পানে,যে আপাতত শান্ত দৃষ্টিতে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে আছে তার দিকে।অরিন মনে মনে নিজেকে একশো গালাগাল দিচ্ছে, কিছুতেই কোন কথা টেকে না তার পেটে, তার রুহিপু যদি জানতে পারে সে তার ব্যাপারে বলে দিয়েছে তাহলে নিশ্চিত রুহিপু তাকে বাড়িছাড়া করবে, এসব ভেবেই পরপর ঢোক গেলে অরিন। অরিনের এমন অবস্থা দেখে মনে মনে বেশ মজা পায় রৌদ্র কিন্তু বাহির থেকে নিজেকে সে যথেষ্ট শান্ত রাখে।হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে থাকে,

— ওহ তাহলে তুই এখন রুহির হয়ে কথা জানতে এসেছিলি?
— ইয়ে, আসলে ন-না এ-এমন কি-ছু না।
— তাহলে এমন তোতলাচ্ছিস যে?
— ক-কই না-ত-তো।
— তুই কি আমার চেয়ে ও নিজেকে নিজে বেশি চিনিস?
রৌদ্রর এমন কথায় চুড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হয় অরিন।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রৌদ্রর দিকে, অতঃপর অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

— মানে?
এতক্ষণে হুশ ফিরে রৌদ্রর। বুঝতে পারে আবেগের বশে একটু বেশি বলে ফেলেছে, যেভাবেই হোক বিষয় টা কাটাতে হবে, তাই আবারও মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলে ওঠে,
— ওতো মানে মানে করছিস কেন তুই? আগে বল তুই এখানে রুহির হয়ে কথা শুনতে এসেছিস তাইনা? কই ও,ডাক দে ওকে।
রৌদ্রর কথা শুনে চোখবড় করে ফলে অরিন। অস্থির কন্ঠে বলতে থাকে,
— রোদ ভাই প্লিজ রুহিপুকে বলবেন না যে আমি তার কথা বলে দিয়েছি।রুহিপু জানতে পারলে একটা বকুনিও মাটিতে পড়বে না।
রৌদ্র তারপর ও শোনেনা, অরিনকে আরেকটু বাজাতে বলে ওঠে,

— বকলে বকবে।তাতে আমার কি? তুই যে এত পাকামো করিস দু একটা বকা না খেলে কি চলে?
— আর করবো নাতো। বলেই ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো গাল ফুলায় অরিন।এদিকে অরিনের গাল ফুলানো দেখে মুহুর্তেই রৌদ্রর ভিতরে বয়ে যাচ্ছে তোলপাড়। শুরু হয়ে গেছে হৃদয়ের অসহ্য তান্ডব। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে রৌদ্র। অতপর কাঠকাঠ গলায় বলে ওঠে,
— যা ঘুমুতে যা।আর এক সেকেন্ডও যাতে এখানে না দেখি।
বলেই দপদপ শব্দ তুলে নিজের রুমে চলে যায় রৌদ্র। এদিকে অরিন রৌদ্রর চলে যাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাচে।

আজ পুরো এহসান বাড়ির গৃহিণীরা রান্নাঘরে ভিষণ ব্যাস্ত।দুপুরের রান্নায় ইতোমধ্যেই বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাড়ির কর্তারাও কম ব্যস্ত নয়।তারাও সকাল থেকে বাজার,সদাইয়ে যথেষ্ট ব্যস্ত সময় পাড় করেছে।রেহানদের পরিবারকে দুপুরে আসতে বলেছে সবাই। তারাও প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। এদিকে বাড়ির ছোটরা একেবারে পরিপাটি হয়ে বসে আছে ড্রয়িং রুমে। অরিনের আজ ক্লাস টেস্ট ছিলো তাই সে কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছে। এখন অবশ্য শাওয়ার নিয়ে পরিপাটি হয়ে নিচে নেমে এসেছে ও, অরিনের পড়নে গাঢ় অলিভ রংয়ের হালকা কাজ করা একটি পাকিস্তানি থ্রিপিস,সাথে কানে মেচিং ঝুমকো,গলায় তার সবসময়কার গোল্ডেন চেইন,হাতে সেম ব্রেসলেট, হরিণি চোখগুলো আজ কাজলের চিকন রেখায় সজ্জিত আর সিল্কি কোমড় সমান চুলগুলো সুন্দর করে বেধে পিছনে ছেড়ে দেওয়া ব্যস।রাইসা বেগমতো কয়েকবার মাশাআল্লাহ বলে ফেলেছেন ওকে দেখে।রৌদ্র ও অনিক দু’জনেই বাসায় আছে আজ।অনিক একটি কালো পাঞ্জাবি পড়েছে সাথে সাদা ট্রাউজার। চুলগুলো পরিপাটি করে রাখা।

অন্যদিকে রৌদ্র পড়েছে মেজেন্টা কালারের মধ্যে কটনের পাঞ্জাবি সাথে সাদা ট্রাউজার। চুলগুলো সবসময়কার মতো পাইক করে রাখা। পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামতে গিয়ে হঠাৎ তার চোখ যায় ড্রয়িং রুমে বসে খিলখিল করে হাসতে থাকা অষ্টাদশীর দিকে।হুট করেই সামান্য ভীমড়ি খেয়ে পড়তে নিয়েও সিঁড়ির হাতল ধরে নিজেকে সামলায় রৌদ্র। তার চোখ দুটি যেনো আটকে গেছে কোন এক অদৃশ্য মায়াবনে।মেয়েটার টোলপড়া হাসি, কাজল রাঙা চোখ,কথা বলার সময় নড়তে থাকা ঠোঁট সবকিছুই যেনো আজ রৌদ্রকে ব্যাপক টানছে।

নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে ছেলেটার।বুকে বয়ে চলছে এক অমীমাংসিত ঝড়।হঠাৎ করেই নিজের বেখায়ালিতে বুকের বা পাশে হাত চলে যায় তার, উদ্দেশ্য এই অংশে থাকা অনিয়ন্ত্রিত গতির হৃদয়টাকে কিছুটা শান্ত করা।কিন্তু নাহ! কোনো কাজই হচ্ছে না। অগত্যা জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে সে।এমন সময় হঠাৎ ঘাড়ে কারোর শীতল স্পর্শ পেতেই কিছুটা চমকে পিছনে তাকায় রৌদ্র। দেখতে পায় অনিক তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক রৌদ্রর এমন চমকে যাওয়ায় কিছুটা সন্দেহাতীত ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

— তুমি হঠাৎ এমন চমকে উঠলে কেনো ভাইয়া? কিছু ভাবছিলে নাকি? আর এভাবে বুকে হাত দিয়ে রেখেছো এনিথিং রং?
রৌদ্র কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলতে থাকে,
— আব,নাহ তেমন কিছুনা।
— সত্যি?
— তোর মিথ্যা কেনো মনে হচ্ছে?
— নাহ মিথ্যা না বাট আমার অনেক কিছুই মনে হচ্ছে।
— কি? কিছুটা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে রৌদ্র।
— কিছু না চলো।দেখি রেহান ভাইরা আর কতদূর।
বলেই আর একমুহূর্ত দাড়ালো না অনিক,এক প্রকার পালিয়ে গেলো সে।এদিকে রৌদ্র কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছে, ভাবছে,
“অনিক আবার কিছু টের পেলো নাতো? ”
ভেবেই কপালে এক আঙুল দিয়ে হালকা চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
— তোর জন্য আর কতযে ধরা পড়বো সানশাইন।

মেহমানরা চলে এসেছে। রেহান, তার বাবা,মা আর রেহানের এক কাজিন স্বপ্ন এই চারজনেই এসেছে। রেহান তার বাবা-মার একমাত্র ছেলে। এদিকে মেহমানরা আসতেই তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময়ে ব্যাস্ত বাড়ির ছেলে সদস্যরা। একটুপড় সেথায় গৃহীনিরাও উপস্থিত হয়।রেহানের বাবা জনাবঃ মোঃ ওসমান সিকদার আর তার স্ত্রী সায়মা খাতুন বরাবরই মুগ্ধ এই পরিবারের সকলের ব্যাবহারে।বেশকিছুক্ষন আলাপচারিতা এবং আপ্যায়ন শেষে ওসমান সিকদার অত্যন্ত বিনয়ী স্বরে বলে উঠেন,

“ভাই সাহেব, রুহি মামনিকে অনেক আগে থেকেই আমাদের পছন্দ কারন আমার এই পাগল ছেলেটা আমাদের বহু আগেই বলেছিলো যে সে নাকি রুহিকে পছন্দ করে। এতদিন এই বিষয়ে আমরা আগায়নি তাঁরও একটা কারন আছে বৈকি। রেহান আমাদের বলে রেখেছিলো যতদিন না সে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন সে বিয়ের ব্যাপারে কথা এগােবে না।ভাই সাহেব আপনি এমনটা একদমই মনে করবেন না যে রেহান আমার টাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একচুয়ালি ও নিজের শ্রম মেধা দিয়ে আমার ব্যাবসাকে আরোও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। ”
বলেই কিছুক্ষণ থামলেন তিনি। তারপর সায়মা খাতুন মিষ্টি হেসে বলতে লাগলেন,

— ভাইজান আমার শুধু একটাই ছেলে।আমি এখন রুহিকে নিজের ছেলের বউ করে নয় বরং নিজের মেয়ে হিসেবে চাচ্ছি।আশা করি আপনি আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না।
ওসমান সিকদার এবং তার স্ত্রীর কথা শুনে উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হন। কবির সাহেবের মন থেকে এতক্ষণে একটা পাথর সরলো যেনো।রেহানের বাবা-মার কথা শুনে তিনি নিশ্চিন্ত তার মেয়ে ও বাড়িতে ভালো থাকবেন ভেবে। এমন টুকটাক কিছু কথার মাঝেই সায়মা খাতুন রাফিয়া বেগমকে বলেন,
— আপা রুহি মামুনিকে আনুন নাহয় এবার।
— জি এক্ষুনি আনছি। বলেই তিনি এবং মাইমুনা বেগম গেলেন রুহিকে নিয়ে আসতে। পাঁচ মিনিট পর তারা রুহিকে নিয়ে নিচে নামে।রুহি আজকে হালকা মিষ্টি রংয়ের জামদানী শাড়ি পরেছে।হাতে কানে গলায় হালকা পাথরের অর্নামেন্টস।চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিকে বেশ মানিয়েছে তাকে।রুহি নিচে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়ে সকলকে সালাম জানায়,সায়মা খাতুন তার সালামের উওর দিয়েই তার হাত ধরে রেহানের পাশে বসিয়ে দেন।
রুহির থুতনিতে ধরে বলে ওঠে,

— বাহ আমাদের রুহি মামুনিটাকে তো বেশ মিষ্টি লাগছে দেখতে।
রুহি লজ্জায় মূর্ছা যায় কিছুটা কিন্তু পরক্ষণেই মনটা খারাপ করে ফেলে কেননা সে নিচে নামার সময়ও আড়চোখে রেহানের দিকে তাকিয়েছে সে একবারও মাথা তুলে তার দিকে তাকায়নি, এ-ইযে এখনো তার পাশে বসলো একবারও তার দিকে তাকায়নি।কেনো? আজ কি ওকে খুব বাজে দেখাচ্ছে? কই সবাই তো বললো বেশ মিষ্টি লাগছে দেখতে?
রুহির এসব ভাবনার মাঝেই ওসমান সিকদার বললেন,
— ভাই সাহেব আপনি অনুমতি দিলে আমি আজই ওদের বাগদানটা সম্পন্ন করতে চাই।তারপর নাহয় বিয়ের ডেটটা ফিক্সড করলেন।
ওসমান সিকদারের কথা শুনে সকলে খুশি হলেন। কবির সাহেব কিছু একটা ভাবলেন,পরক্ষণেই হাসি হাসি মুখ করে বললেন,

— ভাই সাহেব আপনার কথা ঠিকআছে।আজ নাহয় বাগদান হোক কিন্তু বিয়েটা আমার অরি মামুনির এডমিশন টেস্ট শেষ হলে তারপর নাহয় হবে। আর আরেকটা কথা।বিয়েটা আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে থেকে দিতে চাচ্ছি।
কবির সাহেবের মুখে গ্রামের বাড়ির কথা শুনে সকলেই কিছুটা চিন্তিত হলেন কিন্তু কিছু বললেন না।ওসমান সাহেব কবির এহসানের কথা শুনে মৃদু হেসে বললেন,
— ঠিক আছে। আপনি যেমনটা বলেন।
বলেই দুপরিবারের সম্মতিতে রুহি রেহানের বাগদান সম্পন্ন হয়।বাগদান সম্পন্ন হতেই জুবাইদা বেগম রেহানের মুখের সামনে মিষ্টি ধরেন রেহান তা মুখে নিতেই হঠাৎ করে জুবাইদা বেগম কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলে ওঠেন,

— একি রেহান তোমার গালে এটা কিসের দাগ।মনে হচ্ছে কিছুর সাথে আঘাত পেয়েছো?
জুবাইদা বেগমের কথা শেষ হতেই সকলের নজর পড়ে রেহানের দিকে, রেহান কি বলবে বুঝতে পারছেনা,হঠাৎ তার চোখ যায় রৌদ্রর দিকে যে এই মুহুর্তে তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। রেহান কটমট করে তাকাতেই রৌদ্র এগিয়ে এসে রেহানের মুখটা উঁচিয়ে বলতে লাগলো,
—কই দেখি,হ্যা তাইতো কি করে এমন আঘাত পেলি রেহান? কালও তো ঠিক ছিলো।
রৌদ্রর মুখে এমন কথা শুনে রেহান মনে মনে বলতে থাকে,
— শালা নিজেই মেরে এখন আবার ন্যাকা সাজছে।
রেহান এতক্ষণ পর মুখ খুলে,বলে,
— আসলে গতকালকে বাথরুমের নবের সাথে লেগে এমনটা হয়েছে। এ তেমন কিছু না সেড়ে যাবে।
এতক্ষণ পর সকলেই শান্ত হলেন। দুপরিবার একসঙ্গে লাঞ্চ করে নিলেন বিয়ের বিভিন্ন আলাপ চারিতার মাঝে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে ভূপৃষ্ঠে, রেহানের পরিবার বিদায় নিচ্ছে সকলের থেকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রেহান এখনো একবারের জন্যও রুহির দিকে তাকায়নি এমন কি সবার সাথে কথা বললেও তার সাথে একটা টু শব্দও করে নি।এ নিয়ে রুহির মনে ঘোর আমাবস্যা নেমেছে। মেয়েটা মুখ কালো করে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। এমন সময় অনিক দ্রুত পায়ে হেটে আসে রুহির কাছে অতঃপর ব্যাস্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
— রুহি চলতো।
— কই?
— ছাদে।
— আরে এই ভর সন্ধ্যায় ছাদে কেনো যাবো ভাইয়া? আর তাছাড়া এতগুলো মেহমান আছেন এখানে আমি কি করে যাই বলো?
— ওরে রুহি তোর সবে বাগদান হয়েছে বিয়ে নয়।এতো নববধূ ভাব নিতে হবে না তোর চল।
বলেই রুহির আর কোন কথার তোয়াক্কা না করে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ছাদে। রুহি ছাদে আসতেই অনিক হাত ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,

—চিলেকোঠায় যা বুড়ি।
— কেনো ওখানে যাবো কেনো?
— তোর জন্য গিফট রেখেছি।
— সত্যিই খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে রুহি।
অনিকও পরপর মাথা ঝাকায়।রুহি আর কিছু না বলে চলে যায় চিলেকোঠার রুমটিতে। অনিকও দ্রুত সরে আসে সেখান থেকে, নেমে আসে ছাদ থেকে। দুটো সিড়ি পার হতেই রৌদ্রর মুখোমুখি পড়ে সে অতঃপর রৌদ্র কে দেখেই একটা দাঁত বের করা হাসি দেয় অনিক। রৌদ্র ও কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। সে বেশ ভালো করেই জানে চিলেকোঠায় কি আছে।

রুহি চিলেকোঠার রুমে প্রবেশ করতেই তার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। তাকিয়ে দেখে রেহান তার দিকেই ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে দুহাত বুকে গুজে।রেহানকে এই মুহুর্তে এখানে, এভাবে দেখে শুকনো ঢোক গিলে রুহি,পিছন ফিরে যেই না রুম থেকে বের হতে নিবে ওমনি তার শাড়ির আঁচলে টান পড়ে,রুহি চমকে উঠে, হাত দিয়ে আঁচলটি ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করতে থাকে অতঃপর ব্যার্থ হয়ে করুন স্বরে বলে,
— ছেড়ে দিননা।কেউ এসে যদি দেখে কি ভাববে বলুনতো?
রুহির এমন কথায় মুচকি হাসলো রেহান,দুষ্ট কন্ঠে বলতে লাগলো,
—কেও আসবে না ডিস্টার্ব করতে শ্যামবতী।নিচে বডিগার্ড হিসেবে আপনার ভাইয়েরা দাড়িয়ে আছে।
এ কথা শোনামাত্রই আকাশসম চমকে পিছনে ঘুরে রুহি, অবাক কন্ঠে বলে,

— ভাইয়েরা মানে?
— বোকা! ভাইয়েরা বলতে রৌদ্র আর অনিক নিচে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। তোমাকে এখানে নিয়ে আসার কথাতো আর সরাসরি রৌদ্রকে বলতে পারিনা,কেননা শত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও সে আমার বউয়ের আপন বড় ভাই একটু হলেও নিজের বোনের প্রতি সেনসিটিভ হবে এটাই স্বাভাবিক তাইতো অনিককে দিয়ে তোমাকে এখানে আনিয়েছি। আর এখন তারা দু’জনেই নিচে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। তাছাড়া একটা কথা বলো তো, তুমি কি সবসময় এমন বোকা নাকি আমি সামনে আসলেই বোকা হয়ে যাও।
— ঐতো আপনি সামনে আসলেই……
বলতে গিয়েই দুহাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে রুহি।মনে মনে ভাবে,
“ইশ ঘোরের ঘরে কি কথাটাই না মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো।ছিঃ কি ভাবছেন উনি।”
অরিনের এমন কান্ড দেখে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে রেহান, অতঃপর দুষ্টমি ভরা কন্ঠে রুহির দিকে এগিয়ে এসে বলতে থাকে,

— তাতো আমিও জানি মিসেস উডবি রেহান।
রেহানের এমন কথা শুনে আমতা আমতা করতে থাকে রুহি,হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলে উঠে,
— হেই ওয়েট।আপনি আজকে সারাক্ষণ আমায় ইগনোর করেছেন একবার আমার দিকে তাকাননি অবধি। আর এখন এখানে ডেকে এনেছেন কেন?
রুহির এমন কথায় মুচকি হেসে নিজেদের মাঝের দুরত্ব আরোও ঘুচিয়ে নেয় রেহান।অতঃপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলে ওঠে,

— আগ্নেয়গিরি কি নিজে জানে সে কতটা ভয়ংকর উত্তাপ দেয়? জানে না তো! ঠিক তেমনি তুমি নিজেও জানোনা আজ তোমাকে কতটা ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।হয়তো জানতে হলে আমার চোখদুটো দিয়ে নিজেকে দেখো তাহলেই বুঝবে।আর তোমার এই কাজলরাঙা এক সমুদ্রের অতল গহ্বরসম চোখ দুটির দিকে তাকালে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো নিশ্চিত। এতটা পাগল করো কেন আমায়? জানো আজ কতোটা কষ্টে নিজেকে সংযত রেখেছি আমি? বারবার এই বেহায়া চোখদুটো তোমার চোখদুটোতে হারানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠছিলো তাইতো ভুলেও তোমার দিকে তাকাইনি।জানি তাকালে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো,আর দেখো এখন কেমন হারিয়ে ফেলেছি আমি নিজেকে।
বলেই দু’হাতের নরম আজলায় আঁকড়ে ধরে রুহির মুখটি।রুহি এখনও নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে রেহানের পানে।ভাবছে এই মানুষ টা কি করে তাকে এতটা ভালোবাসতে পারে? তার এমন ভাবনার মাঝে হুট করে রুহি প্রশ্ন করে ওঠে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১০

— আমায় এত ভালোবাসেন কেনো?
রুহির এমন প্রশ্নে তাকে সযত্নে বুকে চেপে ধরে রেহান।রুহিও পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে তাকে।
রেহান একইরকম ঘোর লাগা কন্ঠে বলতে থাকে,
— আমার অস্তিত্ব তুমি তাই।
— সবসময় এভাবেই ভালোবাসবেন তো?
— হুম বাসবো যতদিন এই দেহে প্রান থাকবে ততোদিন এরচেয়েও বেশি ভালোবাসবো।
বলেই রুহিকে ছেড়ে দিয়ে তার কপালে শব্দ করে চুমু খায় রেহান,রুহিও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here