না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৪

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৪
মাইশা জান্নাত নূরা

পিহুকে নিয়ে জবরুল, সোমা আর সোনালী বিল্ডিং এর ভিতরে প্রবেশ করে লিফটে উঠে সোজা ৫ তলায় চলে এলো। এরপর লিফট থেকে বের হয়ে হাতের ডানপার্শের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একবারে শেষ মাথায় থাকা ফ্লাটটির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেখানে কড়া নাড়লো। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাটটির দরজা খুলে গেলো।
ওদের সম্মুখে চৌকাঠের ওপারে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন জবরুলের অফিসের ম্যনেজার কাশেম সাহেব। প্রায় ৫০ বছর বয়সী কাশেমের বর্ণ বি*দ*ঘু*টে কালো রংয়ের, নাকটা অনেকটা বোঁ*চা, চোখের আকৃতি ছোট ও ভিতরটা কেমন যেনো ঘোলাটে মতো, মাথার ৩ভাগ অংশজুড়ে চুলের ছিটেফোঁটাও নেই। উপরি ও নিচভাগের দাঁতগুলো বের করে হাসার ফলে তার হলদেটে বর্ণের দাঁতগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। উচ্চতা খুব জোর ৫ফুট হবে। স্বাস্থ্য অনেক। একটা খয়েরি রঙের শার্ট আর কালচে রংয়ের প্যন্ট পড়েছেন কাশেম। ভুঁড়িটা অনেকটা সামনের দিকে বাড়ানো হওয়ায় সেখানের শার্টের বোতামগুলো মনে হচ্ছে খুব জোর পূর্বক আটকে আছে। একটু বেশি নড়চড় হলে বোতাম গুলোর সেলাই ছুঁ*টে যাবে।
জবরুল হাসিমুখে বললেন…..

—”উনিই হলে আমাদের অফিসের ম্যনেজার কাশেম স্যার। উনার সাথেই পিহুর বিয়ে ঠিক করেছি আমি।”
সোমা আর সোনালী কাশেমের দিকে কেমন যেনো নজরে তাকিয়ে আছে। জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করছে ওরা। পিহুর দৃষ্টি পুরোপুরি নিচের দিকে স্থির। অনুভূতি শূন্য জী*বি*ত লা*শে*র মতো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো পিহু। সোমা পিহুর থুতনি ছুইয়ে বললেন…
—”এই হলো আমাদের মেয়ে আপনার হবু বউ প্রহেলিকা পিহু। বয়স কিন্তু মাত্র ২০ পেরিয়েছে।ভাড়ি মিষ্টি আমাদের মেয়ে। ঘরের সব কাজ পারে।”
সোনালী মুখ বাঁ*কি*য়ে মনে মনে বললো…..
—”এই ৫০ বছরের বুড়োর সামনে বয়স কমিয়ে আরো কতো কচি বানাবে মা এই অ*প*য়া*টাকে! ঢং দেখলে বাঁচি না।”
কাশেম লো*ভ*নী*য় নজরে পিহুকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন। পরপরই নিজের দৃষ্টি সংযত করে কাশেম বললেন….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—”ভিতরে আসেন আপনারা। অনেকক্ষণ থেকে কাজী সাহেবকে নিয়ে অপেক্ষা করতেছি আমরা শুভকাজ অতিদ্রুত শেষ করার জন্য।”
অতঃপর জবরুল সহ সোমা-সোনালী পিহুকে নিয়ে ফ্লাটের ভিতরে প্রবেশ করলেন। কাশেম ফ্লাটের মূল দরজা ভিতর থেকে আটকে দিলেন। ফ্লাটের ভিতরে ড্রয়িং রুমে সোফায় পূর্ব থেকেই বসে ছিলেন একজন ৬০ উর্ধো বয়সের সাদা পান্ঞ্জাবি পরিহিত কাজী সাহেব ও কাশেমের বয়সীই বলা যায় এমন আরো ২জন পুরুষ।
জবরুল ও কাশেম সেই দু’জন পুরুষের পাশে বসলেন আর ওদের মুখোমুখি সোমা ও সোনালী নিজেদের মাঝে পিহুকে নিয়ে বসলেন।

পিহুর পরণে একটা হালকা মিষ্টি রংয়ের থ্রি-পিস রয়েছে। ওড়নাটা দিয়ে শরীরের উপরি অংশ ভালোভাবেই ঢাকা রয়েছে। চুলগুলো হাতখোঁপা করে রাখা। পিহুর দু’হাতের মা*রে*র ক্ষ*ত গুলো ঢাকতে সোমা পিহুর দু’হাত ওর ওড়নার নিচে ঢুকিয়ে রেখেছেন। পিহুর দু’গালই স্বাভাবিক এর তুলনায় লালচে হয়ে আছে। জবরুলের শক্ত হাতের থা*প্প*ড় গুলোর দা*গ ওর শরীরের বর্ণ ঢাকতে সফল হয় নি।
কাশেমের হাতের পাশে বসা সেই অন্য দুই ব্যক্তির মাঝে একজন বললেন…..
—”কণের জন্য যে নতুন বেনারসিটা কিনলা কাশেম ভাই সেইটা পরাইয়া আনতে বলো কণেকে। তারপর না হয় বিয়ের কাজ শুরু করা হবে।”

কাশেম কিছু বলতে নিবেন তার আগেই জবরুল বললেন….
—”এমনিতেই আমাদের আসতে আসতেই দেড়ি হয়ে গিয়েছে। এখন যদি কণেকে সাজাতে পাঠানো হয় তাহলে উপরন্তি আরো সময় নষ্ট হবে। শুভ কাজে এতো দেড়ি করা ঠিক না। বিয়েটা হয়ে যাক তারপর যতো সময় নিয়ে সাজানোর সাজানো হবে।”
কাশেম এবার বললেন….
—”হুম আপনি ঠিক বলেছেন। সেটাই করা হোক। আগে বিয়ে পরে সাজ। কাজী সাহেব আপনি বিয়ের কার্যক্রম শুরু করুন।”
কাশেমের কথানুযায়ী কাজী বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলেন। কাজীসাহেব প্রথমে কাশেমকে কবুল বলার জন্য বললে কাশেম কোনোরূপ সময় না নিয়ে পরপর ৩বার কবুল বললেন। এবার কাজী যথা নিয়মে পিহুকে কবুল বলার জন্য বললেন। কিন্তু পিহু পুরোপুরি নিরব হয়ে আছে। দৃষ্টি আগের মতোই নিচের দিকে স্থির। পিহু শ্যমবর্ণের দু’গাল ওর নিরব চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে একটু পর পর।

সারফারাজ ওর প্রাইভেট হেলিকপ্টারটা জবরুল যেই বিল্ডিং এর একটা ফ্লাটে পিহুকে নিয়ে এসেছে কাশেমের সাথে জোরপূর্বক ওর বিয়ে দেওয়ার জন্য সেই বিল্ডিং এর ছাদে ল্যন্ড করতে বলে পাইলটকে। হেলিকপ্টারটি ল্যন্ড করার পর সারফারাজ আর আহাদ দু’জনেই হেলিকপ্টার থেকে নিচে নামলো। আহাদ ছুটে ছাদের কর্ণারে গিয়ে নিচে তাকালো। বিল্ডিংটার পুরো এড়িয়া ইতিমধ্যে সারফারাজের ৫০ উর্ধো গার্ডসরা, পুলিশ ও আর্মি সদস্যরা ঘিরে নিয়েছে।

আহাদ সারফারাজের পাশে এসে দাঁড়ালো। সারফারাজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ বিভাগের স্পেশাল ডগ টিম। ৪জন পুলিশ সদস্য ৪টে কু*কু*রে*র গলায় দড়ি বেঁধে রেখেছে। সারফারাজ হেলিকপ্টারে উঠার আগেই নিজের অফিসকক্ষের টেবিলের ড্রয়ার থেকে পিহুর ব্যবহৃত একটা ওড়না সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। সারফারাজ আহাদের দিকে ওড়নাটা দিলে আহাদ ওড়নাটা একজন পুলিশ সদস্যকে দিলো। পুলিশটি সেই ওড়নাটা ৪টে কু*কু*রের নাকের কাছে ধরলো। সারফারাজ বললো….
—”শুঁ*কো, এই ওড়নার গন্ধ এমন ভাবে তোমরা নিজেদের ভিতর ধারণ করো যেনো খুব দ্রুত আমাকে আমার প্রিটিহার্টের কাছে পৌঁছে দিতে পারো।”
গন্ধ শোঁ*কা হতেই কু*কু*র গুলো সিঁড়ি দিকে ছোটার জন্য ছট ছট করছে। সারফারাজ হুকুম দিলো….
—”রান ফাস্ট।”

কু*কু*রগুলোর সঙ্গে পুলিশ চারজন দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে যেতে শুরু করলো। এই বিল্ডিংটা ১২ তলা বিশিষ্ট। সারফারাজ আর আহাদ ও পুলিশগুলোর পিছন পিছন ছুটছে। কু*কু*রগুলো ৫ তলায় আসার পর আর নিচের দিকে গেলো না। মেঝের উপর নাক ঠেকিয়ে শুঁ*ক*ছে ওরা। হাতের ডান পার্শের রাস্তা ধরে একটু একটু করে এগোচ্ছে ওরা। ৫ম তলার একে বারে শেষ ফ্লাটের সামনে আসার পর কু*কু*র গুলো দরজার আ*ঘা*ত করার চেষ্টা করছে আর উচ্চস্বরে ‘ঘেঁ*উ ঘেঁ*উ’ করছে। সারফারাজের বুঝতে বাকি রইলো না পিহু এই ফ্লাটের ভিতরেই অবস্থান করছে।
আহাদ ইতিমধ্যেই নিচ থেকে কিছু গার্ডস ও আর্মি সদস্যদের এখানে আসার জন্য বলে দিয়েছে। তারা আসামাত্র সারফারাজ হুকুম দিলো দরজাটা ভে*ঙে ফেলার। ৫-৬ জন শক্তিশালী গার্ডস দরজায় পর পর নিজের হাতের উপরিঅংশের মাংসপেশি দ্বারা আ*ঘা*ত করতে শুরু করলো। দরজা অনেকটা আলগা হয়ে এসেছে বুঝলে সারফারাজ দরজার উপর স্ব*জো*রে একটা লা*থি প্রয়োগ করলো। সঙ্গে সঙ্গে দরজাটি বি*ক*ট শব্দে ভে*ঙে ফ্লাটটির ভিতর সাইডে মেঝের উপর পরে গেলো।

ভিতরে ড্রয়িংরুমে তখনও বসে আছে কাশেম, তার দুই পরিচিত পুরুষ সঙ্গী, জবরুল, কাজী সাহেব, সোমা, সোনালী আর পিহু। কাজী সাহেব ব্যতিত বাকি পুরুষ ৪জন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সকলের দৃষ্টি দরজার বাহিরের দিকে স্থির। সারফারাজ ও আহাদ সহ কয়েকজন ব*ন্দু*ক ধারী বিশাল দেহের অধিকারী কালো পোশাক পরিহিত গার্ডস ফ্লাটের ভিতরে প্রবেশ করলো। সারফারাজকে দেখা মাত্র সোমা আর সোনালীর ভ*য়ে কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছে যেনো। আ*ত*ঙ্কে*র ঘাম ওদের দু’জনের কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে। পিহু এখনও অনুভূতিশূন্য ভাবে বসে আছে সোফায়৷ চোখ তুলে তাকাচ্চে না সে সামনে।

কাশেম ও তার দুই পুরুষ সঙ্গী তো অত্যন্ত অবাক এমন ঘটনার জন্য। এই প্রথম জবরুল আর সারফারাজ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। জবরুল ভাবে নি এতো তাড়াতাড়ি সারফারাজ তাদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে।
সারফারাজ রাগে লালচে বর্ণ ধারণ করা মুখশ্রী নিয়ে ড্রয়িংরুমে অবস্থান করা প্রতিটি ব্যক্তিকে চোখ বুলালো। কাশেম নিজ স্থান থেকে সরে সারফারাজের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন….
—”এই কে আপনি? একটা ভদ্র পরিবেশে এসে এমন গু*ন্ডা*মি করছেন কেনো হ্যা?”
সারফারাজ অ*গ্নি দৃষ্টি নিয়ে কাশেমের দিকে তাকালে কাশেম ভ*য়ে সাইডে সরে দাঁড়ালো। সারফারাজ দ্রুত কদমে পিহুর কাছে এসে ওর দু’কাঁধ স্পর্শ করে ঝাঁকিয়ে বললো…..
—”কবুল বলছো তুমি? ঐ পিহু? প্রিটিহার্ট একবার বলো তুমি ঐ হা*রা*মী*র বাচ্চারে কবুল করো নি! কি রে কথা বলোস না কেন? বলছিস তুই কবুল? বলছিস কবুল? কথা বল? যদি বলিস কবুল বলছিস তাহলে কসম তুই সহ সব কয়টার জান নিয়া ফেলবো আমি।”
জবরুল সারফারাজের কাঁধে হাত রেখে বললেন….

—”অনেকক্ষণ আগেই বিয়ে হয়ে…!”
সারফারাজ ‘এই একদম চুপ’ বলে জবরুলের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাজামার পকেট থেকে রি*ভ*ল*বারটা বের করে তার দিকে তাঁক করলো। সারফারাজ এর দু’চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে এইমূহূর্তে। জবরুল ভ*য়ে ধপ করে সোফার উপর বসে পড়েছে। দু’হাত উপরের দিকে উঁচিয়ে ধরেছে। সারফারাজ গ*র্জে উঠে বললো…..
—”আর একটা শব্দ যদি ঐ মুখ দিয়া বের হইছে তাহলে তোর মুখের মধ্যে এই রি*ভ*ল*বারের ন*ল ঢুকিয়ে পুরো রি*ভ*ল*বার ফাঁকা করে দিবো আমি।”
জবরুল ভয়ে কেঁপে উঠলো তৎক্ষণাৎ। আর একটা টু শব্দ করার সাহস তিনি পেলেন না। বাকিরা তো আরো অধিক ভ*য়ে গুঁটিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সারফারাজ আবারও পিহুর কাছে এসে ওর উপর কিছুটা ঝুঁকে বললো…..
—”এখনও কথা বলবি না তুই? কবুল বলছোস কিনা বলবি না?”

পিহু কোনো প্রতিত্তুর করলো না দেখে সরফারাজ সঙ্গে সঙ্গে জবরুলের বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে গুলি করলো। পিহু এবার কেঁপে উঠলো। জবরুল ব্য*থা*য় আ*র্ত*নাদ করে উঠলো। সোমা জবরুলকে বললো…..
—”কসমটা উঠায় নাও তুমি পিহুর উপর থেকে। নয়তো এমপি সাহেবের হাতেই সবাইকে ম*র*তে হবে।”
কসম শব্দটা শোনামাত্র সারফারাজ পিহুর নীরবতার কারণ বুঝতে পারলো। পিহুর পাথরের ন্যয় অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে থাকার কারণ বুঝতে পারলো। জবরুল কসম তখনও উঠালো না দেখে সারফারাজ এবার সোমারও এক পায়ে গু*লি করলো। এরপর সোনালীরও। সোনালী ‘আম্মা গো ‘ বলে চি*ল্লি*য়ে উঠলো য*ন্ত্র*ণা*য়। গু*লি*র আ*ঘা*তে কা*বু প্রায় ওরা ৩জনই। সারফারাজ একবার আর একটা গু*লি করলো জবরুলের আরেক পায়ে। যেই না সারফারাজ সোমার দিকে আরেকবার গু*লি তাঁক করলো ওমনি জবরুল পিহুকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৩

—”উঠাইলাম, উঠাইলাম আমি কসম। পিহু রে তোরে দেওয়া কসমটা আমি উঠাইছি। সত্যটা বলে দে তুই ওনারে।”
পিহু সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে ঝাঁ*পি*য়ে পড়লো ওর এমপির সাহেবের বুকের মধ্যে। এতোসময়ের চেপে রাখা কান্নারা এবার বাঁধহীন ভাবে বেড়িয়ে এলো। পিহু হু হু করে কাঁ*দতে কাঁদতে বললো….
—”বলি নি আমি কবুল এমপি সাহেব। আমি কাউকে স্বামী রূপে গ্রহন করি নি। বলি নি কবুল। বলি নি।”
সারফারাজও একহাতে পিহুকে জড়িয়ে ধরলো। বুকের ভিতর এতোসময় কাজ করা ভ*য়*টা এবার দূর হলো। পিহু অন্যকারোর হয় নি ওর এপমি সাহেবেরই আছে।

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here