না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৫
মাইশা জান্নাত নূরা
সারফারাজ পিহুকে নিজের বুক থেকে ছাড়িয়ে ওর দু’চোখের পানি স্বযত্নে মুছিয়ে দিলো। অতঃপর ওর গালের উপর একহাত রেখে বললো….
—”আল্লাহ ব্যতিত কারোর ক্ষমতা নেই এই সারফারাজ ইউসুফ খানের থেকে তার প্রিটিহার্টকে কেড়ে নেওয়ার। তোমার এই কাজল কালো হরিণের ন্যায় নয়নজোড়া নোনাজলে আর ভাসতে দিও না।তোমার চোখের পানি তোমার এমপি সাহেব সহ্য করতে পারে না প্রিটি।”
সারফারাজের কথায় পিহুর কান্না এবার পুরোপুরি থেমে গেলো। পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। দাঁতে দাঁত চেপে গু*লি*র ক্ষ*তে*র য*ন্ত্র*ণা সহ্য করছেন জবরুল, সোমা ও সোনালী। তবে সোনালী এর ভিতরেই কয়েকবার সেন্স লে*স হয়ে গিয়েছিলো আবার একটু পরেই আপনা-আপনি ওর সেন্স ফিরে এসেছে।
ওদের থেকে কিছুটা দূরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন কাশেমের সাথে আছে সেই দুই ব্যক্তি। একজনের নাম রাশেদ ও আরেকজনের নাম হামিদ। রাশেদ হামিদকে বললেন….
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—”এ আমরা কোথায় ফেঁ*সে গেলাম ভাই! উনি তো একজন এমপি। ওনার যে কতো ক্ষমতা তার হালকা নমুনা ইতিমধ্যেই আমাদের দেখা হয়ে গিয়েছে। এবার এই কাশেম ভাইয়ের জন্য আমাদের কপালেও শ*নি নাচছে।”
হামিদ রাশেদের কথায় সায় জানালেন। কাশেম ওনাদের দু’জনের পাশে এসে দাঁড়ালে হামিদ বললেন….
—”মিয়া তুমি বিয়া করবা অথচ যার সাথে তোমার বিয়া হবে তার আগে-পিছনে কি আছে, কি হতে চলেছে কোনোকিছুরই খোঁজ-খবর নাও নি জন্য আমাদেরও ফাঁ*স*তে হলো তোমার সাথে৷ এখন একটা বুদ্ধি বের করো তো এই বি*প*দ থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য।”
কাশেম ফিসফিস করে বললেন….
—”আমি কি বুদ্ধি বের করবো! আমার মাথার ভিতরটা পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গিয়েছে ঠিক আমার মাথার বাহিরভাগের মতো।”
কাশেমের এরূপ কথা শোনামাত্র রাশেদ কাশেমের টাক পড়া অংশের দিকে একবার তাকালেন। কাশেম আবারও বললেন….
—”এখন কেবল আল্লাহর নাম জপো। যেনো এখান থেকে জান হাতে নিয়ে বের হয়ে যেতে পারি।”
কাশেমের এমন কথায় হামিদ বি*র*ক্ত হলেন। কিন্তু কোনো প্রতিত্তুর করলেন না তিনি।
সারফারাজ উপস্থিত সকলের উপর একবার চোখ বুলিয়ে পরপরই পিহুর উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—”এখানে থাকা প্রত্যেকটা ব্যক্তি তার নিজ নিজ জায়গা থেকে অ*প*রা*ধী। কারোর অ*প*রা*ধে*র পরিমাণ আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে তো কারোর তার থেকে সামান্য কম। তাই প্রত্যেককেই তার নিজ নিজ কর্মফল ভোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে তুমি কি চাও প্রিটি?”
পিহু ওর য*ন্ত্র*ণা*য় কা*বু প্রায় হওয়া বাবা জবরুল, সৎ মা সোমা ও সৎ বড় বোন সোনালীর দিকে তাকালো। আপন বলতে তো এই ৩জন ব্যক্তিকেই চিনে এসেছে পিহু ওর ২২ বছরের জীবনে। কিন্তু তারা তো আসলে আপন ছিলো না। তারা প্রত্যেকেই পিহুকে ক*ষ্ট দিয়ে সুখ খুঁজে নিয়েছে নিজেদের। তাহলে আজ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা দেখালে পিহুর আত্মসম্মানবোধ এর মৃ*ত্যু ঘটবে। ঘটবে বলতে এক প্রকার গলা চে*পে ধ*রে মৃ*ত্যু ঘটানো হবে। পিহু শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—”আমি ন্যায় চাই, এমপি সাহেব। অ*ন্যায়কে অ*ন্যায় বলতে গিয়ে আমার কণ্ঠে কোনো দ্বিধার ঠাঁই আমি দিতে চাই না। অ*ন্যায়*কারী সে যেই হোক না কেনো! আমার বাবা, মা কিংবা বোন!তাদেরও ক্ষমা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। প্রথমে তাদের নিজ কর্মের জন্য শা*স্তি ভোগ করতে হবে তারপর যদি সত্যিকারের অনু*শো*চনার ছাপ আমি তাদের চোখে দেখতে পাই তখন হয়তো ক্ষমা করার কথা ভেবে দেখা সম্ভব হবে। কিন্তু তার আগে নয়। আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি পরম করুণাময়, যিনি তাঁর বান্দাদের অসীম ভালোবাসেন। তিনিও কাউকে বিনা বি*চারে ছেড়ে দেন না। মৃ*ত্যু*র পর পরবর্তী জীবন অর্থ্যাৎ আখিরাতে তিনি প্রত্যেককে দাঁড় করাবেন ন্যায়বিচারের ময়দানে। সেখানে ধাপে ধাপে হিসাব হবে প্রতিটি কাজের। পূর্ণপুরি শা*স্তি ভোগ করার পরই আল্লাহর রহমতে মুক্তি পেতে পারবেন তার পা*পি*ষ্ঠ বান্দারা। তাই ন্যায়বিচারের পথে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ আমার নেই। অ*ন্যায় করলে শা*স্তি পেতে হবেই এটা সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হওয়ার ও পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার মতোই চিরন্তন সত্য।”
পিহুর চিন্তা ও ওর কথাগুলো শুনে সারফারাজ মুগ্ধ হলো। সারফারাজ হেসে বললো….
—”এই গুণী কথাগুলোই তোমার থেকে আশা করেছিলাম আমি প্রিটি। কিন্তু যদি এসব না বলে বলতে যে আমি যেনো তোমার বাবা-সৎ মা ও বোন সহ বাকিদের আর কিছু না করি তাদের ক্ষমা করে দেই তাহলে এত্তোক্ষণে তোমার দুই কান-ই গরম করে দিতাম আমার শক্ত হাতের ছোঁয়া দ্বারা।”
সারফারাজের এরূপ কথা শোনামাত্র পিহু সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে নিজের গাল ও কান ঢাকার বৃ*থা চেষ্টা করলো।
সারফারাজ সোমা আর সোনালীর দিকে তাকিয়ে বাঁ*কা হেসে বললো….
—”আমার মতো একজন সুদর্শন, ক্ষমতাওয়ালা পুরুষকে সতীনের মেয়ের জামাই হিসেবে পাবেন এটা হজম হচ্ছিলো না আপনার তাই না হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা?”
সোমা বারকয়েক শুকনো ঢো*ক গি*ল*লো। সারফারাজ আবারও বললো….
—”বাঁচার ইচ্ছে কি আছে নাকি ফুরিয়ে গিয়েছে আপনাদের হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা ও বড় আপা?”
সারফারাজের শীতল কন্ঠে করা প্রশ্নে সোমা ও সোনালীর শরীর কেঁপে উঠলো। ভয়ের এক অদ্ভুত তরঙ্গ তাদের লোমকুন্ঠিত করে তুললো। একদিকে পায়ে অ*সহ্য য*ন্ত্র*ণা করছে অন্যদিকে ওদের মনে হচ্ছে সারফারাজ ওদের সামনে জীবন ও মৃ*ত্যু*র দু’টো টিকিট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টিকিট দু’টোর বর্ণ ও নকশা একই রকম। ভু*ল হয়ে গেলে জীবন শেষ। মৃ*ত্যু ওদের জন্য তখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
সোনালী দ্রুত স্বরে বললো….
—”বাঁচতে চাই। আমি বাঁচতে চাই এমপি সাহেব। দয়াকরে আমায় প্রাণে মা*র*বে*ন না। আমার বয়স কম। নিজের বোধ-বুদ্ধিগুলোকে এতোকাল কাজে লাগাই নি। তাই অনেক ভু*ল*ই করে ফেলেছি। কিন্তু এখন থেকে আমি আর কোনো ভু*ল করবো না। আমায় বাঁচতে দিন।”
সোনালীকে এমপি সাহেবের কাছে কেবল নিজের জীবন ভি*ক্ষা চাইতে দেখে সোমার ভিতরটা যে রাগে-দুঃখে কি পরিমাণ জ্বা*লা করছে তা সে মুখে বলে বোঝাতে পারবে না। সোমা সোনালীর দিকে তে*ড়ে আসা বা*ঘি*নী*র মতো তাকিয়ে বললো….
—”দুধ-কলা দিয়ে এতোকাল কাল-সা*প পুষছি আমি। এখন গ*জে উঠে পাংখা মেলে উড়া শিখছিস তো নিজের মায়েরে ভুইলা গেলি! অ*কৃ*ত*জ্ঞে*র বাচ্চা অ*কৃতজ্ঞই হইছিস।”
সোনালী ওর মায়ের কথায় কোনো পাত্তা দিলো না। সারফারাজ ওর হাতে থাকা রি*ভ*ল*ভারটার উপর দৃষ্টি স্থির করে তাতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো….
—”এই রি*ভ*ল*ভারে এখনও গুণে গুণে দু’টো গু*লি লো*ড করা আছে। এই দু’টো গু*লিই যথেষ্ট আপনাদের দু’জনের মাথার খু*লি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।”
এই বলে সারফারাজ ওর রি*ভ*ল*ভারটা প্রথমে সোনালীর দিকে তাঁক করলো। সোনালী নিজের দু’হাত উপরের দিকে উঠিয়ে ভী*ত কন্ঠে বললো….
—”দোহাই লাগে এমপি সাহেব আমারে মা*র*বে*ন না। এই জানের প্রতি আমার বহুত মায়া আছে। বহুত মোহাব্বত করি আমি নিজেরে। এতো তাড়াতাড়ি আমি ম*র*তে চাই না। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।”
সোমা দাঁতে দাঁত চেপে বললো….
—”মা*রু*ন ওরে। মা*ই*রা ফেলুন এই নি*মো*খা*রা*মের বাচ্চারে। দুই চোক্ষে আর সহ্য হচ্ছে না এরে আমার। আপনে না মা*র*তে পারলে ব*ন্দু*ক*টা আমায় দেন। আমি মা*র*বো।”
এরপর সারফারাজ রি*ভ*ল*ভা*রটা সোমার দিকে তাঁক করলে সোমা ভী*ত নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন….
—”হবু জামাই বাবা, আমি তো আপনার একমাত্র সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা হই। আমারে যদি মা*রে*ন তাইলে বিয়ার পর আপনেরে জামাই আদর কে করবে কন? আপনারে ভালো-মন্দ খাবারই বা কে রাইন্ধা খাওয়াবে? আমারে মা*ই*রা ফালাইলে তো ল*স আপনারই। চিন্তা কইরা দেখেন একবার আমার কথাখান। আমি কি ভু*ল কইছি?”
মা-মেয়ের এমন গি*র*গি*টি*র মতো রং বদলের রূপ দেখে জবরুলের শরীর রাগে জ্ব*ল*ছে। সারফারাজ ওর হাতে থাকা রি*ভ*ল*ভারের নলটা নিজের কপালের বাম পার্শে হালকা ভাবে ঘঁ*ষ*তে ঘঁ*ষ*তে বাঁকা হেসে বললো….
—”এখন কেবল একটা ডায়লগ-ই আমার মুখে আসতেছে, ‘নাটক করার জন্য আমার হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা সেরা রেএএএ’।”
সোমা জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। সারফারাজ তৎক্ষনাৎ রি*ভ*ল*ভারটা সোমার মাথার সাথে ঠেকালে সোমা ভ*য়ে জড়োসড়ো হয়ে দু’চোখ বুঁজে ফেললো। সারফারাজ দাঁতে দাঁত চে*পে বললো…..
—”এক্ষুণি মুখ খুলবেন। আমার হবু বউয়ের সাথে ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে যে অ*ত্যা*চা*র গুলো করে এসেছেন, আমার হবু শ্বশুরের মনে যে বি*ষ ছড়িয়েছেন সব বলবেন। মুখ থেকে যদি একটু অপ্রয়োজনীয় ও মি*থ্যা শব্দ বের হয় তাহলে কসম আমার হাত একটুও কাঁপবে না আপনার মাথার এপাশ থেকে ওপাশ ছি*দ্র করে দেওয়ার জন্য।”
সোমা বললেন….
—”বলছি, বলছি। সব বলছি আমি।”
জবরুল সোমার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে। পিহু পুরোপুরি নিশ্চুপ। সোনালী কোনো বাঁধা প্রয়োগ করলো না। যেখানে নিজের জীবন বি*প*দ সীমার সর্বস্তরে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে নিজের পালিত বাবার সামনে মান রক্ষা করার চিন্তা করা তো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। সোমা বললেন….
—”জবরুলের সাথে বিয়ে হয়ে তার বাড়িতে উঠার পর যখন আমি নতুন ভাবে বাঁচার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম তখন আমার সংসারে আমার সতীন কন্যা পিহুকে বো*ঝা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নি।”
জবরুলের মুখশ্রীর রং মূহূর্তেই পাল্টে গেলো সোমার কথা শুনে। সোমা কিয়ৎক্ষণ থেমে আবারও বললেন….
—”আমরা মা-মেয়ে মিলে পিহুর উপর সবসময় অ*ত্যা*চার করেছি। ওকে উঠতে-বসতে খোঁ*টা দিয়েছি। ক*টু কথা শুনিয়েছি। ঠিকভাবে খাবার পর্যন্ত খেতে দেই নি। সংসারের সব কাজ ওকে দিয়ে করিয়েছি। প্রথম প্রথম কাজে অনেক ভু*ল করতো পিহু কিন্তু ও ছোট জন্য ওকে মাফ করে দিতাম না। অনেক মা*র*তা*ম। খু*ন্তি*র গরম ছ্য*ক ওর শরীরের এমন এমন স্থানে দিতাম যা ও কাউকে দেখাতে পর্যন্ত পারতো না। আমরা পিহুর বাবার কাছে বানিয়ে বানিয়ে ১০ টা মি*থ্যা কথা বলতাম। আমাদের লক্ষ্য ছিলো পিহুর উপর থেকে জবরুলের সব মায়া, ভালোবাসা যেনো দূর হয়ে যায়। জবরুল যেনো পিহুর সাথে তাই করে যা আমরা তাকে করতে বলবো।
আস্তে আস্তে আমাদের পরিকল্পনা সফল হয়। পিহু প্রথম প্রথম চেষ্টা করতো জবরুলের কাছে আমাদের আসল রূপ দেখানোর কিন্তু আমাদের ডোজ জবরুলের উপর এতোটাই কড়া প্রভাব ফেলেছিলো যে পিহু পরে চুপচাপ আমাদের অ*ত্যা*চা*র গুলো সহ্য করে নিতে শুরু করে। কয়েকদিন ধরে পিহুর প্রতি আপনার এই ভালোবাসা, এতো যত্ন, ওর সাথে যারা অ*ন্যায় করে তাদের ছেড়ে কথা না বলা এসব দেখে আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তাই আমি জবরুলের কাছে কল করে বাড়িয়ে-চড়িয়ে অনেক কিছুই বলি পিহুর বিরুদ্ধে। যার ফলে জবরুল সেই রাতেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসেন। পিহুর কোনো কথা শোনার প্রয়োজনও মনে করেন নি তিনি। আর পিহুকে এখানে উঠিয়ে এনে নিজের কোম্পানির ৫০ উর্ধো বয়সের কু*ৎ*সি*ৎ দেখতে ঐ ম্যনেজারের সাথে জোরে পূর্বক বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।”
কথাগুলো বলে থেমে গেলেন সোমা। তার সর্বশরীর কাঁ*প*ছে। আজ সব সত্য যদি সোমা না বলতো তাহলে সারফারাজের হাতে তাকে ম*র*তে হতো। আর সব সত্য বলার কারণে জবরুলের ঘৃ*ণা, রাগ এবার তাকে সহ্য করতে হবে।
জবরুল পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। দৃষ্টি তার নিচের দিকে স্থির। বুকের ভিতরটাতে চিনচিনে ব্য*থা অনুভব হচ্ছে তার। সোমার পাশ থেকে সোনালী বললো…..
—”আমি কখনও পিহুকে নিজের ছোট বোন হিসেবে মেনে নেই নি। আমরা যখন প্রথম ও বাড়িতে আসি! তখন পিহু আমাদের পিছন পিছন ঘুরতো। একটু আদর, একটু ভালোবাসা, একটু যত্ন চাইতো। যা আমরা বুঝতাম। কিন্তু ওর অসহায় মুখটার দিকে তাকিয়ে আমাদের মনে এতোটুকুও মায়া কাজ করতো না। বরং ওর অ*স*হায়ত্বকে আমরা আমাদের বিনোদনের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছিলাম। বাবা যখন প্রথম ছুটিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন তখন আমাদের ৩জনের জন্যই নতুন জামা এনেছিলেন। কিন্তু আমার জন্য আমা জামাটা আমার পছন্দ হয় নি। পিহুর জন্য যে জামাটা তিনি এনেছিলেন সেই জামাটা আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছিলো। তাই আমি ইচ্ছে করে নিজের জামাটা কেঁ*টে-ছিঁ*ড়ে ন*ষ্ট করে তার দায়ভার পিহুর উপর বর্তে দিয়েছিলাম। বাবার সামনে এমন অভিনয় করেছিলাম বাবা আমার কথাই বিশ্বাস করেছিলেন আর পিহুর সাথে অনেক রাগারাগি করেছিলেন। পিহুর জামাটা শা*স্তি স্বরূপ বাবা আমাকে দিয়েছিলেন। এতে আমার সাহস ও চাহিদা আরো বেড়ে যায়। আমি পিহুকে কখনই নতুন জামা আর পড়তে দেই নি। আমার ব্যবহৃত জামা যেগুলো আর পড়ার যোগ্য ছিলো না বললেই চলে সেগুলোই পিহু সেলাই করে তা*লি বসিয়ে পড়েছে এতোকাল।”
জবরুলের দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে অশ্রুরা ঝড়ে পড়তে শুরু করেছে। এই অশ্রু কিসের? লজ্জার? নাকি অনুশোচনার?
সোমা কাঁপান্বিত কন্ঠে বললেন….
—“আমি…আমি ভু*ল করে…!”
সারফারাজ গ*র্জে উঠা কন্ঠে বললো…
—“ভু*ল? শ*য়*তা*নের সঙ্গে জো*ট বেঁধে একটা মেয়ের শৈশব ন*ষ্ট করে দিয়েছেন আপনারা। সেটাকে কেবল ভু*ল বলা যায় না। এটা সম্পূর্ণই অ*প*রাধ! এই সারফারাজ ইউসুফ খানের কাছ থেকপ ভু*লের পর ভু*ল শুধরানোর সুযোগ পাওয়া গেলেও অ*প*রা*ধী*রা কোনো ক্ষমা পায় না। আপনারাও পাবেন না। আমি যেমন আইন জানি ও মানি তেমনই আইন ভে*ঙে অ*প*রা*ধী*দের জীবন হা*রাম করে দিতেও পারি!”
সোনালী কিছুটা সাহস সন্ঞ্চার করে বললো….
—“আমি তো নিজ থেকে প্রথমে কিছু করি নি। আমার মায়ের দেখেই শিখেছিলাম। সেক্ষেত্রে বলতে হয় আমি প্রলোভিত হয়েছি। তাই আমার অ*প*রাধের পরিমাণও সীমিত। আমাকে তো ক্ষ*মা করা যায় এমপি সাহেব! আপনি বললে আমি পিহুর পা ধরে হলেও ক্ষমা চাইতে প্রস্ত….!”
সারফারাজ অ*গ্নী ঝরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সোনালীর দিকে। সোনালী ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। সারফারাজ বললো…..
—“চুপ! একদম চুপ। আপনাকে তো নারী বলতেও ঘে*ন্না হচ্ছে আমার। আপনার মতো নোং*রা কি*ট দের কেবল জেলের স্যাঁ*ত-সেঁ*তে সে*লে ফেলে রাখা উচিত। সেখনে ইঁ*দুর আর তেলা*পো*কাদের সাথে রাতের পর রাত কাটিয়ে নিজ কর্মের জন্য অনুশোচনা করে যাবেন।”
জবরুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন করলেন সোফার উপর দু’হাত ভর দিয়ে কিন্তু গু*লি দু’পায়েই লাগায় তা আর সম্ভব হলো না। ধ*প করে পরে গেলেন মেঝের উপর। পিহু দু’হাতে নিজের জামার দু’পাশ খাঁ*ম*চে ধরলো। ক*ষ্ট হচ্ছে কেনো ওর নিজের বাবার এমন অ*স*হা*য় অবস্থা দেখে? এই লোকটা তো তাকে কখনও বোঝার চেষ্টা করে নি। কখনও তার পাশে বসে মাথার উপর আদুরে হাত রেখে জানতে চায় নি, ‘কেমন আছিস তুই মা? ওরা তোকে ক*ষ্ট দেয় না তো? তোকে ভালোবাসে তো? তোর কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে কি?’
যদি করতো তাহলে হয়তো অনেক আগেই পিহু নিজের মনের ভিতরটা খুলে জবরুলের সামনে তুলে ধরতো। চিৎকার করে বলতো, ‘বাবা ওরা আমায় একটুও ভালোবাসে না। ওরা আমায় আদর করে না বাবা। আমার মা’য়ের কথা বড্ড মনে পড়ে বাবা। আমার অনেক ক*ষ্ট হয়। বুকের ভিতরটা হা*হা*কা*রে ফেঁ*টে যায় বাবা। বাবা তুমি কেনো শুধু ওদের কথাই শুনো সবসময়? কেনো তুমিও বদলে গেলে? আমি যে একটু ভালোবাসা, একটু যত্ন, একটু আদর পাওয়ার জন্য কা*ঙা*ল হয়ে ঘুরি। কেনো তোমার চোখে আমার মলিন মুখখানা পড়ে না বাবা? কেনো?’
পিহুর বুক চিঁ*ড়ে এবার বেড়িয়ে লম্বা একখানা দীর্ঘশ্বাস। জবরুল মেঝের উপর দু’হাত ভর দিয়ে এক প্রকার ছেঁ*চ*ড়ে ছেঁ*চ*ড়েই পিহুর পায়ের কাছে এসে থামলেন। যে পথ ধরে আসলেন সে পথটুকু জবরুলের পায়ের ক্ষ*তে*র র*ক্তে র*ন্ঞ্জি*ত হয়ে আছে। জবরুল পিহুর দু’পায়ের উপর নিজের দু’হাত রাখলেন। এই প্রথম কোনো বাবা তার মেয়ের পা স্পর্শ করেছে হয়তো এভাবে!
পিহুর বুকের ভিতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। ওর ইচ্ছে করছে এখান থেকে ছুটে কোথাও পালিয়ে যেতে। দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য। পিহু ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে দু’চোখ বুঁজে রেখেছে। জবরুলের দু’চোখ থেকে অশ্রুরা এবার টপটপিয়ে পিহুর পায়ের উপর পড়লো। পিহুর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো এবার। এবার পিহুর নিজেকেই নিজের কাছে পৃথিবীর সবথেকে অসহায় মানুষ বলে মনে হচ্ছে। উপস্থিত সকলের দৃষ্টি জবরুল ও পিহুর উপর স্থির। জবরুল ভা*ঙা কন্ঠে বললেন…..
—”আমায় তুই ক্ষমা করিস না মা। আমি তোর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। পৃথিবীর ভিতর সবথেকে নি*কৃ*ষ্ট বাবা হলাম আমি। নতুন কিছুর মোহে আমি এতোটাই অ*ন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে তোর সাথে দিনের পর দিন এতো অ*ত্যা*চা*র করা হয়েছে তা আমার চোখে পড়েও যেনো পড়ে নি। তোর জীবনের ১৩টা বছর নষ্ট করার জন্য আমি দায়ী। সম্পূর্ণ ভাবে আমি দায়ী। আমায় ক্ষমা করা যায় না। তোর মা’কে হারিয়ে যখন তুই অসহায় হয়ে গিয়েছিলি তখন তোর জীবনে আমি স্নেহ, মমতা ফিরিয়ে আনার বদলে অ*ভি*শা*প ডেকে এনেছিলাম। আমি এক অ*ধ*ম বাবা। না না, আমি বাবা হওয়ারও যোগ্যতা রাখি না। আমায় ক্ষমা করিস না তুই মা। ক্ষমা করিস না৷”
পিহুর দু’চোখ বেয়ে অশ্রুরা ঝড়ে পড়লো। পারলো সে আর নিজের অশ্রুদের ঝরে পড়া থেকে বাঁধা দিতে। সারফারাজ আহাদকে ইশারা করলে আহাদ দু’জন গার্ডসকে বললো পিহুর কাছে থেকে জবরুলকে সরিয়ে আনার জন্য। তৎক্ষণাৎ গার্ডস দু’জন হুকুম পালন করলো। জবরুলকে ধরে তারা আবারও সোফায় বসিয়ে দিলেন। জবরুল ঘৃ*ণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে সোমার দিকে তাকালেন। সোমার দৃষ্টি চন্ঞ্চল এইমূহূর্তে। জবরুল সোমার দিকে থু*থু ছিঁটিয়ে বললেন…..
—”তোর মতো একজন অ*মানুষের সাথে আমি এতোগুলো বছর ধরে সংসার করেছি ভাবতেই ঘৃ*ণায় আমার শরীর গু*লি*য়ে আসছে। আমি এইমূহূর্তে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ করে দিচ্ছি। তোকে আমি তালাক দিলাম, তালাক দিলাম, তালাক দিলাম।”
এক নিমিষেই মাত্র তিনটে শব্দের ব্যবহারে সোমার যেনো পুরো দুনিয়া থেমে গেলো। সোমা স্তব্ধ নয়নে জবরুলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভাবতে পারেন নি জবরুল এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিবেন ও সেই অনুযায়ী কাজও করে ফেলবেন। জবরুল সোনালীর দিকে একই দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললেন….
—”তোর সাথে আমার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তোর মায়ের সাথে এতোকাল বৈবাহিক একটা সম্পর্ক ছিলো সেই সূত্রে তুই আমায় বাবা বলে ডাকতি আর আমিও তোকে মেয়ের নজরে দেখতাম। তোর যাবতীয় ভরণপোষণের দায়ভার ও আমি সামলেছিলাম। এখন যেহেতু তোর মায়ের সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়েছে সেইসূত্রে তুইও আর আমার মেয়ে রইলি না। তাই তোর কোনো ঠাঁই আমার বাড়িতে হবে না। তোদের মা-মেয়ের ছায়াও যেনো আমার বাড়ির আশেপাশে আর না পরে। যদি পরে তাহলে তোদের দু’জনকেই জি*ন্দা ক*ব*র দিয়ে দিবো আমি।”
সোনালী কেঁ*পে উঠলো এই প্র*থ*ম জবরুলের এমন ভ*য়ং*কর রূপ দেখে। হুট করেই ওর জীবনটাও কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।
পরপরই জবরুলের অবস্থা আগের থেকে অনেকটা খা*রা*প হয়ে যাওয়ায় সারফারাজ ওর গার্ডসদের হুকুম দিলো জবরুলকে এইমূহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে ওনার বাকি শা*স্তি*র ব্যবস্থাও করা হবে। গার্ডসরা তৎক্ষণাৎ জবরুলকে নিয়ে স্থান ত্যগ করলেন। সোমা ও সোনালী এইমূহূর্তে নিজেদের শারীরিক য*ন্ত্র*ণাকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। সারফারাজ আহাদকে বললো…
—”এদের দু’জনের স্বীকারোক্তির ভিডিও রেকর্ড করেছিলে তো তুমি আহাদ?”
আহাদ ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিলো। সারফারাজ আবারও বললো….
—”এবার এদের স্বীকারোক্তি পুলিশের হাতে জমা করো। আর পিহুর উপর এতোকাল ধরে শারীরিক ও মানসিক অ*ত্যা*চা*র করার জন্য এদের উপর মা*ম*লা দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করো। আমি চাই এরা এদের বাকি জীবন জে*লে*র দেওয়াল চেঁ*টে কাটিয়ে দিক।”
সারফারাজের এরূপ কথায় সোমা এখনও স্তব্ধ হয়ে থাকলেও সোনালী চিৎকার করতে শুরু করলো। সে চিৎকার করে ক্ষমা চাইছে। পিহুর কাছে আবার সারফারাজের কাছেও। কিন্তু সোনালীর এই চিৎকার ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও ওরা কেউ-ই তা আমলে নিচ্ছে না। আহাদ বাহির থেকে চার জন মহিলা পুলিশ কন্সটেবলকে ডেকে আনলো। তারা সোমা ও সোনালীকে নিয়ে চলে গেলেন চোখের পলকেই। পিহু সেদিকে ঘুরেও তাকালো না।
শা*স্তি পাওয়ার জন্য এবার বাকি রইলো কাজী সাহেব, কাশেম ও তার দুই পুরুষ সঙ্গী। ওরা সকলেই ভী*ত হয়ে আছে জবরুল, সোমা ও সোনালীর অবস্থা দেখে। সারফারাজ কাশেমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর টাক মাথায় নিজের হাত ছুঁয়ালো। কাশেমের সর্বাঙ্গ ভ*য়ে কেঁপে উঠলো। সারফারাজ বাঁকা হেসে বললো…..
—”কি চাচা যে বয়সে আপনার নাতী-নাতনীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে এসে একজন কম বয়সী মেয়েকে কিনা বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছিলেন! এটা কি ঠিক বলেন?”
কাশেম শুকনো ঢো*ক গি*লে কাপান্বিত কন্ঠে বললেন….
—”আ-আমার ভু*ল হয়ে গিয়েছে স্যার। আমার মতিভ্রম হয়ে গিয়েছিলো। আমার আবেগ আমায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছিলো আমার বিবেক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। যদি আমার বিবেক কাজ করতো তাহলে আমি এমন কিছু করার কথা চিন্তাও করতাম না।”
সারফারাজ আহাদকে বললো….
—”এক্ষুণি চাচা যে অফিসে চাকরি করেন সেখানে কল করো। আর বলো তাকে এইমূহূর্তে চাকরি থেকে বহিঃষ্কার করা হলো।”
কাশেম সঙ্গে সঙ্গে সারফারাজের পায়ের কাছে বসে পড়লেন। অনুনয়ের স্বরে বললেন….
—”স্যার স্যার এতো বড় শা*স্তি আমায় দিবেন না আপনি। আমার অ*সুস্থ স্ত্রী বিছানায় পরে আছেন। আমার মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়া বাকি। ওদের জীবনটা যে শেষ হয়ে যাবে স্যার। আমি পথে বসে যাবো।”
সারফারাজ বললো…
—”যে অ*ন্যায় আপনি করতে নিয়েছিলেন তার শা*স্তি অবশ্যই আপনার স্ত্রী-সন্তানরা ভো*গ করবেন না। শা*স্তি কেবল আপনাকেই দেওয়া হয়েছে। আপনি একাই তা ভো*গ করবেন। আপনাকে ৩মাসের জন্য এমন স্থানে ব*ন্দী করে রাখা হবে যেখানে আপনি আপনার পরিবার কেনো একটা প্রাণীরও ছায়া দেখতে পারবেন না। সেখানে আপনাকে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয়, পোশাক দেওয়া হবে ঠিকই তবুও আপনি শান্তি পাবেন না। মানুষের সাথে দু’টো কথা বলার জন্য আপনার ভিতরটা কেবল ছট-ফট করবে। এটাই হবে আপনার উপযুক্ত শা*স্তি। নিয়ে যাও এনাকে আহাদ।”
কাশেম ও সোনালীর মতো ছটফট করছে, চিৎকার করছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য কিন্তু তাঁকেও ক্ষমা করা হলো না। দু’জন গার্ডসকে আহাদ দায়িত্ব দিলো কাশেমকে সেই স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেখানে ৩মাস বন্দী হয়ে থাকতে হবে তাকে।
কাশেমের সঙ্গে আসা বাকি দু’জন ব্যক্তিকে ১ বছরের জন্য চাকরি থেকে ব*র*খা*স্ত করে দিলো সারফারাজ শুধুমাত্র অ*ন্যায়ের স*ঙ্গ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাদের বউয়ের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, খাওয়ার খরচ ও পরিধানের জন্য কাপড়ের যেনো অভাব না হয় এই সময়ের মধ্যে তাও নিশ্চিত করলো সারফারাজ।
অতঃপর ওদের দু’জনকেও যেতে দেওয়া হলো। সারফারাজ কাজী সাহেবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—”সামান্য কয়টা টাকার লো*ভে নিজের ইমান পর্যন্ত ন*ষ্ট করে দিলেন আপনি কাজী সাহেব! বিয়ে কতোটা পবিত্র সম্পর্ক তা আপনি খুব ভালো ভাবেই জানেন। তবুও এই বিয়ে নিয়ে কিনা ব্যবসা করতে বসেছেন আপনি! ছিহ্!”
কাজী সাহেব লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছেন। সারফারাজ আবারও বললো….
—”এই সাদা পান্ঞ্জাবি-পাজামা আর মাথায় থাকা টুপিটা খুলে ফেলিয়েন আজ বাসায় গিয়ে। তারপর বুক সমান ঐ রঙিন দাঁড়িগুলোও কা*মি*য়ে ফেলিয়েন। এগুলো আপনাদের মতো বে*ই*মা*নদার ব্যক্তিদের সাথে যায় না। এই পবিত্র পেশা, এই পবিত্র পোশাকের আর অবমাননা করিয়েন না৷ বেড়িয়ে যান এক্ষুণি এখান থেকে।”
কাজী সাহেব বসা থেকে উঠে চলে যেতে নিলে সারফারাজ বললো….
—”আপনার উপর আমার নজর সবসময় থাকবে। যদি আর কখনও এমন ভু*লে*র পুনরাবৃত্তি হয়েছে তাহলে আপনার জন্য কতোটা ভ*য়া*বহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।”
কাজী সাহেব ভ*য়ে কাঁ*প*তে কাঁপতে স্থান ত্যগ করলেন।
সারফারাজ পিহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শীতল কন্ঠে বললো….
—”চলো।”
পিহু সারফারাজের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”কোথায় নিয়ে যাবেন আমায় এমপি সাহেব?”
—”হবু বউ থেকে শুধু বউ বানাতে হবে এবার। আর রি*স্ক নিতে পারবো না। আজ একটু দেড়ি হয়ে গেলে এতোক্ষণ আমাকে পা*গ*ল বেশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো।”
পিহু লজ্জা পেলো কিছুটা। সারফারাজ পিহুর দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো….
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৪
—”লজ্জা-টজ্জা গুলো জমিয়ে রাখো। বাসর রাতে কাজে দিবে।”
পিহু এবার আরো বেশি লজ্জায় সিটিয়ে গেলো যেনো। সারফারাজ নিঃশব্দে হেসে পিহুর হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়ালো।