সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৫

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৫
বুশরা আহমেদ

আজকে বুশরার university প্রথম দিন,, অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। কিন্তু চারিদিকে সবাই আমিরিকান গায়ের রং ধবধবে ফর্সা ফর্সা‌ ।তাদের ড্রেসিং সেন্স ও আলাদা ‌। সবার মাঝে শুধু সে একাই ,, টপস্,জিন্স আর হিজাব পরেছে । বুশরা কোন দিকে না তাকিয়ে । নিজের ডিপার্টমেন্ট এ চলে গেল। ক্লাস রুমে ডুকতে যাবে তখনি তাতখনি এক জনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছিল, সামনে থাকা ব্যক্তিটি তার হাত ধরে টেনে সোজা করে দাঁড়িয়ে দিলো ।
বুশরা : Extremely sorry .বুশরা দেখলো লোকটি দেখতে বেশ ফর্সা। একদম আমিরিকানদের মতো । লম্বায় হবে ৫ ‘ ৮ ইঞ্চি এর মতো ।ফরমাল গেটআপ‌। চুল গুলো কালার করা ‌।জেল দেওয়া।

লোকটি : It’s okk. তোমার লাগেনি তো ?
বুশরা : আপনি বাংলা ভাষা যানেন??
লোকটি: হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। তুমিও কি বাঙালি?
বুশরা : জ্বি। আপনিও কি বাঙ্গালী?
লোকটি: হ্যাঁ। কোন ডিপার্টমেন্ট?
বুশরা: English.
লোকটি: তুমি তাহলে আমার ডিপার্টমেন্ট এর ছাত্রী । আমি তোমার লেকচারার ।
বুশরা : ওহ্ আচ্ছা। Sorry sir ,,আমি আসলে দেখতে পাই নি।
লোকটি: ইটস্ ওকে।
বুশরা তার ক্লাস রুমে চলে গেল।
লোকটার বুশরাকে দেখে বেশ ভালো লেগে গেল। বুশরার কথা বার্তা সব কিছু। ব্রাউন রঙের চোখের মনি,টানা টানা চোখ,, গোলাপি অধর। সবকিছু।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বুশরা রুমের মধ্যে ঢুকতেই সেখানেই দেখতে পেল একটা সিট ফাঁকা বুশরা সেখানে গিয়ে বসে ফরলো । তার সাইডে বসা মেয়েটা দেখতে আমেরিকানদের মতো ।
বুশরা কোন কথা না বলে মেয়েটার পাশে বসে পরলো । মেয়াটার গায়ের রং উজ্জল ফর্সা, চুল গুলো কালার করা ,, পরনে ছোট টপস্, জিন্স।
মেয়েটা বুশরার দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
Hi ami ,Orin .
বুশরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাত মিলিয়ে হাঁসি মুখে বললো ।
Bushra .
অরিন : where are you came from?
বুশরা: from Bangladesh..you .

অরিন: তার মানে তুমি বাঙালি।।। আমার জন্মস্থান ইন্ডিয়া। কিন্তু আমি ছোট থেকেই আমিরিকাতে ।
বুশরা কিছু বললো না। মেয়েটা খুব মিশুক।ঠিক বুশরার মতো । কিন্তু বুশরা রাহির কথা ভেবে নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছে ।রাহি তাকে বার বার বলেছে যার তার সাথে বন্ধুত্ব না করতে ।
তখনি তাদের রুমে প্রবেশ করলো, তাদের লেকচারার । চারিদিকে সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে । অরিন এই দিকে মিটিমিটি হাসছে।
বুশরা এর মানে কিছুই বুঝলো না।
লেকাচার নিজের পরিচয় দিলো ,, hello, everyone myself Adnan ..I am your English lecturer ,, Let’s began the class,, please concentrate on my class ..

অরিন: তুমি কি আদনান স্যার কে চিনো ।
বুশরা : একটু আগে পরিচয় হয়েছে ।
অরিন: একটু আগে ?
বুশরা: হুম কেন?
অরিন: আদনান স্যার আমার ভাই।
বুশরা : seriously.
অরিন: হুম আর আজকে ফাস্ট লেকচার দিচ্ছে।
বুশরা ‘ ওহ্ ।
অরিন: তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল সেই জন্য জিঙ্গেস করালাম।
আর কোন কথা না বাড়িয়ে সবাই ক্লাসে মনোযোগী হলো।
এই দিকে রাহি অফিসে ঢুকেই সোজা তার কেবিনে চলে গেল।
সেখানে হ্যাভেন ক্যাভেন দুই জনেই উপস্থিত ছিলেন।
রাহি : তৌফিক কোথায়?

হ্যাভেন: ম্যারিল্যান্ড এ গিয়েছে । বস আজকে আনোয়ার হোসেন ও তার ছেলে উপস্থিত থাকবে আমাদের মিটিং এ ।
রাহি : হুম তো ?
হ্যাভেন: আমার মনে হয় না তাদের সঙ্গে ডিল করা ঠিক হবে।
রাহি : তুমি কি ভয় পাচ্ছো হ্যাভেন।
হ্যাভেন: না বস ।ভয় নামক জিনিসটা জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি ।
রাহি: গুড ।আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। আমাকে চিনতে পারা এতো সহজ না।
রাহি : তোমার মিটিং এর ব্যবস্থা করো আমি আসছি ।
হ্যাভেন ক্যাভেন চলে যেতেই রাহি তার ড্রেস চেঞ্জ করে । মুখোশ টা ঠিক মতো পরে চলে গেলো করিডোর রুমে।
করিডর রুমে প্রবেশ করলো দ্যা গ্ৰেট বিজনেস ম্যান রায়হান আহমেদ রাহি ( আর.এ) ।রাহি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দাঁড়িয়ে রইলো। মুখোশ পরিহিত মুখটা দেখে বোঝার উপায় নেই। রাহি গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরলো । সবাই বসে পরলো।

আনোয়ার হোসেন এসে রাহির সামনে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,,
হ্যালো মি. আর . এ ।আমি আনোয়ার গ্ৰুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রির মালিক আনোয়ার হোসেন।রাহি আনোয়ার হোসেনের হাতের দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট হাসলো কিন্তু মুখোশ এর আড়ালে কেউ বুঝলো না। রাহি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে হাত না মিলিয়েই বললো ,,
এখানে আপনারা সবাই কি কারণে এসেছেন তা একটু জানতে চাই ।
আরিয়ান: মি. আর . এ আমি আপনার প্রজেক্ট টা নিতে চাই আপনি আমাদের সঙ্গে ডিল করলে প্রফিট ভালো পাবেন,,
রাহি: আর যদি না পাই তাহলে যে এর ডাবোল আপনাকে ফেরত দিতে হবে।
আরিয়ান: আশা করি এমন টা হবে না। আপনি এই শহরের নাম্বার ওয়ান বিজনেস ম্যান। আমাদের সঙ্গে ডিল করলে প্রফিট আরো ভালো হবে ।
রাহি : আর কি কেউ কিছু বলতে চান।
পাশ থেকে আরো একজন বলে উঠল,,,

লোকটি: ৪২ কোটি টাকার প্রজেক্ট এই ভাবে তাদের কে দিয়ে দিলে ,প্রফিট আসবে তা আমার মনে হয় না। আর তারা তো এতো দিন দেশের বাইরে ছিলো ।
তখনি রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো এলিন,,,
এলিন: আমার মনে হয় না এই ডিলটা আনোয়ার ইন্ড্রাস্ট্রির কে দেওয়া উচিত। যদি আমরা নিজেরাই এইটা নিয়ে কাজ করি তবে আরো ভালো হবে । সঙ্গে তো এনারা আছেন ।
সবাই এক মত দিলো ।
রাহি : তাহলে আর কোন কথা বলার প্রয়োজন নেই। বাকিটা তুই হ্যান্ডডেল করে নে । হ্যাভেন গাড়ি বের করো ।
রাহি উঠে চলে যেতে লাগলো,,
আরিয়ান: কাজটা আপনি ঠিক করলেন না মি ,আর ,এ ।
রাহি : আমাকে ঠিক ভুল বুঝানোর মতো বয়স তোমার হয় নি।বলেই চলে গেল।
এই দিকে বুশরার ক্লাস শেষ । বুশরা আর অরিন এক সঙ্গে হাটছে ।তখনি আদনান গাড়ি নিয়ে তাদের সামনে আসলো ,, গাড়ি থেকে নেমে এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।
অরিন: ভাই তুমি এখানে?

আদনান: হ্যাঁ,, গাড়ি তে উঠ । বাসায় যাব।
অরিন: ভাই তাহলে বুশরাকেও ড্রভ করে দেও ।
আদনান: sure । বুশরা তুমিও চলো আমাদের সঙ্গে।
বুশরা: no thanks sir,আমি চলে যেতে পারবো ।
অরিন: চলো প্লিজ।একা একা যেতে হবে না।
হুট করেই রাহি ঐ মুহূর্তে উপস্থিত হয় সেখানে। আর বুশরা আর আদনান এর কথা বলা দেখে প্রচন্ড রেগে যায় ।
রাহি গাড়ি থেকে নেমে বুশরার ঠিক পিছনে এসে দাড়াই ।
আদনান: আরে মি. আর এ আপনি এখানে। আপনার কথা অনেক শুনেছি।এই ভাবে দেখা হবে ভাবি নি।
রাহি আদনান এর কথা কানে না নিয়েই বললো ,,
রাহি: নুর কি করছিস এখানে??

হঠাৎ করে রাহির কথা শুনে চমকে উঠে বুশরা। সে রাহির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় ।রাহির রক্তিম চোখ, সঙ্গে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি বুশরার আত্তা নাড়িয়ে দিচ্ছে বার বার।
রাহি: আবার শান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,, কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে?
বুশরা: রাহি ভাইয়া তুমি! university থেকে মাত্র বের হয়ে গাড়ির জন্য ওয়েট করছিলাম।
রাহি: আমি তো অন্য কিছু দেখছি নুর।
আদনান: মি.আর . এ আপনি বুশরাকে চিনেন ?? কিভাবে?
রাহি: এতো কিছু আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। শুধু এই টুকুই বলবো আমার থেকে ভালো কেউ চিনে না। বলেই বুশরাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল ‌। হ্যাভেন গাড়ির দরজা খুলতেই রাহি বুশরাকে বসিয়ে দিলো। সে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।
আদনান আর অরিন কিছুই বুঝলো না।
রাহি হ্যাভেন কে বললো বাসায় চলে যেতে আর তৌফিক কে বলে দিতে যে আমরা ম্যারিল্যান্ড এ গিয়েছি ।
হ্যাভেন: ওকে বস।

রাহি বুশরার দিকে ঝুঁকে তার সিট বেল্ট টা বেঁধে দিলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস পাচ্ছে না। অতিরিক্ত রাখে রাহি গাড়ির স্পিড হাই করে দিছে । এইদিকে বুশরা অনেক ভয় করছে রাহিকে কিছু বলতে ।
বুশরা কিছু বললো না বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো কোন এক জঙ্গলের মধ্যে তারা ঢুকে পরেছে ।
বুশরা এইবার সাহস করে মুখ খুললো ,,
রাহি ভাইয়া,আমরা কোথায় যাচ্ছি।
রাহি কিছু বললো না এই বার গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো ।
বুশরা : তুমি কী পাগল হয়ে গেছে।এতো হাই স্পিড এ গাড়ি চালাচ্ছো কেন? আমার ভয় করছে।
রাহি বুশরার দিকে তাকিয়ে,, আবার গাড়ি চালাতে লাগলো ।
বুশরা বুঝলো রাহিকে বলে কোন লাভ নেই।তাই চুপ করে বসে রইল।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই তারা একটা প্যালেস এর সামনে চলে এলো । প্যালেস টা বিলাশ বহুল। সামনে নদী তার পরে জঙ্গল ।

শহরের অনেক দুরে হওয়ায় দেখা যায় না।
প্রায় তিন তালার মতো হবে ।রাহি গাড়ি থেকে নামতেই গার্ডসরা প্যালেস টির চারিদিকে ঘিরে ধরলো ।আর বললো ,,
Welcome boss,, welcome mam,
বুশরা কিছু বুঝলো না।রাহি তাদের কে বললো আজকে থার্ড ফ্লোরে কোন গার্ডস যেন না থাকে।
বলেই গাড়ি থেকে বুশরাকে আবার কোলে নিয়ে,, প্যালেসের ভিতরে প্রবেশ করলো।
বাহিরে থেকে পুরনো মনে হলেও ,ভিতরে সব আধুনিক সিস্টেম । ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এ ঘেরা ।
রাহি বুশরাকে নিয়ে লিফট এ উঠলো । কিছু ক্ষণের মধ্যেই তারা একটা বেডরুমে এসে পৌঁছায়।
বুশরা রাহিকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না এই দিকে রাহিও কিছু বলছে না। বুশরা রাহিকে যত দেখছে তত অবাক হয়ে যাচ্ছে।
রাহি বুশরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো ।
বুশরা : এইটা আমরা কোথায় এসেছি?

রাহি নিশ্চুপ।
বুশরা : কি হলো কথা বলছো না কেন? আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো ??
রাহি : কেন ভয় করছে তোর ? আমার সঙ্গে থাকতে ??
বুশরা : কেন ভয় করবে?
রাহি:আচ্ছা নুর তুই কেন আমার কথা শুনতে চাস না বল তো ??
বুশরা : আমি কি কথা শুনি নি?
রাহি: ঐ আদনান এর সঙ্গে তোর এতো কি কথা ? তোকে বার বার বলেছি সবার সঙ্গে কথা কম বলতে ।
বুশরা ; আমি চিনতাম না ।আমি ক্লাস রুমে ডুকতে যাবো তখনি,, বুশরা সব কিছু রাহিকে বললো ,,
রাহির রাগ হচ্ছে প্রচুর। কোন হাত ধরেছিল ?
বুশরা বাম হাত এগিয়ে দিয়ে বলল এই হাত কেন??
রাহির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,, তার বেবিগার্লর হাত ছুঁয়েছে এইটাই সে সহ্য করতে পারছে না।রাহি বুশরার হাত ধরে টেনে বাথরুমে নিয়ে গেলো ।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৪

বেসিন এ তার বাম হাত রেখে তাতে বডি ওয়াস দিয়ে এমন ভাবে ঘুসতে লাগলো যেন তার টাই ছিঁড়ে ফেলবে ।বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে ।তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রাহি বুশরার হাত ধুতে ধুতে লাল করে ফেলছে ,, এমনকি রক্ত বের হচ্ছে। বুশরার চোখের পানি থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখ অশ্রু গড়িয়ে রাহির হাতের উপর পরতেই রাহি থেকে থেমে গেলো ।
বুশরার দিকে তাকিয়ে,বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
বুশরাকে কোলে নিয়ে বাথটাবে শুয়ে দিলো তারপর shower অন‌ করে বললো ,,,
রাহি: Take a cold shower,,

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here