আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬৩

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬৩
সালমা খাতুন

মায়ার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলো গাড়িতে। প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলো না ও। দুই হাতে চোখ কচলে হাই তুলে সোজা হয়ে বসে পিটপিট করে চারিদিকে তাকালো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো ও, “আমি কি স্বপ্ন দেখছি? সুন্দর সাজানো গোছানো বাসর ঘর থেকে ডাইরেক্ট গাড়িতে কিভাবে আসলাম?”
আরমান এক মনে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল, “জী ম্যাম, এই স্বপ্ন আপনার হাসবেন্ড আপনাকে দেখাচ্ছে।”
মায়া বোকা চোখে তাকালো আরমানের দিকে। ও তখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা? আজকে আমাদের বাসর রাত, কত স্বপ্ন ছিল আমার এই রাত নিয়ে। আমি বাসর রাতে ঘুমিয়ে পড়বো, আমার জামাই এসে আদর করে ঘুম ভাঙ্গাবে, একটা সুন্দর গিফ্ট দেবে। তারপর সারারাত জেগে গল্প করবো।”

মায়া এবার রাগ নিয়ে বলল, “আর আপনি কি করলেন? আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে কিডন্যাপ করার মতো চুপিচুপি তুলে নিয়ে চলে আসলেন? আমি তো আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটা যদি বলতেন, তাহলে জীবন ধন্য হতো আমার। নাকি সারারাত এইভাবে এই গাড়ি করে, ঘুরে ঘুরে পাড় করার পরিকল্পনা করেছেন?”
আরমান:- “মায়াবতী! এতো কেনো কথা বলো তুমি? একটু কি চুপ থাকা যায়া না?”
মায়া:- “না চুপ থাকা যায় না। চুপ থাকি বলেই তো আপনি সুযোগ পান। অনেক চুপ থেকেছি, আর নয়। কি ভেবেছেন আমাকে? বেচারি অবলা পেয়ে যা মন তাই করবেন আর আমি চুপচাপ মুখ বুঝে সহ্য করবো? আমার স্বপ্নের বাসর রাত নষ্ট করেছেন আপনি, এতো সহজে তো আমি চুপ থাকবো না।”
আরমান বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “আল্লাহ, এর থেকে তো আমার আগের মায়াই ঠিক ছিল?”
মায়া:- “এই! বিড়বিড় করে কি বলছেন? যা বলার জোড়ে বলুন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরমান কিছু বলল না, শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি থামালো। ওরা ওদের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে। মায়া তখনো নিজের উত্তরের আশায় আরমানের দিকে তাকিয়ে। আরমান গাড়ি থেকে নেমে পড়তেই মায়াও তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। কিন্তু তার পর পরই ভয়ে শিউরে উঠল ওর পুরো শরীর। নির্জন এলাকা, চারিদিক অন্ধকার। জায়গাটা কিছুটা জঙ্গলের মতো, গাছের ফাঁক দিয়ে অল্প একটু চাঁদের আলো এসে পড়েছে। ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে চলেছে এক টানা, মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক সহ কুকুরের ডাক। পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। মায়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল, ভীতু গলায় আরমানকে ডেকে উঠলো, “গম্ভীর সাহেব! কোথায় গেলেন আপনি? এটা কোথায় নিয়ে আসলেন আমায়? আপনি কি আমায় ভূতের রাজ্যে রেখে যেতে চান? কিন্তু কেনো? কি দোষ করেছি আমি? আর একটাও কথা বলবো না, দরকার পড়লে মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে চুপ থাকবো। প্লিজ সামনে আসুন।”
মায়ার এমন অবস্থা যে ও এবার কান্না করে ফেলবে। আরমান তাড়াতাড়ি ওর কাছে এসে ওকে দুই হাতে আগলে নিয়ে বলল, “এই তো মায়াবতী, এখানেই আছি আমি ভয় পেও না।”

মায়া তাড়াতাড়ি আরমানের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “এটা আপনি কোথায় নিয়ে আসলেন গম্ভীর সাহেব? প্লিজ এখান থেকে চলুন, আমার ভীষণ ভয় করছে।”
আরমান:- “হুম! এই তো, এখনি নিয়ে যাচ্ছি এখান থেকে। কই মুখটা তুলো দেখি।”
মায়া ভয়ে ভয়ে মুখ তুলে তাকালো আরমানের দিকে। আরমান মায়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে, একটা চকচকে লাল ফিতে জাতীয় কাপড় দিয়ে মায়ার চোখ বেঁধে দিলো। মায়া ভয় পেয়ে বলে উঠলো, “কি করছেন? আমাকে কি আপনি পাচার করে দেওয়ার প্ল্যান করছেন? আল্লাহ শেষে কিনা এই ছিল আমার কপালে? বাসর রাতে আমার জামাই আমাকে কিডন্যাপ করে পাচার করে দিচ্ছে? এই দিন দেখার আগে….”
আরমান ধমকে উঠলো, “স্টপ ইট মায়া! অনেক বকেছো পাগলের মতো। এবার নিজের মুখ টা বন্ধ রাখো, নাহলে সত্যি সত্যি এখানে রেখে চলে যাবো তোমায়।”

কথাটা বলেই আরমান মায়াকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। মায়া আরমানের ধমক খেয়ে চুপ করে গেলো, ওর ভীষণ মজা লাগছে আরমানকে বিরক্ত করতে। তাই মুখে যা আসছে উল্টা পাল্টা বলে যাচ্ছে।
আরমান মায়াকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। মায়া অনুভব করলো, আশপাশের পরিবেশ টা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। ভীষণ স্নিগ্ধ ও ঠান্ডা শীতল হাওয়া, মায়ার শরীরে শিরশিরি এক অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে। মায়া অনুভব করলো, আলমান ওকে কোলে নিয়ে হয়তো কোনো সিঁড়ি বেয়ে উঠছে।

এরপর মায়াকে কোল থেকে নামিয়ে, চোখের বাঁধন খুলে দিলো। ধীরে চোখ মেলে তাকালো মায়া, আর তাকাতেই চারিদিকের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো ও। চোখে মুখে খেলে গেলো খুশির ঝিলিক। এই মুহূর্তে ওরা নদীতে পানির মাঝে, একটা বড়ো জাহাজের রুপ টপে (ছাদে) অবস্থান করছে। চারদিকে নিস্তব্ধ, ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে, নদীর পানির কলতান, ঢেউয়ের শব্দ আর রাতের অন্ধকারের সঙ্গে মিশে থাকা চাঁদের স্নিগ্ধ আলো তারাভরা আকাশ নদীর জলে প্রতিফলিত হয়ে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। দূরে কোথাও নিশাচর পাখির ডাক প্রতিধ্বনির মতো শোনা যাচ্ছে।

চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে জাহাজটিকে। তাজা ফুলের গন্ধে ভরে উঠেছে চারিদিক। বিভিন্ন রকমের ফেয়রি লাইট, তাজা ফুল ও রঙ বেরঙের কাপড় দিয়ে ডেকোরেট করা পুরো জাহাজ টি। আর মায়া যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার কিছুটা সামনে ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাভ সেপ করা, আর তার মাঝে লেখা,
“Thanks Mayaboti, এই গম্ভীর সাহেবের জীবনে আসার জন্য।”

আরমান মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, “তুমি আমার হৃদয়ের সেই স্পন্দন, যা ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। Thanks Mayaboti, এই গম্ভীর সাহেবের জীবনে আসার জন্য।”
মায়া সামনে ঘুরে আরমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, “আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে আপনার জীবনে জায়গা দেওয়ার জন্য। ভালোবাসি গম্ভীর সাহেব…ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।”
আরমানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়াকে নিজের বুকের মাঝে। বলল, “কখনো নিজেকে সাধারণ ভাববে না। এই আরমান শাহরিয়ারের রাজ্যের রানি তুমি। রানিরা কখনো সাধারণ হয় না।”
মায়া আরমানের বুকে থেকে মাথা তুলে, দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল, “আমি মোটেও কোনো রাজ্যের রানী হতে চাই না।”

আরমান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, “কেনো?”
মায়া:- “আমি যদি রানি হয় তাহলে আপনি হবেন রাজা। আর জানেন তো আগেকার যুগে রাজাদের অনেক গুলো বউ থাকতো। আমি আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবো না বাবা! তাই আমি রানিও হতে চাই না। আর আপনাকেও রাজা হতে দেবো না।”
মায়ার কথা শুনে আরমান হেসে ফেললো, “পাগলী একটা। তুমি তো আমার একমাত্র বউ। এই জায়গাটা কেউ কোনো দিনও নিতে পারবে না। এই হৃদয়ে সেই প্রথম থেকে পিচ্চি মায়াবতীর বসবাস ছিল..আছে..এবং সারাজীবন থাকবে।”

এরপর আরমান মায়াকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “সারপ্রাইজ কেমন লাগলো? বললে না তো।”
মায়া জাহাজের মাঝখানে গিয়ে দুই হাত দুইদিকে ছড়িয়ে ঘুরতে শুরু করলো। মুখে হাসি নিয়ে বলল, “অনেক..অনেক..অনেক সুন্দর। আজকের রাতের মূহুর্ত গুলো নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার, কিন্তু আপনি আমার সাজানো স্বপ্নের থেকেও অনেক সুন্দর মূহুর্ত উপহার দিয়েছেন।‌ চাওয়ার থেকেও বেশি কিছু দিয়েছেন আপনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ গম্ভীর সাহেব… এতো সুন্দর একটা পরিবেশে নিয়ে আসার জন্য। এই নদী, চাঁদ, তারা, পানির ঢেউ, শীতল হাওয়া এবং এই অন্ধকার রাতকে স্বাক্ষী রেখে বলছি…. ভালোবাসি গম্ভীর সাহেব ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। আর সারাজীবন আপনাতে আবদ্ধ হয়ে কাটাতে চাই।”

শেষের কথা গুলো চিল্লিয়ে বলে উঠলো মায়া। আরমান মায়ার পাগলামো দেখে হেসে উঠলো। ধীরে জাহাজ চলছে নদীর মাঝে। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। মায়া খুশিতে একবার এদিকে ছুটে যাচ্ছে তো আর একবার ওদিকে ছুটে যাচ্ছে। চারিদিকে ফেয়রি রঙ বেরঙের লাইটের মৃদু আলোয় মায়াকে আরো মায়াবী লাগছে। মায়া নিজেও সেজে আছে, ফুলের গহনায়। পরনে ল্যাভেন্ডার কালার কাঞ্জিভরম সফ্ট সিল্কের শাড়ি। মায়ার হলদেটে ফর্সা কোমর দৃশ্যমান, আর তার সাথে আরমানের পরানো সেই কোমর বন্ধনী অসম্ভব সুন্দর ভাবে মানিয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে ওর দুজন ছাড়া এই খোলা ছাদে কেউ উপস্থিত নেই। মায়া জাহাজের রেলিং ধরে হালকা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। আরমান মায়ার কাছে গিয়ে মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। শাড়ি ভেদ করে হাত রাখলো পেটে, মুখ ডুবালো মায়ার গলায়। মায়া কিছুটা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলো। আরমান মায়ার কাঁধে গলায় নাক ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলল, “এভাবেই সারারাত পাড় করার ধান্দা আছে বুঝি? আজকের রাতটা কিন্তু জীবনে একবারই আসে, আজকের এই রাতেও কি আমি আমার মায়াবতীকে কাছে পাবো না।”

মায়া ধীর গলায় বলল, “আপনার মায়াবতী তো আপনার কাছেই আছে।”
আরমান মায়াকে আরো কিছুটা নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিলো। হাতের আঙ্গুল গুলো মায়ার পেটে স্লাইড করতে করতে নেশাক্ত গলায় বলল, “আজকের এই রাতে এতোটুকুতে যে আমার পোষাবে না মায়াবতী, আরো কাছে চাই..আরো কাছে। আজ কি সেই অধিকার পাবো?”
আরমানের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে মায়া। ধীর গলায় বলল, “সেই প্রথম বার যখন কবুল বলেছিলাম, ঠিক তখনি আমি আমার এই আমি টাকে আপনার নামে লিখে দিয়েছি। আমিও আজকের এই রাতে আপনার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই গম্ভীর সাহেব। অধিকার তো অনেক আগেই দিয়ে দিয়েছি..কাছে টেনে নিন আমায় গম্ভীর সাহেব…আরো কাছে।”

মায়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরমান মায়াকে এক ঝটকায় নিজের কোলে তুলে নিলো। মায়া আজ আর লজ্জায় মুখ লুকালো না আরমানের বুকে। বরং চোখে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে রইল আরমানের চোখের দিকে। আরমানও তাকিয়ে আছে মায়ার চোখের দিকে। আরমান ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো, আগে থেকেই করে রাখা নরম বিছানার দিকে। বিছানায় ফুলের পাপড়ি ছড়ানো। সেই বিছানায় বসিয়ে দিলো মায়াকে। এরপর পকেট থেকে বের করলো চোখ ধাঁধানো একজোড়া ডায়মন্ডের নূপুর। মাঝখানে লাভ সেপের নীল রঙের ডায়মন্ড বসানো।
মায়ার শাড়িটা পা থেকে একটু তুলে, নিজে হাতে সেই নূপুর মায়ার দুই পায়ে পড়িয়ে দিলো আরমান। এরপর ঝুঁকে মায়ার পায়ে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে চাইলো, কিন্তু তার আগে মায়া আরমানের দুই বাহু ধরে থামিয়ে দিলো।
“প্লিজ এটা করবেন না। পায়ে হাত দিয়েছেন বাঁধা দিইনি। কিন্তু এটা না প্লিজ। আপনার ওই ঠোঁটের স্পর্শ আমার এই ললাটে মানাই পায়ে নয়।”

আরমান মায়ার পায়ের কাছে থেকে সরে গিয়ে মায়ার কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মায়া সেই স্পর্শ চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো। আর এর পর পরই মায়ার দুই নরম ঠোঁট নিজের দুই পুরুষালী ঠোঁট দিয়ে আবদ্ধ করলো, গভীর ভাবে চুষতে থাকলো আরমান, যেনো কোনো এক অমৃত সুধা শুষে নিচ্ছে মায়ার ঠোঁট থেকে। নিজের কাজে মত্ত থেকেই, ধীরে মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। নিজের শরীরেরও অধিকাংশ মায়ার শরীরের উপর চাপিয়ে দিলো, কিন্তু খেয়াল রাখলো যেনো নিজের শরীরের অতিরিক্ত চাপ বা ভর মায়ার উপর না পড়ে।

বিছানায় একপাশে পড়ে থাকা একটা রিমোটের সুইচ এ চাপ দিলো আরমান। আর সাথে সাথে চারিদিকে রঙিন কাপড়ের পর্দা পড়ে গেলো। আকাশ টাও দেখা যাচ্ছে না আর, ধীরে ধীরে একটা ঢাকনা কোথা থেকে এসে যেনো ছাদের মতো ঢেকে দিলো। হাওয়ার তালে পর্দা এবং পর্দার গায়ে লেগে থাকা ফেয়রি লাইট গুলো উড়ছে। আশে পাশে সাজানো সুগন্ধি যুক্ত মোমবাতি গুলো আগুনের তাপে একটু একটু করে গলছে, এবং তা থেকে সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। নদির ঢেউয়ে চলমান জাহাজ মাঝে মাঝে দুলে উঠছে।

আরামান মায়ার ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবালো। ছোটো ছোটো চুমুতে ভরিয়ে দিলো গলা, ওর হাত নেমে গেলো মায়ার পেটে। কোমরে থাকা কোমর বন্ধনীতে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের আঙুলের ছাপ দিতেই ওটা খুলে গেলো। আরমান মায়ার কোমর থেকে বন্ধনীটি খুলে রেখে দিলো একপাশে। এরপর নিজের ডান হাত দিয়ে মায়ার পুরো পেটে স্লাইড করতে থাকলো। মায়ার গলায় দেওয়া আরমানের ছোটো ছোটো চুমু ক্রমশ ছোটো ছোটো কামড়ে পরিনতি হলো। আরমানের দেওয়া কোনো একটা বাইট হয়তো খুব জোড়েই পড়লো মায়ার গলায়, আর সেই কারণেই “উফফ্” শব্দ করে উঠলো মায়া। সাথে সাথে আরমান মায়ার পেটে স্লাইড করা হাতটা দিয়ে খামচে ধরলো কোমর। কেঁপে উঠলো মায়া। মায়ার গলা থেকে বেরেনো আওয়াজ, সাথে ওর কেঁপে কেঁপে উঠা, আরমানকে বেপরোয়া করে তুলল। ততক্ষণে আরমানের বেপরোয়া ঠোঁট সহ দাঁত গলা থেকে বেশ কিছুটা নেমে এসেছে। কোমরে থাকা হাতটা চলে গেলো, শাড়ির পিন খুলার উদ্দেশ্যে। সাথে সাথে মায়া নিজের হাত দিয়ে আরমানের হাত আটকে দিলো। ফিসফিস করে বলে উঠলো মায়া।

“প্লিজ লাইট গুলো আগে অফ করুন।”
আরমান মুখ তুলে তাকালো মায়ার মুখের দিকে। মায়ার চোখ বন্ধ, গাল গুলো ইতিমধ্যেই লালচে আভা ধারণ করছে। যার জন্য ওর সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে আরমানের চোখে। আরমান হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে উজ্জ্বল লাইট গুলো অফ করে দিলো। আর তার পরেই ধীরে ধীরে মায়ার এবং নিজের শরীরে থাকা বস্ত্র গুলো সরিয়ে নিলো। পানির মাঝে ভেসে, অন্ধকার রাত ও চাঁদকে সাক্ষী রেখে, দুটো বিবস্ত্র শরীর মিলেমিশে একাকার হলো। মত্ত হলো সেই আদিম খেলায় যা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। আজ সমস্ত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে, এক প্রেমিক যুগলের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।

আট বছর পর….
“রুবি!!! রুবি!!! কোথায় তুমি? রুবি??”
নিজেদের বেডরুম থেকে রুবিকে চিল্লিয়ে ডাকতে ডাকতে বের হলো আবির। কিন্তু এতো ডাকার পরেও রুবির সাড়া পেলো না। বেড রুম থেকে বেরিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো নিচে ড্রয়িংরুমে। রান্না ঘরে থাকা মিনতিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো আবির, “এই মিনতি রুবিকে দেখেছিস? হঠাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো ওই মেয়ে?”
মিনতি রান্না ঘরে নিজের কাজ করতে করতে বলল, “অনেকক্ষণ আগে, ওই বাড়ির দিকে যেতে দেখেছি ভাইয়া।”
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের বানানো তিন রুমের ডুপ্লেক্স বাড়িটি থেকে বেরিয়ে, শাহরিয়ার ম্যানশনের দিকে পা বাড়ালো। একেবারে শাহরিয়ার ম্যানশনের পাশেই নিজের এই দুইতলা বাড়িটি গড়ে তুলেছে আবির। উপর তলায় দুটো রুম আর নিচের তলায় একটি গেস্ট, একটা ছোট্ট কিচেন ও ড্রয়িংরুম। ও চেয়েছিল একটা ফ্ল্যাট কিনে সেটাতে উঠতে, কিন্তু আরমান তা করতে দেয়নি ওকে। শাহরিয়ার ম্যানশনে‌ জায়গার অভাব নেই তাই, ওর যদি আলাদা বাড়িতে থাকার ইচ্ছা হয় তাহলে ও যেনো এখানেই নিজের বাড়ি করে। তাই আবির শাহরিয়ার ম্যানশনের পাশেই নিজের এই বাড়িটি গড়ে তুলেছে, তবে এই জায়াটার দামও দিয়ে দিয়েছে আবির। ফ্রিতে কিছুতেই নিতে চাইনি।
আবির শাহরিয়ার ম্যানশনের কলিং বেল এ চাপ দিতেই, একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিলো। ভিতরে প্রবেশ করলো আবির, ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মায়া তার দুই বছরের মেয়েকে খাওয়াচ্ছিল, আবিরকে দেখে বলল,

“আবির ভাইয়া তোমরা রেডি?”
আবির বলল, “হুম! আমি তো রেডি। কিন্তু রুবি কোথায় গেলো রে? অনেকক্ষণ থেকে দেখছি না।”
মায়া:- “এই বাড়ি এসেছে ও? কই আমি‌ তো দেখিনি ওকে।”
আবির:- “মিনতি তো বলল, অনেক্ষন আগে নাকি ওকে এই বাড়ি আসতে দেখেছে।”
মায়ার দুই বছরের মেয়ে আদ্রিতা আধো আধো গলায় কেটে কেটে বলল, “রুবিকে ভাইয়া ছাদে নিয়ে গেছে, অনেকথন আগে।”

মায়া আদ্রিতার ভুল শুধরে দিয়ে বলল, “ওটা অনেকথন নয় মাম্মা, অনেকক্ষণ হবে। কিন্তু ওরা এই ভরদুপুর বেলা ছাদে কি করছে? চলো তো ভাইয়া দেখি, আদ্রিয়ান কেও তো রেডি করাতে হবে।”
বলেই মায়া আদ্রিতাকে খাওয়ানো শেষ করে, বেসিনে কাছে গেলো হাত ধুতে। এদিকে আদ্রিতা আবিরের দিকে হাত বাড়িয়ে কেটে কেটে বলল, “মামু..পিঠে..নাও।”
আবির জিজ্ঞাসা করলো, “নিতে হবে?”
আদ্রিতা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আবির আদ্রিতার সামনে ফ্লোরে বসলো, পিছন ঘুরে। আদ্রিতা সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে, আবিরের গলা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে উঠে গেলো। আবির পিছন দুই হাত দিয়ে আদ্রিতাকে ভালো করে ধরে, উঠে দাঁড়ালো।

এদিকে মায়া সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলো ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, পিছু পিছু আবিরও গেলো আদ্রিতাকে নিয়েই।
মায়া ছাদে গিয়ে, ছাদের মাঝখানের দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠলো। প্রচন্ড কড়া রোদ ছাদে। আর এই কড়া রোদের মধ্যে শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে ওর সাড়ে ছয় বছরের ছেলে আদ্রিয়ান। আর তার ঠিক সামনেই একটি আড়াই বছরের বাচ্চা মেয়ে কানে হাত দিয়ে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদের তাপে পুরো ফর্সা শরীরটা রক্তবর্ণ ধারন করেছে। চোখ দুটো ঢুলুঢুলু করছে। গালে শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ।
মায়া চিৎকার করে উঠলো, “আদ্রিয়ান!! আবার শুরু করেছো তুমি?”

বলেই ছুটে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো। বাচ্চা মেয়েটি নিভু নিভু চোখে মায়াকে দেখে কেঁদে ফেলল, কাঁদতে কোনো রকমে বলে উঠলো, “মামি মনি!! আর কোনো দিন খেলবো না মিশান ভাইয়ার সাথে।”
আদ্রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে গটগট পায়ে ছাদে থেকে নেমে গেলো। এদিকে মায়ার কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটি ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে। মায়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো করে নেমে এলো ছাদে থেকে, মাঝ পথেই দেখো হলো আবিরের সাথে। আবির চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছে ওর? এমন অবস্থা কিভাবে হলো?”
মায়া তাড়াহুড়ো করে বলল, “ভাইয়া ডক্টরকে কল দাও। রুবি জ্ঞান হারিয়েছে।”

মায়া তাড়াতাড়ি ওর কোলে থাকা বাচ্চাটিকে নিয়ে গিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো। এরপর একটা তোয়ালে ওয়াশরুম থেকে ভিজিয়ে এনে, পরনের জামাটা খুলে দিয়ে পুরো শরীর হালাকা হাতে মুছে দিতে শুরু করলো। আবির আদ্রিতাকে তাড়াতাড়ি বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ছুটে এলো ওই বাচ্চা মেয়েটির কাছে। বিচলিত হয়ে ডাকতে শুরু করলো, “রুবি!! রুবি!! কি হয়েছে আম্মু? চোখ খুলো প্লিজ! এই রুবি!!”
‘আবিরাতুন্নেসা রুবি’ আবিরের আড়াই বছরের মেয়ে। বাড়ির সবাইও খবর পেয়ে ছুটে এসেছে এই রুমে। মেয়েটার শরীর পুরো লাল হয়ে গেছে। পায়ের তলাগুলো হালকা ফোসকা পড়ে গেছে। সাবিনা বেগম রুবির কাছে বসে ডেকে উঠলো, “নানু মনি! চোখ খোলো নানু মনি!”

আনজুমা বেগম বলে উঠলেন, “মায়া ওর চোখে মুখে একটু পানির ছিটা দাও। এভাবে জ্ঞান ফিরবে না।”
উনার কথা মতো মায়া শরীর মুছানো থামিয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো। বেশ কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে চোখ খুলল রুবি। নিজের পাপাকে পাশে দেখে কেঁদে উঠলো, “পাপা!” কাঁদতে কাঁদতে নিজেই উঠার চেষ্টা করছে মেয়েটা। আবির তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নিলো। চোখে মুখে চুমু খেয়ে বলল, “এই তো আম্মু! কোথায় কষ্ট হচ্ছ? বলো পাপাকে।”
রুবি নিজের পা দেখিয়ে বলল, “পায়ে ব্যাথা।”

এতোক্ষণে নজর গেলো সবার রুবির পায়ের দিকে। বেশ কিছু জায়গায় লাল টকটকে হয়ে ফোসকা পড়ে গেছে। রুবির শরীর থেকে এখনো মনে হচ্ছে আগুনের তাপ বের হচ্ছে। মায়া ছুটে গিয়ে একটা মলম নিয়ে এসে যত্ন সহকারে লাগিয়ে দিলো। তখনো কেঁদে চলেছে বাচ্চা মেয়েটি।
তখনি ওই রুমে প্রবেশ করলো আরমান। স্বভাব সুলভ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছে? সবাই একসাথে এই রুমে?”
মায়া ঝাঁঝালো গলায় বলল, “কি আবার হবে? আছে না তোমার গুনধর ছেলে। এই কড়া রোদের মধ্যে রুবিকে ছাদে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। দেখো একবার তাকিয়ে, পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে।”

আরমান এগিয়ে গেলো আবিরের কোলে থাকা রুবির দিকে। রুবি আরমানকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিলো। আরমান কোলে নিলো রুবিকে। রুবি ঠোঁট ফুলিয়ে নালিশ জানালো, “মামা, আদি ভাইয়া আবার কষ্ট দিয়েছে। অনেক গরম লাগছিল, পায়ে এখনো জ্বলছে।”
আরমান রুবির দুই পায়ে চুমু খেয়ে বলল, “ভালো হয়ে যাবে আম্মু। তোমার ভাইয়াকে আমি খুব বকা দেবো।”
আরমানকে রুবিকে কোলে নিতে দেখে আদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আনজুমা বেগম বললেন, “কি হয়েছে? আমাদের আদ্রিতা বুড়ি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কেনো?”
আদ্রিতা:- “সবাই শুধু রুবিকেই তোলে নেয়, আমাতে নেয় না।”
কথাটা বলেই আবারও গাল ফুলালো। আনজুমা বেগম আদ্রিতাকে কোলে তুলে বললেন, “আর তাই আমাদের আদ্রিতা বুড়ি রাগ করেছে বুঝি?”
আদ্রিত:- “ হুম খুব আগ করেছে। পাপা তো অফিস থেকে এসে আমাতে আগে তোলে নেয়, আজ রুবিকে কেনো নিয়েছে।”

সবাই আদ্রিতা কথা শুনে হেসে উঠলো। মায়া আরমানকে উদ্দেশ্য করে বলল, “দেখেছেন, আপানার মেয়েটাও এখন থেকেই কেমন হিংসুটে হতে শুরু করেছে।”
আরমান:- “হুম দোষ করলেই ছেলেও আমার, মেয়েও আমার, তোমার কেউ নয় তাই না?”
মায়া কোনো উত্তর না দিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলো। সবাই মুখ চেপে হাসলো ওদের কান্ড দেখে।
রুবি আরমানের ঘাড়ে মাথা রেখেই প্রশ্ন করলো, “মায়া! আমরা গ্রামের বাড়ি কখন যাবো?”
আরমান:- “এই তো আম্মু একটু পরেই বেরিয়ে পড়বো।”
আরমান এরপর সাবিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো, “মম, সবাই রেডি? কখন বেরোবে?”
সাবিনা বেগম:- “সবাই তো রেডি হয়ে গেছে, শুধু তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
রুবি:- “পাপা চলো, আমাকেও রেডি হতে হবে আবার।”

আবির:- “কিন্তু আম্মু, তোমার মাম্মা তো এখনো আসেনি। তোমার শরীর টাও যে একটু খারাপ, এখন ওই বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই। তুমি তোমার মামি মনির কাছে রেডি হয়ে নাও।”
মাইশা ও আয়ানের তিন বছরের ছেলে মিশান বলে উঠলো, “পিমনি তো অনেকক্ষণ আগে চলে এসেছে। আদি ভাইয়ার রুমে আদি ভাইয়াকে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে।”
মাইশা ওর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলো, “কি হয়েছে তোর আদি ভাইয়ার?”
মিশান:- “আদি ভাইয়ার পায়েও তো, ফোস্কা পড়ে গেছে, ভাইয়ার গায়েও লাল লাল কি যেনো হয়ে গেছে।”
এটা শুনে সবাই ছুটে গেলো আদ্রিয়ানের রুমে। দেখলো সামিরা আদির গায়ে মলম লাগাচ্ছে। রুবির সাথে সাথে আদি নিজেও অতোক্ষন ছিল ছাদে রোদের মধ্যে। ওর পায়েও জুতো ছিল না তাই ওর পায়েও ফোস্কা পড়ে গেছে। সাথে শরীরে লাল লাল র‍্যাশ দেখা দিয়েছে ওর। আদ্রিয়ানের স্কিনও খুব সেনসিটিভ, তাই এই অবস্থা। সাথে গায়ে প্রচন্ড জ্বর উঠে গেছে ছেলেটার।

আবির সামিরাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কখন আসলে সামিরা?”
সামিরা আদির গায়ে মলম লাগাতে লাগাতেই বলল, “একটু আগেই এসেছি, তারপর সার্ভেন্ট এর মুখে শুনলাম পুরো ঘটনা। জানতাম সবাই আমার মেয়েটাকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকবে, ছেলেটার দিকে কেউ নজর দেবে না।”
মায়া নিজের ছেলের মাথার কাছে বসে আছে কাঁদো কাঁদো মুখ করে। আদ্রিয়ানের অবস্থা তো রুবির থেকেও খারাপ হয়ে গেছে। আদ্রিয়ান হয়েছে একেবারে আরমানের মতো। গম্ভীর রগচটা স্বভাবের। কষ্ট পেলে মুখে কখনো বলে না, কথা কম বলে। আর অল্পতেই রেগে যায়। আজকে ওর রেগে যাওয়ার কারণ, মাইশার ছেলে মিশানের সাথে রুবি বিয়ে বিয়ে খেলছিল। মিশান রুবির গালে চুমু খেয়েছিল, আর বউ ডেকেছিল। আর এইগুলো দেখে সাড়ে ছয় বছরের আদ্রিয়ান রেগে পুরোই ফায়ার। রুবিকে তো শাস্তি দিয়েছে, সাথে নিজেকেও কষ্ট দিয়েছে।

রুবি হচ্ছে আবির ও সামিরার একমাত্র মেয়ে। বয়স আড়াই বছর। পুরো নাম ‘আবিরাতুন্নেসা রুবি’ মায়া আর আরমানের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে, ‘আদ্রিয়ান শাহরিয়ার’ বয়স সাড়ে ছয় বছর। সবাই আদি বলে ডাকে। মেয়ে, ‘আদ্রিতা শাহরিয়ার উর্মি’ বয়স দুই বছর।
মাইশা ও আয়ানের এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে, ‘আনায়া শাহরিয়ার’ বয়স ছয় বছর। ছেলে, ‘মিশান শাহরিয়ার’ বয়স তিন বছর।
সামিরা হয়ে উঠেছে একজন নামকরা গাইনোকোলজিস্ট। মায়া ওদের কম্পানির হেড ডিজাইনার। আর মাইশা প্রথমে ওদের অফিসে জয়েন করলেও কয়েক বছর হলো ছেড়ে দিয়েছে। ও এখন সংসার আর বাড়ির বাচ্চা গুলোকে সামলাতেই ব্যাস্ত।

আজকে এই মুহূর্তে ওদের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদি এবং রুবির এই অবস্থার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, কাল ভোরের দিকে রওনা দেবে ওরা। ঠিক সকাল বেলাতেই পৌঁছাতে হবে ওদের, যেহেতু কাল একটা বিশেষ দিন।
রাতের বেলা…
নিচে সবাই ডিনার করতে ব্যাস্ত। এই ফাঁকে আদ্রিয়ান খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ধীর পায়ে প্রবেশ করলো ওর পিপির রুমে। বেডে একটা বড়ো পুতুল জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে রুবি। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে খুব সাবধানে পুতুল টা ছাড়িয়ে নিলো রুবির কাছ থেকে। তারপর সেটা প্রচন্ড রাগ নিয়ে ছুড়ে ফেললো। রুবির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, “বলেছি না, তোর সব ভালোবাসা শুধু আমার প্রতি হবে। কোনো পুতুলকেও আমার থেকে বেশি ভালোবাসতে পারবি না তুই।”

রুবি আদির গলা শুনে বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শুলো। আদি মুচকি হেসে রুবির পায়ের কাছে বসে পায়ে চুমু খেলো।
“সরি নিশা পাখি। অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে। খুব খুব সরি। কেনো তুই বউ বউ খেলছিলি মিশানের সাথে? কতবার বারণ করেছি তোকে ওর সাথে না খেলতে, তারপরেও তুই আমার কথা শুনিস না। তাই তো আজ শাস্তি দিতে গিয়ে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”
আবারও চুমু খেলো রুবির পায়ে।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব ৬২

“খুব!! খুব!! খুব..সরি নিশা পাখি। আর কখনো এতোটা কষ্ট দেবো। প্রমিস করছি।”
এরপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে করে আনা একটা চকলেট এর ছোট বক্স রুবির মাথার কাছে রেখে দিয়ে, আবারও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো ও রুম থেকে।

আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা শেষ পর্ব 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here