না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৭

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৭
মাইশা জান্নাত নূরা

মসজিদ থেকে বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সারফারাজ পিহুকে নিয়ে খান ভিলার চৌকাঠের ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। পিহুর ডান হাত শক্তভাবে সারফারাজের হাতের মুঠোয় বন্দী। সারফারাজের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি ফুটে আছে। পিহুর চোখে-মুখে লজ্জা ও উত্তেজনার মিশ্র ছাপ স্পষ্ট। পিহুর অন্তর জুড়ে নতুন জীবনের স্নিগ্ধ অনুভূতি বিরাজ করছে।

চৌকাঠের এপারে লাল গালিচা বিছানো রয়েছে। এই গালিচার উপর পিহু ও সারফারাজের একসঙ্গে বাড়ানো প্রতিটি পদক্ষেপেই ওদের নতুন জীবনকে স্বাগত জানাবে। দরজার সামনে পিহুর নতুন তিন মা নিজ নিজ মুখশ্রীতে একরাশ মমতা ও মায়ার ছাপ ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। শিউলির নিজ হাতে একটা ট্রে রয়েছে যেখানে রাখা আছে একটি দুধের গ্লাস আর মিষ্টির ছোট বাটি। আতুশির হাতেও একটা ট্রে রয়েছে। কিন্তু ট্রে-টহ লাল চাদরের আবরণে ঢাকা। বোঝা যাচ্ছে এই আবরণটি সরালেই ওদের সামনে দৃশ্যমান হবে সেখানে থাকা বিশেষ কিছুর।
পরক্ষণেই তাহমিনা দু’চোখ জুড়ে স্নেহ ও ঠোঁটে মৃদু হাসির দেখা ফুটিয়ে আতুশির হাতে থাকা ট্রে-টার উপর থেকে লাল চাদরের আবরণটি সরালেন। সেখানে রাখা রয়েছে গাঢ় নীল রঙের মখমেলের দুইটি বক্স। একটির আকার ছোট ও আরেকটির আকার খানিকটা বড়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাহমিনা প্রথমে ছোট বক্সটি খুললেন। ভেতর থেকে বের করলেন একটি ডায়মন্ডের নোজপিন। নিজের মমতার হাত দিয়ে অতি যত্নের সহিত পিহুর নাক থেকে বর্তমান নোজপিনটি খুলে এই নতুন নোজপিনটি পড়িয়ে দিলেন। এরপর দ্বিতীয় বক্সটি খুলে পিহুর হাতের সাইজের বানানো একজোড়া চিকন, পাতলা স্বর্ণের চুড়ি বের করলেন। তাহমিনা পিহুর হাতে সেই চুড়িজোড়াও পড়িয়ে দিয়ে বললেন…..
—“বিবাহিত মেয়েদের চিহ্নস্বরূপ নোজপিন আর এক জোড়া চুড়ি পড়তে হয়। এটা কোনো বাধ্যতামূলক নিয়ম নয় যদিও। তবে আমাদের দাদী-মায়ের আমল থেকে আমরা এমনটা দেখে আসছি। আমাদের বিয়ের সময় আমাদের শ্বাশুড়ি মা’ও আমাদের নাকে নোজপিন ও হাতে একজোড়া চুড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলেন। তা আমরা আজও পড়ে আছি। আজকাল তো অনেক মেয়েরাই এগুলো পড়ে থাকতে চায় না। তবুও আমরা তোমাকে পড়িয়ে দিলাম। যদি পরে তোমার ভালো না লাগে তাহলে খুলে ফেলো। এ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তুমি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে তেমনটাই হবে।”

পিহুর চোখে আনন্দঅশ্রুরা টলমল করছে। ঠোঁটে ফুটিয়ে রাখা মৃদু হাসির রেখা নিয়ে পিহু বললো….
—”এই নোজপিন ও চুড়ি জোড়া দেখতে অতিসামান্য কিছু মনে হলেও এর মাঝে আমি আমার তিন মায়ের স্নেহ-মমতা খুঁজে পাচ্ছি। তাই এগুলো আমি কখনও খুলতে চাই না। এগুলো সবসময় আমার সাথে থাকবে ইনশাআল্লাহ।”
পিহুর এরূপ কথাশুনে তাহমিনা, শিউলি ও আতুশি মনে মনে ভিষণ শান্তি অনুভব করলেন। অতঃপর তাহমিনা শিউলির হাতে থাকা ট্রে থেকে একটা মিষ্টি উঠিয়ে প্রথমে পিহুকে এরপর সারফারাজকে খাইতে দিলেন। একই ভাবে গ্লাসে থাকা দুধ টুকুও পান করালেন ওদের। অতঃপর ওনারা ৩জন ওদের সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেন। তাহমিনা বললেন….

—“বিসমিল্লাহ বলে এবার একসঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করো। গালিচার উপর দিয়ে হেঁটে সামনের দিকে অগ্রসর হও। এই বাড়িটাকে আজ থেকে তুমি তোমার নিজেরও বাড়ি মনে করো কেমন!”
পিহুর লাজুক মুখে হালকা হাসি হেসে মাথা হালকা নোয়ানো অবস্থায় সারফারাজের সাথে একত্রে ভিতরে প্রবেশ করলো। লাল গালিচা ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হলো ওরা। ড্রয়িংপ্লেসে এসে দাঁড়াতেই
শিউলি হাসিমুখে বললেন…..
—“পিহু মা, তোমার আগমনে আমাদের ঘরে আজ সুখের আলো ছড়িয়ে পড়লো।”
আতুশি শিউলির পাশে দাঁড়িয়ে পিহুর মাথায় আলতো করে হাত রেখে দোয়া করলেন…..
—“আল্লাহ তোমাদের দাম্পত্য জীবনের উপর রহমত বর্ষণ করুন। চিরসুখী হও তোমরা। আর মনে রেখো তুমি শুধু এই খান বাড়ির বড় বউ-ই নও তুমি আমাদের তিন মায়ের আদরের মেয়ে।”
পিহুর ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে হাসছে। এতোগুলো বছর যেই মায়ের স্নেহ থেকে পিহু ব*ঞ্চি*ত ছিলো আজ একসঙ্গে নতুন তিন তিনজন শাশুড়ি মায়ের মুখে নিজেকে “মেয়ে” বলে সম্বোধিত হতে দেখে পিহুর বুকটা ভরে গেলো।
সারফারাজ পাশ থেকে ফিসফিস করে বললো….

—“এবার বুঝতে পারছো, আমি কেনো বলেছিলাম আমার পরিবার অন্য ৫টা পরিবারের মতো না!”
তাহমিনা, শিউলি আর আতুশি একে-অপরের সাথে কথপোকথনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সোফায় পাশাপাশি বসে কথা বলছেন মোস্তফা আর জামাল। পিহু সারফারাজের দিকে কৃতজ্ঞতাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো….
—“আপনার জন্যই আজ আমি আমার আম্মুকে আবারও ফিরে পেয়েছি আমার নতুন তিন মায়ের মাঝে। আপনি আমার জীবনে আসা আল্লাহর তরফ থেকে সবথেকে বড় রহমতের অংশ এমপি সাহেব।”
জামাল খান উঠে দাঁড়িয়ে বললেন….
—”সারফারাজ বউমাকে নিয়ে ঘরে যাও। বিশ্রামের প্রয়োজন আছে তোমাদের। আর বাকিরাও নিজ নিজ ঘরে যাও অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”
অতঃপর সারফারাজ পিহুর হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। বাকিরাও নিজ নিজ ঘরে চলে গেলেন।

ক্লাব থেকে নেশায় ডুবে থাকা বেসামাল তেজকে নিয়ে নির্ঝর অনেক কষ্টে বের হয়ে ওকে নিজেদের গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো। তেজ নেশায় আধো ঘুম অবস্থায় আধো আধো বকবক করছে তখনও। নির্ঝর পিছনের দরজা বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে সিটবেল্টটা লাগিয়ে শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—”তেজ ব্রো সকালে তোমার নতুন ডা*র্লিং ঠান্ডা গলায় যে হু*ম*কি দিলো এখনও টেনশনে আমার কিডনি-ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করতেছে না। সারফারাজ ভাই যদি জানতে পারে তোমার এইসব কীর্তির কথা আর আমি সব সত্য জেনেও চেপে রয়েছিলাম এতোদিন ধরে আমাকে উল্টো ঝুলিয়ে বে*ধ*র*ম পে*টা*বে তার নিশ্চয়তা আমি এখনই দিচ্ছি। আল্লাহ তুমি আমাকে বাঁচাইও।”
এই বলে নির্ঝর গাড়ি স্টার্ট করলো। রওনা হলো নিজেদের প্রায় সময় কাটানো রাতের আশ্রয়স্থলের উদ্দেশ্যে।

পিহুকে নিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো সারফারাজ। পিহুর সর্বাঙ্গ হালকা শীতল হয়ে আছে। এই প্রথম কোনো পুরুষের সাথে একা একঘরে থাকতে হবে পিহুকে। এই পুরুষটি একান্ত পিহুর। তাদের মধ্যকার সম্পর্কটিও হালাল। সারফারাজ শান্ত কন্ঠে বললো…..
—”ফ্রেশ হয়ে নাও তুমি। আমি বেলকনিতে আছি।”
এই বলে সারফারাজ বেলকনির দিকে অগ্রসর হতে নিলে পিহু আস্তে করে বললো…..
—”ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো আমি?”
সারফারাজ থামলো। অতঃপর আলমারীর সামনে দাঁড়িয়ে একপার্শে দুইটা পাল্লা খুলে দিতেই পিহুর সামনে দৃশ্যমান হলো সেখানে অনেকগুলো থ্রি-পিস থেকে শুরু করে একটা মেয়ের ঘরে-বাহিরে পরিধানের জন্য যাবতীয় জিনিসপত্র গোছানো অবস্থায় রাখা রয়েছে। পিহু বেশ অবাক হলো। সারফারাজ হাসিমুখে বললো….
—”আলমারীর এই অংশটা আমি তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পরপরই সাজিয়ে নিয়েছিলাম। একদিন তুমি আমার জন্য বৈধ হবে। এই বাড়িটা, এই ঘরটা, এই ঘরের প্রতিটা জিনিস তোমার হবে এই ভেবেই। এখান থেকে যেটা ভালো লাগে সেটা পড়ে নাও।”

এই বলে সারফারাজ বেলকনিতে চলে গেলো। পিহু হাসিমুখে আলমারি থেকে একটা আকাশি রঙের থ্রি-পিস বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কিয়ৎক্ষণ পর পিহু ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। হালকা মেক-আপের আস্তরণ উঠানোর পর পিহুর শ্যমরঙা মায়া মাখানো মুখশ্রীতে ফুটে উঠেছে একরাশ স্নিগ্ধতা। আকাশি রঙা থ্রি-পিচটা ওকে দারুণ মানিয়েছে। ওড়নাটা ভালোভাবে শরীরের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে পিহু। চুলগুলো ভিজিয়েছিলো তাই তোয়ালে দ্বারা পেঁচিয়ে রেখেছে। বেলকনির দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পিহু ধীর স্বরে বললো…..
—”এবার আপনিও যান ফ্রেশ হয়ে নিন।”
বেলকনির রেলিং ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো সারফারাজ। নিজের প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর কন্ঠ কর্ণপাত হতেই সারফারাজ ঘুরে দাঁড়ালো পিহুর দিকে। সারফারাজের চোখে চোখ পড়তেই পিহু হালকা লজ্জায় দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। সারফারাজ পিহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..

—”এখানেই থেকো। আমি আসছি একটু পরেই।”
পিহু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে সারফারাজ ওর পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতরে গিয়ে আলমারীর অন্যপাশের পার্ট খুলে কালো রংয়ের একটা টি-শার্ট আর ধূসর রংয়ের চেক-প্রিন্টের ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। পিহু বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো ঠিক যেখানে একটু আগে সারফারাজ দাঁড়িয়েছিলো সেখানটাতেই। রেলিং এ হাত রাখলো। পিহুর মনে হচ্ছে সে সারফারাজের হাতের উপর হাত রাখলো। পিহু দু’চোখ বুঁজে ফেললো।
কিয়ৎক্ষণ পর পিহুর মাথায় থাকা তোয়ালেটা খুলে গেলো ওর বাধ্য চুলগুলো অবাধ্য হয়ে হাঁটু ছুঁই ছুঁই হলো। পিহুর সর্বাঙ্গ হালকা কেঁপে উঠলো। পিহু অনুভব করলো সারফারাজের উপস্থিতি। সারফারাজ পিছন থেকে ধীরস্বরে বললো…..

—”এখন কি আমার তোমার এই লম্বা ঘন চুলগুলো দেখে ও তোমার লাজুক হাসিমাখা মুখটাকে স্মরণ করে এই গানটা গাওয়া উচিত….
‘পিহু লো তোমার লম্বা মাথার কেশ
লাজুক হাসি দিয়ে তুমি পা*গল করলে দেশ’…!”
সারফারাজের গান শুনে পিহু শব্দ করে হেসে ফেললো। সারফারাজ তৎক্ষণাৎ পিহুর দু’কাঁধ ছুঁয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। পিহুর হাসি থেমে গেলো। লজ্জায় সে মাথা নুইয়ে নিলো সঙ্গে সঙ্গে। সারফারাজের দৃষ্টি পিহুর উপরেই স্থির। সারফারাজ পিহুর থুঁতনি ছুঁয়ে ওর মুখটা হালকা উঠালো। পিহু দু’চোখ বুঁজে রেখেছে। সারফারাজ পিহুর দু’চোখের উপর হালকা ফুঁ দিলো। পিহু দু’হাতে নিজের কামিজের নিচের অংশের দু’পাশ শক্তভাবে চেপে ধরলো। ওর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল বাতাস বয়ে গেলো যেনো সারফারাজের এমন কাজে। সারফারাজ হাসিমুখে বললো….

—”আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো? এভাবে বারংবার লজ্জা পেলে সত্যি বলছি আমি এই পরীক্ষায় ডাহা ফে*ই*ল করবো। ফলসরূপ একটা ফুটবল টিম বানাতে বেশি সময় লাগবে না আমার।”
সারফারাজের মুখে এরূপ কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে পিহু চোখ মেলে তাকালো ওর দিকে। পিহুর মুখ হা হয়ে গিয়েছে ওর চোখের আকৃতিও স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় হয়ে গিয়েছে। সারফারাজ ওর ঠোঁটে দু*ষ্টু হাসির রেখা ফুটিয়ে একবার চোখ টিপ দিলো পিহুকে। পিহু সঙ্গে সঙ্গে সারফারাজের থেকে চোখ সরিয়ে মুখ বন্ধ করে বললো…..
—”অ*সভ্য, যাচ্ছে-তাই লোক কোথাকার।”
সারফারাজ ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে বললো….
—”মাত্র ১টা ফুটবল টিম বানানোর কথা বললাম এতেই আমাকে অ*সভ্য, যাচ্ছে-তাই বানিয়ে দিলে? যদি ক্রিকেট, হকি, ভলিবল…..!”

সঙ্গে সঙ্গে সারফারাজের মুখ একহাতে চেপে ধরলো পিহু। তারপর বললো….
—”চুপ। আর একটা কথা বললে ধা*ক্কা দিয়ে দোতলা থেকে একদম নিচে ফেলে দিবো আপনাকে।”
সারফারাজ পিহুর সেই হাতের তালুতে চুমু এঁকে দিলো। পিহু তা অনুভব করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত সারফারাজের মুখের উপর থেকে সরিয়ে সারফারাজের বু’কের উপর দু’হাত রেখে প্রেসার দিলো ওকে নিজের সামনে থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে। সারফারাজ পিহুর দু’পাশে রেলিং এর উপর দু’হাত রেখে ওর দিকে এবার ঝুঁকে এলো খানিকটা। ভাঁজ হলো পিহুর প্রেসার দেওয়া হাতজোড়া। পিহুর পিঠ ঠেকে গিয়েছে রেলিং এর সাথে। সারফারাজ বললো….

—”এই না হলে যেমন জামাই তার তেমন বউ! উঠতে বসতে থ্রে*ট দেওয়া তো আমার স্বভাব ছিলো, বিয়ে হয়েছে মাত্র ঘন্টা পেরিয়েছে এতেই তুমি কতো সুন্দর ভাবে আমার স্বভাবটা চু*রি করে নিলে বউ। আসো একটা চুমু খাই।”
এই বলে সারফারাজ ওর পুরু ঠোঁটজোড়া চুমুর স্টাইলে ভাঁজ করে দু’চোখ হালকা বুঁজে মুখটা পিহুর দিকে আরো খানিকটা এগিয়ে আনতে নিলে পিহু সঙ্গে নিজের হাতের বাঁধন ঢিলে করে নিচু হয়ে সারফারাজের হাতের নিচ দিয়ে বেড়িয়ে সোজা রুমের ভিতরে দৌড় দিলো। সারফারাজ তৎক্ষনাৎ উল্টো ঘুরে স্বশব্দে হেসে বললো…..
—”একটা চুমুই খেতে চেয়েছিলাম বউ। বিশ্বাস করো তোমার স্বামীর শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ তোমার জন্য পবিত্র রয়ে গিয়েছে এখনও।”
পিহু বিছানায় উল্টোদিক হয়ে বসে দু’হাতে নিজের দু’কান চেপে ধরলো। এই লজ্জা সে আর নিতে পারছে না।

রাত প্রায় গভীর…..
রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। নির্ঝর গাড়ি নিয়ে অনেকটা পথ অতিক্রম করেছে। হঠাৎই ঘটে গেলো অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। গাড়ির সামনে হুট করে এসে দাঁড়ালো এক কালো বোরখা পরিহিত মেয়ে। নির্ঝর বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষলো। হার্ড ব্রেক কষায় টায়ারের ঘর্ষণের এক অদ্ভুত শব্দের সাথে রাস্তায় তার দাগ পর্যন্ত স্পষ্ট হলো। সৌভাগ্যবশত কোনো বড় ধরণের এ*ক্সি*ডে*ন্ট ঘটলো না। পরক্ষণেই নির্ঝর মেয়েটিকে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো।

নির্ঝরের ভেতরটার এখনও কাঁ*প*ছে। নির্ঝর দু’হাটু ভাঁজ করে বসলো মেয়েটির সামনে। মাটিতে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে মেয়েটি। মুখে তার নেকাব টানা। নির্ঝর এবার সংকোচে পড়ে গেলো। একজন পর্দাশীল মেয়েকে এভাবে স্পর্শ করা কি ঠিক হবে ওর? কিন্তু মেয়েটির সেন্স ফেরানোটাও তো জরুরি।
তাই নির্ঝর দ্রুত উঠে গাড়ি থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে পুনরায় মেয়েটির কাছে এসে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই মেয়েটির মুখের উপর থেকে নিকাবটা সরালো। নির্ঝরের দৃষ্টি আটকে গেলো মেয়েটির মুখশ্রী পানে। গাড়ির হেডলাইটটা জ্বলে থাকার কারণে মেয়েটির মুখশ্রী স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পারছে নির্ঝর।
কি অসম্ভব মায়া রয়েছে সেই মুখশ্রী জুড়ে! উজ্জ্বল ফর্সা বর্ণ, সরু নাক, নিখুঁত ভ্রু-জোড়া আর পাতলা-ফিলফিলে গোলাপি রঙের ঠোঁটজোড়া এমন আকর্ষণ ছড়াচ্ছে যে তার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না নির্ঝর। মুহূর্তেই নির্ঝরের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো শীতল হাওয়ার মতো কিছু।

পরপরই নির্ঝর নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত মেয়েটির চোখে-মুখে হালকা পানির ছিটা দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেয়েটি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো নির্ঝরের দিকে। মেয়েটির নিস্পাপ, আ*ত*ঙ্কমাখা দৃষ্টি নির্ঝরের চোখে এসে পড়তেই সময় যেনো কিছুক্ষণের জন্য থ*মকে গেলো।
মেয়েটি চট করে উঠে বসে ওভাবেই দু’হাত পিছিয়ে গিয়ে আ*ত*ঙ্কি*ত স্বরে বললো….
—”আ-আমার কোনো ক্ষ*তি করবেন না। দোহাই আপনারে। আমায় ছে*ড়ে দিন।”
মেয়েটির এমন কথায় নির্ঝর বেশ অবাক হলো। পরপরই নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—”আপনি প্লিজ শান্ত হোন। আমি আপনার কোনো ক্ষ*তি করবো না। নিজেকে স্থির করুন।”
মেয়েটা নির্ঝরের উপর থেকে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। নির্ঝর এক পা মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে নিজের হাতে থাকা পানির বোতলটা মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো…..

—”নিন পানি পান করুন।”
মেয়েটি দ্রুত এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়িয়ে বললো….
—”না, না। আমি আপনার দেওয়া কোনো জিনিস খাবো না। যদি কিছু মিশিয়ে থাকেন তাতে! আমি ছবিতে দেখেছি শহরের ছেলেধরারা এসবই করে।”
মেয়েটির এমন কথায় নির্ঝর হা হয়ে গেলো। পরপরই সে বললো….
—”লাইক সিরিয়াসলি? আমাকে দেখে আপনার ছেলেধরা বলে মনে হচ্ছে?”
মেয়েটি নিচের ঠোঁটে হালকা কাঁ*ম*ড় বসিয়ে নির্ঝরের দিকে আবারও তাকালো। ওকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার দেখে নিলো।

নির্ঝরের গায়ে ধবধবে সাদা শার্ট যার হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো রয়েছে। বুকের উপরের একটি বোতাম খোলা থাকায় শক্ত-পোক্ত জিম করা শরীরটা হালকা দৃশ্যমান হয়েছে। নিচে একটা কালো প্যান্ট। পায়ে মানানসই কালো সু রয়েছে আর বামহাতে রোলেক্স ব্রান্ডের একটা ঘড়ি রয়েছে। ডান হাত এগিয়ে ধরা পানির বোতলটা৷
মেয়েটা ধীর কন্ঠে বললো…..
—”ছেলেধরাদের দেখে তো বোঝা যায় না তারা ছেলেধরা। তাহলে আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করবো!”
নির্ঝর নিজের হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বললো….

—”ফাইন। বিশ্বাস করতে হবে না আপনার আমাকে। আর না আমার দেওয়া পানিও পান করতে হবে আপনাকে। আমার মনে হয়েছিলো আপনি কোথাও থেকে ছুটে এখান পর্যন্ত এসেছেন পানি পান করলে আপনার হয়তো ভালো লাগবে তাই পানির বোতলটা দিয়েছিলাম এছাড়া কিছুই না।”
মেয়েটি কিছু বললো না। নির্ঝর শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো…
—”এই শহরে কি নতুন আপনি? যুগ-যামানা যে ভালো না সে জ্ঞান তো ভরপুর আছে আপনার মাথায় তবুও এতোরাতে বাহিরে কেনো এসেছেন আপনি?”
মেয়েটি এবার ভ*য়ে কেঁদে ফেললো। মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে নির্ঝর যেনো পুরোপুরি বোকা বনে গেলো। নির্ঝর দ্রুত স্বরে জিজ্ঞেস করলো….

—”আরে আরে আপনি কাঁদছেন কেনো?”
কাঁদতে কাঁদতে একটু সময়ের মধ্যেই মেয়েটুর হিঁ*চ*কি উঠে গিয়েছে। মেয়েটি কোনো রকমে কান্না থামিয়ে বললো….
—”পানি দিন।”
নির্ঝরের বললো….
—”এহহহহ!”
মেয়েটি আবারও বললো….
—”পানি চাইলাম তো! দিন!”
নির্ঝর একহাতে নিজের মুখে হালকা ঘঁষা মতো দিয়ে মেয়েটির দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো। মেয়েটি পানির বোতলটা নিয়ে পানি পান করলো। এরপর অদ্ভুত একটা কান্ডও করলো। উপর দিকে শব্দ করে নিঃশ্বাস টেনে কিছুক্ষণ ওভাবেই নিঃশ্বাস ছাড়া ও নেওয়া বন্ধ রাখলো। খানিক পর নিঃশ্বাস ছাড়লো। এভাবে কয়েকবার করার পরই মেয়েটির হিঁচকি উঠা বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়েটির এমন কাজে নির্ঝর অত্যন্ত অবাক হলো। মনে মনে বললো….

—”আরে বাপরে হিঁচকি বন্ধ করার এ ততো দারুণ টেকনিক দেখছি!”
মেয়েটি বললো…..
—”আমি এই শহরে নতুন। আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কাউকে চিনি না আমি।”
নির্ঝর বললো….
—”একা একটা মেয়ে এভাবে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করাটা নিরাপদ হবে না আপনার জন্য। আমার সাথে আসুন। আমি আপনাকে নিরাপদ আশ্রয় দিবো।”
মেয়েটি নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো….
—”আপনি যে ভালো হবেন তার কি নিশ্চয়তা আছে? আপনিও তো বাকিদের মতো আমার অ*স*হা*য়ত্বের সুযোগ নিতে পারেন!”
নির্ঝর এবার খানিকটা রাগ নিয়ে বললো….

—”আসলেই আমি নি*র্ল*জ্জ। যেই মেয়ে একবার আমাকে ছেলেধরা বানিয়ে দিলো তাকেই কিনা নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার অফার করলাম আমি! উফহহ আল্লাহ আপনার এই অধম বান্দারে একটু বুদ্ধি দিন। যা প্রয়োগ করে সে নিজের ইজ্জতকে ফা*লু*দা হওয়া থেকে অন্তত বাঁচাতে পারবে।”
নির্ঝর মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
—”বিশ্বাস যখন হচ্ছে না তাহলে থাকুন এখানেই। এরপর আপনার সাথে যা হবে তার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন।”
এই বলো নির্ঝর চলে আসতে নিলে মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে বললো….

—”নিয়ে চলুন আমায়। এভাবে ফেলে যাবেন বি*প*দ বুঝেও!”
নির্ঝর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো….
—”কি মুশকিল রে বাবা। এখনই তো নিজেই বললেন যাবেন না আমার সাথে, বিশ্বাস হচ্ছে না আমাকে আবার এখনই নিজেই বলছেন আপনাকে নিচ্ছি না বি*পদ বুঝেও! গানটা তো এমনি এমনিই বের হয় নি যে, মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা!”
মেয়েটা দাঁত বের করে হালকা হাসি দিলো। এরপর নির্ঝর আবারও বললো….
—”আসুন, গাড়িতে বসবেন।”
মেয়েটা গাড়ির কাছে এগিয়ে আসলে নির্ঝর ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজাটা খুলে দিলো। মেয়েটা সেখানে উঠে বসতেই বি*শ্রী একটা গন্ধ তার নাকে এসে লাগলে মেয়েটা পিছন ফিরে তাকাতেই তেজকে সেখানে উল্টো পিঠ হয়ে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে বললো…..

—”উনি কে?”
নির্ঝর বললো….
—”উনি এই অ*ধমের বড় ভাই। ওনাকে ভ*য় পাওয়ার কিছু নেই। বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন উনি এখন। কাল দুপুরের আগে ওনার এই ঘুম কাটবে না।”
মেয়েটা আর কিছু বললো না। নির্ঝর মেয়েটার পাশের গাড়ির দরজা বন্ধ করে নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। অতঃপর বললো….
—”সিটবেল্ট লাগিয়ে নিন।”
মেয়েটা নিজের হাতের বাম পাশ থেকে সিটবেল্টের ফিতাটা টেনে ধরে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো….

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৬

—”এটা কিভাবে লাগায়?”
নির্ঝর মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসতে নিলে মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে চিল্লিয়ে বললো…..
—”একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। এসব বেল্ট-ফেল্ট লাগানোর বাহানায় আমায় স্পর্শ করবেন এমন বা*জে মতলবও থাকতে পারে আপনার।”
নির্ঝরের এবার ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুলগুলো নিজেরই একটা একটা করে টেনে ছিঁ*ড়*তে।

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here