না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৯
মাইশা জান্নাত নূরা
সারফারাজ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….
—”অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। এবার ঘুমাবে চলো।”
পিহু সারফারাজের দিকে তাকিয়ে বললো….
—”আমি কোথায় ঘুমাবো?”
সারফারাজ স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিত্তুর করলো….
—”এই বিশাল রুমে কিং সাইজের বেডটা কি তোমার চোখে পড়ছে না! নাকি মনে ধরছে না কোনটা?”
—”আমি বিছানায় ঘুমালে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”
—”মানে?”
—”মানে, আমি তো বিছানায় ঘুমাবো। কিন্তু আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”
—”অবশ্যই বিছানাতেই।”
পিহুও উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা অবাক স্বরে বললো….
—”কিহ্! একই বিছানায় আপনি-আমি দু’জনে একসাথে ঘুমাবো?”
—”এখানে এমন অবাক হওয়ার কি হলো? আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা আসলে কি, সেই সম্পর্ক থেকে কি কি অধিকার লাভ হয় তা নিয়ে কোনো জ্ঞানই নেই তোমার নাকি?”
পিহু মিনমিনে স্বরে বললো….
—”জ্ঞান আছে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সারফারাজ বিছানা থেকে একটা বালিশ উঠিয়ে সেটা আলমারীতে উঠিয়ে রাখলো। পিহু বিছানায় নজর বুলাতেই দেখলো সেখানে কেবল একটিমাত্র বালিশ রাখা রয়েছে এখন। পিহু বললো…
—”এ-এক বিছানায় এ-এক বালিশে দু’জন মানুষ ঘুমানো যাবে না। আপনার অ-অস্বস্তি বোধ হবে।”
—”কে বললো এক বালিশে দু’জনকে মাথা রাখতে হবে?”
—”বিছানায় তো দু’টো বালিশ-ই ছিলো তার ভিতর আপনি একটা উঠিয়ে রাখলেন আলমারীতে আর তো একটাই রইলো এখানে। তাহলে!”
সারফারাজ নিজের মাথার নিচে বালিশটা নিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে নিজের উপর একহাত রেখে মুচকি হেসে বললো….
—”আল্লাহর এই অধম বান্দার বুকটা কি তার বিবি হায়াতির বালিশ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না!”
পিহু ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে মাথা নুইয়ে নিলো। পায়ের তলা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত অদ্ভূত রকমের শিরশির অনুভব হলো যেনো পিহুর সারফারাজের এরূপ কথা শুনে। সারফারাজ আবারও বললো….
—”আমার জানামতে তো, বিয়ের পর স্বামীর বুক-ই হয়ে থাকে প্রতিটি নারীর ঘুমানোর জন্য সবথেকে আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ বালিশ।”
পিহু কিছু বলতে নিবে তার আগেই সারফারাজ বললো….
—”মুখটা বন্ধ অবস্থাতেই চুপচাপ এসে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো। অহেতুক সময় নষ্ট করলে, অপ্রয়োজনীয় কথা বললে যা বাকি রেখেছি তাও আজই সেরে ফেলবো।”
পিহুর চোখের আকৃতি স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেকটা বড় হয়ে গেলো, মুখটাও হা হয়ে গেলো এবার। পরপরই পিহু নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে বিছানায় উঠে সারফারাজের পাশে মাথা নুইয়ে বসলো। কোনোভাবেই পারছে না এই লোকটার বুকে মাথা রেখে শুঁতে সে। লজ্জায় বুকের ভিতরটা যেনো ফেঁ*টে কিছু বের হয়ে আসবে এমন মনে হচ্ছে পিহুর। সারফারাজ পিহুর হাত ধরে হ্যচকা টান দিয়ে ওকে নিজের বুকের উপর এনে ফেললো। পিহু চোখ-মুখ খিঁচে ওভাবে নিজেকে একপ্রকার গুঁটিয়ে নিলো। সারফারাজ বললো….
—”ইজি হও। নয়তো তোমার ছোট্ট হৃদয়টা ব্রেক ফেইল করে ফেললে, আমার কি হবে হায়াতি সেটা একবারও ভেবেছো?”
পিহু ঢো*ক গি*লে নিয়ে বললো….
—”আ-আমার কেমন অ*স্বস্তি লাগছে এভাবে। ছাড়বেন আমায় প…!”
সারফারাজ পিহুর থুঁতনি স্পর্শ করে ওর মুখটা নিজের বুক থেকে কিছুটা তুলে ধরে বললো….
—”ছাড়ার সুযোগ তো কম আসে নি। বিয়ের আগেই ছাড়ি নি বিয়ের পর ছাড়বো ভাবলে কি করে? তুমি না চাইলেও তোমাকে আমার হতে হয়েছে। তাই তোমার ভালো না লাগলেও, অস্বস্তি হলেও আমার বুকে মাথা রেখেই প্রতিরাতে তোমাকে ঘুমাতে হবে। বুঝলে বিবি হায়াতি!”
পিহু বুঝে গিয়েছে সারফারাজের থেকে ওর ছাড় মেলা অসম্ভব। তাই সে নিজেকে স্বাভাবিক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সারফারাজের বুকে মাথা ঠেকিয়ে শরীরটা ইজি করে দু’চোখ বুঁজে নিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেললো। সারফারাজ পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…….
❝হায়াতি তুমি এলে আমার প্রাণের খেয়ায়,
ভালোবাসার রঙ-বেরঙের ফুলেরা ফোঁটে নবীন ঋতুর এলোমেলো হাওয়ায়।
তোমার ছোঁয়ায় মুছে যায় আমার সব দুঃখ-বেদনা,
তুমি ছাড়া আমার এ জীবন কেবল ধূ-ধূ মরুভূমির ন্যায় শূন্যতা।
হায়াতি তুমি আমার হৃদয় জুড়ে রঙ-তুলিতে আঁকা ছবি,
তুমি কাছে থাকলে দুঃখরা হয় ভ্রান্ত, হয় স্বপ্ননীল কবি।
তোমার চোখে দেখি নতুন স্বপ্নের রঙিন আলো,
তোমার জন্যই বাঁচি আমি, তোমার জন্যই থাকি ভালো।
হায়াতি তুমি আমার জীবনের নিঃস্বার্থ এক প্রার্থনা,
তুমিহীন এই আমার তো বেঁচে থাকাটাই মানা।
তুমি যদি থাকো আমার পাশে এই হাতটিতে তোমার কোমলমতী হাতখানা রেখে,
জীবনটা নতুন ভাবে সাজবে, বাজবে প্রেমের গান দু’টি মানব-মানবীর বুকে বুকে।
হায়াতি তুমি আমার শান্তির চিরন্তন ঠিকানা,
তুমি ছাড়া জীবনের পথচলা রয়ে যাবে অচেনা, অজানা।
হায়াতি তুমি আমার অগাধ সুখ,
তুমি আমার অশেষ দোয়ায় মিলিত সুমিষ্ট ফল,
তুমি ছাড়া আর কিছুই চাই না আমি,
তোমাতেই আসক্ত রই,
এ মন জুড়ে কেবল বসত শুধু তোমারই…❞
সারফারাজের মুখে এমন হৃদয় স্পর্শ করা কবিতা শুনে পিহু অবাক হলো। পিহু বললো…..
—”আপনি এতো গুণী কেনো? পুরুষ মানুষ বুঝি এমনও হয়!”
সারফারাজ হেসে বললো….
—”বাকি পুরুষরা তাদের বউকে কিভাবে ট্রিট করে বা তাদের কাছে কেমন পুরুষ হতে থাকে তা আমি জানি না। তবে আমি আমার বউকে পর্যাপ্ত সম্মান, অশেষ যত্ন, অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে সর্বদা ভরিয়ে রাখবো। হায়াতি, তোমার পায়ের নিচে পৃথিবীর সর্বসুখ এনে হাজির করবে তোমার এমপি সাহেব শুধু তুমিটা তার সাথে থেকে যেও সারাটি জীবন ধরে।”
পিহুর দু’চোখ বেয়ে টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু সারফারাজের বুকের উপর পরলো। সারফারাজ সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে পিহুর দু’গাল স্পর্শ করে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো…..
—”এই প্রিটি! কাঁদছো কেনো তুমি? কি হলো তোমার?”
পিহু ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে কান্না নিয়ন্ত্রণ করে বললো…..
—”এই মেয়েটার অগোছালো, অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে আসলেন-ই যখন তখন আরো আগে কেনো এলেন না এমপি সাহেব! আপনার এতো ভালোবাসা, এতো সম্মান, যত্ন আমি-আমি-আ…..!”
পিহুর হিঁচকি উঠে গিয়েছে। যার দরুন কথা শেষ করতে পারছে না সে। সারফারাজ অতিযত্নে পিহুর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো…..
—”সবকিছুরই একটা উপযুক্ত সময় থাকে। তোমার আমার সাক্ষাৎ ও এরপর তুমি-আমি থেকে আমরা হওয়ার এই সময়টাও পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। সঠিক সময়েই আমরা একে-অপরের দেখা পেয়েছি এবং সারাটাজীবনের জন্য একে-অপরের সঙ্গে পবিত্র সম্পর্কের বাঁধনে আবব্ধ হয়েছি।”
পিহুর কান্না থেমে গিয়েছে। পিহু সারফারাজের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সারফারাজ আবারও বললো…..
—”তোমার এই হরিণের ন্যায় কাজল কালো নয়নজোড়া এভাবে অশ্রু দ্বারা বারবার কেনো ভিজাও হায়াতি! তোমার এমপি সাহেবের বুকের ভিতরটা এতে কতোটা পুঁ*ড়ে তা কেনো বুঝো না তুমি! কেনো নিষেধ মানো না! আমায় কষ্ট দিতে ভালো লাগে তোমার?”
পিহু বললো….
—”ক্ষমা করে দিন। আর হবে না!”
সারফারাজ ওর দু’হাত নিজের মাথার নিচে ভাঁজ করে রেখে বললো…..
—”এভাবে যদি আর কিছুসময় তাকিয়ে থাকো সত্যি বলছি তারপর যা হবে তার জন্য আমায় দো*ষ দিতে পারবে না তুমি প্রিটি। তোমার এই দৃষ্টি আমার কন্ট্রোল লেভেলের চরম পরীক্ষা নিচ্ছে। আমি এবার হেরে যাবো কসম!”
সারফারাজের কথার ভাঁজ বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো পিহুর। পিহু সঙ্গে সঙ্গে শক্ত করে ঠোঁট চেপে দৃষ্টি সরিয়ে সারফারাজের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ওর বুকের উপরেই হালকা ভাবে একটা কি*ল বসিয়ে দিয়ে বললো…..
—”অ*সভ্য লোক কোথাকার।”
সারফারাজ ‘আউচ’ বলে হাসতে হাসতে নিজের মাথার নিচ থেকে হাত দু’টো সরিয়ে সেই দু’হাতেই পিহুকে কমোল বাঁধনে জড়িয়ে নিলো। পিহুর ঠোঁটেও ফুটে আছে লজ্জামাথা হাসির রেখা।
পরেরদিন সকালে…..
নির্ঝর নিজ রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখলো গতকাল রাতের সেই মেয়েটি সোফায় বসে আছে। মেয়েটির হাতে একটা ম্যগাজিন ধরা। নির্ঝর এগিয়ে এসে বললো….
—”ভেবেছিলাম আপনার আগেই আমার ঘুম ভেঙে যাবে আর আমাকে অপেক্ষা করতে হবে আপনার ঘুম ভাঙার জন্য। কারণ গতরাতে আমার ঘরের দরজায় বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে চাবিটা নিজের সাথে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন কিনা!”
মেয়েটি ম্যগাজিনের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই বললো….
—”আপনার রুমে তালা লাগিয়ে নিজের রুমে আসার পর কোনো ভাবে শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিলো আপনার সাথে ওভার কিছু করে ফেলছি। তাই একটু পরেই এসে তালা খুলে দিয়েছিলাম। আপনি ঘুমিয়েছিলেন হয়তো তাই বুঝতে পারেন নি।”
নির্ঝর চোখের আকৃতি কিন্ঞ্চিত ছোট করে বললো..
—”আপনি কি সুস্থ আছেন? উল্টো-পাল্টা কিছু খেয়ে ফেলেন নি তো?”
মেয়েটা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”মানে? বুঝলাম না।”
—”ওভার সন্দেহ করা যে আপনার অভ্যাস এমনটা মনে হয়েছিলো গতকাল রাতে প্রতি পদে পদে আমার দিকে ওভাবে স*ন্দে*হে*র তী*র ছুঁ*ড়ে মা*রা*র জন্য। কিন্তু সকাল হতে না হতেই আপনার এমন রূপ দেখতে পারবো ভাবি নি। তাই আর কি জানতে চাইলাম ঠিক আছেন কিনা! উল্টো-পাল্টা কিছু পেটে পড়লো কিনা ভু*ল বশত!”
মেয়েটা হালকা হেসে বললো….
—”গত রাতে যেই আমিটাকে দেখেছিলেন সেই আমি টাই আজকেও আপনার সামনে বসে আছি। তবে গতকাল রাতে আপনার সাথে কথার ধরন ও আচারণ যেমন ছিলো তা কেবল আপনাকে বা*জি*য়ে দেখার জন্য করেছিলাম। একজন পুরুষ মানুষ হয়েও আপনাকে এতোটা ধৈর্যশীল হয়ে টিকে থাকতে দেখে ওমন আচারণ করতে আমার বেশ ভালোই লাগছিলো।”
নির্ঝর নিজের চেহারায় অবাক ভাব ফুটিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….
—”শা*লা আমি হলাম জন্মগত ম*দ*ন। একটা মেয়ে আমার ইজ্জত নিয়ে কয়েক ফ্লেভারের ফালুদা বানানোর পাশাপাশি মদন প্রো ম্যক্সও বানিয়ে দিলো আর আমি কতো সুন্দর ভাবে তা হয়েও গেলাম। নির্ঝররে তোর নামটার সাথে তোর জীবনটা বড্ড বেমানান লাগছে। তোর এই নাম পরিবর্তন করে অতি শীঘ্রই নতুন ভাবে আকিকা করে রাখা উচিত অতিঝর খান।”
মেয়েটা বললো….
—”একা একা কি বিরবির করছেন?”
নির্ঝরের ধ্যন ভাঙলো। নির্ঝর বললো….
—”সবকিছুর ভীরে আপনার নামটাই জানা হলো না। কি নাম আপনার?”
—”আমার নাম ইলমা ইসলাম। ইসলাম পদবীটা বোনের থেকে জানা।”
—”এর আগে কোথায় থাকতেন? আর গতরাতে কোথায় থেকে ওমন ছুটে এসেছিলেন পালানোর মতো করে জানতে পারি কি?”
ইলমা শান্ত দৃষ্টি নিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”জানাটা কি খুব প্রয়োজন!”
—”যদি প্রবলেম না থাকে তাহলে জানান।”
এরপর ইলমা দৃষ্টি নামিয়ে শব্দ করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…..
—”আমার বাবা-মা দু’জনেই মা*রা গিয়েছেন আমার বয়স ৬ বছর। দুনিয়ায় আপন বলতে সেইসময় ছিলো একমাত্র আমার বড় ইশরা। ওর বয়স তখন ছিলো মাত্র ১০ বছর। আমাদের চাচারা আমাদের ঠ*কি*য়ে সব সম্পত্তি জা*লি*য়া*তি ভাবে হা*তি*য়ে নিয়ে ওমন অ*স*হা*য় মূহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এরপর আমাদের এক স্বহৃদয়বান ব্যক্তির সাহায্যে ঠাঁই হয় একটা অনাথ আশ্রমে।
সেখানেই আমাদের বেড়ে উঠা। ইশরা আপার বয়স যখন ১৮ হয় তখন আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী আপাকে বিয়ে দিয়ে দেন আশ্রমের প্রধান কর্তা। কিন্তু আপার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোক অনেক জা*লি*ম ছিলেন। তারা উঠতে-বসতে আপাকে অনাথ হওয়ার খোঁ*টা দিতেন, কোনো প্রকার যৌ*তু*ক দিতে পারে নি জন্য মা*র-ধ*র ও করতো।
এ বিষয়ে আপা আশ্রমের প্রধান কর্তাকে জানিয়েও ছিলো। কিন্তু তারা আমার কাছে বিষয়টা চেপে গিয়েছিলেন। আর তারা আপার শ্বশুরবাড়ির লোকদের স্ট্রিক্টলি বলেছিলেন, ‘এসব যৌ*তু*ক দেওয়ার দায়িত্ব তাদের না। তারা নিজেদের জন্ম দেওয়া মেয়েকে বিয়ে দেন নি যে এতো দায় তাদের মেটাতে হবে। এসব মেয়েরা কেবল এখানের আশ্রিতা। সময় ও বয়স হয়ে গেলে বিয়ে দিয়ে তারা তাদের সব দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেন।’
আমি আপার সাথে দেখা করতে চাইলে আমাকেও ঘরবন্দী করে রাখা হতো। বিষয়টা আর স্বাভাবিক থাকে না। কিছুদিন পরেই আশ্রমে আপার লা*শ আসে। ওরা-ওরা আমার বোনটাকে মে*রে ফেলেছিলো। আর সম্পূর্ণ দায় কতো নিখুঁত ভাবে আমার আপার উপরেই বর্তে দিয়েছিলো। বলেছিলো আমার আপা নাকি নিজ ইচ্ছেতে গলায় দ*ড়ি দিয়ে মা*রা গিয়েছে। গলায় দ*ড়ি দেওয়ার কারণ ছিলো সে নাকি পরকীয়া করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা খেয়েছিলো এ বিষয়ে সবাইকে জানানোর কথা বললে সে লজ্জা নিতে না পেরে আ*ত্ম*হ*ত্যা করেছে।
কিন্তু আমার শত ভাব বিশ্বাস ছিলো আপার প্রতি আপা কখনই এতো ঘৃ*ন্য কাজ করতে পারেন না। জীবনে উত্থান-প*ত*ন সময় কম আসে নি আমাদের। আপার যদি সত্যিই কারোর সাথে নোং*রা*মি করার হতো তাহলে সে অনেক আগেই করতো বা যদি আ*ত্ম*হ*ত্যাও করার হতো সেটাও করতে পারতো। কিন্তু সে করে নি।
আপার আকস্মিক মৃ*ত্যু*র পর আমি পুরোপুরি অসহায় হয়ে পরি। একটা মানুষও আমার সাথে ছিলো না আপার হয়ে লড়াই করার জন্য। আর না আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো যা দ্বারা আমি আপা যে আ*ত্ম*হ*ত্যা করে নি বরং তাকে খু*ন করা হয়েছে তা প্রমাণ করতে পারবো। এরপর আমি মানসিক ভাবে অনেক ভে*ঙে পরি। আশ্রম থেকে তখন আমায় বিয়ে দেওয়ার জন্য আশ্রমের প্রধান কর্তা উঠে পরে লাগেন। তাই আমি সেখান থেকে গতরাতে পালিয়ে এসেছি।”
এই বলে ইলমা থামলো। ওর দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রুরা ঝরে পড়ছে। নির্ঝর পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে যেনো।
সকালবেলা…..
পিহু ধীরে ধীরে চোখ মেলে আবারও বুঁজে নিলো। পিহু অনুভব করলো সে সারফারাজের বুকের ভেতরে ওরই শক্ত বাহুবন্ধনে ব*ন্দিনী হয়ে আছে। মুহূর্তেই গত রাতের কথা মনে পড়লো পিহুর। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে নিরব হাসি খেলে গেলো ওর। সারফারাজ তখনও ঘুমে ডুবে আছে।
পিহু কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে আস্তে করে মাথা তুললো। তারপর কৌতূহল ভরা চোখে সারফারাজের দিকে তাকিয়ে রইলো। পিহুর বুকের ভেতর অদ্ভুত এক উচ্ছ্বাস ভর করলো। পিহু ওর ডান হাতের এক আঙুল এগিয়ে নিয়ে এলো সারফারাজের মুখের ওপর।আলতো ভাবে প্রথমে ছুঁয়ে দিলো সারফারাজের জোড়া ভ্রু, তারপর ওর বন্ধ দু’চোখের পাতা, ওর সরু নাকটা, খোঁচা-খোঁচা দাড়িগুলো ছুঁয়ে দেওয়ার পর পিহুর আঙুলটা থেমে গেলো সারফারাজের ঠোঁটের একদম কাছাকাছিতে।
পিহুর ঠোঁটজোড়া হালকা কেঁপে উঠলো। সে মৃদু কণ্ঠে বললো…..
—“আপনার গায়ের রং আমার থেকে কতো উজ্জ্বল!এই জোড়া ভ্রু বিশিষ্ট চোখজোড়া বুঁজে রাখা অবস্থাতেও কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে! সরু নাকটা, খোঁচা-খোঁচা দাড়িগুলো সবটাই একেবারে নিখুঁত। ইচ্ছে করছে আরো গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে। আর এই ঠোঁটদুটো! কি অসম্ভব গোলাপি রঙা মতো! কতোটা পুরোট! ইচ্ছে করছে…।”
পিহুর কথা শেষ হওয়ার আগেই সারফারাজ চোখ মেলে তাকালো। হঠাৎ ধরা পড়ে গিয়ে পিহুর একদম দম ব*ন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো যেনো। পিহু এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে, ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে।
সারফারাজ ভ্রু উঁচিয়ে ফিসফিস করে বললো….
—“কি ইচ্ছে করছে, হায়াতি?”
মুহূর্তেই পিহুর সর্বশরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। এতোক্ষণ ধরে যেই কথাগুলো অতি সাহস নিয়ে বলছিলো পিহু এখন সব সাহস ফুঁস হয়ে গিয়েছে মূহূর্তেই। পিহু কিছু না বলে সারফারাজের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। ফলস্বরূপ সারফারাজ ওকে আরো গভীরভাবে আঁকড়ে নিতে এক ঝটকায় উল্টে দিলো। এবার সারফারাজ পিহুর উপরে আর পিহু বিছানায় সাথে শরীর ঠেসে একেবারে বন্দিনী হয়ে গেলো। পিহু লজ্জায় দু’চোখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেললো। কাঁপা কণ্ঠে বললো….
—“ছা-ছাড়ুন, এমপি সাহেব। প্লিজ! না হলে এবার লজ্জায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো সত্যিই।”
সারফারাজ গভীর দৃষ্টিতে পিহুর দিকে তাকিয়ে ধীরস্বরে বললো….
—“আগে বলো, তখন তোমার কি ইচ্ছে হচ্ছিলো?”
—“কি-কিছু না, কোনো ইচ্ছে কা.…!”
পিহুর ঠোঁটের ওপর সারফারাজ ওর ডান হাতের শাহাদত আঙুলটা ঠেকিয়ে চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বললো…..
—“শুউউউ…একদম মিথ্যে বলবে না। কারণ আমি জানি তখন তোমার কি ইচ্ছে করছিলো।”
পিহু এবার অস্থির হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু সারফারাজ একহাত দিয়ে ওর দু’গালের নিম্নাংশ আলতো করে চেপে ধরে মুখটা ফের টেনে আনলো নিজের মুখের বরাবর। পিহু লজ্জায় দু’হাতে বিছানার দু’পাশের চাদর খাঁমচে ধরলো। সারফারাজ ধীরে ধীরে পিহুর ঠোঁটের দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে বললো…..
—“এবার আর কোনো নিস্তার নেই, হায়াতি। এই ঠোঁটের স্বাদ নেওয়া আমার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ। সরি।”
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৮
পিহুর বুকের ভেতর হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গিয়েছে। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। সারফারাজের ঠোঁট যখন পিহুর ঠোঁটজোড়া থেকে কয়েক ইন্ঞ্চি দূরে তখনই ওদের রুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে এলো।
সারফারাজ বিরক্তিতে মুখ কুঁ*চ*কে নিয়ে বললো…
—“আহ্! কি শালার জীবন আমার! একটুখানি মুড নিয়ে একটা চুমু খেতে চাইছিলাম আর সেই সময়েই দরজায় এসে বিনা মেঘের ব*জ্র*পাত এর মতো।কড়া নাড়তে হলো!”