সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড গল্পের লিংক || Jannatul Firdaus Mithila

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১
Jannatul Firdaus Mithila

কথায় আছে, “Time & tidy waits for none”
দিন চলে যায় তার আপন গতিতে, অসংখ্য রাতও কেটে যায় কিছু মানুষের আক্ষেপে, অপেক্ষায়!
অরিনের এ বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আজকে ১৭ দিন। সেই যে মেয়েটা গেলো, আর ফিরলো না এ অব্ধি! অরিন যেদিন চলে গিয়েছিল, সেদিনই রুহির বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়। এইতো আর সপ্তাহখানেক পরের শুক্রবারটাই উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের জন্য ধার্য করা হয়েছে।

সেদিন অরিনের হুট করে চলে যাওয়ায় বাড়ির সকলেই অবাক হন। একে একে নানান প্রশ্নে জর্জরিত করেন রাফিয়া বেগমকে। কিন্তু রাফিয়া বেগম সকলকে এক কথা বলেই কাটিয়েছেন বিষয়টা আর তা হচ্ছে, ” অরিনটার তার নানুকে খুব মিস করছিলো তা-ই আরকি পাঠিয়ে দিলাম।কয়েকদিন ঘুরে আসলে ভালো লাগবে হয়তো। ”
রাফিয়া বেগমের যুক্তিতে আর প্রশ্ন করেননি কেও।ফলস্বরূপ, আজ এতদিন মেয়েটা বাড়ি থেকে দূরে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুধু যে বাড়ির অন্য সদস্যরা অরিনের চলে যাওয়ায় মন খারাপ করেছে এমন না। সাব্বির সাহেবতো রীতিমতো এ বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার মনোমালিন্যও করেছেন। এমনকি কথা বলাও বন্ধ রেখেছেন দু-একদিনের জন্য। মানুষটার আবার মেয়ের জন্য বড় টান! কিন্তু তবুও প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে বেশিদিন মনোমালিন্য করে থাকতে পারেননি। ঠিকই আগ বাড়িয়ে কথা বলে জানতে চেয়েছেন মেয়ের হঠাৎ চলে যাওয়ার কারন। কিন্তু রাফিয়া বেগম বরাবরই এ ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছেন সদর্পনে। কেননা মেয়েদের কিছু কিছু কথা মা অবধি সীমা থাকাটাই শ্রেয়। তাছাড়া তিনিও যে মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তিত নন এমন না। আসলে মেয়েটার বয়সটাই যে আবেগের। তিনি চেয়েছিলেন, মেয়েটা যেন আবেগে ভেসে কোন ভুল না করে বসে তাইতো এখান থেকে দূরে পাঠিয়ে দিলেন। থাকুক না কয়েকদিন একা! নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুক নিজের আবেগকে।

আরো একটা মানুষ আছে যিনি কিনা অরিনের চলে যাওয়ায় একেবারেই মূর্ছা গিয়েছে প্রায়। মানুষটা আর কেও না,অনিক। বোনের হুট করে চলে যাওয়ায় তার সন্দেহের কাটাটা একেবারেই গিয়ে পড়েছিল রৌদ্রের ওপর। মায়ের কথায় সেদিন অনিক নিজেই অরিনকে রেখে এসেছিলো নানাবাড়িতে। সেদিনের মুহুর্তটা এখনো চোখে ভাসে অনিকের।
১৭ দিন আগের কথা :-

— অনিক যখন অরিনকে নিয়ে রওনা হয়েছিল সেদিন সারাটা রাস্তা অরিন ছিলো একেবারেই নির্বাক। অনিক খেয়াল করেছিল অরিনের শুকনো প্রায় ফ্যাকাশে মুখখানা। মেয়েটার মুখের হাসি তখন ঠিক কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিল জানা নেই অনিকের। পুরোটা রাস্তায় অনিক এটা-সেটা নিয়ে অনেক কথা বলেছিল কিন্তু অরিন সবগুলো কথার প্রতিত্তোরে শুধু হ্যা,হু বলেই উত্তর দিয়েছে। অনিকও আর বোনকে আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তার মনে তখন চলছিল একজনকে সামনে থেকে কয়েকটা প্রশ্ন করবার ব্যাপক ইচ্ছা।

অরিনকে নানাবাড়িতে রেখে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির দিকে ফেরে অনিক।কেননা সেদিন বিকেলেই তো রুহির বিয়ের ডেট ফিক্সড করার কথা ছিলো। অনিক যখন বাড়িতে ফিরে ততক্ষণে সে দেখতে পায় বাড়ি ভর্তি মেহমানকে। অনিক প্রথমে এদিক ওদিক রৌদ্রকে খোজে। অবশেষে পেয়েও যায় একটা সময়।তবুও ব্যস্ততায় কাঙ্খিত মানুষকে কিছু না বলে মুখাবয়ব গম্ভীর রেখে মেহমানের সঙ্গে বিয়ের আলোচনায় সামিল হয়।
রাত যখন পৌনে ১টা🌸

গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে চারপাশটা নিবদ্ধ। দূর আকাশে আজকে কেমন চাঁদের উপস্থিতি নেই। ফলে অন্ধকারে বুদ হয়ে আছে আকাশপৃষ্ঠ। এরই মাঝে পশ্চিম দিক থেকে আগত মৃদুমন্দ বাতাস গায়ে লাগায় অতোটা খারাপ লাগছে না রৌদ্রের।পড়নের অফ হোয়াইট শর্ট হাতার টি-শার্টটাও আর ঘামে ভিজছে না আপাতত। সে কেমন নিরেট দৃষ্টিতে দূর অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ক্ষনে ক্ষনে তার ভেতর থেকে আসছে একফালি দীর্ঘশ্বাস।
ঠিক তখনি পেছন থেকে কারো পায়ের শব্দে সতর্ক হয় রৌদ্র। পেছনে না তাকিয়ে সে বেশ বুঝতে পারে মানুষটা কে।কয়েকপল নিরবতা চললো দুজনের মাঝে।মুহূর্ত বাদে রৌদ্র নিজে থেকে নিরবতা ভেঙে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে থাকে,

~ দিয়ে এসেছিস তোর বোনকে?
ওপাশের মানুষটা নিশ্চুপ। কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে পেছনে ফিরে রৌদ্র। তখনি দেখতে পায়, অনিকের গম্ভীর হয়ে থাকা মুখখানা। রৌদ্র হয়তো কিছু আচ করলো। ছাদের রেলিঙে শরীর হেলিয়ে দুহাত বুকে গুঁজে সামনে তাকিয়ে রইলো শান্ত দৃষ্টিতে। কিয়তক্ষন বাদে আবারও বললো,
~ কিরে কথা বলবি না?
মুহুর্তেই মাথা উঁচু করে অনিক। বরাবরের শান্ত চোখজোড়া আজ বড্ড অশান্ত ঠেকছে রৌদ্রের কাছে। অনিক ধীর কদমে এগিয়ে এসে একদম রৌদ্রের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ে।অতঃপর গম্ভীর হয়ে বলল,
~ কি বলেছো আমার বনুকে?

রৌদ্র নির্বাক। দৃষ্টি তার আপাতত ফ্লোরের দিকে নিবদ্ধ। অনিক আবারও প্রশ্ন করে,
~ কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়।উওর দিলে না যে।
রৌদ্র বুক হতে হাতজোড়া খুলে নিয়ে ট্রাউজারের পকেটে গুজে। সময় নিয়ে বললো,
~ অনিক তুই জানিস? আমরা এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই ঠিক সেই মানুষগুলো থেকে যাদেরকে আমরা নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। তোর বোনের সাথেও ধরে নে এমনটাই হয়েছে।
থামলো রৌদ্র। শেষের কথাটা কেমন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ছেলেটা।অনিক নির্বাক হয়ে শুনছে সবটা। তার-ও যে মনে অনেক প্রশ্ন। প্রশ্ন গুলোর উওর জানা এ মুহুর্তে তার অত্যন্ত জরুরি।
রৌদ্র আবারও বলতে লাগলো,

~ জানিস? তোর বোনটা না বড্ড বোকা। দেখ না, কত সহজে নিজের মনের কথাগুলো আমার সামনে উম্মুক্ত বইয়ের পাতার মতো মেলে ধরলো পাগলি টা অথচ আমি কি করলাম?
এ পর্যায়ে গলা ধরে আসে রৌদ্রের। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে অনবরত। অনিক পাশ থেকে তার কাঁধে হাত রাখে। ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?
রৌদ্র এ কথার জবাব না দিয়ে আবারও নিজের মতো বললো,

~ অনিক রে! অরিটা বোধহয় আর আমায় ক্ষমা করবে নারে। পাগলিটাকে যে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তার ব্যাক্ত করা প্রেমের সম্মোহনে নাকচ করেছি। অস্বীকার করেছি নিজের অনুভুতিকে। কাঁদিয়েছি আমার পাগলিটাকে।জানিস, ও না আমার সামনে বসে চোখের পানি ফেলছিলো অথচ আমি চেয়েও তাকে আগলে ধরতে পারিনি। পারিনি তার মাথাটাকে বুকে জড়িয়ে তার চোখের পানি মুছতে। কি করে মুছতাম বলতো? যেখানে সেই কাজলরাঙা চোখগুলো থেকে পানি ঝড়াবার জন্য একমাত্র আমিই দায়ী!
রৌদ্র গলাটা হঠাৎ ব্যাথা হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কেও খুব শক্ত করে গলাটা চেপে ধরেছে।হয়তো কান্না আটকানোর প্রবল চেষ্টায় এমনটা হচ্ছে ছেলেটার! পাশ থেকে অনিক বাকহারা। চোখ থেকে কখন যে টুপ করে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো সে দিকে একেবারেই বেখবর ছেলেটা। সে যে ব্যস্ত এখন তার সামনে দাড়িয়ে থাকা প্রেমিক পুরুষটার ব্যর্থতার কথাগুলো শুনতে।
রৌদ্র কাঁপা কাঁপা গলায় আবারও বলতে লাগলো,

~ অনিক আজ থেকে আমিও যে খুনি হলাম রে।
চমকায় অনিক। হতবাক হয়ে যায় রৌদ্রের কথায়। অবাক গলায় জিজ্ঞেস করে,
~মানে?
রৌদ্র কেমন করে যেন হাসলো। ছেলেটার চোখগুলো কেমন চিকচিক করছে। হয়তো অনুমতির অভাবে অশ্রুকনাগুলো বেরিয়ে আসছে না। সে মুখে অপার্থিব হাসি রেখেই বললো,
~ যারা মানুষ খুন করে তারা খুনি। হয়তো কেও কেও মানুষের দেহটাকে খুন করে একেবারেই নিঃশেষ করে দেয় তাকে।এতে করে মানুষটার মৃত্যু হয়। কিন্তু যারা মনের খুন করে তারা কি খুনি হলো না? হ্যা হয়! দেখ না, মনটাকে খুন করলে একটা মানুষ হয়তো একেবারেই মরে না কিন্তু বেঁচে থাকা অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরে। হারিয়ে ফেলে নিজের সকল বেঁচে থাকার ইচ্ছা। কোনরকম জড়বস্তুর ন্যায় বেঁচে থাকে বাকি জিবনটা। তাহলে সেদিক থেকে বলতে গেলে আমিও খুনি বৈকি! আমিও যে তোর বোনের মনের অনুভুতিকে খুন করলাম। পাপিষ্ঠ হলাম বাকিটা জীবনের জন্য!
অনিক নিজের ধৈর্য্য হারায়। রৌদ্রের সামনে এসে বলতে থাকে,

~ তাহলে কেন কষ্ট করছো এতো? কেন নিজের অনুভুতিকে আটকে রাখছো? কেন নিজের সাথে আমার বনুটাকেও কষ্ট দিচ্ছো? কেন রোদ ভাই? কেন?
রৌদ্রের নিঃশ্বাস ভারি হলো। থমথমে পরিবেশে যা বড় অপার্থিব শোনাচ্ছে! রৌদ্র সময় নিয়ে বললো,
~ আমি এই পরিবারকে ভাঙতে পারবো না অনিক। নিজের ভালোবাসার জন্য এতোটাও স্বার্থপর হতে পারবো না আমি।
~ তাই বলে এভাবে কষ্ট পাবে? হারাতে দিবে আমার বনুটাকে?
রৌদ্র প্রতিত্তোরে কিছু না বলে সেখান থেকে হেটে চলে যেতে নেয় ঠিক তখনি অনিকের বলা একটা কথায় থমকে যায় তার পাদু’টো। নিশ্বাস যেন ক্রমাগত আটকে আসছে তার!

~ রোদ ভাই! আল্লাহ না করুক যদি কখনো এমনটা হয় যে বনু আর পরিবারের মাঝে যেকোনো একজনকে চুজ করতে হবে তখন তুমি কাকে চুজ করবে? আমার বোনটাকে কি তখন একা করে দেবে?
রৌদ্র সময় নিলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে ঘাড় বাকিয়ে জবাব দিলো,
~ আমার শেষ নিশ্বাস থাকা অবধি অরিনকে আমার কাছ থেকে কেও আলাদা করতে পারবে না। কেও না!
বলেই সামনের দিকে এক কদম বাড়াতেই আবারও ভেসে আসে অনিকের গম্ভীর গলা।
~ তবে মনে রেখো রোদ ভাই, তোমার এ কথায় যদি বিন্দুমাত্র হেরফের হয় তাহলে আমি অনিক ভুলে যাবো পৃথিবীর সকল সম্পর্কের সীমা। ভুলে যাবো এহসান বাড়ির তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা।
বলেই সে রৌদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু আবারও কি মনে করে পেছনে না তাকিয়েই গম্ভীর গলায় শুধালো,

~ভাইয়া! এটা কিন্তু ইশতিয়াক এহসান অনিকের দেওয়া আলটিমেটাম না বরং এক ভাইয়ের তার বোনের জন্য দেওয়া ওয়ার্নিং!
কথাগুলো বলে আর একমুহূর্ত দাঁড়ালো না অনিক। গটগট পায়ে চলে গেলো ছাঁদ থেকে।
অন্যদিকে পেছনে হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে রইলো রৌদ্র। হয়তো ভাবছে, পৃথিবীর অসংখ্য দূর্বল মনের ছেলে থাকলেও, ভাই হিসেবে প্রতিটা ছেলেই শক্তিশালি!

বর্তমান ;
সেদিনের পর থেকে অনিক প্রতি সপ্তাহে দুদিন করে ছুটি নিয়ে বোনের কাছে চলে যায়। আজকেও যাবে কিন্তু সে একা নয় বরং তার সাথে বাবা,চাচারা সহ যাবে। কেননা আজকে অরিনের ভর্তি পরিক্ষার রেজাল্ট দিবে।সেই সকাল থেকে এজন্যই এহসান বাড়ির পরিবেশ বড় রমরমা। তাছাড়া আজকে তারা অরিনকে সাথে করে নিয়েও আসবে। আগামীকালকেই সবাই চলে যাবে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে। রুহির বিয়েটা যে সেখান থেকেই দিতে চান কবির সাহেব।

অনিক সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে।পড়নের ধূসর প্যান্টের ওপর কালো শার্টটার বুকের কাছের দুটো বোতাম খোলা। চুলগুলো বেশ পরিপাটি। ফর্সা মুখশ্রী রোদের তোপে লাল হয়ে আছে। থুতনির মাঝের ভাজটা যেন আগের চেয়ে আরেকটু প্রকোপ হয়েছে। অনিক একটু পরপর হাতঘড়ি দেখছে। কিন্তু নাহ! সময় যেন আর এগোচ্ছেই না। অনিকের এসব ভাবনার মাঝেই সেখানে শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে উপস্থিত হয় রৌদ্র। কালো প্যান্টের ওপর মেজেন্টা রঙের শার্টে শ্যামপুরুষকে বরাবরই আকর্ষণীয় ঠেকছে। চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো তবুও তার লুকের সাথে যেন বড্ড মানাসই। আজকে আর বিড়াল চোখগুলো চশমার আড়ালে ঢেকে নেই। হাতের সিলভার কালারের ওয়াচটার গায়ে রোদের আলো পড়ায় কেমন চিকচিক করছে। অনিক হা করে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র অনিকের এমন হাবভাবে ভ্রুকুচকায়। অনিককে পাশ কাটিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে বললো,

~ মুখ বন্ধ কর, মাছি ঢুকবে!
তৎক্ষনাৎ মুখ বন্ধ করে নেয় অনিক। আমতা আমতা করতে থাকে এদিক ওদিক তাকিয়ে। পরক্ষণেই কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলে,
~ আচ্ছা তুমি গাড়িতে বসলে কেন? তুমিও কি যাচ্ছো নাকি আমাদের সঙ্গে?
অনিকের কথায় ভ্রুক্ষেপহীন জবাব দেয় রৌদ্র।
~ এনি ডাউট?
~ না মানে, আগে তো বললে না।
~ সো হোয়াট! এখন তো বলছি।
অনিক আর কথা বাড়ালো না। তাছাড়া বাড়িয়েই বা কি লাভ? রোদ ভাই কি আর সোজা কথার উত্তর দিবে?
অনিক গিয়ে রৌদ্রের পাশের সিটে বসে পড়ে। তাকে বসতে দেখে রৌদ্র গাড়ি স্টার্ট দেয়।তারপর গাড়ি ছুটে চলে তার গন্তব্যে।

প্রায় দু’ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে নরসিংদী জেলার ভৈরবপুর গ্রামে(ছদ্মনাম)। তাদের পৌঁছানোর আগেই কবির সাহেবরা চলে এসেছেন। এতে অবশ্য দোষটা রৌদ্রেরই।কেননা সে আসার সময় মাঝরাস্তায় কোন একটা কারনে গাড়ি থামিয়েছিল যার দরুন তারা আধঘন্টা লেট করে পৌছায়। অনিক গাড়ি থেকে নামতেই কোথা থেকে যেন অরিন ছুটে এসে আছড়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে। হঠাৎ এমন হওয়ায় ভড়কে যায় অনিক। তবুও দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে বোনকে। অরিনকে বুকে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে অনিক বললো,

~ বনু! আর ইউ ওকে?
অনিক মাথা ঝাকায়। ভাইয়ের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে দৃষ্টি ফেলে ভাইয়ের দিকে। ছলছল চোখজোড়া দেখে বিচলিত হয় অনিক। বিচলিত হয়ে বোনের গালে একহাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
~ কি হয়েছে বনু? তোর চোখে পানি কেন? কে কি বলছে আমায় শুধু একবার বল!
অরিন ভাইয়ের কথায় মুচকি হাসলো।ফলে দৃশ্য হলো তার গালের সেই চিরচেনা গর্তগুলো। বোনের মুখে হাসি দেখে অনিক বেচারা হাফ ছেড়ে বাঁচে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিন ফটফট করে বললো,
~ ভাইয়া, রেজাল্ট বের হয়েছে। আ-মি চা-ন্স পেয়েছি।
~ ওহ! এই কথা। সামান্য এটুকুর জন্য….
বলেই থমকে যায় অনিক।যখনি বোধগম্য হয় পুরো বিষয়টা তখনি বোনের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
~স-স-ত্যি?
অরিন পরপর মাথা ঝাকায়। অনিকের তখন কি হলো! সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বোনকে কোলে তুলে নেয়। বোনকে উঁচুতে তুলে আত্মহারা হয়ে বলতে থাকে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ১ম খন্ড

~ আমি জানতাম আমার বনু নিশ্চয়ই পারবে।আমার বনু বেস্ট! বেস্ট এভার।
অরিনও হাসতে থাকে ভাইয়ের কথায়। অন্যদিকে গাড়ির ভেতরে একজোড়া চোখ পলকহীন তাকিয়ে আছে সেই টোলপড়া মনকাড়া হাসির দিকে। সেই হাসির প্রতিটি ধ্বনি যেন তার কানে এক অন্যরকম ভালোলাগার সৃষ্টি করছে। কখন যে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের ঠোঁটেও এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে খেয়াল করেনি রৌদ্র। তাছাড়া খেয়াল করারই বা সময় কই? সে থোড়াই না নজর ফেরাবে নিজের প্রাণভোমরার থেকে!

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here