বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৮

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৮
ইশরাত জাহান

ফজরের নামাজ শেষ করেই শোভা চা বানালো।
দুজনে চা নিয়ে বসেছে।দর্শন চায়ে চুমুক দিয়ে বলে,“সবকিছু কমপ্লিট?”
“হ্যাঁ,একটু রিভিশন দিবো আবার।তারপর রান্না করে খেয়ে রেডি হয়ে দৌঁড়।”
দর্শন মাথা নাড়ালো।শোভা চা শেষ করে বই নিয়ে বসে।দর্শন বলে,“আমি কিছু প্রশ্ন তুলে দেই?”
“কেন?”
“প্রশ্ন দেখে লেখো।তাহলে বুঝতে পারবে তোমার প্রস্তুতি কেমন।”
“আচ্ছা দিন।”
দর্শন বিছানার উপর শোভার সামনে বসে কিছু প্রশ্ন তুলে দেয়।সেগুলো দিয়ে বলে,“এগুলো লেখো।”
বলেই উঠে দাঁড়ায়।শোভা মাথা উঁচিয়ে দেখে বলে,“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“কিচেনে।”
“রান্না করবেন এখন?”
“হুম।”
“আপনাকে রান্না করতে হবে না।”
“তুমি পড় আমি দেখছি।”
শোভা কিছু বলতে নিলে দর্শন দিলো চোখ গরম।শোভা শুকনো ঢোক গিলে প্রশ্ন দেখে উত্তর লিখতে বসেছে।দর্শন বইটি নিয়ে চলে গেলো।যেনো চুরি করে না লেখা হয়।শোভা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লিখতে বসে।
ডিম সিদ্ধ,জেলি দিয়ে পাউরুটি,আপেল টুকরো করে কেটে পাশে চারটি খেজুর নিয়ে এলো দর্শন।শোভা এগুলো দেখে বলে,“এত খাবে কে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার সামনে যে বসে আছে সে।”
“আমি কি রাক্ষসী?”
“আপাতত না তবে চেষ্টা করলে হয়ে যাবে।চুপচাপ লেখা শেষ করে নেও।”
শোভা কিছুক্ষণ লিখে বলে,“শেষ লেখা।”
দর্শন খাতা নিয়ে দেখে।হাতের লেখা দেখে মুগ্ধ হয়।শোভার হাতের লেখা অনেক সুন্দর।প্রশংসনীয় এক কথায়।দর্শন প্রায় বিশটি প্রশ্ন তুলেছিল।এরমধ্যে দুইটি ভুল।সেই দুটি প্রশ্নের ব্যাপার খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিলো শোভাকে।শোভা অবাকের সাথে বলে,“আপনি কি একাউন্টিং এর স্টুডেন্ট ছিলেন?”
“হুম।”
“তাহলে তো আপনার থেকে সব শিখে নেওয়া যেতো এই দুটো রাতে।”
“তুমি তো এমনিতেও খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়েছো।”
“কনফিডেন্ট পাচ্ছি না।”
“কেন?”

“অনেক বড় ভার্সিটি।কত কত মানুষের আজ ভর্তি পরীক্ষা।হাজার হাজার স্টুডেন্ট ভালো রেজাল্ট করেছে।আমি তো অতি ক্ষুদ্র।”
“ইউ নো হোয়াট?ক্ষুদ্র থেকেই কিন্তু বৃহৎ আকার ধারণ করা হয়।আমি কিন্তু এক সময় লুজার ছিলাম।আমাকে আমার দাদাজান মেইনটেইন করেছে।একটা আলাদা সাহস জুগিয়েছে যেটা দ্বারা আমি এতদূর এগিয়েছি।আমার বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন।এই পুরো একটা কোম্পানির ব্রান্স খোলার মত সাহস আমার একদিনে আসেনি।পুরো জগৎ ঘুরতে হয়।তার আগে প্রয়োজন হয় সাহসের।আমি সাহস রেখেছিলাম।মনোবল শক্তির জোর বাড়িয়েছিলাম।তার জন্যই আজ আমার অবস্থান এখানে।এখন লোকে আমাকে দেখে স্যার বলে আর একটা সময় আমাকে আমার মা ছেড়ে চলে যায়।”

শোভার চোখ গেলো দর্শনের চোখমুখের দিকে।কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে এমনভাবে বলতে পারে!দর্শন কথা পাল্টে বলে,“তুমি খাও আমি কিছু প্রশ্ন করি।”
“আপনি খাবেন না?”
“হুম,খাবো।”
“কখন খাবেন?”
“এই তো তুমি রেডি হতে বসলেই।”
“না আপনিও খেয়ে নিন।”
দর্শন শোভার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে,“আপনাকে আজ পরীক্ষা দিতে হবে ম্যাডাম।প্রস্তুতি নিন ভালো করে।কাল থেকে একসাথে খাওয়া যাবে।”
শোভা লজ্জা পেলো।মুখ নিচু করে খেজুর খেলো আগে।খেজুরে পুষ্টি বেশি।শরীরে শক্তি পাওয়া যায়।আমাদের অলসতা দুর করতে খেজুর খুব বেশিই কাজে দেয়।খেজুর খেয়ে ডিম খেয়ে পানি পান করে বলে,“এবার এগুলো কে খাবে?”

“আপনি খাবেন।”
শোভা মুখ বেকালো।দর্শন পাত্তা না দিয়ে প্রশ্ন করে একেকটা।শোভা গালে খাবার নিয়ে চিবিয়ে তারপর উত্তর দেয়।দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে মাঝেমাঝে মুচকি হাসি দেয়।মুহূর্তটা ভাবায় না যে তারা কোনো চুক্তিতে আছে।বরং তাদের মাঝে এমন পরিস্থিতি যেন এমন মুহূর্ত বারংবার ফিরে আসুক।একেকটা প্রশ্নের উত্তরে সঠিক হলে দর্শন শোভার প্রশংসা করে।আর ভুল হলে শোভাকে বুঝিয়ে দেয় সহজ করে।যেনো এমন ধরনের ভিন্ন প্রশ্ন আসলে শোভা ঘাবড়ে না যায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যখন দেখলো আর এক ঘন্টা বাকি দর্শন বই বন্ধ করে বলে,“তাহলে রেডি হয়ে নেও।বেশি চিন্তা করতে হবেনা।দুই একটা উত্তর না পারলেও চিন্তার নেই কিন্তু যেটা সহজ আসবে ওটাই আগে লিখে দিবে।নিজের মধ্যে কনফিডেন্ট রাখবে। অন্যদিকে কারো কথায় কান দিবে না।”

শোভা মাথা নাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।বোরকা পরে নিকাপ পড়ে নেয়।তারপর হাত মোজা পা মোজা ও পরীক্ষার জন্য যা যা লাগে সবকিছু ফাইলে করে নিয়ে নিচে নেমে আসে।দর্শন আগেই রেডি হয়ে নিচে এসে খাবার খেতে থাকে। ওর বেশি সময় লাগে না।বিদেশে নিজের মত জীবন কাটাতে কাটাতে দ্রুত কাজ করাটাও শিখেছে।দুজনেই গাড়িতে উঠে বসে।দর্শন কল দেয় দিজাকে।দিজা জানায়,“আমি আর পাঁচ মিনিট পর বের হবো ভাইয়া।আমার এখান থেকে তো হেঁটেই লাগে দশ মিনিট।”
দর্শন কল কেটে দিতেই দিজা ওর খালামনির কাছে এসে বলে,“ভাইয়া কল দিয়েছিল।”
“খেতে বস তাহলে।”
দিজা বসতেই দিজার খালাতো বোন তানিয়া এসে বলে,“তোকে একটা কথা জানানো দরকার।আমি আসলে এতদিন বাড়িতে ছিলাম না তাই তোর সাথে দেখা হলো না।কাল আসলাম তাও রাতে এসেছি।কিন্তু দেরি হলেও পেয়েছি তো কাছে।কথাটা খুব জরুরি।”

দিজা রুটি সবজি মুখে দিয়ে বলে,“হ্যাঁ আপু বলো।”
“আসলে তুই দুই কি আড়াই বছর আগে আমাদের এখানে এসেছিলি ওই সময়ের কথা।”
“ওই সময় কি কিছু হয়েছিল?”
“হ্যাঁ।”
“কি?”
“আমরা পার্কে ঘুরতে যেতাম যখন ওই সময় একজন তোকে আড়ালে ফলো করতো।কয়েকদিন পর তোর সাথে কথা বলতে চাইলে জানতে পারে তুই ঢাকায় নেই।আমি ওনার কাছে তোর সবকিছু একেবারে ডিটেইলস বলিনি।আজকাল তো কাউকে বিশ্বাস করা যায়না।উনি জানালো উনি তোকে ভালোবাসে।তোর বয়স অল্প শুনে সময় নেয়।আমি ওনার খোঁজ নেই মানুষটা ভালো।আমি তোর ব্যাপারে অল্প স্বল্প জানাই যে তোর নাম তোর আইডি লিংক দিয়ে রেখেছি।তুই সিঙ্গেল এটাও জানে।এমনকি এটাও বলেছি তোর স্বপ্ন লেখাপড়া শেষ করা।সে জানিয়েছে সে তোকে লেখাপড়া করার সুযোগ দিবে।”

দিজার খাবার মুখে আটকে যায়।চোখ বড় বড় করে বলে,“এতকিছু কেন করেছো?”
“মানুষটা তোর প্রতি অনেক আগ্রহ দেখিয়েছে তাই।”
“তাই বলে আইডি লিংক!অবশ্য আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আর ফ্যামিলি ছাড়া কেউ নেই সেখানে।কিন্তু তুমি দিবে কেন?”
“আরে তোর বর্তমান আইডি দিয়েছি।প্রেমা জামান দিয়ে যেটা খোলা।আর ওর কাছে তো তোর বাড়ির অ্যাড্রেস দেইনি।শুধু বলেছি তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবি আর এখনো সিঙ্গেল।”
“কিন্তু…
“দেখ প্রেমা মানুষটা তোকে সত্যি ভালোবাসে নাহলে প্রায় আড়াই বছর অপেক্ষা করতো না।”
“এবার আমি কিছু বলি?”
“বল।”
“আমি একজনকে ভালোবাসি।তুমি যার কথা বলছো সে তো দুই বছর ধরে আমি আমার ভালোবাসার ব্যক্তিকে তিন বছর ধরে ভালোবাসি।”

“পনেরো বছর বয়সে ভালোবাসা!”
“কেন আজকাল তো মানুষ সিক্স,সেভেনেও প্রেম করে।আমি তো গোপনে ভালোবেসেছি।”
“রিলেশন করিস তাহলে?”
“না আমি সিঙ্গেল।আমি বললাম তো গোপনে ভালোবাসি কিন্তু তার সাথে আজ দেখা হবে।”
তানিয়ার মনক্ষুন্ন হলো।দিজার জন্য কেউ অপেক্ষায় আছে।তাকে কী জবাব দিবে?অবশ্য তানিয়া বলেই দিয়েছিল,“দেখুন প্রেমা এখন ষোলো বছরের কিশোরী।আপনি বিয়ে করতে চাইলেই হবেনা।ওর ভাই খুব রাগী।এমনিতেই একটা কিশোরী মেয়ে নিয়ে ওদের পরিবারে ঝামেলা চলে।এখন প্রেমা বিয়ে করলে কুরুক্ষেত্র।”
সেই কথা শুনে তো ওই লোকটা অপেক্ষা করবে জানিয়েছে।তখন তানিয়া এটাও বলে,“আমি কিন্তু এটা কথা দিতে পারব না যে প্রেমা আপনাকে বিয়ে করবে।আমি চেষ্টা করতে পারি আপনাদের মিলিয়ে দেওয়ার কিন্তু প্রেমা যদি অন্যদিকে টান অনুভব করে আমি কিন্তু ওকে বাঁধা দিতে পারব না।”

সাথে সাথে সে রাজি হয়ে যায়।আড়াইটা বছর অপেক্ষা করা ব্যক্তিকে বলে অবশ্য ঝামেলায় পড়বে না কিন্তু তাও কোন মুখে বলবে ভাবছে।মানুষটা কষ্ট পাবে।কিন্তু দিজাকে তো কষ্ট দেওয়া যাবেনা।
দিজার আরেক নাম প্রেমা।ফরাজি পরিবারের যেই জন্ম নেয় সুফিয়া বেগম বাদে সবার নামই দ দিয়েই।তাই দাদাজান ভেবেছিলেন এবারের মেয়ে সন্তানকেও দ দিয়ে নাম রাখবে।ভাইবোন মিলেমিশে থাকবে তাই।যশোরের সবাই দিজা নামে ডাকলেও পারুল বেগমের বোনেরা প্রেমা ডাকেন।পারুল বেগমের নামের সাথে মিলিয়ে রেখে।তাই এখন দিজাকে প্রেমা নামেই চেনে তুহিন।যাকে কিনা দিজা নিজেও ভালোবাসে।কিন্তু দুজনে দুরকম ভাবে একজন আরেকজনকে পাওয়ার চেষ্টায় আছে।

খাবার শেষ করে দিজা জড়িয়ে ধরে তানিয়াকে।বলে,“আমাকে যেতে হবে এখন।এবার তেমন আড্ডা হলো না কিন্তু খালামণি অনেক মজার মজার খাবার রান্না করে খাইয়েছে।আংকেল আমাকে পড়িয়েছে আর হ্যাঁ ওই লোকটাকে বলে দিবে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।আমাকে যেনো সে ভুলে যায়।আমি কিন্তু তাকে পাত্তা দিবো না।আমি এক পুরুষেরই প্রেমে আসক্ত।”
বলেই জোরে কণ্ঠে বলে,“খালামণি আসি।দোয়া করবে আমার জন্য।আল্লাহ যেন আমার সহায় থাকেন।”
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দিজার খালামণি বলেন,“আবার আসবি মা।”

“তুমিও যেও।”
“আচ্ছা।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
দিজা জুতা পরে চলে গেলো।তানিয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কল দিলো তুহিনকে।তুহিন ধরেনা।কারণ ও আলাদা ক্লাস নেওয়ায় ব্যাস্ত।তানিয়া ম্যাসেজ দেয়,“সরি আমার বোন অন্য কাউকে ভালোবাসে।সে তাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাববে না।”
তুহিন দেখলো না ম্যাসেজ।কারণ মোবাইল তার পকেটে।তানিয়া একটু মন খারাপ করে আবার ভাবে,“এটাই তার ভাগ্যে ছিলো।”

দর্শন ভার্সিটির সামনে এসে কল দেয় দিজার কাছে। দিজা দৌড়ে এসে হাত উঁচিয়ে দেখায়।সালোয়ার কামিজ ও হিজাব পরে এসেছে দিজা।দর্শন নামে গাড়ি থেকে সাথে শোভাও।দিজা জড়িয়ে ধরে বলে,“কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ,তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
দর্শন বলে,“ওকে সিট দেখিয়ে দিস,নিজেও সাবধানে থাকিস।আমার বন্ধু তুহিন আছে।ওর ছবি তো তুই দেখেছিস।তোদের একসাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু ও জানালো পরীক্ষা শুরুর আগেই ওর চাপ পড়েছে।ক্লাস করাতে হবে মিটিং আছে আরও কি কি।তাই ব্যাস্ত হলো।ডোন্ট ওরি কোনো সমস্যা হলে তুহিন আল মাহমুদ বলে খোঁজ করে তার কাছে গেলেই হবে।”
দিজা মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়।দর্শন জানায়,“আমি আসতে পারবো না কিন্তু গাড়ি পাঠাবো।তোরা সাবধানে থাকিস।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”

দর্শন যেতে নিয়ে আবার পিছনে ঘুরে শোভার দিকে চোখ রেখে বলে,“বেস্ট অফ লাক।”
শোভার আনন্দিত চাহনি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।দর্শন চোখে সানগ্লাস দিয়ে চলে গেলো।শোভা চলে গেলো ভার্সিটির ভিতর।নিজেদের মত সিট খুঁজে পায়।দুজনেই আলাদা দুই রুমে।ননদ ভাবী দুজন দুজনকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো পরীক্ষা দিতে।
পরীক্ষা শেষে বের হয়ে শোভা ওর হলের সামনেই দাঁড়ালো।দিজা বলেছিলো এখানে দাঁড়াতে।দিজা পরীক্ষা দিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে,“কেমন হলো পরীক্ষা?
“আলহামদুলিল্লাহ ভালই,তোমার?”
“আমারও।”
“চান্স পাবো তো?”
“কেন!পরীক্ষা ভালো হয়নি?”
“অনেক সহজ ছিল।তোমার ভাই যেগুলো..

বলতে গিয়েও বলেনি।লজ্জা পায় একটু।দিজা ভ্রুকুটি করে তাকালো।সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল তুহিন। দিজাকে দেখে থমকে যায়।দিজা প্রশ্ন করে,“ভাই কি?”
“কিছু না।চলো বাসায় যাবো।”
“এই দাঁড়াও একটু উপরে চলো।”
“কেন?”
“ভাইয়ের সেই বন্ধুর খোজ নেই।”
“এখন খোজ নিয়ে কি হবে?”
“তাও ঠিক।আচ্ছা পরে এসে দেখা যাবে।চলো তাহলে বাইরে যাই।ভাই জানিয়েছিল গাড়ি পাঠাবে।”
দিজা ও শোভা চলে যেতে নেয়।তুহিন ওদেরকে যেতে দেখেই দ্রুত পিছন নেয়।দুজনে যখন গাড়িতে উঠতে নেয় তখনই আরেক গাড়িতে করে কয়েকটা গুন্ডা আসে।তারা একত্রে হামলা করে দিজার উপর।গাড়িতে থাকা জবরুল আহমেদ বলেন,“হ্যাঁ ওই মেয়েটাই সেদিন আমাদের বাসায় যায়।ওড়ে ধর।”
দিজা চিল্লিয়ে বলে,“আমাদের ধরে কি হবে?কি করেছি আমরা?”

“তোর ভাই করেছে।আমার সব শেষ করে দিয়েছে।আমি দেউলিয়া হয়েছি তোদের কারণে এখন তোরা ভুগনি।হয় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিবে নাহলে তোদের সম্মান।”
বলেই দুজনকে উঠাতে নিলে তুহিন এসে দিজাকে আক্রমণ করা ব্যক্তিদের মারতে শুরু করে।রাস্তার কয়েকজন এসে ওদের আক্রমণ করল।জবরুল আহমেদ বুঝতে পারে তারা এভাবে পারবে না।শোভাকে ভয় পেয়ে গাড়ির সাথে লেগে থাকতে দেখে জবরুল আহমেদ তার পাশের দুটো লোককে বলে,“ওইডারে ধরে আন।একটাকে পাইলেই হবে।”
ওরা চুপি চুপি শোভার মুখ চেপে নিয়ে যেই গাড়িতে উঠতে নেয় দিজা দেখে ফেলে।ওমনি চিল্লিয়ে বলে,“ভাবীকে ছাড়ো তোমরা।”

কিন্তু রাস্তার সাহায্যকারী লোকেরা এগিয়ে আসার আগেই শোভাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।দিজা ভয়তে এবার কান্না করে দেয়।তুহিন এগিয়ে এসে বলে,“চিন্তা করো না।আমরা পুলিশ কল করেছি।গাড়ির নাম্বার দিয়ে দিয়েছি।”
দিজা আর তুহিন আজ মুখোমুখি কিন্তু তাদের প্রণয় আলাপের সময়টা আজ নেই।দুজনেই এখন চিন্তিত। দিজা কাপা কাপা হাতে কল দেয় দর্শনকে।দর্শন ধরলেই দিজা কান্না করতে করতে জানায়,“ভা ভাবীকে ওরা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।তুমি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা না দিলে ওরা ভাবীকে ক্ষতি করে দিবে নাহলে ভাবীর সম্মান নিয়ে নিবে।ওই লোক আমাদের পিছনে লেগে আছে ভাইয়া।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৭

দর্শন চেয়ার ছেড়ে দ্রুত গতিতে উঠে রক্তিম চাহনি দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,“কোন লোক?”
“দিদার ভাইকে দেখতে যে বাড়িতে গেছিলাম ওই লোক।”
দিদার নাম চেনা লাগছে তুহিনের কাছে।দর্শনের ভাই দিদার।মনে মনে বলে,”দিদারকে কিভাবে চিনলো প্রেমা?নাকি এটা অন্য দিদার?”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here