প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৯

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৯
জান্নাত নুসরাত

গতকাল রাতে হয়তো বৃষ্টি হয়েছে তাই আজকের সকালটা একটু বেশি শীতল। সূর্য তার নিস্পৃহ রশ্মি দিয়ে দুত্যি ছড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে। ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নাসারন্ধ্রের ভিতর দিয়ে সুরসুর করে প্রবেশ করছে। রাস্তার এক পাশে ঝিমিয়ে পড়ে আছে কিছু গাছের ঢাল, যা গতকাল রাতের বাতাসের তান্ডবে ভেঙে পড়েছে। রাস্তার দু-পাশে চারটে কুকুর অলস ভঙ্গিতে শুয়ে ঝিমিয়ে পড়া চোখে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে মানুষের যাওয়া আসার শব্দ শুনলে বুজে নেওয়া চোখ খুলে দেখছে, রাস্তায় চলাচলকৃত মানুষ, সাথে মৃদু স্বরে নিজেদের তথাকথিত ভাষায় ডেকে ওঠছে। ইসরাত আলগোছে কুকুর গুলোর পাশ কাটিয়ে গেল। যেতে যেতে হাতে থাকা বিস্কিটের প্যাকেট থেকে চার টুকরো ছুঁড়ে দিল বিস্কিট কুকুর গুলোর উদ্দেশ্যে।

আনমনে যখন হেঁটে যাচ্ছিল সামনের দিকে, একটা কুচকুচে কালো রঙের কুকুর ভোঁ করে ইসরাতের পাশ কেটে চলে গেল। আকস্মিক কুকুরকে দেখে ইসরাত ভয়ে তাড়াহুড়ো করে বাঁ-পাশে সরে যেতেই ধাক্কা লাগল শক্ত পোক্ত পুরুষালি বুকে। সুরসুর করে নাকে প্রবেশ করল ম্যানলি পারফিউমের কড়া গন্ধ।
হঠাৎ করে ধাক্কা লাগায় একটু জোরে আঘাত লাগল নাক ও কপালে। ইসরাত বিরক্ত ভঙ্গিতে নিজের হাত তুলে কপালে স্পর্শ করল। তারপর নাকে হাত বুলালো। নাকে হাত বোলাতে বোলাতে উপরে চোখ তুলে তাকাতেই চোখাচোখি হলো ককোআ বর্ণের চোখের সাথে। যা আসলে কালো নাকি ব্রাউন ঠিক বোঝা গেল না। সূর্যের হালকা দৃপ্তি সুঠাম দেহের জায়িনের এক চোখে পড়ায় এক চোখ দেখতে কিছুটা বাদামি দেখাচ্ছে এবং অন্যটি কালো বর্ণের। সুদীর্ঘ পুরুষালি জায়িনের শরীরের কাছে ইসরাতের শরীর একটু ছোট বলে মনে হলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইসরাত বিরক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে ও থেমে গেল। দোষ তো তার! চোখ উপরে তোলে হাঁটায় তো ধাক্কা লাগল বেচারার সাথে। তাই কথা না বাড়িয়ে, এক হাতের তালু দিয়ে নাকে মাসাজ করে ধীরে সুস্থে সরে আসতে নিবে, চুলে শক্ত টান অনুভব হলো। আবারো সরে আসার চেষ্টা করতেই এবার একটু বেশি ব্যথা পেল। চোখ মুখ খিঁচে নিল মেয়েটা। মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো এলোমেলো ব্যথাতুর শব্দ। ব্যথায় মুখ নীল বর্ণ ধারণ করেছে। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে সে। ততক্ষণে চোখে জমা হয়েছে একগুচ্ছ পানি, অতিরিক্ত ব্যথা পাওয়ার ধরুণ। ইসরাত চোখ তুলে আবার উপরে তাকায়, চোখাচোখি হয় জায়িনের সাথে। জায়িন তখনো ইসরাতের দিক থেকে চোখ সরায় না, স্থির চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। দূরে এক বাসার দু-তলার বারান্দা থেকে গিটারের শব্দ ভেসে আসছে, তার সাথে ম্যানলি কোল্ড গলায় দুটো গানের লাইন ভেসে আসলো,

” দূরে দূরে কেনো থাকো
পাশে এসে হাতটি ধরো,
চোখে চোখ রেখে বলো ভালোবাসো।
ইসরাত ঠোঁটে ঠোঁট টিপে জায়িনের বোতাম থেকে নিজের চুলগুলো আলগোছে ছাড়িয়ে আনানোর চেষ্টা করে, তখনই জায়িনের গম্ভীর গলায় বলা কথা শুনে বোতাম থেকে চুল ছাড়ানো হাত থেমে গেল। জায়িন বলছে,”দেখা শেষ আমাকে?

ইসরাত জায়িনের কথার মানে বুঝল না, তাই নিজের বাদামি বর্ণের চোখের মণি উপরে তুলে। সূর্যের রশ্মি ইসরাতের চোখের দিকে সরাসরি পতিত হওয়ায় বাদামি বর্ণের চোখ দুটো আলোর উপস্থিতিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে।
মাথা দু-পাশে নাড়িয়ে, ভ্রু কুঞ্চিত করে জানতে চায় এর মানে কী? জায়িন ইসরাতের কথার উত্তর না দিয়ে, নিজের হাত দ্বারা ইসরাতের হাত সরিয়ে দেয় নরম ভঙ্গিতে। ইসরাতের কাছে মনে হলো এই বেটা তাকে এমনভাবে স্পর্শ করছে যাতে তার হাতে একটু জোর প্রয়োগ করে সরালে সে ব্যথা পাবে। অবাক চোখে হা করে যখন সে জায়িনের দিকে তাকিয়ে, জায়িন তখন নিজের শার্টের বোতাম থেকে যত্ন সহকারে ইসরাতের চুল ছাড়াতে ব্যস্ত।
অনেকক্ষণ কাটার পর যখন ইসরাত দেখল এখনো জায়িন চুল ছাড়াচ্ছে, সে এবার হাত দিয়ে চুল টেনে ছিড়ে নিয়ে আসতে চাইল বোতাম থেকে। চুল টান দেওয়ার আগেই জায়িন মৃদু ধমক দিল। গম্ভীর গলায় ইসরাতকে জিজ্ঞেস করল,”কম বয়সে টাকলা হওয়ার শখ জেগেছে ইসরাত আপনার?
ইসরাত চোখ সরু করে নেয়, দাঁত খিঁচে নিয়ে বলে,

“আপনার কোনো সমস্যা,আমার শখ জাগলে?
জায়িন নিজের গ্রীবা বাঁকিয়ে ইসরাতের কাছাকাছি আসে, ঠোঁট কামড়ে বলে ওঠে,”সব সমস্যা তো আমারই।
ইসরাত ভ্র বাঁকাল। সামান্য উপরের দিকে তুলে জিজ্ঞেস করল,”কেন? আপনার কেন সমস্যা হবে?
জায়িন ইসরাতের চুল শার্টের বোতাম থেকে আলগোছে ছাড়িয়ে দিয়ে, দূরত্ব বাড়িয়ে নেয় নিজেদের মধ্যে। তর্জনী আঙুল দিয়ে ইসরাতের কপালে টোকা দিয়ে বলে,”তা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই ইসরাত।
ইসরাত জায়িনের দিকে সরু দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখে, উল্টো ফিরে হাঁটা ধরল। ফিরোজা কালার ওড়না বাঁ-হাতে মাথায় টেনে তুলে, চোখ নিচের দিকে নামিয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেল জায়িনের দৃষ্টি সীমানার বাহিরে। জায়িন পিছনে দাঁড়িয়ে শুধু দেখল, চুপচাপ ইসরাতের হেঁটে যাওয়া, হাত দিয়ে টেনে মাথায় ওড়না তোলা, চুলগুলো হাঁটতে হাঁটতে বারংবার কানের পিছনে গুজা খুবই সূক্ষ্ম চোখে অবলোকন করল। যা জায়িনের সামনে থেকে ইসরাতের অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত চলল। ইসরাত চলে যাওয়ার পর ও একই পথে চেয়ে রইল জায়িন। বিড়বিড় করে আওড়াল,

❝আপনার প্রতি অনুভূত টানটা আসলেই
ম্যাজিকাল।
১লক্ষ ৪৭হাজার ৫৭০ বর্গামাইলের
এই মানচিত্রে
তিনশত, ৭৫কোটি, ১০লাখ,৭ হাজার রমণীদের মধ্যে
আমার কেবলমাত্র আপনার জন্য
মনের টান অনুভব হয়।
এর চেয়ে অদ্ভুত আর কী হতে পারে?❞
জায়িনের ঠোঁটের পাশ ঘেঁষে বয়ে যায় ক্ষীণ হাসির রেশ। বিড়বিড় করে বলে ওঠে নিজেকে,”অফ কোর্স নট, এটা রহস্যময় নয়।

নিজাম শিকদার গত আধঘন্টা যাবত বেতের সোফার উপর ওঠে লাফ-ঝাপ দিচ্ছেন, কিন্তু এত লাফ-ঝাপ দেওয়ার পর ও আজ তিনি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন না। বেজার মুখ বানিয়ে যখন নেমে আসলেন সোফার উপর থেকে, তখন চোখ পড়ল সৈয়দ বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সুফি খাতুনকে। যিনি কোনোপ্রকার পলক না ফেলে কড়মড় দৃষ্টি দিয়ে আছেন নিজাম শিকদারের দিকে। নিজাম শিকদার বুঝে উঠতে পারলেন না সুফি খাতুনের এরুপ দৃষ্টির মানে? তাই এই ভদ্র মহিলার দৃষ্টির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথা নিচু করে ফিরে গেলেন নিজের বাসার ভিতর। গণে গণে ত্রিশ সেকেন্ড পার হওয়ার সাথে সাথে স্লাইডিং দরজার ছোট একটি অংশ দিয়ে বাহিরের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলেন, তার আগেই সুফি খাতুনের সাথে চোখাচোখি হলো নিজাম শিকদারের। এবার সত্যি সত্যি লজ্জা পেয়ে গেলেন নিজাম শিকদার। লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে ফিরে গেলেন ভিতরে।

সুফি খাতুন কিছুক্ষণ তেরছা চোখে চেয়ে থেকে হাঁটা ধরলেন নাছির মঞ্জিলের দিকে। আজ একটা হ্যাস্তন্যাস্ত করে ছাড়বেন এই নিজাম শিকদারের। তিনি কিছু বুঝেন না মনে হচ্ছে! আরে সবই বুঝে, এই সুফি খাতুন। আজ যদি সে এই রঙলীলার অন্তিম না করে ছাড়ে, তাহলে নিজের নাম পাল্টে দিবে সে।
সুফি খাতুন ধীর মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেলেন নাছির মঞ্জিলের দিকে। কলিং বেলে চাপ দিতেই মনে পড়ল নুসরাতের কথা, তখনই আবার নিজের ভাবনা পাল্টে সৈয়দ বাড়ির দিকে ফিরে যেতে চাইলেন, তার আগেই মাথায় আসলো, আরে এই বেয়াদব মেয়ে তো এখন বাহ্মণবাড়িয়া না টাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছে তাহলে আজ আর ওই বেয়াদবটার মুখ লাগতে হবে না। আর নাজমিন আর নাছিরকে ও ভালো করে কান পট্টি দিয়ে দেওয়া যাবে। ওই বেয়াদব বাড়িতে থাকলেই তাকে ক্যামেরা দেখেই গেট খোলত না। আজ আরাম করে বসে নাছিরের সাথে আলোচনা করা যাবে।

সুফি খাতুন নুসরাতকে একপাশে ধীরে ধীরে মনে করতে লাগলেন গত দু-দিনের কথা। যখন যখন তিনি বারান্দা, রাস্তা, ছাদে, এমনকি রুমে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন তখন দেখেছেন নিজাম শিকদারের সাথে ইসরাত হে হে হা হা হি হি করে হেসে কথা বলছে। তিনি জানেন, জানেন কী! সুফি খাতুন সিউর ওই বেটা নিজাম আর নাছিরের বড় মেয়ের মধ্যে একটা গভীর প্রণয়লীলা সম্পর্ক চলছে। নাহলে সকাল-বিকাল-রাতে ওই বেটা নিজামকে দেখে ইসরাত এত দাঁত বের করে কেন হাসবে? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে! আর আজ এই সম্পর্কের শেষ পরিণতি বের করে পেছন ছাড়বেন এই সুফি খাতুন। নিজের অতর্কিত চিন্তাগুলো একপাশে রেখে জোরে জোরে এক সাথে অনেকবার কলিংবেলে চাপ প্রয়োগ করলেন। তখনই গেট খুলে গেল না, এর কিৎকাল সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঠুস করে শব্দ হয়ে গেটের লক খুলে গেল।

সুফি খাতুন গেট খোলার সাথে সাথে দ্রুত পায়ে নাছির মঞ্জিলের ভিতর প্রবেশ করলেন। ভিতরে প্রবেশ করার আগে সন্তর্পণে চোরা চোখে চেয়ে নিলেন শিকদার বাড়ির দিকে। আর তিনি যা ভেবেছেন তা একদম মিলে গেল। নিজাম শিকদার লুকিয়ে লুকিয়ে এইদিকেই তাকিয়ে আছেন। সুফি খাতুন নিজেকে বাহবা দিলেন
নিজ মনে নিজের গুণগান করলেন,”বাহ সুফি বাহ, তোর বুদ্ধির জবাব নেই। যা ভেবেছিলি তাই তাই বের হয়ে আসলো।

সৈয়দ বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছেন নাছির সাহেব। চোখে নিজের লাল খয়েরী কালার মিশেলে ছোট লেন্সের চশমা। হাতে কিছু কাগজ-পত্র। হয়তোবা সৈয়দ চয়েসের কাগজ-পতেএইগুলা। পাশেই হিসাবের খাতা রাখা। সচরাচর হিসেব-নিকেশের কাজ ইসরাত করে, আজ ইসরাত বাহিরে থাকায় নাছির সাহেবকে বসতে হয়েছে হিসেবের খাতা নিয়ে। কাগজ-পত্রের চোখ বোলাতে বোলাতে নাছির সাহেব ডাক ছুঁড়ে দিলেন নাজমিন বেগমের দিকে। নাজমিন বেগমের প্রতিউত্তর তৎক্ষণাৎ ভেসে আসলো জি বলে কিচেন থেকে। নাছির সাহেব অত্যন্ত রাশভারী গলায় বললেন,”এক কাপ চা দাও তো নাজমিন।
নাজমিন বেগম কিচেনে কাজ করতে করতে তাড়াহুড়ো গলায় বললেন,”দিচ্ছি অপেক্ষা করুন। আগে মায়ের টিফিনটা রেডি কিরে নিই।

নাজমিন বেগমের কথা শেষ হতেই বাড়িতে আবার শুনশান নীরবতা নেমে আসলো। কাগজ-পত্র অলস ভঙ্গিতে সেন্টার টেবিলে রেখে চোখ বন্ধ করে নিলেন নাছির সাহেব। মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন নাজমিন বেগমকে,”কবে আসবে নুসরাত?
“গতকাল রাতে কল দিয়ে বলল, আরো দু-দিন থাকবে নাকি। এখনো তার পুরো ঘোরাঘুরি শেষ হয়নি।
নাজমিন বেগম কথা শেষ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। বাড়িটা মেয়েগুলো ছাড়া একদম নীরব থাকে। ইসরাত তো প্রয়োজন ছাড়া কারোর সাথে কথা বলে না, যদি ইচ্ছে হয় তার সাথে হঠাৎ হঠাৎ দু-একটা কথা বলে। গল্প করে কিন্তু নুসরাত মুখ থেকে কথা সরে না। ফালতু জিনিস নিয়ে বকবক করতে করতে দিন কাটে এই মেয়েটার৷ যখন থেকে ব্রাহ্মণবাড়ি গিয়েছে বাড়িটা একপ্রকার মৃত বাড়ির মতো হয়ে পড়ে আছে।
সোফার উপর থেকে মোবাইল তুলে নিয়ে সময় দেখলেন নাছির সাহেব। বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। কল লিস্টে ঢোকতেই সবার আগে চোখে পড়ল নুসরাতের নাম্বার। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আম্মু লেখা নাম্বারে কল দিলেন। দু-তিনবার রিং হওয়ার পরপরই অপাশ থেকে ইসরাতের নরম গলার স্বর ভেসে আসলো।

” হ্যালো! আব্বু……
ইসরাত নিজের কথা শেষ করার আগেই নাছির সাহেব নিজের কথা ঢুকিয়ে দিলেন। অত্যন্ত গম্ভীর কন্ঠে জানতে চাইলেন ইসরাতের নিকট,”কখন বাড়িতে আসবে? তোমাকে নিতে আসব?
ফোনের অপাশ থেকে ইসরাতের মৃদু হাসির শব্দ ভেসে আসলো। ঠোঁট টিপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলল,”জি না আব্বু, আমি প্রায় চলে এসেছি। আপনাকে আসতে হবে না।
নাছির সাহেব অহ বলে ফোন রেখে দিলেন। হাতের ফোন রাখার আগে ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ফোটে উঠল ঈষৎ হাসি। ওয়ালপেপারে লেগে আছে নুসরাত আর ইসরাতের হাসি হাসি মুখের ছবি। নাছির সাহেব মেয়েদের ছবির উপর হাত বুলিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালেন,”আমার আব্বা, আমার আম্মা।
নাছির সাহেবের কথা শেষ হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল। সামনের দিকে তাকাতেই ক্যামেরার মধ্যে দেখলেন সুফি খাতুন দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। ইচ্ছে করল না গেট খুলে দেওয়ার। তারপর না চাইতে ও অনিহা নিয়ে সোফা থেকে উঠে গিয়ে গেট খুলে দিলেন নাছির সাহেব। ততক্ষণে হন্তদন্ত পায়ে এসে ড্রয়িং রুমে ভিতর প্রবেশ করলেন সুফি খাতুন৷

নাজমিন বেগম কিচেন থেকে উঁকি দিতেই চোখে ভাসল ভদ্র মহিলার অবয়ব। আর এতক্ষণের ঠান্ডা থাকা মেজাজ এক নিমেষে খিঁচে গেল নাজমিন বেগমের। এই মহিলা এবার ও নির্ঘাত কোনো অর্ধ বয়স্ক নয়তো বৃদ্ধ লোকের বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসে হাজির হয়েছেন ইসরাতের জন্য নাছির সাহেবের কাছে। এটা নাজমিন বেগম হলফ করে বলতে পারেন! দাঁতে দাঁত চেপে নিজের কাজ করতে লাগলেন। হাত পা এখানে হলেও নাজমিন বেগমের, কান ও মন দুটোই ড্রয়িং রুমের দিকে। কান খাড়া করে রাখলেন সুফি খাতুনের কথা শোনার জন্য। কোনো কথা তো কানে আসলো না,উল্টো নাছির সাহেব আরেকটা আবদার জুরে দিলেন,”ফুপির জন্য পকোড়া, সিঙ্গারা, ছমোচা, আলুর চপ, ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে আসো নাজমিন, আর পারলে সাথে দু-কাপ চা দাও।
নাজমিন বেগমের মুখ ফ্যাকাশে বর্ণের হয়ে গেল। রাগে নাক-কান-মুখ লাল করে শক্ত হাতে শব্দ তুলে কাজ করতে লাগলেন। নাছির সাহেব এত উচ্চশব্দের উৎপত্তি দেখে এক সেকেন্ডে বুঝে গেলেন আজ তার গিন্নি বেজায় চটেছেন। তাই নিজে ও চোখ-মুখ অন্ধকার করে সোফার উপর বসে রইলেন।

সুফি খাতুন নিজের কন্ঠ নিচে নামিয়ে অত্যাধিক সতর্কতা সহিত নিজের কথা শুরু করলেন। একপ্রকার বলা যায় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। তার কথার শুরু হলো এভাবে,”শোন নাছির, তুই দুই মেয়ের বাপ। আল্লাহ তোকে ছেলে দেয় নাই কেন জানিস? তুই আমার কথা না শুনে এই নাজমিনরে বিয়ে করছিস বলে!
নাছির সাহেব মুখ শক্ত করে নিলেন। রাগি কন্ঠে বললেন,”আল্লাহ আমায় ছেলে দেয় নাই তাতে আমার কোনো আফসোস নাই, তাহলে তোমার এত মাথাব্যথা কেন ফুপি? আমার দুই মেয়ে আমার জন্য লাকি। ওদের জন্মের পর পর আমার ব্যবসা অগ্রগতি করেছে৷ আর তুমি তাদের মাকে বলছেন…
নাছির সাহেব বিরক্তিতে পরবর্তী কথা মুখে আনতে পারলেন না। মুখ, চোখ পাল্টে নিলেন। সুফি খাতুন বললেন,”আরে তুই চ্যাত করে উঠতাছত কেন? আমি বলতে চাইছি যে, দেখ তুই তোর মেয়েগুলারে বিয়ে দিয়ে দিলে তো এরা নিজেদের বাড়ি চলে যাবে। সাথে মোটা অংকের যৌতূক দিতে…..

আবারো নাছির সাহেব সুফি খাতুনের কথা কেটে দিলেন। এক আঙুল তুলে বললেন,”অন্যের বাড়ি যাবে কেন? আমার মেয়েদের আমি রেখে দিব আমার কাছে, আর অত্যাধিক প্রয়োজন হলে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই করে রাখব।
সুফি খাতুন মনে মনে শয়তানী হাসি দিলেন। ঝটপট বললেন,”আর ছেলে যদি ঘর জামাই হতে না চায়?
নাছির সাহেবের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর ও আছে। তিনি উত্তর দিলেন,”বাড়ির আশে-পাশে বিয়ে দিব।
সুফি খাতুনের মুখ-চোখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল। ক্ষীণ হাসি ঠোঁটে রেখে বললেন,”এই তো লাইনে আসছিস তুই! আমি আশ-পাশ থেকে ছেলে পছন্দ করছি তোর মেয়ের জন্য। যেমন তাগড়া শরীর তেমন উঁচু-লম্বা, টগবগে যুবক ছেলেটা। আর সাথে বৃত্তবান, ইসরাত রাজ করবে রাজ। বাড়িতে মানুষ নেই বললেই চলে৷ একেবারে ছোট ফ্যামেলি। আর লোকটার জিম করা বডি ফিটনেস দেখলে তুই নিজেই লোকটার প্রেমে পড়ে যাবি। প্রতিদিন সকাল, বিকাল, রাতে ছেলেটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে লাফ-ঝাপ মেরে জিম করে। আর রোজ সকাল বিকেল পার্কে হাঁটতে ও যায়। বুঝতে পারছিস ফিটনেসের ব্যাপারে কতটা সতর্ক ছেলেটা?
নাছির সাহেব মনপুতো গলায় জানতে চাইলেন,

“ছেলের বয়স কত?
সুফি খাতুন দু-হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বললেন,”আরে বয়স ও একদম কম। তুই শোন আমার কথা, লোকটা ইসরাতের সাথে দারুণ মানাবে। তুই লোকটাকে দেখলে তোর মুখ হা হয়ে যাবে।
” কিন্তু ছেলেটার নাম কী? কাজ কী করে
সুফি খাতুন হাত দিয়ে ধীরে কথা বলার কথা বললেন। নিচু স্বরে বললেন,”আজ বিকেলে যখন ছেলেটা পার্কে হাঁটতে যাবে, তখন তুই আর আমি দু-জন গিয়ে ছেলেটার সম্পর্কে সব জেনে আসব।
তাদের কথা শেষ হতেই নাজমিন বেগম ট্রে করে নাস্তা এনে রাখলেন সেন্টার টেবিলে। তীক্ষ্ণ চোখ সুফি খাতুনের দিকে বুলিয়ে নিয়ে বললেন,”আমাকে দেখে মুখ বন্ধ করে নিলেন কেন ফুপি? বিশেষ কোনো আলাপ চলছিল নাকি আমার বিষয়ে?
সুফি খাতুন মনে মনে ভেংচি কাটলেন নাজমিন বেগমকে। মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে আমতা আমতা করে বললেন,”কই কিছু না তো নাজমিন। আর তোমাকে দেখে কেনই বা আমি কথা বলা বন্ধ করব। হা হা…

রেস্টুরেন্টের টেবিলের উপর নিজের এক হাতে থাকা সেনেলের ব্যাগ ছুঁড়ে মারল নুসরাত। রাগে তার শরীর দপদপ করে জ্বলছে। কত্তবড় সাহস? তাকে, এই নুসরাতকে নিয়ে টিজ করে ওইসব আঠারো ঊনিশ বছরের চেংড়া পোলাপান। রাগে চেয়ারের উপর দু-পা তুলে হাঁটুর উপর মুখ রেখে বসে থাকে সে। তখনই একজন স্টাফ এসে নুসরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,”ম্যাম পা নামিয়ে বসেন, এখানে একটু পর একজন রাজনৈতিক নেতা আসবেন।
নুসরাতের খিঁচে থাকা এতক্ষণের মেজাজ এই স্টাফ এসে আরো খিঁচিয়ে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড়িয়ে বলে ওঠল,”তো ওই ব্যাটা রাজনৈতিক নেতা কী আমার সমন্ধ দেখতে আসছে যে আমি পা নামিয়ে বসব? এসব বালের নেতার কাজ এখানে কী? তারা মানবসেবা না করে রেস্টুরেন্টে কী করতে আসছে?

স্টাফ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। চোখ গোল গোল করে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। ছেলে স্টাফটির এমন হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে নুসরাত ঠোঁটে জোর করে হাসি এনে ঠোঁট চোখা করে ন্যাকা কন্ঠে বলে,”ওউ ওউ, আপনার ও কী এখন আমাকে পছন্দ হয়েছে? আপনি ও কী আমার বাসায় সমন্ধ পাঠাতে চাইছেন?
এর পরপরই রাগী কন্ঠে হুশিয়ারি দিয়ে বলে ওঠে,”এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখছেন কেন? আমার মুখে কী মধু লাগানো নাকি ফুল ফুটেছে, যে হা করে তাকিয়ে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন? যান আপনার নেতা-ফেতা আসছে না, উনাকে গিয়ে স্বাগত জানান।

স্টাফ নড়তে ভুলে গেল। স্টাফকে সরতে না দেখে নুসরাত দু-হাত মুখের সামনে রেখে জোর করে বলে,”দয়া করে, আপনার এই তোবড়া নিয়ে এখান থেকে সরেন ভাই। যান নিজের কাজে যান।
স্টাফ মুখ কালো করে চলে গেল। এর মধ্যে সৌরভি বলে উঠল,”তুই বেচারার উপর নিজের রাগ দেখাচ্ছিস কেন? বেচারা কী করেছে তোর সাথে? শুধু বলেছে পা নামিয়ে বসার জন্য, আর তুই কত কী শুনিয়ে দিলি! আর এত রাগের কিছুই নেই নুসরাত, তুই ছেলেগুলোকে ইচ্ছে মতো তোর এই মোটা ব্যাগ….
নুসরাতের ব্যাগ হাতে নিতে গিয়ে সৌরভির বেগ পোহাতে হলো। তীক্ষ্ণ চোখে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থেকে রগরগে কন্ঠে বলল,”এই মটকা ব্যাগ দিয়ে ছেলেগুলোকে পিটিয়ে এসেছিস। তারপর ও এত রাগ দেখানো কী জায়েজ? উঁহু একদম জায়েজ না!

নুসরাত দন্ত কপাটি ঠোঁটের নিচে চেপে হিসহিসিয়ে বলে,”তো বলবে কেন পা নামিয়ে বসার জন্য? ওই ব্যাটা বালের নেতা কী আমায় দেখতে আসছে নাকি আমায় হ্যাঙা করতে আসছে যে আমি পা নামিয়ে সুশীল, শুশ্রূষা, নির্মল, নিষ্পাপ, হয়ে বসব। প্রয়োজন হলে টেবিলের উপর আমি আমার ঠ্যাং তুলে বসে থাকব। আর ওই নেতার যদি এতে সমস্যা হয়, তাহলে ওর মুখের উপর আমি আমার ঠ্যাং তুলে রাখব।
নুসরাত দম নিল একটু। শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি যেমন আমি সেরকম বসব এতে কারোর সমস্যা হলে সে এখান থেকে যেতে পারে। আমি বলিনি আমার সামনে এসে হি হা হু বলে আমার ভুল দেখিয়ে দেওয়ার কথা।
নুসরাত নিজের মুখের বিকৃতি ঘটিয়ে সৌরভির মতো করল। সৌরভি চোখ পাঁকিয়ে তেজি কন্ঠে বলল,”নুসরাত তুই এবার লিমিট ক্রস করছিস?
সৌরভি কন্ঠ নিচে নামিয়ে কড়মড় করে বলল,
“আর ওই বেটা নেতা তোর গালি শোনতাছে তোর পিছনে দাঁড়িয়ে।
নুসরাত নিজের ভিতরের দপদপ করা রাগগুলো নিজের ভিতরে চাপা দিয়ে বলল,”আমি কখন লিমিটের ভিতর ছিলাম সৌরভি আপা, আর যার যা শোনার শুনুক। আমি বলব তো!
পিছনে দাঁড়ানো সাদা পাঞ্জাবি পরা লোকটা নিষ্প্রাণ চোখে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে কোণার দিকের এক সিটে যেতে যেতে বিড়বিড় করে আওড়াল,” ইন্টারেস্টিং!
অতঃপর নিজের পাশে দাঁড়ানো একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলল,”খোঁজ নাও মেয়েটার।
ছেলেটা মৃদু স্বরে বলে উঠল,

“জ্বি ভাই।
নুসরাত রাগ আর বিরক্তি নিয়ে পাগলের মতো দাঁত কেলাচ্ছে। এবার সৌরভি রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করল,”তোর ব্যাগের ভিতর কী?
নুসরাত নিরুদ্বেগ। তার ভিতর কোনো প্রকার উদ্বেগ, স্পৃহা দেখা গেল না প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। সৌরভি নুসরাতের মনোভাবে টের পেতেই বলল,”একদম এড়িয়ে যাবি না আমার প্রশ্ন।
নুসরাত নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
“তুই যা বুঝেছিস, ওইটাই ব্যাগে।
সৌরভি নিজের হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে। নুসরাতকে দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে অবলোকন করে। প্রশস্ত চোখে তাকিয়ে সতর্ক গলায় নুসরাতের শোনার মতো করে চেঁচায়,”কুত্তি তুই কী করেছিস? তুই পাথর দিয়ে পিটিয়ে এসেছিস ছেলেগুলোকে। আর তারপর ও এত রাগ করছিস! এজন্য তো বলি, ছেলেগুলোর কপাল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে কেন! তুই ব্যাগে পাথর রাখেছিস কখন?

নুসরাত নির্বিকার কন্ঠে প্রশ্নের উত্তর দেয়। উত্তরে নেই কোনো দ্বিধা, নেই কোনো অনুশোচনা,”বাড়ি থেকে আসার সময় বাগান থেকে তুলে নিয়ে আসছি। আমার সিকথ সেন্স আমাকে হুশিয়ারি করেছিল বাড়িতে থাকতেই, এরকম বাচ্চা, লাফাঙ্গা, পোলাপান দু-একটার সাথে তো দেখাই হবে এখানে এসে। তাই….
“তাই তুই পাথর দিয়ে পিটাবি। আর বারবার যে বাচ্চা বলছিস, ওই ছেলে গুলোর বয়স আঠারো-ঊনিশ হবেই।
নুসরাত টেবিলের উপর দু-পা তুলতে তুলতে আবার নামিয়ে নেয়, সৌরভির মোটা মোটা করে পাঁকানো চোখ দেখে। কর্কশ কন্ঠে বলে,”তো ওই ছেলে-পেলে গুলোতো বাচ্চাই।
“তোর বয়স কত, যে ওদের বলছিস বাচ্চা?
সৌরভি নিরেট কন্ঠে জানতে চায়। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে, গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বীরের মতো করে বলে,” আমার বয়স ঊনিশ।
“তাহলে তো তুই ও বাচ্চা?
সৌরভি এমন কথায় নুসরাতের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। নুসরাতকে কথা বলতে না দেখে সৌরভি একটু হাসবে, তার আগেই নুসরাত বলে ওঠে,”ওইগুলা বাচ্চা পোলাপান, আর আমি নুসরাত একজন ঊনিশ বছর বয়সী বিবাহযোগ্য প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা।

সৌরভি শব্দ করে শ্বাস ফেলল। হতবিহ্বল চেহারা বানিয়ে, আড়ষ্ট গলায় বলল,”কথার বেলায় কেউ তোকে হারাতে পারবে না নুসরাত। তুই একটা চিজ।
নুসরাত পা নামিয়ে না বসায় আরেকজন স্টাফ আসলো নুসরাতের দিকে। এসে মৃদু কন্ঠে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কিছু বলার পূর্বেই নুসরাত নিজেই মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল,” ভাইয়া, ওই ভাইয়াকে একটা স্যরি বলে দিবেন। আসলে আমি এভাবে রিয়েক্ট করতে চাইনি কিন্তু কীভাবে কীভাবে হয়ে গিয়েছে!
“ম্যাম এবার প্লিজ পা নামিয়ে বসেন। অনেক চিৎকার করেছেন, উনি আমাদের অতিথি প্লিজ একটু শালীনতা বজায় রেখে কথা বলুন।
শেষ নুসরাত এক নিমেষে চটে গেল। রাগী কন্ঠে সৌরভিকে বলল, “আর এখানে খাবই না, এরা আমার মুডের দফারফা করে দিল।
নুসরাত রেস্টুরেন্টের বাহিরের খড়খড়ে আলোর দিকে তাকিয়ে চোখ খিঁচিয়ে ধুপধাপ পায়ে বের হতে নেবে, ধাক্কা খেল কারোর গায়ের সাথে। আকস্মিক ধাক্কাটা লাগায় কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া না দিয়ে নুসরাত পাশ কাটিয়ে নীরব ভঙ্গিতে চলে যেতে নিবে, পিছন থেকে কেউ অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে বলল,”কাউকে ধাক্কা দিলে স্যরি বলতে হয়, এইটুকু নূন্যতম ম্যানার্স নেই আপনার মধ্যে?
নুসরাতের পা থেমে গেল দরজার সামনে। মাথা কাত করে পিছনে তাকাতেই আবারো সেই আগের মতো প্রথমেই চোখাচোখি হলো লম্বা পাপড়ি দিয়ে ঘেরা কালো মণির চোখের সাথে। যেগুলো বিরক্তি, রাগে, বিতৃষ্ণা, ও অন্যকিছুর কারণে জ্বলজ্বল করছে।

নুসরাতের অবয়ব আবার দেখতেই আরশের বিরক্তিতে মেজাজ চড়া হলো। ঠোঁট কুঁচকে বলল,”আপনি?
নুসরাত তীক্ষ্ণ কন্ঠে জানতে চায়,
“অন্য কাউকে আশা করছিলেন?
নুসরাতের কথার মধ্যে অদৃশ্য ব্যগ্রতা আরশ টের পায়। শব্দ করে শ্বাস ফেলে, ডান হাত দিয়ে নিজের কপালে মাসাজ করতে করতে বলল,”আপনার মতো বেয়াদব মহিলাকে তো মোটেও আশা করছিলাম না।
নুসরাত তেরছা চোখে সঠান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরশকে অবলোকন করে। ঠোঁট টিপে কিছু বলতে নিবে, সৌরভি টেনে নিয়ে চলে যায় সামনের দিকে। মোলায়েম কন্ঠে বলে,” বোন আর ঝগড়া করিস না, এইবার ঝগড়া করলে এই নিয়ে পাঁচবার আজ ঝগড়া করে ফেলবি।
নুসরাত কথা বাড়াল না, তার নিজের ও একঘেয়েমি লাগছে সবকিছু। কোনো কিছু ভালো লাগছে না! ইচ্ছে করছে ছুটে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। সৌরভি দরজা ঠেলে বাহিরে বের হতে নিবে পিছন থেকে আরশ ডেকে ওঠল নুসরাতকে,”শুনুন…

নুসরাত ঘাড় ফিরায় পিছনে, আরশের সাথে আবারো চোখাচোখি হয়। আরশ নিষ্প্রাণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে, শব্দের কোনো প্রকার হেরফের না করে তীক্ষ্ণতা নিয়ে জানতে চায়,”বিবাহিত?
আরশের প্রশ্ন নুসরাতের মেজাজে ঘি ঢালার মতো ছিল। কিৎকাল আগে কিছুটা শান্ত হওয়া মেজাজ দপদপিয়ে চড়ে গেল মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরণে নিউরণে। রাগে ফোসফাস করতে করতে মুখ দিয়ে যা বেরিয়ে আসলো তাই বলে দিল,”তু কন হে বে ছালা? তোকে আমি বলতে যাব কেন আমি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত!
নুসরাত রাগে হিসহিস করে বের হয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। চোখে, মুখে ক্ষুব ফুটে ওঠছে স্পষ্ট। এই লোকের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই জিজ্ঞেস করতেই আছে, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত? সে বিবাহিত হলে হবে! এই বেটার সমস্যা কী? তাকে বিয়ে করবে নাকি যে এভাবে হাত ধোয়ে পেছনে পড়ে আছে জানার জন্য বিবাহিত নাকি অবিবাহিত। আচ্ছা মতো আরশকে ধোয়ে দেওয়ার শখ থাকলেও, নিজের শখকে অপূর্ণ রেখে বাইরে বের হয়ে আসলো রেস্টুরেন্টের নুসরাত। কিন্তু পরেরবার ওই বেটা এসব আজগুবি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সে একদম ছাড়বে না। এক চুল ও না…..!

আরশ পিছন থেকে চেয়ে রইল নুসরাতের যাওয়ার দিকে। সে স্তব্ধ, হতবিহ্বল কন্ঠে মাহাদির কাছে জানতে চাইল,”মেয়েটা তুই-তোকারি করে গেল?
মাহাদি দু-পাশে মাথা নাড়িয়ে ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল,
“না তোর সাথে আপনি আজ্ঞা করে গিয়েছে মেয়েটা।
রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল আরশ। হাতের শিরাগুলো ফুলে ফেপে ওঠল নিমেষেই। দাঁতে দাঁত চেপে কড়মড় করে নিজ মনে আওড়ায়,”বেয়াদব! এইসব অভদ্র মেয়েদের ধরে ঠিক সময় বাপ-চাচা দুটো থাপ্পড় দিলে এরকম বেয়াদব হতো না। অসভ্য, অশালীন, ম্যানার্সহীন! আরেকবার সামনে পেলে থাপড়ে ম্যানার্স শিখাব।

রিংকি, পিংকি, ঝুমুর, আর নেহার মেসেজ ভাসছে ওয়ালপেপারে। ইরহাম ওয়াট’সঅ্যাপে ঢোকতেই সর্বপ্রথম মেসেজ দেখল ঝুমুরের। ঝুমুর লিখেছে,” ইরহাম মাই বয়, আমার দশ হাজার টাকা লাগবে, তুমি কী আমাকে দিতে পারবে?
ইরহাম ঠোঁট বাঁকিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক হাসে। ঠোঁট টিপে বিড়বিড়ায়,”আমি ইরহাম শোহেবের কাছে টাকা চায় এই মেয়ে। নে তোকে একটা ব্লক দিলাম। এখানেই তোর মতো মুরগীর সাথে আমার সম্পর্ক। তুই থাক আমার ব্লক লিস্টে।
এবার নেহার ইনবক্সে ঢোকতেই মেসেজ দেখল,
“ইরহাম আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। কোনো বাহানা নয় কিন্তু।
ইরহাম চোখ-মুখ উল্টে নিল। বিচ্ছিরি হেসে আওড়ায়,”ন্যাকার গুষ্টি। একটা মানুষ কীভাবে এত ন্যাকা হয়? চ্যাহ চ্যাহ চ্যাহ…
মেসেজের রিপ্লে দিল,
“আজ বিকেল ৩:০০টার সময় ব্ল্যাক উইন্স রেস্টুরেন্টে আমি আসব, সময় মতো চলে আসো।
রিংকি, পিংকি একই মেসেজ করেছে তারা দেখা করতে চায় ইরহামের সাথে। ইরহাম রিংকি কে রিপ্লে দিল,”রিংকি তুমি বিকেল ৩:৪০ মিনিটে ব্ল্যাক উইন্স রেস্টুরেন্টে এসো।
পিংকিকে বলল চারটায় আসার জন্য।

ব্ল্যাক উইন্স রেস্টুরেন্ট,
বিকেল তিনটা।
নিজাম শিকদার এসেছেন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ব্ল্যাক উইন্স রেস্টুরেন্টে। সৌরভি বাড়িতে না থাকার জন্য, নিজাম শিকদার আজ-কাল রেস্টুরেন্টেই খাবার খাচ্ছেন। খাবার অর্ডার দিয়ে বসে ছিলেন খাবার আসার অপেক্ষায়। আশেপাশে নিজের চোখ বুলিয়ে রেস্টুরেন্টের আউটডোর প্লান্ট গুলো দেখছিলেন। এর মধ্যে দেখলেন ইরহামকে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতে। নিজাম শিকদার মুখের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজের টেবিলের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন। সৈয়দ বাড়ির মধ্যে এই ছেলে, তার ওই বেটাছেলে বন্ধু, আর মিচকে শয়তানের মতো হাসি হাসি মুখ বানিয়ে ঘুরে এদের সাথে আরেকটা জিন, এই তিন নমুনাকে তার মোটেও পছন্দ না।
এর মধ্যে ইরহাম এসে বসল নিজাম শিকদারের ঠিক বিপরীত সিটে। সে খেয়াল করেনি রেস্টুরেন্টে বসে থাকা নিজাম শিকদারকে। নিজাম শিকদার মেন্যু কার্ড দিয়ে নিজের মুখের এক পাশ ঢেকে নিলেন। এই ছাগলটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা নেই তার। এর হাসি দেখলে তার গা পিত্তি জ্বলে যায়। কীরকম বদমাস ছেলেদের মতো হাসে!

তাই ইরহামের সাথে কোনো বাক্য আলাপ না করার জন্য মেন্যু কার্ড দিয়ে মুখ ঢাকলেন। কিন্তু ঠিকই চোরা চোখে চেয়ে রইলেন ইরহামের দিকে, সন্তর্পণে নজর রাখলেন বিপরীত সিটে।
অর্ডার দেওয়া খাবারগুলো আসতেই ধীরে ধীরে খাওয়া শুরু করলেন নিজাম শিকদার। খাবার মুখে পুরে অপরদিকে তাকাতেই মুখ থেকে বের হয়ে আসলো ছিটকে খাবারের দলা। এক হাতে নিজের চোখ ঢেকে নিলেন। দু-পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বিড়বিড়ালেন,”খারাপ যুগ, আজকালকার ছেলে মেয়ে গুলো উচ্ছনে গিয়েছে। আর এই ছেলে আর ওই মেয়ে তো উচ্ছনে যাওয়ার উপরেরটা পার করে ফেলেছে।
খাবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর সময় দেখলেন তিনটা ত্রিশ মিনিট। মুখ টিস্যু দিয়ে মুছে নিয়ের বিপরীতে চোখ বোলাতেই দেখলেন মেয়েটা চলে যাচ্ছে। সুস্থির নিশ্বাস ফেলে নিজে ও বাড়ি যাওয়ার জন্য বিল পে করে রওনা হবেন এমন সময় দেখলেন ইরহাম আবারো হেসে হেসে এগিয়ে গিয়ে আরো একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছে৷ ঠোঁট থেকে যেন হাসি সরছেই না। মেয়েটার কোমর জড়িয়ে নিয়ে এসে সিটে বসে পড়ল।

নিজাম শিকদারের আখিঁযুগল প্রশস্ত হলো। নিচু স্বরে রেস্টুরেন্টে স্টাফকে ডেকে আরো এক কাপ কফি অর্ডার দিলেন। ধীরে ধীরে কফি খেতে খেতে ইরহামের সকল কান্ডকারখানা লক্ষ করতে লাগলেন। ত্রিশ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর এই মেয়ে ও চলে গেল, এবার আসলো আরো একটা মেয়ে। নিজাম শিকদারের চোখ এবার অক্ষিকোটরের বাহিরে বের হয়ে আসলো। নির্বাক চোখে চেয়ে রইলেন ভদ্র লোক। এই মেয়েটা ঠিক ত্রিশ মিনিট পর চলে গেল। এরপর লম্বা দেখতে আরো একটা মেয়ে এসে উপস্থিত হলো রেস্টুরেন্টে। একইভাবে সেই মেয়ের সাথে ঘষাঘষি ডলাডলি করল ইরহাম। নিজাম শিকদারের এবার চেতনা হারানোর জোগাড়। এই মেয়েটা চারটা ত্রিশ মিনিটে চলে গেল। নিজাম শিকদারের হঠাৎ টনক নড়ল, ইরহামের এসব কান্ডকারখানার ভিডিও করার কথা তো তিনি ভুলে গেছেন। আহ.. আজ এই বেটার এসব ভিডিও করে রাখলে, এর বড় চাচাকে দেখানো যেতো।
নিজাম শিকদার নিজের বোকামিতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রেস্টুরেন্টের বিল পে করে বের হতে হতে প্রশংসা করলেন ইসরাতের। এই মেয়েটা ছাড়া সৈয়দ বাড়ির আর একটা বাচ্চা ভালো হয়নি। সাথে নিজের তারিফ করলেন এত ভালো একটা মেয়েকে পছন্দ করার জন্য। নিজাম শিকদার তোমার পছন্দের তারিফ করতে হয়। এই বেটা ইরহাম, পিচ্ছি শয়তান, আর ওই বেটি নুসরাত এই তিন বাচ্চা এক একটা নমুনা সৈয়দ বাড়ির। হাহ…

অস্তমিত রবির আলো পশ্চিম আকাশে লাল আভা সৃষ্টি করেছে। পৃথিবী তার দৃপ্তিতে লাল রঙে রঙিন হয়ে আছে। পার্কের একপাশের ছোটো খাটো ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছেন সুফি খাতুন আর নাছির সাহেব। নাছির সাহেব বুঝলেন না, এই ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকার মানেটা কী! তারা তো দেখতে আসছে পাত্রকে। পাত্র কী এই ঝোপঝাড়ের আড়ালে তাদের সাথে দেখে করতে আসবে? নাছির সাহেবের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল সূচারু কিছুর কামড় পায়ে উপলব্ধি করে। কামড় মারা জায়গায় জ্বলন অনুভব হতেই হাত দ্বারা পায়ে আঙুল বোলালেন। তারপর হাতের মধ্যে মশা কামড় অনুভূত হতেই, ঠাস করে নিজের হাতের উপর থাপ্পড় মারলেন। চোখ মুখ খিঁচিয়ে বসে রইলেন তথাকথিত সুফি খাতুনের কথা অনুসারে সেই হ্যান্ডসাম, জিম করা বডি, উঁচু-লম্বা, কমবয়সী এবং ধনী ব্যক্তির অপেক্ষায়। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঠিক পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে ছেলেটে এসে হাজির হলো। সুফি খাতুন নিচু স্বরে বললেন,”ছেলে এসে গিয়েছে?

নাছির সাহেব আশেপাশে চোখ বোলালেন ছেলেকে দেখার জন্য। কোথাও কোনো ছেলে তার দৃষ্টিসীমানায় না পড়ায় অবাক কন্ঠে জানতে চাইলেন,”কোথায় পাত্র? আই মিন ফুপি কোথায় ছেলে?
“আরে তুই ছেলে দেখতে পাচ্ছিস না, ওই যে সামনের বেঞ্চে বসে আছে।
সুফি খাতুন ফিসফিস করে নাছির সাহেবের কানের কাছে বললেন। নাছির সাহেব বুঝে পেলেন না সুফি খাতুনের এত ফিসফিস করে কথা বলার মানে। সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে আবারো ছেলে খোঁজতে ব্যস্ত হলেন নাছির সাহেব। সামনের বেঞ্চে সুফি খাতুনের কথা অনুসারে কোনো ছেলে বসা দেখলেন না। তাই আবারো জানতে চাইলেন,” ফুপি কোথায় ছেলে? একটু হাত দিয়ে তাক করে দেখাও।
সুফি খাতুন সামনে বরাবর হাত তোলে নিয়ে বেঞ্চে বসা লোক দেখিয়ে বললেন,”ওই যে দেখ পাত্র। বল ইসরাতের সাথে দারুণ মানাবে না?

নাছির সাহেব পাত্রকে দেখে মুখ হা করে নিলেন। যেখানে অনায়াসে এক ঝাঁক মাছি, মশা ঢুকে যেতে পারে। সুফি খাতুন প্রশস্ত হেসে চ্যাঁচিয়ে বললেন,”দেখ নাছির আমি বলেছিলাম না, তোর মুখ হা হয়ে যাবে এত হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে। কেমন লাগল ছেলেকে তোর কাছে?
নাছির সাহেব একটা কথার উত্তর না দিয়ে, হতবিহ্বল কন্ঠে জানতে চান সুফি খাতুনের কাছে,”এই ছেলে?
সুফি খাতুন উপর নিচ মাথা নাড়ালেন হ্যাঁ ভঙ্গিতে। নাছির সাহেব আবারো জানতে চান,”এই তোমার কম বয়সী ছেলে?

এবার সুফি খাতুন উৎকন্ঠিত চেহারা নিয়ে, খুশিতে ঢল নামা কন্ঠে বললেন,”হ্যাঁ!
নাছির সাহেবের মেজাজ ধীরে ধীরে চটতে শুরু করল। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুসফুস করে উঠলেন। তবু্ও উপরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলেন,”এই বয়স্ক লোককে তোমার কাছে ছেলে মনে হচ্ছে ফুপি?
সুফি খাতুন খুঁজে পেলেন না নাছিরের চ্যাত করে ওঠার মানে কী! ছেলেটার তো বয়স কম। সামনের দুটো দাঁত পড়ে গেলেও তো লোকটাকে দেখতে কত মায়াবী লাগে। একদম সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার মতো। তাই নিজের মনেরভাব মুখে প্রকাশ করে বললেন,”বয়স তো বেশি না নাছির, বড়জোর আশি বা একআশি হবে। এ-আর এমন বয়স কী? উনি তো ছেলেই। তুই চাইলে বাচ্চা ছেলে বলতেই পারিস।
কথা শেষ করে নাছির সাহেবের দিকে হাসি হাসি মুখ করে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” ইসরাতের সাথে দারুণ মানাবে না?

সুফি খাতুন নির্বিকার কন্ঠে বলা কথা শুনে নাছির সাহেব নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন। এটা নাকি কোনো বয়স না, তার একুশ বছরের মেয়েটার জন্য এই মহিলা একজন আশি বছরের লোক পছন্দ করছেন। তার মেয়ের সাথে কী এই লোকটার যায়?
সুফি খাতুন নাছির সাহেবকে কথা বলতে না দেখে বিগলিত কন্ঠে বললেন,” তোর পছন্দ হয়েছে নাছির তাহলে সবকিছু কথা-বার্তা বলে সামনে আগাই….
কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসলেন নাছির সাহেব। তারপর ধুপধাপ শব্দ তুলে, রাগে হিসহিস করতে করতে এক মূহুর্ত বিলম্ব না করে বের হয়ে গেলেন পার্ক থেকে।
সুফি খাতুন নাছিরের আকস্মিক রাগ করে চলে যাওয়া দেখে বোকা বনে গেলেন। তাই তিনি ও ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে নাছির, নাছির বলে তার পিছু ছুটে গেলেন। নাছির সাহেব সুফি খাতুনের এত পিছু ডাকের কোনো উত্তর দিলেন না। ফায়ার হয়ে চলে গেলেন নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৮ (২)

দূরে বেঞ্চে বসে থাকা নিজাম শিকদার লক্ষ করলেন আড় চোখে ঝোপের ভিতর থেকে বের হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে নাছির সাহেবের পেছন পেছন যাওয়া সুফি খাতুনকে। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ফুপি আর ভাতিজা কী করছিলেন তার রহস্য উদ্মঘাটন করতে ব্যর্থ হলেন। এই বাড়ি যেমন অদ্ভুত, এই বাড়ির মানুষগুলো তার থেকে বেশি অদ্ভুত।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here