বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৩

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৩
ইশরাত জাহান

সারাদিনে অনেক পরিশ্রম যায় দর্শনের। সব পরিশ্রম আজ তার শোভার পিছনেই গেলো।শোভাকে সেবা করতে ত্রুটি রাখেনি সে।বরং শোভা না চাইতেই অনেক কিছু নিয়ে সতর্ক থেকেছে।রাতের বেলা খাবার খেয়ে দুজনে ঘরে আসে।এতদিন এই ঘরটিতে শোভা হক জমাতে আসলেও আজকে আসতে তার লজ্জা লাগছে।দর্শনের এত যত্ন তাকে লাজুকতায় পরিণত করছে।দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইলো শোভা।দর্শন ভ্রুকুটি করে বলে,“কি হলো আসো?”
শোভা মাথা উপর নিচ করে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে আবারও থেমে যায়।দর্শন দেখলো শোভার লাজুক হাসি।শোভাকে লজ্জা পেতে দেখে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের ঘরে আনলো।দরজাটা দিয়ে শোভার দিকে ফিরে বলে,“আপনি নাকি আমার হেফাজত ম্যাডাম? তাহলে আমার হেফাজত এই রাতে ঘরের বাইরে কেন থাকবে শুনি?”
শোভা লজ্জা মুখে বিছানার দিকে এগিয়ে বিছানা ঝাড়তে নেয়।দর্শন বলে,“তোমার ঝাড়তে হবে না।আমিই করছি এগুলো।”

“আমি করলে অসুবিধা কোথায়?”
“তুমিই করবে।একটু সুস্থ হয়ে নেও তারপর।”
বলেই দর্শন বিছানা ঝেড়ে বালিশ জায়গায় রাখে।শোভা চুপ করে বিছানায় উঠে নিজ জায়গায় শুয়ে পড়ল।দর্শন লাইট বন্ধ করে দেয়।
ঘরটা অদ্ভুত নিস্তব্ধ।দর্শন আলো নেভানোর পর হালকা বাতাসে জানালার পর্দা নড়ছে।শোভা বিছানার এক পাশে কাঁথা টেনে মুখ পর্যন্ত ঢেকে রেখেছে।পাশে শুয়ে আছে দর্শন।তার দুই হাত মাথার নিচে গুঁজে।চোখে মুখে একরকম অদ্ভুত দুষ্টুমি।
একটু পরে দর্শন নিচু গলায় বলল,“তোমার কাঁথার নিচে তুমিই আছো তো?নাকি সাথে ভূতও পড়ে আছে?”
শোভা মুখ বের না করেই বলে,“ঘুমান তো।কথা বলবেন না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ঘুমাতে তো চাই কিন্তু সমস্যা হলো তোমার নিঃশ্বাসের দ্রুত ওঠানামা শুনেই ঘুম পালায়।একেকবার এত দীর্ঘশ্বাস ফেলছো আমি ভাবছি এই বুঝি ভূতে এসে তোমাকে জাপটে ধরেছে।”
দর্শনের গলায় চাপা হাসি।শোভা এবার মুখটা একটু বের করে চোখ রাঙিয়ে তাকাল।লাজুক মেয়ে কিন্তু ঝাঁঝালো গলায় বলে,“আপনার মাথায় সমস্যা আছে।এভাবে মজা করতে পারেন জানতাম না।
দর্শন হেসে বলে,“মজা করছি না সত্যিই তো!বিছানার এক কোণায় এমন করে শুয়ে আছো,যেন আমি হাত বাড়ালেই ডাক্তার ডেকে আনতে হবে!”

শোভা লজ্জায় গাল গুটিয়ে ফেলল কাঁথার নিচে। দর্শন একটু ঝুঁকে গিয়ে বলল, “তুমি জানো,তোমার লজ্জা পাওয়ার এই অভ্যেসটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক।রাতভর আমি তোমাকে ছোঁব না ঠিক করেই শুয়েছিলাম।এখন কেমন যেন ইচ্ছা করছে।এই তোমার ঐ ঘাম ভেজা লাজুক নাকটায় চিমটি কাটি!”
শোভা এবার চোখ গোল করে তাকাল।বলে,“আপনার একেবারেই মাথা খারাপ হয়েছে!”
দর্শন চোখ বন্ধ করে বলে,“তা তো আগেই জানি।না হলে তোমার মতো একটা চুপচাপ ঘোমটা টানা মেয়ের পাশে শুয়ে থেকে এত ভালো থাকতে পারি?পুরুষ মানুষ নিজেকে বউয়ের পাশে শুয়ে কন্ট্রোলে থাকে নাকি!আমার মত মাথা খারাপ ব্যক্তিরাই এমন করে।”

শোভা কিছু বলল না।চোখ ফেরাল কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে গেল।দর্শন মনে মনে বলল,“ভালোবাসি বলব না মুখে কখনও।তুমি সেটা শুনে ফেললেই তো আমার রাজত্ব শেষ।কিন্তু একটা কথা বলি শোন,শোভার নামটা যেমন কোমল তেমন তুমিও একদম ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো।”
একটু থেমে আবারও মনে মনে বলে,“ওহ,তুমি তো এটাও শুনতে পাওনি আর পাবেও না।”
শোভা কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল একেবারে।আর দর্শন বিছানায় শুয়ে হেসে উঠল নিঃশব্দে।লাজুক শোভাকে নেতিয়ে নিজেকে জয় করার এই নিঃশব্দ খেলায়।

ভোরের আলো জানালার পাতলা পর্দা ভেদ করে ঘরে ঢুকেছে।বাইরের পাখিদের ডাক যেন মিষ্টি সুরে ঘুম ভাঙাচ্ছে প্রকৃতির।দর্শন নামাজ পড়ে এসেছে।আজকে শোভা দেরি করছে।মাঝে মাঝেই কুরআনের বড় বড় সুরা পাঠ করে বলে নামাজ থেকে উঠতে দেরি হয়।দর্শন এতে অভ্যস্ত।শোভা নামাজ শেষ করে চা বানিয়ে আনে।ধীর পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল।সাদা ওড়নাটা মাথায় ঠিক করে।চোখ দুটো আধো আলোয় ঝলমল করছে।দর্শন তখনই বারান্দার পাশে চেয়ারে বসে এক হাতে চায়ের কাপ ধরে।চুপচাপ তাকিয়ে আছে শোভার দিকে।
দর্শন হালকা গলায় বলে উঠল,“তুমি যখন নামাজ পড়ো,তখন ঘরটা কেমন শান্ত লাগে জানো?”
শোভা একটু হেসে তাকায়।অতঃপর বলে,“শান্তি তো আপনার চোখে আছে।যখন চুপ করে দেখেন আমার নামাজ পড়া তখন সবকিছু বলে।”

চায়ের কাপ থেকে এক চুমুক নিয়ে দর্শন বলে,“কিছু সময় চুপ থাকা মানে গোপন কথার আভাস দেওয়া।”
শোভা বসে পড়ে পাশে রাখা ছোট টুলটায়।হাওয়ায় তার সাদা ওড়না একটু উড়ে ওঠে।সে ধীরে বলে,“কথা না বললেও কারো পাশে থাকলে যে স্বস্তি লাগে সেটাও যেনো একটা ভাষা,তাই না?”
দর্শন তাকিয়ে থাকে শোভার দিকে।চোখে একরাশ কোমলতা।তারপর হঠাৎ বলে,“তোমার বানানো চায়ের স্বাদ আজ একটু বেশি টেস্টি।মনে হচ্ছে লেমনগ্রাস বুঝেশুনে পরিমাপ করে দিয়ে বানিয়েছ।”
শোভা চোখ নামিয়ে হাসে,“আজ সকালে মনে পড়ছিল কেউ বলেছিল,লেমনগ্রাস দিয়ে চা বানিয়ে দিলে তার মন ভালো থাকে।”

দর্শনের ঠোঁটে চাপা হাসি।সে কিছু বলে না শুধু চুমুক দেয় চায়ে।একটু পরে শোভা আবার বলে,“আপনি যখন এমন চুপ করে তাকিয়ে থাকেন,মনে হয় এই বুঝি কিছু বলবেন।”
দর্শন ধীরে বলে,“সব কথা বলার দরকার হয় না। কেউ কেউ শুধু পাশে থাকলেই জীবনটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।”
দুজনের মাঝে নীরবতা।কিন্তু সেই নীরবতাতেই যেন ভালোবাসা গুনগুন করে।পাখিরা আবার ডাকছে। হালকা রোদের আলোতে শোভার মুখটা ঝকঝক করছে।
দর্শন ফিসফিস করে বলে,“আজকের সকালটা অন্যান্য সকালের থেকে সুন্দর লাগছে।”
শোভা কিছু বলে না শুধু চুপ করে চায়ের কাপটাতে চুমুক দিয়ে দর্শনের দিকে চোখ দেয়।অতঃপর দর্শনের শেষ করা চায়ের কাপটা নিতে যায়।আচমকা তাদের আঙুল একটু ছুঁয়ে যায়।সেই স্পর্শে সেই দৃষ্টিতে “ভালোবাসি” শব্দ না থাকলেও তাদের ভালোবাসা যেন আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।এরা দুজনেই মনস্থির রেখেছে ভালোবাসি না বলেও ভালোবেসে সংসার করা যায় তা এরা প্রমাণ করবে।

দুপুরের রান্নার সময় শোভা রান্নাঘরে থাকলে পারুল বেগম তা সহ্য করলেন না।অনেক বলে কয়ে পাঠিয়ে দিলেন ঘরে।অসুস্থ মেয়েটা এখন বিশ্রাম নিবে তা না করে গরমে রান্নাঘরে।ইনফেকশন বাড়লে দর্শন আবারও শুরু করবে বকাঝকা।ঘরে এসে শোভা দেখতে পায় দর্শন ল্যাপটপে কাজ করছে।শোভা ভাবছে,“আচ্ছা এই লোক কি একটু ঘুমায় না?”
ঘরের মধ্যে ঢুকে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।দর্শন পাশ ফিরে প্রশ্ন করে,“মাথা ব্যাথা করছে নাকি?টিপে দিবো?”
শোভা হঠাৎ করা প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গিয়ে উঠে বসে বলে,“দরকার নেই আমি ঠিক আছি।আম্মা পাঠালো ঘরে বিশ্রাম নিতে তাই এসেছি।”
দর্শন কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,“তুমি রান্না করতে গিয়েছিলে?”

শোভা মাথা উপর নিচ করতেই দর্শন ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,“আমি কষ্ট করে তোমার সুস্থতার ব্যাবস্থা করছি আর তুমি ন্যাকামি করে নিজের রোগ ডেকে আনছো!তোমার এবার কিছু হোক কোনো চিকিৎসা হবে না।সোজা রোগা অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকবে।অসহ্যকর মেয়ে মানুষ।”
শোভা ঠোঁট উল্টিয়ে মন খারাপ করে বলে,“বিয়ের পর আমিও বুঝতে পারছি।”
“কি?”
“অসহ্যকর পুরুষ মানুষ।”
“হোয়াট!”
“আপনি অসহ্যকর তাই বললাম।”
“আমি কি তোমাকে বিরক্ত করি?”
“না,আবার আমার সাথে স্বাভাবিকও না।”
“আমি যেটাই করেছি তোমার ভালো চেয়ে করেছি।”
“হুমমম,এটাও ঠিক।”
“তোমার কি কিছু হয়েছে?এমন বিহেভ করছো কেন?”
“আমার তো জ্বর এসেছে।”
শোভার কপাল ছুঁয়ে দেখলো।আসলেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে।দর্শন চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে বলে,“এই মেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে!”

“আমি শোভা।”
“তো শোভা কি মেয়ে না?”
“আপনার বউ।”
“আমার বউ বুঝি মেয়ে না ছেলে!”
“অবশ্যই আমি মেয়ে কিন্তু আমি আপনার বউ।”
“এই তোমার মুখ বন্ধ রাখো।মানুষ মদ খেয়ে মাতলামি করে আমার বউ জ্বর আসলে মাতলামি করে।”
“তারমানে আপনি চান আমি মদ খেয়ে মাতলামি করি?”
“একবার মদ তোমার গালে নিয়েই দেখো।তোমার ধপধপে ফর্সা চোয়াল দুটো আমি করে দিবো লাল।”
“ওটা আপনি এমনিতেও করেন।”
দর্শন শোভাকে টেনে নিজের কাছে এনে বলে,“হা করো।ঔষধ খেলেই জ্বর সেরে যাবে।”
“উহু,উল্টো আমার বমি বাড়বে।তখন আপনার গা বমিতে নোংরা হবে।আপনি আবারও পড়বেন বিপাকে।তাই তো আমি খাবো না ঔষধ।”

“তুমি মেয়েটা এমনিতেও আমাকে বিপাকে ফেলেছো।”
“আমি মেয়েটা না,আমি আপনার বউ।”
“হ্যাঁ তুমি আমার বউ,এবার ঔষধ খাও।”
“এমনভাবে বলছেন যেন এটা চকলেট?”
দর্শন ভ্রু কুঁচকে রাগ কন্ট্রোল করে বলে,“তোমার জ্বর তাই মারতে চাই না থাপ্পড়।তুমি কি আমার কথা শুনবে?”
শোভা অচেতন অবস্থায় কান্না করে দিয়ে বলে,“আপনি পারেন তো শুধু এগুলোই।”
ধীরে ধীরে শোভার উল্টো পাল্টা কথা আরও শুরু হতে চলেছে।মাত্রাতিরিক্ত পাওয়ার আলা ঔষধ খাওয়ার কারণে ঘুম বেশি হবার কথা।সেই তুলনায় খুব কম ঘুমিয়েছে।দর্শন বিপাকে পড়ে বিরক্তির সাথে বলে,“আমার নসিবেই এমন বউ জুটলো!যে কি না জ্বর আসলেই মাতাল হয়।”

শোভা শুনতে পায়।কান্না আসে ওর।শরীর গরম হয়ে আসছে আর দর্শন বলছে ও মাতাল।শোভার জ্বরের মধ্যে মনটা শুধু পাল্টাচ্ছে।কখনও রাগ বাড়ছে কখনও কান্না তো কখনও জ্ঞান হারানোর মত।অবশেষে আবারও ওয়াক করে ঢেলে দিলো দর্শনের গায়ে।নাকমুখ সিটকে নিজেকে সামলে নিচ্ছে দর্শন।হাত মুঠ করে হজম করে নিলো বউয়ের অত্যাচার।বিড়বিড় করে বলে,“পুরুষ মানুষের বউ প্রয়োজন কোন দুঃখে!এমন বউ থাকলে তার ঠিক কি কাজে লাগবে?”
শোভা অজ্ঞান হয়ে দর্শনের বুকে ঢলে পড়ে।দর্শন আচমকা শীতল হয়ে উঠল।শোভার মাথায় হাত রেখে আদুরে স্পর্শ করে ডাক দিলো,“শোভা?”

শোভার কোনো সাড়াশব্দ নেই।বেচারি অজ্ঞান হয়ে আছে।দর্শন ভাবছে,“আবার অভিনয় করে আছে না তো?”
তাই হালকা ধাক্কা দিলো।শোভার শরীর দূর্বল।এত চাবুকের আঘাত খেলে তার অবস্থা কেমন থাকতে পারে?তাও আবার মাথায় রড দিয়েও দিয়েছিল একটা আঘাত।দর্শন মনে মনে বলে,“ওদেরকে আমি মৃত্যু যন্ত্রণা দিবো।না শুধু মৃত্যু যন্ত্রণা না ওদেরকে আমি মেরেই ফেলবো।তোমার গায়ে হাত দিয়েছে কোন সাহসে?”
দর্শন মনে মনে কি বলছে নিজেও জানে না।শুধু জানে মন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিশোধের দিকে।এখন ওদেরকে আরো কঠিন শাস্তি না দিলে শান্তি পাবে না দর্শন।শোভার কষ্ট সহ্য হচ্ছে না তার।শোভাকে কোলে করে নিয়ে গেলো গোসলখানায়।দিজাকে ডাকতে চেয়েও ডাকলো না।আর কত জ্বালাবে?বউয়ের জন্য বোনকে বিরক্ত করা তাও আবার বেশি বেশি এটাও মানায় না।এছাড়া দিজা নিজেও তো ঠিকমত ঘুমায়নি।বরং রাত জেগে কান্নাকাটি করে নামাজে মোনাজাতে কান্না করে মেয়েটাও ক্লান্ত।এখন তো আবার পারুল বেগমের সাথে কাজ করছে।দর্শন কয়েকটা বড় বড় দম ছেড়ে বলে,“কাম অন দর্শন সি ইজ ইউর ওয়াইফ।এজ এ লিগান হাজব্যান্ড ইউ ক্যান ডু ইট।”

বলেই নিজেকে কঠোর করে সোজা চলে গেলো আলমারিতে।শোভার পোশাক নিয়ে এসে পাশে রেখে শোভাকে পরিষ্কার করে দেয়।দর্শনের চোখ লাল।কারণ সে নিজেকে দম আটকে রাখছে।নাহলে এভাবে সহজে শোভার পোশাক পাল্টে দেওয়া সম্ভব না।শোভার শরীর পোশাক পরিষ্কার করে শোভার জামা খুলে দেয়।আচমকা আপত্তিকর অবস্থা দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।গলা খুসখুস করছে যেনো।পানি প্রয়োজন তার।মনে মনে বলে,“এই মেয়ে আমাকে নীরব থেকেও মেরে ফেলবে।”
শোভার উন্মুক্ত বাহুতে হাত দিয়ে গোপন পোশাক খুলতে নিলেই রাগী দর্শনের হাত তরতর করে কাপতে থাকে।এটাও যে সে কোনোদিন করবে ভাবেইনি।আজ এমন পরিস্থিতির স্বীকার সে।ভেবে দেখল যত কাপাকাপি করবে তত দেরি হবে।এগুলো যখন তাকে করতেই হবে তাহলে আর দেরি কিসের?দ্রুত পোশাক পাল্টে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।আগেই দেখে নিয়েছিল বিছানার অবস্থা কি।বাইরে এসে পারুল বেগমের উদ্দেশে বলে,“আমাকে একটু স্যুপ বানিয়ে দেওয়া যাবে?”

পারুল বেগম কপাল কুঁচকে বলেন,“কেন যাবে না? বস আমি দিচ্ছি।শোভার অবস্থা কেমন রে?এখানে শুধু শুধু বসেছিল।ঘন ঘন দুলতে দেখে আমি উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
“আবারও অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে আছে।জ্বর বাড়ছে অতিরিক্ত।”
পারুল বেগম চিন্তিত হয়ে বলেন,“আবার ডাক্তার দেখাবি নাকি?”
“লাগবে না।ডাক্তার নিজেই বলেছেন এমন হতে পারে। বিষ ব্যথার কারণে শরীরে জ্বালাপোড়া বাড়লে জ্বর আসে।”
“মেয়েটাকে বিশ্রাম নিতে বলি ও আমার কথা শুনে না।অবশ্য ঘরে বসে কতক্ষন থাকা যায়?আমি নিজেও তো পারি না।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩২

দর্শন কথা বলল না।চুপচাপ সম্মতি দিলো শুধু।দীপ্ত ফরাজি এসে কথা বলছেন দর্শনের সাথে।পারুল বেগম স্যুপ দিতেই দর্শন চলে যায়।পারুল বেগম মুখ টিপে হেঁসে দিয়ে বলেন,“ছেলের উন্নতি হয়েছে।আজকাল পীড়িত করা স্বামীরাও এত যত্ন নেয়না যতটা,আমার এই রাগী ছেলে তার বউকে মানি না বলেও যত্ন নেয়।”
দীপ্ত ফরাজি মৃদু হেঁসে বলেন,“এগুলো সময় সুযোগ পরিস্থিতির সাথে মিলে হয়ে যায়।আমার ছেলের চোখে দায়িত্ববোধের সাথে ভালোবাসা দেখেছি।আমার এখন শান্তি লাগছে।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here