সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১২
Jannatul Firdaus Mithila
“ কিরে! তোরা কই ছিলি এতক্ষণ? ওদিকে মেয়েটাকে মেহেদী পড়াচ্ছে,অনুষ্ঠান চলছে।তোরা নাহয় মেহেদী না লাগাস অন্তত বোনটার সঙ্গে সময় তো কাটাতে পারিস।তা-ই না?”
মায়ের কথায় মাথা নাড়ায় রৌদ্র। পাশ থেকে অনিকের হাতটা ধরে তাকে নিয়ে যায় স্টেজের কাছে। তাদেরকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে রুহি বলে ওঠে,
“ ভাইয়া! কোথায় ছিলে তোমরা? আমি সেই কতক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য। ”
বোনের কথায় মুচকি হাসলো রৌদ্র। এগিয়ে এসে পাশে বসলো মেয়েটার।অতঃপর রুহির একহাত সামনে টেনে এনে বললো,
“ বাহ! মেহেদীটা তো বেশ সুন্দর লাগছে তোর হাতে।একেবারেই নিখুঁত! ”
ভাইয়ের মুখে এহেন প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠে মেয়েটা। আপ্লূত কন্ঠে বলে ওঠে,
“ তুমি যখন বলেছো তাহলে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর হয়েছে। আচ্ছা মেহেদীটা কি ভালো লাগছে? ”
“ হুম বেশ সুন্দর লাগছে। ”
মুচকি হাসলো রুহি।পরক্ষণেই তার দৃষ্টি আটকে পড়লো সামনে বসে থাকা অনিকের ওপর।ছেলেটা কেমন থমথমে মুখে বসে আছে। রুহি ডাকলো তাকে,
“ অনি ভাইয়া! ”
হঠাৎ ডাকে একপ্রকার হকচকিয়ে ওঠে অনিক। আশপাশে একবার এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ডাকের উৎস খুজতে লাগলো ছেলেটা। তার এমন ভাবভঙ্গিতে রৌদ্র গম্ভীর মুখে বসে থাকলেও উদ্বিগ্ন হলো রুহি।সে চিন্তিত গলায় শুধায়,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ অনি ভাইয়া? কি হয়েছে তোমার? ”
অনিক এবার দৃষ্টি তাক করলো রুহির ওপর। সন্দিহান গলায় বললো,
“ হু? কিছু বললি?”
এপর্যায়ে রুহি ভ্রুকুচকায়। বলে ওঠে,
“ কি হয়েছে তোমার? কি ভাবছিলে ওমনভাবে?”
অনিক কেমন চোর ধরা পড়ার ন্যায় কাচুমাচু করতে লাগলো। প্রসঙ্গ এড়াতে বললো,
“ নাহ! তেমন কিছু না। বাদ দে এসব। আচ্ছা দেখি তোর মেহেদীটা কেমন হয়েছে! ”
বলেই এগিয়ে আসে সে। অন্যদিকে রুহি এখনও অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অনিকের পানে।ছেলেটার চেহারায় স্পষ্ট কিছু লুকোনোর চেষ্টা।
“ যাহ! এতকষ্ট করে মেয়েটার পছন্দের মিষ্টিটা তৈরি করলাম আর এটাই কি-না মেয়েটার সামনে দিতে ভুলে গেলাম! ধ্যাত! এই ভুলোমন নিয়ে না আর পারিনা। ”
বিরক্তি নিয়ে একা একাই বিরবির করছেন রাফিয়া বেগম। এ মুহুর্তে তিনি বেশ বিরক্ত নিজের এমন ভুলোমনা কর্মকাণ্ডে। মিষ্টির থালাটা হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে লাগলেন তিনি। কিন্তু দু’পা এগোতেই মাথার ওপর থেকে আঁচলটা খসে পড়লো আলগোছে। এ পর্যায়ে আরেকধাপ বিরক্ত হলেন তিনি। বয়সের হালকা ছাপ পড়া গৌঢ় বর্নের স্নিগ্ধ সুশ্রী মুখখানায় স্পষ্ট দেখা মিললো বিরক্তির আভাস। তিনি হাতের থালাটা একহাতে নিয়ে যেই-না আঁচলটা মাথায় উঠাতে যাবেন তার আগেই কেও একজন এসে সন্তপর্ণে তার ঘোমটাটা টেনে দেয় মাথায়। রাফিয়া বেগম চকিতে দৃষ্টি ফেললো সামনে। পরক্ষণেই অতিপরিচিত মুখখানা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ ফুটিয়ে চলে যেতে নিবেন তার আগেই আবারও তার পথ আটকে দাড়ান সাব্বির সাহেব। রাফিয়া বেগম ভ্রু গোটায়। স্বামীর পানে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করেন, —- কি হলো?
সাব্বির সাহেব প্রতিত্তোরে মুচকি হাসলো। স্ত্রীর স্নিগ্ধ সুশ্রী মুখশ্রীতে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন কিয়তক্ষন। হাত বাড়িয়ে স্ত্রীর ঘামে ভেজা কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলেন আলগোছে।তারপর পকেট থেকে রুমালটা বের করে সযত্নে মুছে দিলেন স্ত্রীর ঘামে ভেজা ললাট। রাফিয়া বেগম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলেন স্বামীর যত্নে ভরা কর্মকাণ্ড। মনে মনে ভাবলেন, — কথায় আছে সময়ের সাথে সাথে নাকি ভালোবাসা কমে! কিন্তু কই?তার সাথে তো এমনটা হলো না।এই মানুষটার এহেন কর্মকাণ্ডই কি যথেষ্ট নয় উক্ত যুক্তিটাকে মিথ্যা বলার?
সাব্বির সাহেব সময় নিয়ে তাকিয়ে রইলেন স্ত্রীর পানে।অতপর মুগ্ধতা মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
“ সুন্দর লাগছে তোমায় রাফু। ”
রাফিয়া বেগম লজ্জালু হাসলেন। মুখের ওপর ছেয়ে যাওয়া রাজ্যের লজ্জাগুলো ঢাকবার ন্যায় কপট রাগী ভাব নিয়ে বললেন,
“ কিসব বলছো! কেও শুনলে কি ভাববে বলোতো? দেখি সরো আমার সামনে থেকে। ”
সাব্বির সাহেব বেশ বুঝলেন স্ত্রীর মনোভাব। তিনি মৃদু হেসে নিচু গলায় বললেন,
“ কেও শুনলেই কি? আর না শুনলেই কি?”
উঁহু উঁহু উঁহু — তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে ভেসে আসা কাশির শব্দে দুজনেই হকচকিয়ে ওঠে পেছন ফিরলেন। দেখতে পেলেন,অদূরেই দাড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকা তাশরিক সাহেব আর তায়েফ সাহেবকে। তাশরিক সাহেব বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
“ ইয়ে,মানে ভাইজান! আমরা সত্যিই কিছু শুনিনি।এমনকি দেখিওনি। তাই-না ছোট ভাইজান? ”
হুট করে নিজেকে এমন সাক্ষী ধরায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন তায়েফ সাহেব।একবার ছোট ভাইয়ের দিকে সন্দিহান চোখে তাকাতেই দেখতে পেলেন, ছোট ভাইয়ের চোখ টিপে দেওয়া সতর্কবার্তা। তিনি খানিকক্ষণ দোনোমোনো করে বললেন,
“ হ্যা,হ্যা ভাইজান দেখেছি।”
কথাটা শেষ করবার আগেই বা-হাতে জোরালো চিমটির আঘাত পেতেই সম্বিৎ ফিরলো ওনার। পরক্ষণেই জিভ কাটলেন নিজের বলা বোকা কথায়। নিজেকে শুধরে নিতে ফের বললেন,
“ না, না কিচ্ছু দেখিনি ভাইজান। শুনিওনি। ”
দেবরদের সামনে এহেন কান্ডে বেশ লজ্জা পেলেন রাফিয়া বেগম। তিনি তড়িঘড়ি করে জায়গা ত্যাগ করলেন।ইশশ্ এই বয়সে এসেও এই লোকটার জন্য এমন লজ্জায় পড়তে হলো! অন্যদিকে সাব্বির সাহেব নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করতে লাগলেন। ভাইদেরকে এখনও হাসতে দেখে একপ্রকার খেঁকিয়ে ওঠে বলতে লাগলেন,
“ এখানে এতো হাসির কি হলো বুঝলাম না! ”
তৎক্ষনাৎ হাসি থামালেন দু’জন। একবার একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আবারও ফিক করে হেসে দিলেন দু’জনে।তাদের দেখে সাব্বির সাহেব হার মানলেন।অতপর নিজেও হাসতে লাগলেন ভাইদের সাথে।
“ শিশির! ওখানে একা একা বসে আছো কেন?”
পেছন থেকে ভেসে আসা রাইসা বেগমের কন্ঠে নড়েচড়ে বসলো মেয়েটা। হাতের উল্টো পিঠে চোখদুটো মুছে নিয়ে নাক টানলো খানিকটা। পুকুর ঘাটের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে তৎক্ষনাৎ। তাকে দেখে এগিয়ে আসেন রাইসা বেগম। রঙিন বাতির টিমটিমে আলোয় মেয়েটার মলিন মুখখানা দেখে বড্ড মায়া হলো তার। তিনি হাত বাড়িয়ে মেয়েটার চিবুকে আঙুল ঠেকিয়ে মুখটা উঁচু করলেন। সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
“ কি হয়েছে তোমার? এভাবে একা বসে আছো কেন? মন খারাপ না-কি? ”
শিশির ভেজা চোখে আলতো হাসলো। বললো,
“ না ছোট আন্টি।আসলে বাড়ির গান-বাজনার শব্দে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। তাই এখানে এসে বসে ছিলাম। ”
রাইসা বেগম চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার পানে।তার চেহারায় স্পষ্ট অবিশ্বাসের ছাপ।হয়তো মেয়েটার এহেন যুক্তি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তার। তিনি এবার মেয়েটার চিবুক ছেড়ে দিয়ে কাঁধে হাত রাখলেন। নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন,
“ রোদের সাথে কোন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে? ”
তড়িৎ চোখ তুলে তাকালো শিশির। চোখেমুখে অবাকের রেশ তার। হয়তো ভাবছে, — ছোট আন্টি কি করে বুঝলো ব্যাপারটা!
রাইসা বেগম শিশিরের এমন মুখভঙ্গিতে মুচকি হাসলেন। গলায় গাম্ভীর্যের ছাপ ফুটিয়ে বলতে লাগলেন,
“ একটা সম্পর্কে এমন টুকটাক বহু ঝামেলাই হয়।তাই বলে কি এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে বোকা মেয়ে? না-কি প্রিয় মানুষটার সাথে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা সর্ট-আউট করে ফেলা উচিত? আশা করি কোনটা করতে হবে সেটা আর আমায় বলে দিতে হবে না! ”
শিশির ভেজা চোখে আবারও হাসলো। মনে মনে ভাবলো, — সত্যিই তো! রোদের সাথে সরাসরি কথা না বলে এখানে বসে থাকাটা নেহাৎ বোকামি বৈকি!
ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত রুমটা। চারিদিকে কেমন নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ক্ষনে ক্ষনে কানে এসে বাজছে কারোর ঘনঘন নিশ্বাসের উঠানামার শব্দ। খাটের পাশে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে অনিক।একহাঁটু উঁচিয়ে তারওপর হাত ঠেকিয়ে মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে ছেলেটা। কিয়তকাল বাদে ঘরের বিদঘুটে অন্ধকার ছাপিয়ে ঘরে প্রবেশ করে এক চিলতে আলো। কেও একজন সটান হয়ে দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে। অনিক সেদিকে ফিরলো না।হয়তো না ফিরেই বুঝে গিয়েছে কে হতে পারে মানুষটা।রৌদ্র দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে অনিকের কাছে আসলো। ছেলেটার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো মেঝেতে। তারপর হাত বাড়িয়ে আলতো করে অনিকের মাথাটা টেনে আনলো নিজের বুক বরাবর। একহাতে ছেলেটার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
“ এভাবে একা বসে আছিস কেন? ”
অনিকের এখন কি হলো কে জানে। সে ফট করে জড়িয়ে ধরে রৌদ্রের কোমর। ধরে আসা গলায় বলে ওঠে,
“ কেন এমনটা হলো ভাইয়া? কেন মনটা ওকেই ভালোবাসতে গেলো? আচ্ছা আমি নাহয় ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও? ও তো আমায় ভালোবাসেনা। ও যদি পরিবারের দোহাই দিয়ে আমার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দেয়? তখন আমি কি করবো ভাইয়া? কিভাবে সামলাবো নিজেকে? এই অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটার স্মৃতিগুলো কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে আমায়।আমি চোখটা একটু বন্ধ করলেই ওর স্নিগ্ধ মুখটা ভেসে ওঠে কল্পনার মানসপটে। এতোকিছুর পরও কি করে ওকে ভুলে যাবো আমি?”
থামলো ছেলেটা। হয়তো গলা ধরে আসছে তাই।খানিকক্ষণ বাদে নাক টানার শব্দ আসলো তার থেকে।সে বহুকষ্টে ফের বললো,
“ ভাইয়া! ও কি সত্যি আমায় ভালোবাসবে না? ফিরিয়ে দিবে আমায়? ফিরিয়ে দিবে আমার ভালোবাসাকে? ও আমার নাহলে কিভাবে বাঁচবো ভাইয়া?”
রৌদ্র এবার মুখ খুললো।অনিকের মাথাটা আরেকটু চেপে ধরে বললো,
“ হুঁশ! আমি থাকতে এত কিসের চিন্তা তোর? আমি থাকতে এমন কিছুই হবে না। তোর ভালোবাসা নিশ্চয়ই সফল হবে। চিন্তা করিস না। মনে রাখিস, আমি আছি!”
ব্যস! রৌদ্রের এটুকু কথাই যেন ম্যাজিকের মতো কাজ করলো অনিকের ওপর। ছেলেটা সময় নিয়ে রৌদ্রের বুক হতে মাথা উঠায়।পরপরই খাটের সঙ্গে হেলান দিয়ে, গলায় কৌতুকের রেশ টেনে বললো,
“ ভেবেছিলাম তোমার ভালোবাসার কথা জানলে পরিবারে হয়তো একটা ঝড় বইবে। কিন্তু দেখো আমার কপাল! এবার তো মনে হচ্ছে এহসান বাড়িতে একটা নয় রীতিমতো দুটো ঝড় বইতে চলেছে। ”
এমন একটা মুহূর্তে না চাইতেও হেসে ফেললো রৌদ্র। কিন্তু সে হাসির শব্দ হলোনা কোনো। ছেলেটা ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসছে নিঃশব্দে।
অনিক তখন ফের বললো,
“ যাক অবশেষে তাহলে এহসান বাড়ির ছেলে থেকে জামাই হচ্ছি খুব শীঘ্রই”
“ ধূর! কেন প্রতিবার আমার সাথেই এমন হয়? ইশশ,কি ইচিং টা-ই না হচ্ছে পিঠে। এখন কাকে বলি একটু চুলকে দিতে। ”
একা একাই উঠোনের একপাশের একটি চেয়ারে বসে বিরবির করছে অরিন।মেয়েটার আবার এই এক জ্বালা! হাতে মেহেদী লাগাতে দেরি,তার শরীরে ইচিং শুরু হতে দেরি নেই। মাঝে মধ্যে মেয়েটা ভেবে পায়না, এসব কি আদৌও এলার্জিক সমস্যা নাকি অন্যকিছু। অরিন এবার মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। পেট কেমন মোচড় দিচ্ছে ক্ষুধায়।তখন সবার সাথে তাল মিলিয়ে মেহেদী দিতে বসায় না খেয়েই বসে পড়ে মেয়েটা। এখন তার ফল ভোগ করছে। পেটে ইদুর চো চো করছে তার। আশেপাশে একবার নজর বুলালো মেয়েটা।নাহ! কাওকেই তেমন দেখা যাচ্ছে না। আর দেখবেই বা কিভাবে? সবাই তো যার যার কাজে ব্যস্ত! বাবা-চাচারা মিলে মেহমানদারীতে ব্যস্ত।মা-চাচীরা হয়তো খাবার সার্ভে। আর আশেপাশের মেয়েগুলো রুহিকে নিয়ে ব্যস্ত। অরিন এসব ভাবতে ভাবতেই একটি ক্ষুদ্র নিশ্বাস ফেলে। তখনি অনিক এসে হাজির হয় উঠোনে। বনুকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে একপ্রকার ছুটে আসে ছেলেটা।বোনের গালে আলতো হাত রেখে বললো,
“ বনু! এখানে কি করছিস? আর এমন মন খারাপ কেন তোর? কেউ কিছু বলেছে? বলে থাকলে একবার বল আমায়।”
অরিন তৎক্ষনাৎ ডানে-বামে মাথা নাড়লো।ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মেকি কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বললো,
“ ভাইয়া! খুব ক্ষুধা পেয়েছে। পেটটাও কেমন মোচড় দিচ্ছে। ”
বোনের মুখে এহেন কথায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো ছেলেটা। বোনের মুখটা দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে বললো,
“ সে কিরে! এতো ক্ষুধা পেয়েছে তবুও এখানে কেন বসে আছিস? ভেতরে চলে আসতি।আমি নাহয় আম্মু খাইয়ে দিতো।”
“ কি করে হাটঁবো বলো? আমিতো শাড়ি পড়ে ঠিকঠাক হাটতে পারিনা। শাড়িটা একটু ধরে হাটতে হয়।তাছাড়া দুহাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া যা কি-না এখনো শুকোয়নি। ”
মিনমিনে স্বরে কথাগুলো বললো অরিন।এদিকে বোনের এমন অসহায়ত্ব দেখে কষ্ট লাগলো ছেলেটার।সে কালবিলম্ব না করে অরিনকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। অতঃপর হেঁটে চলে যায় ঘরের ভেতরে।
বসার ঘরে উপস্থিত সকলে ভাইবোনের এমন কান্ডে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন।কেও কেও হয়তো ইতোমধ্যেই ফিসফাস চালাচ্ছেন নিজেদের মতো করে।
“ এই দেখি একটু সাইড দিন।আন্টি একটু সরে দাড়ান প্লিজ।এই যে ছোট বাবু একটু সাইড দাও ভাইয়া। এই আস্তে আমার বোনের মেহেদী নষ্ট হবে। ”
একের পর এক সর্তকবার্তা ছুড়ছে অনিক। উদ্দেশ্য লোক সমাগম থেকে নিজের বোনের হাতের মেহেদীটাকে অক্ষত রাখা। অরিন বেশ এনজয় করছে ভাইয়ের কোলে চড়াটা।শেষবার কবে এমন করে কালো চড়েছে মনে নেই তার।
মিনিট খানেক বাদে অনিক অরিনকে একটি চেয়ার টেনে বসিয়ে দেয়। দৃষ্টি সরিয়ে সামনে ফেলতেই চক্ষুগোচর হয় রৌদ্রকে।যে কি-না তাদের মুখোমুখি চেয়ারে বসে রুহিকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। রুহিও গালভর্তি খাবার নিয়ে মনমতো চিবুচ্ছে। অনিক একবার সেদিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পরক্ষণেই বোনের জন্য ভাত নিয়ে তাকে সযত্নে খাইয়ে দিতে থাকে।
“ রোদ ভাই! তাড়াতাড়ি চলো।অরিপু বাথরুমে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। খুব কান্না করছে আপু।হয়তো খুব ব্যাথা পেয়েছে। ”
একদমে কথাগুলো বলে থামলো পুতুল। তা শুনে মুহুর্তেই বিচলিত হয়ে ওঠে রৌদ্র। পুতুলকে একপ্রকার উপেক্ষা করে ছুটে চলে আসে বাড়ির ভেতরে। এতক্ষণ বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো ছেলেটা।গ্রাম হওয়ায় নেটওয়ার্কের ব্যাপক সমস্যা!
প্রায় ঝড়ের বেগে ছুটে আসে রৌদ্র। অরিনের ঘরের সামনে এসেই দেখতে পায় বাড়ির মানুষের উপচে পড়া ভিড়।রৌদ্রের বুকটা খানিক কেঁপে ওঠলো।চোখদুটো হয়ে ওঠে তৃষ্ণার্ত।সেই তৃষ্ণা বুঝি মেয়েটাকে না দেখা অবধি কিছুতেই মিটবে না।রৌদ্র ধীরগতিতে এগিয়ে আসে। চোখ বুলিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় অরিনকে।মেয়েটা কেমন অনিকের কোলে পড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।তার ওমন কান্না দেখে রৌদ্রের বুকটায় ধ্বক করে ওঠলো।সে জিজ্ঞেস করলো,
“ কিভাবে হয়েছে এমন? ”
অনিক মাথা তুলে তাকালো।ছেলেটার চোখদুটো কেমন লাল হয়ে এসেছে। হয়তো বোনের কান্না এবং ব্যাথা তারও হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। হয়তো সেই আঘাতে ছেলেটা নিজের অশ্রুধারা গুলো আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। অনিক গলা পরিষ্কার করে বলে উঠে,
“ বনুকে খাবার খাইয়ে ঘরে রেখে গিয়েছিলাম। এরইমধ্যে হুট করে ওর চিৎকারে ছুটে এসে দেখি ও বাথরুমের মেঝেতে পড়ে আছে।পাশেই ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।হয়তো কেটে গেছে কোথাও ”
কথাটা বলতে বলতে বেশ কয়েকবার থামলো ছেলেটা।মনে হচ্ছে, এটুকু কথা বলতেই বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চোখদুটো বন্ধ করে নিলো।হাতদুটো মুষ্টি বদ্ধ করলো অলক্ষ্যে। ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলে বললো,
“ তোমরা সবাই বাইরে যাও। আমি ওর ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছি। ”
বলেই ছেলেটা চলে যায় নিজের রুমে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিতে।
এদিকে অনিক একবার কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পরক্ষণেই কি মনে করে আর বললো না। বোনের মাথাটাকে আলতো হাতে কোল থেকে নামিয়ে বালিশে রাখলো।তারপর উঠে চলে গেলো কান্নারত মায়ের কাছে।
“ আম্মু! চলো বাইরে যাই।রোদ ভাই ওর ড্রেসিংটা করুক।”
শুনলেন না রাফিয়া বেগম। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন এক জায়গায়। আসলে মায়ের মন কি আর ওতোশতো বোঝে? স্ত্রীর এমন অবস্থা দেখে সাব্বির সাহেব এগিয়ে এলেন।স্ত্রীর কাঁধে আলতো করে হাত দিয়ে নিজের সঙ্গে করে বাইরে নিয়ে আসলেন।একে একে সকলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আলগোছে। প্রায় মিনিট খানেক পর রৌদ্র আসে। হাতের ফার্স্ট এইড বক্স আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলো বিছানায় রেখে অরিনের মাথায় আলতো হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
“ জানবাচ্চা! খুব ব্যাথা হচ্ছে? ”
আলতো মাথা নাড়ায় মেয়েটা। তা দেখে রৌদ্র আবারও প্রশ্ন করে,
“ কোথায় লেগেছে বলতো! আমি তারাতাড়ি ঔষধ লাগিয়ে দেই।”
কথাটা শুনে নড়েচড়ে বসলো অরিন। হাত দিয়ে শাড়ির আঁচলটা আরেকটু টেনে এনে বসে রইলো কাচুমাচু হয়ে। রৌদ্র ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে দেখলো সবটা।বললো,
“ এমন করলে কিভাবে হবে সোনা? একটু বল, কোথায় লেগেছে। ”
নাহ এবারেও নিশ্চুপ মেয়েটা। তা দেখে রৌদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো।গলায় গাম্ভীর্যতা ঢেলে বললো,
“ দেখ অরি! এই মুহুর্তে আমি শুধুই একজন ডক্টর। আর তুই রোগী। একজন রোগীর সেবা করাই ডক্টরের কর্ম। তাই প্লিজ কো-অপারেট উইথ মি। ”
অরিন হয়তো বুঝলো সবটা।তাইতো কেমন মিনমিনে সুরে বললো,
“ পিঠে ব্যাথা লেগেছে। ”
অরিনের উত্তর পেয়ে হাঁফছেড়ে বাচলো ছেলেটা।হাতের জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলো অরিনের পেছনে।তারপর বক্স হতে তুলো আর অ্যান্টিসেপ্টিক নিতে নিতে অরিনকে বললো,
“ দেখি আঁচলটা সরা।”
মেয়েটা কিছুক্ষণ দোনোমোনো করে অবশেষে ধীরে ধীরে আঁচলটা সরালো।ফলে উম্মুক্ত হলো মেয়েটার ফর্সা মসৃণ পিঠ।হয়তো ব্লাউজের পেছনটা বেশ উম্মুক্ত তাই।রৌদ্র থমকালো।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হৃৎপিণ্ডটা বুঝি দুয়েকটা বিট মিস করলো ক্ষনিকেই।কখন যে হাতে থাকা ভেজা তুলোটা সন্তপর্ণে হাত থেকে খসে পড়লো সে খবর কি আর আছে বেচারার? থাকবেই বা কিভাবে? তার চোখ যে আটকে গেছে সেই অপরুপ সৌন্দর্যের মহিমায়। রৌদ্র বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালালো চোখদুটোর দৃষ্টিকে একপ্রকার টেনেহিঁচড়ে সেখান থেকে সরাতে কিন্তু বেহায়াগুলো তা মানলে তো! অবাধ্য গুলো এতটাই অবাধ্য হয়েছে যে দৃষ্টি ফেরাবার নামই নিচ্ছে না। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিলো। ঠোঁট গোল করে পরপর শ্বাস-প্রশ্বাস চালালো।উদ্দেশ্য নিজেকে কিছুটা শান্ত, স্বাভাবিক করা। কিছুক্ষণ পর রৌদ্র নিজের মনের মধ্যে উত্থাপিত নিষিদ্ধ অনুভুতিকে একপ্রকার ধামাচাপা দিয়ে পেশাদারিত্বকে সামনে রাখলো।গম্ভীর গলায় বললো,
“ ব্যাথা কোথায় লেগেছে? এখানে তো নেই!”
অরিন এবার ধীরে ধীরে আঙুল তাক করলো কোমরের ঠিক কিছুটা ওপরে। তা দেখে রৌদ্রের বুঝি জান যায় যায় অবস্থা। এটুকুই কি কম ছিলো? যে এখন আরেকটু দেখতে হবে! ছেলেটা কাঁপা কাঁপা হাতের আঙুল স্পর্শ করলো সেখানটায়।তৎক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে মেয়েটা।তা দেখে সাথে সাথে আঙুলটা দূরে ছিটকে নিয়ে আসে রৌদ্র। হাতটাকে পরোখ করে দেখতে পায় তার অসহ্য কাঁপন। এ কি হচ্ছে তার সাথে? সামান্য এটুকু স্পর্শ করতেই তার এ অবস্থা? রৌদ্র এবার খামখেয়ালি ছাড়লো।চোখদুটো বন্ধ রেখে আলতো হাতে শাড়িটা আরেকটু নামিয়ে দিলো পিঠ হতে। পরক্ষণেই চোখ দুটো মেলে ধরে। সামনে তাকাতেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম ছেলেটার।বুকে শুরু হয় এক অনবদ্য তান্ডব। মেয়েটার ধনুকের মতো বাঁকানো পিঠের গড়ন যে তাকে পাগল করে দিচ্ছে। বুকে উত্থাপিত হচ্ছে এক নিষিদ্ধ চাওয়া। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে একটু ছুয়ে দিতে। রৌদ্র জানে, ও একজন ডাক্তার। পেশাদারিত্ব তার রক্তে মিশে থাকার কথা। কিন্তু আজ, এই মেয়েটার পাশে বসে, তার সমস্ত নিয়ম – শৃঙ্খলা কেমন ভেঙে যেতে চাইছে।তার চোখে চিকচিক করছে এক অদ্ভুত মনোযোগ, পেশাদারিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক নাম না জানা টান।
রৌদ্রের আঙুলে আবারও তুলো আর অ্যান্টিসেপটিক নিয়ে নিলো , কিন্তু চোখ তার এখনও আটকে আছে অরিনের ফর্সা, কোমল পিঠে। ছোট্ট এক জায়গায় আঁচড় লেগেছে, সেখান থেকেই রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু রৌদ্রের মনে হচ্ছে এই ছোট ক্ষতের চারপাশে যেন এক নিখুঁত চিত্র একে আছে। রৌদ্র খেয়াল করলো তার নাকে এসে ঠেকছে এক মিষ্টি সুঘ্রাণ। সে বোঝার চেষ্টা চালায় গন্ধটা কিসের। খানিকক্ষণ বাদে সে আবারও জোরে নিশ্বাস টেনে বুঝতে পারে এটি অরিনের শরীর থেকে আসা মিষ্টি সুবাস। যা কি-না বারবার পাগল হচ্ছে তাকে। ।
“ব্যথা করছে?” নরম গলায় জিজ্ঞেস করল রৌদ্র।
অরিন হালকা মাথা নাড়লো। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে মেয়েটার, চোখ নামিয়ে রেখেছে নিচে। এমনভাবে কেউ তার পিঠ ছুঁয়েছে আগে কখনো? এমন পরিচর্যা, এমন মনোযোগ দিয়ে আগে কেও ছুঁয়েছে তাকে? মেয়েটা পারেনা লজ্জায় মূর্ছা যেতে।
রৌদ্র যখন তুলোয় ওষুধ ভিজিয়ে হালকা করে ছোঁয়াল তার ক্ষতটায়, তখন অরিনের সর্বাঙ্গ একবার কেঁপে উঠল। মেয়েটার কাছে মনে হচ্ছে, শুধু ওষুধ নয়, এই স্পর্শে মিশে আছে একরাশ অচেনা অনুভূতি। স্নিগ্ধ, কোমল, অথচ তীব্র।
রৌদ্রের চোখও থেমে নেই। ক্ষতের বাইরে তার দৃষ্টি যেন আরও কিছু খুঁজছিলো । ছেলেটা হারিয়ে যাচ্ছিল সেই উন্মুক্ত, পবিত্র সৌন্দর্যের মধ্যে। এক মুহূর্তের জন্য ডাক্তার রৌদ্র হারিয়ে গেল নিজের অনুভুতির বেড়াজালে। যার হৃদয়ে অরিনের প্রতি গোপন এক আকর্ষণ ধুকধুক করে বাজছে প্রতি মুহুর্তে।
কিছুক্ষণ পর ড্রেসিং সারলো রৌদ্র। কাঁপা গলায় বললো,
“ শেষ! ”
কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্র অরিন পিঠটা ঢেকে নিচ্ছে ধীরে ধীরে।এ দৃশ্য দেখে রৌদ্র এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে যায়। সেই ফর্সা পিঠ, যেখানে সে একটু আগে তুলো বুলিয়েছে।তার মনে হচ্ছে, তার আঙুলগুলো যেন এখনো সেখানে ছুঁয়ে আছে। সেই কোমলতা, সেই উষ্ণতা, কেমন করে যেন মগজের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে ক্রমশ।
ছেলেটার গলায় হঠাৎ শুষ্কতা নেমে এলো।গলাটা বুঝি শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে তার।ছেলেটা কেমন হাসফাস করতে লাগলো। হৃদপিণ্ডের শব্দটা এখন নিজের কানে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে রৌদ্র।সে তো চিন্তায় আছে, বাইরে থেকে মেয়েটা না আবার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানিটা স্পষ্ট শুনতে পেয়ে যায়। হৃদয়ের একেকটা ধুকধুক যেন তার পেশাদার দেয়ালের ওপর হাতুড়ি মারছে। কেন এমন হচ্ছে? এটা কি চিকিৎসা করানোর স্বাভাবিক অনুভূতি? নাকি এটা…
না, এটা অন্য কিছু। খুব গভীর, খুব আসক্তিময় কিছু।
সে চোখ ফেরাতে পারছে না। অরিনের গায়ের হালকা মিষ্টি সুবাস, তার নিঃশ্বাসের ভারি শব্দ, তার পিঠের সেই নিখুঁত রেখা, সব মিলিয়ে ছেলেটার শরীরের ভেতর ঢেউ তুলছে অনবরত।
রৌদ্র ঠোঁট ভেজাতে চায়, কিন্তু মুখটা যেন শুকিয়ে কাঠ। আশ্চর্য! বুকের ভেতর কি আগুন জ্বলছে? না কি এই লজ্জাবতী মেয়েটার শরীর থেকে উঠে আসা নিঃশব্দ আকর্ষণ তাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে?
হাতের ওষুধের শিশিটাও পর্যাপ্ত ঠান্ডা, অথচ নিজের তালুর ভেতর যেন ঘাম জমেছে। নিঃশ্বাসটা ক্রমশ হয়ে আসছে ভারি। তার এক মন চাইছে,এই দৃশ্যটা শেষ হোক আবার একপাশে, তার মন বলছে সময়টা স্থির হয়ে যাক, এমন করেই থেকে যাক।
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১১
রৌদ্র বুঝতে পারে, ওর ভিতরটা শুধু নরম হয়ে যাচ্ছে না, সেখানে যেন এক ঝড় বইছে। শব্দহীন, বেপরোয়া, পুড়িয়ে দেওয়ার মতো।আর এই ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। সে আর বসতে পারলোনা। ব্যস্ত হাতে কোনরকম জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে হাটা ধরে। ওমনি অরিন পেছন থেকে তার একহাতের কব্জি চেপে ধরে। রৌদ্র থমকায়।চোখ দুটো বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে ছেলেটা।অস্থির গলায় বলে ওঠে,
“ আটকাস না অরি! নাহলে এখন যা হবে, তা না তোর জন্য ভালো হবে আর না আমার জন্য! ”