তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৭
তাবাস্সুম খাতুন
“আমি তো কিছু করি নি, তাহলে কেন মারতে আসছেন আমাকে?”
সিমির কথার তৌক্কা না করে নিশান হাতে একটা ছুরি নিয়ে ঘাড় এইপাসে ঐপাশে কাত করে সিমির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,,,
“মনে করে দেখ? তুই কি করেছিস?”
সিমি পিছাতে লাগলো। বেডের একদম কোনায় গিয়ে গটশত হয়ে বসে বললো,,,,
“সত্যি বলছি আমি তো কিছু করি নি। আমাকে মারবেন না প্লিজ আমি ব্যাথা পাবো। কান্না করবো।”
নিশান সিমির একদম কাছাকাছি চলে আসে। সিমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,,,
“ব্যাথা পাওয়ায় জন্যই আঘাত দেবো।আমার দেওয়া আঘাতে তরপিয়ে কান্না করবি। এইটাই তো আমি চাই।”
সিমি একই ভাবে বলছে সে কিছু করি নি। নিশান শুনলো না। সিমির ডান হাত তুলে নিয়ে সিমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে ফচ করে সিমির হাত কেটে দিলো। রক্ত ফিনকি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো। ছিটা গিয়ে পড়লো নিশানের মুখে। সিমি ব্যাথায় আর্তচিৎকার দিয়ে উঠলো। ওর চিৎকার শুনে পাশে শুয়ে থাকা নিশান উঠে বসে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি সমস্যা তোর? এই ভোরে চিৎকার করিস কেন এইভাবে?”
সিমি চোখ খুললো পাশে তাকিয়ে দেখলো নিশান বসে আছে। সিমি নিজের দুই হাত সামনে আনলো না কোন কাটার দাগ নেই। রক্ত নেই। তার মানে এইটা স্বপ্ন ছিলো। সে ঘেমে যাচ্ছে। নিশান সেইটা লক্ষ্য করে বললো,,,
“তুই ঘেমে যাচ্ছিস কেন? আর এত কাঁপছিস কেন?”
বলে সিমির গায়ে হাত দিতে গেলেই সিমি বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললো,,,,
“সাওয়ার নিতে হবে।”
নিশান ভ্রু উঁচিয়ে বললো,,,
“এত ভোরে সাওয়ার নিবি কেন? আমরা তো কিছু করিই নি!”
সিমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বললো,,,
“এইসব কি বলছেন আপনি?”
নিশান একই ভাবে বললো,,,
“তো সাওয়ার নিবি কেন? যদি বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সাওয়ার নেওয়ায় কাজটুকু কমপ্লিট করি। তারপর নিশ্চিন্তে সাওয়ার নিয়ে নিস্।”
সিমি সোজা ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে নিশান কে বললো,,,
“কি ভাষা, অভদ্র প্রতিযোগিতা হলে। ফার্স্ট প্রাইস পেতেন।”
বলে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। নিশান শুধু ভ্রু কুঁচকে সিমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তখনি তার ফোনে কল আসে। সে রিসিভ করে বেলকুনিতে চলে যাই। এইদিকে সিমি ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো,,,
“শালা স্বপ্ন আসলি তো আসলি ভালো তাই আয়। আমি আমার জামাই এর সাথে রোমান্স করছি এমন টা আয়। টা না করে, স্বপ্ন আসছে জামাই আমাকে মারছে। দূর আমার জান টা এখনো কাঁপছে না জানি ভোরের স্বপ্ন আবার সত্যি না হয়ে যাই। ওই বিদেশি কুত্তা যদি আমাকে মারে আবারো। কি জ্বালায় পড়লাম ঘুমিয়েও রেহাই দেই না।”
সকাল সাত টা বেজে পঁচিশ মিনিট। জানলার পর্দার ফাক গলে রুমের ভিতরে আলো প্রবেশ করলো। যা সামিয়ার মুখে পড়ছে। সামিয়া হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো কিন্তূ তাতেও রেহায় পাচ্ছে না। সে পাশ ফিরতে গেলো কিন্তূ তাও পারচ্ছেনা, কোন ভারী কিছু যেন তার উপরে চেপে আছে। চোখ ও খুলছে না। সামিয়া কিছু ক্ষণ অমন রইলো তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুললো। তার শরীর প্রচন্ড ভারী লাগছে। সে মাথা কাত করে দেখে কি আছে। তার চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় জিহান। যে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। সামিয়া কিছুপল তাকিয়ে থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সামিয়ার চিৎকার শুনে জিহান লাফ দিয়ে উঠে বসলো। সামিয়া নিজেও উঠে বসলো উড়না খুঁজলো কিন্তূ পেলো না। তাই দ্রুত ব্লাঙ্কেট গায়ে টেনে নিলো। জিহান সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“কি হয়েছে তোমার এইভাবে চিৎকার কর কেন?”
সামিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,,
“এই জবেদার ভাতার আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন?”
জিহান — “আমার বউ আমি জড়িয়ে ধরতেই পারি।”
সামিয়া কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,,,
“আমার বউ না কচু আমার উড়না ও নেই। সত্যি করে বলুন আপনি আমার সাথে কি কি করছেন?”
জিহান বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,,
“অঘটন ঘটিয়ে ফেলাই উচিত ছিলো। তাহলে অন্তত্য এই দোষ ঘাড়ে নেওয়া যেত।”
সামিয়া মুখ ভাঙিয়ে বললো,,,
“দেখেন কথা ঘুরাবেন নাহ। আমাকে এইখানে কেন আনলেন আমি তো অন্য রুমে ছিলাম।”
জিহান — “তোমার বিয়ে হয়েছে তাই বরের বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি কি করতে থাকবে?”
সামিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,,,
“বরের বাড়ি মানে? আমি তো এই বিয়ে মানিই না।”
সামিয়ার এই কথা শোনা মাত্র জিহান সামিয়ার কোমরের খাঁজে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে সামিয়া কে নিজের কোলে এনে বসালো। সামিয়ার ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে সামিয়ার ঘাড়ে জোরে একটা কামড় দিলো। সামিয়া ব্যাথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। জিহান কামড়ানো স্থানে গভীর চুমু দিয়ে সামিয়ার কানে ফিসফিস করে বললো,,,
“বিয়ে না মানার জন্য। আমার থেকে এইরকম দুস্টু মিষ্টি শাস্তি পাবে তুমি। লাভ বাইট দিয়ে বুজিয়ে দিলাম। এই বিয়ে টা সত্যি হয়েছে মানতে হবে।”
সামিয়া চোখ বন্ধ করে আছে। কোন কথা বাহির হচ্ছে না গলা থেকে। নিশ্বাস তাও যেন আটকে আসছে। জিহান সামিয়ার কানের লতিতে চুমু দিলো সামিয়া কেঁপে উঠলো যা দেখে জিহান সামিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,
“আমার ছোঁয়া তে তুমি কাঁপবে, আর তখনি নিজেই বিশ্বাস করবে। এই বিয়েটা তুমি নিজেই মানো।”
বলে জিহান উঠে দাঁড়ায়। সামিয়ার উদ্দেশ্য বললো,,,
“রুম থেকে যা প্রয়োজনীয় জিনিষ আছে নিয়ে চলে আসো। আজকে থেকে এইটাই তোমার রুম। এই রুমের বাইরে আমার অনুমতি ব্যাতিত। তুমি বাহির। হতে পারবে না। যাও এখন।”
বলে। জিহান ওয়াশরুমে ঢুকলো। জিহান ওয়াশরুমে ঢুকতেই সামিয়া এক দৌড়ে নিজের রুমে গেলো সেখানে আগে থেকেই সিমি বসে ছিলো। সে সামিয়াকে ঐভাবে উড়না বিহীন দৌড়ে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কিরে তোর উড়না কোন বাঁদরে চুরি করে উগান্ডা পাঠালো। সাথে কোন কুত্তা ধাওয়া করলো যে এইভাবে দৌড়াচ্ছিস?”
সামিয়া দরজা লাগিয়ে বেডে বসে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,,
“ওই জবেদার ভাতার। আমার উড়না রাতে অপহরণ করেছে। আর এখন সাদা কুত্তার ভয়ে দৌড় দিয়েছি।”
সিমি সামিয়ার বাহুতে থাপ্পড় মেরে বললো,,,
“গাধা জবেদার ভাতার জবেদার ভাতার করিস না। ঐটা তোর ভাতার। সামিয়ার ভাতার।”
সামিয়া মুখ ভাঙিয়ে বললো,,,
“চুপ কর বেডি আমার ঘাড় এখনো ব্যাথা করছে সাথে জ্বালা ও করছে।”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কেন কি হয়েছে?”
সামিয়া ন্যাকা কান্না করতে করতে বললো,,,
“ওই জবেদায় ভাতার। আমার ঘাড়ে জোরে কামড় দিয়ে বলে লাভ বাইট।”
সামিয়ার কথা শুনে সিমি জোর গলায় বললো,,,
“Really?”
সামিয়া মাথা নাড়লো ঘাড়ের কাছে থাকা চুলগুলো সরিয়ে সিমি কে দেখিয়ে বললো,,,,
“এই দেখ। এইখানে নাকি লাভ বাইট দিসে জানিস কত জ্বালা করছে।”
সিমি মুচকি মুচকি হাসছে সে বললো,,,
“ওই একটু প্রথম তো তাই। চিন্তা করিস না দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।”
সামিয়া মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।সিমি চুপচাপ বেডে বসে নিজের ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।
নিশান গার্ডেন এ আছে। তার পাশে সব বিজনেস ম্যানরা।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিশান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,,
“কালকে সন্ধ্যে ছয়টাই আমাদের বাড়িতে পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। আর সেইখানেই ডিল ফাইনাল করব আমি।”
বলে নিশান চলে যাই চৌধুরী বাড়ির ভিতরে। বিজনেস ম্যান রাও চলে যাই যে যার কাজে। এইদিকে তাজউদ্দিন, সালাউদ্দিন ও জামালউদ্দিন এরাও বিজনেস পার্টনার দের সাথে কথা বলছে। ওরা কালকের পার্টি তে যেন আসে সেই বিষয়েই কথা বলছে।
নিশান সোজা নিজের রুমে গেলো। গিয়ে সিঙ্গেল সোফাতে বসে ল্যাপটপ নিয়ে নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। জিহান নিজেও ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। কালকে পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। আরো ডিল ফাইনাল করতে হবে অনেক কাজ সেগুলো করছে দুইজন মিলে।
সেলিনা মিষ্টির রুমে নক করলো। মিষ্টি ভিতরে আসতে বললো। সেলিনা ভিতরে ঢুকলো। বেডে মিষ্টির কাছে গিয়ে বসলো। মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
“মিষ্টি মামুনি চিন্তা করিস না আর। কালকেই পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। এইবার শুধু একটু খেলা করতে হবে।”
মিষ্টি সেলিনার কোলে মাথা রেখে বললো,,,
“পারবো তো আমরা?”
সেলিনা — “না পারলে আবার চেষ্টা করবো।”
মিষ্টি — “আমার ভয় করছে খালাআম্মু।”
সেলিনা মিষ্টি কে নিজের বুকে চেপে ধরে বললো,,,
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ২৬
“কেন করছে ভয়?”
মিষ্টি — “যদি নিশান আমার না হয়।”
সেলিনা মিষ্টির মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,,,
“আরে না এমনটা হবে না। সবকিছু ঠিক থাক হবে। শুধু কালকের জন্য একটু রেডি থাক।”