সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২২
Jannatul Firdaus Mithila
বৈশাখ মাসের শেষ বিকেল। বাইরের আবহাওয়ায় একপ্রকার ভ্যাপসা গরম বিদ্যমান। শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে নানান ফুলে জাকজমকপূর্ন ভাবে সজ্জিত, রেহানের কালো প্রাইভেট কারটি এগিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে।গাড়িটি গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে শহুরে ব্যস্ত রাস্তায় উঠেছে বেশ কিছুক্ষন আগে!
চারপাশে গাড়ির হর্ন, মানুষজনের হাঁটাচলা, রাস্তার পাশে বিক্রেতাদের হাঁকডাক সব মিলিয়ে এ যেন শহুরে অতি চেনা কোলাহল।কিন্তু এতোকিছুর পরও গাড়ির ভেতরটা যেন এক টুকরো নিস্তব্ধতায় মোড়ানো। ক্ষনে ক্ষনে কানে আসছে নববধূর নাক টানার শব্দ! রুহি একমনে কেঁদে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরপর টিস্যুতে নাক ঘষে যাচ্ছে। আর তার পাশে বসা রেহান বেচারা বউকে একটা একটা টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে! এছাড়া তার আর করারই বা কি আছে? কেননা কিছুক্ষণ আগে মেয়েটাকে কান্না একটু থামাতে বলায়, মেয়েটা বুঝি আরেকধাপ বাড়িয়ে কাঁদা শুরু করলো! এতে বেচারা রেহানের বুঝি জান যায় যায় অবস্থা। এমনেই ছেলেটা বউয়ের চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা,তারওপর বউটা কেমন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে!
ফ্রন্ট সিটে ড্রাইভার একমনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছেন। পেছনে কি হচ্ছে না হচ্ছে এতে তার থোড়াই খেয়াল আছে! এতো বড় স্পর্ধা যে নেই লোকটার! রেহান বসে আছে ব্যাক সিটে, তার পাশে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রুহি। খয়েরী-সোনালী জামদানি শাড়িতে মোড়ানো শ্যামবতী, মুখে কষ্ট চাপা দেয়া একরাশ কাতরতা। গাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়েছে তার কাঁপতে থাকা আঙুলে। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুগুলো কেমন চিকচিক করছে!রুহি আপ্রাণ চেষ্টা চালায় কান্না থামানোর , তবুও পারছে না মেয়েটা।
রেহান এক চোখে ড্রাইভারকে দেখে, আরেক চোখে রুহিকে। তারপর হালকা হেসে বলে,
“এই যে শ্যামবতী! শুনছো? বিয়ের এত আয়োজন করে তারপর তোমায় নিজের করলাম।কিন্তু তোমার কান্না দেখছি থামার নামই নিচ্ছে না! বলি এখন যদি এমনি করতে থাকো, তাহলে তো আমাকেই মনে হয় কান্না শুরু করতে হবে তোমার সাথে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রুহি এহেন কথায় খানিকটা নড়েচড়ে বসলো। নাকটা আরেকটু টেনে মুখ ফিরিয়ে বললো,
“আপনি বুঝবেন না রেহান… মা’র মুখটা… বাবার মুখটা, পরিবারের প্রতিটি মানুষের চেহারা স্পষ্ট ফুটে উঠছে চোখের সামনে। আমি…”
বলতে বলতেই মেয়েটা আবারও ফুপিয়ে ওঠে। রেহান তার ডান হাত বাড়িয়ে রুহির হাতটা চেপে ধরে। কণ্ঠে তার নরম সুর ,
“বুঝি না বলছো? যেখানে তোমার চোখের জল পড়ার আগেই তোমার মনের উচাটন আমি টের পাই জান! সেখানে এটুকু কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবো না? ”
রুহি কান্না থামিয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটার স্নিগ্ধ হাসি মুখটা যেন তার সকল মন-খারাপ দূর করে দেবার জন্য যথেষ্ট! রুহিকে থামতে দেখে রেহান আলতো হাসলো।এক হাত বাড়িয়ে রাখলো মেয়েটার গালের ওপর। বললো,
“ জানো! তোমাকে কাঁদলে কিন্তু মারাত্মক সুন্দর লাগে! ”
রুহির ভিজে ওঠা চোখে লাজুক হাসলো। সে নিচু স্বরে বললো,
“ ধূর!খালি উল্টো পাল্টা কথা! সামনে ড্রাইভার এসব শুনলে কি ভাববে বলোতো?”
রেহান নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসে। রুহির দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেসে বলে,
“ সামান্য এটুকু উল্টো পাল্টা কথাই সহ্য হচ্ছে না শ্যামবতী? তাহলে রাতে যখন উল্টো পাল্টা কিছু করবো তখন কি করবেন? ”
তৎক্ষনাৎ জিভে দাত কাটে রুহি।লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো মেয়েটা।দৃষ্টি হয়ে গেলো এলেমেলো। কানদুটো দিয়ে বুঝি গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে এমুহূর্তে! গালদুটোতেও ছড়িয়ে পড়েছে রক্তাভ লালিমা। মেয়েটা কোনমতে বললো,
“ মুখে একটু লাগাম টানুন রেহান।গাড়িতে আমরা বাদেও আরেকজন আছে!”
রেহান ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো। ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছুড়লো,
“ এই সালাম ভাই! সালাম ভাই? শুনছেন? ”
নাহ! সামনে থেকে জবাব আসলো না লোকটার। তা দেখে রেহান মুচকি হাসলেও রুহি বেশ অবাক হলো। মেয়েটার এমন অবাক হওয়া দেখে রেহান মৃদু হেসে বললো,
“ সালাম ভাই কানে কম শোনেন। তাইতো তার কানে সবসময় হিয়ারিং এইড পড়া থাকে কিন্তু আজকে আমিই তাকে হিয়ারিং এইড পড়তে বারণ করেছি।আর কেন করেছি তাতো তুমি জানোই!”
প্রথম কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলেও রেহানের শেষ কথাটায় আবারও খানিকটা লজ্জায় পড়লো রুহি। মাথানিচু করে মিনমিনে স্বরে বললো,
“ সে নাহয় শুনবে না, কিন্তু ফ্রন্ট মিররে তো সবটাই দেখা যাবে!”
রেহান ভাবুক হলো। কপালে দু-তিনেক ভাজ ফেলে বললো,
“ ঠিক! একদম ঠিক। বউয়ের সাথে করা রোম্যান্স তো আর অন্যকাউকে দেখানো যাবে না।আচ্ছা একমিনিট! ”
বলেই রেহান ড্রাইভারের কাঁধে হাত দিয়ে হালকা চাপড় দিয়ে ডাকলো।ড্রাইভারও এবার ঘাড় বাকিয়ে রেহানের দিকে তাকায়। একহাতে কানে হিয়ারিং এইড লাগিয়ে বলে ওঠে,
“ জি ছোটসাব! কিছু কইবেন?”
“ হুম! সালাম ভাই, ফ্রন্ট মিররটা একটা রুমাল দিয়ে কভার করে দিনতো! বুঝেনি তো নতুন বউ পাশে,একটু-আধটু ফিলিংসের ব্যাপার আছে না!”
সালাম ভাই পান খাওয়া লালচে দাঁত গুলো বের করে একগাল হাসলো।তার এমন হাসি আর রেহানের বেখাপ্পা কথা-বার্তা শুনে লজ্জায় পড়লো রুহি। মেয়েটা শাড়ির আচলে নখ খুঁটছে বসে। সালাম ভাই রেহানের কথামতো ফ্রন্ট মিররটা রুমাল দিয়ে কভার করে দিলেন।পরক্ষণেই আবারও কান থেকে হিয়ারিং এইড খুলে গাড়ি চালানোতে মনোনিবেশ করলেন। রেহান এবার রুহির দিকে আরেকটু এগিয়ে বসলো।মেয়েটাকে নিজের বাহুডোরে বন্দী করে নিলো আলগোছে। রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“ এবার একটু আদর করি জান?”
রেহানের গাড়িটা ধীরে ধীরে এসে থামে সাজানো -গোছানো একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। রেহান নেমে আসে গাড়ি থেকে।তারপর একহাত বাড়িয়ে দেয় রুহির দিকে। রুহিও রেহানের বাড়িয়ে রাখা হাতটি চেপে ধরে আলগোছে বেরিয়ে আসে। রেহানের হাতে হাত রেখেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে বাড়ির সদর দরজার সামনে।সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন সায়মা খাতুন ( রেহানের মা) তার পাশেই আছেন রেহানের বড় খালা,ফুপি, দিদা আর কাজিনরা।রুহিকে সামনে পেয়ে সায়মা খাতুন মুগ্ধ হাসলেন। রুহির চিবুকে হাত ছুঁইয়ে চুমু খেলেন।মুগ্ধ কন্ঠে বললেন,
“ অবশেষে আমার ঘরে আমার মেয়ে হয়ে আসলে তবে!”
রুহি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো শাশুড়ীর পানে।কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটার মনে ছিলো রাজ্যের উচাটন, বারেবারে মনে উত্থাপিত হচ্ছিলো কিছু সংশয়, নতুন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারার উৎকন্ঠা! কিন্তু এ মুহুর্তে শাশুড়ীর মুখের মায়াময় স্নিগ্ধ হাসি আর স্নেহময় কথায় মেয়েটার মনের সকল সংশয় যেন ছুটে পালালো কোথাও। মনটা ছেয়ে গেলো একরাশ ভালো লাগায়। সায়মা খাতুন এবার বধূবরণ করতে লাগলেন। ধীরে ধীরে সূরা পড়ে নববধূ এবং ছেলের গায়ে ফু দিয়ে দিলেন।অতঃপর বললেন,
“ ভেতরে আসো মা!”
রুহি আলতো করে মাথা দোলায়। একপা সামনে বাড়াতেই রেহান তার ডানহাত চেপে ধরে তাকে আটকে ফেলে। রুহিও তৎক্ষনাৎ থেমে যায়। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো রেহানের দিকে। এমন কান্ডে সায়মা খাতুনসহ বাকিরাও হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে। সায়মা খাতুন সন্দিগ্ধ কন্ঠে বললেন,
“ কি হয়েছে রেহান?”
রেহান একবার মায়ের দিকে তাকায়। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে চমৎকার হেসে বলে ওঠে,
“ আমার মন পিঞ্জিরায় যার আগমন রানীর মতো হয়েছিল, আমার বাড়িতে তার আগমন এতো সহজে কিভাবে হবে মা? রানীকে তো রানীর মতোই ভেতরে নেওয়া উচিত তা-ই না? ”
সায়মা খাতুন হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে আছেন ছেলের পানে।হয়তো বুঝতে চেষ্টা করছেন ছেলের পরবর্তী পদক্ষেপ! শুধু যে তিনিই এভাবে তাকিয়ে আছেন তা নয়, রুহিও যে সরু চোখে তাকিয়ে রেহানের পানে।মেয়েটা কিছু বুঝে ওঠতে যাবে তার আগেই তাকে ফট করে পাঁজা কোলে তুলে নেয় রেহান।ঘটনার আকস্মিকতায় ভড়কে যায় রুহি।চট করে খামচে ধরে রেহানের গলার কাছের পাঞ্জাবির অংশ। এদিকে ছেলের এহেন কান্ডে মুখ টিপে হাসছেন সায়মা খাতুন। মুখে শাড়ির আচল গুঁজে সরে দাড়ান দরজার সামনে থেকে। পাশ থেকে রেহানের দাদীতো টিপ্পনী কেটে বলেই ফেললেন,
“ আরে! পোলাডা দেহি এহনি বউ পাগল হইয়া গেসে!”
পাশ থেকে আরেকজন কাজিন বললো,
“ উফফ! ভাই তো সেই রোমান্টিক! ”
কেও কেও ফিসফিস করে বলছেন,
“ ভাবি জিতছে!”
এতো শতো কথার কোনটাই গায়ে মাখলো না রেহান।সে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে রুহিকে নিয়ে আসে বাড়ির ভেতর। মেয়েটাকে ড্রয়িং রুমে না বসিয়ে সিড়ি ভেঙে উপরে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সে।তা দেখে পেছন থেকে রেহানের ফুপি আসমা বলে ওঠেন,
“ আরে! বাবুন কি করছিস? বউকে এখনি উপরে নিয়ে যাচ্ছিস কেন? এখনও তো ওর সাথে সকলের পরিচয়টাই হলোনা! ”
রেহান দুটো সিঁড়ির ওপর পাদু’টো থামালো। পেছনে না ফিরেই ফুপির উদ্দেশ্যে বললো,
“ সারাদিন মেয়েটার ওপর অনেকটাই প্রেশার গিয়েছে ফুপি।এখন আবার ওকে এখানে বসিয়ে রেখে কষ্ট দেবার কোন মানে হয়না।হয়তো মেয়েটা মুখ ফুটে নিজের অস্বস্তির কথা বলবে না কিন্তু আমি জানি সেটা! স্বামী হিসেবে ওর মনের সকল অস্বস্তির অবসান ঘটানো আমার দায়িত্ব।তাছাড়া আমার বউ তো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না, ও এখন থেকে এ বাড়িতেই থাকবে তাই তোমরা অন্য যেকোনো সময় ওর সাথে পরিচিত হতে পারবে। তাই এখন ওর রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। ”
কথাগুলো শেষ করেই গটগট পায়ে মেয়েটাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো রেহান।অথচ তার এহেন কথায় যে পেছনে থাকা আসমা বেগমের মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে সে খবর কি আছে ছেলেটার?
আসমা বেগম ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললেন।মুখ কুচকে ভাবির কাছে গিয়ে বললেন,
“ দেখেছো ভাবি? ছেলেটা এখনি কেমন বউয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে! বলি এখন থেকেই টাইট দিও, নাহলে ছেলে কিন্তু হাত থেকে ফসকে যাবে।”
সায়মা খাতুন ননদের কথায় মৃদু হাসলেন। শাড়ির আচলে মুখ-গলার ঘামগুলো মুছে নিয়ে বললেন,
“ ছেলে যদি বউয়ের পক্ষ না নেয় তাহলে কার পক্ষ নেবে আসমা? আমি ছেলে জন্ম দিয়েছি, হাতের কোন পুতুল নয় যে কিনা মায়ের কথামতো নাচবে। তাছাড়া আমার রেহান কোন মেরুদণ্ডহীন পুরুষ নয় যাকে কি-না আমার টাইট দিতে হবে।আর রইলো বাকি রুহির কথা! দেখো আসমা, আমি রেহানকে বিয়ে করিয়ে এ বাড়িতে বউ নয় মেয়ে এনেছি। আর আমার মেয়ের যেটায় সুবিধা আমি সেটাই করবো। আমার মেয়েকে কেও কষ্ট দিলে,কিংবা কষ্ট দেবার চেষ্টা করলেও আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না এটা মনে রেখো!”
এহেন কথায় আসমা বেগমের হাসি মুখটা হঠাৎ করেই থমথমে হয়ে আসে। তিনি কিছু না বলে চলে যান সায়মা খাতুনের সামনে থেকে। মনে মনে ভেংচি কেটে বলতে থাকে,
“ যেমন শাশুড়ী, তেমন বউ।কোন কুক্ষণে যে ভাই এমন একটা বউ ঘরে তুলেছিলো কে জানে?”
রুহিকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসে রেহান।রুহি চারিদিকে একবার আড়চোখে নজর বুলালো। পুরো রুম জুড়ে ফুলের সমারোহ। কি সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা! রুহি খানিকটা লজ্জা পেলো। মুখটা নামিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। রেহান আড়চোখে সবটাই পরোখ করলো। মৃদু হেসে রুহিকে খাটে বসিয়ে নিজেও তার সামনে বসে পড়ে। অতপর মেয়েটার দিকে ঘোরলাগা নয়নে তাকিয়ে হঠাৎই বলে ওঠে,
“ আচ্ছা শ্যামবতী! তোমার ভাই তো আমাকে রীতিমতো থ্রেট দিয়েছিল, আমি যেন বিনা কারণে তোমার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রুও না ঝড়াই।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে কথাটা রাখতে পারবোনা! ”
রুহি এবার খানিকটা সরু চোখে তাকিয়ে রইলো রেহানের দিকে। মিনমিনে স্বরে বললো,
“ মানে?”
রেহান দুষ্ট হাসলো। তার চোখেমুখে লেপ্টে গেলো একরাশ মাদকতা। সে কেমন ঘোরলাগা কন্ঠে বললো,
“ কিভাবে রাখবো বলো? আজ তো আমি আমার বউকে সারারাত কাঁদাবো! ”
কোথাও খুশির আমেজ জমে একাকার, তো কোথাও মন খারাপের আঁধার! এই যেমনটা হচ্ছে এহসান বাড়িতে। জুবাইদা বেগমতো সেই কখন থেকে মেয়ের ছবি,গায়ের ওড়না বুকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদেই যাচ্ছেন, আর থামবার জো নেই! রাফিয়া বেগমও ভেজা চোখ ক্ষনে ক্ষনে শাড়ির আচলে মুছে যাচ্ছেন। মেয়েটা তো তারও বেশ আপন ছিলো! রাইসা বেগম বিয়ের ভিডিওগুলো একটু একটু করে দেখছেন আর রুহিটার ছবির স্ক্রিনে আলতো করে চুমু খাচ্ছেন। পাশ থেকে মাইমুনা বেগম লালচোখে বসে আছেন গম্ভীরমুখে।
সাব্বির, তায়েফ এবং তাশরিক এহসান একযোগে বসে আছেন বড় ভাইয়ের রুমে। খাটের একপাশে কবির সাহেব অন্যপাশে তার তিনভাই। কবির সাহেবের হাতে রুহির একখানা হাতের চুড়ি।হয়তো কোন একজায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি! কবির সাহেব গম্ভীর মুখে আলতো হাসলেন। চোখের কার্নিশে জমে থাকা নোনাধরা কেমন চিকচিক করছে! তিনি আবেগময় কন্ঠে বললেন,
“ জানিস তোরা? আমার রুহিটা না ছোট থেকেই বড্ড মুখচোরা! ওর যদি কোনদিন কিছু লাগতো,তাহলেও মুখ বুজে থাকতো।খুব সহজে বলতো না! এই যে চুড়িটা দেখছিস! এটা রুহির ১৫-তম জন্মদিনে তায়েফ দিয়েছিলি।মেয়েটা আমার যা খুশি হয়েছিলো না! কিন্তু হুট করেই একটা চুড়ি হারিয়ে যাওয়ায় সে-কি মন খারাপ মেয়েটার। রাগে-অভিমানে আর কোনদিন চুড়িই পড়লো না বোকা মেয়েটা। এই দেখ না, এই চুড়িটা এখনো কেমন শূন্য হয়ে এখানেই পড়ে আছে অথচ আমার মেয়েটা আজ অন্যের ঘরে। ”
কথাগুলো বলতে বলতে কখন যে মানুষটার চোখ গড়িয়ে একফোঁটা অশ্রু টুপ করে পড়ে গেলো সেটা টেরই পেলেন না তিনি! চুপ করে মেয়ের চুড়িটার দিকে তাকিয়ে আছেন একমনে। পাশে বসে থাকা ভাইয়েরাও মৌন রইলো এহেন কথার পিঠে। আসলেই তো! ঠিক কি বলবেন তারা? মেয়ে বিদায় দেবার মতো কঠিন মুহূর্ত কি আর একটাও আছে কোন বাবার জন্য? বড় ভাইয়ের আলগোছে লুকিয়ে ফেলা অশ্রুসিক্ত লোচন বেশ ধরা খেলো সাব্বির সাহেবের কাছে।তিনি থমথমে মুখ করে বসে রইলেন নিজ জায়গায়। দৃষ্টি তার ফ্লোরে নিবদ্ধ! গলাটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা হয়ে এসেছে তার। হয়তো বুকের কোথাও একটা চিনচিনে ব্যাথাও হচ্ছে বেশ। তিনি যে বড় ভাইয়ের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। তারও তো একদিন মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে, বিদায় করতে হবে নিজের কলিজার টুকরোকে।সেদিন তারও কি এমন হাল হবে? না-কি এরচেয়েও খারাপ?
পুরো উঠোনের প্যান্ডেল খোলা হলো এতক্ষণে। আশপাশের লোকগুলো ডেকোরেশনের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের মতো করে। অনিক আর রৌদ্র এতক্ষণ সবটাই হাতে হাতে ঠিকঠাক করেছে।এখানকার কাজগুলো শেষ করলেই শেষ! এইতো কালকের মধ্যেই তাদের সবাইকে আবারও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে কেননা বৌভাত তো ঢাকাতেই হবে। রৌদ্র সকলের কাজগুলো তদারকি করছে।তখনি তার ফোনটা বেজে ওঠে। সে পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে। অতঃপর কথা বলতে বলতে পুকুর ঘাটের দিকে চলে আসে। অনিক একবার আড়চোখে দেখলো সবটা। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ টানে সে। কিয়তক্ষন বাদে সেখানে উপস্থিত হয় শিশির। মেয়েটা হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। উদ্দেশ্য, অনিকের মনোযোগ টানা!
অনিক ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।শিশিরকে দেখতে পেয়ে ভ্রু-গোটায়। অতঃপর মেয়েটাকে একপ্রকার উপেক্ষা করে আবারও সামনে তাকিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে। শিশির যেন এতে বেশ আহত হলো। অনিকের থেকে এমন উপেক্ষা যে মোটেও আশা করেনি সে। শিশির আহত গলায় বললো,
“ অনিক! তুই আমায় এভাবে ইগনোর করছিস কেন?”
অনিক নিজের কাজ থামালো। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরলো সে। পরক্ষণেই দেখতে পেলো, শিশিরের হাতে একগাদা লাগেজ। অনিক একবার সেদিকে তাকিয়ে আবারও ভ্রুকুটি করে তাকায় শিশিরের পানে।গম্ভীর গলায় শুধায়,
“ ইগনোর করছি না, কাজ করছি।বাই দা ওয়ে, তোমার হাতে এতো লাগেজ কেন? কোথাও যাচ্ছো না-কি? ”
শিশির আহত হাসলো।গলায় একরাশ তাচ্ছিল্য এনে বললো,
“ আমার যাওয়া কিংবা না যাওয়ায় কি কারো কিছু আসে যায় অনিক? সবাই তো নিজেদের মতো ব্যস্ত!”
শিশিরের এহেন কথার কিছুই বোধগম্য হলোনা অনিকের।সে কেমন বিরক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো শিশিরের দিকে। তা দেখে শিশির আবারও স্মিত হাসলো। বললো,
“ বিরক্ত হচ্ছিস? আচ্ছা, ঠিক আছে। তোকে আর বিরক্ত করবোনা। তুই বরং আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দিস কেমন?”
“ কি কাজ?” — ফটফট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো অনিক। শিশির এবার শুকনো ফাঁকা ঢোক গিলে। চোখের কোণে জমে থাকা পানিগুলোকে হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বলে,
“ আমি চলে যাচ্ছি! তুই শুধু এটুকুই রোদকে জানিয়ে দিস কেমন?”
কুঁচকে থাকা ভ্রু আরও খানিকটা কুঁচকে আসে অনিকের। তৎক্ষনাৎ বলে ওঠে,
“ এটা আমি কেন বলতে যাবো? তোমার ভালোবাসার মানুষ, তুমি গিয়ে বললেই পারো!”
এবার বুঝি তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে শিশিরের ঠোঁটে। মেয়েটা তার ভেজা চোখদুটো ক্ষনে ক্ষনে মুছেও বুঝি শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। সেকেন্ডের ব্যাবধানে তা যেন আবারও ভিজে ওঠছে। শিশির ধরে আসা গলায় বললো,
“ ভালোবাসা! হাহ! হাসালি অনিক।যেই মানুষটার হৃদয় জুড়ে অন্যকারোর বসবাস, তার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজতে চাওয়া শুধুই বিভ্রান্তি! ”
শিশিরের এমন কথায় যারপরনাই অবাক হলো অনিক।সে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। অবাক গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,
“ মানে?”
শিশির আহত হেসে আবারও বললো,
“ মানেটা খুব সহজ অনিক! রোদের জীবনে আমি নই,অন্য কেও আছে।যাকে কি-না সে পাগলের মতো ভালোবাসে। যার কথা মনে করে সে আনমনেই হাসে। যাকে সে বয়ে বেড়ায় নিজের শয়নেস্বপনে, প্রতিমুহূর্তে! ও যেদিন বলেছিলো ও তার আত্মীয়র মধ্যেই কাওকে ভালোবাসে, বিশ্বাস কর! আমি সেদিনই ভেবেছিলাম ও আমায় ভালোবাসে। কিন্তু নাহ! আমার ধারণা একেবারেই ভুল বেরুলো অনিক।একেবারেই ভুল!”
কথাগুলো শেষ করার আগেই হু হু করে কেঁদে ওঠে শিশির। কাঁদতে কাঁদতে নিজের মুখ ঢেকে নেয় দু’হাতে। আর অনিক? ছেলেটা কেমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছে। হতবাক মন বারেবারে শুধু এটাই বলছে, — অনিক!তুই তাহলে এতোদিন ভুল বুঝেছিস রোদ ভাই কে। ভুল বুঝে যা নয়-তাই শুনিয়েছিস মানুষটাকে।
নিজের মনের এহেন বক্তব্যে নিজেকেই বেশ ছোট মনে হলো অনিকের। চোখেমুখে লেপ্টে গেলো অপরাধের ছাপ! মনে এসে ভিড় জমিয়েছে একরাশ অপরাধবোধ। ছেলেটার মাথাটা তৎক্ষনাৎ নুইয়ে গেলো। চোখদুটোর কোটরও ভরে এলো আলগোছে। সে আর সেখানে দাঁড়ালো না। একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো পুকুর ঘাটের দিকে। এদিকে শিশির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো অনিকের যাওয়ার পথে।
চারিদিকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে বেশ কিছুক্ষন আগে। তাইতো চারিদিকে নিস্তব্ধতার পাশাপাশি অন্ধকারও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনিক এমন বিদঘুটে অন্ধকারের মাঝেও ধীর পায়ে এগিয়ে আসে রৌদ্রের নিকট। রৌদ্র এখনও ফোনে কথা বলছে। মিনিটের ব্যাবধানে অনিক এসে রৌদ্রের পাশাপাশি দাঁড়ায়।কথা বলার একফাঁকে রৌদ্র আড়চোখে খেয়াল করলো পাশে।পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে আবারও সামনের অন্ধকারে নিবদ্ধ করে কথা চালিয়ে গেলো নিজ উদ্যোগে। পাশে দাড়ানো অনিক বারেবারে ঢোক গিলছে। মনে মনে কথা গোছাচ্ছে বেশ! কিছুক্ষণ পর রৌদ্রের কথা শেষ হলো। ফোনটা পকেটে পুরে অনিকের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“ কি চাই? কিছু বলবি না-কি? ”
অনিকের কি হলো কে জানে? ছেলেটা ফট করে জড়িয়ে ধরলো রৌদ্রকে।হঠাৎ আক্রমণে খানিকটা পিছিয়ে যায় রৌদ্র। একহাতে অনিকের পিঠ চাপড়িয়ে বললো,
“ কি হলো আবার? এমন করছিস কেন?”
তৎক্ষনাৎ জবাব এলোনা অনিকের থেকে। কিয়তক্ষন বাদে নাক টানার শব্দ আসলো তার থেকে। রৌদ্র হকচকায়।জোর করে অনিককে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ছেলেটার মুখ বরাবর ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। দেখতে পায় সুদর্শন যুবকটার লাল হয়ে আসা কান্নামাখা মুখ।রৌদ্র অনিকের এমন হাবভাবে কিছুটা অস্থির হলো। বললো,
“ এই অনি! কি হলো তোর? হুট করে কাঁদছিস কেন? ইকরার কথা মনে পড়েছে তোর? ঠিক আছে, চল এক্ষুনি তোর দেখা করিয়ে নিয়ে আসি!”
বলেই ছেলেটার একহাত চেপে সামনে এগুতেই যাবে তার আগেই পেছন থেকে রৌদ্রের হাতটা টেনে ধরে অনিক।রৌদ্র আবারও পেছনে ঘুরলো। তখনি সে শুনতে পেলো অনিকের মোটা হয়ে আসা কন্ঠ!
“ আমায় মাফ করে দাও ভাইয়া!”
কথাটার সঠিক ভাবার্থ বুঝলোনা রৌদ্র। সে ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
“ হঠাৎ মাফ চাইবার কারণটা কি?”
অনিকের দৃষ্টি এখনো মাটিতে। ছেলেটা বুঝি রৌদ্রের সাথে দৃষ্টি জোড়া দেবার ক্ষমতাও হারিয়েছে।
“ আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম ভাইয়া! শিশিরের কথানুযায়ী আমিও ভেবেছিলাম তুমি সত্যিই হয়তো শিশিরকে ভালোবাসো আর আমার বনুর সাথে টাইমপা….”
কথাটা শেষ করবার আগেই তার মুখের চোয়াল সজোরে শক্ত হাতে চেপে ধরে রৌদ্র। অনিক ভড়কে যায়। দূর হতে আসা ক্ষীণ আলোয় রৌদ্রের রাগের প্রকোপে শক্ত হয়ে আসা দৃঢ় চোয়াল দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে যায় নরম মনের ছেলেটা। পরক্ষণেই শুনতে পায় রৌদ্রের কাঠকাঠ কন্ঠে বলা কথাটা!
“ তুই আমার ভাই দেখে, এই কথাটা বলার পরও তোর মুখটা এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। তোর জায়গায় যদি অন্যকেউ থাকতো, তাহলে আই সয়্যার এখনই তার মুখটা ভেঙে গুড়িয়ে দিতাম।”
কথাটা শেষ করে তৎক্ষনাৎ অনিককে ছেড়ে দেয় রৌদ্র। অনিক বেচারা ছাড়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বুকে থুতু ছিটিয়ে, বুকে হাত ডলতে থাকে। ফর্সা মুখশ্রীতে হয়তো ইতোমধ্যেই শক্ত আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে কিন্তু সেদিকে যেন বিন্দুমাত্র পাত্তা নেই ছেলেটার।সে আছে নিজের ভয় পাওয়া মনটাকে শান্ত করতে। এদিকে রৌদ্র ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলছে।হয়তো রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টায় তৎপর সে।অনিক আড়চোখে দেখলো সবটা। পরক্ষণেই বললো,
“ সরি ভাইয়া! এই শেষবারের মতো মাফ করে দাও। আর কোনদিনই এমনটা হবে না।কথা দিচ্ছি!”
নাহ! এহেন কথাতেও রৌদ্রের হাবভাবে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষিত হলোনা। রৌদ্র মাথার চুলগুলো পেছন দিকে টেনে ধরে ঘাড় নিচু করে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষনের নিরবতাকে ছাপিয়ে শোনা যায় রৌদ্রের কন্ঠ!
“ছেলেবেলার দাগ কাটা খাতার পাতায় যেমন নাম লিখে রাখা হয়, ঠিক তেমন করেই আমি তার নামটা হৃদয়ের ভেতর লিখে রেখেছি… সময় বদলেছে, আমরা বড় হয়েছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে কিন্তু আমার ভালোবাসা! এটা যে সেই শৈশবেই আটকে আছে… কেবল তোর বোনের জন্য। আর তুই কি-না বলছিস আমার হৃদয়ে ঝড় তোলা প্রথম মায়াবীনীর জন্য আমার অনুভুতি নেহাৎই টাইমপাস? ”
আবারও মাথানিচু করে ফেলে অনিক।কথা আটকে আসছে তার।এরূপ স্বীকারোক্তির পিঠে বলার মতো কোন ভাষা আদৌও কি জানা আছে তার? নাহ! জানা নেই তো। ছেলেটা মাথানিচু রেখে কান্না আটকাবার বৃথা চেষ্টায় মগ্ন। তখনি তার কাঁধে হাত রাখে রৌদ্র! অনিকও প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চোখ তোলে ওপরে। রৌদ্র বললো,
“ প্রথমবার এমনটা বলেছিস, দুঃস্বপ্ন ভেবে মাফ করে দিলাম কিন্তু দ্বিতীয়বার এমনটা স্বপ্নেও চিন্তা করিস না অনিক! তা নাহলে আমি হয়তো ভুলে যাবো তুই আমার ভাই! ”
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২১
অনিক সবটা শুনলো কি-না কে জানে! সে রৌদ্রের কথা শেষ হবার আগেই বলে ওঠে,
“ হ্যা ভাইয়া, কথা দিচ্ছি আর ভুল হবে না! ”
রৌদ্র গম্ভীর মুখেই আলতো হাসলো। অনিকের দিকে একবার তাকিয়ে জায়গা ত্যাগ করলো গটগট পায়ে।