সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৩

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৩
Jannatul Firdaus Mithila

রাত্রি খুব একটা হয়নি।এইতো সবে সাড়ে ন’টা বাজে! রৌদ্র গটগট পায়ে বসার ঘরে ঢুকে। অদূরেই দৃষ্টি ফেলে মায়ের ক্রন্দনরত মলিন মুখটা দেখতে পেয়ে, বুক চিড়ে একটা ক্ষুদ্র নিশ্বাস বেরিয়ে আসে তার! রৌদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে আসে মায়ের কাছে। আলতো হাত বাড়িয়ে মায়ের মাথার ওপর চুলগুলো আলগোছে গুছিয়ে দিয়ে বললো,
“ এখানে এভাবে বসে না থেকে, ঘরে গিয়ে একটু রেস্ট নাও মা!”
জুবাইদা বেগম মাথা তুললেন।ছেলের দিকে নিজের ছলছল চোখজোড়া নিবদ্ধ করে তাকিয়ে রইলেন কিয়তক্ষন। পরক্ষণেই হু হু করে কেঁদে ওঠে ছেলের কোমর জড়িয়ে ধরেন তিনি। রৌদ্রও মা’কে জড়িয়ে ধরে আলতো হাতে। মায়ের মাথার ওপর চিবুক ঠেকিয়ে নরম সুরে বলে,

“ কেঁদো না মা! বুড়ির জন্য দোয়া করো।ও যেন ঠিকমতো সংসারটা করতে পারে।”
জুবাইদা বেগম ছেলের বুকে মাথা রেখেই নাক টানলেন। ধীরে ধীরে মাথা উঠিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন আবারও। রৌদ্র সযত্নে দুহাতের সাহায্যে মায়ের ভিজে থাকা আঁখিদ্বয় মুছে দিলো। বললো,
“ আর কেঁদো না। পরে আবার মাথা ব্যাথা হয়ে যাবে।”
জুবাইদা বেগম মাথা নাড়ালেন। শাড়ির আচলে চোখ মুছলেন আলগোছে। রৌদ্র এবার পাশে বসা রাফিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ মেজো মা! তুমিও ঘরে গিয়ে একটু রেস্ট নাও। সারাদিন তো আর কম খাটাখাটুনি করলে না।”
রাফিয়া বেগম ভেজা চোখে হাসলেন।মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রৌদ্র আবারও বলে ওঠে,
“ নাহ! তোমার আর কোন কথা শুনছিনা। দেখি ওঠো এখান থেকে।”
বলেই ছেলেটা রাফিয়া বেগমের হাত টেনে উঠিয়ে দেয়। তারপর তার একহাত চেপে ধরে সিড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ যাও! এখন আর নিচে নামার প্রয়োজন নেই। ”
অগত্যা রৌদ্রের এমন জোর দেওয়া কথায় একপ্রকার হার মানলেন রাফিয়া বেগম। তিনি বিমুগ্ধ নয়নে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে, আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তার। তারপর আড়চোখে অদূরের চেয়ারে অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকা জুবাইদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ মায়ের খেয়াল রাখিস বাবা!”
রৌদ্র মেজো মা’কে আশ্বাস দিয়ে বলে ওঠে,
“ তুমি চিন্তা করো না মেজো মা! আমি আছি মায়ের পাশে।”
রৌদ্রের এহেন কথায় স্মিত হাসলেন রাফিয়া বেগম। প্রিয় বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটি নিশ্বাস ফেলে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে। তার চলে যাবার পর রৌদ্র ফিরে আসে মায়ের কাছে। ব্যস্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“ চলো মা। তোমায় ঘরে যাই!”

জুবাইদা বেগম দূর্বল শরীরটা খানিক নাড়িয়ে, দু-হাঁটুতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াঁন। এই বয়সটার এই এক জ্বালা! কোথাও একটু বসলেই হয়, ওমনি হাঁটুর গিঁটের ব্যাথায় শরীর যেন আসাড় হয়ে আসে তার। রৌদ্র মায়ের এহেন পরিস্থিতি দেখে কালবিলম্বহীন মা’কে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ এমন হওয়ায় হকচকিয়ে ওঠেন জুবাইদা বেগম। ছেলের দিকে হতবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,
“ কি করছিস টা কি বাবা? পড়ে যাবো তো! নামিয়ে দে রোদ।আমার ভয় লাগছে!”
রৌদ্র শুনলোনা মায়ের কথা। কোনপ্রকার তোয়াক্কা না করে মা’কে কোলে তুলে নিয়ে আসে মায়ের রুমে। সর্তক হাতে মা’কে বিছানার হেড বোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় সে।অতঃপর বলে ওঠে,

“ কোন কথা না বলে চুপচাপ বসো এখানে, আমি আসছি।”
রৌদ্র কথাটা শেষ করে চলে যেতে নিলে জুবাইদা বেগম ছেলের বা’হাত চেপে ধরেন।রৌদ্র সাথে সাথে থেমে যায়। ঘাড় বাকিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।পরক্ষণেই শুনতে পেলো মায়ের দূর্বল কন্ঠ!
“ কোথায় যাচ্ছিস বাবা?”
মায়ের কথার প্রতিত্তোরে মুচকি হাসলো রৌদ্র।হাতের ওপর থেকে মায়ের হাতটা ছাড়িয়ে বললো,
“ আসছি, এক মিনিট! ”
বলেই সেখান থেকে চলে যায় রৌদ্র। এদিকে ছেলের যাওয়ার পথে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন জুবাইদা বেগম। খানিকক্ষণ সময় বাদে, রৌদ্র
ফিরে আসে ঘরে। হাতে তার খাবার ট্রে। রৌদ্র খাবার ট্রে -টা টেবিলের ওপর রেখে সেখান থেকে খাবার ভর্তি প্লেটটা হাতে তুলে নেয়। অতপর মায়ের সামনে বসে দক্ষ হাতে খাবার মাখাতে লাগলো সে। তা দেখে জুবাইদা বেগম মাথা নাড়ালেন।

“ বাবা! আমার এখন একদমই খেতে ইচ্ছে করছে না’রে। প্লিজ তুই খাবারটা রেখে দে রোদ।”
রৌদ্র এবারেও কানে তুললো না মায়ের কথা। সে একমনে মেখে যাচ্ছে খাবার। তারপর লোকমা তুলে মায়ের মুখের সামনে ধরে বলে ওঠে,
“ দুপুরেও খাওনি তুমি! হয়তো ভেবেছো, ছুটোছুটির মধ্যে থাকলে কেও হয়তো সেদিকে খেয়াল করবেনা তাইতো? দেখো মা, না খেয়ে থাকলে কি আর দুঃখ কমবে তোমার? কাঁদার জন্য হলেও তো কিছুটা শক্তি প্রয়োজন তাই-না? তাই বলছি একটু খেয়ে নাও।তারপর নাহয় মন ভরে আবারও কেদোঁ কেমন?”
ছেলের এহেন কথায় না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললেন জুবাইদা বেগম। ভেজা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আলতো করে গালে হাত রাখলেন। মুগ্ধ কন্ঠে বললেন,
“ বেশ কথা শিখেছিস তো বাবা! কি দারুণ করে মানুষের মন খারাপগুলো উধাও করে দিতে পারিস!”
রৌদ্রও বিমোহিত হাসলো মায়ের কথায়। দুষ্টমির স্বরে বললো,
“ দেখতে হবে না ছেলেটা কার!”
জুবাইদা বেগম দূর্বল মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন ছেলের কথায়। তারপর রৌদ্রের হাত থেকে খাবারটা আলগোছে মুখে পুরে নিলেন।অতপর চিবুতে লাগলেন অন্যমনস্ক হয়ে। মনে মনে ভাবছেন, — মেয়েটা নতুন জায়গায় ঠিকঠাক মতো মানিয়ে নিতে পারছে তো?

বেশকিছুক্ষন পর খাওয়া শেষ হলো জুবাইদা বেগমের। রৌদ্র উঠে গিয়ে হাতটা ধুয়ে আসে। তারপর ফিরে এসে মায়ের পাশে বসে, বেডসাইড টেবিলের প্রথম ড্রয়ার হাতড়ে মায়ের গিঁটে ব্যাথার ঔষধ বের করে মায়ের হাতে তুলে দেয়। জুবাইদা বেগমও বাধ্য মানুষের মতো চুপচাপ গিলে নিলেন ঔষধটা।ঔষধ খাওয়া শেষে হাতে থাকা খালি গ্লাসটা টেবিলের ওপর রাখলেন তিনি। রৌদ্র এবার মা’কে শুইয়ে দিলো বিছানায়। এগিয়ে এসে মায়ের মাথার কাছে বসে, আলতো হাতে মাথাটা বুলিয়ে দিতে লাগলো সযত্নে। জুবাইদা বেগম বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন ছেলের মুখপানে। কিয়তক্ষন পর আলতো করে চোখ বুজে নিলেন তিনি। হয়তো ছেলের নেওয়া যত্নে সকল দুশ্চিন্তা ছাপিয়ে একরাশ শান্তি অনুভব হচ্ছে তার। রৌদ্রও ততক্ষণ মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো যতক্ষণ না তার মা ঘুমিয়ে পড়ে!

রাত ১০:২৫🌸
রৌদ্র মাত্রই নিজের ঘরে এলো।শরীরটায় তার একরাশ ক্লান্তি এসে ভর করেছে যেন! তারওপর এমন বিদঘুটে গরমে ছেলেটা ঘেমে-নেয়ে একাকার! এক্ষুনি একটা গোসল না নিলেই নয়। রৌদ্র ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে যায় ওয়্যারড্রবের কাছে।সেখান থেকে একটা কালো ট্রাউজার আর টাওয়েল নিয়ে ছুটে যায় ওয়াশরুমে।
প্রায় মিনিট দশেক পর বেরিয়ে আসে রৌদ্র। ছেলেটার সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি কণা লেগে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে! পড়নের ট্রাউজারটাও নাভির বেশ কিছুটা নিচে নামানো। ফলে পেটানো দেহখানা বরাবরই উম্মুক্ত।রৌদ্র একহাতে টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে এগিয়ে আসে বিছানার কাছে। হাতে থাকা টাওয়েলটা কিছুটা দূরে ছুড়ে ফেলে অতঃপর আর কিছু না ভেবে ক্লান্ত দেহখানা এলিয়ে দেয় বিছানায়। ক্লান্ত চোখজোড়া তার যেই না বন্ধ করবে ওমনি ঘরের হালকা ভিড়িয়ে রাখা দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। তৎক্ষনাৎ বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেলে রৌদ্র। বিরক্তিতে ডানহাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে বিছানাতেই আঘাত করে বসে সে।পরক্ষণেই আবারও শব্দ হয় দরজায়।রৌদ্র কাঠকাঠ কন্ঠে বলে ওঠে,

“ দরজা খোলাই আছে, কে আসবেন আসুন!”
ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করে অরিন। মেয়েটার নিচু করে রাখা চোখদুটো যেই না ওপরে তুললো ওমনি তার দৃষ্টি আটকে গেলো বিছানায় অর্ধ-চিৎ হয়ে পড়ে থাকা রৌদ্রের ওপর। ছেলেটার পাদু’টো বিছানার বাইরে ঝুলছে। উম্মুক্ত গায়ের সর্বত্র জুড়ে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা। অরিনের বুকটা তৎক্ষনাৎ খানিকটা কেঁপে ওঠে। গলায় নেমে আসে চিরচেনা শুষ্কতা! বেহায়া চোখদুটো দেখোনা, কিভাবে গিলে খাচ্ছে ছেলেটাকে। অরিন যেন একপ্রকার যুদ্ধ চালাচ্ছে নিজের দৃষ্টি সরাতে রৌদ্রের ওপর থেকে কিন্তু বেহায়াগুলো তা মানলে তো!

এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরও কারো কোন রা-শব্দ না পেয়ে ভ্রু-গোটায় রৌদ্র। শোয়া ছেড়ে হাতের ওপর কিঞ্চিৎ ভর দিয়ে তাকায় দরজার দিকে। দেখতে পায় অরিনকে, যে কি-না এমুহূর্তে তার দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র বাঁকা হাসলো। চট করে লাফ দিয়ে ওঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে। এমন কান্ডে অরিন ভড়কে গেলো খানিকটা। তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যত্র এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো সে। রৌদ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে অরিনের কাছে। অরিন এবার ঘাবড়ে যায়। ধীরে ধীরে কদম পিছিয়ে নেয় মেয়েটা। প্রায় দু-তিন কদম পেছাতেই রৌদ্র খপ করে তার একহাত চেপে ধরে। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে হকচকিয়ে ওঠে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র তার এহেন দৃষ্টির কোনরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তাকে ঘরের মাঝামাঝি এনে দাড় করায়। অতপর নিজে গিয়ে একবার দরজার বাইরে আশেপাশে পরোখ করে সন্তপর্ণে দরজাটা ভেতর দিয়ে লাগিয়ে দেয়। অরিন এবার মিনমিনে স্বরে বলে ওঠে,

“ দরজাটা লাগাবেন না প্লিজ! আমি চলে যাবো।”
ফট করে দরজা ছেড়ে এগিয়ে আসে রৌদ্র। মেয়েটার প্রায় অনেকটা কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে, অরিনের গালে আলতো হাত রেখে বললো,
“ আসার সময় আমায় জিজ্ঞেস করে এসেছিলি? আসিসনি তো! তাছাড়া আমার রুমে একবার আসলে আমার অনুমতি ব্যাতিত রুম ছেড়ে যাওয়া নিষেধ! ”
অরিন হতবুদ্ধির ন্যায় শুনলো কথাটা। কি মনে করে যেন মুখ ফুটে বলেই ফেললো,
“ এই নিয়ম আবার কবে থেকে উদয় হলো?”
রৌদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরিনের দিকে। অরিনের মুখের ওপর এসে আছড়ে পড়া অবাধ্য চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে হাস্কি স্বরে বললো,
“ ধরে নে আজকে থেকে উদয় হলো। শুধুমাত্র তোর জন্য! ”

কথাটা শুনে অরিন মুচকি হাসলো। সঙ্গে সঙ্গে তার গালে দেখা মিললো বরাবরের গর্ত দুটো। রৌদ্র মোহগ্রস্তের ন্যায় তাকিয়ে রইলো সেদিকে। কখন যে নিজের অজান্তেই পরপর শুকনো ঢোক গিলে ফেললো, টেরই পায়নি সে! অরিন সরু চোখে তাকিয়ে দেখলো রৌদ্রের ঢোক গেলা। ঢোক গিলবার সময় রৌদ্রের আডামস এপেলটা স্পষ্ট চক্ষুগোচর হয়েছে তার। কি যে সুন্দর লেগেছে তার কাছে! বলে বোঝানো মুশকিল! এর পাশাপাশি অরিন কিছুটা অবাকও হলো।কই এতোদিনতো একবারও এ বিষয়টা চোখে পড়েনি তার। পরক্ষণেই নিজের মনকে বুঝ দিলো এহেন যুক্তিতে, হয়তো এতোদিন এতোটা কাছ থেকে ছেলেটাকে পরোখ করা হয়নি বিধায় এসব চোখে পড়েনি তার! অরিনের কি হলো কে জানে! সে কেমন বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে আলগোছে ছুয়ে দিলো রৌদ্রের আডামস এপেল। রৌদ্র এবার হুশে ফিরে।নিজের ঘোরলাগা দৃষ্টি ছাপিয়ে অরিনের কাজকর্মগুলো সরু চোখে তাকিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ। তখনি তার কানে আসে অরিনের সম্ভাষণ!

“ আপনার আডামস এপেলটা কি সুন্দর ডাক্তার সাহেব! ”
রৌদ্র বিমোহিত হাসলো অরিনের কথায়। একহাতে অরিনের কোমর জড়িয়ে তাকে খানিকটা উচুঁতে তুলে আরেকটু কাছে টেনে আনে নিজের। পরক্ষণেই নিজের মুখটা অরিনের গাল ছুঁইয়ে কানের কাছে নিয়ে আসে রৌদ্র। এদিকে রৌদ্রের এহেন স্পর্শে সব ভুলিয়ে লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো অরিন।ছোট্ট দেহখানা ছটফট করতে লাগলো রৌদ্রের হাতের বাঁধনে। তখনি তার কানে আসে রৌদ্রের ফিসফিস করে বলা কথা!

“ শুধুই কি আডামস এপেলটা সুন্দর? আর কিছু না? একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখ, তোর গোটা ডাক্তার সাহেবটাই বেশ সুন্দর সানশাইন! কি বলিস?”
বলেই মেয়েটার কানের পিঠে আলতো করে নাক ঘষে দেয় রৌদ্র। সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে ওঠে অরিন।
খামচে ধরে রৌদ্রের বুকের কাছের শার্টের অংশ।
চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে লজ্জায়। রৌদ্র বাঁকা হাসলো। মেয়েটার মুখের সামনে মুখ এনে অদ্ভুত মোহনীয় কন্ঠে বললো,

“ চোখ খোল সানশাইন!”
খুললো না অরিন।ভীতসন্ত্রস্ত মনে মাথানিচু করে রাখলো তখনও।রৌদ্র এবার অরিনের নাক বরাবর নিজের ঠোঁট আলতো করে ছুয়ে দিলো। অরিনও তৎক্ষনাৎ নিজেকে গুটিয়ে নিলো আরেকটু। লজ্জায় চিবুক ঠেকিয়েছে গলার কাছে। রৌদ্র মেয়েটাকে আরেকটু বাজাতে বললো,
“ এখন চোখ খুলতে এতো লজ্জা? অথচ কিছুক্ষণ আগেও আমার উম্মুক্ত শরীরটা ড্যাবড্যাব চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলি। কই তখন তো এমন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেসনি!”
ফট করে চোখ খোলে অরিন। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো,
“ ইয়ে, মানে নাহ! আমি ওভাবে তাকাইনি।”
“ তাহলে বলছিস আমি মিথ্যা বলছি?”
দাঁতে জিভ কাটে অরিন।রৌদ্রকে শুধরে দিয়ে বললো,

“ আরে না না! আমি সেটা বলিনি।আমি বলছি, আমি আপনার শরীরের দিকে তাকাইনি!”
এহেন কথায় ভ্রুকুটি করে রৌদ্র। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
“ তাহলে কোথায় তাকিয়েছিলি তুই? আমার এতো সুন্দর হট এন্ড বোল্ড -সেক্সি শরীরটার দিকে না তাকিয়ে কোন আহামরি সম্পদের দিকে তাকিয়েছিলিস তুই?”
এবার যেন গেরাকলে পড়লো অরিন। ইশশ্ একটা সত্য লুকোতে কতগুলো মিথ্যা বলতে হলো তার। মেয়েটা মাথানিচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের। তা দেখে রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মৃদু চেচিয়ে উঠে। অরিন ভড়কে যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।রৌদ্র অস্থির গলায় বললো,

“ এই! তুই আমার কাজ নিজে করছিস কেন? এতোবড় সাহস কোত্থেকে আসলো তোর? ”
রৌদ্রের কথার একচুলও বোধগম্য হলোনা অরিনের। মেয়েটা হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ মানে?”
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো রৌদ্র। মেয়েটার ঠোঁটের দিকে মোহগ্রস্তের ন্যায় তাকিয়ে বললো,
“ তোর শরীরের প্রতিটি অংশ আমার সানশাইন! তোর শরীরের সর্বত্র জুড়ে শুধুই আমার ছোঁয়া থাকবে জান! সেখানে আমি ব্যাতিত তোর ছোঁয়াও সহ্য হবে না আমার!”
অরিন এবার বুঝলো ব্যাপারটা।সঙ্গে সঙ্গে মুখ নামিয়ে নিলো সে।ইশশ্ লজ্জায় কানদুটো থেকে যেন ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার! গালদুটোয় ছেয়ে গেছে রক্তাভ আভা। রৌদ্র বেশ বুঝলো মেয়েটার মনের অবস্থা। সে আলতো হাতে নামিয়ে দিলো মেয়েটাকে। তারপর অরিনের একহাত টেনে তাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। অতঃপর কোনরূপ কথা না বলে টুপ করে শুয়ে পড়লো মেয়েটার কোলে মাথা রেখে। এতসব ঘটনার পুরোটা সময় জুড়ে অরিন ছিলো একেবারেই হতভম্ব! কি থেকে কি হচ্ছে, এটাই বুঝে আসছে না মেয়েটার। রৌদ্র এবার অরিনের কোলে মাথা রেখে নরম সুরে বললো,

“ সানশাইন! মাথাটা একটু টিপে দে, প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে! ”
আহারে! ছেলেটার এমন আবদারে একেবারেই গলে পানি অরিন। সে ধীরে ধীরে নিজের নরম আঙুলের সাহায্যে আলতো করে টেনে দিতে লাগলো রৌদ্রের চুলগুলো। রৌদ্রও আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো। বেশকিছুক্ষন পর হঠাৎই রৌদ্র বলে ওঠে,
“ আচ্ছা! তুই হঠাৎ এখানে কেন এসেছিলি?”
অরিন নিজের হাতের কাজ অব্যাহত রেখে ধীমী স্বরে বললো,
“ একচুয়েলি, এমনিতেই এসেছিলাম। তেমন কোন স্পেসিফিক কারণ নেই! ”
দুষ্ট হাসলো রৌদ্র। দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বললো,

“ ওহো! তাহলে রাত-বিরেতে আমাকে দেখতে বুঝি মনটা খুব আনচান করছিলো আপনার? ”
এহেন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অরিন।হাতদুটো থেমে গেলো হতবাকতায়। রৌদ্রে কথার প্রতিত্তোরে এখন ঠিক কি বলা উচিত, হয়তো সেটাই ভাবছে সে। মেয়েটা আমতা আমতা করতে লাগলো। তা দেখে রৌদ্র বললো,
“ থাক! আর ক্লারিফিকেশন দিতে হবেনা। যা বুঝার বুঝে নিয়েছি আমি। তাছাড়া তুই চাইলেই যখন তখন আমায় দেখতে আসতে পারিস সানশাইন! আফটার অল, আ’ম অল ইউরস!”

রৌদ্রের বলা শেষ কথাটা যেন একেবারেই মন ছুয়ে দিলো অরিনের। মেয়েটা বিজয়ী হাসলো। নিজ থেকে রৌদ্রের কপাল বরাবর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো সযত্নে। রৌদ্র পুরোপুরি থমকে গেলো। অরিনের মুখটা যে তার একেবারেই কাছে।অরিনের দেহের মিষ্টি সুঘ্রাণটা পাগল করে দিচ্ছে তাকে। তারওপর মেয়েটার এমন ছোটোখাটো স্পর্শ যে যেকোনো সময় তাকে বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করবে। রৌদ্র ফাঁকা ঢোক গিললো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো আলগোছে। মনে মনে নিজের পুরুষালি নিষিদ্ধ অনুভুতির সঙ্গে একদফা যুদ্ধ চালালো বেশ।
অরিন ধীরেসুস্থে রৌদ্রের কপাল হতে ঠোঁট সরায়।মুচকি হেসে বলে,

“ আমিও শুধুই আপনার ডাক্তার সাহেব। ”
রৌদ্র চোখ খোলে। তাকায় অরিনের দিকে। ছেলেটার চোখদুটো ইতোমধ্যেই কেমন লাল হয়ে আসছে। অরিন হকচকিয়ে ওঠে। অস্থির গলায় বলে,
“ কি হয়েছে আপনার? হঠাৎ করে এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো না। ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো ঘনঘন। কেমন যেন এক অদ্ভুত শান্ত অথচ নিরেট কন্ঠে বললো,
“ অরি! চল আমরা বিয়ে করে ফেলি!”
থমকায় অরিন। চোখদুটো হয়ে আসে বড়সড়। হতবিহ্বল কন্ঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে,
“ মানে?”

রৌদ্র মেয়েটার কোলে মাথা রেখে চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। শুষ্ক অধর জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে আবারও নিশ্বাস ফেলে ঘনঘন। ছেলেটার এমন হাবভাব কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না অরিনের। সে অস্থির গলায় আবারও বললো,
“ কি হয়েছে বলুন না!”
রৌদ্র এবার কোন কথা না বলে শক্ত করে মেয়েটার কোমর জড়িয়ে ধরে। অরিনের পেট বরাবর নিজের মুখ গুজে দেয় সন্তপর্ণে। অরিন আরেকদফা কেঁপে ওঠে। কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে রাখলো রৌদ্রের পিঠে। থেমে থেমে বললো,
“ ডাক্তার সাহেব! ”
রৌদ্র নিজের জায়গাতে থেকেই বললো,

“ চল বিয়ে করে ফেলি সানশাইন! পরবর্তীতে যা হবার দেখা যাবে। আমি তোকে ছাড়া আর থাকতে পারছিনা রে! তোর কাছে আসলেই ইচ্ছে হয় তোকে একটু গভীরভাবে ছুয়ে দিতে। তোকে মনভরে আদর করতে। ইচ্ছে করে তোকে নিজের ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে কিন্তু এগুলো যে কিছুই করতে পারছিনা আমি সানশাইন! বারেবারে আটকে যাচ্ছি অদৃশ্য এক বেড়াজালে। আমি…. আমি আর পারছিনা রে। আমি তোকে চাই… খুব করে চাই। প্লিজ আমার হয়ে যা সানশাইন। ”
অরিন চুপচাপ শুনলো তার পাগল প্রেমিকের কথা।সে আলতো হাতে রৌদ্রের পিঠে মালিশ করতে করতে বললো,
“ এতোটা অধৈর্য্য কবে থেকে হলেন আপনি ডাক্তার সাহেব? এতোদিনতো এতোটা অধৈর্য্য দেখিনি আপনাকে!”
রৌদ্র মুখ তুললো। অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

“ সবটাই তোর জন্য হয়েছে! ”
এহেন কথায় অরিন যেন আকাশ থেকে পড়লো।জিজ্ঞেস করলো,
“ আমার জন্য? ”
রৌদ্র ফটফট কন্ঠে জবাব দেয়,

“ তা-নয়তো কি? এতোদিন আমি শুধু নিজের অনুভুতির সঙ্গে একতরফা লড়াই করতাম তখন তো তুই আমায় বাধ্য করিসনি, তোকে ভালোবাসার কথা স্বীকার করাতে।কিন্তু ঐদিন তোর ওসব কথার জোরে নিজের সকল নিষেধাজ্ঞা ছাপিয়ে বলে দিলাম নিজের মনের অনুরক্তিগুলো। এখন যেহেতু তুই সবটা জেনেই গিয়েছিস, সেহেতু নিজেকে আর আটকে রেখে কি লাভ বল? তাইতো দিন দিন আমি রৌদ্র কেমন অধৈর্য্য হচ্ছি!”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২২

শেষ কথাটা মেকি গাল ফুলিয়ে বললো রৌদ্র। তা দেখে সিরিয়াস মুডেও যেন হেঁসে কুটিকুটি খাওয়ার মতো অবস্থা অরিনের। মেয়েটা হাসতে হাসতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আলগোছে। রৌদ্র একবার আড়চোখে মেয়েটার হাসির দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। বিরবির করে বলে ওঠে,
“ নেভার শো ইউর উইকনেস টু এনিওয়ান! ”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here