সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৮

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৮
Jannatul Firdaus Mithila

“ অপেক্ষা করে যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়, তাহলে অপেক্ষাই শ্রেয় সানশাইন!”
অরিন চুপ করে তাকিয়ে রৌদ্রের পানে।তার চোখে কেমন অন্যরকম ভালোলাগার ছাপ।সে মৃদু হেসে খানিকটা এগিয়ে এসে বলে,
“ রাত তো অনেক হলো, আপনি খাবারটা খেয়ে নিন না!”
রৌদ্র সরু চোখে তাকিয়ে রইলো কিয়তক্ষন। পরক্ষণেই ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছু একটা। ভাবনা শেষ হতেই অরিনের হাতটা ধরে তাকে টেনে এনে বসিয়ে দেয় সোফায়। তারপর নিজেও বসে পড়ে তার পাশে।অরিন হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“ কি হলো? এভাবে এখানে বসালেন যে?”
রৌদ্র গা এলিয়ে বসে। কোনরূপ ভনিতাবিহীন বলে,
“ খাইয়ে দে সানশাইন! আমার হাতে তো ব্যান্ডেজ করা।”
চট করে জিভে দাত কাটে অরিন। ঠিকই তো, মানুষটার হাতের অবস্থাতো একেবারেই নাজেহাল। কি করে খাবে সে? অরিন অপরাধীর ন্যায় মাথানিচু রেখে বললো,
“ সরি, আসলে আমি একদমই….. ”
তার কথার মাঝপথেই তার ঠোঁটের আগায় আঙুল চেপে ধরে রৌদ্র। খানিকটা গম্ভীর গলায় শুধায়,
“ এখন আর কথা বলিস না। তারাতাড়ি খাইয়ে দে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অগত্যা অরিনও মাথা ঝাকায়। সে তড়িঘড়ি করে খাবারের প্লেট নিয়ে নেয় নিজ হাতে। অতঃপর যত্নের সাথে খাবার মাখিয়ে লোকমা তুলে ধরে রৌদ্রের সামনে। রৌদ্র একপলক অরিনের দিকে তাকায়, আরেকবার তাকায় অরিনের হাতের দিকে।তারপর স্মিত হেসে মুখে তুলে নেয় খাবারটা। অরিন খাওয়াতে গিয়ে খানিকটা ইতস্তত করে কেননা,রৌদ্র প্রতিবার খাবারটা মুখে নিতে গিয়ে ইচ্ছে করে মৃদু কামড় বসাচ্ছে মেয়েটার চিকন আঙুলের ডগা গুলোয়।অরিন তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের মুখ থেকে আঙুল ছাড়িয়ে সেদিকে তাকায়।দেখতে পায় — আঙুলগুলো ইতোমধ্যেই কেমন লালচে হয়ে গেছে। মেয়েটা যেখানে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো হাতের পানে, সেখানে ছেলেটার ভাবভঙ্গি দেখো! সে কেমন ভাবলেশহীন হয়ে আরামসে চিবুচ্ছে মুখের খাবারগুলো।ভাব এমন — সে বুঝি নিতান্তই ভদ্রলোক।
তা দেখে অরিনের মেজাজটা মুহুর্তেই চটে আসে। সে খানিকটা জোরালো কন্ঠে বলে,

“ ডাক্তার সাহেব! আপনি এভাবে কামড় দিচ্ছেন কেনো? দেখুন,আপনাকে আমি ভাত খেতে বলেছি — আমার হাত নয়।”
ফট করে মুখের খাবার চিবানো থামিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি ফেলে রৌদ্র। চোখেমুখে কেমন মেকি হতবাকের ছাপ।সে সন্দিহান গলায় বললো,
“ কিহ! আমি তোকে কামড়াচ্ছি মানে? ছিঃ সানশাইন, এটলিস্ট এখন তুই আমায় এতোবড় অপবাদ দিস না। আরেকটু আগে এটা বলতি তখন নাহয় মানতাম কিন্তু এখন তো আর কামড়াচ্ছি না তোকে।”
অরিন লজ্জা পেলো খানিকটা। মাথা নাড়িয়ে
ছেলেটাকে শুধরে দিয়ে বললো,

“ ধূর! কিসব নির্লজ্জ কথাবার্তা। আমি আবার কখন বললাম — আমাকে অন্যকোথাও কামড়াচ্ছেন? আমি শুধু বলেছি আপনি কেনো আমার আঙুলগুলো কামড়াচ্ছেন।”
রৌদ্র এবার সরু চোখে তাকায়। দুষ্ট হেসে বলে,
“ ওহ! তাহলে তুই আঙুল কামড়ানোর কথা বলেছিলি? আর আমিতো ভেবেছি…. ”
চট করে তার মুখে খাবার ঠেলে দেয় অরিন।লোকটার এহেন কথাবার্তা যে কানে শোনা দায়।রৌদ্র আর কিছু না বলে খাবারটা খেয়ে নিলো।খাওয়া শেষে অরিন উঠতে নিলে বাঁধ সাধলো সে।অরিন ঘাড় বাকিয়ে তাকায়।ইশারায় জিজ্ঞেস করে — কি হলো? জবাবে রৌদ্র বাঁকা হাসে। মেয়েটাকে আবারও বসিয়ে দেয় সোফায়। তারপর মেয়েটার ঝোলমাখা হাতটা এগিয়ে নিয়ে আসে নিজের কাছে।অরিন হতবিহ্বল চোখে রৌদ্রের কর্মকান্ডগুলো দেখে যাচ্ছে। অথচ রৌদ্রের সেদিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই। সে টুপ করে মেয়েটার হাতের একটা আঙুল মুখে নিয়ে নেয়।অতঃপর অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদুভাবে চুষে খেতে থাকে মেয়েটার চিকন আঙুলগুলো।এহেন স্পর্শে অরিন কেঁপে ওঠে। যথাসম্ভব বৃথা চেষ্টা চালায় নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু তা আর হলো কই? রৌদ্র তো ব্যস্ত মেয়েটাকে পাগল করতে। অরিন ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে। বহুকষ্টে থেমে থেমে বলে ওঠে,

“ ডাক্তার সাহেব…. ছাড়ুন…”
কে শোনে কার কথা। ছেলেটা ব্যাস্ত নিজের উন্মাদনায়।খানিকক্ষণ বাদে রৌদ্র ছেড়ে দেয় অরিনের হাত। গলায় হালকা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে,
“ অপচয় করা উচিৎ নয় সানশাইন! বুঝলি?”
তড়িৎ মাথা ঝাকায় অরিন। হাতটা বুকের কাছে নিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে অনবরত।সেদিকে তাকিয়ে রৌদ্র দুষ্টু কন্ঠে বললো,
“ কি হয়েছে সানশাইন? এনি প্রবলেম? ”
অরিন চোখ মেলে।কপট রাগী ভাব নিয়ে বলে,
“ আপনি বড্ড খারাপ ডাক্তার সাহেব।”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো রৌদ্র। হাসলো ঠোঁট পিষে। ভরাট কন্ঠে ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে জবাব দিলো,
“ কিছু না করতেই খারাপ হয়ে গেলাম?”
এই বলে সেআরেকটু এগিয়ে আসে মেয়েটার দিকে। গলা নামিয়ে নিচু কন্ঠে বলে,
“ কিছু করলে তখন কি বলবি সানশাইন? ”

আচমকা এহেন লাগামহীন কথায় নিশ্বাস ফেলতে ভুলে যায় অরিন।চোখদুটো এই বুঝি কোটর ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসবে তার।চোখের পলকও কেমন নিজস্ব কায়দা ভুলে গেলো ঝাপটে পড়ার।রৌদ্র মুচকি হেসে বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। বিছানার কাছে যেতে যেতে অরিনের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“ নিশ্বাস ফেল জানবাচ্চা!”
কথাটা কর্নগোচর হওয়া মাত্র আটকে রাখা নিশ্বাসটুকু ছেড়ে দেয় অরিন। ইতোমধ্যেই মেয়েটা লজ্জায় কুপোকাত। গালদুটোয় কেও বুঝি লাল রঙ ঘষে দিয়েছে খানিকটা। সে মাথানিচু করে উঠে যায় ওয়াশরুমের দিকে।তারপর চটজলদি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দেয় ভেতর থেকে। ওয়াশরুমের দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে, দু’হাতে মুখটা ঢেকে নেয় অরিন।ইশশ্ কি লজ্জাটাই না পেলো সে! লোকটা ইদানীং এতো লজ্জা দেয়….

** এদিকে অরিনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে রৌদ্র। মেয়েটা সামনে থাকলে কি জানি তার কি হয়! মুখটা বুঝি আপনাআপনি ছুটে চলে তার। অবশ্য এতেও বেশ ভালো হয় বৈকি।কেননা মেয়েটার ঐ লজ্জামাখা মুখটা দেখতে যে তারও বেশ ভালো লাগে।তাইতো ইচ্ছে করেই এমন উল্টোপাল্টা কথা বলে মেয়েটাকে অহেতুক লজ্জায় ফেলে সে।
বেশকিছুক্ষন হয়ে যাবার পরও অরিনকে বেরোতে না দেখে ভ্রু-গোটায় রৌদ্র। সে জোরালো কদমে এগিয়ে আসে ওয়াশরুমের কাছে।দরজায় কড়া নেড়ে বলে ওঠে,

“ সানশাইন! একটা বালিশ দিবো কি? ঘুমুতে কষ্ট হলে একটা কাঁথাও দিয়ে দেই?”
কথাটা শেষ হবার পর হয়তো সেকেন্ড খানিক সময় পেরুলো।তারপর পরই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে অরিন।চোখদুটো তার বিস্ময়ে চড়কগাছ।সে বিস্ময়ভরা কন্ঠে বললো,
“ ওয়াশরুমে কি কেও ঘুমাতে যায় ডাক্তার সাহেব?তারওপর আপনি আমাকে বালিশ আর কাঁথা নিতে বলছেন?”
রৌদ্র হেয়ালি ছেড়ে জবাব দেয়,

“ অন্যকেও কি করে তা জানিনা,কিন্তু ওয়াশরুমে তোর সময়ের পরিধি দেখে, আমার এমনটাই মনে হলো।”
অরিন এবার গাল ফুলায়। এতক্ষণে সবটা বোধগম্য হলো তার। লোকটা যে তার মজা উড়াচ্ছে — তা আর বুঝতে বাকি নেই এখন।সে রৌদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রৌদ্র তার একহাত পেছন থেকে চেপে ধরে। সহসা পাদু’টো থমকে দাঁড়ায় অরিনের। তবুও মেয়েটা পেছনে না তাকিয়ে কপট অভিমান নিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলো। রৌদ্র বেশ বুঝলো অভিমানীনির অভিমান।সে ঠান্ডা গলায় বললো,

“ পাখি রাগ করেছে?”
এহেন মিষ্টি কথায় রাগ বুঝি গলে পানি অরিনের। তবুও বাইরে থেকে নিজের কপট রাগী ভাব টেনে মুখ ফুলিয়ে রইলো সে। রৌদ্র এবার আর কিছু না বলে অরিনকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। অরিন ভড়কে যায়। খপ করে চেপে ধরে রৌদ্রের কাঁধ। গলায় ঝাঁঝ এনে বলে ওঠে,
“ আমায় কোলে নিলেন কেন? নামান বলছি।”
রৌদ্র স্মিত হাসলো। অরিনকে বিছানার কাছে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
“ আমার বউকে আমি কোলে নিয়েছি তাতে আপনার কি?”

অগত্যা এমন কথায় চুপ করে গেলো অরিন।চোখেমুখে তার লেপ্টে গেলো একরাশ ভালোলাগার ছাপ। বুকটায় ছেয়ে গেলো এক নাম না জানা প্রশান্তি। অরিন অনিমেষ চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের পানে।ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি তার। রৌদ্র তাকে সযত্নে খাটে বসায়।মাথার পাশের বালিশগুলো ঠিকঠাক করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে বিছানায়। তারপর হাত বাড়িয়ে আলতো করে অরিনের হাতের কনুই ধরে, তাকে নিজের বুকের ওপর আছড়ে ফেলে একপ্রকার। অরিন হকচকিয়ে ওঠে খানিকটা। কিছু বলতে যাবে তার আগেই কানে আসে রৌদ্রের ভরাট কন্ঠ!
“ চুপচাপ ঘুমিয়ে পড় সানশাইন।”
অরিন কিছুটা ইতস্তত করলো।রৌদ্রের বুকে থেকে হাসফাস করতে করতে বললো,

“ কিন্তু এভাবে….”
রৌদ্র ভ্রুকুটি করে তাকায় মেয়েটার দিকে।কন্ঠে একরাশ অধিকারবোধ ঢেলে বলে,
“ বউ তুই আমার! এতোদিন নাহয় সম্পর্কের বৈধতা ছিলোনা বিধায় দূরে সরে থাকতি।কিন্তু এখন? এখন কোন উদ্দেশ্যে দূরে থাকবি শুনি?চুপচাপ আমার বুকে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবি।এখন থেকেই অভ্যাস গড়ে তোল সানশাইন।”

হতবুদ্ধির ন্যায় মাথা দোলায় অরিন।রৌদ্র মুচকি হাসলো। মেয়েটার চিবুকে আলতো করে চুমু বসিয়ে দিলো চোখের পলকে। তারপর আবারও অরিনকে বুকে চেপে চোখ বন্ধ করে নেয় রৌদ্র। অরিনও বা এখন আর কি করবে? সেও খানিকক্ষণ দোনোমোনো করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো নিজ অজান্তে! প্রায় অনেকটা সময় পেরিয়ে যাবার পর অরিনের কোনরূপ সাড়া শব্দ না পেয়ে রৌদ্র ধীরে ধীরে নিজের বুকের কাছে লেপ্টে থাকা অষ্টাদশীর পানে তাকায়। কিয়তক্ষন মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। তারপর মুচকি হেসে অরিনের গালে আলতো হাত রেখে নমনীয় কন্ঠে বললো,
“ অবশেষে তুই আমার হলি সানশাইন! ”

রাতের বিদঘুটে অন্ধকার ঠেলে ধরণীতে নতুন সকালের আগমন ঘটেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।সকালের নরম রোদ ঘরের জানালার ওপর পড়ে থাকা পাতলা ফিনফিনে পর্দাগুলোকে ভেদ করে ভেতরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে যেন।কিন্তু সুযোগের অভাবে তারা বুঝি আঁটকে রইলো নিজের মতো!
পিটপিট করে চোখ মেলে অরিন।নিশ্বাস নিতেও বুঝি বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে তার। সে ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকায় আশেপাশে। পরক্ষণেই নিজেকে রৌদ্রের বুকে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকতে দেখে ভড়কায় সে।সরতে যাবে — তখনি সে আরেকদফা আঁটকে পড়লো রৌদ্রের বাহুডোরে।ছেলেটা কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তাকে।ভাব এমন— খানিকটা ঢিল পেলেই বুঝি মেয়েটা হারিয়ে যাবে তার থেকে।রৌদ্রের এহেন পাগলামি দেখে মৃদু হাসলো অরিন। সে শান্ত দৃষ্টি ফেলে রৌদ্রের ঘুমন্ত মায়াবী মুখপানে।ইশশ্ কি স্নিগ্ধ মুখটা! ঘুমিয়ে থাকলে মানুষটাকে কি নিষ্পাপটাই লাগে।অথচ জেগে থাকলে? বাব্বাহ! সারাক্ষণই বুঝি এটা-সেটা বলে তাকে লজ্জায় ফেলার পায়তারা খোঁজে!

মনে মনে কথাগুলো ভেবে হালকা হাসলো অরিন।তার এ মুহুর্তে ইচ্ছে করছে — লোকটার থুতনিতে থাকা গাঢ় কালো তিল টাকে একটুখানি ছুয়ে দিতে।একটুখানি হাত বুলিয়ে দিতে মানুষটার পুরো মুখজুড়ে। যেই ভাবনা, সেই কাজ! অরিন ধীরে ধীরে নিজের হাতটা এগিয়ে আনে রৌদ্রের থুতনির কাছে।তারপর আলতো হাতে ছুয়ে দেয় রৌদ্রের থুতনিতে থাকা কালো কুচকুচে তিলটা। পরক্ষণেই আবার কি মনে করে রৌদ্রের ঠোঁটের ওপর হাত বুলিয়ে দিলো সে।নাহ! এতেও বুঝি মন ভরলো না তার।কেনো যেন তার এ মুহুর্তে ইচ্ছে করছে লোকটার গালে আলতো করে একটা চুমু খাওয়ার। মানুষটা জেগে থাকলে চুমু খাওয়াতো দূর, তার দিকে সামান্য একটু তাকিয়ে থাকাও দায়।কখন না জানি, কি বলে লজ্জা দিয়ে বসে।তাছাড়া লোকটাতো এখন ঘুমাচ্ছে।

এখন যদি সে তাকে দুয়েকটা চুমু খেয়েও ফেলে,লোকটা কি তা থোড়াই টের পাবে! অরিন এবার মনস্থির করলো নিজের কার্যসিদ্ধি করার। সে ধীরে ধীরে নিজের হাতটা রৌদ্রের মুখের সামনে এনে নাড়াচাড়া করলো কয়েকবার। রৌদ্রের কোনরূপ নাড়াচাড়া না পেয়ে সে এবার নিশ্চিত হলো — রৌদ্র আসলেই ঘুমাচ্ছে। অরিন নিঃশব্দে ঠোঁট এগিয়ে আনে রৌদ্রের থুতনি বরাবর। কালবিলম্বহীন টুপ করে রৌদ্রের থুতনিতে একটা চুমু বসিয়ে দেয় সে।তারপর ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় রৌদ্রের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আবৃত কপোলদ্বয়ে। এইটুকু কাজ শেষেই, অরিনের মুখে খেলে যায় রাজ্যের হাসি।মনে হচ্ছে, কোন এক রাজ্য বুঝি একাই জয় করে এসেছে সে। অরিন আরও কিছুক্ষণ রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসে শোয়া ছেড়ে। নিজের কোমরের ওপর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা রৌদ্রের হাতদুটো আস্তে করে সরিয়ে দেয় সে।তারপর উঠে চলে যায় ওয়াশরুমে।

অন্যদিকে, তার চলে যাবার আভাস পেতেই চোখ বন্ধ রেখে মুচকি হাসলো রৌদ্র। হাত বাড়িয়ে নিজের গালদুটোতে হাত বুলালো কিছুক্ষণ। এতক্ষণ মেয়েটার কর্মকাণ্ড সবটাই টের পেয়েছে সে।তবুও রৌদ্র চোখ খোলেনি। মেয়েটাকে করতে দিলো তার কাজ।কেননা রৌদ্র তো জানে— সে যদি তখন চোখ মেলে তাকাতো তাহলে নির্ঘাত মেয়েটা লজ্জায় কুন্ঠা যেতো।হয়তো লজ্জার তোড়ে ছুটে পালাতো এখান থেকে। আর রৌদ্র যে সেটা একেবারে চায়নি! যাক অবশেষে সকালটা তার সানশাইনের আদর পেয়েই শুরু হলো। বিষয়টা কিন্তু মন্দ লাগছে না!
** সকাল সাড়ে ছয়টা **

দরজায় একের পর এক কড়া নাড়ানোর শব্দ হচ্ছে। অরিনটা তো মাত্রই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুলো। রৌদ্র তাকে দেখে এমন একটা ভাব নিলো না! — যেন সে মাত্রই উঠলো ঘুম ছেড়ে। অরিন দরজার দিকে এগোতে যাবে তার আগেই বাঁধ সাধলো রৌদ্র। চোখে আঙুল বুলিয়ে, মেকি ভাব নিয়ে হামি টেনে বললো,
“ থাক… তোর যেতে হবে না। আমি দেখছি!”
মাথা কাত করে অরিন।হাতের টাওয়েলটা দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে সোফায় বসলো মেয়েটা। রৌদ্র দরজা খুলে দেয়। তখনি দরজার সামনে দাড়ানো অনিক ফটফট কন্ঠে বলে,
“ ভাইয়া, বনু কই? ও তো ওর রুমে……”

কথাটা শেষও করতে পারলোনা বেচারা। রৌদ্র দরজা ছেড়ে সরে আসতেই তার নজর পড়লো সোফায় বসে থাকা বনুর ওপর। সে একবার সরু চোখ বনুর দিকে, তো আরেকবার রৌদ্রের দিকে ফেলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে অরিনটা বুঝি আরেকধাপ লজ্জায় পড়লো। সে কিছুটা দোনোমোনো করতে করতে ঘাড়ে হাত বুলালো।পরক্ষণেই কিছু না বলে মাথানিচু রেখে একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে পালালো রুম ছেড়ে। এবার অনিক এক কদম এগিয়ে আসে রৌদ্রের নিকট। বলে,
“ ভাইয়া তুমি…”
তার কথার মাঝেই বাঁধ সাধলো রৌদ্র। নিজে থেকেই বলে ওঠলো,

“ বেশি ভাবতে হবে না। ওসব কিছুই হয়নি যেসব তুই ভাবছিস!”
অগত্যা এমন কথায় থতমত খেয়ে যায় অনিক। মাথার পেছন চুলকে বলতে থাকে,
“ ইয়ে মানে… তারপরও এখন নাহয় একটু ধৈর্য ধরো। নাহলে তো দেখা যাবে — পরিবার মানার আগেই আমি মামা/ চাচা হয়ে যাচ্ছি! ”
ঠোঁট কামড়ে অন্যদিক ফিরে মুচকি হাসলো রৌদ্র। পরক্ষণেই সেই হাসি মিলিয়ে দিয়ে হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
“ খুব একটা ভুল বলিসনি! শুধুমাত্র পরিবারের জন্যই আঁটকে আছি।নাহলে অচিরেই তোকে মামা বানিয়ে দিতাম!”
কথাটা বলেই প্রস্থান ঘটায় রৌদ্র। আর পেছনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইলো অনিক বেচারা।

বেলা বাজে ১১টা🌸
রৌদ্রের গাড়ি মাত্রই এসে ঢুকলো এহসান বাড়ির আঙিনায়। গাড়ি থামতেই অরিন রীতিমতো ছুটে আসে বাড়ির ভেতর।তার ওমন ছোটাছুটি দেখে পেছন থেকে একযোগে রৌদ্র আর অনিক বলে ওঠে,
“ পড়ে যাবি জানবাচ্চা!”
“আস্তে যা বনু!”
পরপর একই সময়ে কথাগুলো বলায় রৌদ্র আর অনিক একবার নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।পরক্ষণেই দুজনেই আলতো হেসে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
অরিন ভেতরে আসতেই সামনে পড়ে কবির সাহেব। তাকে দেখে অরিন থেমে যায় সাথে সাথে। কবির সাহেব অরিনকে দেখে এগিয়ে আসেন গম্ভীর মুখে।তারপর অরিনের মাথায় আলতো হাত রেখে নমনীয় কন্ঠে বললেন,

“ আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো মামুনি?”
অরিন মাথা তোলে।বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে একগাল ভর্তি হাসি দিয়ে বলে,
“ উহুম!একদমই কোনো অসুবিধে হয়নি।”
কবির সাহেব মেয়েটার কথায় মুচকি হাসলেন। তারপর ঘাড় কাত করে বললেন,
“ ঠিক আছে! তুমি তাহলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নাও। আমরা দুপুরের দিকে বেরোবো কেমন?”
“ আচ্ছা! ”
বলেই সেখান থেকে চলে আসে অরিন। তার যাওয়ার পথে একদৃষ্টিতে কিয়তক্ষন তাকিয়ে রইলেন কবির সাহেব। মনে মনে কিছু একটা ভেবে হুট করেই দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন তিনি। কয়েক পা এগোতেই দেখতে পান— অনিক আর রৌদ্র হাসতে হাসতে বাড়িতে ঢুকছে। কবির সাহেব তাদেরকে দেখেই মুখাবয়ব বরাবরের মতো গম্ভীর করলেন।ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

“ কোথায় ছিলে রাতে? ”
সহসা থমকে দাঁড়ায় রৌদ্র আর অনিক। রৌদ্র মুখভঙ্গি গম্ভীর রাখলেও অনিক যে তা কিছুতেই পারছেনা। আর পারবেই বা কিভাবে? তার বড়আব্বু যে যথেষ্ট বিচক্ষণ। এক চুটকিতেই ধরে ফেলতে পারে কোনটা সত্য, আর কোনটা মিথ্যা। ছেলে দু’টোকে চুপ করে থাকতে দেখে কবির সাহেব আবারও বললেন,
“ কথা কানে যায় নি?”
মুখ খুললো রৌদ্র। নির্ভয়ে বললো,
“ চাচ্চুকে তো বলেই দিয়েছিলাম… রাতে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় আমরা হাইওয়ের একটা রেস্টুরেন্টে থেকেছি।”
কবির সাহেব কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রৌদ্রের পানে।তার এমন দৃষ্টি দেখে শুষ্ক ঢোক গিললো অনিক।কপালে ইতোমধ্যেই এসে দলা পাকিয়েছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। কবির সাহেব আড়চোখে খেয়াল করলেন সবটা।তারপর গম্ভীর গলায় শুধালেন,
“ তুমি এতো ঘামছো কেনো? আর এতো ভয়ই বা পাচ্ছো কেন?”
তৎক্ষনাৎ হকচকিয়ে ওঠে অনিক। দৃষ্টি এলোমেলো করে জিজ্ঞেস করে,

“ জ্বি? ”
“ বলেছি, এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?”
অনিক সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে না জানায়।বলে,
“ না না… ভয়ের কি আছে।আসলে একটু ক্লান্ত লাগছে বড়আব্বু! আমি উপর যাই কেমন?”
বলেই সে একপ্রকার ছুটে পালায় বড়আব্বুর সামনে থেকে। আর রৌদ্র! সে এখনো নির্বিকার ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে বাবার সামনে।খানিকক্ষণ বাদে নিজ থেকে বলে ওঠে,
“ আব্বু! আর কিছু বলবে?”
কবির সাহেব এখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। হুট করে বলে বসলেন,
“ তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”
চট করে বুকটায় হালকা মোচড় অনুভব হয় রৌদ্রের।অথচ বাইরে থেকে ভাবভঙ্গি একেবারেই শান্ত তার।সে সময় নিয়ে বললো,
“ না আব্বু!তেমন কিছুই লুকেচ্ছি না।”
কবির সাহেব আর কিছু বললেন না। কিয়তক্ষন ছেলের দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন বাড়ির বাইরে। রৌদ্র সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, — ক্ষমা করে দিও আব্বু! আমি এখন চাইলেও তোমায় সবটা বোঝাতে পারবোনা।আর যেটা লুকাচ্ছি, সেটা পরিবারের ভালোর জন্যই লুকাচ্ছি।

“ ছোট বু? ও ছোট বু? বলি তারাতাড়ি আসো না! সবাইকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছি, এবার কেবল তুমিই আছো।”
রাইসা বেগমের একের পর এক হাঁক ছোঁড়ায় তড়িঘড়ি করে ছুটে আসলেন মাইমুনা বেগম। এসেই দেখতে পেলেন — ছোট জা’য়ের কপট অভিমানী মুখখানা। তিনি আলতো হেসে রাগ ভাঙানোর জন্য বললেন,
“ সরি ছোটো! আসলে মেয়ে দু’টোর এটা-সেটা রেডি করতে করতেই এতোটা লেট হয়ে গেলোরে।তুই আয় না! এখনি পড়িয়ে দে শাড়িটা।”
ফিক করে হেসে ওঠেন রাইসা বেগম। মাইমুনা বেগমের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে ভাজ খুলতে খুলতে বললেন,
“ তুমিও না ছোটবু! আচ্ছা বাদ দাও। আর সরি বলতে হবে না। ”
“ হ্যা রে! তোদের হলো?”
ঘরে ঢুকে কথাটা বলে ওঠেন জুবাইদা বেগম। মাইমুনা বেগম পরপর বললেন,
“ এইতো শেষের পথে!”

পরপর চারটে গাড়ি ভর্তি হলো বাড়ির মানুষ আর মেহমান মিলিয়ে। সবগুলোই ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে রেহানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।যেতেও অবশ্য খুব একটা সময় লাগবে না।জ্যাম না থাকলে এইতো ১ ঘন্টার মতো লাগবে!
রৌদ্রের মেজাজটা চটে আছে বেশ। অরিনটা তাকে ফাঁকি দিয়ে বাবা-চাচাদের সাথে চলে গিয়েছে। এ নিয়ে মনটা তার বিষিয়ে আছে খানিকটা। এইতো অনিক যখন রওনা দেবার আগে তাকে কি যেন একটা বলেছিলো, প্রতিত্তোরে রৌদ্র তো ভালোভাবে উত্তর দিলোই না বরং আরও কিছুটা তেজ নিয়ে খেঁকিয়ে উঠেছিলো অনিক বেচারার সাথে। অনিকও অবস্থা বেগতিক দেখে রৌদ্রকে আর ঘাটলো না।চলে গেলো গাড়ি নিয়ে।
রৌদ্র ফুলস্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে।কপাল কুচকে বিরবির করে বলে,
“ বিয়ে হয়েছে মাত্র দুদিন হলো।আর এখনি কেমন বর ফেলে ধেই ধেই করে নেচে-কুঁদে চলে গেলো।যত্তসব! একবার শুধু হাতের কাছে পাই!”

সারিবদ্ধভাবে গাড়িগুলো এসে থামে রেহানদের বাড়ির সামনে। ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে আসে এহসান বাড়ির সদস্যরা। তাদের দেখতে পেয়েই রেহান এবং তার বাবা,মামা, চাচারা এগিয়ে আসেন।কবির সাহেব এবং তার ভাইয়েরা কুশলাদি বিনিময় শেষে চলে গেলেন বাড়ির ভেতরে। বাড়ির মহিলা এবং ছেলেমেয়েরা সবাই ধীরেসুস্থে ভেতরে আসেন একে একে। রেহান গেটের সামনে দাড়িয়ে একে একে সকলের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে। পরক্ষণেই অরিনকে দেখতে পেয়ে গালভর্তি হাসি টেনে বলে ওঠে,
“ আসসালামু আলাইকুম! ভা… ওহ সরি সরি! শালিকা! কেমন আছো তুমি? ”
অরিন প্রথম কথাটায় লজ্জা পেলো খানিকটা। মাথা নিচু রেখে নিচু গলায় বললো,
“ ভালো আছি ভাইয়া! আপনি কেমন আছেন? রুহিপু কেমন আছে?”
“ আলহামদুলিল্লাহ! অল গুড!”

কথাটা শেষ করে একবার আড়চোখে পেছনে তাকায় রেহান।দেখতে পায়— অদূরেই দু’হাত বুকের কাছে বেঁধে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে এদিকেই তাকিয়ে আছে রৌদ্র। রেহান দুষ্ট হাসে।অরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“ রোদ কই অরি? ওকে যে দেখতে পাচ্ছি না। ”
সহসা হাসি মুখটা থমথমে হয়ে আসে মেয়েটার।এখন এ কথার কি উত্তর দেবে সে? সে নিজেই তো একপ্রকার পালিয়ে এসেছে রৌদ্রের কাছ থেকে। অরিন মুখে আধার নামিয়ে বলে,
“ আসলে ভাইয়া….”
“ এখানে দাড়িয়ে না থেকে ভেতরে যা!”

অরিনের কথার পিঠে পেছন থেকে গম্ভীর গলায় কথাটা বলে থামলো রৌদ্র। অরিন একবার আড়চোখে খেয়াল করলো রৌদ্রকে।পরক্ষণেই চোখ আঁটকে গেলো তার।রৌদ্রের পড়নের গাঢ় নীল রঙা সিম্পল পাঞ্জাবিটা আজকেও নজর কাড়ছে তার। পাঞ্জাবির হাতাগুলো বরাবরের ন্যায় খানিকটা উপরের দিকে গোটানো। বামহাতে শোভা পাচ্ছে ঘড়ি, চুলগুলো জেল দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে রাখা।তবুও গুটিকয়েক অবাধ্য চুল কপালে এসে আছড়ে পড়ছে।অরিন অনিমেষ চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের পানে।তা দেখে রেহান দুষ্ট হাসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠলো,
“ উহুম,উহুম! বলছি দেখা শেষ হলে এবার নাহয় ভেতরে আসা যাক!”
তড়িৎ নিজের দৃষ্টি সরায় অরিন।যাহ্! আবারও এমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো সে? আহা! মানুষগুলো এখন কি ভাবলো তার বিষয়ে! অরিন চটজলদি সেখান থেকে প্রস্থান ঘটায়। রৌদ্র তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। পরক্ষণেই রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ দাঁত বন্ধ কর!”
তৎক্ষনাৎ হাসি মুখটা থতমত খেয়ে যায় রেহান।সে কপাল কুচকে বলে ওঠে,
“ এখন আমি হাসলেও দোষ? ”
তারপর ফিসফিস করে ফের বলে,
“ আর তুই যে এদিকে চুপিসারে বিয়েসাদী করে ফেলেছিস সেটার কি হবে? ”
রৌদ্র সঙ্গে সঙ্গে রেহানের দিকে তাকায় কটমট চোখে। গম্ভীর গলায় বলে,
“ তো? এখন কি এই নিয়ে ঢোল পেটাবি?”
সহসা জিভে দাঁত কাটে।গালে হাত দিয়ে তওবা করার ন্যায় বলে ওঠে,
“ আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি আবার কখন এটা বললাম? আমি কি একবারও বলেছি কাওকে— যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কম সম্বন্ধি বিয়ে করে ফেলেছে চুপিচুপি! কই বলেছি কাওকে?”

ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে রৌদ্র। নাহ! এই ছেলেকে কিছু বলেও লাভ নেই। এ যে একটা কথা পেলে এমন করবে এটাই স্বাভাবিক। রৌদ্র এবার রেহানের পিঠ বরাবর সজোরে চাপড় মেরে বললো,
“ চলেন দুলাভাই! ভেতরে চলেন।”
হালকা ব্যাথায় চোখমুখ কুচকে ফেলে রেহান।পিঠে হাত বুলিয়ে আর্তনাদ করে বলে ওঠে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৬+২৭

“ শালা! কথায় কথায় নিজের মুখের চাইতে হাত বেশি নড়ে কেন তোর?”
রৌদ্র ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে জবাব দিলো,
“ উহুম! ঐটা শালা না সম্বন্ধি হবে বুঝলি?”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here