প্রেমতৃষা পর্ব ১
ইশরাত জাহান জেরিন
কাল আমার বিয়ে। কিন্তু আজ এই মাঝ রাতে আমার বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। বাবা-মা যেই ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করেছেন সে আবার এলাকার এমপি। ভালোবেসে সবাই এমপি সাহেব বলে ডাকেন। কিন্তু তাতে আমার কী? ওই সারাদিন মারধোর করা, সকল অবৈধ কাজে জড়িত ব্যক্তির যত টাকাই থাকুক না কেন আমি তৃষা নুজায়াত তার বউ হচ্ছি না, না মানে কখনোই না। তার মতো ভয়ানক ব্যক্তির বউ হওয়া আমার কাম্য নয়। আমার কাছে আমার স্বপ্ন পূরন সবার আগে। আমার কাছে আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বিচরণ সবার আগে।
নিজের মনে বেশ কয়েকবার কথা গুলো বিরবির করল তৃষা। এত লম্বা বাসযাত্রার পরে বান্ধুবী শিমলার বাসায় উঠে যখন বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল তখন কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে ভেতরটা। তবে ভয়ও কম হচ্ছে না। কারণ চট্টগ্রামের এমপি যুবরাজ সরকার তাকে যে করেই হোক খুঁজে বের করবেই। আজ হোক কিংবা কাল। সে মানুষ কম বাজপাখি বেশি। এক নাম্বারের দজ্জাল লোক বললেও ভুল হবে না। সেদিনের কথা মনে আছে? এমপি এসেছে বলে পুরো রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়েছিল। তৃষা কক্সবাজার ট্রিপে বন্ধুদের সঙ্গে যাওয়ার কথা বলে ঢাকায় এসে এডমিশন পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। একটা মাত্র ভার্সিটি তার লক্ষ ছিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর সেখানেই চান্স পেয়েছে সে। কিন্তু সে বুঝি জানে না ওই অমানুষটা তাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে ঠিক চলে আসবে? এতক্ষণে হারিকেন দিয়ে খুঁজছে গুন্ডা লোকটা তাকে। একটু হ্যান্ডসাম তাই বলে কী যা মন চায় তাই করবে? অধিকার যেখানে নেই সেখানে অধিকার খাটানোর প্রশ্ন আসে না। আর বাবা-মা গুলোও এক নাম্বারের গাদ্দার। ওই ছেলে বড় লোক দেখেই বুঝি মেয়েকে গলায় বুঝিয়ে দিতে হবে? ওইদিন এডমিশন পরীক্ষার উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার সময় রাস্তার জ্যাম দেখে এত রাগ হচ্ছিল তৃষার। ট্রেন মিস করলে সব শেষ। মুখে যা গালি এসেছে ইচ্ছে মতো দিয়েছে। আশপাশের সবাই যদিও চুপ থাকতে বলেছিল কিন্তু মাথাটা তখন কাজ করছিল না। এখন কোনো লোক যে গালি খেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে কে জানে? নিশ্চয়ই গালির প্রতিশোধ বাসর রাতে উসুল করবে বলে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া? নেতারা ওপর ওপর হাসে, ভেতর ভেতর মারে। তৃষা পাশ ফিরতেই রুমের মধ্যে শিমলার মা এসে একগাদা খাবার দিয়ে গেল। তৃষা আর সময় হয়তো বলত, ‘দরকার কী আন্টি? এত কিছু করার?’ তবে আজ পেটে ক্ষুধা। টেনশন থাকলে তৃষার ক্ষুধা লাগে বেশি। আগে খেয়ে বাঁচা যাক। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।’
তৃষাকে হলের ব্যবস্থা করতে হবে। একজনের বাসায় তো বিনে পয়সায় জলহস্তীর মতো এত খাওয়া যায় না? থাকা তো দূরের বিষয়! সেলফরেসপেক্ট বলে তো একটা কথা আছে? হঠাৎ ঘুরে ফিরে আবার যুবরাজ সরকারের কথা মাথায় এলো তৃষার। আচ্ছা সে বিপদে পড়ে গেলে কী করে বাঁচবে? হঠাৎ করে তৃষার অন্য একজনের কথা মনে পড়ে যায়। দুই বছর আগে কক্সবাজারে বিশাল একটা বিপদে পড়েছিল সে। ওই মুহূর্তে ফারাজ এলাহী নামক একটা সুপুরুষ তাকে বাঁচিয়েছিল। যদিও সুপুরুষের বাচ্চা, স্ত্রী সব ছিল। স্ত্রীর নাম চিত্রাঙ্গনা। কী তার রূপ!
তবে সেই মুহূর্তে ইচ্ছে করছিল মেয়েটার সতিন হয়ে যেতে। ফ্রিতে একটা বাচ্চাও পেয়ে যাবে। মন্দ হয়না। আর ফারাজ এলাহীর তো অঢেল টাকা। দুই বউ কেন? ১০০ বউ থাকলেও ম্যানেজ করতে কষ্ট হবেনা। ব্যাটার শরীর ভর্তি যেই কারেন্ট! সেইবার কক্সবাজারে এলাহী, তার স্ত্রী এমনকি এসিস্ট্যান্ট অভ্রনীল থেকে শুরু করে তার বউয়ের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। মেয়ে দুটো আসলে ভালো। তারা পরিচয় করিয়ে না দিলে হয়তো ছেলে দু’টো কথাও বলত না তার সঙ্গে। আর বলেছিলোই বা কী এমন? ফারাজ এলাহীর কথাই বলা যাক। তৃষা সুন্দর করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘হ্যালো আমি হলাম তৃষা নুজায়াত।’
ফারাজ হ্যান্ডশেক না করেই বলল, ‘ওহ আচ্ছা।’ মানে কী লেভেলের বউ ভক্ত ভাবা যায়? তৃষা সেই প্রথম দেখায় একটু বউ হতে চেয়েছিল শয়তান লোকটার। তবে তাকে বানিয়ে দিল বোন। ছ্যাহ! শালার জীবন। বছরে ৩৬৫ দিনে ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে বসে থাকা তৃষাকে যে অতবড় হ্যান্ডসাম টাকা ওয়ালা পাত্তা দেবে না, তা স্বাভাবিক নয় কী? না জানি যুবরাজ সরকার তার মধ্যে কি এমন কচু দেখেছে! ইশরে কচু দেখেছে মানে? তৃষা তো দেখার মতোই। তাকে দেখলে গলি-ঘুপচির সব ছেলেরই তৃষ্ণা বেড়ে যায়।
কাল সকালে ভার্সিটি আছে। প্রথম ভার্সিটি যাবে একটু রূপচর্চার দরকার আছে না? সেখানে গিয়ে সব ছেলেদের চোখ যেন তৃষার দিকে থাকে সেই ব্যবস্থাও তো করতে হবে। আবার রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমালেও ডার্ক সার্কেল পড়ে যেতে পারে। শিমলা গাজর খাচ্ছিল সেই গাজরটাও কেড়ে নিল তৃষা। কত কী বানিয়ে মুখে লাগালো। শিমলা অবাক হয়। এই মেয়েকে সে সারাদিন এসবই করতে দেখে। ব্যাগ ভর্তি এসব জিনিস। সেই চট্টগ্রাম থেকে ব্যাগে করে সে আলু,শশা,পেঁয়াজ এনেছে। সে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘কাল দেখবি পুরো ভার্সিটির তোর রূপের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তুই পরে সেই ছাই কুড়িয়ে বাসন মাজিস।’
‘তুই মাজ শালী। আমার হাত কী বাসন মাজার জন্য তৈরি হয়েছে? নখে মেনিকিউর পেডিকিউর করতে কত লাগে ধারণা আছে? মূর্খ রমণী।’
সেই ভোর থেকে তৃষা তৈরি হয়। প্রথম দিন বলে কথা। নায়িকা কারিনা কাপুর লাগতে হবে অবশ্যই। যাতে ভার্সিটির রিক্তিক রোশান গুলো তার ওপর লাড্ডু হয়ে যায়। কিন্তু এটা তো বাংলাদেশ! ছেলেগুলো যদি ডিপজল হয়? মাথায় বিরাট একটা চিন্তা নিয়ে ভার্সিটির গেটে প্রবেশ করতেই দমকা হাওয়ার মতো একটা বাইক তার সামনে দিয়ে যায়। আচমকা মনে হলো পাশ দিয়ে কোনো জ্বীনের বাদশা তার আলাদিনের জাদুর গালিচা দিয়ে গতিবেগ ৪০০ বজায় রেখে দৌড় দিলো। সেই একটা ঝটকায় তাল সামলাতে না পেরে সামনের গর্তমতো জায়গাটায় জমে থাকা পানিতে গিয়ে পড়ল তৃষা। শিমলা তাকে উঠানোর বদলে বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসল। সেই হাসি দেখে তৃষার মেজাজ গরম পর্যায়ে গরম হলো। মনটা চাইছিল টেনে এই পানিতে মীরজাফরের বংশদরকে চুবিয়ে মারতে। তৃষা কিছু বলতেও পারছে না। আশপাশের মানুষ চেয়ে চেয়ে হাসছে। এখন এখানে নিজের উচ্চমাত্রার গালি গুলোও ঝাড়তে পারবে না। তখন মানুষ তো তৃষাকে হেব্বি নিচু লেভেলের ভাববে। তৃষা নিজে নিজে উঠে দাঁড়ালো। হাতের মধ্যে সেই নোংরা পানি লেগেছে। হাতটা নাকের কাছে নিয়ে শুকতেই গর্ভবতীর মহিলার মতো বমি চলে আসতে চাইল। তৃষা নিজেকে সামলে বলল, ‘কুল তৃষা কুল।’
পাশ দিয়ে একটা ছেলে যাওয়ার সময় তৃষাকে দেখে হেসে বলল, ‘আপুমণি ওই জলে একটু আগেই হিশু করেছিলাম। আমার এত দামী হিশুর সুগন্ধীটা যে আপনার হাতে লেগে গেল। ক’জনের সৌভাগ্য হয় এমন পারফিউম গায়ে মাখার?’
তৃষার তো মন চাইছে এটাকেও জলে ঢুবিয়ে ইন্ডিয়ার বর্ডারে ফেলে দিয়ে আসতে। তবে সে অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করল। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। হাতে সময় নেই। তৃষা তাড়াহুড়োয় ক্লাসের ভেতর ঢুকতেই হঠাৎ একটা লম্বাচওড়া লোকের সঙ্গে ধাক্কা খেল। এত তাড়াহুড়োয় ছিল কার সঙ্গে ধাক্কা খেল এত মাথায় নিল না। ক্লাসের ভেতর বসে দশটা মিনিটও জিরিয়ে নিতে পারল না মেয়েটা। ওমনেই দুটো মেয়ে ক্লাসে এসে বলল, ‘লাস্ট দশ মিনিটে ক্লাসে কোন কোন মেয়ে প্রবেশ করেছে?’
তৃষা তখনো সেসব কথায় পাত্তা দেয়নি। আরো দুই-চারটে মেয়ে আগেই দাঁড়িয়ে গেছে। হঠাৎ একটা মেয়ে বলল, ‘ওই যে সামনের দিকের ডান পাশে যে মেয়েটা বসে আছে সেও একটু আগেই ঢুকল।’
তৃষা তখনো ব্যাগ থেকে আয়না বের করে মুখ দেখতে ব্যস্ত। কেন যে প্রফেসর এখনো আসছে না? ধ্যাৎ! মেয়ে দু’টো একেবারে তার সামনে এসে আয়নাটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলে, ‘নাম কী? সিনিয়র সামনে দাঁড়িয়ে আছে চোখে দেখতে পাও না?’
তৃষা একটু অবাক হলো। মনে মনে বলল, ‘এরা আবার কোন আপদ?’
মেয়ে দুটোর মধ্যে থাকা চিকনমতো মেয়েটা বলল, ‘নাম কী তোমার? দেখে তো মনে হচ্ছে বেশি বয়স ও না।’
তৃষা মনে মনে বলে উঠল, ‘তো আপনাদের মতো দামড়া লেজ ছাড়া জলপরী দেখতে লাগছে নাকি?’
‘উঠে পড়ো।
‘কোথায় উঠব?’
‘তুমি তো ভারী বেয়াদব। তোমাকে পরে ধরছি। চলো প্রেম অপেক্ষা করছে।’
‘এই আপু দেখেন। আমার এখন পড়ালেখার বয়স। প্রেম-ভালোবাসা আমার জন্য অপেক্ষা করলেও আমি যেতে পারব না। ওদের বলেন পরে দেখা করব।’
তৃষা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু শিমলা তাকে থামিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘সিনিয়র হয়। ওদের সঙ্গে লাগতে গেলে ওরা একেবারে লাগিয়ে দেবে। জলদি যা। আর যাই বলবে না কেন সরি বলবি। নিচের দিকে চেয়ে থাকবি।’
‘এখন মাথায় বসতে বললেও বসব নাকি?’
‘চুপ কর। যাহ।’
বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের নিচে তৃষা সহ বাকি মেয়েগুলোকে দাঁড় করানো হলো। একেবারে লাইন ধরে। তৃষা আন্দাজ করতে পারছে এখানে যা কিছুই হয়ে যাক না কেন ভালো কিছু তো কখনোই হবে না। তৃষা দাঁড়িয়েছে একেবারে পেছনে। এক এক করে দেখছে সামনের দিকে যাচ্ছে। তারপর সোজা ক্লাসে চলে যাচ্ছে। তবে কার কাছ থেকে ফিরে আসছে দেখতে পাচ্ছে না। সামনে মনে হয় শাহরুখ খান বসে আছে! ঢং। তৃষার পালা আসতেই সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখতে পায় বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে আছে এক উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের সুপুরুষ। সাদা একটা গেঞ্জির ওপর জলপাই রঙের শার্ট পরহিত। শার্টের বোতাম খোলা। চুলগুলো এলোমেলো গাঢ় ছুঁই ছুঁই। গলায় কিসব ঝুলিয়ে দেখেছে। হাতেও কত রকমের অদ্ভুত ব্রেসলেট। ঘড়ি নেই।
কিন্তু কেন? সময় দেখারও সময় নেই বলে? দেখে তো মনে হচ্ছে পুরানঢাকার খানদানি কোনো বংশের বিগড়ে যাওয়া সুদর্শন লাফাঙ্গা। যাকগে সিনিয়র সাহেব বুঝি উনিই? তৃষার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আছে। এই ছেলে নির্গাত তার রূপ থেকে থমকে যাবে। ওই অদ্ভুত দেখতে গলায় ঝুলিয়ে রাখা কিংবা হাতের ব্রেসলাইট গুলোর সঙ্গে কোনোভাবে যদি তৃষার ওরনা আটকে যায় তো ব্যাকগ্রাউন্ডে লালালালালালা মিউজিকটা কী বাজবে কী? তৃষার এত সব কল্পনায় ছেদ ধরিয়ে সেই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা তুরী বাজালো। তৃষার হুঁশ ফিরতেই বলল, ‘এই যে মিস ট্যাবলেট, কাম হেয়ার।’
পাশ থেকে সবাই হেসে উঠতেই লোকটা তাদের দিকে তাকালো। মুহূর্তেই সবাই থমকে গেল। তৃষা একটু অবাক হলো বটে। কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী আমার যে উনাকে দেখে সবার ভয়ে জামা কাপড় ভিজিয়ে ফেলতে হবে? তৃষা এগিয়ে গিয়েই বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘দেখা হয়েছে আমাকে? হলে বলুন কেটে পড়ি।
আশপাশের সবাই তা শুনে আবার কানাঘুষা করছে। এই মেয়ের সাহস দেখছো? আজকেই এসেছে আর আজকেই এত বেয়াদবি? আর সে জানে তার সামনে কে বসে আছে? পেছন থেকে একটা মেয়ে তৃষাকে টেনে কষে দুটো লাগাতে যাবে তার আগেই লোকটা বলল,
‘আমি আছি তো। ওকে বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের ক্লাসে পাঠা জলদি।’
তৃষা সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস জিজ্ঞেস করে উঠল, ‘সেখানে গেল?’
‘বায়োলজির প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করাবো যে। জাস্ট কাম ফাস্ট। আর হ্যাঁ আমি প্রেম। প্রেম নেওয়াজ।’
রুমের মধ্যে একঘেয়ে ফ্যানটা চলছে। বেঞ্চে ওপরে ভালো করে বসল প্রেম। তৃষা তার ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে লক্ষ করল প্রেম। তারপর বলল, ‘ব্যাগটা দাও।’
‘ব্যাগে পার্সোনাল জিনিস আছে।’
‘দিবি বাল? ছিনিয়ে নেওয়ার অভ্যাস আছে কিন্তু।
ধমকের চোটে তৃষা ব্যাগটা দিতে দেরি করল না। প্রেম ব্যাগ হাতড়ে একটা লাল লিপস্টিক পেল। ভালো করে দেখে একবার হাসল। কিন্তু কঠিন সেই হাসি।
‘সিনিয়রদের যে সালাম দিতে হয় তা জানা আছে?’
‘আছে?’
‘ওইসময় তাড়াহুড়োয় যে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলে। সালাম তো দূরে থাক সরিও বললে না। কাজটা কী ভালো হয়েছে?’
‘না একেবারে পঁচা। আচ্ছা আসসালামু আলাইকুম, আর দুঃখিত।’
‘হোপ তোর সাথে মজা করছি? তামাশা চলছে? দেব বাম হাতে একটা কষিয়ে তখন মজা বুঝবি।’
‘সরি,সরি।’
প্রেম নিজেকে শান্ত করে এবার গলার স্বর বদলে বলল, ‘লাল লিপস্টিকটা ঠোঁটে ঘষে আমার গালে একটা শক্ত চুমু দাও তো। তবে চাইলে ঠোঁটেও দিতে পারো।’ ঠান্ডা গলায় বলল প্রেম।
তৃষা ভয়ে কেঁপে উঠল। ‘ভাইয়া।’ ফিসফিস করে বলল।
‘তোর ভাইয়া গেছে জাহান্নামে। তুই চুমু দে আগে বাঁদরমুখী!’ প্রেম গর্জে উঠল।
তৃষার শরীরটা ঝাঁকুনি দিল। সে চোখ নামিয়ে বলল,’সরি ভাইয়া। পরের বার সালাম মিস হবে না। ভার্সিটিতে আপনাকে দেখলেই সালাম দেব।’
‘তুমি আগে চুমু দেও দাও পাখি। সালাম পরের বারের জন্য তুলে রাখলাম।’
তৃষার ভয়ে ঠোঁট কাঁপছে। পুরো ভার্সিটির শত শত শিক্ষার্থী তার দিকেই চেয়ে আছে। কানাঘুষা করছে। হাসছে। লজ্জা আর ভয়ে তৃষার নাজেহাল অবস্থা। প্রেম তুরি বাজাতেই তৃষার হুঁশ ফিরল। সে কাঁপা গলায় পুনরায় বলল, ‘কানে কথা ঢোকে না? ভার্সিটির হলের রুম গুলো কিন্তু পুরোই ঝাক্কাস। যা বলেছি জলদি না করলে কিন্তু সেই রুমের সফর করিয়ে আনব।’
‘আমার আর ভুল হবে না। এবারের মতো ক্ষমা করা যায় না?’
‘ধ্যাৎ শালী।’ প্রেম তৃষার দিকে এগিয়ে এলো। হাতের সিগারেটটা ফেলে ধোঁয়া ছাড়ল ঠিক তৃষার মুখ বরাবর। সরু চোখে তৃষার দিকে তাকিয়ে ফু দিয়ে চোখের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে হঠাৎ করেই গাল চেপে ধরে বলল,’তুই চুমু দিবি নাকি আমি থাপড়ে চুমু আদায় করে নেব?’
তৃষা কোনো করবে উপায় না পেয়ে চোখটা বন্ধ করে ঠোঁট এগিয়ে দিতেই তৎক্ষণাৎ প্রেম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘মুড নেই সোনা। ‘
প্রেম কেমন কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছে। একপর্যায়ে তৃষাকে বলল, ‘ভয়ে আবার কেউ জামাকাপড় ভিজিয়ে দিলো নাকি? কেমন একটা ওই ধরনের খাটাশ গন্ধ নাকে ধাক্কা খাচ্ছে।’
তৃষার আর এই গন্ধের ইতিহাসের বিষয়টা বুঝতে সময় লাগল না। তাকে এমন ঘাবড়ে যেতে দেখে প্রেম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই বলল, ‘ইয়ে মানে আমি মুতুর মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।