প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৭

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৭
জান্নাত নুসরাত

নুসরাত রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আরিশা আর আহানের রুমে গেল। রুমে গিয়ে দেখে দু-জন বসে কথা বলছে। আহান উঠে দাঁড়ালো! নুসরাতকে দরজার সামনে দেখে ভিতরে আসতে বলল। নুসরাত রুমে ঢুকে ঠাস করে আহানের বিছানায় শুয়ে পড়ল। নুসরাতকে দেখে আহান গাইগুই করলো। নুসরাতের সামনে কীভাবে কাজটা করবে? বড় আপু মাথা ফাটাবে তার।
নুসরাত চুপ করে তাকিয়ে দেখলো হচ্ছে কি এখানে? আহান নাক – মুখ বিকৃত করে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল আর নুসরাত এসে সেটায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, এরুপ মুখ বানিয়ে তাকিয়ে আছে আহান।

“কি? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে পারলে তুই আমায় কাঁচা চিবিয়ে খাবি!
” কিছু না!
“যা করার কর। আমি কিছু বলবো না। মনে কর আমি এখানে নেই, এখন কি করতে চাইছিলি কর?
নুসরাতের কথা শুনে আহান উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। নুসরাতকে পাম দিয়ে বলল,” এই জন্য বড় আপু তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে।
নুসরাত লজ্জা পেয়েছে এমনভাবে মুখ লুকালো। মুখে হাত রেখে হেসে উঠলো।
“হয়েছে,হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। কি করবি কর? আমি লজ্জা পাই, এসব বলবি না আমার সামনে।
আহান বই রাখা বক্স থেকে চুল কাটার মেশিন তারপর ব্লেড বের করলো। নুসরাত খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে তাকিয়ে তাকলো এরপর কি হয় দেখার জন্য? আহান ব্লেড হাতে নিয়ে আরিশার কাছে গেল। নুসরাত শুয়ে শুয়ে এদের গতিবিধি লক্ষ করছিল!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ব্লেড নিয়ে আরিশার ভ্রু ঘষতে শুরু করলো। নুসরাত ধমক দিল,” কি করছিস এসব? আরুর ভ্রুর মাঝে ব্লেড ঘষছিস কেন? ভ্রু উঠে যাবে তো!
“আরে, বড় আপু চুপ করে শুয়ে থাকো তো, আমি আরুকে নিউ ভ্রু ডিজাইনিং করে দিচ্ছি। অলড ডিজাইন হয়ে গিয়েছে এসব। তুমি চাইলে, আমি তোমাকে ও ডিজাইন করে দিতে পারি।
” না ভাই লাগবে না! তুই আরুকে নিউ ভ্রু ডিজাইন করে দে। আমার টা ঠিক আছে!
নুসরাত আরাম করে বিছানায় শুয়ে সামনে তাকিয়ে রইলো। আহান চুল কাটার মেশিন নিয়ে আরুর কাঁধ সমান চুল হাতে নিল। মেশিন চালিয়ে চুল কাটতে গেল! নুসরাত লাফ দিয়ে উঠে মেশিন টেনে নিয়ে গিয়ে আহানের মাথায় গাট্টা মারলো। আহান বিরক্ত হয়ে নুসরাতের দিকে তাকাল।নুসরাত কে ঝাড়ি মারলো।

“উফ বড় আপু ডিস্টার্ব করছ কেন?
” থাপড়ে উপরের পাটির দাঁত ফেলে দিব। ভ্রু ডিজাইন করছিস কর না ভাই, ছোট্ট মেয়েটার চুলের পেছনে পড়লি কেন? ওর চুলে হাত দিবি আমি তোকে টাকলা বানিয়ে দিব। আরু এবার ওর ভ্রু তুই ডিজাইন করে দে, বলদির মতো হা করে বসে রয়েছিস।
আহানকে শাসিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল নুসরাত। ইশারায় বলল শুরু কর। আরিশা চুল কাটার মেশিন দিয়ে আহানের মাথার মাঝখানে চুল কেটে দিল। আহান হাত দিয়ে ডান পাশ দেখালো দেখিয়ে বলল এই পাশ ও ডিজাইন করে দেওয়ার জন্য। আরিশা চারপাশ থেকে একটু একটু চুল কেটে আহানকে আবুল বানিয়ে দিল। এরপর ব্লেড দিয়ে আহানের ডান ভ্রু মাঝ বরাবর ঘষলো। বাঁ-ভ্রু ঘষতে যাবে রুহিনি রুমে এসে ঢুকলেন। আরিশার আর আহানের ভ্রু দেখে হায় হায় করে উঠলেন। নুসরাত অলস ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল। হাত উপরের দিকে তুলে আড়মোড়া ভাঙল। আবার বিছানায় বসলো।

“নুসরাত আম্মা তুমি দেখনি এরা এসব করছে।
” হ্যাঁ, আমার সামনে দাঁড়িয়েই তো করলো। আমি দেখেছি তো!
“তাহলে নিষেধ করলে না কেন?
” আরে, ছোট আম্মু বাচ্চাদের ও তো একটু স্বাধীনতা দিতে হবে। তাই আমি ওদের স্বাধীনতা দিয়েছি। এই তো সময় লাইফ ইনজয় করার। এখন না করলে কখন করবে। নাহলে সারা বছর আমার মতো ডিপ্রেশনে থাকবে।
আহান আর আরিশা সমস্বরে বলল,
“ঠিক ঠিক!
” যাও সরো তো এখান থেকে, তোমার উপর এখন আমার রাগ আসতেছে।
“তাহলে তো আর এখান থেকে সরব না ছোট আম্মু,আজ পুরোদিন তোমার সাথে লেগে থাকব।
” উফ, ভালো লাগে না! এদের তো নিষেধ করা উচিত ছিল। আহানরে আজ তোরে কেউ বাঁচাতে পারবে না তোর বাপের হাত থেকে। আর আরিশা তুমি বোকা নাকি ও তোমার ভ্রু কেটে ফেলল আর তুমি বসে ওকে ভ্রু কাটার পারমিশন দিলে। কি বিচ্ছিরি লাগছে তোমাকে?

“আম্মু আমাকে সুন্দর লাগছে না।
আহানের গুলগাল মুখের দিকে গভীর মনযোগ দিয়ে তাকালেন রুহিনি। নুসরাত হেসে দিল আহানের চুলের কাটিং দেখে। রুহিনি ও হেসে দিলেন।
” আহানরে তোরে ছোঁবলা মুরগীর মতো লাগতাছে।
নুসরাত আর রুহিনি হেসে গড়াগড়ি খেলেন। আরিশা মায়ের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে তাকল। তাদের মা তাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে। এটা কোনো কথা? যেখানে নুসরাতকে বকা দিবে কেন তাদের আটকালো না? সেখানে নিজে তাদের নিয়ে হাসছে!
“আহান আয় বাপ তোর চুলগুলো কেটে টাকলা করে দেই।
” আম্মু নিউ ডিজাইন করব আমরা।
আহানের গালে, নাকে, ঠোঁটে চেপে চুমু খেলেন রুহিনি।
“হ বাপ আয়, তোকে নিউ ডিজাইন করে দেই।

সকালে ইসরাতের সাথে ঝগড়ার জন্য ইসরাতের সাথে কথা বলছে না নুসরাত। ইসরাত কথা বলতে গেলে কথার উত্তর দিচ্ছে না। চুপচাপ বসে আছে। ইসরাত অনেক চেষ্টা করল তারপর ও কথা বলল না। এটা সচারাচর হয়ে থাকে। ইসরাতের সাথে ঝগড়া হেরে গেলে বা ঝগড়ার কেউ এসে ইসরাতের হয়ে কথা বললে নুসরাত ইসরাতের সাথে রাগ করে বসে থাকে। ইসরাত রুম থেকে বের হচ্ছে না! তার কি রকম লজ্জা লাগছে। বড় চাচি তার শাশুড়ি আম্মু হয়ে গিয়েছে। ওদের সামনে যেতে কী রকম অস্বস্থি হচ্ছে? আর জায়িনের সামনে দাঁড়াবে কীভাবে? উফ, এতো লজ্জা কোথায় থেকে আসলো নিজের ভিতর, ইসরাত ভেবে পাচ্ছে না! তাই রুমে বসে আছে।
বাড়ির সবাই নিজ নিজ রুমে দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দিচ্ছে। নুসরাত ইসরাতের রুমে যাচ্ছে না। আজ সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরছে। অনিকা আজ বাহিরে গিয়েছে ফ্রেন্ডেদের সাথে আউটিংয়ে তাই সারাদিন অনিকার রুমে পড়েছিল। অনিকা কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে আসছে তাই ইরহামের রুম নুসরাত দখল করেছে। ইরহাম বলল নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। নুসরাত এক ঝাড়ি মেরে ইরহামের মুখ বন্ধ করে দিল। তার কিছুক্ষণ পর আবার বলল নুসরাতকে নিজের রুমে যাওয়ার কথা। নুসরাত নড়লো না বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপাতে শুরু করলো।

” বোন আমার! নিজের রুমে যা! আমার শরীর ব্যথা করছে একটু ঘুমাবো।
নুসরাত মাটির দিকে ইশারা করে বলল,
“এখানে ঘুমিয়ে পর।
“বইন আমার প্লিজ যা তোর রুমে। আমার রুম খালি কর, আমার রুমে কেন আসলি? আরশ ভাইয়ার রুমে যা খালি আছে না হলে জায়ান ভাইয়ার রুমে, আর তা না হলে দাদির রুমে যা, এতে যদি না হয়, আম্মু,ছোট আম্মু,বা চাচির রুমে যা।
” দূর ওদের রুমে কেন যাব? আমি মানুষের রুমে গিয়ে কি করব?
“তুই তাহলে আমার রুম থেকে বের হ? আমাকে কি তোর মানুষ মনে হয় না। প্লিজ বইন যা…
নুসরাত নড়লো না। ঘাড়ত্যাড়ার মতো পড়ে রইলো। তার এককথা সে এখান থেকে নড়বে না। প্রয়োজন হলে তুই যা, আমি যাব না।
” বইন প্লিজ বোন যা, তোর দুই পায়ে পরি যা! আমার মতো মানুষ এতো আরজি করছে তারপর ও তুই কেন যাচ্ছিস না?

নুসরাত কিছু খোঁজার ভঙ্গিতে আশে পাশে তাকালো।
আশ-পাশ খুঁজে কপালে ভাঁজ ফেলে ইরহামের দিকে তাকালো।
“মানুষ কই? আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না।
” এই যে আমি মানুষ তোর চোখে পড়ছে না।
“তুই কিসের মানুষ? তুই একটা অমানুষ! দেখছিস একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে আছে তার মধ্যে এতো ডিস্টার্ব করছিস। আমি ঘুমাবো বিদায় হ আমার রুম থেকে।
” স্যরি টু সেয়,এটা আমার রুম। আপনি ভুল করছেন আপা।
“যা ভাগ শালা আমি এখান থেকে আজ নড়ব না। আজ যা খুশি তাই হয়ে যাক। আজ থেকে এটা আমার রুম।
ইরহামের সহ্য সীমার বাইরে চলে গেল। নুসরাতের হাত ধরে একটানে বিছানা থেকে তুলে ঘাড় ধরে রুম থেকে বের করে দিল।

” যা শালি ভাগ!
“তুই শালা আমাকে বের করে দিয়েছিস। আমি ভাবছিলাম সৌরভির সাথে তোর কিছু একটা করে দিব এখন যখন বের করে দিলি তখন আর কি করার? তুই বাল সিঙ্গেল মরবি! তোর এই কপালে জিএফ নাই।
নুসরাত ভাবসাব নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। মনে মনে গুণল ৩, ২, ১, এন্ড ০। পিছন থেকে ইরহাম ডেকে উঠলো। নুসরাত মনে মনে হি হি করে হাসল। ইরহামের ডাক না শোনার ভান করে ধীরে ধীরে হাঁটলো যাতে আবার ডাক দেয়। ইরহাম আবার ডাকল! নুসরাত একবার পিছনে রাগী মুখ নিয়ে তাকিয়ে সামনে চলে গেল। ইরহাম নুসরাতের পাশে দৌড়ে এসে তোষামোদ করলো, “বোন রাগ করিস না। আমি তো এমনি বলছি, কত কি বলি? আমরা ফ্রেন্ড এসব ধরলে কি হয়? রাগ করিস না! আয় বোন আয়, আমার রুমে চল, প্রয়োজন হলে আমি আম্মুর রুমে চলে যাব, তুই আমার রুমে থাক।
নুসরাতকে কথা বলতে না দেখে বলল ইরহাম,
” আমার রুম তোকে দিয়ে দিলাম রাগ করিস না বোন। আয় রাগ করে থাকিস না। আমার কিউট বোনুটা।
নুসরাত মনে মনে হেসে গড়াগড়ি খেল। ঢিল ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগেছে। নুসরাত বলল, “আহ,এতো কথা বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি তুই তোর কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। আচ্ছা বৎস কষ্ট পেও না! আমি তোমাকে ক্ষমা দিলাম।
ইরহাম বিনা বাক্যে সব মেনে নিল। নুসরাত দুতলার রেলিং ধরে বসে গেল।

” আমাকে টেনে নিয়ে যা তোর রুমে!
ইরহাম নুসরাতের হাতে ধরে টেনে নিয়ে গেল তার রুমে। নুসরাত মেঝেতে বসে বসে বিছানায় গিয়ে উঠে বসলো।
“এবার বল, তুই কি করবি সৌরভির সাথে।
” কিছু করার কথা ছিল।
“একটু আগে,,,
” ও হ্যাঁ! পানি খাওয়া ভাই গলায় শুকিয়ে গেছে। এসব করতে গেলে তো এনার্জি লাগে!
ইরহাম পানি আনতে খাবার টেবিলে গেল। নুসরাত ফোন দিল সৌরভিকে।
“হ্যালো বল!
” তোর আশিক তোকে মিস করছে। সাদিয়াকে নিয়ে চলে আয় আমাদের বাড়িতে। পাঁচটার সময় চলে আসিস! আজ রাতে থাকবি কাপড় নিয়ে আসিস।
“আচ্ছা।

নুসরাত ফোন রাখতেই ইরহাম ঝড়ের গতিতে পানি নিয়ে আসলো। নুসরাত পানি খেয়ে আরাম করে বসে রইল।
” কি করবি বললি না?
” তোর প্রেমিকা বিকেলে আসবে, তখন কিছু করব। এখন আমার রুম থেকে বিদায় হও।! ইলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।
ইরহাম নুসরাতের পায়ে লাথ মেরে চলে গেল। নুসরাত লাথ খেয়ে হি হি করে হাসল। ইরহাম বিড়বিড় করে বলল,”পাগল বেডি মানুষ! মেন্টাল কোথাকার? তুই পাবনায় থাকার কথা ছিল। আমাদের বাসায় কি করিস?
ইরহামের অপমান নুসরাত গায়ে মাখলো না। মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে অপমান সব উড়িয়ে দিল নুসরাত। ইরহাম কে ভেঙ্গিয়ে হাসল দাঁত বের করে হি হি করে।

বিকেলের দিকে সৌরভি আর সাদিয়া আসলো সৈয়দ বাড়িতে। নুসরাত কিচেনে গেল টুকটাক খাবার আনার জন্য। গিয়ে অবাক হয়ে তাকালো। আরশ ব্ল্যাক কফি তৈরি করছে। এসময় ইরহাম আর হেলাল সাহেব ছাড়া পুরুষ মানুষ বাড়িতে কেউ থাকে না। তাহলে আরশ কি করছে কিচেনে? যাক গে, এটা আমার ভাবার বিষয় না। যার যা করার করুক,আমার কি?
নুসরাত কিচেনে ঢুকতেই একবার আরশ পিছন ফিরে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আবার কফি বানাতে মন দিল। নুসরাত চামচ চারটা , জুস, লেইস, প্রিগ্গেলস হাতে নিল। ফ্রিজ খুলে আইস্ক্রিম বের করলো। দু-হাত ভরে যাওয়ায় খাবারের জিনিসে পা দিয়ে ফ্রিজের দরজা লাগালো। ফ্রিজের দরজা লাগাতে গিয়ে বেশ জোরে শব্দ করল।
“ভেঙে ফেল! এটা এতো ধীরে লাগানোর কি দরকার ছিল?
নুসরাত কথা বলল না। বলুক, আর কয়দিন আছে ও এ বাড়িতে দু-দিন পর জামাইয়ের বাড়ি চলে যাবে। তখন মিস করবে! তাহলে আর মানুষের সাথে ঝগড়া করে কি হবে? নুসরাত ভালো হয়ে গিয়েছে এখন।
আরশের কপালে ভাঁজ পড়ল। আজ-কাল নুসরাতের ভিতর বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে কথা বললেই ঝগড়া লাগাতো যে মেয়ে সে এখন চুপচাপ কথা শুনছে।
নুসরাত খাবার গুলো এক পাশে রেখে চামচ ধুতে গেল।

” আমার কাপটা ধুয়ে এদিকে দে।
নুসরাত চুপচাপ ধুতে গিয়ে বাঁধলো বিপত্তি। পায়ের সাথে পায়ের পেচ লেগে ঠাস করে পড়ল মেঝেতে সাথে আরশের নিজস্ব মালিকানার কাপ ও পড়ে মেঝেতে ভেঙে গেল। আরশ হা করে তাকিয়ে তাকল কাপের দিকে।
রাগে ইচ্ছে করলো নুসরাতের চুলের গোড়া ছিঁড়ে ফেলতে। নুসরাত মেঝেতে পরে ব্যথা পেল। ব্যথা ভুলে ধীরে ধীরে হি হি করে হেসে উঠলো, আরশের মুখে রিয়েকশন দেখে। তা কিছুক্ষণ পর জোরালো হাসিতে রুপান্তরিত হলো। নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকালো আরশ। নুসরাত হাসি থামালো না, ওইভাবে মেঝে থেকে উঠে বসলো! অন্যদিকে মুখ ঘুরালো! তারপর মুখে হাত দিয়ে চাপা দিয়ে হা হা করে হেসে উঠলো। হাসির সাথে কোমরে ব্যথা অনুভব করলো। তবুও হিহি করে হাসল! হাসি থামাল না!
আরশ রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে নুসরাতের চা খাওয়ার কাপ সজোরে মেঝেতে ফেলল। সেটা পরে গিয়ে ভেঙে চূর্ণ – বিচূর্ণ হয়ে গেল।

গ্যাসের উপর বসানো কফির পাত্রটা পানি শুকাতে শুকাতে পুড়ে গেল। পুড়া গন্ধ নাকে লাগতেই আরশ তাড়াতাড়ি করে গ্যাস বন্ধ করলো। কফি বানানোর পাত্র বেসিনে পানির ট্যাপ চালিয়ে ভিজিয়ে রাখলো।
নুসরাত দুঃখি দুঃখি মুখ বানিয়ে চা খাওয়ার কাপের দিকে তাকিয়ে তাকলো। আরশের মনে হলো এবার কিছুটা শান্তি লাগছে,নুসরাতের দুঃখি দুঃখি মুখ দেখে!
মুখ করুন বানিয়ে আরশের দিকে তাকালো। মুখে কষ্ট ফুটিয়ে বলল,”ভেঙে দিলেন?
আরশ রাগী গলায় বলল,
” হ্যাঁ ভেঙে দিয়েছি! কি এক শান্তি লাগতেছে রে নুসরাত তোর এই দুঃখি মুখ দেখে।
নুসরাত আরশের কথায় এক বাল্টি পানি ঢেলে হেসে উঠল। হেসে কিচেনের মেঝেতে গড়াগড়ি খেল।
“আরশ……. ভাইয়া সামান্য কাপের জন্য এই আমি নুসরাত দুঃখ পাব ইমপসিবাল। আমি বড় বড় জিনিসের জন্য দুঃখ পাই না, সেখানে কীভাবে সামান্য কাপের জন্য দুঃখ পাব?
মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করলো নুসরাত।

“আরশ,,,,,, ভাইয়া আপনি এখনো আমাকে চিনতে
পারেননি।
” অনেক টাকা হইছে না, এজন্য কাপ ভাঙায় কষ্ট হচ্ছে না! গাল চেপে ধরে মেরে ফেলবো মেয়ে। আর তুই আমার সামনে হাসবি না। তোকে হাসতে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। ইচ্ছে করে তোর ঠোঁট দুটো সেলাই করে রেখে দেই।
“উফ আরশ কি মধুর কথা শোনালেন ? আমি ধন্য, আপনি আমাকে দেখে বিরক্ত হচ্ছেন। আপনার মতো একজন গণ্যমাণ্য ব্যাক্তি। এটা তো আমার এতো জীবন বেঁচে থাকার পাওনা! জীবন টা ধন্য হয়ে গেল।
নুসরাত চুমু খেল নিজের হাতে তারপর তা নিয়ে নিজের গালে লাগালো। এমন বোঝালো আরশকে, হাতে নয় গালে চুমু খাচ্ছে।
” জিও নুসরাত জিও। আরশ ভাইজান তোমারে দেখে বিরক্ত হচ্ছেন। তুমি কত ইস্পিশাল ব্যাক্তি, মানুষ তোমাকে দেখে বিরক্ত হয়।
আরশ বিরক্তিতে চিড়বিড় করে উঠলো। এই মেয়ে এতো কথা বলে কেন? এর কথা শুনে তো তার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে।

“চুপ চুপ একদম চুপ! মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের হলে গলির মুখের কুকুর গুলোর কাছে ছেড়ে আসব তোকে।
” আমি কুকুরকে ভয় পাই নাকি? মনে হচ্ছে কুকুরের কাছে রেখে আসলে আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্না করব। একসময় কত কুকুর মেরে তাড়িয়েছি তার কোনো হিসেব নেই!
“এতো কথা বলিস কীভাবে মুখে ব্যথা হয় না?
নুসরাত মাথা দিয়ে দু-পশে নাড়ালো, তার মুখে ব্যথা হয় না।
” তুই কি ভয় পাস?
নুসরাত চুপ করে বসে রইলো মুখে আঙুল দিয়ে। আরশ চোখ দিয়ে বলল কথা বলার জন্য নুসরাত তবুও চুপ।
“কি কথা নেই কেন?
“আপনি না করেছেন কথা বলতে।
” অ এম জি! আপনি আমার কথা শুনছেন, এই আরশ ধন্য হয়ে গেল। আপনার মতো বেয়াদবকে নিজের কথা মানাতে পেরে। কি ভয় পাস তুই? তেলাপোকা, ইদুর, বিড়াল, টিকটিকি, মাকড়সা কোনটা।
“কোনোটা না!

“আমি শুনেছি মেয়ে মানুষ এসব ভয় পায়। তুই কি মেয়ে? আমার সন্দেহ হয়। তুই পোশাক আশাক পড়িস ছেলেদের মতো, হাঁটিস ছেলেদের মতো! আমি চিন্তিত তোকে নিয়ে নুসরাত। তুই কি সত্যি মেয়ে?
শেষের কথাগুলো সন্তর্পণে এড়িয়ে গেল নুসরাত। শুধু জিজ্ঞেস করলো,” মেয়ে মানুষের উপর পিএইচডি মনে হয় করেছেন।
“এসব কথা তোকে কে বলল?
” আপনার কথায় মনে হচ্ছে। আচ্ছা অনেক ফালতু কথা বলছেন, আমি ও শুনেছি। এবার আমাকে মেঝে থেকে তুলুন। পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পাইছি। আল্লাহ গো…
নুসরাত হাত বাড়িয়ে দিল তোলার জন্য আরশ টেনে তুলে দাঁড় করালো। নুসরাত পুরো ভর আরশের উপর ছেড়ে দিল।
” ওজন কম দে। এতো ভারী কেন তুই?
“এই আমার মতো এতো হালকা মানুষের সামান্য ভর যদি না নিতে পারেন তাহলে এসব বালের জিম করে কি হবে?তা ও আমি নিজের ভর নিজের কাছে রেখেছি, কিছুটা আপনার উপর দিয়েছি। শুধু আপনি আমাকে ধরে ইরহামের রুমে দিয়ে আসলেই হবে। এই সামান্য ভর আপনি নিতে পারছেন না ভাই। আপনি কি রকম ভাই? আমি আপনার বোন হয়ে লজ্জিত।
” হয়েছে হয়েছে আর কথা বলতে হবে না।
আরশ নুসরাতকে ধরতে অস্বস্থি হলো। কোমর ধরতে গিয়ে হাত ফিরিয়ে আনলো! নুসরাতকে কীভাবে ধরবে কোনো পথ খুঁজে পেল না?

“কীভাবে ধরে নিয়ে যাব?
” যেভাবে ধরে নিয়ে যায়, সেভাবে নিয়ে যান!
আরশ নুসরাতের দু-কাধ বুকের সাথে চেপে ধরলো। নুসরাত কোমরের ব্যথা ভুলে লাফ দিয়ে সরে গেল।
“ভাই আপনি খাবারগুলো নিয়ে আসেন। আমি চলে যাব কোনো রকম? আর না যেতে পারলে অনিকা কে ডেকে নিব। আপনি শুধু খাবারগুলো পৌঁছে দিন।
আরশ আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে নুসরাতের দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো। নুসরাত এভাবে তাকাচ্ছে কেন বুঝলো না। জিজ্ঞেস করল,” কি?
“তুই একা এই আইস্ক্রিমের বাটি খাবি। আর কেউ খাবে না, এই বাড়িতে এতো গুলো বাচ্চা আছে সেগুলোর কথা ভুলে গেলি। নিজে একা এতো বড় একটা আইস্ক্রিমের বাটি খেয়ে ফেলবি।
নুসরাত কিচেনের দেয়ালের সাথে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। কোমরের হাড্ডিতে ব্যথা পাওয়ার জন্য চিনচিন করছে। কথা বলতে ইচ্ছে করল না তারপর ও বলল,” হ্যাঁ আমি একা খাব! শান্তি এবার ইরহামের রুমে দিয়ে আসেন এগুলো। আর কোনো কিছু যেন এখান থেকে না সরে, সরলে আপনার খবর করে দেব।

“ইরহামের রুমে তুই কি করেছিস?
” কিছু একটা করছি! এতো জেনে কি করবেন ভাই? যান গিয়ে খাবারগুলো রাইখা বিদায় হোন। আজাইরা কথা শুনতে বা বলতে কোনোটা করতে ভালো লাগছে না।
আরশ খাবার গুলো নিয়ে চলে গেল ইরহামের রুমের দিকে। নুসরাত দেয়ালে হাত দিয়ে ধরে ধরে সিঁড়ির কাছে গেল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে সিঁড়ি বেয়ে উঠল। সিঁড়ির কাছ থেকে দাঁড়িয়ে নুসরাত দেখলো আরশ তিনটা লেইসের প্যাকেট নিয়ে ইরহামের রুম থেকে বের হচ্ছে। নুসরাত চিৎকার করল সিঁড়ি থেকে।
“এই আপনাকে না করলাম না, আমাদের বাচ্চাদের খাবার থেকে খাবার না সরানোর জন্য, তারপর ও নিয়ে যাচ্ছেন। এই দিয়ে যান আমার খাবার গুলো, আপনি বাচ্চা হচ্ছেন দিন দিন। এসব আমাদের খাবার আপনি কেন খাবেন? বুড়ো বয়সে এসব খাচ্ছেন। চ্যাহ চ্যাহ চ্যাহ
নুসরাতের চিৎকার শোনে হেলাল সাহেব নিজের রুম থেকে বের হলেন। সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নুসরাত চিৎকার করছে আর আরশ ইরহামের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে লেইসের প্যাকেট খুলে টপাটপ লেইস মুখ ঢুকাচ্ছে।

” এই খাবেন না, এগুলো আমার, আমি খাব, আপনি আমাদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছেন কেন? কিচেন থেকে নিয়ে খান না।
“ওই গুলোতে এই স্বাদ পাওয়া যায় না রে পাগলি, যা তোর দিল জ্বালিয়ে খেলে পাওয়া যায়।
নুসরাত চিৎকার দিল রাগে। কোমরের ব্যথায় আস্তে ধীরে উঠতে হচ্ছে। আর আরশ দাঁত কেলিয়ে তার চিপস্ গুলো খেয়ে নিচ্ছে।
হেলাল সাহেব ধমক দিলেন আরশকে।
” ওর চিপস্ দাও আরশ! তুমি বাচ্চা নয় যে, ওর খাবারগুলো ঝগড়া করে নিয়ে খাচ্ছ। খেতে হলে কিচেন থেকে নিয়ে খাও।

আরশ হেলাল সাহেবের বাধ্য হওয়ায় বাকি দু-প্যাকেট নুসরাতের দিকে বাড়িয়ে দিল। নুসরাত কোমরে ধরে আস্তে আস্তে উপরে উঠলো। হেলাল সাহেব এসে নুসরাত কে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? নুসরাত বলল পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। হেলাল সাহেব দু-বাহু চেপে সিঁড়ি দিয়ে উঠালেন নুসরাতকে। সিঁড়ি বেয়ে দু-তলায় উঠতেই আরশের কাছ থেকে টান মেরে চিপসে্র প্যাকেট নিয়ে আসলো।
হেলাল সাহেবের কাঁধে ভর দিয়ে ইরহামের রুমে গেল। সেখানে নুসরাতের গ্যাং বসে ছিল। সাদিয়া সৌরভি সালাম দিল হেলাল সাহেবকে। হেলাল সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন।

“এতোক্ষণ লাগলো এসব আনতে গিয়ে।
” আরে না, আরশের সাথে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল।
“ও।! তুই এতো ঝগড়া করিস আরশের সাথে তারপর ওকে বিয়ে করতে কেন চাস?
” কারণ আমার ড্রিম কাজিন বিয়ে করা। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে এই স্বপ্ন, স্বপ্ন রয়ে যাবে
ইরহাম সাবধান করল নুসরাতকে।
“বইন আস্তে কথা বল। ছোট ভাইয়া শুনলে তোর গাল আর গালের জায়গায় থাকবে না। থাপড়ে নকশা বদলে দিবে।
” আমি ভয় পাই নাকি? এটা আমার স্বপ্ন কাজিন বিয়ে করা। খারাপ কি?
“কিন্তু কাজিন বিয়ে করতে চাস কেন? রিজন কি?

” বুঝলি না কাজিন বিয়েতে লাভ আর লাভ। যেমন ধর নিজের বাড়িতে থাকলাম। নিজের চাচি, শাশুড়ী হলো। আবার নিজের মা, চাচি শাশুড়ী হলো। আবার চাচাদের ক্ষেত্রে ও সেইম। কোনো কাজ করতে হবে না। বাড়ির মেয়ে বাড়িতে থাকবে, রান্না করলে যা না করলে তা। নিজের রুমে পরে থাকবো পুরোদিন। আর সবচেয়ে বড় লাভ আমার নম্বর ওয়ান শত্রু আরশের বাচ্চার ঘুম হারাম করে দিব। জীবন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিব।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৬

তারা যখন কথা বলায় ব্যস্ত খেয়াল করলো না দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কথা মনোযোগ সহকারে কেউ শুনছে। তারপর সেখান থেকে অবয়ব টা আলগোছে চলে গেল। নিজ মনে কিছু ভাবলো এবং কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিল।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here