একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৫
Mousumi Akter
ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে মৃন্ময় আর তরী। একটা বাচ্চা নিতে চাচ্ছে দু’জনেই। কিছুতেই বাচ্চা কনসিভ হচ্ছে না। দু’ বছর আগে তরীর একটি মিসক্যারেজ হয়ে যায়। সেখান থেকে আর বাচ্চা কনসিভ হয়নি। অনেক ডাক্তার দেখাচ্ছে, অনেক চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই তরীর কনসিভ হচ্ছে না আর।
এরই মাঝে ডাক্তারের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এসে বললেন,
” ম্যাডাম ওই মেয়েটা তো যাচ্ছে না। বাচ্চা নষ্ট করতে চাচ্ছে। হাজার বুঝিয়েও কাজ হচ্ছেনা। তার একটাই কথা সে এই মুহুর্তে বাচ্চা নিতে চায়না। তার আর তার স্বামী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নয়।”
ডাক্তার ফেরদৌসী বললেন,
” ওনাকে বলে দিন, উনার স্বামীর সাথে না আসলে আমি এ কান করতে পারবো না। স্বামী স্ত্রীর উভয়ের সিদ্ধান্তে ছাড়া এমন একটি কাজ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আমি বাচ্চা নষ্ট করাকে সমর্থন করিনা। আমি প্রয়োজনে ওনার স্বামীকে বোঝাব। তাতেও কাজ না হলে বাকিটা ওনাদের ডিসিশন। ”
“ম্যাডাম আমিও বারবার বুঝাচ্ছি উনাকে। উনি বলছেন আমরা এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নই। তাই বাচ্চাটা পৃথিবীতে আনতে চাচ্ছেন না। তাছাড়া এটা ওনাদের আনওয়ান্টেড বেবি। উনার স্বামী অফিসে আছে এখন,তাই উনি নিজেই এসেছেন স্বামীর অনুমতি নিয়ে।”
কথাটা শুনে তরী ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আহারে! একটা বাচ্চার জন্য আল্লাহকে রাত দিন ডাকছি। আর ওনারা আল্লাহর কাছে না চাইতেই খুশি হয়ে দেওয়া উপহার মে-রে ফেলতে চাইছেন। প্লিজ বলুন না ওনাকে, বাচ্চাটা যেন নষ্ট না করে। বাচ্চাটা জন্মের পর যেন আমাকে দিয়ে দেন। বাচ্চাতা ওনার পেটে থাকা অবস্থায় যত খরচ আছে আমি বহন করব। বাচ্চাটা শুধু এই দুনিয়াতে আসলে নিয়ে নেব। বাচ্চাটা যিনি নষ্ট করতে চাচ্ছেন উনাকে একটু বুঝিয়ে বলুন না বাচ্চাটা যেন নষ্ট না করে। যত টাকা লাগে আমি দিবো। ”
মৃন্ময় বলল,,
“তুমি হঠাৎ কি বলছো? তুমি কি সিওর অন্য কারো বাচ্চা তুমি গ্রহন করবে। ”
তরি বলল,
” হ্যাঁ আমি সিওর। আমি নিতে চাই। কোনো সমস্যা আছে আপনার?”
মৃন্ময় বলল,
“না আমার কোন সমস্যা নেই। যা তোমার ভাল মনে হয় করো। ”
তরী বলল,
” নিজের সন্তানের মত গ্রহন করতে পারবেন?”
মৃন্ময় বলল,
” পারব না কেন? তোমার জন্য সব পারি আমি।”
ডাক্তার ফেরদৌসী ওনার এসিস্ট্যান্ট কে বললেন,
“উনাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিন।”
অ্যাসিস্ট্যান্ট চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে পিহু প্রবেশ করলো ভেতরে। ডাক্তার ফেরদৌসী বললেন,
” বসুন। ”
বসতেই পিহুর মুখোমুখি হল মৃন্ময় আর তরী। দু’বছর পরে দুই ভাই বোন মুখোমুখি। আসমান জমিন সবকিছু যেন কাঁপতে শুরু করল। ভূমিকম্পের ন্যায় কম্পন শুরু হল ওদের পৃথিবীতে। দুই ভাই বোনের ভিতরে শুরু হলো প্রলয়। এত ভয়াবহ প্রলয় হয়তো এখনো হয়নি পৃথিবীতে। সমস্ত পৃথিবীর সব কিছু ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। ঝ-ড় বইছে, বজ্র পড়ছে, ভয়ানক তোলপাড় সৃষ্টি হল দু’জনের মাঝে। পিহু আর মৃন্ময় দু’জনেই কাঁপছে। দুজনেরই সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে। ভয়াবহ অনুভূতি দুই ভাই বোনের মাঝে। তরীর ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। তরীর মন বলছে এই অনাকাঙ্ক্ষিত দেখা হওয়ার মাঝেই হয়ত ভাল কিছু ঘটবে। সে পিহুর বাচ্চাকে গ্রহন করতে চাইছিলো। ভেবেই আনন্দে হাত পা কাঁপছে। হঠাৎ তরী এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সেটাও কি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটেছে। এরই মাঝে ডাক্তার ফেরদৌসী বললেন,
” আপনি তো স্বাবলম্বী নন বলে বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাচ্ছেন। অনেক মানুষ আছে যারা কেউ একটা বাচ্চা পাচ্ছে না কষ্ট রাত দিন পার করছেন। আমি চেয়েছিলাম বাচ্চাটা আপনি পৃথিবীতে আনুন।নিজের সন্তানকে লালন পালন করুন। রিজিকের মালিক সৃষ্টিকর্তা। বাচ্চার রিযিক নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনা আপনি তৈরি হবে। যদি আপনার মনে হয় যে না আপনার পক্ষে সম্ভব না আমার আরও একটি প্রপোজাল আছে। আমার সামনে যে দম্পতি বসে আছে ওনারা দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন কিন্তু ওনাদের বাচ্চা হচ্ছে না। আপনার বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসলে আপনার থেকে বাচ্চাটি ওনারা নেওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করছেন। এবং যতদিন আপনার গর্ভে থাকবে আপনার সমস্ত চিকিৎসার খরচ ওনারাই বহন করবেন৷ আপনি কি একটু ভেবে দেখবেন বিষয়টা। আপনার যাবতীয় চিকিৎসার সাথে আপনার হেলদি খাবারদাবার সবকিছু উনারাই বহন করবেন। প্রয়োজনে টাকা ও দিবেন।”
মৃন্ময়ের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। পিহু মা হতে চলেছে। টাকার জন্য বাচ্চাটা নষ্ট করতে চাচ্ছে। আর কীভাবে স্বাবলম্বী নয়? দ্বীপ কি এটা জানে? নাকি দ্বীপ ই প্রেসার দিয়েছে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য। মৃন্ময়ের কৌতুহলী মনে হাজার টা প্রশ্ন জড় হল। কীভাবে সে এসব প্রশ্নের উত্তর পাবে। পিহুর চেহারাটা দেখার মত নেই। কালো হয়ে গিয়েছে, শুকিয়ে গিয়েছে। ও কি সুখে নেই? ভালো নেই। চেহারার এ হাল কেন ওর? পিহুর মুখটা দেখে মৃন্ময়ের সব মান অভিমান হাওয়ার সাথে বিলীন হয়ে গেল। কেন যেন হাউমাউ করে কান্না পাচ্ছে তার। আদরের বোনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে বুকের খুব গভীরে লুকিয়ে রাখতে।
পিহুর মাথা ঘুরাচ্ছে সে চট করে উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাড়িয়ে বলল,
“আমি অন্য একদিন আসবো ডাক্তার। অন্যদিন আমার স্বামীক নিয়ে আসব। ”
বলেই পিহু রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মৃন্ময় তরীর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। শুধু বলল,
” পিহু। আমার পিহু। ও চলে যাচ্ছে কেন? আমার দিকে তাকাবে না ও।”
তরী একটু শক্ত গলায় বলল,
” ওর কি আদৌ তাকানো উচিৎ। কি এমন অন্যায় করেছিলো পিহু। সেই একই অন্যায় কি আপনি করেন নি। আপনিও তো আমাকে ভালবেসে নিজের বাবার অবাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। বাবার মুখে মুখে তর্ক করেছিলেন। আপনার বাবা কি সেদিন কষ্ট পায়নি। যেদিন পিহু একটা ভুল করল সেদিন আপনার মনে হল বাবা কষ্ট পেয়েছে। সেদিন আপনার বাবার প্রতি দরদ উতলে উঠল। ভুলে গিয়েছেন আমাদের জন্য পিহু কি কি করেছিলো।”
মৃন্ময় চোখের ফেলে বলল,
” আমি তো যা করেছিলাম বাবাকে জানিয়ে করেছিলাম। বাবা আমার জন্য কষ্ট পেয়েছিলো। আমি ভেবেছিলাম বাবাকে আর কোনদিন কষ্ট পেতে দিবোনা। বাবা খুশী মনে তোমার আর আমার অনুষ্টান ও আয়োজন করেছিলেন পিহুর বিয়ের দিন। বাবা লাখ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন, সব আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছিলেন। খুব খুশী হয়েছিলেন বাবা সেদিন। দ্বীপ আর পিহুর একটা ভুলে সেদিন বাবা সমস্ত আত্মীয়দের সামনে আবার ও সম্মান হারিয়ে স্ট্রোক করলেন। কি করতাম আমি। আমার কি নিজের বন্ধুর ওপর অভিমান হবেনা বলো। সেই বন্ধু যে আমাকে একবার বললেই বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে পিহুকে ওর হাতে তুলে দিতাম। কেন একটু ভরসা করল না। কেন করল না? আমার কি অভিমান হবেনা।?”
তরীর ও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তরী সবটা বুঝছে। সে চাইছে যে কোনো ভাবে পিহু আর দ্বীপ কে মৃন্ময় এর সাথে মিলিয়ে দিতে। তরী চোখের পানি মুছে বলল,
” এখন এসব কথা বলার সময় নয়। আপনি কি আজও পিহুকে আটকাবেন না? আজও পিহুকে ডাকবেন না। আজ যেভাবেই হোক পিহুকে ফিরিয়ে নিয়ে চলুন। ওর দিকে তাকিয়ে দেখেছেন। বাড়িতে মা -বাবার অবস্থা দেখেছেন? ওনারা কেন অসুস্থ বোঝেন না? পিহুকে দেখার জন্য। পিহু ই ওনাদের মেডিসিন। আজ পিহুকে যদি না ডাকেন, আপনার সঙ্গে থাকবো না আমি।আমিও ও বাড়িতে ফিরব না আর। যখন আপনার সাথে দূরে ছিলাম এই পিহু হাজার বার আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। সবসময় পাশে থেকেছে। ঘরে খাবার থাকতো না, ওর জমানো টাকা দিয়ে বাজার করে দিয়ে গিয়েছে। আর আপনি কি করেছেন ওর জন্য। আপনার মত একটা বেঈমান ভাই থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো। আপনি কত বড় বেআইমান ভেবে দেখেছেন। ”
তরী ইচ্ছা করেই আজ এত কিছু বলছে। তরী জানে মৃন্ময় ভাল নেই। ওর সিগারেট এর মাত্রা বেড়েছে। ভেতর টা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে আছে। দ্বীপ আর পিহু ছাড়া কত কষ্টে আছে সেটা তরী ছাড়া কেউ জানেনা। তরী পিহুর পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না পিহু। যেতেই যদি হয়, আমি তোমার সাথে যাবো। পিহু অভিমানে কোনো কথা বলল না। তরীর হাত সরিয়ে দিয়ে হাঁটা দিলো।
পেছন থেকে মৃন্ময় ডাকলো, ” এই শাঁক চুন্নি।”
পিহুর ভেতরটা যেন কেমন উঠলো। পিহু তাকালো না পেছনে। ওর শুধু কান্না পাচ্ছে। মৃন্ময় আবার ডাকল। পিহু দাঁড়াল না। সে দৌঁড়ে পালাবে এমন একটা অবস্থা। মৃন্ময় দ্রুত পা ফেলে গিয়ে পিহুর হাত চেপে ধরল। হসপিটাল ভর্তি মানুষের সামনে পিহুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। সে কি ভয়ানক কান্না। দেখে মনে হচ্ছে কোন মানুষ মা-রা গিয়েছে বা কোনো শোকের ছায়া পড়েছে। মৃন্ময় এর কান্না দেখে পিহু ও নিজেকে সামলাতে পারল না। পিহু ও হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো। সে কান্না দেখে তরী হাসছে। ওদের কান্না তরীর মুখে হাসি ফুটলো। কিছু মানুষ হয়তো অবাক হচ্ছে তরীর হাসি দেখে। কিন্তু তরী জানে এই কান্নায় ওদের শেষ কান্না। এই কান্নার অবসান ঘটিয়ে ওদের ভাইবোনের মহামিলন ঘটবে। পিহু ভাইয়ের সাথে মিলে যেতে পারবে।
আধাঘন্টা কেটে গেল। দু’জনের আবেগঘন মুহুর্ত শেষ হচ্ছেনা। মৃন্ময় পিহুকে বলল,
“চল পিহু বাড়ি ফিরে চল। তোকে দেখলে হয়তো বাবা সুস্থ হয়ে যাবে। মা তোর জন্য রোজ কাঁদে। ”
পিহু তীব্র অভিমান নিয়ে বলল,
“তুমি কি কখনো কেঁদেছিলে আমার জন্য? ”
প্রশ্নটা মৃন্ময়ের বুক ফালা ফালা করে ফেলল। মৃন্ময় আবার ও চোখের পানি ফেলে বলল,
“তুই কি তোর ভাইকে চিনিস। যদি চিনে থাকিস তাহলে হয়ত প্রশ্নটা করতি না যে আমি তোর জন্য কেঁদেছি কীনা! কিন্তু তুই? তুই কজ তোর এই অধম ভাই এর জন্য কখনো কেঁদেছিস।”
পিহু অভিমানে মুখ ফেরালো অন্যদিকে। মুখ ফিরিয়ে বলল,
“আমি তোমার জন্য হয়তো অতটা কাঁদিনি যতটা অন্যকেউ কেঁদেছে।”
মৃন্ময় বলল,
” কে? ”
পিহু বলল,
” দ্বীপ । দ্বীপ তোমার জন্য কেঁদেছে। কেঁদেছে কি এমনকি আজও কাঁদে। কারণ সেদিন তুমি দ্বীপকে ভুল বুঝেছিলে। দ্বীপ না তোমার বন্ধু হয়? একটাবার ওকে বিশ্বাস করা উচিত ছিলো তোমার। ওর কথা তোমার শোনা উচিত ছিলো।”
মৃন্ময় বলল,
” আমার মনে দ্বীপের জায়গা কি আর ওর জন্য কেমন কষ্ট হয় সেটা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। তুই এখন বাড়ি ফিরে চল। দ্বীঅ আর আমার মনের দূরত্ব হয়নি। একবার কথা হলেই আমাদের মাঝের সব মিটে যাবে।”
” না ভাইয়া আমি কখনো সেখানে যাবনা। যেখানে আমার স্বামীর সম্মান নেই। আমি নিজ হাতে দ্বীপের জীবন নষ্ট করেছি। সবার কাছে খারাপ করেছি। সবার চোখে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছি। শোনো ভাইয়া, দ্বীপ ভাইয়া আমাকে কোনদিন প্রপোজ করেনি। বাড়িতে আসতো, যেতো, ইয়ারকি করতো। কিন্তু কোনদিন আমাকে কিছু বলেনি। ইঙ্গিত পূর্ণ কোন কথা বলেনি। দ্বীপ যখন আমাদের বাড়িতে আসতো, আমি ওকে দেখে প্রেমে পড়েছিলাম, পছন্দ করতাম, আমার ওকে ভালো লাগতো, ভালবাসতাম। আমি ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ওর সাথে কথা বলতাম। এমন ভাবে কথা বলতাম বিশ্বাস করে নিয়েছিলো আমি একজন মানুষ। আমার আইডি রিয়েল আইডি। আমি মাঝে মাঝে খুব চিকন স্বরে ভয়েস পাঠাতাম। ভয়েস মেসেজ পাঠাতাম, ফোনে কথা বলতাম, কন্ঠস্বর কিছুটা চেঞ্জ করে নিতাম। কোনদিন ধরতে পারেনি আমি পিহু। একটা পাকিস্তানের ড্রামার নায়িকার পিকচার পাঠাতাম। ও ধরেই নিয়েছিলো ও মেয়েই রিয়েল। আমি দ্বীপের সাথে বেঈমানি করেছি, আমি দ্বীপকে ঠকিয়েছি। একটা সময় বলব ভেবেছিলাম যে মেয়েটার সাথে ও কথা বলে আমি সেই মেয়ে। এর মাঝে হুট করে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল।
বাবা হুট করেই ডিসিশন নিলো তোমার আর তরী ভাবীরও রিসেপশন একই দিনে করবে। কিন্তু আমি? আমি দ্বীপ কে এতো ভালোবাসতাম এতো ভালবাসতাম যে ওর ভালোবাসার জন্য আমি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মাথা কাজ করছিলো না। ফিউচারে কি হবে না হবে কিছু ভাবিনি। আমি দ্বীপের সাথে দু ‘বছর ধরে ফোনে কথা বলতে বলতে, চ্যাটিং করতে করতে পা- গ-ল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে তখন পরিবার মা-বাবা কোনো কিছুর কোনো গুরুত্ব ছিলনা। মনে হচ্ছিলো আমার দ্বীপকে লাগবে। আমি দীপকেই চাই। কারণ দ্বীপের ভালোবাসা পেয়ে আমি বুঝেছিলাম, আমার রাজপ্রাসাদের প্রয়োজন নেই। তাই আমি সেই ফেক আইডি দিয়ে আমার বিয়ের দিন দ্বীপকে মেসেজ পাঠাই যে, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
ও আমার সাথে দেখা করার জন্য একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে। সেজন্য আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। কারণ দ্বীপ ওই চ্যাটিং করা মেয়েটি, ফোনে কথা বলা মেয়েটিকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলো। তখন আমি পার্লার থেকে দ্বীপের কাছে চলে যাই। ওকে রেস্টুরেন্টে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি। মুহুর্তের মাঝে মানুষ জড় হয়ে যায়। পরিবেশ এমন যে দ্বীপ যদি বলে সে আমাকে ডাকে নি তাহলে চারদিকের লোকজন ভিডিও করবে, নিউজ করবে, মেয়ে হয়ে একটি ছেলেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছি অথচ দ্বীপ কিছুই জানেনা। দ্বীপ আমার সম্মান বাঁচাতে সবার সামনে বলে যে, ও আমাকে ভালবাসে। অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে বলে আমি পালিয়ে এসছি। ওখানের লোকজন আমাদের কথা বিশ্বাস মেনে নিয়ে বলে, ঠিক আছে তাহলে এখনই তোমাদের বিয়ে করতে হবে। দ্বীপ তখন ওখানকার মানুষের কাছে বলেছে আমরা বাসায় গিয়ে বিয়ে করব। কিন্তু সেটা হয়নি পাবলিকের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।
তারপর দ্বীপ আমাকে নিয়ে তোমাদের বাড়ি আসে আমাকে ফিরিয়ে দিতে। আমার সাথে সংসার করতে ও চায়নি। বাড়ি আসার পরে তো তোমরা কেউ ওর কথা শোনোনি ও কি বলতে চেয়েছে শোনার চেষ্টাও করনি। দ্বীপ ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলো যখন তুমি বারবার বলছিলে বন্ধু নামের কলঙ্ক তুই। আমার কোনো বন্ধু নেই। তুই বেঈ মানি করেছিস আমার সাথে। তুই বিয়ের দিন আমার বোনকে পালিয়ে নিয়ে গিয়েছিস। আজ থেকে তুই আমার কিছু না। আমি তখন সব জেনেও চুপ ছিলাম। কিন্তু আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে তোমাদের বন্ধুত্বের গুরুত্বর থেকে আমার ভালবাসার গুরুত্বটা অনেক বেশি ছিলো।
আমি দ্বীপের হাত ধরে চলে গিয়েছিলাম ঠিকইকিন্তু কখনো সুখী হতে পারিনি। দ্বীপ কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি আমার সাথে। কিন্তু আমাকে কখনো ভালো ও বাসেনি। ও জানে তোমাদের বন্ধুত্বের আমি খলনায়িকা। আমার জন্য ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে, ওর বন্ধু হারিয়েছে। একাকীত্ত্বে ভোগে ও। কতটা অসুখে কতটা কষ্টে আছে দু’বছর সেটা তোমাকে বোঝাতে পারবো না ভাইয়া। এসব কারণে আমিও একটা সেকেন্ড সুখ পাইনি। দ্বীপের অবহেলা আমাকে দিনে দিনে একটু একটু করে মে- রে ফে-লে-ছে। আমি তো চেয়েছিলাম একজন কেয়ারিং লয়্যাল হাজবেন্ড।
যেমনটা প্রেমিক হিসেবে দ্বীপ, স্বামী হিসাবেও ওকে সেভাবে চেয়েছি। কিন্তু সেভাবে ওকে পায়নি।
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৪
অনেকবার বোঝাতে চেয়েছি যে এটা আমি। সেই ফেইক আইডির মেয়ে। কিন্তু বলতে পারিনি। পরে আর চেষ্টাও করিনি। কারণ আমি জানি আমি ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছি তাই ও আমাকে বিশ্বাস করবে না। আমি দেখতাম রেগুলার দ্বীপ সে নাম্বারে মেসেজ পাঠাত।দিনের পর দিন সে নাম্বারটাতে মেসেজ করে যায় কিন্তু সেই আইডিটা ওকে আর রেসপন্স করে না। এসব দেখে খারাপ লাগত। সুখ ই জীবন থেকে উঠে গিয়েছে। এমন না যে ও আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে, ও নরমাল কথাবার্তা বলেছে, কিন্তু সে হাসিখুশি দ্বীপ যে অনেক মজা করত সেই দুষ্টুমিটা ওর মাঝে আর নেই। যেটা আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিচ্ছে। এতদিন ওর সাথে ছিলাম কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মতো ছিলাম না। একটা ঘটনার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার পেটে বাচ্চা আসে।