প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (২)
জান্নাত নুসরাত

ইসরাতের ব্রাইডাল মেকওভার শেষ হওয়ার পর পার্লার থেকে নুসরাত, ইসরাত, সৌরভি আর সাদিয়া বের হয়ে আসলো। ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো নুসরাত। এক পায়ের হাই হিল পিছনের সিটে ছুঁড়ে ফেলল। গ্রাউন ভাঁজ করে নিজের কোলের উপর রাখলো।
সৌরভি জিজ্ঞেস করল,
“এক পায়ের হাই হিল খুলে ফেললি কেন?
” এসব জুতো পরে আমি ড্রাইভিং করতে পারি না। ব্রেক চাপলে বোঝা যায় না ব্রেক চেপেছি কিনা?

নুসরাত গাড়ির বাহিরের দিকে তাকালো। ইসরাত ফোনে কথা বলছে। হাত ঘড়িতে টাইম চেক করলো। টাইম দেখে চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেল। রাত সাড়ে আটটা বাজে। এতো তাড়াতাড়ি বেজে গেল সাড়ে আটটা । ইসরাতকে তাড়া দিল তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠার জন্য। ইসরাত হাত দিয়ে পাঁচ মিনিট দেখালো।
নুসরাত গাড়ি স্টার্ট দিল। টান মেরে ইসরাতের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ইসরাত তবুও দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো রিয়েক্ট করলো না। নুসরাত গাড়ি আবার ব্যাক আনলো। তারপর হুমকি স্বরুপ বলল,”এবার না আসলে সত্যি সত্যি চলে যাব।
আরো দশ মিনিট পর ইসরাত ফোনে কথা বলা শেষ করে উঠে বসলো। নুসরাত গাড়ি স্টার্ট করে গতি বাড়ালো। ইসরাত পিছন দিকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের মতো করে পড়ে রইলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কনভেনশন হলের গাড়ি পাকিং এড়িয়ায় গাড়ি পার্ক করে নুসরাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। সৈয়দ বাড়িতে থিম রাখা হয়েছিল। ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়লে সবুজ কালার আর শার্ট বা কোট পড়লে কালো কালারের। মেয়েদের শাড়ি পড়লে গোল্ডেন এন্ড হোয়াইট কালার আর গ্রাউন পরলে এস কালার।
নুসরাত ঘাড়ত্যাড়ার মতো থিম না মেনে তার যা ইচ্ছা হয়েছে পরেছে। ব্ল্যাক কালার গ্রাউন পরেছে নুসরাত সাথে স্টোনের কাজ করা। গলায় মেচিং অর্নামেন্ট পরেছে। গ্রাউন নিচের দিক থেকে ভাঁজ করে পেন্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে জায়ানকে কল করলো।
” হ্যালো ভাইয়া এসেগেছি। ডি-এস-এল-আর আর ভাইয়াকে নিয়ে আসুন।
“আচ্ছা আসছি দাঁড়াও।

ইসরাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। নুসরাত এক পায়ে জুতো পরে হলের ভিতরে যেতে নিয়েছিল। সাদিয়া পিছন থেকে ডেকে নিয়ে বলল জুতো পরার জন্য।
নুসরাত গাড়ির লক খুলে ড্রাইভিং সিটের উপর বসে জুতো পরে আবার দৌড় দিল। হঠাৎ মনে হলো গাড়ি লক করেনি। আবার আসলো গাড়ি লক করতে।
ইসরাতের সাথে ব্রাইডাল ফটোশোট করার জন্য জায়িনকে নিয়ে আসা হয়েছে। ডি-এস-এল-আর ম্যান কিছুক্ষণ তার ইচ্ছে মতো পোজ দেখালো। নুসরাত এসব পোজ দেখে বিরক্ত হয়ে গেল। কি সব পোজ দেখাচ্ছে?
” এসব বহু পুরনো পোজ। আপনি এই যুগে এসে এসকল পোজ দিয়ে ছবি তুলাচ্ছেন।
“তাহলে কীভাবে করবো?
” আমি বলে দিচ্ছি কীভাবে কি করতে হবে?

“জায়িন ভাইয়া ইসরাতকে ব্রাইডাল স্টাইলে কোলে নাও। আর ইসরাত তুমি গলা জড়িয়ে চোখের দিকে তাকাও। আর আপনি ভাইয়া সামনের দিকে তাকান।
জায়িন বলল,
” কোন দিকে?
“আমার দিকে তাকিয়ে থাকুন।
জায়িন বিনাবাক্যে কোলে নিতে গেল ইসরাতকে কোলে নিতে গিয়ে ইসরাতকে নোটিশ করলো। অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। চুল গুলো নিচের দিকে কার্লি হওয়ায় চুলগুলো কে সুন্দর করে স্টাইল করে দিয়েছে। লেহেঙ্গার ওড়ানা পিছন থেকে ঘুরিয়ে এনে এক পাশে সেট করে রাখা। দেখতে কিছুটা শাড়ীর মতো মনে হচ্ছে। মুখ গম্ভীর রেখে বলল,” সুন্দর লাগছে তোমাকে?
“ভাইয়া একটু হেসে বলুন। মনে হচ্ছে আপনার পেটে বন্দুক ধরে আমরা জোর করে আপনার মুখ দিয়ে কথা বের করছি। আপনি আবার বলেন আমি ভিডিও এর ব্যাক রাউন্ডে আপনার ভয়েজ দিব।।
জায়ান গম্ভীর গলায় বলল,

” তোমাকে সুন্দর লাগছে ইসরাত।
নুসরাত ভিডিও করে মোবাইল আবার প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। চার পাশ একবার তাকিয়ে ডি-এস-এল-আর কে জিজ্ঞেস করলো, ” ভিডিও করার জন্য আসেনি আর ড্রোন নিয়ে আসেননি।
“সবাই এসেছে। চিন্তা করবেন না আসছে ওরা। আর ড্রোন দিয়ে কি করবেন?
” ড্রোনে ক্যামেরা সেট করে উড়িয়ে দিবেন আর জায়িন ভাইয়া ইসরাতকে কোলে নিয়ে নিচে ঘুরবে। তাহলে সুন্দর একটা ব্রাইডাল শুট হবে।
“আচ্ছা!
বাহিরে ফটোসেশন করে জায়িন কনভেনশন হলের ভিতর চলে গেল। জায়িন ভিতরে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর ডেলা আর ইনায়া আসলো।
” আপনাদের বাসার সবাই চলে এসেছে?
নুসরাত বলল,

“হ্যাঁ!
ইনায়া জিজ্ঞেস করলো,
তোমাদের চলে আসছে নুসরাত?
ডেলা বলল,
” টাহলে আমরা ভিটরে যাই টোমরা আসো।
ইনায়াকে নিয়ে ডেলা ভিতরে চলে গেল। ইসরাত আর কিছু ব্রাইডাল শুট করার পর ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে প্রবেশের আগে ব্রাইডের মুখের সামনে গোমটা দিয়ে দেওয়া হলো আলাদা ওড়না দিয়ে। ইসরাত সামনে হেঁটে গেল তার দু-পাশে সৌরভি আর নুসরাত হেঁটে গেল। জায়িন স্টেজে বসে ছিল। জায়িনকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য বলল আরশ। জায়িন উঠে দাঁড়ালো। ইসরাতের হাঁটার রাস্তায় যেসকল ফুল ঝুরি রাখা হয়েছিল, তা ইসরাতের হাঁটার সাথে সাথে জ্বলে উঠলো।
আরশ জায়িনকে বলল ইসরাতকে এগিয়ে নিয়ে আসতে।জায়িন রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইলো!

” ভাইয়া তুমি যদি এখন ইসরাতকে না আনতে যাও ডেলা মনে করবে তুমি দেখানোর জন্য বিয়ে করেছ। আসলে তা তো নয়! তুমি তো নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করছ। যাও ভাইয়া যাও! গো ভাইয়া গো,
জায়িন এগিয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে দিল ইসরাতের দিকে। ইসরাত জায়িনের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। জায়িন নিজের হাতের মুঠোয় ইসরাতের মেয়েলি হাত চেপে ধরলো। পিছন থেকে নুসরাত, মমো, সাদিয়া, আনিকা, আরিশা হু হু করে চিৎকার করে উঠলো। ইসরাতের হাত ধরে উপরে উঠতেই উপর থেকে ফুল ঝড়ে পড়ল। জায়িন গোমটা তুলল ইসরাতের। সবাই একসাথে চিৎকার করে ওওও বলল।

ডেলা খুশি মনে এদিকে তাকিয়ে ছিল। আশিক আর তার এন্ট্রি একটু আগে শেষ হয়েছে। এতক্ষণ ধরে তারা ফটো তুলছিল। ইসরাতের এন্ট্রি দেখে ফটো তোলা বন্ধ করেছে। জায়িনের জন্য তার প্রচুর খুশি লাগছে।
ডেলা নিজের মেরুন রঙের লেহেঙ্গা চেপে ধরে জায়িনদের দিকে গেল। জায়িন ডেলাকে আসতে দেখে আরশের সাথে কথা বলতে লাগলো। ডেলা কথা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু জায়িন তার দিকে ফিরে তাকালো না। মুখ গম্ভীর করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। ডেলা কথা বলতে গেলে জায়িন অন্য দিকে হেঁটে চলে যায়। ডেলা মুখ কালো করে জায়িনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সাড়ে নয়টার দিকে খাবার দেওয়া হলো। সবাই সবার খাবার প্লেটে করে এনে নিজ নিজ সিটে বসে গেল। খাবার খাওয়া শেষে হেলাল সাহেব স্টেজে উঠলেন। মাইক হাতে নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
“আজ যে দুই জুটির অনুষ্ঠান হচ্ছে তাদের আকদ আমরা আগে করে নিয়েছিলাম পারিবারিক ভাবে ছোট করে। আজ শুধু এই অনুষ্ঠান করেছি আপনাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য। সব নিয়ম মেনে একবার বিয়ে হয়েছে তাহলে কিন্তু বড়রা মিলে চাচ্ছিলাম এবার আপনাদের সামনে আবার বিয়ে হয়ে যাক।

হেলাল জায়িনের হাতে একটা আঙ্গটি তুলে দিলেন। আরশ কানে কানে কিছু বলল। জায়িন হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। এক হাঁটু ঘেড়ে বসলো জায়িন ইসরাতের সামনে। আঙ্গটির বক্স খুলে জায়িন বলল,” উইল ইউ মেরি মি? উইল ইউ বি মাইন? উইল ইউ বি দ্যা কম্পানিয়ন অফ মাই জয়স অ্যান্ড সররওস ফর দ্যা রেস্ট অফ মাই লাইফ ?
ইসরাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকলো জায়িনের দিকে। শান্ত চোখ জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,”আই উইল বি।
জায়িন ইসরাতের হাতে আঙ্গটি পড়িয়ে দিল। নুসরাত আর মমো হু হু করে মুখ দিয়ে শব্দ করলো। আবার নিয়ম মেনে ইসরাত আর জায়িনের বিয়ে দেওয়া হলো। ইসরাত কান্না কাটি করলো না। রোবটের মতো কবুল বলে দিল।
ডেলার বেলা উল্টো হলো। ডেলা কবুল বলতে গিয়ে কান্না করলো। পাকিজা আমান মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলেন। সৈয়দ বাড়ির সবাই ডেলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ডেলার সাথে তাল মিলিয়ে মমো হুহু করে কেঁদে উঠলো। ননদ ভাবি জড়াজড়ি করে দু-জন কান্না করলো। নুসরাত পায়ে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে ডেলা আর মমোর কান্না দেখলো। মমোর কান্না দেখে হা হা করে হেসে দিল। মোবাইল পকেট থেকে বের করে মমোর ভিডিও করে রাখলো ব্ল্যাকমেইল করার জন্য।

ডেলা, আশিক ইসরাত আর জায়িনকে দাঁড় করিয়ে দুই কাপলের একসাথে ফটো তোলা হলো। দুই ফ্যামেলির সবাই মিলে একটা ফটো তুলল।
রাতের খাবার খেয়ে ধীরে ধীরে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। সৈয়দ বাড়ির কর্তা কর্তীরা বাড়িতে ফিরে গেলেন। তারা এখানে থেকে কি করবেন? শুধু মেহেরুন নেছা রয়ে গেলেন।
” আর কয়েকটা ফটো তুলে আপনারা আপনাদের বাসায় আর আমি আমার বাসায় ফিরে যাই। এক কাজ করুন আপু। ইসরাত আর ডেলা এক সাথে তাকালো। ইসরাত কে না করে বলল ব্রাউন কালার চুলযুক্ত আপু আপনার স্বামীকে বলুন এই সোফায় বসতে।
আশিক বিনা বাক্যে বসে গেল। ডেলাকে বলা হলো আশিকের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরার জন্য। ডেলা সেইম ভাবে কাজ করলো। জায়িনকে বলার আগেই সে বসে গেল। ইসরাত গাইগুই করলো। নুসরাত এসে ইসরাতকে টেনে এনে জায়িনের কোলের উপর বসিয়ে দিল।
সাদিয়া আর সৌরভি বিদায় নিল। নুসরাত হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আজ থাকার কথা বলল। সাদিয়া আর সৌরভি না করে দিল।

“তোদের কাপড় তো আমাদের বাসায় রয়েছে?
” ওগুলো গুছিয়ে রাখিস। নাইট ওভার করতে আসবো যখন তখন ওগুলো কাজে লাগবে।
“তোদের কে নিয়ে যাবে এতো রাতে?
” ইরহাম নিয়ে যাবে। আচ্ছা যাইরে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
নুসরাতের গালে চুমু খেয়ে দু-জন চলে গেল। ডি-এস-এল-আর ম্যান নুসরাতকে ডাক দিল সাথে মমোকে ও। মাহাদি নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য বিদায় নিতে আসছিল কিন্তু ডি-এস-এল-আর ম্যান মাহাদি আর মমোকে এক জায়গা বসিয়ে দিল। নুসরাত বুঝলো এবার তার পালা সে সরে যেতে চাইলো তার আগে ডি-এস-এল-আর ডেকে উঠলো।

“আপু আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এখানে দাঁড়ান! ভাইয়া আপনি এই চেয়ারে রাজাদের মতো করে বসে এক হাত সামনের দিকে আনুন আর আপুর দিকে তাকিয়ে থাকুন এক দৃষ্টিতে। এমন ভাবে তাকাবেন মনে হবে জনম জনম ধরে আপনি উনার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারবেন। আর আপু আপনি ভাইয়ার উরুতে, না না হাঁটুর দু-আঙুল উপরে দু হাত রেখে হাতের উপর মাথা রাখুন। আর উদাস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকুন।
নুসরাত ডি-এস-এল-আর ম্যানের দিকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। শালা তাকে আর একে ছাড়া কাউকে পায় না বসিয়ে দেওয়ার জন্য।

” আমি কেন উদাস চোখে আপনার দিকে তাকাবো। আমি ওই দেয়ালের দিকে তাকাবো। আর ভাই আপনি আমাকে ছাড়া আর কাউকে পান না উনার সাথে ফটোশুটের জন্য। আমি মাহাদি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি আর মমো তুই আরশ,,,,,,ভাইয়ার কাছে আয়। গতকাল আমি আর ভাইয়া অনেক ফটোশুট করেছি।
“কি বলেন আপু? আপনাদের কাপড় ম্যাচ হচ্ছে একজনের আরেকজনের সাথে। দেখুন ভাইয়া কালো কোট পড়েছে আর আপনি ও কালো গ্রাউন পড়েছেন। আপনাদের দু-জনকে অনেক সুন্দর লাগছে। আর আপনি যে আপু কথা বলছেন উনি এসে ভাইয়ার কাছে দাঁড়ালে খাটো লাগবে। উনাদের সুন্দর ও লাগবে না।
নুসরাত ভ্রু কুঁচকে তাকালো। চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” আমরা বসে ফটো শুট করবো তাহলে ওকে খাটো দেখাবে কেন? ফাউল লজিক দিবেন না ভাইয়া। আমি মাহাদি ভাইয়ার সাথেই বসবো। আমি আরশ ভাইয়ার সাথে বসবো না।
মমো ফোড়ন কাটলো। নুসরাতের কথার মাঝে নিজের কথা ঢুকিয়ে দিল।
” আমি ছোট ভাইয়ার সাথে ফটো তুলতে পারবো না।
নুসরাত রাগে দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো।
“কেন তুলবি না? তোকে তুলতে হবে?
” আমি তুলবো না। আমার ভাইয়াকে ভয় লাগে।
“তোর কেন ভয় লাগবে? এ বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় লাগবে। ভাইয়া তোকে খেয়ে ফেলবে। আচ্ছা ভয় লাগতেই পারে কিন্তু ভাইয়াকে কেন ভয় লাগে সেটা বল?
” ভাইয়া চোখ দিয়ে কীভাবে তাকায় মনে হয় চোখ দিয়ে গিলে খাবে। আমার ভয় লাগে ভাইয়ার চাহনি দেখলে।
মেহেরুন নেছা বিরক্ত হয়ে বললেন,

“এই মাইয়া একজন বইলে হয় এতো তামাশা করো ক্যা?
নুসরাত মেহেরুন নেছার কথা পাত্তা দিল না। আরশ নিরব দর্শক হয়ে ওদের কথা শুনছিল। জায়িন বিরক্ত হয়ে গেল। একে তো এতো ধকল গিয়েছে তার মধ্যে ইসরাতকে কোলে নিয়ে বসে আছে আর ইসরাতের কাপড়ের ভারে পা অবস হয়ে গিয়েছে। এরা ছবি তুললে তুলে ফেলবে এতো প্যাঁচাল করে কেন? নুসরাত আরশের হাত ধরে টেনে মমোর কাছে এনে দাঁড় করালো। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হয়ে আরশের সমান হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু সমান হতে পারলো না থুতনিতে গিয়ে নুসরাতের মাথা লাগলো।
“আপনি জিরাফের মতো এতো লম্বা কেন? কে বলেছে এতো লম্বা হওয়ার জন্য? আচ্ছা যাই হোক লম্বা হয়ে গিয়েছেন আর কি করার?
আরশের মুখের কাছে হাত নিয়ে চোখ দুটো চেপে ধরে বড় বড় করে দেখালো মমোকে।

“বল কি দেখে ভয় পাস? উনার চোখ যেমন আমার চোখ তেমন তাহলে ভয় পাবি কেন? দেখ একেবারে নরমাল চোখ। উনার চোখে লেন্স আছে আমার আর তোর চোখে ও ল্যান্স আছে।
” ওই ছ্যামরি তুই আমার নাডিডার চোখ নিয়ে টানাটানি করতাছিস ক্যা?
মেহেরুন নেছার কথার উত্তর দিল না। আরশের গাল দু-দিকে টেনে ধরে বলল,” দেখ ভাইয়া হাসছে, তাহলে সমস্যা কোথায়? এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? ভাইয়া আপনি হাসছেন না। নুসরাত মমোকে জিজ্ঞেস করে নিজেই উত্তর দিল,হাসছে।
নুসরাত গাল ছেড়ে দিয়ে নেমে দাঁড়ালো। জায়িন গম্ভীর গলায় ধমকে উঠলো।
“আমি কিন্তু উঠে যাব, আর দুই মিনিট লেট হলে। আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো। উনি যেভাবে বলছে সেভাবে বসে যাও। কি হবে একদিন বসে গেলে?
নুসরাত রাগে জুতো পা থেকে উড়িয়ে ফেলল। পারলে জুতো জোড়া আরশের মাথায় ভাঙতো। সবাই সবার পোজে বসলো।

” ভাইয়া আপুর পিঠে হালকা করে হাত রাখুন।
“রাখার দরকার নেই। এভাবে ঠিক আছে! এতো হাত রাখা রাখির কি?
আরশ নুসরাত না করায় ঘাড়ত্যাড়ার মতো পিঠে হাত রাখলো। নুসরাতের পিঠে হালকা করে চিমটি কাটলো। নুসরাত মৃতদেহের মতো পড়ে রইলো নড়লো না। আরশ আরেকটা চিমটি কেটে ঠোঁট চেপে হাসল। নুসরাত কে নড়তে না দেখে কাধে চিমটি কাটলো। নুসরাত নাক ফুলিয়ে আরশের উরুতে মাথা ফেলে পড়ে রইলো। উরুতে কামড় মারতে গিয়ে ও মুখ সামলালো।
রাত বারোটার দিকে সব শেষ করে সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হলো। নুসরাত গাড়ির কী নিজের তর্জনী আঙুলে নিয়ে ঘুরাতো লাগলো।

” নুসরাত গাড়ির চাবি দে? আমার সাথে তুই যাবি আর ইসরাত বড় ভাইয়ার সাথে যাবে।
নুসরাত গাড়ির কী দিল না। আরশের কথা না শোনার মতো ভান করলো। ডেলা মমো আর আশিক বিদায় নিয়ে চলে গেল। নুসরাত ইসরাতের লেহেঙ্গার পিছন চেপে ধরলো। ইসরাত সামনের দিক উঁচু করে ধরলো। ভিডিও ম্যান ইসরাতের পিছু পিছু আসলো। আরশ সবকিছু ভালো করে চেক করতে গেল কেউ কিছু রেখে গিয়েছে কিনা? নুসরাত গাড়িতে উঠে বসলো। ইসরাত লেহেঙ্গা ভাঁজ করে ফ্রন্ট সিটে বসলো। ডি-এস-এল-আর ম্যান কয়েকটা শর্ট নিল এই অবস্থায়। ভিডিও ম্যান ভিডিও অন করে রাখলো। নুসরাত গাড়ি স্টার্ট করলো।
আরশ কনভেনশন হল থেকে বের হতে হতে চিৎকার করে বলল,

“তোকে আমি কি বলেছি?
“কি বলেছেন?
” একদম হেয়ালি করবি না।
“আমি কি হেয়ালি করেছি? আমি আর ইসরাত একসাথে ড্রাইভিং করে আসছি একসাথে যাচ্ছি এখানে হেয়ালি করার কি? আর দাদি, ভাইয়াকে নিয়ে আপনি চলে যাবেন।
” দাঁড়া এক মিনিট, আমি তোকে ড্রাইভিং করে যাওয়া দেখাচ্ছি। তুই বিকেলে বলেছিলি না তুই ড্রাইভিং জানিস না। তাহলে ড্রাইভিং করে আসলি কীভাবে?

নুসরাত জিহ্বায় কামড় মারলো। আরে ব্বাছ বলে দিয়েছি নাকি সত্যি কথা। আরশ নুসরাতদের গাড়ির দিকে ঝটপট হেঁটে আসতে লাগলো। নুসরাত গাড়ি স্টার্ট করে টান দিল। আরশের পাশ কাটিয়ে গাড়ি ঝড়ের গতিতে নিয়ে গেল।
ডি-এস-এল-আর ম্যান হই হই করে উঠলো। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল,”যাই বলেন আর তাই বলেন আপুটার গাড়ি চালানোর স্কিল অনেক ভালো। কি এক শর্ট এসেছে? যে দেখবে হা করে তাকিয়ে থাকবে।
আরশ মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে রইলো। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলালো। তার গাড়ির এই অবস্থা তাহলে নুসরাত করেছে। তার সন্দেহ তাহলে ঠিক! ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল আরশ। এর শোধ তুলবে সে নুসরাতের থেকে। জায়িন ডাক দিল গাড়ি বের করার জন্য। আরশ মুখ থমথমে করে গাড়িতে উঠে বসলো। পুরো রাস্তা মুখ থমথমে করে রাখলো।

পরেরদিন সকাল,
জায়িন এসে নক করলো ইসরাতের রুমে। ইসরাত ঘুমে ঢুলো ঢুলো হয়ে এসে দরজা খুলে দিল। জায়িনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জায়িন নিজেকে থেকে বলল,”সোমবারে আমাদের ফ্লাইট যা যা প্রয়োজনীয় তা লাগেজে গুছিয়ে নিও। আটচল্লিশ কেজির বেশি কিছু নিবে না। হাতে সাত কেজি আর লাগেজে একচল্লিশ কেজি। বেশি করে গরম কাপড় নিয়ে নিও। আটচল্লিশ কেজি মনে থাকে যেন।
ইসরাতের ঘুম উড়ে গেল জায়িনের কথা শোনে। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে তাকলো।
” আপনি আমাকে আগে বলেন নি কেন? মাত্র দু-দিনে আমি কি গুছাবো?
“দু-দিন অনেক টাইম। গুছিয়ে নিতে পারবে। আজকে থেকে শুরু করো। দু দিনের আগে গুছানো শেষ হয়ে যাবে।
জায়িন যেতে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।

” কেস নিবে না কার্ড নিবে?
ইসরাত বুঝলো না কি বলছে? জিজ্ঞেস করলো,
“বুঝতে পারছি না। এক্সেক্ট কি বলছেন?
” টাকা কীভাবে নিবে জিজ্ঞেস করছি?
ইসরাত চোখ বড় বড় করে তাকাল,
“আমার টাকা লাগবে না।
” কেন?
“আমার কাছে টাকা আছে।
” এজ ইউ্যের উইস। আমি কিন্তু টাকার নেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে পরে বল না আমি বলিনি টাকার নেওয়ার কথা। তাড়াতাড়ি শপিং করে লাগেজ গুছিয়ে নিও।
ইসরাত মনে মনে জায়িনকে গালি দিল। ইচ্ছে করলো চুল ধরে দেয়ালের সাথে বারি দিতে। ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিতে। শালা আগে বলবি না? ইসরাত ভেঙ্গালো জায়িন কে দু-দিন সময় আছে গুছাতে পারবে? দুদিনে অনেক সময়। তোর বাল গুছাতে পারবো দু-দিনে। হঠাৎ মনে হলো ও নুসরাতের মতো কথা বলছে।

“কিছু বলছ?
” জি না! কেন মনে হলো কিছু বলছি?
“না মুখ কীভাবে বিকৃতি করে আমার দিকে তাকিয়ে আছো।
” আপনার দিকে কেন তাকিয়ে থাকবো? আমার খেয়ে কাজ নেই মনে হয়ে, আমি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছি।
জায়িন ওহ বলে সামনের দিকে চলে গেল। ইসরাতের ইচ্ছে করলো পিছন থেকে গিয়ে জায়িনের কোমরে লাথ মারতে। হাত দিয়ে ঘুষি মারার মতো করতেই জায়িন পিছন ফিরে তাকাল। ইসরাত বোকা হেসে আরেক হাত দিয়ে জায়িনের দিকে যে হাত দেখিয়েছিল ওই হাত চেপে ধরলো। জায়িন এক ভ্রু উপরে তুলে ইসরাতের দিকে তাকালো। ইসরাত বোকা হাসল হা হা করে।
“এক্সারসাইজ করছিলাম ভাইয়া।

জায়িনের কান্ড জ্ঞান হীনের মতো কাজ দেখে হেলাল সাহেব কিছুক্ষণ ধমকা ধমকি করেছেন। নিজেকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করলেন, ” এতো দিন ধরে বলো নি কেন?
“কারণ আমি বুধবারে কনফার্ম করেছি। এটা সব থেকে কাছের ফ্লাইট ছিল পরের ফ্লাইট গুলো দুই-মাস এক মাস পর তাই এটা কনফার্ম করেছি।
” তুমি আমার সামনে থেকে যাও জায়িন। তোমাকে দেখেই আমার রাগ লাগছে। বিদায় হও এখান থেকে।
জায়িন মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। লিপি বেগম স্বামীর উপর অভিযোগ করলেন।
“আপনি জায়িন ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রাজি হলে কেন?
” কেন কি হয়েছে? রাজি হয়ে ভুল করেছি।
“এমন করে বলছেন কেন? জায়িন ওখানে গেলে আর জীবনে এখানে আসবে না।
” না আসলে না আসুক। তার বউকে নিয়ে সুখে থাকলেই হয়। আসার প্রয়োজন নেই! বউকে নিয়ে থাকবে এটাই বড় কথা।

“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
” কীভাবে বলছি?
লিপি বেগম রাগী চোখে তাকালেন। হেলাল সাহেব হালকা হেসে বললেন, “আচ্ছা বাবা রাগ করো না। আমি বলি জায়িন যখন যাচ্ছে যেতে দাও। ওখানে থাকলে ইসরাতের সাথে থাকবে। দুজন এক সাথে সময় কাটালে দুজনের প্রতি দুজনের সম্মান, ভালোবাসা, মায়া, বাড়বে। এখানে থাকলে ডেলা আর আশিক তো বেড়াতে আসবে বেড়াতে না আসুক নতুন বউ হিসেবে তো ডেলাকে কয়েকদিন পর দাওয়াত দেওয়া হবে। জায়িন ডেলাকে দেখলে ওর মনে কিছু তো হবে? ফ্রান্সে থাকলে তো আর ওর সাথে দেখা হবে না। কাজে বিজি থাকবে মনে পড়বে না। দিন শেষে নিজের স্ত্রীর কাছে ফিরবে। স্ত্রীর প্রতি এতে করে ভালোবাসা বাড়বে। তাই জায়িনের ফ্রান্সে যাওয়া নিয়ে আমি মত দিয়েছি। বুঝেছ তুমি!

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১

লিপি বেগম মাথা উপর নিচ নাড়ালেন। যার মানে তিনি বুঝেছেন। হেলাল সাহেব হালকা হেসে বারান্দায় চলে গেলেন। লিপি বেগম খুশি মনে কিচেনে কাজ করতে গেলেন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১ (৩)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here