প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪০
জান্নাত নুসরাত
রাত এগারোটা। চাঁদবিহীন আকাশ তারার আলো ঝিক ঝিক করছে। রাস্তাধারে মাথা উঁচু করে থাকা ল্যাম্পপোস্ট গুলোর ঘোলাটে আলো রাত বাড়ার সাথে ধিমে হয়ে যাচ্ছে। দু-তলা বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে বসে নুসরাত এসব খেয়াল করছে। বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরে রয়েছে। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ রকিং চেয়ারে ওভাবেই পড়ে রইলো। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে পাওয়ার কোটা শূন্য,আর না পাওয়ার কোটা পূর্ণ!
লিপি বেগমের ডাকে নুসরাত চোখ মেলে তাকালো। আস্তে ধীরে উঠে বারান্দা থেকে রুমের ভিতরে আসলো। স্লাইডিং দরজা টেনে লাগিয়ে দিল। লিপি বেগম বলে গেলেন রাতের খাবার খেতে আসার জন্য। আরশকে ডাক দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য রাতের খাবার খেতে ডাকা হচ্ছে।
আরশ ধুম করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। নুসরাত আরশের দিকে ফিরে তাকালো না। রুমের দরজা খুলে বের হতে নিলে আরশ হাত টেনে রুমে ঢুকিয়ে দিল।
“এই আমার শেভিং ক্রিম, জেল, সিরাম, এগুলো কোথায় রেখেছিস?
নুসরাত শান্ত চোখে আরশের দিকে তাকিয়ে নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টা করলল। আরশ ছাড়লো না হাত। আরেকটু বল দিয়ে হাত চেপে ধরলো। নুসরাত উত্তর না দিয়ে এদিক সেদিক তাকালো।
” ওহ বুঝেছি! আমাকে জ্বালানোর চেষ্টা করছিস। ভালো ভালো… যা করার কর যখন আমি পাল্টা ফিরিয়ে দিব, তখন কেঁদে কুল পাবি না। তখন এসে বলিস না আমি কেন করলাম এমন?
নুসরাত আরশের দিকে তাকিয়ে না চাইতে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। হাসি কোনোরকম চেপে বলল,”হুমকি দিচ্ছেন?
আরশ নুসরাতের দিকে হালকা ঝুঁকে কপালে তর্জনী আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বলল,” ওইরকমই কিছু।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
চামচের টুংটাং শব্দের বাহিরে আজ ফিসফিস হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ইরহাম নুসরাতের কানে কানে বলল, “ভাইয়ার জন্য যে স্পেশালি ড্রেস এনে রেখেছিলি ওগুলো দেখি পড়ল না।
নুসরাত মুখে ভাতের লোকমা নিয়ে মাথা নিচু করে ইরহামের কথার উত্তর দিল,”শালার জন্য লাল কালার শার্ট এনে রাখলাম আর শালা দেখ আমার কাপড় পড়ে নিয়ে বসে আছে।
ইরহাম জোরে হাসতে গিয়ে গিলে নিল। হাসি আটকানোর জন্য খেক খেক করে উঠলো।
“যাই বলিস তোর কাপড়ে ভাইয়াকে জোস লাগছে। দেখ, কি কিউট লাগছে? টিশার্ট কিন্তু একদম ফিট হয়েছে আর প্যান্ট টা আরেকটু লম্বা হলে হয়ে গেলে হয়ে যেত। তুই এখন থেকে আরেকটু লম্বা প্যান্ট কিনিস। তাহলে জামাই বউ দু-জনের এক কাপড়ে হয়ে যাবে।
নুসরাত ইরহামের কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
” তুই এরকম খেক শিয়ালের মতো করে খেক খেক করে হাসছিস কেন? ভালো মানুষের মতো হাস। এবনরমালদের মতো খিক খিক করছিস কেন?
ইরহামের হাসি হাসি মুখ ধপ করে অন্ধকার হয়ে গেল।
হেলাল সাহেব খাবার শেষ করে মুচকি মুচকি হেসে চলে গেলেন। নাছির সাহেব ও কোনো রকম খাবার শেষ করে চলে গেলেন।
আহান আজ ঘুমায়নি। সবার সাথে খাবার খেতে বসেছে। নুসরাতের কাপড় আরশকে পড়তে দেখে জহুরি নজরে আরশের দিকে তাকালো। থুতনিতে তর্জনী আঙুল রেখে বলল,”ভাইয়া!
আরশ খাবার খাওয়া থামিয়ে আহানের দিকে তাকালো। আহানকে দেখলো তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
” কি?
“ভাইয়া তুমি বড় আপুর টি-শার্ট পরেছো কেন?
আরশ কেশে উঠলো। রুহিনি পানি ঢেলে আরশের দিকে এগিয়ে দিলেন। পানি নিতে গিয়ে রুহিনির দিকে তাকাতেই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে হলো আরশের । রুহিনির দিকে না তাকিয়ে হাতে পানি নিল। পানির গ্লাসে চুমুক দিতেই আহান বলল,” ভাইয়া তোমার গালে কামড় কে মেরেছে? বড় আপু মেরেছে নাকি? আমাকে ও আপু রোজ গালে নাকে কামড় মারে।
আরশ মুখে নেওয়া পানি গলায় আটকে গেল। বিষম খেয়ে নাকে মুখে পানি আটকে চোখ লাল হয়ে গেল। রুহিনি পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। শোহেব, সোহেদ হাত ধোয়ে এখান থেকে পালালেন। অনিকা বাবা সরতেই হি হি করে হেসে উঠলো। আরশ রুহিনির দিকে চোখ তুলে তাকালো না।
নুসরাত এতোসব কান্ড করলে ও নির্বিকার বসে ভাত গিলছে আর ইরহামের সাথে কথা বলে হি হি করে হাসছে। আহান আবার জিজ্ঞেস করলো, “ভাইয়া বললে না কি হয়েছে? আর তখন দেখলাম লেহেঙ্গা পড়ে ঘুরছিলে, ব্লাউজ পরোনি কেন?
রুহিনি ধমকে উঠলেন আহানকে।
” এতো প্রশ্ন কীসের? চুপচাপ খাবার খাও।
আহান মুখ কাচুমাচু করে বসে রইলো। সে কি এমন জিজ্ঞেস করলো তার মা তাকে ধমক দিলেন। শুধু তো জিজ্ঞেস করলো ভাইয়ার গালে কি হয়েছে?
অনিকা হি হি করে হাসতে হাসতে নিজের পেট চেপে ধরলো। আরশ প্লেটের খাবার কোনোরকম গিলে হাত ধুয়ে প্লেট টেবিলে রেখে দৌড়ালো রুমের দিকে। কিন্তু নুসরাত সে বসে আরাম করে খাবার খেয়ে তারপর উঠলো।
স্নো ফল শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা এখন -১০° সেলসিয়াস ।হিটার অন থাকা সত্ত্বেও এপার্টমেন্ট ঠান্ডা হয়ে আছে। ইসরাতের হাত পায়ের ব্যথা আগের তোলনায় কমেছে। আজ কাজে যায়নি। ক্যামেলিয়া কে ঘটনা খুলে বলতেই সে আঁতকে উঠেছে। বলল আজ আর আসার দরকার নেই ভালো হয়ে জয়েন হওয়ার জন্য। সে আর লিও মিলে সামলাতে পারবে।
ইসরাত এই শীতের মধ্যে কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে থাই গ্লাস খুলে বসে আছে। শীতে মুখ দিয়ে হু হু হু করে শব্দ বের করছে আর হাত ঘষছে।
এপার্টমেন্টের বাহির থেকে কলিং বেল বেজে উঠলো। ইসরাত কম্ফোটার নিচ থেকে উঠলো না।
কলিং বেলের শব্দ শোনে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। জায়িন দরজা খুলে দিতেই সেদিনের দেখা মেয়েটা জায়িনের গলা ধরে ঝুলে পড়ল। জায়িন আকস্মিক এমন ধাক্কা সামলাতে না পেরে মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে দূরে সরালো। মেয়েটে ধাক্কা খেয়ে দরজার বাহিরে দাঁড়ানো ছেলেটার উপর গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
ক্যামেলিয়া চিৎকার করে বলল,
“ইউ ইসরাইট, তুমি আমাকে ধাক্কা দিলে কেন?
লিও ক্যামেলিয়াকে দাঁড় করিয়ে বলল,
“দেখে শুনে জড়িয়ে ধরবে বেবি তো, ও ইসরাইট না ওর রুমমেট।
ক্যামেলিয়া নিজেকে সামলে দাঁড়ালো। জায়িনকে দেখে চেনা চেনা মনে হলো কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারলো না।
” ওহ মিস্টার আ’ম সো স্যরি! আমি আপনাকে দেখতে পাইনি। আমি মনে করেছি ইসরাইট দরজা খুলেছে।
“ইট’স ওকে।
ক্যামেলিয়া নেচে নেচে এপার্টমেন্টের ভিতর ঢুকে গেল। লিও ও পিছন পিছন আসলো। লিও কথা বলা শুরু করলো জায়িন লিও এর কথার টুক টাক উত্তর করলো।
ক্যামেলিয়া ইসরাতের রুমে গিয়ে নক ছাড়া ঢুকে গেল। ক্যামেলিয়া কে হঠাৎ এখানে আসতে দেখে ইসরাত উচ্ছাস প্রকাশ করলো। এতোক্ষণ ধরে সে একা একা বসে বোর ফিল করছিল। নুসরাত কে কল দিয়েছিল কল ধরেনি নুসরাত।
ক্যামেলিয়া লাফ দিয়ে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরলো। ইসরাত পিছনের দিকে কিছুটা হেলে গেল। হাতের ব্যথায় দাঁত খিচে নিল যাতে একটু ব্যথা কম অনুভব হয়। ক্যামেলিয়া জড়িয়ে ধরা থেকে তবুও ইসরাত কে ছাড়লো না। ইসরাত ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতেই ক্যামেলিয়া ছেড়ে দিল।
” এহ স্যরি ড্রালিং আমি ভুলে গিয়েছিলাম, ব্যথা পেয়েছ! আই হোপ ব্যথা পাওনি তুমি।
ইসরাত হালকা হেসে না করলো। ক্যামেলিয়া থাই গ্লাস লাগিয়ে এসে বসলো ইসরাতের পাশে।
“এই শীতের মধ্যে তুমি থাই গ্লাস খুলে বসে আছো। আমার তো শীতে রুহ কাপিয়ে তুলছে। উফফ…
ইসরাত শুধু হাসল। ইসরাতের কপালে এইড প্লাস্টার ক্যামেলিয়া স্পর্শ করলো।
” অনেক বেশি কেটে গেছে, কে ব্যান্ডেজ করে দিল।
ইসরাত ধীরে বলল,
“আমার রুমমেট।
” ওহ হ্যাঁ! তোমার রুমমেট কে দেখে আমি টাসকি খেয়ে ফেলেছি। এরকম হ্যান্ডসাম রুমমেট তো আমার ও চাই। ইসরাইট তুমি এতো হ্যান্ডসাম রুমমেটের সাথে থাকো।
ইসরাত শব্দ করে হেসে বলল,
“লিও কে বলবো তার স্ত্রী অন্য পুরুষের দিকে চোখ দিচ্ছে।
“আরে আমি তো মজা করছিলাম। আমার বেবি কারোর থেকে কম নাকি। আসলে ওই ছেলেটা আমার বেবির থেকে বেশি কিউট। আয় হায় আমি কেরাস খেয়ে গেছি।
ইসরাত লিও বলে ডাক দিতেই ক্যামেলিয়া মুখ কালো করে ফেলল।
“আমি ভয় পাই নাকি? ডাক দাও! যাই বলো তোমার রুমমেট সেই হ্যান্ডসাম। আমার এরকম রুমমেট থাকলে আমি সারাদিন রুমমেট কে আমার সামনে বসিয়ে রাখতাম আর গাল ধরে চুমু খেতাম।
লিও ইসরাতের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” কাকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমি ও শুনি একটু।
ইসরাত কিছু বলার পূর্বেই ক্যামেলিয়া ইসরাতের মুখ চেপে ধরলো।
“এতো জেনে তুমি কি করবে? এটা আমার আর ইসরাইটের পার্সনাল কথা।
নাছির সাহেবের মিনি এক্সিডেন্ট হয়েছে। হাতে গরম তেল পড়ে গিয়েছে। তাই কিছু দিনের জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছিলেন শোহেব, সোহেদ, নাছির, আর আরশ। ইরহাম বড়দের মাঝখানে এতিমের মতো মুখ বানিয়ে বসে আছে। মনে মনে গান গাইল ফাঁইসা গেছি আমি মাইনকার চিপায়।
” ভাই বুঝলাম সবকিছু কিন্তু আপনি ছুটি নিলে আপনার কাজগুলো কে করবে?
নাছির সাহেব চিন্তিত হলেন। সত্যি কথা তো, তিনি রেস্টে থাকলে তার কাজ কে করবে। নুসরাত সবাইকে দল বেঁধে বসে কথা বলতে দেখে নিজে কোমরে হাত দিয়ে এসে ইরহামের পাশে দাঁড়ালো।
শোহেব বললেন,
“আপনি চিন্তা করবেন না, ইরহাম তো আছে সে আপনার কাজগুলো এখন থেকে করবে।
ইরহাম আঁতকে উঠলো। কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বাপের দিকে তাকালো। তার বাপ তাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিল। এ তার বাপ হতেই পারে না। ছোট বেলায় ওর বাপ চেঞ্জ হয়ে গেছে।
শোহেব বললেন,
” সারাদিন বসে থাকে বাড়িতে, তার চেয়ে ভালো এই সময় কাজে দিলে ভালো।
ইরহাম প্রতিবাদ করে উঠল,
“আমার মতো বাচ্চা মানুষকে তোমরা এসব কাজে কেন নিবে? আমার বয়স এসব করার নাকি? আমি এখনো ছুটো রয়েছি। আমি এসব ব্যাবসা সামলাতে পারবো না।
শোহেব বললেন,
” থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে দিব। তোমাকে কথা বলতে বলেছি,বড়দের কথার মাঝখানে কথা বলা কোথায় থেকে শিখেছ?
ইরহাম রাগে লাল হয়ে বসে রইলো। সে কাজ করবে কিনা সে কি নিজের মতামত দিতে পারবে না? এ কোন জালিমের ঘরে তার জন্ম হয়েছে। এই শোহেব তার বাপ হতেই পারে না। না মানে না…
সোহেদ বললেন,
“আহ ভাই, চিৎকার করছ কেন? আর ও কি ব্যবসা সামলাবে! ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে না!
ইরহাম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নুসরাত দাঁড়িয়ে থেকে কথা শুনতে শুনতে ইরহামের গা ঘেঁষে বসলো। আরশ একবার নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আবার চাচাদের কথায় মনোযোগ দিল।
শোহেব বললেন,
” ইরহাম পড়াশোনা করে, হাসালি আমায়। সারাদিন বাড়িতে ওর যে সঙ্গী আছে ওইটার সাথে টইটই করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজ করে বলে আমার মনে হয় না। পড়া শোনা তো লাটে উঠেছে, যা করেছে অনেক এখন ব্যবসায় মন দিক।
ইরহাম কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“আব্বু আমি এখনো ছুটো রয়েছি, এখন আমার টইটই করে ঘুরে বেড়ানোর বয়স তোমাদের মতো বুড়দের সাথে ব্যবসা করার বয়স না। আমি পারব না। এসব ব্যবসা ট্যবসার জন্য অন্য কাউকে দেখো।
শোহেব ক্ষেপে গেলেন। তাদের বুড়ো বলে। হাত তুলে থাপ্পড় মারতে যাবেন নুসরাত বলল, ” ও তো ঠিক বলেছে চাচ্চু তোমারা তো বুড়োই হচ্ছ। আমাদের মতো তো আর বাচ্চা হচ্ছো না! বয়স তো বাড়ছে,তাহলে সত্য কথা বলাতে ক্ষেপে গেলেন কেন?
সোহেদ হা হা করে হেসে উঠলেন। শোহেব মুখ কাচুমাচু করে গিয়ে আবার নিজের জায়গা বসলেন।
নাছির বললেন,
“জায়ান তো তোমার মতো বসে নেই ইরহাম। সে নিজের কাজ করছে, আরশ ও আমাদের যতেষ্ট সাহায্য করছে। এখন আমার হাত ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তুমি জয়েন করো। মাসে মাসে তোমাকে বেতন দেওয়া হবে। আর সাথে বোনাস ও পাবে।
ইরহাম টাকার লোভ দেখালে সে গলল না।
” না মেজ বাবা আমি এসব করবো না। আমি এখন লাইফ ইনজয় করতে চাই। এসব বোরিং ব্যবসায় ঢুকে নিজের লাইফের এই সময় আমি ওয়েস্ট করতে চাই না।
সোহেদ বললেন,
“শুনো ইরহাম একটু টাইম দিলেই হবে। এতে তো কোনো সমস্যা নেই। কয়েকদিন পর যেখানে তুমি নিজেকে থেকে না চাইলে যেতে হবে তখন সেখানে এখন থেকে জয়েন করলে তোমার নিজের লাভ। কাজ বোঝবে, পরে যখন তোমার ইম্প্রুভ হবে তখন উপরে পদে উঠবে। আর সাথে টাকা ও পাবে। আর সামনের দিকে তোমার হেল্প হবে।
ইরহাম কিছু ভাবলো। নখ কামড়াতে কামড়াতে নুসরাতের দিকে তাকাতেই মাথায় আইডিয়া এলো সে কেন ফাঁসবে? নুসরাত কে ফাঁসিয়ে দিলে কেমন হয়? ইরহাম নুসরাতের দিকে তাকিয়ে পৈচাশিক হাসি হাসল।
” মেজ বাবা, আব্বু, চাচ্চু আমি একটা অফার দিব। মানবে তো।
শোহেদ বললেন,
“কি?
” আপনাদের কাজের জন্য একজন চাই যে মেজ বাবার কাজ গুলো করবে তাই তো। তো আপনারা এক কাজ করুন এই যে আমার পাশে যে মেয়ে আছে ওইটাকে ওখানে ঢুকিয়ে দিন। আর এমনিতেই ও সবার সামনে নিজেকে আমার বড় বলে জাহির করে, নেন এইটাকে ব্যবসা নিয়ে নিন। ক্যাছা লাগা মেরা অফার।
আরশ ইরহামের উপর চূড়ান্ত লেভেলের বিরক্ত হলো এটা কোনো কথা! এই বাচাল, বেয়াদব, এডভান্স টাকে তাদের এখানে নিবে। মনে মনে দোয়া করলো চাচ্চু যাতে রাজি না হয়।
নুসরাত বলল,
“ভাই আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছ কেন এখানে? আমি এসব ব্যবসার ব ও বুঝি না। আপনারা যাকে নিতে চাচ্ছেন তাকে নিন। আমাকে এসবে টানবেন না। আমি এক অবলা নারী। আর কে বলল আমি তোর থেকে বড় আমি তোর থেকে গণে গণে তেরো দিনে ছুটো।
” এ্যাঁ এ্যাঁ বললেই হলো, তুই আমার বড়। মেজ বাবা এই বেটাছেলেকে ব্যবসায় নিয়ে ঢুকান।
নাছির সাহেব বললেন,
“চুপ দুজন আর একটা কথা না! ইরহাম আর নুসরাত দু-জন আগামীকাল থেকে জয়েন করছো। আর কোনোরকম উল্টা পাল্টা কাজ করবে না। দুই বছর আগে যা করেছো তা তো একদম না।
নুসরাতের ইচ্ছে করলো মাটি তে গড়াগড়ি করে কান্না করতে। ইরহামের দিকে তাকিয়ে পিঠে ঠাস করে থাপ্পড় বসালো।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৯
” শালা মীর জাফরের বংশধর। তুই আমার বন্ধু হতেই পারিস না। তোর সাথে আমার সম্পর্ক এইখানেই শেষ। আজ থেকে তুই কে আমি চিনি না আর আমি কে তুই চিনস না। সম্পর্ক শেষ মানে এখানে, এই মুহুর্তে, এই তারিখে শেষ!
ইরহাম নাটকীয় ভঙ্গিতে বুকের বাঁ-পাশ চেপে ধরে বলল,
“না পিয়ারি এ হতে পারে না!