প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩২
জান্নাত নুসরাত
নাছির মঞ্জিলের বাঁ-পাশে গোলাকৃতি করে সাজিয়ে রাখা কয়েকটি চেয়ার। সেখানে হাতে রসায়ন বই নিয়ে মনোযোগী হয়ে বসে আছে আহান। চোখ দুটো একদম দেবে দিচ্ছে বইয়ের ভেতর। এত মনোযোগ বইয়ের প্রতি কেন তা বুঝে উঠা মুশকিল বটে! অনেকক্ষণ বইয়ের পানে চেয়ে থেকে নেত্র তুলে উপরে তাকাল। চোখের মধ্যে টানা চশমা খুলে নিয়ে তর্জনী আঙুল আর বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে চোখ মুছল। অতঃপর আবারো মনোযোগ সহকারে বই দেখতে ব্যস্ত হলো। সে প্রচুর মনোযোগী হয়েছে রসায়নের জৈব রসায়ন পাঠের প্রতি। ইসরাত আপির বিয়ের আগেই মদ তৈরি শিখতে হবে। আর সেটা বানিয়ে নুসরাত আপুর উপর ট্রাই করতে হবে। মেঝ মা মনে করছেন সে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হয়ে গিয়েছে আসলে তা তো না। সে মাথায় কি ফন্দি আটছে তা জানলে বেচারি মেঝ মা অক্ষা পাবে।
নুসরাত মুখ ফুলিয়ে এসে বারান্দার কাছে দাঁড়াল। পায়চারি করতে করতে নিজের হাতের মুঠোয় নিজে খামচাল অনেকক্ষণ। হঠাৎ আরশকে ভেতর থেকে বের হতে দেখে শিষ টেনে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল। ফলস্বরূপ আরশ ফিরেও তাকাল না। বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। করার মতো কিছু খুঁজে পেল না। আকস্মিক আরশকে এক পকেটে হাত গুজে অন্য হাতে সিগারেটে আগুন ধরাতে দেখে নুসরাত থেমে গেল। দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় চাপল। আরশ সিগারেট ঠোঁটে গুজতেই নুসরাত চিৎকার করে বাজ খাই গলায় গেয়ে ওঠে,”ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোটে
যখন বিড়ির ধোঁয়া উঠে
ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোটে
যখন বিড়ির ধোঁয়া উঠে,
সেই ধোঁয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে
সেই ধোঁয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে।
আরশ চোখা দৃষ্টি নিয়ে ফিরে তাকাল নুসরাতের দিকে। শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”আসব?
নুসরাত দু-হাত পেতে দিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“আসো বাবু, আসো!
আরশ বিরক্তি সুরে নুসরাতকে শুধাল,
” লজ্জা লাগে না?
নুসরাত অবাক হওয়ার ভান করল। চোখ দুটো উল্টে নিয়ে জানতে চাইল,”লজ্জা করবে কেন! আমি কী কোনো পাপ করেছি নাকি উলঙ্গ হয়ে ঘুরছি! পরিপূর্ণ কাপড় পরে ঘুরছি, এতে লজ্জা পাওয়ার কী আছে! অদ্ভুত!
আরশের মুখ থেকে ঝড়ে ঝড়ে বিরক্তি পড়ল। চোখ সরু করে দেখল বাচাল ভদ্রমহিলাকে। তারপর হিসহিসিয়ে বলল,”মৌমাছির কামড় খেয়েও লজ্জা লাগছে না, বেয়াদব!
আরশ এটা বলতেই নুসরাত বারান্দা ধরে প্রায় ঝুলে পড়ল। উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখল কাঁঠাল গাছটাকে। পুরো স্ক্যান করা শেষে আরশের দিকে চেয়ে হা হা করে হেসে উঠল। আরশ এমন হাসির মানে খুঁজে পেল না। নুসরাত বলল,”আরশ ভাই আপনি মৌমাছির চাক উড়িয়ে দিয়েছেন? হা হা! আপনি জেলাস আরশ ভাইইইই! মৌমাছির উপর আবার কে জেলাস হয়!
আরশ নুসরাতের এমন হাসিতে নির্বাক বনে গেল। এটা শুধু হাসছে কেন, আর এমন করে তাকাচ্ছে ই বা কেন!অদ্ভুত দৃষ্টিতে নুসরাতে দিকে তাকিয়ে থাকল আরশ। আরশকে এভাবে তাকাতে দেখে নুসরাত বলল,”আরশ ভাই এভাবে তাকাবেন না!
আরশ এক ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,
“কেন?
নুসরাত দু-হাতে নাটকীয় ভঙ্গিতে ধীরে মুখ চেপে ধরতে গিয়ে একটু জোরেই চেপে ধরল। পরমুহূর্তেই চোখ মুখ খিঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল,” আম্মা ব্যথা!
আরশ তখনো নুসরাতের নাটকীয় ভঙ্গিতে করা কাজগুলো দেখছে নিচে দাঁড়িয়ে টানটান শরীর নিয়ে। উষ্ণ ভাপে ঘেমে গিয়ে কায়া হতে কুস্তুরীর সুঘ্রাণ বের হচ্ছে মৃদু। নুসরাত আরশের দিকে চেয়ে বলল,”আরশ ভাই আবারো প্রশ্ন করুন আপনি, কেন!
আরশ নুসরাতের কথা অনুযায়ী আবারো প্রশ্ন করল,
“কেন?
নুসরাত দু-হাত নিজের মুখে আবারো নাটকীয় ভঙ্গিতে চেপে ধরে বলে উঠল,” আপনি এভাবে তাকালে আমার পায়ের তালু রাগে জ্বলে উঠে, তাই এভাবে তাকাবেন না।
আরশ সিগারেটের শেষ অংশ ফেলে দিয়ে সেন্টার ফ্রেশ নিজের মুখে পুরল। তারপর দু-হাত পকেটে আরাম করে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল,”দেখি তো কেমন পায়ের তালু জ্বলে ওঠে?
নুসরাত বেয়াক্কেলের মতো বারান্দার রেলিঙের উপর বসে আরশের দিকে পা তুলে বলল,”এই দেখুন রাগে কী রকম পায়ের নিচ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
আরশ নুসরাতের কথায় ঠোঁট টিপে মাথা নাড়াল বোঝার ভঙ্গিতে। তারপর বলল,”সবার মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হয় তোর পা দিয়ে বের হয় কেন?
নুসরাত দু-হাত ছেড়ে দিল রেলিঙের উপর থেকে। শাহরুখ খান স্টাইলে দু-পাশে হাত মেলে বলতে গেল,’ আমি নুসরাত নাছির সবার থেকে আলাদা, কিন্তু অতটুকু বলার ফুরসত হলো না। কানে বাজল আরশের চিৎকার,”বেয়াদবের বাচ্চা পড়ে কোমর ভাঙবি।
বলা শেষ হতেই ধুপ করে পড়ে গেল নুসরাত। পড়ল তো পড়ল আহানের মাথার উপর পড়ল সশব্দে।
আহান নিচের দিকে ঝুঁকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ঘাস দেখছিল৷ কিন্তু দেখতে পারল কই শরীরের উপর ধুম করে এসে মোটা একটা জলহস্তী পড়ে গিয়েছে তার। আহান ককিয়ে উঠল সাথে নুসরাত। নুসরাত উঠে দাঁড়িয়ে কোমর চেপে ধরার ভঙ্গি করতে চাইল কিন্তু মনে হলো সে ঠিকই আছে। মাথায় আসলো মোটা একটা তোলার বস্তার উপর পড়ায় বেশি ব্যথা পায়নি। আহানের দিকে ফিরে চাইতেই দেখল বেচারা চেয়ারের সাথে চ্যাপ্টা হয়ে আছে। চোখের চশমা ভেঙে গিয়ে একপাশে ঝুলছে।। নুসরাত আহানের দিকে চেয়ে শব্দ করে হেসে উঠল। তারপর আবার আহানকে আড়চোখে দেখল আবার হাসল। দেখল আর হাসল। হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল নিজের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির গায়ে। আহান নিজের চোখের ভেঙে যাওয়া চশমা খুলে দেখল দুঃখী মুখ বানিয়ে। তারপর নুসরাতের পানে ছলছল নেত্র তুলে চেয়ে বলল,”তুমি আমার সব বিক্রিয়া নষ্ট করে দিয়েছো। আমার ম্যাগনিফাইং গ্লাস!
আহানের ব্যথাতুর স্বরে নুসরাত আরো জোরে হেসে দিল। আহান দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলল,”জৈব যৌগের পাঠ পড়ে মদ তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তুমি আমার সব বিক্রিয়ার উপর পড়ে বিক্রিয়ার সকল দ্রব্য নষ্ট করে দিলে। পড়ার আর জায়গা পাওনি? তোমার জামাইয়ের মাথার উপর পড়লে না কেন?
নুসরাত হা হা করে হেসে উঠল। একটা কথার উত্তর দিল না। আহান আবারো বলল,”হতে চাইলাম অ্যান্টন ল্যাভয়সিয়ারকে করে দিলে নিউটন। নিউটনের মাথায় আপেল পড়েছিল আর আমার মাথায় আরশ ভাইয়ের বউ পড়েছে। আপেল পড়ায় ব্যাটা নিউটন হয়েছিল আর আমার মাথায় জলহস্তী পড়ায় আমি আহানটন হয়ে গিয়েছি। আজ থেকে আমি আহানটন।
হেলাল সাহেব হাতে রাখা খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন অনেকক্ষণ যাবত। খবরের কাগজে ওই এক জিনিস খু*ন, ধর্ষ”ণ হ*ত্যা। হেলাল সাহেব এসব দেখে দেখে তিক্ত বিরক্ত। তাই শক্ত হাতে খবরের কাগজ বন্ধ করে বসে রইলেন৷ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের বুঁড়ি ও বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। পেটের ওপর হাত রেখে বসতেই সুফি খাতুনের আবির্ভাব ঘটল সেখানে। হেলাল সাহেবের পাশে বসতে বসতে কিৎকাল কুটনী মহিলাদের মতো আশেপাশে দেখলেন। দেখে নিলেন মেয়ে নামক রণচণ্ডী মহিলা আছে নাকি নেই! দেখলে ঝাড়ি থেকে রক্ষে নেই তার। আশপাশ দেখা শেষে গলা খাঁকারি দিলেন। তিনি এই বয়সে এসেও একটু বেশি পরনিন্দা করতে ভালোবাসেন। তাই পরনিন্দা করতে উদগ্রীব হলেন। বললেন,”কী ভেবেছিস হেলাল?
হেলাল সাহেব ভ্রু বাঁকালেন। শুধালেন,
“কিছু কী ভাবার ছিল?
সুফি খাতুনের নিকট প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে চুপ করে গেলেন তিনি। সুফি খাতুন মাথায় হাত দিয়ে আকাশ থেকে পড়ার মতো ভঙ্গ করলেন। বললেন,” ইরহাম আর নাছিরের ছোট মেয়ের বিষয়ে!
হেলাল সাহেব মনে করার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালেন। ঠোঁট চোখা করে বললেন,”ও ওই কথা! জায়িনের বিয়ের পর দেখছি এই বিষয়।
সুফি খাতুন কুটিল হেসে ওঠে দাঁড়ালেন। মনে মনে নাচতে শুরু করলেন এখানে একটা কাইজ্জা বাঁধিয়ে দিয়েছেন ভেবে।
আহান মুখের মধ্যে আইসকিউব লাগিয়ে ঘুরছে সাথে যাকে পাচ্ছে তাকে ধরে ধরে বিস্তারিত জানাচ্ছে। নুসরাত আপুর মতো বটলি মহিলা তার উপর পড়ার পর ও যে সে বেঁচে আছে এটাই অনেক। এই সাড়ে পনেরো বছরের জীবনে সে নির্ঘাত কোনো ভালো কাজ করেছে যার ফলস্রুতিতে আজ বেঁচে। কিন্তু মাথায় তেমন ভালো কাজের কোনো কথাই আসলো না। জীবনের প্রথম পৃষ্ঠে থেকে যা করেছে তা একবার করে রিভাইস করে নিল। তেমন ভালো কিছু করেছে বলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে ধরা পড়ল না। তারপরও সে জৌতিষিদের মতো হাত তুলে খোদা ভক্তি দেখিয়ে নিজেকে বাহবা দিয়ে বলে ওঠল,”আহানটন ভালো কিছু করেছিস তাই আজ তুই বেঁচে আছিস।
পাশের বাড়ির সাজনা বেগম এসেছিলেন ইসরাতকে জায়িনেরা কী কী দিয়েছে দেখার জন্য, তখন আহান ভদ্র মহিলার সাথে কিৎকাল পূর্বে ঘটা ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গেল। ভদ্র মহিলা শুনতে চাইলেন না, আহান জোর করে ধরে বেঁধে পুরো কাহিনি জানাল। আহান বলতে থাকল,”জীবনে আমি সৈয়দ আহান নাওফিল একটা ভালো কাজ করেছিলাম তাই আজ বেঁচে আছি নাহলে নিশ্চিত মরে যেতাম।
সাজনা বেগম এতক্ষণ আহানের বকবক শুনছিলেন। এবার গিয়ে কথা বললেন,”নুসরাত যদি আরো দু-জন এসে তোমার উপর পড়ে বাবা, তবুও তোমার কিছু হবে না। আর ভালো কাজের কথা বলতে গেলে তুমি, তোমার ছোট ভাই আর ছোট আপু জীবনে মানুষের কোনো ভালো কাজই করোনি। তোমরা তো মানুষের ভালোই দেখতে পারো না। ভালো কিছু হতে দেখলে সেখানে একটা ঝামেলা বাঁধানোর চেষ্টা করো, হয়তোবা কারোর ওখানে ঝামেলা বাঁধাতে গিয়েছিলে, পারোনি এইটাই ভালো কাজ করেছ।
আহানের ফাটা মুখ ফাটা রয়ে গেল। ভদ্র মহিলার কাছে একটু প্রশংসা করতে আসায় ভদ্রমহিলা তাকে একদম অপমান করে ছেড়ে দিবে। সে ঝুলে যাওয়া চোয়াল নিয়ে চলে গেল নুসরাতের কাছে। যেতে যেতে মুখ ঝামটা মারল সাজনা বেগমকে দেখিয়ে। মিনমিনিয়ে উচ্চারিত হলো জিভ বেয়ে,”এই মহিলার এই স্বভাবের জন্য মন্টু ব্যাটা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আমি হলে কবেই তৃতীয় বিয়ে করে চতুর্থ বিয়ের প্রস্তুতি নিতাম। যত্তসব নিন্দুক মহিলা মানুষ। মানুষের পিঠ পিছে কথা বলে।
হেলেদুলে বাহিরে আসতেই দেখল নুসরাত আর ইসরাত বসে। লাফ দিয়ে গিয়ে নুসরাতের পাশে বসতে বসতে থাবা মেরে তার হাত চেপে ধরল। হাতের কালো ডায়ালের র ঘড়ির মধ্যে সময় দেখল। প্রায় একটা বেজে গেছে। ইরহাম হেলেদুলে এর মধ্যে আসলো ভেতরে। তাদের পাশ ঘেঁষে বসতে বসতে বলে ওঠল,”তোমার সতীন আবার গিয়েছে তোমার জামাইয়ের কাছে।
নুসরাত তড়াক করে উঠে বসল। চোখ খিঁচিয়ে শুধাল,
“মাদারচু*দটা আবার গিয়েছে আরশ ভাইয়ের কাছে?
ইরহাম ঠোঁট টিপে হাসি সংবরণ করল। হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে জানাল,” হু!
নুসরাত লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ইসরাত মজা করে এমনি বলল,”নুসরাত বটি নিয়ে যা।
নুসরাত ওড়না পেটে পেঁচিয়ে যেতে যেতে থেমে গেল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠল,”ঠিক কথা বলেছিস। আহাইন্না যা বটি নিয়ে আয়, কুত্তির আজ চুল গোড়া থেকে কেটে ফেলব।
আহান নুসরাতকে সমর্থন করে বলল,
“তুমি যাও, আমি তোমার পিছু পিছু দা নিয়ে আসছি। তাহলে একটা ভাব আসবে নিজের প্রতি।
নুসরাত লাফিয়ে লাফিয়ে চলে গেল। আহান, ইসরাত, ইরহাম একে অন্যের দিকে চেয়ে কয়েকবার চোখের পাতা ফেলল তারপর ভো দৌড় দিল নুসরাতের পেছন পেছন৷ নুসরাত একদম তিন লাফ মেরে গিয়ে অনিকার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনিকা ভয় পেয়ে একহাতে আরশের বাহু চেপে ধরতে যাবে নুসরাত কটমট করে হুংকার দিয়ে উঠল,” অনিকার বাচ্চাআআ।
অনিকা ভয়ে আরশকে শক্ত করে চেপে ধরতেই যাবে নুসরাত ধাক্কিয়ে তাদের মধ্যে ঢুকে গেল। আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে তাদের দিকে তাকাতেই নুসরাত তার মুখ ঠেলে অন্যপাশে ফিরিয়ে দিল। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উপরের দিকে উঠে আরশের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,”দু-মিনিট কান বন্ধ করে বসে থাকুন। একটু মেয়েলি বিষয়ে কথা আছে ওর সাথে।
আরশ চুপচাপ অন্যপাশে ফিরে গেল কানে এয়ারপড গুজতে গুজতে। নুসরাত নিজস্ব ভঙ্গিমায় বলে ওঠল,”ইশ, আমার ধামড়ি বাচ্চা তোকে আমি একটু আগে কী বোঝালাম।
অনিকা চলে যেতে চাইল নুসরাত একহাতে তার হাত নিজের কব্জায় নিয়ে নিল। ইরহামকে ইশারা করে বলল,”ওই ইরহাম, আমার বাপের লাইসেন্স বিশিষ্ট রিভলবার বের কর শালিকে আজ ট্রিগার পয়েন্টে রেখে লাথি মারব।
ইরহাম সত্যি সত্যি রিভলবার বের করে নিল প্যান্টের ভেতর থেকে। নুসরাত হকচকিয়ে উঠে বলল,”হয়েছে হয়েছে লুকিয়ে ফেল। তোকে কে বলেছে সত্যি সত্যি বের করতে।
ইরহাম যথাআজ্ঞা ভঙ্গিতে আবারো ঢুকিয়ে নিল। নুসরাত বলল,”শোন আমার বাচ্চা, ও তোর আব্বা। যাকে বলে ধর্মীয় মতে আব্বা।
ইরহাম নুসরাতের কথায় বাঁধা দিয়ে বলে ওঠে,
“ধর্মীয় মতে এখনো আব্বা হয়নি।
ইসরাত টিটকারি মেরে বলে ওঠল,
” এর জন্য মাথায় টুপি পরিয়ে আব্বা ডাকাতে হবে সামনা-সামনি, তাহলে বাপ মেয়ের মিলন ভালোভাবে হবে আর ধর্মের আব্বায় ও আরশ ভাই পরিণত হবে।
নুসরাত সবার কথা মনোযোগ সহকারে শুনল। বলল,”শোন আমার ধামড়ি বাচ্চা,বাপের সাথে এমন লদকা লদকি করলে মানুষ খারাপ বলবে। বলবে, এত বড় মেয়ে বাপের গলা ধরে ঝুলছে এখনো।
অনিকা নুসরাতের দিকে চেয়ে আরশকে ডেকে উঠল,
“আরশ!
নুসরাত অনিকাকে ভেঙ্গিয়ে উঠে বলল,
“আলচ কী আব্বা ডাক বেটি! গিলুহীন মেয়ে, একটু আগে যাকে বাপ ডাকলি দু-মিনিট যেতে না যেতেই তাকে ছাইয়া ভেবে বসে রইলি! এটা দেখে মনে হচ্ছে কিয়ামতের আলামত।
আহান নুসরাতের কথায় শক্ততা আনতে বলল,
” এইসব মেয়েদের দেখলেই বোঝা যায় কিয়ামত আসতে খুব একটা দেরি নেই।
অনিকা নুসরাতের দিকে চেয়ে রইল। নুসরাত কিছুক্ষণ অনিকার কাপড় চোপড় দেখে ইরহাম আহানকে চুটকি বাজিয়ে দেখাল এখান থেকে চলে যেতে। দুজন মুখ ঝুলিয়ে হেলেদুলে বাড়ির ভেতর চলে গেল। তারা চলে যেতেই নুসরাত ঠোঁট টেনে হেসে কিছু বলতে যাবে আবার থেমে গেল। আরশকে নিজেদের পাশে দাঁড়ানো দেখে অনিকাকে টেনে নিয়ে আসলো দূরে। ইসরাত নিজেও সাথে এসেছে। নুসরাত এবার বলল,”এসব ছোট খাটো জিনিস দেখিয়ে তুমি পুরুষ মানুষকে আকর্ষিত করতে চাইছো?
মুখ দিয়ে চুকচুক করে শব্দ করল। অনিকা বিব্রত হয়ে ইসরাতের দিকে তাকাল। ইসরাতের নিজের অবস্থা ও সমান। নুসরাত ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”ওকে একটা ব্রা এর দোকানের সন্ধান দিয়ে দিস।
ইসরাত বলে ওঠল,
“ওর এসব নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নেই।
নুসরাত ভীষণ চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আহা, আমারই চিন্তাই তো। ও এসব দেখিয়েই আরশ ভাইকে নিজের করতে চাইছে তাহলে এর দরকার কেন নেই! অবশ্যই দরকার আছে!
অনিকা কঠোর কন্ঠে বলল,
“কোনো প্রয়োজন নেই।
নুসরাত আবারো জেদি স্বরে বলল,
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩১
” আহা প্রয়োজন আছে। পিতা সমান প্রেমিককে সেডিউইস করতে চাইলে উঁচু উঁচু ফমের ব্রা পড়বে। এসব ছোট ছোট ফমের ব্রা পড়বে না। চাইলে আমি ভালো একটা ব্রান্ডেড দোকানের খবর দিতে পারি। ওখানে গিয়ে না হয় তুমি ফমের ব্রা কিনে নিবে। মুখ দেখিয়ে না পারো বুক দেখিয়ে একদম ঘায়েল করে দিবে।
নুসরাত মুখ ফেড়ে আরো কিছু বলতে চাইল ইসরাত মুখ চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেল বাড়ির ভেতর। নুসরাত তখনো হাতের তালু নিচে কিছু একটা বলছে আর সাথে চিৎকার করছে। ইসরাতের হাত টেনে নিজের মুখ থেকে নামিয়ে নিয়ে দৌড়ে আসলো গেটের সামনে। মধ্যমা আঙুল মুখের সামনে এনে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,”অনিকার বাচ্চাআআ, ফাক ইউ।