মায়াকুমারী পর্ব ৬০
মেহেরিন আনজারা
নিঃশব্দে পা বাড়াল বাবা-মায়ের রুমের দিকে। ভেতরে ঢুকে নিশুর দিকে এগিয়ে গেল। কোমল হাতে পাঁজাকোলে তুুলে নিজের রুমের দিকে এগোল। শিশিরভেজা ফুলের মতো নরম,তবু কতটা ভর! বুকের ভিতর এক অদ্ভুত কম্পন বাজল ধ্রুবর,চোখে ঝলসে উঠল অব্যক্ত এক টান। দৃষ্টি সরিয়ে ফোন তুলে ডায়াল করে কানে তুললেন আসাদ সাহেব।
“হ্যালো,আমি আসাদ সাহেব বলছি। বড় ছেলে তার বউকে ডিভোর্স দিতে চায়। দ্রুত কাগজপত্র রেডি করুন,লইয়ার সাহেব।”
পদক্ষেপ থেমে গেল ধ্রুবর। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল মুহূর্তেই।
“হ্যাঁ,মেজ ছেলেরও ডিভোর্স করাব। তারপর ওর সঙ্গে বড়টার বউয়ের বিয়ে দিবো।”
নীরবে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল ধ্রুব। রুমে ঢুকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো নিশুকে। পাতলা চাদর টেনে দিলো গায়ের উপর। হাতঘড়িটি খুলে বেড সাইড টেবিলের উপর রাখল। এরপর টি-শার্ট খুলে ফ্রেশ হয়ে আরেকটি পরে ডাইনিংয়ের দিকে পা বাড়াল।
“রিনা,আব্বা খেয়েছে?”
“সন্ধ্যায় হালকা একটু নাস্তা করছে।”
“নিশুমনি?”
“খালুর লগে তহন একটু খাইছিলো।”
“রুটি বানিয়েছিস?”
“হ।”
“আব্বার খাবার রেডি কর।”
“আইচ্ছা।”
রিনা ট্রেতে খাবার সাজাতে লাগল তড়িঘড়ি। ধ্রুব আসাদ সাহেবের রুমে ঢুকে মেডিসিন বক্স বের করল। তীর্যক চোখে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন তিনি।
“সকালে ডায়াবেটিস চেক করেছেন?”
“না।”
উনার গলার স্বর এবং ভাবভঙ্গিমা এমন যেন ধ্রুবর উপস্থিতিতে ভীষণ বিরক্তিবোধ করছেন।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“তাই তো আজেবাজে বকছেন।”
ভ্রু কুঁচকালেন তিনি।
“কী করলাম?”
“বয়স বাড়লে অনেক সময় আলঝাইমার্স,ডিমেনশিয়া বা এ ধরনের স্নায়ুবিক রোগ দেখা দেয়। তখন নিউরোনগুলো এলোমেলো হয়ে যায়,স্মৃতি এক সময় থেকে আরেক সময়ে ছুটে বেড়ায়। আমার মনে হচ্ছে,আপনিও নিশুমনির মতো ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই একজন ভালো নিউরোলজিস্ট-এর পরামর্শ নিয়ে নিজের ট্রিটমেন্ট নিন।”
ক্রোধে উনার মুখ লাল হয়ে উঠল।
“ফাইজলামি করো?”
প্রতিত্তোর করল না ধ্রুব। নিঃশব্দে মেডিসিন বক্স থেকে গ্লুকোমিটার বের করে এসে উনার আঙ্গুলে সূঁচ ফুটিয়ে মেশিনে ব্লাড সুগার চেক করে রিপোর্টের সংখ্যাগুলো দেখে বলল,”ডায়বেটিস বাড়তি।”
খালি পেটের ঔষধগুলো হাতে তুলে দিলো। কোনো কথা না বলে পানি দিয়ে গিলে নিলেন তিনি। থমথমে মুখ উনার। রিনা খাবার নিয়ে এলো। আসাদ সাহেব রুটি ছিঁড়ে ঝোলে ডুবিয়ে বললেন,”দিলরুবা কই?”
“কেন?”
প্রতিত্তোর করলেন না তিনি। মেশিনগুলো গুছিয়ে বক্সে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে ধ্রুব বলল,”হসপিটালের একজন ডাক্তার আম্মাকে ভীষণ পছন্দ করেছেন। আম্মারও পছন্দ হয়েছে উনাকে। তাই ভাবলাম,দ্রুত আপনার সাথে আম্মার ডিভোর্স করিয়ে ওই ডাক্তারের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। আপনার লইয়ারকে আমার নাম্বারটা দিয়ে ফোন করতে বলবেন,জরুরি কথা আছে উনার সঙ্গে।”
থমকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন আসাদ সাহেব। নির্বিকার রইল ধ্রুব। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন তিনি।
“ফাইজলামি করছো আমার সাথে?”
“খাবার খেয়ে বাকি ঔষধগুলোও খেয়ে এক ঘন্টা পর ঘুমিয়ে পড়বেন।”
বেরিয়ে গেল ধ্রুব।
“অসৎ পোলাপান। মুড দেখায় আমারে। মুড! এমন দিন দেখার জন্য এইসব অজাত-কুজাতের জন্ম দিয়েছিলাম।”
রাগে-জিদে গজগজ করতে লাগলেন তিনি।
“আমার সাথে ফাজলামি করে!”
ডাইনিংয়ে গিয়ে ট্রেতে খাবার তুলে নিলো ধ্রুব। তারপর পা বাড়াল রুমের দিকে। রুমে ঢুকে টেবিলের উপর ট্রে রাখল।
“নিশু! নিশু! এই নিশু!”
ঘুমে বিভোর শিশুর মতো কুঁকড়ে শুয়েছিল নিশু। অস্পষ্ট স্বরে গুঙিয়ে উঠল,”হুঁ.. কী?”
“উঠ।”
“কেন?”
“উঠ বলছি!”
ধমক দিতেই কেঁপে উঠে চোখ মেলে তাকাল।
“কী হয়েছে?”
“উঠ।”
উঠে বসল নিশু।
“দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আয়।”
“কেন?”
“যা বলছি তাই কর।”
“ঘুমাচ্ছিলাম আর তুমি..”
“তাড়াতাড়ি!”
বুক ভার হয়ে গেল নিশুর। ধমকের স্বর তাকে সবসময় ছোট আর তুচ্ছ মনে করায়। চোখে জল টলমল করে উঠল,অচেনা বেদনায় গলা আঁটকে এলো। চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নাক টেনে নিজেকে সামলে কুলি করে হাত-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো। টাওয়াল এগিয়ে দিলো ধ্রুব।
“ধর,মুছ।”
ধ্রুবর দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে ফিরে টাওয়াল নিয়ে চুপচাপ মুখ মুছে নিলো।
“বিছানায় বস যা।”
নীরবে তাই করল নিশু। প্লেটে ভাত বেড়ে মেখে নিশুর মুখে তুলে দিলো। মলিন মুখে ধীরে ধীরে চিবুতে লাগল নিশু।
“ঔষধ খেয়ে ঘুমাসনি কেন?”
আরেকটু অভিমানী হয় নিশু।
“কীরে?”
“কথায় কথায় ধমকাও কেন? জন্মের পর তোমার মুখে মধু দেয়নি? করলার রস খাইছেয়ে বুঝি আমার ফুপি? ভালো কথা বলতে পারো না?”
ফণা তোলা সাপের মতো ফুঁসে রয়েছে নিশু। চোখ-মুখ এমন যেন হয়তো কেঁদে ভাসাবে আর না হয় ছোবল মারবে।
“তোর মুখে দেখি খই ফুটেছে!”
“সারাজীবন চুপ থাকব নাকি!”
“ঔষধ না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিস কেন?”
মুখ ঘুরিয়ে নিলো নিশু।
“নিজের তো একটু যত্ন করতে পারিস।”
“তাহলে তুমি আছো কেন?”
সন্ধ্যার সোনালি আলো আস্তে আস্তে ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকছে। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো নিশু। ঘরটা যেন তার উত্তেজনার সঙ্গে সঙ্গী হয়ে উঠল,বাতাসে পর্দাগুলো দুলছে,দূরে গাছের পাতা নরম দোল খাচ্ছে।
“নিশু,হয়েছে তোর?”
“হ্যাঁ।”
“আয়।”
“আসছি।”
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরোল নিশু। একপলক তাকাল ধ্রুব।
“এত সাজসজ্জা করে বেরুচ্ছিস,কেউ যদি কিডন্যাপ করে তোকে?”
“আমি তো সুন্দরী না,কার আবার রুচি হবে আমাকে কিডন্যাপ করার!”
“ধর কোনো পাগলে করে বসল!”
“পাগলের রুচি এত খারাপ না।”
“ধর করল!”
“সমস্যা নাই,আমার একটা পাগলা বয়ফ্রেন্ড আছে,সে আমাকে উদ্ধার করবে। এখন চলো।”
গেটের সামনে এসে গাড়িতে উঠে বসল ওরা। গাড়ি ছুটে চলল এ্যাপোলো হসপিটালের দিকে। রাস্তার ধুলোমাখা আলো,গাছের ছায়া,দূরের বাতাসে ঝড়ানো বসন্তের সুবাস- সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি,তবু নিঃশব্দ উত্তেজনা ভর করল ওদের মধ্যে। হসপিটালে পৌঁছে ধূসরের কেবিনের দিকে পা বাড়াল। বেডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে রয়েছে ধূসর। হঠাৎ নাকে পরিচিত ঘ্রাণ ভেসে আসতেই চট করে চোখ মেলতেই দেখল ধ্রুবর সঙ্গে কেবিনে ঢুকছে নিশু। পরনে একখানি আকাশি রঙের মণিপুরী শাড়ি। শাড়ির সূক্ষ্ম কাজ আর সূতোয় বোনা প্যাটার্ন যেন বসন্তের নরম আলোয় ঝলমল করছে। চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে নরম গোলাপি লিপস্টিক,হাতে কয়েকগাছি রেশমী চুড়ি,মুখে মিষ্টি হাসি,চঞ্চল ছটফট- সব মিলিয়ে যেন বসন্তের নরম আলোয় ফুটে ওঠা এক নাজুক ছায়া। চোখ নামিয়ে ফেলল ধূসর।
“ফুপি,কেমন আছো?”
মৃদু হাসলেন তিনি।
“এই তো ভালো।”
“খেয়েছ কিছু?”
“হ্যাঁ।”
“তোমাদের জন্য কী বানিয়ে এনেছি,দেখো!”
সঙ্গে করে আনা ব্যাগ থেকে একে একে বক্সগুলো বের করল নিশু। ঢাকনা খুলতেই ঘ্রাণে ভরা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ল- চিকেন মমো,অন্থন আর থাই স্যুপের।
“এতকিছু তুই কতক্ষণে করলি?”
“কথা না বাড়িয়ে খাও তো! দ্যুতি সার্ভ কর।”
নীরবে সায় দিয়ে তাই করতে লাগল দ্যুতি। বুশরাও হাত লাগিয়ে সাহায্য করতে লাগল।
“আম্মা,কী হয়েছে?”
“কই না তো!”
“তোমার মুখ মলিন কেন?”
“তোর ভাইয়ের জ্বর কমছে না।”
“ঔষধ খেয়েছে?”
“দিয়েছি ও খায়নি।”
মেজাজ খারাপ হলো নিশুর। কোমরে হাত রেখে অগ্নি দৃষ্টি ছুঁড়ল ধূসরের দিকে।
“এইসব কী হচ্ছে,শুনি!”
সরল দৃষ্টিতে তাকাল ধূসর। বুকের ভিতর তিরতির করতে লাগল।
“ঔষধ খাচ্ছ না কেন? ঢং করছো ঢং?মেয়েদের মতো ভালোই তো ঢং করতে জানো তুমি! এতদিন আমি ঔষধ না খেলে আমাকে যা-তা বলে বকাবকি করতে,আজ দাঁড়াও তোমাকে আচ্ছামত ধোলাই করব! শুনলাম,বুকেও ব্যথা,ডাক্তারকেও বলোনি। বলি.. হসপিটালে বসে বসে বিল তুলছো কোন সুখে?”
কয়েক কদম এগিয়ে ধূসরের বুকের মধ্যে জোরে দু-তিনবার চাপ দিতেই কুঁকড়ে উঠল সে।
“নিশুর বাচ্চা কী করলি!”
“নাটক না করে ঔষধ খাও। ফাইজলামি!”
শ্বাস আঁটকে রইল ধূসর।
“চ্যাকা খাওয়া বাপ্পারাজের ঢং। আর করতে হবে না,এখন সুস্থ হয়ে যাবে।”
দ্যুতি সবাইকে বাটি আর প্লেট এগিয়ে দিলো। বুশরার হাতে স্যুপ তুলে দিয়ে নিশু বলল,”তোর স্বামী,ওরফে চ্যাকা খাওয়া বাপ্পারাজকে খাইয়ে দে.. যা।”
দিলরুবা খাতুন মুখে আঁচল চেপে একপাশে সরে অন্যদিকে ফিরে বসলেন। লাজুক হেসে আড়ষ্ট হয়ে ধূসরের দিকে চামচ তুলে ধরল বুশরা।
“কী হলো নাও!”
ধমকে উঠে নিশু। দ্যুতি মিটিমিটি হাসতে লাগল।
“আমার ভাগ্যে এমন ঘাড়ত্যাঁড়া ছেলে পড়লে রুটি বেলুনি দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে ফেলতাম আরও আগে।”
দিলরুবা খাতুন মুচকি হাসলেন। খাওয়া শেষ হলে বাটি আর প্লেটগুলো গুছিয়ে ব্যাগে রাখল দ্যুতি।
“আম্মা,তুমি থাকো। আমি ওদের একটু ঘুরিয়ে আনি।”
“যা।”
ধ্রুব ওদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোল। বাইরে বসন্তের হাওয়ায় ভেজা বাতাস,জুঁই ফুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে হাঁটতে লাগল ওরা। পথে হঠাৎ ফুলের দোকান দেখতেই ওদের নিয়ে এগিয়ে গেল ধ্রুব। দোকানের রঙিন ফুলের মাঝে তিনটি ঝলমলে বেলিফুলের গাজরা বেছে নিলো। নিজের হাতেই একটি মালা নিখুঁতভাবে নিশুর চুলের একপাশে আঁটকে দিলো। নিশুর মুখে হাসি ফুটল। বাকি দু’টি মালা দ্যুতি ও বুশরার হাতে পেঁচিয়ে দিলো ধ্রুব। লাজুক হাসল বুশরা। ফর্সা গালদুটো লাল হয়ে গেল। কপাল গুনে এমন ভাসুর পেয়েছে যে তাকে বোনের মতোই দেখে। ওদেরকে টকটকে তাজা তিনটি গোলাপ কিনে দিলো ধ্রুব। গোলাপ পেতেই নিশু ভীষণ খুশি হলো। ফুলের দোকান থেকে বেরিয়ে ওদের নিয়ে ফুচকা দোকানের দিকে এগোল এবং অর্ডার করল। তারপর সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে লাগল। হঠাৎ দ্যুতির চোখ পড়ল একটু দূরে।
“এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?”
চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মুখের সামনে নিয়ে হা হা করে শার্টের কোণা দিয়ে মুছে ফের পরে শার্টের কলার উঁচু করে একটু ভাব নিয়ে সিফাত বলল,”আমেরিকায়।”
মিষ্টি মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,”কী করেছ এতদিন?”
“নাম তোমার মিষ্টি কথায় এত ঝাঁঝ কেন,মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে পারো না?”
“যা বলেছি উত্তর দাও!”
“বড়লোক বাপের সন্তান আমি। খাইলাম-দাইলাম আর ঘুরলাম। আমার আর কী কাজ!”
“আচ্ছা,তা আমার জন্য কী এনেছ?”
“ওয়েট।”
পকেট হাতড়ে একটি ছোট্ট অর্নামেন্টসের বক্স বের করল সিফাত।
“নাও,তোমার জন্য দশলাখ টাকা দিয়ে এই ডায়মন্ডের সেটটা আনলাম।”
মিষ্টি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল।
“এটা ডায়মন্ড?”
“হুম।”
“তুমি শিওর?”
“অফকোর্স!”
“আমার তো মনে হচ্ছে ফুটপাত থেকে এনেছ।”
“আরে আমি তোমায় সস্তা জিনিস দিবো নাকি বলে কী!”
“মেইড ইন চায়না লেখা কেন?”
হকচকায় সিফাত।
“আরে জান,এটা চায়না ডায়মন্ড,বুঝো না কেন! কত স্পেশাল এটা জানো তুমি!”
“তোর ভালোবাসাও তাহলে চায়নার মতো,তাই না?”
“ধুর! ল্যাঙ্গুয়েজ খারাপ করো কেন?”
“তোর সাথে ব্রেকআপ! যা.. আমি আরেক জায়গায় বিয়ে করে নিবো। অনেক বড়লোক পাত্র এসেছে আমার বিয়ের জন্য।”
“এটার মধ্যে আবার ব্রেকআপ কইরা বিয়া করবা ক্যান?”
“ফুটপাত থেকে কিনে এনে আমেরিকার নাম দিয়েছিস মিথ্যুক কোথাকার! ভেবেছিস আমি বোকা?”
“জান,তোমার হাতে দেওয়া রিংটাও এমিটিশনের মানে ডুপ্লিকেট।”
“কী বললি?”
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল মিষ্টি।
“সত্যি বলছি,জান।”
রিংটা খুলে সিফাতের মুখে ছুঁড়ে হাঁটা ধরল মিষ্টি। দ্রুত রিংটি কুড়িয়ে নিলো সিফাত।
“আল্লাহ বাঁচাইছে শালির হাত থেকে।”
“কী বললি?”
“ব্রেকআপ হইলেও তোমারে আইলাবিউ,জান। আংটিটা কিন্তু সত্যিই গোল্ডের ছিল। ঠকলা তুমি।”
“কী বললি?”
“তুমি বিয়া কইরা ফালাইলে আমার লস হইতো তাই আংটিটা কৌশলে নিয়া নিছি। ভবিষ্যতে আমার বিয়ার সময় লাগবো।”
জুতা ছুঁড়ে মারল মিষ্টি।
“শালা ফকির!”
“শালি লোভী!”
“কী বললি!”
বাকি জুতা নিয়ে দৌড়াতে লাগল সিফাতকে। এতক্ষণ ওদের রংতামাশা দেখল ওরা।
“এই দলের সবগুলা পাগল!”
বিড়বিড় করে বলল দ্যুতি। বিল মিটিয়ে হাঁটতে লাগল ওরা। তারপর ধ্রুব ওদের হাওয়াই মিঠাই,পপকর্ন,চকলেট,আইসক্রিম ইত্যাদি কিনে দিয়ে হসপিটালে ফিরে গেল। কেবিনে ঢুকে ধ্রুব বলল,”আম্মা আসো।”
“কোথায়?”
“ঘুরব।”
“আমার এখন ঘুরার বয়স আছে নাকি!”
“আসো।”
“আরে না।”
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বাইরে। আইসক্রিম খেতে লাগল নিশু। বামহাতের মধ্যে টকটকে লাল গোলাপটি এখনও মুঠো করে ধরা। চোখ তুলে সংকোচ নিয়ে তাকায় ধ্রুব। বেলিফুলের ঘ্রাণ আসছে। বুকের ভিতর কেমন তিরতির করে কাঁপতে লাগল। নিশু ঠিক ছোটবেলায়ও এমন করে আইসক্রিম খেতো। নাকে-মুখে সবখানে লাগিয়ে ফেলত! আইসক্রিমটা নিশু আজ-ও খেতে শিখল না। বলতে নিয়েও থেমে গেল।
“ভাইয়া,আইসক্রিম খাবে?”
“ছোট্ট খুকিরা আইসক্রিম খায়।”
“ও.. তুমি বুঝি বুড়ো হয়ে গিয়েছ!”
কিছু বলল না ধূসর।
“সে যাইহোক,ফুলটা তোমার জন্য। তোমার ভাইয়ের থেকে পাওয়া আমার প্রথম টকটকে লাল গোলাপ!”
হাত বাড়িয়ে ধরল ধূসরের দিকে। ধূসর তাকাল তবে নিলো না।
“কী হলো নাও! এটা এখন আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য।”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন হয়ে ফুলটা বামহাতে নিয়ে অবহেলিতভাবে একপাশে ছুঁড়ে রাখল ধূসর। নিশুর কেমন বুক ব্যথা করল।
মায়াকুমারী পর্ব ৫৯
“আব্বাজান,আমি দেশে ফিরমু। ওই হ্লা ফাস্ট হইয়া গেছে। এই অপমান আমি কিছুতেই নিতে পারতাছি না। আব্বাজান.. পিলিজ!”
“চুপ কর,শালারপুত!”
“আব্বাজান..”
“আর একটা শব্দ করবি জুতার পিটানি খাবি!”
“আব্বাজান..”
“কান জ্বালা-পালা করে ফেলল এত বড় দামড়াটা।”
“আব্বা..”
“চুপ! কে বলবে,এই দামড়া ছেলে পিএইচডি করেছে!”