আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৯

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

দুনিয়ার কঠিন আর বাস্তব নিয়ম যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে।সব প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ তার ব্যাতিক্রম নয়। মায়ার বাঁধন ছেড়ে যেতে হবে সবাইকেই।এটা চিরন্তন সত্য।মেনে নিতেই হবে।
খুব ভোরেই মিহির কান্নায় সবাই যখন রুমে পৌঁছাল তীরা দুনিয়ায় নেই। মধ্যে রাতে শরীর খারাপ হওয়ার সবাই হসপিটালে নিতে চাইলে তীরা যেতে রাজি হয়নি। তার শেষ চাওয়া ছিল তীব্র।সে যেন তাকে মাফ করে দেয়। তীব্র এবার আর কোন ঘৃনা প্রকাশ না করে চুপটি করে বসেছিল মায়ের কাছে।তীরা ছেলেকে নিজের কাছে দেখে খুশিতে উঠে বসতে চাইলেও দূর্বলতায় বসার শক্তি পেল না। তীব্র তীরাকে ধরে বসাতেই তীরা ছেলেকে ঝাপটে ধরে হু হু করে কেঁদে বলল,

আমাকে শেষ বার মাফ করা যায় না তীব্র?
তীব্রর অনূভুতি বোঝা যাচ্ছে না।সে স্থির হয়ে বসে আছে।একসময় তীরার আহাজারিতে তীব্র চোখ বুজে তীরার মাথায় হাত রেখে বলল,
এতো কাঁদা আপনার জন্য ঠিক না।শান্ত হন!!
তীরা নিজেকে সামলাতে ব্যথ হয়ে আবারো কেঁদে উঠলো। তীব্র মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
আমি আপনাকে মাফ করেছি অনেক আগেই।আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।
কোন অভিযোগ নেই??
না নেই!যা হয়েছে তা বদলানো যাবে না।তাই সেটা নিয়ে না ভাবাই উওম।এভাবে কাঁদবেন না।এখন আপনার রেস্ট দরকার।

তীরা মৃদু হেসে ছেলেকে ছেড়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
খুব খুব ভালো থাকো তীব্র!আমি আমার শেষে নিঃশ্বাস পর্যন্ত চাই তুমি ভালো থাকো।আর রিদিকে কখনো কষ্ট দিও না।ওর মনটা একদম পবিত্র।
তীব্র তীরার কথায় পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকা রিদির দিকে তাকালো।ওকে কষ্ট দিয়ে সে কখনো শান্তিতে থাকতে পারেনি।আর পারবেও না।তাছাড়া নিজের জানকে কেউ কষ্ট দেয়!!
তীরা রিদিকে কান্না করতে দেখে কাছে ডেকে বলল,
এভাবে কাঁদতে নেই রিদি।আমি একদম ঠিক আছি বাচ্চা।
রিদি হেঁচকি তুলা কন্ঠে বলল,
তোমার কষ্ট হচ্ছে আম্মু!!
তীরা মলিন হেসে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আম্মু!এই ডাকটা এতো মধুর!আর এই বাচ্চাটার কন্ঠে যেন আরো মধুর লাগে।
এখন কান্না অফ কর।আমি ঠিক আছি।আমার ছেলে মেয়ে পরিবার আমার সাথে আছে আমি একদম ঠিক আছি।আমার ছেলেটাকে কখনো,যেকোন মূল্যেও ছেড়ে কোথাও যাবি না।এক মূহুর্তের জন্যও না।
রিদি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই তীরা ধীরে ধীরে বেডে শুয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
এখন একটু রেস্ট করব!ঘুম পাচ্ছে খুব!

মিহি ইতিমধ্যে তীরাকে চেক করে অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়ে দিতেই ধীরে ধীরে তীরা ঘুমিয়ে পড়ল।তীরা ঘুমিয়ে যেতেই সবাই একে একে রুম থেকে বের হয়ে গেল।কারো চোখে আজ ঘুম নেই। শুধু থেকে গেল তীব্র,রিদি আর মিহি।রিদি কিছুতেই তীরাকে একা রেখে যাবে না। তাই রিদি তীরার পাশেই শুয়ে পড়ে। তীব্র তখনো তীরার হাত ধরে খাটের এক কোনায় বসে রইল।মিহি সোফায় বসে শরীর এলিয়ে দিল।তিনটা মানুষ নিশ্চুপ হয়ে গেল। নিরবতায় ছেয়ে গেল রুমটা। কিছু সময় পার হওয়ার পর তীব্র তীরার মুখের দিকে তাকালো।চোখ বাদে সে অনেকটায় তার মতো দেখতে।এটাই তার মা।এই মায়ের গর্ভেই সে বড় হয়েছে।তবে শুধু জন্মই দিয়েছে।মা আর হয়ে উঠতে পারেনি। তীব্র তীরার মাথায় একহাত বুলিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
ওপাশে ভালো থাকবেন….আ আ আম্মু!
তীরা যেন তীব্রর কথা শুনেছে। তার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল।

ভোর হতে তখনো সময় আছে।তীরার শরীর হুট করেই কেঁপে উঠতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির।তীরাকে ছটফট করতে দেখে চেঁচিয়ে উঠে।
আম্মু!!আম্মু!!!
মিহি রিদির চিৎকার শুনে ছুটে আসে।তীরাকে ছটফট করতে দেখে ইনজেকশন সিরিজে পুশ করতেই মূহুর্তের মধ্যে শান্ত হয়ে যায় তীরার শরীর।মিহি মেশিনের দিকে তাকিয়ে হার্টবিট দেখেই বুঝতে পারল তীরা আর দুনিয়াতে নেই।
কি হয়ছে আপু?আম্মু এভাবে শান্ত হয়ে গেল কেন?
মিহি ধপ করে ফ্লোরে বসে বলল,
ফুপি নেই রিদি!
নেই মানে?কি বলছেন এসব? এখুনি আম্মু নড়াচড়া করল!এই আম্মু উঠো!এই আম্মু!!আপু আম্মুকে উঠতে বলেন।আম্মু!!!
স্টপ রিদি!ফুপি নেই রিদি!বলেই হু হু করে কেঁদে উঠলো। ততক্ষণে সবাই রুমে প্রবেশ করেছে।রিদি ছুটে দাদির কাছে এসে বলল,
আম্মু নেই দাদি??
নাজমা চৌধুরী ছলছল চোখে রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
মৃত্যু অনিবার্য রিদি!

রিদি ফিরে তাকালো তীরার দিকে।কি সুন্দর শান্ত মুখখানা তার।একদম নিরব শান্ত। তবে চোখের নিচে কালো দাগ স্পষ্ট। আচ্ছা এই মানুষটা একসময় নায়িকা ছিল তাই না।কতো রুপ চর্চা করেছে তবে আজ চোখের নিচে কালি জমেছে।শরীর শুকিয়ে গেছে।তার সব সৌন্দর্য আজ বৃথা।
রিদি ভাঙ্গা কয়েক কদম বাড়াতেই শক্ত একটা হাত তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।রিদি মুখ তুলে তাকালো তীব্রর দিকে। তীব্রর চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
আম্মু চলে গেছে তীব্র??
তীব্র কিছু বলল না।নিরব থেকে শুধু তীরার শান্ত মুখখানা দেখল। এদিকে ধীরে ধীরে রিদির চোখজোড়াও বন্ধ হয়ে গেল। ঙ্গান হারিয়ে পড়ে রইলো তীব্রর বুকে। তীব্র রিদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবারো তাকালো তীরার মুখের দিকে।বিরবির করে বলল,
ভালো থাকবেন!

তীরার দাফন সম্পন্ন করে তীব্র সহ সব ছেলেরা বাসায়
ফিরে আসে। চৌধুরী বাড়িতে লোকসমাগম এ ভর্তি চারদিক।বাইরে মিডিয়া ভীর জমিয়েছে। তীব্র আশেপাশে নজর বুলিয়ে রিদির খোঁজ করল। আত্মীয় স্বজনদের মাঝে গ্লাস হাতে নিশ্চুপ হয়ে রিদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেল। তীব্র কে দেখে বড় ছোট অনেকে দাঁড়িয়ে সালাম জানালো। কেউ ভয়ে তো কেউ সন্মান দিয়ে। তীব্রর নানীর বোন কাজল বেগম তীব্র কে দেখে আদুরে গলায় বলল,
তীব্র মাই গ্রান্ডসান! এ তুমি কাকে বিয়ে করেছো?তোমাদের বাসায় রুপের মতো এতো সুন্দর মেয়ে থাকতে এটা কে!হাউ লেইম!
তীব্র না শোনার মতো তোয়াক্কা বিহীন রিদিকে ডেকে বলল,
বৌপাখি এখানে আসুন!!

রিদি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নাজমা চৌধুরীর দিকে তাকালো।নাজমা চৌধুরী ইশারায় তাড়াতাড়ি তীব্রর কাছে যেতে বলল।এই কাজল বেগম মহিলাটি কিছুটা তীরার আগের পারসোনালিটি বিলঙ্গ করে।এক পা অলরেডি কবরে তবুও বানঠান কম না।মানুষকে নিচু করে কথা বলতে বিবেকে বাধে না। এতোক্ষণ রিদির রং নিয়ে এটা ওটা বললেও রিদি জবাব দেয়নি।এমন একটা সিচুয়েশনেও মানুষ এসব নিয়ে পড়ে আছে ভেবেই রিদি অবাক হয়।যদিও নাজমা চৌধুরী কথার দু একটা উওর দিয়েছে তবে এমন একটা দিনে তিনিও কথা বাড়াতে চাননি।তাই রিদিকে কাজের বাহানায় রুমে পাঠিয়ে দিবে বলে ডাকার আগেই তীব্র কে আসতে দেখে নিশ্চুপ হয়ে যায়।নাজমা চৌধুরী রিদিকে ইশারায় যেতে বললে রিদি ভয়ে ভয়ে তীব্রর কাছে এগিয়ে আসে।মানুষজনে ভর্তি চারপাশ তীব্র রেগে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে।রিদি কাছে আসতেই তীব্র রিদির হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে একজন সার্ভেন্ট এর হাতে ধরিয়ে দেয়।

রেস্ট করার কথা আপনার! এখানে কি করছেন?
তীব্রর কথায় রিদি মিনমিন করে বলল,
আসলে সবাই এখানে তাই……………
খেয়েছেন?
রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তেই তীব্র রিদিকে টেনে ডায়নিং এ বসিয়ে দিল। খাবার বেড়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে নিজেও হালকা একটু খেয়ে রিদির হাত ধরে টেনে তীব্র নিবাসে যাওয়ার সময় বলল,
দাদি আবর্জনা পরিষ্কার হলে বলো।এখন একটু রেস্ট দরকার!

কাগজ বেগম এতোক্ষণ রাগে ফুসলেও তীব্রর সামনে কিছু বলার সাহস করলো না।।কম হলেও তীব্র সম্পর্কে জানা আছে তার।সবাই তীব্রর রিদির প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েই তাকিয়ে ছিল। তীব্র রিদিকে টেনে নিয়ে চৌধুরী নিবাসের সদর দরজা দিয়ে বের হতেই নাজমা চৌধুরী বললেন,
আপা দয়া করে তীব্রর সামনে রিদিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না।শোকের বাড়িতে অন্যকোন শোকের ছায়া নেমে আসুক আমি চাই না। তাছাড়া তীব্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আছে আপনাদের।নাজমা চৌধুরী কথাটা বলেই চলে গেলেন। অপমানে থমথমে মুখে বসে রইলেন কাগজ বেগম।
মিহি ভেংচি কেটে বিরবির করে বলল,
একপা কবরে ঢুকে আছে তবুও শয়তানি যায় না।কুটনি মহিলা!!

আজ তীরার মৃত্যুর তৃতীয় দিন।দেখতে দেখতে তিনদিন পার হয়েছে। চৌধুরী বাড়িতে এখনো অনেকে রয়েছে।আজ কিছু পথশিশু সহ গরিবদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।তীর,মির,রুপ, আয়ান,মিহি,রিদি,লাবিব সহ আরো কিছু সার্ভেন্ট মিলে খাবার সার্ভ করছে।বাগানের একপাশে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।রিদি সবাইকে খেতে দিয়ে ফাঁকা এক জায়গায় বসা দুইজন বাচ্চার দিকে এগিয়ে গেল।একজনের বয়স ৭-৮এর কাছাকাছি হলেও অন্যজন খুব ছোট।হয়তো ২ আড়াই বছর হবে।রিদি তাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
তোমরা এখানে কেন?খাবে না!!
ছেলেটি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,

খাওয়ন কি শেষ হয় গেছে??
না।
তই আম্মা আইলে খাবার যামু।এই বোনডা আমারে খাইতে দেয় না। আম্মা কইছে এডা বড়লোকের এলাকা চারদিকে পুলিশ বইয়া আছে।এদিক ওদিক যেন না যাই। এইহানে বইয়া থাকি! খিদায় পেট চু চু করতাছে এই বোনডার লাগি যাইতে পারতাছি না।
তোমার আম্মু কোথায়??
আমার মাই তো ভিতরে আছে।এই বাড়িতে মালির কাজ করে।
তোমার আম্মুর নাম কি??
তনু!!

তুমি তাহলে তনু আপার ছেলে।তুমি গিয়ে খাবার খাও আমি তোমার বোনকে রাখছি।
সত্যি!আমি যাই তাইলে!তই আপনি কে??
আমি!!মনে করো আমি তোমার খালামনি হয়!
আইচ্ছা আমি খাইয়া আসি।এই বুড়ি খালারে জ্বালাস না কইলাম।
বাচ্চা মেয়েটি রিদিকে দেখে হাত বাড়াতেই রিদি কোলে তুলে নিল। দুইজন গাড রিদির আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
ম্যাম এদিকে রোদ আসছে!ছায়ায় চলুন!

রিদি বাচ্চাটিকে নিয়ে ছাউনীর নিচে আসতেই কাজল বেগম নাকমুখ কুচকে রুক্ষ গলায় বলল,
বস্তির ছেলেমেয়ে কোলে তুলে নিজের দামি জামা নোংরা করছ কেন?জানো এটা কোন ব্রান্ডের!এর দাম কত?? তীব্রর বৌ হয়েছে বলেই এতো দামি দামি জামা পড়তে পারছ!নামাও এই বস্তির মেয়ে কে।
নাজমা বেগমের কথায় রিদি বাচ্চাটাকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল।গাডকে ইশারা করতেই গাড ছোট্ট একটা প্লেটে খাবার নিয়ে এলো।রিদি হাত ধুয়ে খাবার মেখে মেয়েটার মুখে খাবার দিয়ে বলল,
ছোট্ট একটা বাচ্চা।এই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে যদি আমার দামি জামা নষ্ট হয় তো হোক।এমন তো না নানি জামাটা আপনি কিনে দিয়েছেন!!

মহিলা রিদির কথায় ক্ষেপে উঠল,
দেখছো নাজমা আপা!তোমার নাতবৌ কেমন তর্ক করে!
নাজমা চৌধুরী হেসে বলল,
ও কোথায় তর্ক করল আপা।ও তো শুধু উওর করল।
কাজল বেগম থমথমে মুখে বসে রইল।রিদি বাচ্চাটাকে খাবার খাইয়ে শেষ করতেই তনু ছুটে এসে বলল,
মাফ করবেন ম্যাডাম।আমি ভিতরে কাজ করতাছিলাম।আমার পোলায় ওরে রাইখা গেছে মন হয়।
আপনার ছেলের খিদে পেয়েছিল তাই আমি ওকে খেতে যেতে বলেছি।আর এই পিচ্চি কেও খাইয়ে দিয়েছি। আপনার কাজ শেষ হলে ওকে নিয়ে যান।
তনু ভয়ে ভয়ে বলল শেষ হইছে!আমি ওরে নিয়া যায়।

দেখতে দেখতে সময় পেরিয়েছে ৪ মাস,
রিদি বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ছিল। কানাডায় আর যাবে না ঠিক করে তীব্র তাকে তাঁদের হসপিটালেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।ক্লাসও শুরু হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো মেঘ ও সেখানে ভর্তি হয়েছে। কতোদিন পর প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে রিদি ও মেঘ দুইজনেই খুশিতে আত্মহারা।কতশত গল্প জুড়েছে।
রিদির পড়ার মাঝেই রুমে ঢুকে তীব্র।রিদিকে পড়তে দেখে অবাক হয়ে বলল,
এতোরাত অব্দি পড়ছেন কেন?

ত কি করব??
ঘুমাবেন!!
রিদি রাগে ফুসে উঠে বলল,
এতোরাত অব্দি আপনি কোথায় ছিলেন?
হসপিটালে।ওটি ছিল।
আমাকে বলেন নি কেন?
আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন জান!
তো??
তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিষ্টি হেসে বলল,
তো কিছু না।
রিদি তীব্রর শান্ত কথায় হুট করেই কেঁদে উঠলো। তীব্র অবাক হয়ে কাছে টেনে নিল রিদিকে।চোখ মুখে অসংখ্য চুমু দিয়ে বলল,

কি হয়েছে জান? কাঁদছেন কেন?
আমার কিছু ভালো লাগছে না।
তীব্র ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলল,
এইতো শুধু শুরু!আগে আগে অনেক কিছুই ভালো লাগবে না।
কি বলছেন??
কিছু না!! বলুন কি করলে আপনার ভালো লাগবে?
রিদি তীব্রর কথায় তাকালো তীব্রর মুখের দিকে। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
আপনি এতো বেশি সুন্দর হবেন কেন??
তীব্র হচকচিয়ে তাকালো রিদির দিকে।এটা কেমন প্রশ্ন?
হসপিটালের সবাই আপনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কেন?আপনাকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছে??
তীব্র হতাশ হয়ে বলল,
জানি না তো বৌ!!
জানেন না কেন??

তীব্র কি বলবে খুঁজে পেল না।এতো বড় মাফিয়া হয়ে কি লাভ যদি বৌয়ের কথার উত্তর না পায়। তীব্র বিরবির করে অবারো বলল,
আরো ৮ টা মাস…মাই গড!!
আচ্ছা বলুন কি খাবেন?
খাব না!
তাহলে কি করবেন?
ঘুমাবো!
ঠিক আছে তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন!
আপনার বুকে ঘুমাবো!
৫ মিনিট। চেঞ্জ করে এসেই আপনাকে বুকে জড়িয়ে নিব। তীব্র চেঞ্জ করে এসে দেখল রিদি রুমে নেই।ভূ কুঁচকে চারপাশে নজর বুলিয়ে ডাকার আগেই ভেসে এলো রিদির কন্ঠস্বর।
আমি বেলকনিতে!!

তীব্র বেলকনিতে গিয়ে দেখল রিদি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তীব্র ধীরে রিদিকে টেনে বুকে জড়িয়ে বলে,
আকাশে কি দেখছেন??
তারা!! ওখানে আম্মুরা আছে তাই না তীব্র।আমি আম্মুদের সাথে কথা বলি জানেন।আমি যখন থাকব না ঐ আকাশের তারা হয়ে যাব তখন আপনিও আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন।রিদি কথাটা আনমনে বললেও তীব্র রিদিকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে সোজা রুমে চলে এলো।রিদি নিজের কথা স্মরণ করতেই শুকনো ঢোক গিলল।ভয়ে ভয়ে বেলকনির দরজায় উকি মেরে দেখল তীব্র ততক্ষণে দেওয়ালে বেশ কয়েকবার আঘাত করেছে।রিদি মনে মনে নিজেকে উরাধুরা গালি দিয়ে ছুটে তীব্রর কাছে আসতেই তীব্র চেঁচিয়ে উঠল,
দূরে থাক!!দূরে যা……..

কিছুক্ষণ আগের তীব্রর সাথে এখনকার তীব্রর বিন্দুমাত্র মিল নেই।রাগে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে ইতিমধ্যে।হাতে বাড়ি দেওয়াই হাত ফেটে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।
রিদি ঘাবরে গিয়ে কিছু বলার আগেই তীব্র রিদিকে বেলকনিতে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। মস্তিষ্ক শান্ত করতে ভাংচুর করতেই রিদি কেঁদে উঠলো। হাজারবার বারন করলেও তীব্র থামলো না বরং ভাংচুর এর সাথে নিজের ক্ষতি করতেও থামলো না। ড্রেসিং টেবিলের আইনায় জোরে ঘুসি মারতেই হাতের বেশিরভাগ জায়গায় কাচ ঢুকে রক্ত বের হতে শুরু করেছে। জায়গা জায়গা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।পুরো ফ্লোর জুড়ে রক্ত।রিদি ঘাবরে গেল কয়েক মিনিটের মধ্যে তীব্রর এমন ভয়ঙ্কর পরিবর্তন দেখে রিদি চিৎকার করে তীব্র কে থামতে বললেও তীব্র থামলো না।রিদি দরজা ধাক্কিয়েও লাভ হলো না।তাই বেলকনি থেকে চেঁচিয়ে গাডদের ডেকে রুমে আসতে বলে।

ঠিক ৫ মিনিটের মধ্যেই গাডসহ বাড়ির সবাই রুমে প্রবেশ করে।তীর,লাবিব, আয়ান মিলেও তীব্র কে থামাতে পারছে না। বরং তাদেরকেও আঘাত করছে। তীর কোন উপায় না পেয়ে রিদির ব্যালকনির দরজা খুলে দিতেই রিদি ছুটে গিয়ে তীব্র কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। মূহুর্তের মধ্যেই তীব্র শান্ত হয়ে গেল।রিদি বার বার অনবরত সরি সরি বলে গেলও বাকিরা কেউ কিছু বুঝল না। আবার কেউ কোন প্রশ্ন করার সাহস ও পেল না।
ছাড়!!
তীব্রর কথায় রিদি আরো শক্ত করে ধরল তীব্র কে। নাজমা চৌধুরী চারদিকে নজর বুলিয়ে কিছুটা রেগে বললেন,
এসব কি তীব্র?তুমি কি ভুলে যাচ্ছ রিদি এখন সন্তান সম্ভাবা। তোমার এসব ভাংচুরে যদি ওর কোন ক্ষতি হয় তখন!!
তীব্র শান্ত কন্ঠে আবারো বলল,

ছাড়!!!
রিদি ডুকরে কেঁদে ওঠে বলল,
সরি আর বলব না। কোথায় যাব না আপনাকে ছেড়ে।
তীব্র রক্তাক্ত হাতে রিদির বাহু ধরে নিজের থেকে সরিয়ে হনহন করে বের হয়ে গেল।রিদি তীব্রর পেছনে যেতে চাইলে তীর বাঁধা দিয়ে বলল,
রিদি তুমি এখানে থাকো!আমি দেখছি!তীর ও তীব্রর পিছু ছুটল।
নাজমা চৌধুরী হতাশ হয়ে এগিয়ে গেল রিদির দিকে।
কি হয়েছে বলবি?

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৬৮

রিদি সবটা বলতেই নাজমা চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
জানিস ও তোকে নিয়ে কতোটা পসেসিভ!
রিদি কিছু না বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।নাজমা চৌধুরী রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
কাদিস না একটু শান্ত হোক ঠিক হয়ে যাবে!আয় আমার সাথে।রাইফা সার্ভেন্ট কে বলে রুমটা পরিস্কার করতে।
রাইফাও দীর্ঘশ্বাস ফেলে নজর বুলিয়ে দেখল ঘরটা।এতো রক্ত দেখে তারই মাথা ঘুরে উঠলো।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৭০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here