প্রেমতৃষা পর্ব ১৬
ইশরাত জাহান জেরিন
ছাউনিটার চারপাশে শহুরে বিশৃঙ্খল আবহ। পুরান ঢাকার সরু রাস্তাগুলো বৃষ্টিতে ভিজে চকচকে হয়ে উঠেছে। দুই পাশে পুরোনো দালান, কার্নিশ থেকে টুপটাপ করে পানি ঝরছে। লোহার গেট আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লালচে দেয়াল বৃষ্টির পানিতে আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। গেটের সামনে জমে থাকা কাদামাখা পানিতে রিকশার চাকায় ঢেউ উঠছে বারবার। রাস্তার পাশেই সারি সারি ফুচকা-চটপটির দোকান, বৃষ্টিতে ওদের টিনের ছাউনি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দোকানিরা তাড়াহুড়ো করে ভেজা পলিথিন টেনে রেখেছে খাবারের ওপর। একপাশে চায়ের দোকান, কেটলির ধোঁয়া বৃষ্টির ভেজা হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। গরম চায়ের গন্ধে ভিজে মাটির গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
ছাউনিটার নিচে শিমলার মতো আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে। কারও হাতে বই, কারও হাতে ভেজা ছাতা। অটো আর সিএনজি চালকেরা সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া হাঁকছে, “ভাই, বৃষ্টি, কম ভাড়ায় যাবো না…!” চারদিকে পানি জমে যাওয়ায় গাড়ি-রিকশার হর্ন আর পানির ছিটে একসঙ্গে মিশে শহরের নিজস্ব কোলাহল তৈরি করছে। আকাশটা ভারী ধূসর, সূর্যের আলো একটুও নেই। হাওয়াটা কেমন ভ্যাপসা, কিন্তু বৃষ্টির জন্য খানিকটা স্বস্তিও আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছাউনিটা পুরনো লোহার তৈরি। ওপরে ঢেউটিন, চারপাশে আধা ভাঙা দেওয়াল। বৃষ্টির পানি টুপটাপ করে ফোঁটা ফোঁটা পড়ে ছাউনি থেকে। কিছু জায়গা চুঁইয়ে ভেতরেও ঢুকছে। ভেতরে দুটো লম্বা বেঞ্চ আছে, কাঠের রঙ মলিন হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও ভিজে পিচ্ছিল। চারদিকে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, এক কোণে আবর্জনা জমে কাদার সঙ্গে মিশে গেছে। সেই বেঞ্চগুলো দখল করে বসে আছে কিছু বখাটে ছেলে। ওরা এখানে প্রায়ই আড্ডা দেয়। সিগারেটের ধোঁয়া ছড়ায়, উঁচু গলায় গল্প করে। আজ বৃষ্টির কারণে আরও খামখেয়ালি হয়ে উঠেছে। শিমলাকে ভেজা কামিজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওদের চোখ চকচক করে উঠল। একজন মুচকি হেসে কনুই দিয়ে পাশের জনকে ঠেলল,
“দ্যাখ দ্যাখ, ভিজে গেছে পুরোটা…”
আরেকজন সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল,”ছাতা নাই বুঝি? আমাদের ছাতার নিচে আসলে তো ভিজতে হতো না।”
তৃতীয়জন একটু জোরে হেসে উঠল, “ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো ভিজবে, কাছে এসে গরম গরম গল্প করলেই তো পারো। আমরা তোমায় শুঁকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
ওদের দৃষ্টি শিমলার গায়ে এসে বিঁধছে বারবার। কেউ খোলা চোখে তাকাচ্ছে, কেউ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। শিমলা অস্বস্তিতে একপাশে সরে দাঁড়াল, কিন্তু ছাউনির নিচে জায়গা কম। ওরা ইচ্ছে করেই আরও কাছে সরে আসছে।
বৃষ্টি তখনও ঝমঝম করে নামছে। রাস্তাটা কাদা-পানিতে ভরে গেছে। ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে শিমলা যখন ছেলেগুলোর কথায় অস্বস্তি চেপে রাখার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই পাশ দিয়ে এক ঝটকায় একটা বাইক এসে ধীর হলো। কালো হেলমেট পরে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে নিল চারপাশে। সে আর কেউ নয়, অংকুর আহনাফ। ছাউনির ভেতরের হাসাহাসি আর শিমলার বিব্রত মুখ একসঙ্গে তার চোখে ধরা পড়ল। বাইক থামিয়ে হেলমেটটা সামান্য খুলতেই চোখেমুখে রাগের ঝলক দেখা গেল। ভিজে চুল কপালের ওপর লেপ্টে আছে, তবুও তার দৃষ্টি দৃঢ়। অংকুর বাইক থেকে নেমে শিমলার দিকে এগিয়ে গেল। শিমলার চোখে তখন বিস্ময় আর স্বস্তির একসঙ্গে। বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেরা হকচকিয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে যারা হেসে খুনসুটি করছিল, তারা এখন কেমন গম্ভীর হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। অংকুর এসেই একটা ছেলের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, ‘ওহে জুনিয়র তোমার ডিপার্টমেন্ট কী? আর সামনের মেয়েটাকে কতখানি ভালো লেগেছে?’
ছেলেগুলোর বুঝতে বাকি আর রইল না। ক্ষমা চাওয়া শুরু করল। তাতে কী আর অংকুরের মন ভরে? দুই-চারটে কিল ঘুষি দেওয়া তো তার জন্য একেবারে ফরজ কাজ বলা চলে। সে তাই করে। সেই আঘাত করতে গিয়ে হাতটা কেটেও যায়। তবুও পরোয়া করে না অংকুর। সে শিমলার সামনে এসে গম্ভীর গলায় বলল, “চলো, বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করার দরকার নেই। আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
শিমলা আঁতিপাঁতি করে বলল, ‘মানে।’
‘মানে তুমি আমার সঙ্গে যাবে। আমি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব।’
শিমলা চোখের চশমাটা ঠিক করে অংকুরের বাইকে বসল। অংকুর বলল, ‘হাতটা কাঁধের ওপর রাখো। আর শুনো মেয়ে একদিন বৃষ্টিতে ভিজলে মহা ক্ষতি হবে না। অসুখ করবে? তবুও চলো একসঙ্গে ভিজি, এক সঙ্গে অসুস্থ হই। ব্যথাগুলো একসঙ্গে অনুভব করি, তীব্র জ্বরে তোমাকে যাতে আমার বার বার মনে পড়ে কেবল এতটুকুর জন্যই আমার যে প্রেমব্যাধির বড্ড প্রয়োজন।’
শিমলা সেই কঠিন কথার কোনো সহজ মানে খুঁজল কিংবা কখনো খুঁজবে কিনা তা জানা নেই। তবে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ঠিকই ঠিকরে পড়ল।
তৃষাটা ক্লাসে এসে হাঁপিয়ে শেষ। শেষ ক্লাস আজকের মতো। এক্ষনি লেকচার শেষ হয়ে যাবে। এখন আর প্রেম ভাই তাকে না ছাড়লেও পারত। শার্টটা খুলে ওই লোক পিঠে মুভ লাগিয়ে তৃষাকে দিয়ে মালিশ করিয়েছে পিঠটা। কেবল কী তাই? কপালটাও মালিশ করিয়ে নিয়েছে। চুলগুলো টেনেও দিতে হয়েছে। কী একটা জীবন। পরের দাসত্ব করতে করতেই জীবনটা শেষ হবে তৃষার। ছুটির পর আজ তৃষা একাই বের হলো আজকে। শিমলা একটা ক্লাস করেই বাড়ি চলে গিয়েছিল। মনে হয় কিছু একটা হয়েছে। তৃষা গেটের কাছে আসতেই দেখল প্রত্যুষের গাড়ি। প্রত্যুষের গায়ে একটা নেভীব্লু ব্লেজার। সে চোখে রোদচশমা লাগিয়ে এক হাত পকেটে গুঁজে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছে। তৃষা কাছে এগিয়ে আসতেই বলল, ‘আরে আপনি?’
‘এই পথে কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম বাসাতেই তো যাওয়া হবে লাঞ্চের সময়। যাওয়ার সময় তোমাকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাই।’
তৃষার ভেতরের সব ক্লান্তি আর কষ্ট এক মুহূর্তই দূর হয়ে গেল। সে গাড়িতে উঠে বসতে যাবে তার আগেই প্রত্যুষ বলল, ‘এই ওয়েট।’ বলেই সে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।’ তৃষার তো এবার লজ্জায় মরে যাওয়ার মতোই দশা হয়েছে। কি যে সে করবে। এই প্রত্যুষ তাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই না? তৃষা জানত তাকে ভালো না বেসে থাকা একেবারে অসম্ভব বিষয়। সে ভালোবাসার মতোই একটা মেয়ে। কী করে প্রত্যুষ তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে? গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগমুহূর্তে প্রত্যুষের ফোনে একটা কল এলো। সে রিসিভ করতেই অফিসার ইমারজেন্সি অফিসে আসতে বলল। বিবাহিত নারীদের যেই লোকটা খুন করেছে তাকে নাকি একজন দেখেছে। লোকটাকে অফিসে আনা হয়েছে। প্রত্যুষ তৃষার দিকে একবার তাকাল। তারপর সবটা খুলে বলল, ‘সরি তুমি কিছু মনে করো না আমার ইমারজেন্সি অফিসে যেতে হবে।’ তৃষার মন একটু তো খারাপ অবশ্যই লাগল। সে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘সমস্যা নেই। আপনি যে আমায় নিতে এসেছেন এটাই অনেক।’
তৃষা গাড়ি থেকে নামার আগেই হঠাৎ প্রত্যুষের চোখ গেল প্রেমের দিকে। সে সবেমাত্র বাইকে উঠে বসেছে। বাসাতেই তো সে যাবে। প্রত্যুষ গাড়ি থেকে নেমে প্রেমকে ডাকল। প্রেম প্রথমত প্রত্যুষকে দেখে সরু চোখে তাকালো। এই আইনের লোক হলো এলার্জির আব্বা। সে চাইতেও বাইক নিয়ে কাছে আসতেই প্রত্যুষ বলল, ‘তৃষাকে নিতে এসেছিলাম। আমার ইমারজেন্সি কাজ পড়ে গেছে। তুই তো বাসায় যাচ্ছিস। যা না ওকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আয়। বৃষ্টি আপাতত বন্ধ হয়েছে। একটু পরে আবার নামবে নামবে ভাব।’
প্রেম ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘তো সে কোথায়?’
‘আমার গাড়িতে।’
‘নামতে তো বলো।’
প্রত্যুষ গাড়ির দরজা খুলে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। ‘নামো।’
তৃষা একটু অবাক হয়। ইশ খালি লজ্জা আর লজ্জা। সে ডান হাতটা একটু বেশিই লজ্জা নিয়ে প্রত্যুষের হাতের ওপর রাখল। প্রেমের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থমকে গেল সেই হাতের দিকে। সে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল, ‘জলদি। খালি আইনের লোকেদেরই ইমারজেন্সি থাকে না। তাদের থেকেও বেআইনিদের থাকে।’
প্রেমকে দেখে তৃষার মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেল। কিন্তু প্রত্যুষ যেহেতু ওই হারে বজ্জাতটার বাইকে বসতে বলেছে তখন তো আর তৃষা তার কথা অমান্য করতে পারে না। ফিউচার স্বামীর কথা না শুনলে পাপ লাগে। এত বড় পাপ তৃষা কী করে করবে? তৃষা বাইকে উঠে বসতেই প্রত্যুষ বলল, ‘আস্তে চালাবি। মেয়ে মানুষ তো।’
‘প্রেম জোরেই চালাবে। তৃষার আবার জোরেই পছন্দ। তাই না তৃষা?’
তৃষা থতমত খেয়ে গেল। এই লোক দেখি তাকে ফাসানোর চেষ্টা করছে। তৃষা মেকি হেসে বলল, ‘হ্যাঁ প্রত্যুষ আমার আবার জোরে না হলে চলে না। ইয়ে মানে…’
প্রত্যুষ হেসে বলল, ‘কথাটা মাথায় রাখলাম।’
পাশ থেকে প্রেম আবার বলে উঠল,’মাথাতেই রাখো। মুখে আর আনার দরকার নেই।’
বাইকের গতি ৩০০ এর কাছাকাছি। তৃষা খামচে ধরে আছে প্রেমকে। বার বার জিজ্ঞেস করছে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? মোটামুটি ভালো একটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রেম বাইকটা থামায়। এতক্ষণ এই তৃষা চেঁচিয়ে তার কানটা ঝালাপালা করে দিয়েছে। তৃষা বাইক থেকে নামার পর চারপাশ ভালো করে দেখল। এখানে খালি জঙ্গল আর জঙ্গল। এই লোকের কেন যে এত জঙ্গল পছন্দ।
‘কোথায় এসেছি আমরা?’
প্রেম জবাব দেয় না। সামনে একটা ইটের ঘর। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে প্রেম তৃষার হাতটা ধরে জলদি তাকে ওই ঘরটায় নিয়ে যায়। তৃষা ততক্ষণে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে যখন প্রেম তার গালে কষিয়ে একটা চড় লাগায় তখন চুপসে যায় তৃষা। এই জন্যই গুরুজন বলে, ‘সোজা কথায় কাজ না হলে আঙুল বাঁকাতে হয়।’
ইটের বাড়িটিতে বাইরে থেকে ভাঙা, বিধ্বস্ত লাগলেও ভেতর থেকে অন্যরকম। তা তৃষা তখন বুঝে যখন প্রেম পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে। ভেতরে একটাই বিরাট রুম। বাথরুম, রান্নাঘর বারান্দা সবই একই জায়গায়। প্রেম এসেই গা থেকে শার্টটা খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দেয়। লোকটা মাশাল্লাহ যেই ঘাম দিয়েছে। ওই যে সিক্স প্যাকটা আছে না? ওটা বেয়ে টুপটুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। সেই বিন্দু গুলো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে। প্রেম তৃষার দিকে তাকাতেই সে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল। তা দেখে প্রেম বলল, ‘নেওয়াজ বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দাও তোমার বান্ধবীর বাবা অসুস্থ। আজকে তুমি ওদের বাড়িতেই থাকবে।’
‘মানে কী? আপনি কি করতে চাইছেন আমাকে বলবেন?’
‘কল কর তুই।’ ধমকে উঠল প্রেম।
তৃষা আতঙ্কে ফোনটা হাতে নিয়ে কাঁপা ভঙ্গিতে কলটা শেষ পর্যন্ত করতে বাধ্য হলো। পুরোটা সময় প্রেম কেবল তাকিয়ে ছিল তৃষার হাতের দিকে। ডান হাতের কব্জির দিকে। কথা শেষ হতেই প্রেম তৃষার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। তৃষা তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘এখানে কি করতে এনেছেন বলবেন? আর এখানে আমাকে জোর করে আঁটকে রাখার মানে কী?’
‘আমার মন চেয়েছে তাই।’ বলেই প্রেম রান্না ঘরে যায়। সেখান থেকে একটা চাকু নিয়ে এগিয়ে আসে তৃষার দিকে। তৃষার মাথায় তখনো কিছুই ঢুকছে না। প্রেম এসে তার পাশে বসল। চাকুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘প্রত্যুষ তোমার বড় তাই না?’
‘হুম। ‘
‘তাহলে নাম ধরে ডাকলে কেন?’
‘মন চেয়েছে তাই।’
‘এখন যদি আমিও তোমার জিহ্বাটা কেটে ফেলি? না মানে আমার মনেরও তো একটা চাওয়া-পাওয়া আছে।’
‘প্রেম ভাই আপনি একটা সাইকো তা জানেন? কারণ কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়।’
‘আমি সাইকো? যেহেতু সাইকো বলেই দিয়েছো তাহলে তো সাইকোনেস দেখাতে কোনো সমস্যা নেই।’
‘আমি বাড়ি যাব।’
‘বাড়ি তো আমারই। আমি যখন নিয়ে যাব তখনই যাওয়া হবে তোমার।’
প্রেম তৃষার সেই ডান হাতের কব্জি টেনে তাকে নিজের কাছে টেনে আনে। হাতটা জোরপূর্বক রাখে তার বুকের ওপর। তৃষার চোখ যায় ডান পাশের বুকের ওপর করা ট্যাটুর ওপর। প্রেম সেই হার্ট আকৃতির ট্যাটুর ওপরই তৃষার হাতটা রেখে বলে, ‘এই হৃদয়ে এত আঘাত দিচ্ছো কেন?’
‘আপনি ছাড়ুন আমাকে।’ তৃষা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল। পুনরায় বলল, ‘আপনি নোংরা বুঝলেন? কালো রঙ আপনি। আপনার হাতে হাত রাখলেও মানুষ অন্ধকারের ডুবে যাবে।’
প্রেমতৃষা পর্ব ১৫
তৃষা উঠে যেতেই প্রেম এবার একটা ধমক দেয় জোরেশোরে। হাতটা ধরে বলে, ‘যা আমার তা অন্য কারো হলে আমি সবার আগে ওই জিনিসটাকেই নষ্ট করে দেই। আমার জিনিসে অন্য কারো স্পর্শ তো দূরের কথা, দৃষ্টিও আমার সহ্য না।’ কথাটা বলতে দেরি কিন্তু তৃষার ডান হাতটায় চাকু দিয়ে আঘাত করতে বিন্দু মাত্র দেরি করল না প্রেম। ব্যথায় তৃষা চিৎকার যে করবে তার উপায়ও নেই। মুখটা চেপে ধরে অনবরত ধমকে যাচ্ছে প্রেম। ডান হাতের কব্জি থেকে রক্ত পড়ছে। গড়িয়ে পড়ছে তৃষার চোখ দিয়ে পানি। প্রেম ব্যথার জায়গায় আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন না করলে এই প্রেম তোমার জীবন জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়বে তৃষা। খোদার কসম মেরে বুড়িগঙ্গায় লাশ ভাসাব।’