প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪
জান্নাত নুসরাত

সকালে রোদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাহিরের গরম ভিতরে লাগছে না কৃত্রিম এসি ব্যবহারের জন্য। এসির ঠান্ডা টেম্পারেচার শরীর মন দুটোকে ঠান্ডা করে দিচ্ছে।
নুসরাত চেয়ার টেনে বসতেই সামনে বসা লোকটি চোখ তুলে তাকালো। নুসরাত হালকা হেসে কথা বলতে যাওয়ার আগেই সামনে বসা লোকটি তাকে জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক জড়িয়ে ধরায় নুসরাত কিছুটা হকচকিয়ে গেল। পিঠে হাত রাখতে গিয়ে অস্বস্তিতে রাখলো না। তারপর আবার কি ভেবে হাত রেখে পিঠে হালকা চাপড় মেরে হাসল।
আরশ মুখ গম্ভীর করে এসে ছেলেটাকে নুসরাতের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। ছেলেটা থতমত খেয়ে আরশের দিকে তাকালো। চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এমনভাবে চোখ ফিরাল যেন আরশ কোনো আবর্জনা?
নুসরাত মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছো আবির?
আবির মাথা দুলিয়ে জানালো ভালো আছে। নুসরাতকে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কেমন আছো?
নুসরাতের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে আরশ বলল,
“ও ভালো আছে। ভালো আছে বলেই এখানে এসেছে।
আবির বিরক্ত হয়ে আরশের দিকে তাকালো। চোখে মুখে অসন্তোষ ভাব ফুঠে উঠছে তার। নাক ফুলিয়ে শ্বাস
ফেলে আরশের থেকে চোখ ফিরিয়ে নুসরাতের দিকে চোখ রাখলো। এক হাত বাড়িয়ে নুসরাতের হাত চেপে ধরলো।
নুসরাত হাসি মুখে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কাছে মনে হলো এজ আ ফ্রেন্ড আবির তাকে জড়িয়ে ধরেছে। নুসরাত কে হাসি মুখে বসে থাকতে দেখে আরশের গম্ভীর মুখ আরো কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” নুসরাত তুমি এ-পাশে এসে বসো।
আবিরের বলতে দেরি হলো আরশের নুসরাত কে ঠেলে ভিতরের চেয়ারে বসাতে দেরি হলো না। নুসরাত কে অন্য চেয়ারে বসিয়ে নিজে নুসরাতের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। হাত দিয়ে চেয়ার চেপে ধরলো যাতে নুসরাত বের হতে না পারে।
নুসরাত আরশের হাত ঠেলে সরাতে চাইলো আরশ সরালো না। আরশের দিকে তীব্র বিরক্তি নিয়ে তাকালো।
“হাত সরান! আমি ও-পাশে যাব।

আরশ হাত সরালো না। নুসরাতের কথা না শোনার মতো করে উড়িয়ে দিল। আবির নাক ফুলিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত নিজে থেকে পরিচয় করিয়ে দিতে গেল দু-জনকে দু-জনের সাথে। আরশের পরিচয় করাতে গিয়ে গর্বে নুসরাতের বুক ফুলে উঠল। নিজের কৃর্তি কলাপ বলতে গিয়ে নিজেকে আরো একবার বাহবা দিল।
“আমার কিডন্যাপ করে বিয়ে করা স্বামী, মিস্টার আরশ হেলাল। আর আবিরের দিকে ইশারা করে কিছুটা নিচু গলায় আরশকে বলল,” ওই যে বলেছিলেন না, আমার ছোট বেলার প্রেমিকের সাথে দেখা করবেন এই সেই প্রেমিক। দেখুন দেখা করিয়ে দিলাম কত ভালো আপনার স্ত্রী। আপনার মনের আশা পূরণ করতে তৎপর। তারপর গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল,”মিট মাই ফ্রেন্ড আবির।
আরশ গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আবিরের থেকে চোখ সরিয়ে নিল। আবির আরশের দিকে তাকিয়ে চিড়বিড় করে উঠলো।

” নুসরাত তোমার স্বামীর থেকে আমি ১০০ গুণ ব্যাটার, আমাকে রিজেক্ট না করে এক্সেপ্ট করলেই পারতে। তোমার মতো এতো বিউটিফুল গার্ল কিনা ওকে পছন্দ করলো।
নুসরাত কথাটা হেসে উড়িয়ে দিল। কিন্তু কথাটা আরশের গায়ে গরম পানির ছিটা বলে মনে হলো। কেউ তার গায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়ে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।
আবির খাবার অর্ডার দিল। নুসরাত পেট ভরে গাপুস গুপুস করে গিলল। আরশকে খাবার খেতে না দেখে একবার মুখ দুঃখি দুঃখি করে কাবাব সাধলো। মনে মনে বলল,”না করে দেয় ভাই, না করে দেয় প্লিজ! আমি খেয়ে নিয়। একটু উদার হো ভাই।
আরশ শক্ত গলায় বলল,

“আমি খাব না। তুই খা!
আরশের কথা শেষ হওয়ার আগেই নুসরাত কাবাব মুখে ঢুকিয়ে নিল। আবির আর আরশের দিকে তাকিয়ে হে হে করে হাসল। আবির নিজের প্লেট থেকে খাবার এগিয়ে দিল নুসরাতের দিকে নুসরাত খাওয়ার আগেই আরশ হাত বাড়িয়ে চামচ থেকে খাবার নিয়ে নিল। নুসরাত হতবম্ব হয়ে আরশের হাতের দিকে তাকালো। আরশ খাবার নিয়ে নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিল। নুসরাত আরশের কাছ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে খাবার খেতে ব্যস্ত হলো। আবিরের আরশের সাথে চোখাচোখি হতেই ভেংচি কাটলো। নুসরাত আর আবির মিলে অর্ডার করা সব খাবার সাবার করে ঢেঁকুর তুলল। নুসরাত পেটে হাত বুলিয়ে, ” অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেছি। আজ আর অফিস যাওয়া হবে না মনে হচ্ছে। আপনি না হয় অফিস যান, আমি বাড়িতে গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেই।

“চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বস! তোকে ডং করতে কাজে আনা হয়নি। ইচ্ছে হলে যাবি নাহলে যাবি না। থাপড়ে গাল, নাক সোজা করে ফেলব।
নুসরাত হাত উপরের দিকে তুলে আড়মোড়া ভাঙল। আবির বিল পে করতে যাবে নুসরাত থামিয়ে দিল। আরশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,”আরে আবির তুমি বিল পে করছো কেন? আরশ ভাইয়া বিল দিয়ে দিবেন। উনার মতো একজন ব্যাক্তি থাকতে আমরা বেচারারা কেন বিল পে করবো? করার দরকার নেই! আরশের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি বিল পে করুন আমি আর আবির আসছি।

নুসরাত উঠে দাঁড়ালো। চেয়ার টেনে বের হলো। নুসরাত কে বের হতে দেখে আবির ও বের হয়ে আসলো। আরশকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে দু-জন হেলেদুলে চলে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে।
বিল পে করে মানিব্যাগ পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে আরশ রেস্টুরেন্টের বাহিরে আসলো। গাড়ির দরজা খুলতেই দেখলল নুসরাত আর আবির পিছনে বসে গল্প করছে। আরশকে গাড়ির সামনেদেখতেই আবির নাক ছিটকালো।
“ড্রাইভার গাড়ি চালাও!
আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে মুখ গম্ভীর করে তাকালো নুসরাতের দিকে। নুসরাত আরশ কে পাত্তা না দিয়ে আবিরের সাথে গল্প করতে লাগলো।
আরশ গাড়ি স্টার্ট করলো, চোখ মুখ ঠান্ডা করে। ভিউ মিররে বার বার তাকিয়ে পিছনের দু-জনের কান্ডকারখানা পরিলক্ষিত করলো।

মধ্যে রাতে ইসরাতের ঘুম ভাঙ্গল। চোখ মেলে চাইতে পারল না প্রচন্ড মাথা ব্যথা করার জন্য। শীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই ভ্যাপসা গরম লাগলো। শরীর ঘেমে গিয়েছে কিছুটা। পানি খাওয়ার জন্য কাছে হাত বাড়ালো কিন্তু পানি খুঁজে পেল না। বাধ্য হয়ে ইসরাত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে উঠলো। বিছানা উপর ভর দিয়ে নিজেকে সামলালো। আসবাবপত্রের হাত দিয়ে ধীরে ধীরে কিচেনের দিকে অগ্রসর হলো। অন্ধকারে হাতড়ে কোনে কিছু খুঁজে পেল না।
হঠাৎ, কিছু ভাঙার শব্দে জায়িন নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলো। কিচেনে কিছু নড়াচড়া দেখে ওদিকে গেল। লাইট জ্বালিয়ে ইসরাত কে এতো রাতে কিচেনে দেখে জায়িন কিছুটা অবাক হলো।

“তুমি এখানে কি করছো।
” রুমে পানি ছিল না তাই এখানে এসেছি পানি খেতে।
” তুমি ঠিক আছো? আর কি খেয়েছিলে তুমি?
“জি আমি ঠিক আছি। আর আমি জাস্ট অরেঞ্জ জুস খেয়েছিলাম ক্যামেলিয়া বানিয়ে দিয়েছিল।
জায়িন ইসরাতকে লেবুর পানি বানিয়ে দিল। ইসরাতের দিকে লেবু পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,”এটা খাও বেটার ফিল করবে।
ইসরাত জায়িন এর কাছ থেকে লেবু পানি নিয়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। জায়িন কিচেনের লাইট অন করেছিল অফ করে নিজের রুমে চলে গেল।

ভার্সিটির যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছে মমো।কোনো সিএনজির দেখা মিলছে না প্রায় দশ মিনিট ধরে তাই চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ,গাড়ির হর্ণের বিকট শব্দে পিছন দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকাতে লাগলো মমো। ব্যক্তিটি একইভাবে হর্ণ বাজাতে লাগলো
“কি ভাই আপনার কি সমস্যা লাফাঙ্গাদের মতো এইরকম গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে ডিস্টার্ব করছেন কেন? আর আমার বাসার এখানে কি?
গম্ভীর গলায় বলল লোকটি,

” তুমি আমাকে ব্লক করছো কেন?
“তো কি করবো? আপনি কে, যে আপনাকে বলক করবো না। আপনি আরশ ভাইয়ের ফেন্ড হিসাবে যতেষ্ট ভদ্রভাবে কথা বলেছি। ভালো লাগছে না, আপনি এখান থেকে যান তো যান!
“আমাকে একটা মাস সময় দাও আমি একটা মাস তো ট্রাই করতে পারি।
“আমি কোনো সময় দিতে পারবো না, আর এইসব প্রেম ভালোবাসায় আমার কোনো ইনটারেস্ট নেই।
কথাটা বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো মমো।
আগন্তুক পিছন থেকে এসে মমোর হাত চেপে ধরলো। মমো হাত ছাড়ানো চেষ্টা করলো কিন্তু হাত ছাড়াতে পারল না।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৩ (২)

“মাহদি ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন।
” ছাড়ব না কি করবি তুই। তোর কাছ থেকে আমি পারমিশন নিতে আসি নি, তোকে বলছি একটা মাস সময় দিতে, এক মাস পর তুই আমার ছায়া ও দেখবি না। তুই কেন এতো বেশি কথা বলবি চুপচাপ গিয়ে ব্লক ছুটাবি। আর যেন বলতে না হয় তোকে।
মমোর হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিল মাহাদি। মমো কাঁদো কাঁদো মুখ করে পিছনে দিকে তাকিয়ে তাকলো, যেদিকে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে মাহাদি।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৪ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here