প্রেমতৃষা পর্ব ২৪
ইশরাত জাহান জেরিন
কাটা স্থানটিকে ডিসইনফেকশন করে প্রেম তৃষার সামনেই বসল। চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল, ‘অভ্যাস করে নাও আমাকে।’
‘আপনি আমার সঙ্গে কেন এমন করেন?’
প্রেম চুপ করে রয়। উত্তর আছে কি তার কাছে?সে কথা না বাড়িয়ে এডজাস্ট রুমে গিয়ে জামা বদলে আসে। ভেতরে সাদা একটা টিশার্ট উপরে লেদারের জেকেট। দারুণ লাগছে তাকে। প্রেম তৈরি হয়ে পারফিউমটা লাগাতেই ঘর একেবারে সুগন্ধে তলিয়ে যায়। তৃষা চোখ মুছে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসতেই প্রেম তার মুখের ওপর একটা জামা ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘এটা পড়ে আসো।’
‘আপনার কত নাম্বার প্রেমিকার জামা এনে আমাকে দিচ্ছেন?’
প্রেম তাকাতেই তৃষা চুপসে যায়। প্রেম বলল, ‘জামা বদলে ফেলো।’
‘আপনি যান।’
‘আমার ঘর আমি এখানেই থাকব।’
‘কিন্তু!’
‘কিন্তু শুনতে চেয়েছি?’
তৃষা মনে মনে প্রেমকে হাজারটা বাঙাল গালি দিয়ে বলল, ‘আস্ত তেঁদড় একটা।’
তৃষা বাধ্য হয়ে ওয়াশরুম থেকে বদলে এলো। এডজাস্ট রুমেও প্রেম তাকে যেতে দেয়নি। বলে কিনা সেখানে দামি দামি জিনিস আছে। ওখানে তোমার মতো ব্যাকটেরিয়া গেলে যদি মহামারী হয়? কত বড় অপমান। তবে আজকে কেন জানি প্রেম নেওয়াজকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে না। কেন? কেন? বার বার এই প্রশ্নটা মনকে করেও কোনো মোক্ষম জবাব তৃষা পেল না। আচ্ছা এই মানুষটা কি কেবল খারাপের চক্রে আবদ্ধ? ভালো নামক একটি শব্দও কি তার ঝুলিতে নেই? আসলে বাবা-মা মৃত। একা মানুষ হয়েছে আর কতই বা ভালো হবে? প্রেম বাইরে থেকে তৃষাকে তাগাদা দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘এই মেয়ে এত সময় লাগে? জামা বদলাতে মেয়ে মানুষের এত সময় লাগে নাকি? নদী সাঁতরে ইন্ডিয়ায় যেতেও তো এত সময় লাগার কথা না।’
তৃষা বাইরে আসতেই প্রেম তাকে দেখে এক মুহূর্তে থমকে গিয়ে পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নেয়। তৃষা প্রেমকে জিজ্ঞেস করল, ‘প্রেম ভাই, আমায় কেমন লাগছে?’
প্রেম পাত্তা না দিয়ে ব্রেসলাইটটা ঠিক করতে করতে বলল,’একেবারে শয়তানের মাসতুতো বোন লাগছে।’
তৃষা আয়নায় দেখল। কালো রঙের এই মিনি টপস আর পোলো জিন্সে তো তাকে হেব্বি লাগছে মাইরি। প্রেম ভাইয়ের রুচি ভালো না। তাইতো পঁচা কথা বলে। সুন্দরী মেয়েকে পঁচা কথা বলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যদি আইনী কোনো ব্যবস্থা থাকত তাহলে প্রেম ভাই এতক্ষণে জেলে চাক্কি পিসিং পিসিং করত। হুহ!
‘যাও গিয়ে বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াও। আমি এক মিনিটে আসছি।’
‘আমি বাসায় যেতে পারব।’
‘বাসায় যেতে বলেছি? বাইরে যাব।’
‘ঘুরতে যাব?’
‘ না মরতে।’
‘উফ প্রেম ভাই আপনি কত টক্সিক।’
‘তোর টক্সিকের মাইরে বাপ। নিচে যাহ। ‘
যাওয়ার সময় তৃষা বলতে বলতে গেল,”শালায় খালি চিল্লায়।’ পেছন থেকে প্রেম ভাইয়ের জবাব এলো,” না শালী তোমায় খালি চুম্মাবো। যাহ জলদি এইখান থেকে ফকিন্নি।’
প্রেম বাইক স্টার্ট করতেই তৃষা পেছনে বসল। কাঁধে হাত রাখবে ভাবতে না ভাবতেই প্রেম এমন জোরে বাইক স্টার্ট দেয় হাত কেন পুরো শরীর হেলে পরে প্রেমের ওপর। বাইক গেইট থেকে বের হতেই ব্যালকনি থেকে সেদিকে নজর গেল মোখলেসের। মাথায় তো তার পুরাই বাঁশ। না মানে তখন একটার সঙ্গে এখন আরেকটার সঙ্গে? কেমনে কি? শেষে কি দুই ছেলের এক বউ হবে নাকি?
পুরান ঢাকার নিষিদ্ধ বারের জগতটা সবসময়ই এক রহস্যে ঢাকা, যা দিনের আলোতে কেউ দেখে না কেবল রাতের আঁধারেই তার পর্দা উঠে যায়। বারটির বাইরের দিকটা হয়তো ভগ্নদশাগ্রস্ত কোনো পুরনো হাভেলি কিংবা ব্যবসায়িক গুদামঘর মনে হবে। ধূসর দেয়ালে খসে পড়া চুন, লোহার মোটা দরজা, বাইরে টাঙানো একটা মলিন বাতি। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই অন্য এক জগত। দেয়ালজুড়ে সোনালি আর লাল ভেলভেট কাপড় ঝুলছে, যেগুলোকে নরম আলোয় সাজানো ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি আভা দিচ্ছে। মেঝেতে মোটা কার্পেট, যাতে পা রাখলেই শব্দ হারিয়ে যায়। চারদিকে কাঠের টেবিল, যার ওপর সাজানো রঙিন বোতল, কাচের গ্লাস আর বিদেশি মদের ঝাঁক ঝমক। আজকে এখানে কেবল সামান্য কিছু ভিআইপি মানুষজন এসেছে। আজকের পরিবেশ একেবারে শান্ত। ভিআইপিদের প্রবেশের জন্য আলাদা মেম্বারশিপ আছে। প্রেম তৃষাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
তৃষার রেফারেন্সের দরকার পরেনি। কারন এই বারের পেছনে তার ইনভেস্টমেন আছে। বারের এক পাশে আস্তে বাজছে স্যাক্সোফোনের সুর। অন্য কোণে কোনো বিদেশি গানের হালকা রিমিক্স। সুরের সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছে সুগন্ধি ধোঁয়া, যা হুক্কা আর সুগন্ধি মোমবাতির মিশ্রণে তৈরি। দেয়ালের পাশে আধো-আলোয় বসে আছে কৃত্রিম হাসি দেওয়া মেয়েরা। কেউ লাল পোশাকে, কেউ সোনালি গাউনে, আবার কেউ চোখে ভারী কাজল এঁকে দৃষ্টি দিয়ে আকর্ষণ করছে। তাদের হাসি আর দৃষ্টি ভেতরের পরিবেশকে আরও বিভ্রান্তিকর করে তুলেছে।মধ্যিখানে রয়েছে নাচের মঞ্চ। নরম নীল আর বেগুনি আলোয় মঞ্চটা যেন সোনালি স্বপ্নের মতো ঝলমল করছে।
গ্লাসে ভেসে ওঠা বুদবুদ, অচেনা মানুষের গলা মিশে যাওয়া, আর ঘরে ভাসমান সুর সব মিলিয়ে মনে হয়, এই বারের ভেতরে ঢুকে বাইরে ফেরা মানেই এক স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠা। এমন এক জগৎ, যেখানে নৈতিকতা নেই, ভয় নেই, কেবল রঙ, আলো, সুর আর অন্ধকারের মাদকতা। এই নিষিদ্ধ বার আসলে সমাজের চোখে আড়াল, কিন্তু বহু ধনীর দুলাল, গুন্ডা, কিংবা ক্ষমতার ছায়ায় থাকা লোকজন রাতের পর রাত এখানে নিজেদের মুখোশ খুলে রাখে। কারও হাতে নারী, কারও হাতে মাদক, আর সবার হাতে লোভ। প্রেম তৃষাকে নিয়ে যখন এখানে ঢুকে, তখন তৃষার চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়। প্রেম শক্ত করে তৃষার হাতটা ধরে রেখেছে। এমন ভাবে ধরে রেখেছে কেন? কষ্ট দেওয়ার জন্য নাকি হারিয়ে ফেলার ভয়? তৃষা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর বার বার জিজ্ঞেস করছে, ‘চলুন না প্রেম ভাই আমরা এখানে কেন এসেছি। এখানে তো ভালো ছেলে-মেয়েরা আসে না।’
‘তো তুমি কি ভালো মেয়ে নাকি?’
তৃষা জবাব দেয় না। প্রেম তাকে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় নিয়ে যায়। ইরিনের ট্যাটুঘরে প্রবেশ করতেই ইরিন অনেকটা পরিমাণ খুশি হয়ে যায়। যাবে না কেন? প্রেম তার কাছে জন্মদিন ছাড়া কখনো আসে না। আজ প্রথম এসেছে। খুশি তো হওয়ার কথাই। তবে পরক্ষণেই প্রেমের পাশে অচেনা একটা মেয়েকে দেখে বেশ অবাক হয়। প্রশ্ন জাগে তার মনে। তবে ইরিনকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে প্রেম তাকে বলল, ‘ট্যাটু করব। মেশিনটা দাও তো।’
‘তুমি করবে? আর এই মেয়ে কি হয়?’
প্রেম তৃষার দিকে তাকালো। কি হয় তৃষা তার? কি বলবে? সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘কিছু না।’
‘ট্যাটু তুমি করবে?’
‘কৈফিয়ত শুনতে আসি নি।’
ইরিন কথা না বাড়িয়ে মেশিনটা প্রেমের হাতে তুলে দেয়। তৃষা একবার ইরিনের দিকে তাকায়। সারা গায়ে ট্যাটু করা। ছোটখাটো একটা পোশাক পরেছে। ঠোঁটে, ভ্রুতে পিয়ার্সিং করা। নাকের মাঝে একটা নথ। চুলগুলো দেখে কেমন বেগুনি আর সবুজের মিশেলে রঙ করা। ডাইনী ডাইনী এটা ভাব আছে বলতে গেলে। ইরিন একবার তৃষার দিকে তাকালো। এক লহমায় আবার চোখ সরিয়ে নিলো। প্রেম তৃষাকে বিউটি চেয়ারে শুয়ে পড়তে বলল। তাতে তৃষার মাথা বরাবরের মতোই বিগড়ে গেল। ওমা বাসায় কি খাটের অভাব ছিল যে এমন জায়গায় এসে এখন বিউটি চেয়ারে শুয়ে পড়তে বলছে। ইরিনের থেকে মেশিনটা হাতে নিয়ে বলল, ‘তুমি বের হও। আমার কাজ শেষ হলে আমি আসব।’
তৃষা তখনো বুঝতে পারছে না কি করবে। এই প্রেমের উদ্দেশ্য কি। ইরিন মনটা খারাপ করে দরজা লাগিয়ে চলে যেতেই প্রেম ভ্রু উঁচু করে বলল, ‘ধাক্কা দিয়ে শোয়ানোর আগে শুয়ে পড়ো সোনা।’
‘ছি কী অশ্লীল!’
‘তোর নানায় অশ্লীল।’
‘ তো আসেন চাকু দিয়ে নাড়ি-ভুড়ি আপনার ফাটিয়ে দেই তারপর কবরে নানার সঙ্গে গিয়ে মিলে অশ্লীলতা করবেন।’
প্রেম রাগান্বিত দৃষ্টিতে তৃষার দিকে তাকাতেই সে চুপসে যায়। বিউটি চেয়ারে গিয়ে শুঁতেই চেয়ার টেনে প্রেম তার পাশে বসল। চুইঙ্গাম চিবাতে চিবোতে তৃষার গায়ে হাত দিতেই তৃষা ক্ষেপে বলল, ‘আপনার নামে মামলা দিব প্রেম।’
‘আমি হামলা করার আগেই মুখটা বন্ধ করা চাই।’
প্রেম তৃষার টপসটা উপরের দিকে উঠাতেই ফকফকা পেটটা উন্মুক্ত হলো। তৃষার কান্না চলে আসছে। এই নোংরা লোক তার সঙ্গে সবসময় এমন নোংরামি করে। শালার ব্যাটা ভালোও বাসে না আবার দূরেও যায় না। প্রেম তৃষার পেটের দিকে তাকাতেই তৃষা মাথা উঁচু করে বলল, ‘প্রেম ভাই আপনিও জামা খুলেন। আমিও আপনার পেট দেখব।’
‘সরাসরি বললেই তো পারো, আপনার শরীর দেখলে আমার মনের অবস্থা নাজেহাল হয়। আরেকটু দেখিয়ে আমার মনের বরফটা পুরোপুরি গলিয়ে দেন না।’
‘আচ্ছা ভাইয়া।’
‘এই তুই আমাকে ভাই ডাকবি না। তোর আমার বোন হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। প্রেমের বোন নেই আর থাকবেও না। মাইন্ড ইট।’
‘তো কি ভাতার ডাকব?’
‘তৃষা!
তৃষা চুপ করে গেল। তবে প্রেম মেশিনটা হাতে নিতেই সে চেঁচিয়ে বলল, ‘ভাতার তুমি আমায় পেটটা ফুটো করে দিও না। ইয়ে মানে প্রেম খালু।’
‘প্রেম ডাকেন জাস্ট। আমার বয়স এতও না যে আপনার মেমসাহেব আমাকে খালু ডাকতে হবে।’
প্রেম শেষবার তৃষার পেটের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটু কষ্ট হবে। ব্যথাও পাবে। কিন্তু থামব না আমি। যদি খুব বেশি কষ্ট হয় তাহলে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরো বিটারহার্ট।’
‘আমি ট্যাটু করব না।’
‘করবে কি করবে না শুনতে চাই নি।’ বলেই প্রেম পেটের ক্ষতর দিকে চাইল। আলতো করে ছুঁতেই ব্যথায় তৃষা চোখ বুঁজে নিতেই প্রেম তাকে বলল, ‘উঠে বসো। আর বসে চুল গুলো সুন্দর করে সামনের দিকে নাও। ফাস্ট।’
তৃষা তাই করল। প্রেম তার ঘাড়ের মধ্যে ছোট্ট করে বাটারফ্লাই প্রজাপ্রতির ট্যাটু করে দেয়। করার সময় তৃষা ব্যথায় প্রেমের বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিল। প্রেম হাতের দিকে তাকিয়ে বাঁধা দেয় না বরং তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা প্রতিফলিত হচ্ছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তৃষা বার বার ঘাড়ের কাছের বাটারফ্লাই ট্যাটু দেখার চেষ্টা করছে। যখন ভালো করে দেখতে পেল তখন নিজেই অবাক হলো। না ভালোই তো দেখতে হয়েছে। নিজেকে বড়লোক বড়লোক লাগছে। মনে হচ্ছে সে একটা ফুল আর তাই তার ওপর প্রজাপতি এসে বসেছে। কাজ শেষে প্রেম তৃষাকে নিয়ে নিচে এলো। প্রেমের হঠাৎ জরুরী একটা কল আসে। সে সাইডে গিয়ে অংকুরের ফোনটা তুলেই বলল, ‘কিরে কোনো সমস্যা?’
‘আরে ভাই তোর বাইক রেইস আছে তুই কই?’
‘মানে কি? ক্যান্সেল করতে বলেছিলাম না?’
‘বাজি ধরে ফেলেছি। কিছু করার নেই।’
প্রেম ফোনটা কেটে দেয়। তৃষার কাছে এসে তার মুখটার দিকে তাকায়। সে প্রেমকে বলল, ‘ঘাড় লাল হয়ে গেছে।’
‘ঠিক হয়ে যাবে সোনা। মলম লাগিয়ে দেব।’
তৃষা অবাক হয়ে রইল। প্রেম ভাই এত ভালো করে কথা বলছে? তাও আবার তার সঙ্গে? আসলে প্রেম ভাইয়ের কি দুইটা রূপ? এই ভালো এই খারাপ সে? মানুষ টাকে তৃষা এখনো চিনতে পারছে না। এই বহুরুপী মানুষটাকে আজকাল একটু বেশিই জানতে ইচ্ছে করছে। প্রেম ইরিনকে রুমে ডেকে আনে। যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘তৃষাকে রেখে গেলাম তোমার কাছে। ওর যদি কোনো ক্ষতি তো পরের জানাযা টা আমি তোমার পড়ব।’ ইরিন কেবল অবাক হচ্ছে। কিন্তু তার বিষয়টি বুঝতে বাকি রইল না। এত বছর ধরে সে অপেক্ষা করল আর শেষে কোথাকার একটা মেয়ের জন্য তার জানাযা পড়াবে বলছে প্রেম? প্রেমের কি হলো?
প্রেম কিছুতেই সে ব্যতিত কারো প্রেমে পড়তে পারে না। তৃষা তখনো চরম খুশি। এসব সে কখনো দেখেনি। প্রেম তাকে এখানে রেখে যায়। যাওয়ার সময় বলে, ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমায় এসে নিয়ে যাব। ভালোভাবে থাকবে কিন্তু। এসে যেন কোনো রিপোর্ট না শুনি।’ ইসস তৃষা কি বাচ্চা মেয়ে নাকি? যে তাকে এভাবে বলবে? কি ঢং করে প্রেম ভাই। যাক ভালোই হয়েছে। এখন একা একা বড়লোকি কারবার করে দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলবে এই তৃষা নুজায়াত। তৃষা দৌড়ে গিয়ে আগেই দু’টো হুইস্কির বোতল বোগলের তোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। ইরিন তাকে বলে, ‘তুমি নেশাও করো?’
‘না প্রেম ভাই করে। তার জন্যই নিয়েছি। সে আসলে তাকে দেব।’
‘বাহ এত ভালোবাসা?’
তৃষা বুঝতে পারছে না কি বলবে। আসলেই কি এত ভালোবাসা? সে ভালোবাসে প্রেম ভাইকে? কই না তো! তবে প্রেম নামটা শুনলে বুক ধুকপুক অবশ্যই করে।
‘কত দিন ধরে তোমাদের সম্পর্ক?’
তৃষার বুঝতে বাকি রইল না এই ইরিন নামক মেয়েটা যে প্রেম ভাইকে পছন্দ করে। তাই তৃষার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসল। সে মুচকি হেসে মেয়েটিকে বলল, ‘কেন আমার প্রেম সোনাপাখি তোমায় এসব বলে নি?’
ইরিনের ভীষণ রাগ হলো। সে আর কথা বলল না। রুম থেকে বের হতেই তৃষা সুযোগ পেয়ে মদের বোতল গুলো খুলে গটগট করে পান করল। প্রেম ভাই খাবে এসব তাই আগে চেক দেওয়া আবশ্যক। যদি খেয়ে তার শরীর খারাপ হয়? কিংবা পেট ছুটে? তবে খেতে খেতে যে কবে পুরোটা শেষ করে চোখের সামনে সর্ষেফুল দেখল তা খোদাই ভালো বলতে পারবেন। তৃষার তখনো হুশ নেই। সে মাতাল হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। কেউ একজন গালে হাত রাখতেই নেশাগ্রস্ত তৃষা বলল, ‘প্রেম ভাই আপনি এসেছেন।’
ওপাশ থেকে জবাব এলো না। তবে কেউ একজন বাজে ভাবে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত ছোঁয়াতে তৃষা এবার চোখ মেলে তাকালো। ঝাপসা চোখে দেখল সামনে প্রেম নয় অন্য কেউ। এই লোককে সে চিনে না। সে দাঁত বিকশিত করে তৃষাকে দেখে হেসে বলল, ‘খারাপ লাগছে তোমার? চলো আমি সেবা দিয়ে ভালো করে দেই।’ তৃষা পেছনোর আগেই সে তৃষার গলার টুঁটি চেপে ধরল। চোখ মুখ উল্টে আসছে তৃষার।
‘যাও কই বেবি। আমাদের শরীরেরও তো অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে?’
ছেলেটি তৃষার গায়ে হাত দিতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন এসে তার শার্ট ধরে টেনে তাকে তৃষার ওপর থেকে সরায়। পেছন ফিরতেই ছেলেটি আবিষ্কার করল প্রেম নেওয়াজকে। ছেলেটি কথা বলার সুযোগ পেল না৷ তার আগেই একের পর এক ঘুষি তার মুখের ওপর লেপ্টে দিলো। তৃষার তখনো মাথা কাজ করছে না। চোখের সামনে একটা ছেলে কি ভয়ানক ভাবে মার খাচ্ছে। কিন্তু সে মার খাওয়ারই যোগ্য। প্রেম আধমরা ছেলেটিকে ঠিক করে বসিয়ে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তৃষা জাস্ট কিল হিম।’
তৃষা সাহস পেল। এবার বুক ভরা সাহস নিয়ে উঠে সে ওই ছেলের জায়গা মতো একটা মারতেই ছেলেটির
আর্তনাদ কে শুনে। প্রেমের সেই চিৎকার বিরক্তকর লাগছে। তাই মুখটাও সে চেপে রাখল। কাজ শেষ হতেই তৃষা বলল,’ এবার ছেড়ে দিন। মরে যাবে।’
‘ওর তো মরে যাওয়াই উচিত। ওর কত বড় সাহস তোমার গায়ে হাত দিতে যায়? হাত যদি কেটে কাঁধে না ঝুলাই!’
তৃষা প্রেমের হাত ধরে অনুরোধ করতেই প্রেম তৃষার দিকে তাকালো। প্রেম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ছেলেটি কোনোমতে উঠে সেখান থেকে যেতেই দরজার সমানে ইরিন এসে দাঁড়ালো। পরিস্থিতি দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে?’
প্রেমের শরীর ঘেমে একাকার। লেদার জেকেট খুলে ফেলেছে। এক মুহূর্ত স্থির থেকে বাজপাখির মতো দ্রুতবেগে সে উঠে গিয়ে ইরিনের গলা চেপে ধরল। তৃষার এখন সত্যি ভয় করছে। ইরিনের গলা চেপে ধরে সে বলল, ‘কি হয়েছে শালী তুই জানিস না? তোকে বলেছিলাম না তৃষার দিকে নজর রাখতে?’
তৃষা উঠে এসে প্রেমের হাত ধরে বলল, ‘ছেড়ে দেন প্রেম ভাই। ছাড়ুন।’
প্রেম ইরিনকে ছেড়ে দিতেই সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। একটু আগে ইচ্ছে করেই ওই ছেলেটিকে তৃষার রুমে পাঠিয়েছিল তৃষাকে বদনাম করার জন্য প্রেমের চোখে। কিন্তু! কি থেকে কি হয়ে গেল। প্রেম তৃষার কথায় ইরিনের গলা ছেড়ে দিতেই সে নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে গেল। ইরিন প্রেমের এই আচরণে অবাক হয়নি। অবাক হয়েছে প্রেম তৃষার কথা শুনে তার গলা ছেড়ে দিয়েছে এই কারণে। কি করে সম্ভব এটা? তৃষা আহামরি সুন্দর না। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। তাহলে কেন প্রেম তৃষার কথা শুনলো? কেন? প্রেমের মুডটা হ্যাপি ছিল। এখানে এসে সব শেস। বাইক রেসে আজকেও সে জিতেছিল। কিন্তু এখানকার কান্ড দেখে সব নষ্ট হয়ে গেল। তৃষা তখনো চলার অবস্থায় নেই। প্রেম তৃষার হাতে তার লেদার জেকেটটা দিয়ে তাকে আচমকা কোলে তুলে বলল,’ জ্যাকেটটা বুকের ওপর নাও। শরীর বেশি খারাপ লাগছে?’
‘প্রেম ভাই বমি আসছে আমার? আমাকে নামিয়ে দেন। আপনার গায়ে বমি করে দেব।’
‘আমার আপত্তি নেই। একবার কেন? যতবার ইচ্ছে বমি করতে পারো। আমি ম্যানেজ করে নিব। আগে তোমার ঠিক হওয়া প্রয়োজন। কেন যে এসব খেতে গেলে।’
তৃষা কিছু বলল না। বলতে সে অনেক কিছুই চায়। বলতে আর পারছে কই? প্রেমের বুকে মুখটা গুঁজে দিলো। ক্লান্ত সে। শরীর ভালো লাগছে না এটাই বোঝাতে চাইছে।
নদী আর ভালোবাসার মধ্যে কত গভীর মিল। নদীর কালো জল যেমন বুকের ভেতর কত কিছু লুকিয়ে রাখে, তলদেশ দেখা যায় না, তেমনি ভালোবাসাও ভেতরে ভেতরে বহন করে আনন্দের পাশাপাশি ভয়, কষ্ট আর ভাঙনের আশঙ্কা। কেউ নদীর কালো জলে তাকিয়ে হারিয়ে যায়, আবার কেউ ভয় পায় ডুবে যাওয়ার। ভালোবাসার ক্ষেত্রেও তাই, কেউ ডুবে গিয়ে খুঁজে পায় নিজের অস্তিত্ব, আর কেউ ডুবে গিয়ে ভেঙে যায় একেবারে। শেষমেষ নদী যেমন বয়ে চলে থেমে থাকে না, ভালোবাসাও তেমনই, ভাঙন, ব্যথা, আনন্দ, সব পেরিয়ে সে চলতেই থাকে। এটাই তো ভালোবাসার ধর্ম।
লঞ্চের ছাদে রাতের আবহাওয়াটা অন্যরকম হয়ে উঠেছে। চারপাশে অন্ধকার নদী। শুধু ঢেউয়ের টুপটাপ শব্দ আর মাঝেমধ্যে দূরে জেলেদের হুঁশিয়ারি ডাক ভেসে আসে। আকাশ জুড়ে ছড়ানো তারা, মাঝে মাঝে মেঘ সরে গিয়ে ফর্সা চাঁদের আলো নদীর বুক জুড়ে রূপালি ঝিকিমিকি ছড়িয়ে দেয়। ছাদের চারপাশে টিউবলাইটের ক্ষীণ আলো, তবে সেই আলো যেনো রাতের ঘোর কাটাতে পারে না বরং অন্ধকারকেই আরো রহস্যময় করে তোলে। মৃদু বাতাসে তৃষার চুল উড়ছে। প্রেম নীরবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দু’জনের চোখের ভাষায় যেন হাজারো অজানা কথা, অথচ ঠোঁট দুটো নীরব। তৃষার শরীরটা এখন ভালো লাগছে।
বমি করার পর হালকা হয়েছে। যদিও বমি প্রেমের গায়ে করেনি। বাতাসে ভিজে নদীর কাঁচা গন্ধ। তাদের গায়ে ঠান্ডা শীতল হাওয়া এসে লাগছে। প্রেমের জেকেটটা তৃষার গায়ে জড়ানো। দূরে কোথাও লঞ্চের সাইরেনের হালকা আওয়াজ ভেসে এসে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে নদীর নিস্তব্ধতায়। তৃষা সেদিকে তাকিয়ে আছে। প্রেম ভাই বলল বলেই এই রাতের বেলা লঞ্চ ভ্রমণ। ভোরে আবার লঞ্চ ফিরে আসবে। তারাও তখন বাড়ি ফিরবে। রাতটা আজকে এভাবেই নদীর দিকে চেয়ে চেয়ে কেটে যাবে। ভালোই লাগছে তৃষার। তৃষা হাতের আঙুল দিয়ে ছাদের রেলিং আড়কে ধরে মৃদুস্বরে বলল,
“প্রেম ভাই, এই নদীর দিকে তাকালে মনে হয় সবকিছুই গভীর আর সীমাহীন। আচ্ছা মানুষের জীবন, ভালোবাসা—সবকিছুই কি এমন অনন্ত আর রহস্যময়?”
প্রেম চোখ রাখল নদীর জলের দিকে, বলল,”নদীর মতো মানুষের জীবনও বয়ে চলে। স্রোত থামে না। ভালোবাসা যদি থাকে, সেটাও বয়ে চলে, ভাঙন আসে তবুও থেমে থাকে না।”
তৃষা হালকা হাসি বলল, “তবু মনে হয় ভালোবাসা নদীর কালো জলের মতোই ভয়ংকর। বাইরে থেকে শান্ত, কিন্তু ভেতরে তল খুঁজে পাওয়া যায় না।”
“ভালোবাসা ভয়ংকর হতে পারে তখনই, যখন তাতে মায়া থাকে না। সত্যি ভালোবাসা আসলে ভয় নয়, নিশ্চয়তা দেয়। কাফনের কাপড়ের মতো জড়িয়ে ধরে।”
তৃষা চমকে তাকায় “কাফনের কাপড়ের মতো?”
“হ্যাঁ। মানুষ মরলে তাকে শেষবার ওই কাফনের কাপড়ই জড়িয়ে রাখে। পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক, কোনো সম্পদ, কোনো অর্জন সঙ্গে যায় না। শুধু সেই সাদা কাপড়।”
“তাহলে আপনি কেমন ভালোবাসা চান?
প্রেম কেমন ভালোবাসা চায়? খুব কঠিন প্রশ্ন। সে নদীর জলের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো, ” আমি চাই আমার ভালোবাসা ওই কাফনের কাপড়ের মতোই হোক। শেষ পর্যন্ত তার মায়া আমার প্রেয়শীর হৃদয় জড়িয়ে রাখুক।”
‘সেই হবু প্রেয়শী যদি কখনো এমন প্রশ্ন করে আপনি কি বলবেন তখন?’
প্রেম তৃষার চোখে চোখ রাখল, বলল, “ভালোবাসলে কাফনের কাপড়ের মতো জড়িয়ে ভালোবাসো। এমন ভালোবাসা, যা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত বিচ্ছেদ নেই। কারণ মানুষ যখন মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছে যায়, তখন তার সঙ্গে আর কিছুই যায় না, থাকে না। থাকে শুধু কাফনের সেই সাদা কাপড়টুকু। তাই প্রেয়শীকে বারে বার বলল, হাজারবার বলল,”থেকে যাও ঠিক তেমন ভাবেই যেমন ভাবে মৃত্যুর পরও মানুষের শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে থাকে।”
তৃষা চোখ নামিয়ে ফিসফিস করল, “কিন্তু জীবনে তো শুধু ভালোবাসা দিয়ে টিকে থাকে না, প্রেম ভাই। বাস্তবতার ভাঙনও আছে। ক্ষুধা আছে, ভয় আছে, অনিশ্চয়তা আছে। নদী যেমন ভাঙে ঘরবাড়ি, ভালোবাসা কি তেমন ভাঙতে পারে না?”
প্রেম আচমকা তৃষার হাত ধরে বলল, “বাস্তবতা তো আছেই। কিন্তু আমি মনে করি, ভাঙনের পরেও যদি দু’জন একসঙ্গে দাঁড়াতে পারে, সেই ভালোবাসাই আসল। নদী এক পাড় ভেঙে কিন্তু অন্যপাড় ঘরে।”
তৃষা হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর মিহি গলায় বলে, “আপনি সবকিছুকে আশার চোখে দেখেন। আমি পারি না। আমার কাছে ভালোবাসা অনেক সময় শূন্যতার মতো মনে হয়। যেখানে যতদূর যাই, শেষ নেই।”
প্রেম ধীরে ধীরে বলল, “শেষ থাকলেই তো আর মানুষ ভয় পেত না, তৃষা। ভালোবাসার সৌন্দর্য তার সীমাহীনতায়। হয়তো তল পাওয়া যায় না, কিন্তু সেই গভীরতাই তো আমাদের ডেকে রাখে।”
তৃষা চোখ তুলে তারার দিকে তাকায়, “তবু আমি ভাবি, যদি একদিন সবকিছু ভেঙে যায়? মানুষ কি তখনো একই ছাদের নিচে দাঁড়াতে পারে?”
“ভালোবাসা ভেঙে গেলে মানুষ বাঁচে না, শুধু বেঁচে থাকার ভান করে। মুখে ভালোবাসি বললে তা টিকে থাকে না। ভালোবাসতে গেলে অনেক সাহসের প্রয়োজন। লড়াই না করে এক তীরে দাঁড়িয়ে অপর তীরে চেয়ে থাকলে ভালোবাসায় তো ভাঙন ধরবেই। দেখো এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। মনে যা আসছে তাই বলছি, মন বলছে আমি ভুল বলছি না।”
তৃষা হালকা কাঁপা গলায় বলল,” তাহলে আপনি বলতে চাইছেন ভালোবাসা একপ্রকার প্রতিজ্ঞা?”
“হ্যাঁ। প্রতিজ্ঞা, সমর্পণ আর অবিচ্ছেদ্য বাঁধন। যেমন নদীকে তার স্রোত থেকে আলাদা করা যায় না, তেমনি ভালোবাসাকে তার সমর্পণ ছাড়া কল্পনা করা যায় না।”
তৃষা চোখ ভিজে আসে। কেন আসছে সে জানে না। তবুও…. সে বুঝতে দেয় না। তবে মনটা কেমন যেন করছে। এই মানুষটা নাকি ভালোবাসতে জানে না। হিংস্রতায় গড়া। তবে তৃষা আজকে বারংবার একটা যত্নশীল মানুষকে আবিষ্কার করছে। আচ্ছা এমন তো নয় তার খারাপ আচরণের পেছনে ভয়াবহ কোনো অতীত আছে? তৃষার তখন ঠাণ্ডা লাগছে। প্রেম তাকে বলল, ” কিছু চাই তোমার? ঠিক আছো?
“আমি ঠিক আছি। আমার কিছু চাই না।”
‘কিন্তু আমার তো তোমাকে চাই।’ মৃদু স্বরে বলল প্রেম।
‘কিছু বললেন নাকি?’
‘উঁহু। এখানে অনেক ঠাণ্ডা তাই না? তোমার কষ্ট হচ্ছে? চলো কেবিনে যাই।’
‘না না এখানে থেকে এই ঠাণ্ডার মধ্যে আমি বরবাদ করব প্রেম ভাই।’
‘আমি তো অলরেডি তোমার তোরে বরবাদ হয়ে গেছি।’
‘মানে?’
প্রেমতৃষা পর্ব ২৩
প্রেম তৃষার হাতটা টেনে ধরে চলতে চলতে বলল, ‘যেই হারে বিচ্চু মেয়ে তুমি আমায় জ্বালাচ্ছো প্রশ্ন করে করে বরবাদ না হয়ে উপায় কই? চলো নিচে চলো।’
তৃষা মুখটা ভেংচি কাটল। জবাব দিলো না। কেবল তালে তাল মিলিয়ে তার এই হারে বজ্জাত প্রেম ভাইয়ের সঙ্গে হাঁটা ধরল।