আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৫ (২)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৫ (২)
অরাত্রিকা রহমান

আজ তিন মাস হলো মিরায়া ঢাকায় থাকছে নিজের শশুর বাড়িতে- যদিও সে অজ্ঞাত এই বিষয়ে। তার দিন গুলো ভালোই যাচ্ছে ঠিক যেমনটা সে চেয়ে ছিল। মিরায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ।
মিরায়া জানালার পাশে বসে আছে। বাইরে সূর্যটা ধীরে ধীরে উদয় হচ্ছে, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে নরম আলো। তার চোখে তবু বিশ্রাম নেই। একের পর এক ভাবনা ভিড় করে আসছে মাথায়।
“সব ঠিকঠাক হলো তো?” — মনে পড়ছে পরীক্ষার সময়কার মুহূর্তগুলো। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়েই মনে হয়েছিল, “এই তো! পারব।” প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সে চেষ্টা করেছে বুঝে-শুনে দিতে। যদিও কিছু প্রশ্ন ছিল চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছে।

বাড়ি ফিরে সবাই তাকে বাহবা দিয়েছে। কিন্তু মিরয়ার মনে তখনো একটা অজানা টান।
কারণ কালকে রেজাল্ট।
ভেতরে একরকম গুঞ্জন কাজ করছে—এক ধরনের অস্থিরতা আর উত্তেজনা। চোখ বন্ধ করলেই মনের মধ্যে চলে আসে সেই ফলাফল ঘোষণার মুহূর্ত। “নামটা থাকবে তো তালিকায়?” এই একটাই প্রশ্ন তাকে বারবার ভাবাচ্ছে।
মিরায়া চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলো।
আগামীকাল কী হবে জানা নেই। মিরায়ার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি যেটা ভয়, উৎসাহ, ভালো লাগা সব কিছুর সংমিশ্রণ।
সকাল- ১০টা~

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাত্র কয়েকদিন আগে মিরয়ার ১৮তম জন্মদিন ছিল। কিন্তু আসল আনন্দটা এলঝ আজ সকালে_
মিরায়া নিজেই বলেছিল আয়নায় তাকিয়ে, “এবার আমি লাইসেন্স করব, বাইক চালানো শিখে ফেলেছি তো কবেই, এখন রাস্তায় বের হতে হবে নিজের পরিচয় নিয়ে।”
তাই, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছিল সে। বার্থ সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি, ঠিকানার প্রমাণপত্র সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে এক সকালে বেরিয়ে পড়েছিল শহরের মূল বিআরটিএ অফিসের দিকে।
প্রথমবার এতো বড় সরকারি অফিসে ঢুকে একটু অস্বস্তি লাগছিল।
সে এগিয়ে গিয়ে তথ্য ডেস্কে জিজ্ঞেস করল, “দয়া করে বলবেন, লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র কোথায় জমা দিতে হয়?”

একজন কর্মকর্তা সেদিকে তাকিয়ে বললেন, “১ নম্বর কাউন্টারে যান, ফর্ম আর কাগজপত্র জমা দিন।”
১ নম্বর কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নিজের কাগজগুলো বার বার চেক করছিল — ছবি ঠিক আছে তো? ফর্মে সাইন দিয়েছে তো? একবার একটা কাগজ উল্টো করে ধরেই বুঝল, “আচ্ছা! এটা তো ঠিকই আছে।” একটা উত্তেজনা কাজ করছিল বুকে—“এই তো, আমি বড় হয়ে গেছি!”
অবশেষে ডাক পড়ল তার। কাগজ জমা দিতে দিতে অফিসার একবার তাকিয়ে বললেন, “তুমি তো একদম নতুন মনে হচ্ছে!”

মিরয়া হাসল, “জি, এই মাসেই ১৮ হল।”
“তাহলে শুভ কামনা! পরীক্ষা আর ছবি তোলার জন্য রেডি থাকো। এসএমএস আসবে কবে যেতে হবে।”
ফেরার সময় তার মনে হচ্ছিল, আজকের দিনটা শুধু লাইসেন্সের জন্য কাগজ জমা দেওয়ার দিন নয়। আজ যেন নিজেকে একটু বেশি স্বাধীন মনে হচ্ছে। নিজের সিদ্ধান্তে, নিজের চেষ্টায়, আর নিজের রাস্তায় হাঁটার প্রথম পদক্ষেপ।
মিরায়া প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তার রাইডিং লাইসেন্স ছিল না। যে কারণে সে কোনো অফিসিয়াল বাইক রেসে অংশ নিতে পারতো না। তবে এখন তার লাইসেন্স হলে সে স্বাধীনভাবে বাইক রাইড করতে পারবে।
বিআরটিএ অফিস থেকে বেরিয়ে মিরায়ার মনটা অনেকটা হালকা। কাজটা হয়ে গেছে, এখন শুধু অপেক্ষা—পরীক্ষার তারিখের, আর একটা নতুন অধ্যায় শুরুর। অগোছালো দুপুরের রোদ পেছনে ফেলে সে হাঁটছিল রাস্তার ধারে আর হাতে কাগজপত্রের ফাইল।

হঠাৎ একটা কোমল “মিউউ” শব্দে থমকে দাঁড়ায় মিরায়া।
রাস্তার পাশে, একটা পুরনো অটোরিকশার নিচে বসে আছে ছোট্ট এক সাদা বিড়ালছানা। পুরো গায়ে দুধ-সাদা লোম, বিড়ালটির চোখ হেটেরোক্রোমিয়া (Heterochromia) — এর মধ্য দিয়ে বিড়ালটির রহস্যময় ও আকর্ষণীয় স্বভাব ফুটে উঠেছে । চোখ দুটো যেন এলোমেলোভাবে স্বপ্ন আর কল্পনার মিশেল—একটা চোখ ঘন সবুজ, আরেকটা হালকা নীল, একদম যেন গ্লাসে জমে থাকা শীতল বরফের মতো।
মিরায়া অবাক হয়ে বসে পড়ে, বিড়ালটা ভয় পায় না বরং ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার হাঁটুর পাশে কুঁজো হয়ে বসে পড়ে।

সে বিড়ালটাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতেই মিহি একটা গরগর শব্দ শুরু হয় — একরকম সুরেলা, আরামদায়ক গর্জন।
“আরে কুট্টুস বাবু! তুমি এখানে কী করো একা একা?” — মিরায়া হাসল।
“তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে, তুমি যেন দুনিয়ার সব কিউটনেস চুরি করে বসে আছো।”
সে বিড়ালটাকে কোলে তোলে, বিড়ালটা চোখ বন্ধ করে মুখ ঠেকিয়ে দেয় তার হাতের তালুতে।
“আচ্ছা শোনো,” মিরায়া ফিসফিস করে বলে, “তোমার নাম রাখি কী? স্নোফি? না কি মিল্কি?”
বিড়ালটা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
“না? পছন্দ হলো না বুঝি? ঠিক আছে, তাহলে তোমার নাম রাখলাম ‘জুলিয়েট’ যার সৌন্দর্যে সবাই পাগল। কেমন? তোমাকে বেশ মানাবে।”

এবার বিড়ালটা একবার মিউ করে উত্তর দেয়।
মিরায়া হাসে, “ব্যাস! ঠিক আছে, আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে, নাম জুলিয়েট।”
বাড়ি ফিরে মিরায়া রামিলা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে, “দেখো তো মামণি, একটা মেয়ে পেয়ে গেছি আমি!”
জুলিয়েট তখনো তার কোলে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে, সেই হেটেরোজেনাস চোখ দুটো দিয়ে স্নিগ্ধভাবে তাকিয়ে থাকে মিরায়ার দিকে—একটা চোখে মুগ্ধতা, আরেকটায় কেমন যেন একটা অতল গভীর ভালোবাসা। মুহুর্তেই যেন আপন করে নিয়েছে তার তথাকথিত মাকে।

তিন মাস ধরে রায়ান পরিকল্পনা করছিল—বাংলাদেশে নিজের কোম্পানির একটা শাখা খোলার। সে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।
রাত গভীর। আমেরিকার আকাশে হালকা মেঘ, জানালার কাঁচে ঠেকা ঠান্ডা হাওয়া রায়ানের মুখে এসে লাগছে। অফিসের আলো নিভে গেছে, শুধু রায়ানের ডেস্কে একটি ল্যাম্প জ্বলছে। কাচের জানালা দিয়ে বাইরের ঝলমলে শহরটাকে দেখে হঠাৎ তার বুকের ভেতর কেমন একটা শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ে। এই শহর তাকে নাম দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে—কিন্তু আজ তার মন এক মুহুর্ত যেন টিকছে না। টেবিলের এক কোণে পড়ে আছে বিমান টিকিট—Dhaka, Bangladesh | Departure: Tomorrow, 7:30 AM।

রায়ান তাকিয়ে আছে সেই টিকিটের দিকে। ঠিক যেন কোনো কাগজ নয়, একটা নতুন অধ্যায়ের চাবিকাঠি।
নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নেয়। দশ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে—চেহারায় পরিণত বয়সের ছাপ, চোখে ক্লান্তির রেখা। কিন্তু আজ তার চোখে এক অন্যরকম ঝিলিক—ফিরে যাওয়ার আনন্দ, কিছু গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়। তার অতীতের অবসান ঘটানোর আকাঙ্ক্ষা।
হাতে ফোন তুলে একবার রুদ্রকে মেসেজ করে:
“ভাই, কাল সকালে আমি দেশে নামছি। মাকে বলিস যেন রুমে আমার নতুন চাদরটা বিছিয়ে রাখে। আর তোকে বলি—এবার সব শুরু করছি একসাথে।”

মেসেজ পাঠিয়ে ব্যাগ গোছানো শুরু করল রায়ান। একেকটা জামা রাখার সময় একেকটা স্মৃতি মনে পড়ছে। হঠাৎ বুকের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে—এটা শুধু দেশে ফেরা না, এটা একটা নতুন জীবন শুরু করার প্রস্তুতি।
নিজের মনেই ফিসফিস করে বলল,
“কাল আমি দেশের মাটিতে পা রাখব… অনেক কিছু বদলে দিতে হবে এবার। শুধু ব্যবসা না, নিজের ভেতরের মানুষটারও ঘরে ফেরার সময় হয়েছে। আর সেই অতীতের কালো রাত এর হিসেব যে মেটাতে হবে।”

বাংলাদেশে~
রুদ্র অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে নিজের বিছানায় সবে মাত্র এলিয়েছে। ফোনটা হাতে নিতেই চোখে পরলো রায়ানের ম্যাসেজটা।
রুদ্র (নিজে নিজেই ফিসফিসিয়ে):
দেশে? রায়ান ভাইয়া দেশে? এটা কীভাবে সম্ভব! মিরায়া তো এই বাড়িতেই। ভাইয়া জানতে পারলে আর রক্ষা থাকবে না।
(সে সঙ্গে সঙ্গে কল দেয় রায়ানকে)
রুদ্র:
ভাইয়া তুমি… দেশে ফিরবে?! কবে? কেন? হঠাৎ এত বছর পর?
রায়ান (হেসে):
হ্যাঁ রে, খালি চলে আসবো। অনেক হয়েছে আমেরিকা, এবার একটু নিজের মাটির গন্ধ নিতে চাইলাম।

রুদ্র:
তুই তো বলেছিলি তোর ওখানে সব সেট! হঠাৎ এমন ডিসিশন? কিছু হয়েছে?
রায়ান:
(একটু থেমে)
“সব ঠিক আছে, তবে কিছু ব্যাপার আছে যেটা সামনাসামনি বললেই ভালো হবে।”
রুদ্র চমকে:
“ব্যাপার মানে? তোর কিছু সমস্যা হয়েছে? না কি… তুই …?”
রুদ্র তার কথা শেষ করার আগেই রায়ান হালকা হাসি দিয়ে:
তুই এখনও আগের মতোই, সব কিছুতেই চিন্তা করে ফেলিস। দেখা হক, সব বলব।
রুদ্র চিন্তিত কণ্ঠে না:

“ভাইয়া, তুই তো এমন না। তোরং কি কোনো কাজ আছে দেশে?
রায়ান রুদ্রের কথা যে খানিকটা বিরক্ত হয় গম্ভীর স্বরে:
“কি হয়েছে বলতো? তুই এমন কেন করছিস? আমি দেশে ফিরলে কি কোনো সমস্যা?”
রুদ্র মনে মনে ভাবলো- “এখন কি ভাইয়াকে মিরায়া ভাবির ঢাকায় আমাদের বাড়িতে থাকার বিষয়ে জানাব? এইটা কি ঠিক হবে?”
রুদ্র শত চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিল সে এখন রায়ানকে কিছু জানাবে না। কারণ সে ভয় পাচ্ছে যদি রায়ান এই ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে সে হয়তো দেশেই ফিরবে না।
রুদ্র নিঃশ্বাস ফেলে বলল:

“কিছু হয়নি ভাইয়া। আমি তো এমনি কিউরিওসিটি থেকে প্রশ্ন করছি। ঠিক আছে। তুমি এসো আমি মাকে জানিয়ে তোমার রুম পরিস্কার করিয়ে রাখবো। তবে এটা মাথায় রেখে তোমার দেশে ফেরাতে আমাদের জীবনে আবার ঝড় যেন না আসে, যেমটা তুমি যাওয়ার র হয়েছিল।”
রায়ান রুদ্রের কথা শুনে একটু চুপ থেকে তার উত্তর করে এক রহস্যময় হাসি নিয়ে:
“ঝড় না বলি, হাওয়ার দোলা… কিন্তু সেটা কার জন্য কীভাবে আসবে, সেটা তো কেবল সময়ই বলবে।”
রায়ান ফোন টা কেটে দেয়। ভাইয়ের এমন অদ্ভুত উওর রুদ্রের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট ছিল। সে দ্রুত কথাটা রামিলা চৌধুরী কে জানায়। বড় ছেলে দেশে ফেরার খবর পেয়ে সে খুশি হল । তবে তার মাথায় কোনদিন চিন্তার ছাদ দেখা গেল না সে চাইছিল মিরায়া আর রায়ান মুখোমুখি হোক আর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের নিজেদের মতামত জানাক।
তিনি রুদ্রকে বলেন-
“তুই এখন ঘুমোতে যা আমি সকালেই রায়ানের রুম পরিষ্কার করে রাখবো।”

রায়ান ফ্লাইট জার্নি শেষ করে দেশে ফিরেছে, আর মাহির তাকে রিসিভ করতে এসেছে: বিমানবন্দরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সকাল 11টা। রায়ান হাতে একখান ট্রলি ব্যাগ, চোখে সানগ্লাস, মুখে আত্মবিশ্বাস। সামনে মাহির দাঁড়িয়ে গাড়ির পাশে, একগাল হাসি নিয়ে।]
মাহির রায়ানকে দেখে দু হাত মেলে :
“ওওও! জনাব আমেরিকান সিটিজেন হাজির! ভাই, হাত মেলাইবেন না, ডলার দিন সরাসরি!”
রায়ান চোখ গুটিয়ে ফেলে মাহিরের কথা শুনে:
“আরে ভাই, প্রথমে একটা ফ্রেশ নিঃশ্বাস তো নিতে দে। আমেরিকা থেকে ঢাকার বাতাসে ঢুকেই আমার নাক ব্লক হয়ে গেছে!”

মাহির গাড়ির দরজা খুলে দেয় রায়ানের উদ্দেশ্যে:
“ভাইরে, ঢাকার বাতাস এখন ডলার সিঁকে ফেলতেও পারে। সাবধানে নিঃশ্বাস নেন। চলেন, গাড়িতে চলেন। আজকে আপনাকে ঢাকার রোড রোলার রাইডে নিয়ে যাব।”
[দুজন গাড়িতে উঠে, মাহির ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়, আর সাথে একটা হর্ণ বাজে — যে হর্ণে “টাইটানিক” সিনেমার মিউজিক বাজে।]

রায়ান চমকে যায়। সে অনেকদিন পর যেন এমন হর্ন এর আওয়াজ শুনছে-
“এইটা কি হর্ণ না সিনেমার ট্রেলার?”
রায়ান চোখ বাঁকা করে বলল।
মাহির গর্বের সাথে রায়ানের প্রশ্নের উত্তর দেয়:
“ভাই, দেশে আসছেন, VIP ট্রিটমেন্ট দিতে হইবো। রিকশাওয়ালারে আগে ভয় পাইতে হইবো!”
[গাড়ি ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ে বিমানবন্দর এলাকা ছেড়ে।]
রায়ান:
“তোকে ধন্যবাদ, ভাই। এতদিন পর দেশে এসে তোকে দেখে মনটা হালকা হইছে।”
মাহির:
“এখনো হালকা? ১০ মিনিট পর গুলশান মোড়ে এমন ট্রাফিকে পড়বি, মনে হইবো ৩ ঘণ্টা হিমালয়ে ধ্যান করছিস।”
রায়ান আতঙ্কে:
“তুই সিরিয়াস?”
মাহির:
“ঢাকার ট্রাফিক সিরিয়াস, আমি শুধু কমেডি করি।”
[হঠাৎ এক রিকশা গাড়ির সামনে ঢুকে পড়ে, মাহির হর্ণ বাজায় এবং জানালা দিয়ে চিৎকার করে:]

মাহির:
“ভাই, F1 রেস না, একটু সাইড দেন! ফিটনেস টেস্ট তো পাশ করছেন না!”
রায়ান হতভম্ব হয়ে যাই এই পর্যায়ে:
“এই মানুষগুলা এভাবে চলে? লাইসেন্স কই?”
মাহির:
“লাইসেন্স না থাকলেও সাইক্লজিক্যাল লাইসেন্স আছে ভাই। এরা জানে, কে কখন কার সামনে যাবে!”
[রায়ান এক চুমুক পানি খেতে যায়, হঠাৎ গাড়ি একটা ব্রেক করে — পানি ছিটকে মুখে লাগে।]
রায়ান অসহায়ভাবে মাহিরের দিকে তাকিয়ে:
“ভাই, এটা কী? গাড়ি না রোলার কোস্টার?”
মাহির হাসতে হাসতে উত্তর করে:
“Welcome back to Bangladesh! গাড়ির ব্রেকে শক থেরাপি ফ্রি!”
[দুজন হেসে ফেলে, রায়ান চোখে চশমা আবার ঠিক করে বলে:]

রায়ান:
“ভাই, আমেরিকায় এই স্পিডে গেলে পুলিশ পেছনে হেলিকপ্টার পাঠাত।”
মাহির:
“এখানে পুলিশ দেখে এই স্পিডে না চালাইলেই তারা সন্দেহ করে — “এই লোক এত ধীরে চালাচ্ছে কেন?”
[দুজন আবার হেসে উঠে। গাড়ি শহরের দিকে চলে যায়, রাস্তায় গাড়ির হর্ণ, ঠেলাগাড়ি, একটা ছাগলও রাস্তা পার হচ্ছে — দেশী গন্ধে ভরা এক অদ্ভুত স্বস্তি ও বিশৃঙ্খলার মিশেল।]
গাড়িতে মাহির ও রায়ান, গুলশানের দিকে যাচ্ছিল। রাস্তায় হালকা ট্রাফিক, মাহির হঠাৎ হেসে উঠল।]
মাহির চোখ টিপে:
“এই যে আমেরিকান ভাই, একটা সিরিয়াস প্রশ্ন করি?”
রায়ান সন্দেহভরা কণ্ঠে বলল:

“তোর সিরিয়াস প্রশ্ন শুনলে আমার পেট ব্যথা শুরু হয়… বল!”
মাহির হাসতে হাসতে প্রশ্ন করেই ফেলল:
“তোর ওই পিচ্চি বউটা কেমন আছে রে? এখন নিশ্চয়ই অনেক বড়? কলেজ তো শেষ হয়তো?
রায়ান মাহিরের প্রশ্নে রেগে চোখ বড় করে চেঁচিয়ে:
“মাহির! তুই আবার ওই বিষয় টানলি? ওই বিয়েটা একটা দুর্ঘটনা ছিল! আমাকে না জানিয়ে, না বুঝিয়ে সাত বছর বয়সী কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল!”
মাহির মজা করে:

“হাহা! ভাব দ্যাখো — সাত বছরের মেয়ে বিয়ে, আর তোর মুখে এমন সিরিয়াস ডায়লগ, যেন Netflix ডকুমেন্টারি বানাচ্ছিস! আচ্ছা দোস্ত ধরে নে ভাবির সাথে তোর দেখা হলো তাহলে কি করবি? ”
রায়ান গলা একটু নামিয়ে ঠোঁটে কুটিল হাসি নিয়ে বলল:
“কি আর করবো। কমপক্ষে ৫ মিনিট টানা তার ঠোঁট দুটো তে নিজের ঠোঁট দিয়ে যুদ্ধ করবো।”
মাহির আশ্চর্য হয়ে:
“কিহ্!”

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৫

রায়ান আবার একই ভাবে নিয়ে:
“হ্যাঁ এটাই করব। দশ বছর ধরে আমার বউয়ের খেতাব নিয়ে রেখেছে অথচ স্বামীর হক এখনো আদায় করা হয় নি আমার। বিষয়টা দৃষ্টি কটু।”
রায়ানের উত্তরে মাহিরের কাশি উঠে যায়।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here