তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪
নীল মণি
রৌদ্র মাখা সেই ঝলসানো দুপুরে , সেন্টার এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে আকাশ , ফোন টা হাতে নিয়ে কিছু স্ক্রলিং করছিল, হঠাৎ ফোন স্ক্রীন এর উপর জায়ন ভাই এর নাম উঠে আসে,
ফোন টা ইয়ার বাডসের সঙ্গে কানেক্ট করে রিসিভ করে বলে উঠলো,
” হ্যাঁ ভাইয়া বল”
ওপাশ থেকে জায়ন বলে উঠল
” কোথায় তুই?”
আকাশ উত্তর দিল
” এই তো ভাইয়া তিয়াশার সেন্টারে এর সামনে দাড়ান”।
জায়ন কথা টা শুনেই বলে ওঠে
” আচ্ছা তুই বাড়ি চলে যা, আমি রোদ কে নিয়ে আসব”।
আকাশ কিছু একটা ভেবে বলে ,
” কোন ব্যাপার না ভাইয়া আমি নিয়ে যাব তিয়াশা কে “।
অমনি জায়ন এর ম্যাজাজ টা গড়ম হয়ে যায় ,
জোর গলায় স্বাসিয়ে উঠল
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” যেটা বলেছি সেটা কর , আমার আর ১০ মিন. লাগবে যেতে তুই চলে যা”।
আকাশ জ্বী ভাইয়া বলার সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ফোন টা কেটে গেল ।
আকাশ মনে মনে ভাবল
“ভাইয়ার আবার কি হল, উফ God knows”
এদিকে আকাশ চলে যাবার আগেই , জায়ন সেন্টার এর সামনে পৌঁছে যায় , ব্ল্যাক কালারের ব্যাগি প্যান্ট, ধূসর রঙের মাসল্ বের করা টাইট টিশার্ট , যেখানে তার জ্যীম করা বডির অ্যাবস গুলো অস্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছিল , হাতে ছিল ব্র্যান্ডেড রিস্ট ওয়াচ, চোখে সানগ্লাস পরে এখন আপাতত গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েই তিয়াশার জন্য অপেক্ষা করছে,
তার দুচোখ জুড়ে এখন দেখা মিলছে সেই সকলের রাগ এবং ক্ষোভ এর ,
জায়ন কে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে , মনে মনে ভাবছে কে এই সুদর্শন শ্যামবর্ণ পুরুষ?
তখন ই এক্সাম শেষ এর ঘণ্টা পরে, একটু পরে তিয়াশা ও তার ৩ বান্ধবী বেরিয়ে আসে , দূর থেকেই দেখতে পায় তিয়াশা তার জায়ন ভাই কে ,পাবে নাই বা সে তো এক তাক লাগান চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর এদিকে তাকে দেখে তিয়াশার মুখ হা হয়ে গেছে একটু পরেই কোন মাছি ঢুকে যাবে , আরোহী ওর হাত টেনে টেনে বলল
” ওই দোস্ত ওরম হা করে কি দেখিস”
তখন ই তিয়াশা হুসে আসল
আর বলল না কিছু না, মনে মনে বিড়বিড় করল
” এই বেটা এইখানে কি কর? ”
তখন ই সকালের কথা মনে করে আরোহী কে সাবধান করে দেয় যে সামনে তার জায়ন ভাই দাঁড়ানো।
আরোহী বলে উঠে,
” দোস্ত সব ভাল পোলা গুলো কি তোদের বাড়িতে বসবাস”
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ন হাত টা ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগে আর জায়ন এর হাতের মধ্যেই হাত টা মোচড়ামুচড়ি করতে লাগে ,
তিয়াশা বলে ওঠে
” জায়ন ভাই ছাড়ুন হাতে লাগছে তো,এই ভাবে টানছেন কেন?”
জায়ন কোন উত্তর দিল না,কিছু না বলেই গাড়ির দরজা
ওপেন করে গাড়িতে ছুঁড়ে মারল তিয়াশা কে , একটু ব্যাথা ও পেল ।এদিকে এসব কান্ড দেখে আরোহীর মুখ হা হয়ে রইল।
এদিকে ড্রাইভিং সিটে এসে সিট বেল্ট বেঁধে , তিয়াশার দিকে এগিয়ে ঝুঁকে ওর সিট বেল্ট বেঁধে দিতে লাগল তখন হঠাৎ জায়ন স্থীর হয়ে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে পড়ল , এইসব ঘটনায় তিয়াশার গোলপানা মুখ খানা লাল হয়ে গেল ,ডাগর ডাগর চোখের চাউনি আরো বড় হয়ে গেল, কান থেকে ধোয়া বেরিয়ে যেতে লাগল ।
এ কেমন অনুভূতি এই অনুভূতি তো তিয়াশা আগে কখন অনুভব করেনি , তাদের দুজনের মাঝখানে মাত্র ৪ ইঞ্চির ফারাক রয়েছে , একে অপরের নিশ্বাস এর শব্দ শুনতে লাগল , আবার ও জায়ন এর অ্যাডাম আপল বার বার উপর নিচে হতে লাগল, জায়ন এর বিদেশী পারফিউম এর ঘ্রাণ এ তিয়াশার নিজেকে কেমন নেশাগ্রস্ত মনে হল গা হাত পা কাপতে লাগল কারণ তার সামনে রয়েছে এক সুদর্শন পুরুষ যার চোখের মায়ায় সে ভেসে যেতেও রাজী, জায়ন চুল গুলো সামনে কপাল ছেয়ে আছে , এই অপরুপ চেহারা দেখতে তিয়াশা এক বার না বার বার ব্যথা পেতে রাজি।
এর ই মধ্যে জায়ন এর ফোনে কল ঢুকল , ফোন কলের জন্য তার ধ্যান জ্ঞান ফিরে পেল, স্ক্রীন এ নাম লেখা উঠল বৃষ্টিকণা , ফোন টা রিসিভ করে জায়ন বলল
” হ্যাঁ বৃষ্টি বল”
ওপাশ থেকে কি বলল বোঝা গেল না ,
শুধু এদিক দিয়ে উত্তর গেল
” হ্যাঁ এক্ষুনি আসছি “….
তখন জায়ন তিয়াশার উদ্দ্যেশ্যে বলল
“যা পিছনে গিয়ে বস , তোর দিদি কে ভার্সিটি থেকে নিতে হবে ও সামনে বসবে ,তাই তুই পিছনে গিয়ে বস।”
তিয়াশা রেগে গিয়ে বলে উঠল ,
” আমার সামনে বসার কোন সখ নেই ,
আমি কি বলেছি নাকি আমায় সামনে বসান , নিজেই তো বসালেন, আমার ও জামাই হবে তখ…. ,
পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে পারলনা তার আগেই জায়ন হাত টা সিট এর সঙ্গে চেপে ধরে দাঁত মুখ খিচকে বলে উঠল
” আর একটাও কথা বলবি তো , এই খানেই ফেলে রেখে চলে যাব , সো জাষ্ট শাট আপ ইউর মাউথ ”
তিয়াশা রেগে হাত টা এক ছিটকে সরিয়ে বলতে লাগল
” আকাশ ভাই কোথায়, আমি কি বলেছি এখানে আস্তে , কেন এসেছেন , গাড়ির লক খুলুন, আমি নামব আমাকে নামিয়ে দিন আমি আকাশ ভাই এর সঙ্গে যাব… ”
কথা বলতে দেরি কিন্তু ওদিক দিয়ে চোখে যেন রক্ত এর গোলা তৈরি হয়েছে হাতের পেশী টিশার্ট এর ওপর থেকেও ভেসে উঠেছে ,এই অবস্থায় তিয়াশার ছোট্ট গোল গাল মুখটা এক হাত দিয়ে চেপে দাঁত এর সঙ্গে দাঁত পিসিয়ে বলতে লাগল
” কেন ওকে জড়িয়ে ধরে বসতে পারবি তার জন্য, পিচ্চি পিচ্চির মত থাকবি , বেশি বড় হওয়ার চেষ্টা করিস না রোদ , তাহলে আমার থেকে তোকে কেউ বাচাতে পারবে না, ভুলে যাস না তোর বয়স টা আর তুই কার সামনে বসে মুখ মুখে তর্ক করে যাচ্ছিস , তোর থেকে ১২ বছরের বড় আমি , সো মাইন্ড ইট জাষ্ট বি এলার্ট।”
তিয়াশা মুখ টা জায়ন এর হাত থেকে ছাড়িয়ে কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে পিছনে গিয়ে বসল , আর বির বির করতে লাগল
” উম এসেছে আমার ১২ বছরের বড়, হ্যাঁ জানি বাঘের বাচ্চার সামনে বসে আছি”।
আর কোন টু শব্দ করল না দুজনের কেউ, এদিকে লুকিং মিরর টা একটু সাইডে করে আর চোখে রোদ কে দেখতে লাগল , রোদ গাড়ির জানলার পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে । তারপর বৃষ্টি কে ভার্সিটি থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
বৃষ্টি জায়ন কে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ওর —
জায়ন বলে উঠল —
” ওর মরার পাখনা গজিয়েছে , সেই পাখনা গুলোকে ছাটাই কোরতে হবে , তাই চুপচাপ বসা”
এই শুনে যেন তিয়াশা আর রেগে গেল ,তাও কোন প্রতিক্রিয়া দেখল না।
তারপর গাড়ি এসে চৌধূরী বাড়ির সামনে দাড়াল, অমনি রোদ কিছু না বলে তিয়া গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক না তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো,
এদিকে বৃষ্টি বোন এর কান্ড দেখে হাসতে শুরু করে দায়।
জায়ন ও মুচকি হাসি দিয়ে মনেমনে আওরাল,
” Uff this girl one day will make me crazy”
ঘরের ভেতর প্রবেশ করল জায়ন এবং বৃষ্টি দুজনে একসঙ্গে , মেহজাবীন বেগম বলে উঠলেন
” ও মেজো বড় আম্মু আর বাবু কে এক সঙ্গে আসতে দেখে দেখ বুক জুড়িয়ে যাবে , মাশাআল্লাহ ”
তখন ই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিল তিয়াশা, কথা টা কানে আসতেই দাড়িয়ে পড়ে , পেছন ফিরে তাকাতেই জায়ন এর সঙ্গে চোখে চোঁখ পড়ল , জায়ন মুখ টা ঘুরিয়ে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে লাগল।
তিয়াশা উপরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল , বৃষ্টির ও একটা কল আসতে উপরে চলে গেল, সোফায় বসে রেমোর্ট নিয়ে মারামারি করছে রায়ান আর অনু….
দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার মত রুম এ বসে আছে ,
তখন তিয়াশা তার নতুন ল্যাপটপ থেকে একটা নিজের ফেসবুক আইডি ওপেন করল নিজের নাম দিয়ে
তিয়াশা রোদ চৌধুরী , বাড়ি থেকে করা আদেশ এস.এস. সি র এক্সাম এর রেজাল্ট দাওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের কোন পার্সোনাল ফোন পাবে না , তাই ল্যাপটপে দিয়েই কোন মতে একটা আইডি বানাল।
পাশের রুম এ হাতে ফোন নিয়ে স্ক্রল করছিল হঠাৎ ফেসবুক এর সাজেশন এ অ্যাড ফ্রেন্ড এর নোটিফিকেশন আসে ” তিয়াশা রোদ চৌধূরী”
… এএই দেখে জায়ন এর যেন মেজাজ টা গরম হয়ে যায় , অমনি উঠে রোদ এর রুম এর উদ্দেশ্যে যেতে লাগে , একটু পর রোদ এর দরজা নক্ করায় রোদ দরজা টা খুলে দেয়…. অমনি এক আওয়াজ আসে ___ …. ঠাআসসসসস…
পুরো ওই টুক খানি মুখে যেন বাঘের থাবা পরল,
অমনি রোদ মুখ সাইড দিয়ে চেপে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো, কেঁদে কেঁদে বলল
” আমি কি করেছি , এত জোড়ে মারলেন কেন ? চিৎকার করে পালাতে লাগল ও বড় আম্মু তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেলল গো ”
জায়ন ও দু আঙুল দিয়ে কপালে হাত দিয়ে বির বির করল ” ড্যাম ইট”
তিয়াশার কান্নায় বাড়ির সবাই এক জায়গায় হয়ে গেল ,
ততক্ষণে ইউভি ও বাড়িতে চলে আসল , কিন্তু কর্তারা সব অফিস এই আছে …
মেহজাবীন বেগম ছুটে এসে বলল
” কি রে বাবু , মেজ আম্মু কে মারলি কেন? ইস রে দেখ তো মুখ টা পুর লাল হয়ে গেছে । , ওই মেজ ওই ছোট ফ্রিজ থেকে একটু বরফ দে রে”
রুহানা বেগম বলে ওঠে নিশ্চই কোন বদমায়েশি করেছে আপা, তুমি দেখে নিও ।
আবার জিজ্ঞেস করে মেহজাবীন বেগম …
” কি রে বলছিস না কেন কি করে ছে ও?”
তখন জায়ন সকল এর উদ্দ্যেশ্যে ফোন টা দেখিয়ে বলে
” তোমার মেজ আম্মুর নাকি এক্সাম চলছে , আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেসবুক এ আইডি খুলছে , তাই আমি মেরেছি ”
অমনি রুহেনা বেগম তেড়ে এসে পিঠ দিল দুই তিন চর ,
” অসভ্য মেয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে তুই এসব করে বেড়াচ্ছিস, তোকে জায়ন একটা কেন আরো কোটা চর মারলে খুশি হতাম “।
তিয়াশা কান্না করতে করতে জোরে জোরে সারা বাড়ি এক করে চেঁচাতে লাগল –
“বড় আম্মু বাঁচাও , ছোট আম্মু বাঁচাও ,আপু বাচা প্লিস , ভাইয়া আম্মু কে থামাও নইলে আমায় মেরে ফেলবে ”
তখন। ইউভি সামনে এসে বলে
” তোকে সাহস কে দিয়েছে সেটা বল আগে তুই, আম্মু আজ তুমি তুমি যত ইচ্ছা বক মারো আমি বাঁচাবো না আজকে একে”
তারপর অনন্যার উদ্দ্যেশ্যে চোখ গরম করে বলল
” আর তোকে ও বলে দিচ্ছি এস.এস. সি র আগে যদি এসব ছাই ভষ্ম ওপেন করেছিস সেদিন আমি ই তোকে শায়েস্তা করবো, মনে রাখিস ”
অনন্যা মুখ বুঝে বলল
” আমি কি করেছি ?”
ইউভি বলে উঠলো
” একদম চুপ , মুখ টা জাস্ট বন্ধ রাখবি টিউশন এর পরে কালকে কে ফুচকার দোকানের সামনে কে হাসাহাসি করছিল, তোকে না বলেছিলাম সোজা বাড়ি আসবি আর জাবি? ”
এই শুনে বাড়ির গৃহিণী রা সব হা হয়ে গেছে
অনুর চোখ ছানাবড়া হয়ে আছে আর মনে মনে আওরালো
” শা***লা হিটলার, শকুনের চোঁখ সব টের পেয়ে যায়”
ইউভি সুরাইয়া বেগম এর উদ্দ্যেশ্যে বলল
” ছোট মা বাইরের টিউশন বন্ধ , কাল থেকে ওকে আর রায়ান কে বাড়িতে পড়াতে আসবে”
এবার সুরাইয়া বেগম শুরু —
” এই মেয়ে কালকে কি না আমায় বলে স্যার লেট করে পরিয়েছে , দারা তুই এই বলতে বলতে এবার অনুর মুখেও দুটো থাপ্পর পড়ল”
জায়ন বলে উঠল
“মেজো মা ছোট মা থামো, বৃষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো যা ওদের ঘরে নিয়ে যা”
বৃষ্টি ওদের নিয়ে উপরে যেতে লাগলো , আর রোদ রাগে রাগে সঙ্গে দাঁতে দাঁত পিসিয়ে জায়ন এর দিকে তাকিয়ে বির বির করে বলল
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৩
” বাঘের বাচ্চা নিজে মেরে আবার মার ও খাওয়ালো ,এখন আবার ঢং করে বলছে উপরে নিয়ে যা… শালা ইবলীশ” ।
জায়ন বাকা হেসে মনে মনে বলল
” ইউ আর সো ইন্টারেস্টিং বেবিগার্ল ”