প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫১

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫১
জান্নাত নুসরাত

জায়িন অফিস থেকে বিদ্বস্তের মতো বের হয়ে পার্কিং এরিয়ার দিকে গেল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলো। রাস্তায় খালি কিন্তু ট্যাফিক সিগন্যাল রেড লাইট দেখা গেল। জায়িন না তাকিয়ে ট্রাফিক সিগনাল ভেঙে চলে গেল। পিছন থেকে ট্রাফিক পুলিশ জায়িনকে ইশারা করলো দাঁড়ানোর জন্য। জায়িন কোনো কিছু পরোয়া না করে এপার্টমেন্টর উদ্দেশ্যে ছুটে চলল। এপার্টমেন্ট পৌঁছে জায়িন লক খুলে ইসরাতের রুমে দিকে গেল যা পুরো পুরি খালি। জায়িন ফোন বের করে ইসরাতকে কল দিতে লাগলো। ইসরাতের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। জায়িন প্রচন্ড রাগে ফোন মাটিতে আছড়ে ফেলে দিল।
এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে ক্যামেলিয়ার রেস্টুরেন্টের দিকে রওয়ানা দিল জায়িন। লিও রেস্টুরেন্টের কাউন্টারে বসে ছিল। জায়িন কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।

“ইসরাত কোথায়?
” আমি কি জানি? তোমার স্ত্রী খবর আমি কি করে জানবো?
“ক্যামেলিয়া কোথায়?
” বাসায়।
“এড্রেস দাও।
লিও কোনো কথা না বলে চুপচাপ বাসার এড্রেস দিয়ে দিল। জায়িনকে কী রকম দেখতে লাগলো তার কাছে?
ক্যামেলিয়া হসপিটাল থেকে বাসা, বাসা থেকে হসপিটাল ইসরাতের সাথে দৌড়জাপ করার ফলে শরীর একটু অসুস্থ বোধ করছিল তাই রেস্টুরেন্টে যায়নি। সকাল থেকে বেডে শুয়ে আছে। হঠাৎ, কলিং বেলের শব্দে বেড থেকে উঠে আসলো সে। জায়িন কে গ্লাসের মধ্যে দিয়ে দেখে মুখ কালো করে দরজা খুলল। দরজা খোলার সাথে সাথে ক্যামেলিয়াকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জায়িন বলতে লাগলো, “ইসরাত কোথায়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ইসরাইট কে দিয়ে তোমার কি কাজ?
জায়িন করুণ চোখে তাকিয়ে তাকলো। ক্যামেলিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”আজ একদিন পর তুমি ওর খোঁজ নিতে এসেছো। যখন ও কল দিয়েছিল ওর কথা না শুনে ফোন কেন রেখে দিয়েছিলে? পরে কল দিয়ে ওর খোঁজ নিয়েছিলে? এখন এসেছ কেন?
অসহায় কন্ঠে বলল জায়িন,
“প্লিজ ক্যামেলিয়া বলো ইসরাত কোথায়?
ক্যামেলিয়া কিছুক্ষণ জায়িনের দিকে তাকিয়ে দেখলো জায়িনকে। তারপর মুখ ফুলিয়ে বলল,” ইসরাইট সকালে বের হয়েছে। কিন্তু, কোথায় গিয়েছে বলে যায়নি, আর কখন আসবে সেটা জানিনা?
“আমি কি ইসরাত না আসা পর্যন্ত এখানে অপেক্ষা করতে পারি?
ক্যামেলিয়া শুধু মাথা নাড়ালো। জায়িন ক্যামেলিয়ার বাসায় ইসরাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সোফার উপর মাথায় হাত দিয়ে চেপে বসে রইলো।

ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেল। সকাল গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। তবুও ইসরাত আসলো না, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। জায়িনের মনে ক্ষীণ আশার আলো ফুটে উঠলো হয়তো ইসরাত এসেছে। জায়িন ক্ষীণ আশা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু জায়িনের আশায় পানি ঢেলে বাসায় লিও এলো। জায়িন লিও কে দেখে মুখ কালো হয়ে গেল। পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করতে নিবে মনে হলো সকালে মোবাইল আছাড় মেরে ফেলে এসেছে এপার্টমেন্টে। রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো।

জায়িন আসছি বলে ক্যামেলিয়ার বাসা থেকে বের হয়ে গেল। বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে বাসার দিকে শূন্য চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল। চোখ জ্বলছে তার। ল্যাম্পপোস্টের হালকা আলোয় জায়িনের চোখ লাল হয়ে যাওয়া শিরা গুলো দেখা গেল। জায়িন নিজের শরীর কোনোরকম টেনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে যেতেই বিপরীত রাস্তা দিয়ে ইসরাত আসলো। ক্যামেলিয়ার বাসার গেট খুলে ধীরে সুস্থে ভিতরে গেল। মেইন দরজা খোলা থাকতে দেখে, ইসরাত ভ্রু কুঁচকে ভিতরে ঢুকলো। পা থেকে শু খুলে শু রেকে শু রাখলো। ভিতরে প্রবেশ করে আরাম করে বসে মোজা খুলতে নিবে ক্যামেলিয়া এসে পাশে বসলো। সারাদিনে হয়ে যাওয়া ঘটনা এক এক করে সব বলতে লাগলো। ইসরাত মুখ গম্ভীর করে নিশ্চুপ হয়ে শুনলো ক্যামেলিয়ার কথা। কথার বিপরীতে কোনো কথা বলল না।

পরেরদিন,
নুসরাত সুন্দরভাবে সাজ গোজ করে রেডি হলো। কল দিয়ে আবিরকে বলল তাদের বাড়িতে চলে আসার জন্য। সকালে নাস্তা করে একসাথে বের হবে। আরশ তখন ফরমাল শার্ট পরছিল অফিসে যাওয়ার জন্য। নুসরাতকে ফোন দিয়ে আবিরকে দাওয়াত করতে দেখে বিরক্ত হলো। নুসরাত ফরমাল প্যান্টের ভিতর শার্ট ইন করে পরে নিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো।
আরশ নুসরাতের এতো আয়োজন করে সাজতে দেখে বিরক্ত হলো। এতো ডং করার কি আছে? নুসরাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো, “বিশেষ কিছু কি আজ?
নুসরাত নির্লিপ্ত গলায় বলল,

” এমন কেন মনে হলো?
আরশ উত্তর দিল না। কাবার্ড খুলে দেখলো কাবার্ডের ভিতরের নতুন কিনা অর্ধেক কাপড় গায়েব। বিরক্তির চোখে একবার তাকালো নুসরাতের দিকে।
নুসরাত আরশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচাল। আরশ তিক্ত বিরক্ত হয়ে বলল,”আমার সব কাপড় নিয়ে তুই কি করিস?
নুসরাত হে হে করে হাসল।
“আপনার কাপড় গুলো এতো ভালো আর সফট দেখলেই ইচ্ছে করে পরে নিতে। তাই দু-একটা চুরি করে নিয়ে পরি আর কি? বেশি না দু-একটা!
আরশ তর্কে জরালো না। তর্ক করে কি হবে সেই তো নিয়ে পরবে? কাবার্ডে ছোট ড্রয়ার খুলে কিছু খোঁজতে লাগলো। নুসরাত ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,” কি খোঁজছেন?
আরশ উত্তর করলো না। নুসরাত একটু এগিয়ে গেল আরশের দিকে। পিঠে হাত রেখে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,” বলুন খোঁজে দিচ্ছি?

“আমার আন্ডার**!
নুসরাত স্বাভাবিক গলায় বলল,
” ব্রান্ডেড মাল যেইটা কেলভিন কেলিনের?
আরশ হাত চালাতে চালাতে মৃদু শব্দে উত্তর করলো,
“হু!
“আরে, আপনি ব্র্যান্ডের জিনিস এভাবে নষ্ট করছেন দেখে আমি ওটা দিয়ে সর্দি মুছে ধুয়ে তুলে রেখেছি। আবার যখন সর্দি হবে, নাক মুছবো! এমনি এমনি নষ্ট করার কোনো দরকার আছে?
নুসরাত লজ্জা পাওয়ার মতো করে বলল,
“আপনি ও না…”
আরশ দাঁত কিড়মিড় করলো। নাক ফুলিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল, “কি বললি আবার বল?

” আরে কানে কম শুনছেন নাকি? বলেছি নাক মুছে তুলে রেখেছি।
আরশ রাগে নাক মুখ লাল করে বলল,
“খুব ভালো কাজ করেছিস! তোর মতো মাথা মোটাকে নিয়ে আমি কি করবো? তুই আমার পরার জিনিস নিয়ে নাক মুছছিস! আমি ওটা একদিন ও ইউজ করিনি!
নুসরাত ফোড়ন কেটে বলল,
“এই জন্যেই তো নাক মুছেছি! আমার দেখেই মনে হয়েছে নিউ মাল এটা। তাই তো নাক মুছে তুলে রেখেছি!
নুসরাত চুল আঁচড়ানোর জন্য চিড়নি হাতে নিল। চুলে চিড়নি লাগানোর আগেই আরশ রাগে নুসরাতের চুল ধরে টেনে ধরলো। নুসরাত চুলের মাঝে নিজের হাত চেপে ধরে আরশের দিকে চোখ তুলে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে আরশ বলল,” টাকা বের কর?
নুসরাত মুখ দিয়ে ব্যথাতুর শব্দ বের করলো। আরশের দিকে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে বলল, “আপনি নারী নির্যাতন করছেন? আমি আপনার নামে কেস করবো?
আরশ রাগে বলল,

” যা বাল করার করিস? দেখব কি করতে পারিস আমার? আগে টাকা বের কর! আমার ৫০০০ হাজার টাকার জিনিস দিয়ে তুই নাক মুছোস।
নুসরাত ব্যথা ভুলে চোখ বড় করে মুখ হা করে তাকালো। আরশ নুসরাতের চুল ধরে আরেকটু জোর দিয়ে টান মারল।
“আরে ভাই চুল ধরে টানাটানি করছেন কেন?
” নুসরাতের বাচ্চা আমি তোর চুল ধরে টানছি এটা তোর সৌভাগ্য। আমার হাত কেমন নিশপিশ করছে, তোকে পিটানোর জন্য! ভাগ্য ভালো তোর, তোকে আমি পেটাচ্ছি না। অন্য ছেলে হলে তোকে পিটিয়ে তক্তা বানাতো।
নুসরাত শব্দ করে হাসল। ঠোঁট মেলে আরশকে ভেঙিয়ে বলল,”আমার এখনো বাচ্চা হয়নি! তাই নুসরাতের বাচ্চাকে ডেকে কোন লাভ নেই? এখনো কোনো প্রসেসিং ও শুরু করিনি বাচ্চা পয়দা করার জন্য। কিছুদিন পর শুরু করব!

আরশ চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে রইলো। এ মেয়ে, এটা মেয়ে হতেই পারেনা। লজ্জা নারীর ভূষণ! এর মধ্যে লজ্জা বলতে কোনো ডিকশনারি নেই।
“তোর লজ্জা বলতে কোনো ডিকশনারি আছে?
নুসরাত বুক ফুলিয়ে জবাব দিল,
” নাহ নেই!
আরশ চুল ছেড়ে দিল নুসরাতের। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখল গান গেয়ে চুল আছড়াচ্ছে। আরশ নুসরাতের দিকে এক পা এগিয়ে গেল।

“তোকে আমি একটা থাপ্পড় মারি? তোর এই হাসি হাসি মুখ দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।
নুসরাত গাল বাড়িয়ে দিল থাপ্পড় মারার জন্য। আরশ দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল। তার অতিরিক্ত রাগে ইচ্ছে করছে না থাপ্পড় মারতে। অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করছে। আরশ ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে নুসরাতের দিকে এগিয়ে গেল। নুসরাত আয়নার সামনে চুল খোপা করছিল। আরশকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খোপা করা বাঁধ দিয়ে আরশের দিকে ফিরে তাকালো। আরশের মতিগতি তার কাছে ঠিক মনে হলো না। চুল বাঁধতে নিবে, আরশ দুর্বেধ্য হাসি হেসে নুসরাতের কোমর চেপে ধরলো। নুসরাত বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” কি?

আরশ কথা বলল না। ক্রোধে চোয়াল শক্ত করে নুসরাতের গালের দিকে অগ্রসর হলো। নুসরাতের নরম গালের ত্বকে সূচালো দাঁত স্পর্শ করলো। ঝাঁঝালো স্পর্শের হাত থেকে বাঁচতে নুসরাত আরশকে ঠেলে সরাতে চাইলো। আরশ সরল না। আরশকে সরতে না দেখে নুসরাত ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো।
“এবার তুই যদি না সরিস, আমি ভুলে যাব তুই কে? মেইন পয়েন্টে লাত্তি মেরে তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিব। দূরে সর, শালা লুচ্চা কোথাকার? মেয়ে দেখলেই ঢলাঢলি, চুমাচুমি, আর কামড়া কামড়ি করতে ইচ্ছে করে। আজ সব বের করে দিব তোর?

আরশ নুসরাতের হুমকি ধমকিতে একটু ও সরল না। নুসরাত দু-হাত দিয়ে ঘুষি মারতে যাবে আরশ নুসরাতের দু- হাত চেপে ধরে উপরের দিকে তুলে রাখলো। নুসরাতের গালের দিকে সূক্ষ্ম নজরে তাকালো। গালে দাঁতের দাগ পড়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় রক্ত ছোপ ছোপ হয়ে জমা হয়েছে। এবার কিছুটা শান্তি লাগছে!
নুসরাতকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল। মুখ দিয়ে শিষ বাজিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। হাত দিয়ে চুল ব্যাক ব্রাশ করে নেকটাই পরে নিল। ডেসিন টেবিলে রাখা নুসরাতের জিনিসের মধ্যে থেকে ব্ল্যাক টাই সেলিন পারফিউ নিয়ে সারা শরীর স্প্রে করলো। তারপর নাক টেনে গ্রাণ নিল। আহ কি ভালো সুগন্ধ? যাই বলি আর তাই বলি, মেয়েটার পারফিউম চয়েস ভালো আছে।
আরশ আয়নার সামনে থেকে সরে যেতেই নুসরাত আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের গাল দেখতে লাগলো।
আরশ হাতে কোট নিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে আদেশের স্বরে বলল,”ওয়ান টাইম লাগিয়ে নিস!

সকালের খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। আরশ আর নুসরাত দু-জন দুপাশে সামনা সামনি বসে আছে। হেলাল সাহেব রুটি মুখে পুরে কথা শুরু করলেন।
“ইনায়া কে তুলে নিয়ে আসতে চাচ্ছি!
নাছির সাহেব, শোহেব, সোহেদ কেঁশে উঠলেন। হেলাল সাহেব বললেন, “এই পানি দাও এদের?
নাজমিন বেগম স্বামীর দিকে পানি এগিয়ে দিলেন। নুসরাত শোহেব আর সোহেদের মাঝে বসা তাই পানির গ্লাস দু-জনের দিকে এগিয়ে দিল সে।
“এই গাঁধারা, খাবার খেতে গিয়ে বিষম উঠল কেন?
শোহেব আর সোহেদ মুখ লুকালেন। নাছির সাহেব নিজে কে ধাতস্ত করে বললেন, “ভাই এই বয়সে এসে আপনি ছেলের বউকে উঠিয়ে নিয়ে আসবেন? এটা কেমন দেখায় না!
হেলাল সাহেব বিরক্তির চোখে সবার দিকে তাকালেন। ধমকে উঠলেন সব ভাইকে।
“তোদের তো আমি এমনি এমনি বলদ আর গাঁধা বলিনা। তোরা যে একেকটা বড় বড় গাঁধা তাতো তোদের কথায় প্রকাশ পায়।

নাছির সাহেব মুখ কালো করে ফেললেন। সোহেদ হাসি আটকানোর জন্য মুখে রুটি পুরলেন। শোহেব হালকা শব্দ করে হেসে দিলেন। হেলাল সাহেব শোহেবের দিকে আঙুল তউলে বললেন,” দেখো, আবার গাঁধার মতো হাসছে। আচরণ দেখো এদের, দু-দিন পর ছেলে মেয়ের বিয়ে দিবে আর এখনো সিরিয়াস কথা নিয়ে দাঁত কেলানো হচ্ছে। এটা কোনো হাসির ব্যাপার হলো! গাঁধা যে গাঁধা থেকে যাবে। আমি কি বলেছি আমি তুলে নিয়ে আসবো? অনুষ্ঠান করে তুলে নিয়ে আসার কথা বলছি। তোদের ভেঙে কথা না বললে তোরা একটা বলদ কিছুই বুঝিস না।
নুসরাতের দিকে চোখ ফেলে বললেন,

“তাই না মা!
নুসরাত থতমত খেয়ে মাথা নাড়ালো। হেলাল সাহেব নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলেন। তারপর আবার তড়াক করে তাকালেন নুসরাতের পানে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ” গালে কি হয়েছে?
নুসরাতের হাত আপনা-আপনি গালে চলে গেল। গালে হাত রেখে আরশের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকালো। আরশ ও তাকালোসেম সময়। দু-জনের চোখা চোখি হতেই নুসরাত বলল,”এক মোটা গন্ডার এসে ধাক্কা মেরে ওয়াশরুমে ফেলে দিয়েছে।
হেলাল সাহেব মনে করলেন ভুল শুনেছে। আবার জিজ্ঞেস করলেন,” কি, কি আবার বলো? শুনতে পাইনি!

“ওয়াশরুমে স্লিপ করে পড়ে গিয়ে বাল্টিতে লেগে গাল কেটে গিয়েছে।
আহান বলল,
” দেখি বড় আপু একটু দেখি, কতটুকু কেটেছে বাল্টি তে লেগে?
আরশ ধমক দিল,
“তুই দেখলে ওর গাল ঠিক হয়ে যাবে কি?
নুসরাত মুখ ভেঙালো। নিজে করলে দোষ নেই, অন্য দেখতে চাইলেই দোষ। আহান মুখ লটকে বসে গেল! আরশ মুখে তাড়াতাড়ি রুটি পুরতে লাগলো। যতো তাড়াতাড়ি পালানো যায় এখান থেকে।
লিপি বেগম চিন্তিত গলায় বললেন,

“তোর কি হয়েছে আরশ? এভাবে খাবার খাচ্ছিস কেন? ধীরে সুস্থে খা!
মেহেরুন নেছা নিজের দিকে এ্যাটেশন ফিরিয়ে নিলেন।
সবার খাওয়া ইতিমধ্যে শেষ। হাত টিস্যু দিয়ে মুছে মেহেরুন নেছার দিকে তাকালেন সবাই।
” আরশ আর নুসরাত তোমাগো বিয়ার তো কয়মাস হইয়া গেছে? তাইলে এখনো সু-খবর পাইনা ক্যা?
নুসরাত রুটি মুখে পুরে বলল,
“এই বয়সে এসে তুমি সু-খবর চাচ্ছো দাদা।
সবাই বিদায় নিলেন। বুঝতে পারলেন মেহেরুন নেছার কথা। এক কথায় সবাই পালিয়ে গেলেন কাজের কথা বলে। তিনি নাতি নাত্নিদের সাথে কথা বলছেন,তারা বড়রা থেকে কি করবে? কখন আবার কি বেফাস কথা বলে ফেলেন মেহেরুন নেছা! নিজে লজ্জা পাবেন না, কিন্তু তারা লজ্জা পাবে!

বাবা চাচাকে চলে যেতে দেখে নুসরাত গলার ভিতর আটকে রাখা কথা ধীরে বলল,”এক পা কবরে রেখে তুমি এখন সু-খবরের অপেক্ষায় আছো। ছি্হ দাদা ছি্হ! এটা আশা করিনি তোমার থেকে!
আরশ মাকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ নিচু করে পানি খেল এক চুমুকে সব। নাজমিন বেগম এসে নুসরাতের মাথায় গাট্টা মারলেন।
“এসব কোন ধরনের কথা! একজন কে কিছু বললে শুধু ত্যাড়া কথা বলবে আর আরেকজনকে কল দিলে কলই ধরবে না। আর ধরলে কিছু বললে শুধু হু হা করবে।
নাজমিন বেগম চোখের পাশ ওড়না দিয়ে মুছলেন। নুসরাত মুখের সামনে রুটি নিয়ে হা করে তাকিয়ে তাকলো। এটা তার মা হতেই পারে না! কথা বললেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে শুধু কাঁদে।
” সরো তো সরো আম্মা, এসব কান্না ভালো লাগছে না। হঠাৎ করে দুঃখ উগাম দিয়ে উঠে যায় তোমার।
নুসরাত প্লেটে পানি ঢেলে উঠে দাঁড়ালো। নাজমিন বেগমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের মুঠোয় রোমাল দিয়ে চলে গেল।
সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইরহাম তাড়াতাড়ি আয়, গাড়িতে অপেক্ষা করছি? সাথের জনকে ও নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।

নুসরাত গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করতেই আবির আসলো। নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল, “এই তোমার আসার সময় হলো! নাস্তা পাবে না এখন! চুপচাপ পিছনের সিটে উঠে বসো!
আবির ভদ্র ছেলের মতো ব্যাক সিটে উঠে বসলো। নুসরাত ফোন বের করে কল করলো কাউকে। কল ধরতেই ওপাশের জনকে কর্কশ গলায় বলল,”দুটো ব্রেডে মধু নাহলে জেম লাগিয়ে নিয়ে আসবি?
“এই রাক্ষসী, এই তো এতো খাবার খেয়ে গেলি আবার ব্রেড খাবি। তোর পেট ওটা নাকি নৌকা?
নুসরাত ধমকি দিয়ে বলল,
” যদি না নিয়ে আসিস লাথ মেরে সৌরজগতের বাইরের সেটারলাইটে পৌঁছে দিব।
ইরহামের কথা না শুনেই নুসরাত ফোন রেখে দিল। আবির চুপচাপ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। এর মধ্যে ইসরাতের কল আসলো।

“হ্যাঁ হ্যালো!
“……….
” এই তো এসে গিয়েছি! আধ ঘন্টার মতো সময় লাগবে! ইমেগ্রিয়েশন শেষ করে কল দিস।
নুসরাতের কথা শেষ হতেই আরশ আর ইরহাম এসে গাড়িতে বসলো। নুসরাত গাড়ি স্টার্ট দিল! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ি চালাতে লাগলো।

ইরহাম অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠলো,
“এই এই অফিসের রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাচ্ছিস কেন?
নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
” চুপচাপ বসে থাক! এতো কথা বলিস কেন? আমি ড্রাইভার আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেটাই তোর গন্তব্য।
ইরহাম আর কোনো কথা বলল না।এই পাগলকে কোনো কিছু বলে কোনো লাভ হবে না, তাই চুপ হয়ে বসে রইলো।
এয়ারর্পোটে পৌঁছে নুসরাত চারিদিকে তাকাতে লাগলো।ইসরাত এখন ও বের হয় নি।
ইরহাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এয়ারপোর্টে আমরা কি করছি?
নুসরাত ইরহামের কথার উত্তর না দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগলো।
আরশ বলল,

” এরকম উঁকি ঝুঁকি মারছিস কেন? পনেরো মিনিট ধরে এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথায় হয়ে যাচ্ছে।
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
“বসে না থেকে হাঁটলেই হয়! তাহলে তো আর কোমর ব্যথা হয় না।
প্রায় আধাঘন্টা পরে ইসরাত বর্হিরগমন দিক থেকে বের হলো। নুসরাত দৌড়ে গিয়ে টনেডোর মতো ইসরাতকে জড়িয়ে ধরলো। ইসরাত হালকা করে হেসে নুসরাতের পিঠে হাত রাখলো।
ইরহাম আর আরশ ইসরাতের পানে হা করে তাকিয়ে আছে। চোখের ভুল মনে করে চোখ পিটপিট করে আবার চোখ মেলে তাকালো। ইসরাত আগের তোলনায় একটু বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছে ইরহামের কাছে মনে হলো। অপার্থিব দৃষ্টিতে জ্ঞান হারানো লোকের মতো তাকিয়ে রইলো।
ইরহাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো সামনে অগ্রসর হলো। ইসরাত নুসরাতের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইরহামের পানে তাকালো। ইরহামের দিকে তাকিয়ে অধর প্রসারিত করে হাসল। ইরহামের এখনো বিস্ময় কাটেনি। ইসরাত ইরহামের মাথার চুল হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিল। তবুও ইরহাম ইসরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো। নুসরাত বিরক্ত হয়ে ইরহামের কোমরে লাথ মেরে বলল,” এইরকম হ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে চোখ খুলে পড়ে যাবে। ঠিক করে তাকা!

ইসরাত আরশের সাথে হালকা হেসে কুলশ বিনিময় করলো।নুসরাতের কি যেন মনে হলো, তাই গাড়ির দিকে দৌড়ে চলে গেল? গাড়িতে আরশের কিনে দেওয়া গাজরা গুলো ছিল সেগুলো নিয়ে আসলো। গাজরা গুলোর একপাশ হালকা শুকিয়ে গেছে।
গাজরা গুলো মধ্যে দু-তিনটে গাড়ির সামনে রাখলো। একটা ইসরাতের মাথার উপর রাখলো আর দুটো ইসরাতের মাথায় পরিয়ে দিল।
“মেরে পেয়ারে বেহনা,ইয়ে তুমহারে লিয়ে হে। সময় এবং সুযোগ দুটো থাকা সত্ত্বেও আমি আপনার জন্য কোনো বুকেট কিনে আনিনি। এই গুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি! বুঝতে হবে আজ কাল আমি সংসারী হয়ে যাচ্ছি! আমার প্রিয় বোন! তুমি এগুলোর উপরে হেঁটে আমার জীবন ধন্য করো।
ইসরাত নুসরাতের কান্ডে হেসে এগুলোর উপর দিয়ে হেটে গেল। আরশ মুখ কালো করে গাজরার দিকে তাকিয়ে থাকল৷ গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ইসরাত নুসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,”তোকে যে এপার্টমেন্ট দেখে রাখতে বলেছিলাম তুই তার কি ব্যবস্তা করলি।
আরশ বিস্ময় নিয়ে বলল,

“কীসের এপার্টমেন্ট ।
নুসরাত তার উত্তর না দিয়ে হেসে হেসে বলল,
“আমরা বাড়িতে যাচ্ছি।
“নুসরাত আমি কোনো ফাজলামির মোডে নেই! আমি বাড়িতে যাচ্ছি না।
আরশ বলল,
” তুমি বাড়িতে যাবে না।
ইসরাত দৃঢ় কন্ঠে বলল,
” না।
” তুই বাড়িতে না গেলে আমি এই যে এখানে আজ শুয়ে পড়বো। নইলে এই ট্রাকের নিচে শুয়ে নিজের জীবন বির্সজন দিয়ে দিব। এখন আমি মরলে দায় বার সব তোর আর আরশের।
আরশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নুসরাত সেদিকে পাত্তা না দিয়ে এয়ারপোর্টের সামনে পাকিং করে রাখা গাড়ির সামনের রাস্তায় শুয়ে পড়ল।
ইসরাত আরশ,ইরহাম বিমূড় নেত্রে নুসরাতের পানে চেয়ে রইলো। শুয়ে পরবে বলেই শুয়ে পড়ল।

“নুসরাত উঠ বলছি সবাই আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।
” তাকিয়ে থাকুক থাতে আমার কি তুই বাড়িতে না গেলে আজ আমি এখানে এইভাবে শুয়ে থাকব।
ইসরাত চারিদিকে একবার চোখ গুরিয়ে তাকাল। এয়ারপোর্টে থাকা অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মান-সম্মান বাঁচাতে ইসরাত বাধ্য হয়ে বলল,
” উঠ আমি যাব বাড়িতে।
এখন হ্যাঁ, না বললে দেখা যাবে এই মেয়ে এখানে সারা দিন শুয়ে থাকবে। এর নির্গাত মাথায় সমস্যা আছে। বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলতে হবে একে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সাইকো-এক্সট্রিস্ট দেখানোর জন্য।
নুসরাত একলাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। উঠে দাঁড়িয়ে ইসরাতের লাগেজ টেনে নিয়ে আসলো।

” এই ইরহাম গাঁধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এগুলো ডিক্কিতে তুল।
ইরহাম বাধ্য ছেলের মতো লাগেজ গাড়িতে তুলল।
নুসরাত গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো।ইসরাত নুসরাতের পাশে উঠে বসলো।
আরশ বলল,
“আমি কোথায় বসবো?
নুসরাত ইরহাম আর আবিরের দিকে ইশারা করে বলল,
” ওদের দুটোর মাঝখানে বসুন।
আরশ বলল,
“এ্যাঁ!
নুসরাত শুনলো না! আরশ ইরহামকে মাঝে বসার জন্য বলল। ইরহাম বলল তার মাঝখানে বসলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়! আরশ ব্যথিত চোখে তাকিয়ে গিয়ে মাঝে বসলো। আবির আরশের দিকে বিরক্তির চোখে তাকিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি দিল।

জায়ান আজকাল নিজের কাজে অনেক ব্যস্ত। ইনায়াকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছে না। জায়ান নিজের কেবিনে বসে কাজ করছিল হঠাৎ উদ্ভ্রান্তের মতো কেবিনে প্রবেশ করলো ইনায়া।এসেই জায়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। আকস্মিক ইনায়ার এইরকম আচরণে জায়ান স্তব্ধ হয়ে গেল। জায়ান ইনায়ার পিঠে হাত দিয়ে বলল,” কি হয়েছে?
ইনায়া কোনো কথা বলল না জায়ানকে ধরে কান্না করতে থাকলো। জায়ান আরো দুই একবার জিজ্ঞেস করলো কিন্তু ইনায়া কোনে কথা বলল না। জায়ান হাল ছেড়ে এইভাবে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। দীর্ঘ আধঘন্টা পর ইনায়া কান্না করা থামালো।
“তুমি আবার আমাকে ইগনোর করছ!
” কখন করলাম?
“তাহলে মেসেজ, কল, এর রিপ্লাই দিচ্ছ না কেন?
” আরে একটু বিজি ছিলাম! এজন্য মেসেজ, কল এর রিপ্লাই দিতে লেট হয়েছে। আর এভাবে কান্না করার কি আছে?
ইনায়া কান্নার জন্য ফুঁপিয়ে উঠলো। জায়ান পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। ইনায়ার ধ্যান ঘুরাতে বলল,”আজ জানো কি হয়েছে?

“না বললে কীভাবে জানব?
জায়ান হেসে উঠলো। তারপর সকালের কথা ইনায়ার কাছে একে একে বলতে লাগলো। ইনায়া কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেল জায়ানের বুকের উপর।
” একটার আবদার করবো, রাখবে!
“শুধু বলো, তোমার জন্য নিজের প্রাণ ও হাজির করে দিব!
” ফিল্মি ডায়লগ দেওয়া বন্ধ কর!
“আচ্ছা কি আবদার বলো?
” শপিং করতে যাব?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫০

জায়ান ইনায়ার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালো। আবার, আবার সেই শপিং। এতোদিনে একটু সেভিং করেছে তা ও এভাবে উড়ে যাবে। জায়ান অসহায় গলায় বলল, “আজ যেতেই হবে?আজ না গেলে হয় না!
” হ্যাঁ আজ যেতেই হবে! না গেলে হবে না।
জায়ান মুখ দিয়ে টেনে টেনে দুঃখ ভরা স্বরে বলল,
“আচ্ছা চলো!

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here