না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৩ (৩)

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৩ (৩)
মাইশা জান্নাত নূরা

সারফারাজকে একা নিচে আসতে দেখে নীরার মা আতুশি বললেন….
—”সারফারাজ বাবা তুমি একা নিচে আসলে যে? পিহু মা কোথায়?”
সারফারাজ বললো….
—”পিহু ঘুমাচ্ছে এখনও। রাতে ঘুম হয় নি ওর ঠিক ভাবে। তাই আর ডাকলাম না।”
আতুশি কিছুটা অস্থির কন্ঠে বললেন….
—”সে’কি! কি হয়েছিলো পিহু মায়ের? ঘুম হয় নি কেনো? শরীর খারাপ নাকি?”
সারফারাজ কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্ঝরের মা শিউলি আতুশির পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার দিকে হালকা হেলে মৃদুস্বরে বললেন….

—”ছোট! তোর কি কোনোকালেই বুদ্ধি-সুদ্ধি হবে না? সারফারাজ তোর ভাতিজা হয়। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা চিন্তা করে প্রশ্ন করিস।”
সারফারাজ শিউলির বলা অস্পষ্ট কথাগুলো বুঝতে না পেরে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো….
—”মেজো চাচী তুমি ছোট চাচীকে কানে-মুখে কি বলছো?”
আতুশি ভ্য*ব*লা*র মতো মুখ করে বললেন…
—”দেখো না বাবা, আমি তো শুধু তোমায় পিহু মায়ের কি হয়েছিলো তা জিজ্ঞেস করেছিলাম তার জন্য মেজো ভাবী আমাকে…..!”
শিউলি তৎক্ষণাৎ আতুশির মুখ চেপে ধরলেন। আতুশি ওভাবেই নিজের কথা শেষ করার চেষ্টা করলেন। ফলে তার মুখ থেকে উম উম শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। শিউলি জোর পূর্বক হেসে বললেন….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—”সারফারাজ বাবা, এটা আমাদের দুই জা’য়ের বিষয়। তুমি এসবে ঢুকো না। তুমি বরং গিয়ে নাস্তাটা করে নাও। পিহু মা ঘুম থেকে উঠে গেলে আমরা ওকে খাইয়ে দিবো সকালের খাবার।”
সারফারাজ আচ্ছা বলে ওদের পাশ কাটিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেলো। পরপরই শিউলি আতুশির মুখ থেকে হাত সরিয়ে তার পিঠে আলতো করে একটা কি*ল বসিয়ে দিতেই আতুশি হালকা ব্যথায় কিছুটা কুঁ*ক*ড়ে গেলেন। শিউলি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন….
—”মূর্খ কোথাকার! সারফারাজ বাবা আর পিহু মা যে বিবাহিত তা কি তোর মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে? কখন কোথায় কাকে কি বলতে হয় তা এতোদিনেও শিখিয়ে উঠতে পারলাম না তোকে। নিজের তো বোধ-বুদ্ধির সাথে লাজ-লজ্জাটুকুও নেই আমাদের টাও খেয়ে দিবি।”
এতোক্ষণে শিউলির কথার ভাঁ*জ আতুশি বুঝে উঠতে সক্ষম হলেন। আতুশি নিজের পিঠের ব্যথা পাওয়া জায়গাটাতে কোনোরকমের হাত বুলাতে বুলাতে বোকার মতো হেসে বললেন…

—”বড় বাঁচা বাঁচালে তুমি আমায় মেজোভাবী।”
শিউলি মুখ বাঁকালেন কেবল।
নাস্তা সেরে সারফারাজ বাড়ির বাহিরে এসে আহাদের সাথে পার্কিং সাইড এর দিকে যেতে যেতে বললো….
—”আজকের সারাদিনের সিডিউল কি কি আহাদ?”
আহাদ বললো….
—”স্যার, আজ সকাল ১১ টায় সংসদ ভবনে ‘ডেভেলপমেন্ট রিভিউ মিটিং’ আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধিরাও থাকবেন সেখানে।”
সারফারাজ মাথা নাড়লো। গম্ভীর দৃষ্টিতে গাড়ির চাবিটা ডান হাতের আঙুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলার ভঙ্গিমা করতে করতে বললো….
—”তারপর?”
আহাদ ওর হাতে থাকা একটা ফাইলের কভার উল্টে তাতে নজর বুলিয়ে বললো….
—”দুপুর ১টায় ঢাকার দুইটি স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার কথা আছে আপনার স্যার। ওরা স্কুলের বিল্ডিং রেনোভেশনের বিষয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক আপনার সাথে।”
সারফারাজের মুখশ্রী সামান্য শক্ত হলো। অতঃপর বললো….

—”আর বিকেলে?”
—”বিকেল ৪টায় গাবতলীর উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন। তারপর সন্ধ্যা ৬টায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং আছে স্যার।”
সারফারাজ গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—”মিডিয়া ব্রিফিং কখন?”
—”রাত ৮টায় ‘নিউজ২৪’ এর সাথে লাইভ টক-শো আছে স্যার। তারা বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন ‘রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা কী?”
এই বলে আহাদ গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজা খুলে দিলো। সারফারাজ ভিতরে বসে বললো….
—”ঠিক আছে। সবকিছু সময়মতো সাজিয়ে রেখো।”
আহাদ মাথা নিচু করে নম্রস্বরে বললো….
—”জী, ঠিক আছে স্যার।”
অতঃপর সারফারাজ গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলো। আহাদ দ্রুত পায়ে ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে সেখানে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।

ইলমা সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তেজ তখনও ঘুমের রাজ্যে বসবাস করছে।
ড্রয়িংরুমের দেওয়ালে টাঙানো বিশাল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির স্বরে ইলমা বললো….
—“বেলা প্রায় ১১টা বাজতে চললো, অথচ নবাবপুত্র এখনও ঘুমে আচ্ছন্ন! সারারাত কি চু*রি-টুরি করেন নাকি উনি?”
এই বলে ইলমা বি*র*ক্ত মুখে দু’হাত কোমরে রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ড্রয়িংরুমের মেঝেতে ধীর পায়ে পায়চারি শুরু করলো। ঘড়ির কাঁটা যতো সামনের দিকে এগোচ্ছে ততোই ইলমার ভ্রু কুঁচকে আসছে। কিয়ৎক্ষণ পর পায়চারি থামিয়ে ইলমা বললো….

—“না, আর না! এভাবে অপেক্ষার প্রহর গোণার ধৈর্য কুলানো যাচ্ছে না। আমাকেই একটা ব্যবস্থা নিতে হবে এই লোকের ঘুম ভাঙানোর জন্য। নয়তো আজও আমার নতুন ঠিকানার খোঁজ মিলবে না।”
এই বলে ইলমা লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। তেজের রুমের দরজাটা হালকা ভেজানো রয়েছে। ইলমা কিছুটা দ্বিধার সাথে তেজের রুমের দরজাটা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। রুমের ভেতরে ঢুকতেই ইলমা থমকে গেলো। বাহিরে দিনের ভরপুর আলো থাকা সত্ত্বেও এইরুমের ভিতরটা একেবারেই অন্ধকারে ডুবে আছে। সব লাইট বন্ধ, জানালাগুলো লাগানো, পর্দাগুলো টেনে রাখা। এমনকি দরজাটাও এমন ভাবে বসানো রয়েছে যে, বাইরের সূর্যের আলো রুমের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢোকার কোনো উপায় নেই।
ইলমা ভ্রু কুঁচকে বিরবিরিয়ে বললো….

—“একটা কি কোনো মানুষের থাকার ঘর নাকি কোনো বাদুড়ের বসবাস করার গু*হা!”
অতঃপর ইলমা আন্দাজ করলো….
—“সুইচ বোর্ড নিশ্চয়ই দরজার কাছাকাছি কোথাও থাকবে।”
তাই ইলমা ডান পাশের দেয়ালটাতে হাতড়াতে শুরু করলো। পরপরই সুইচবোর্ডটি ছুঁতে পেরে ইলমা বললো….
—“পেয়ে গিয়েছি!”
পরক্ষণেই ইলমা একে একে সবগুলো সুইচ অন করতে লাগলো। এক মুহূর্তের মধ্যেই রুমটা আলোকিত হয়ে উঠলো। ইলমা দ্রুত পায়ে জানালার কাছে গিয়ে পর্দাগুলোও সরিয়ে দিলো।
ইলমার চোখ পরলো জানালার পাশে থাকা টেবিলের উপর ছড়ানো কতোকগুলো বই আর তার পাশেই রাখা তেজের মোবাইলটার উপর। পাশেই রয়েছে আধখাওয়া একটা কফির কাপ।
ইলমা সামনের দিকে ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো ঘুমন্ত তেজের উপর। অগোছালো বিছানায় তেজ উপুর হয়ে শুয়ে আছে। চুলগুলো কিছুটা অগোছালো হয়ে তেজের দু’চোখ প্রায় ঢেকে নিয়েছে। কোমর থেকে পা পর্যন্ত কম্বলের নিচে অবস্থান করায় উন্মুক্ত ফর্সা পিঠটাতে সূর্যের হালকা রশ্মি এসে বা*রি খেলো যেনো খুব সহজেই।
ইলমা শুকনো ঢোক গিললো একবার। পরপরই তেজের উপর থেকে নজর সরিয়ে নিজেই নিজেকে কয়েকদফা ব*কা দিলো ইলমা৷

অতঃপর গলা পরিষ্কার করে ইলমা তেজের দিকে না তাকিয়েই বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তেজকে ডাকতে শুরু করলো। প্রথমত কয়েকবার ধীর গলায় ডাকলো। তেজ কেবল হালকা নড়েচড়ে উঠলো। ইলমা এবার বি*র*ক্ত হয়ে ‘তেজজজজ শুনছেননন’ বলে জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে তেজের ঘুম উবে গেলো। লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে তেজ বললো…..
—”ও আল্লাহ রে, কে এমনে ডাকে!”
ইলমা ওর বুকের উপর দু’হাত ভাঁজ করে কয়েককদম পিছিয়ে এসে দাঁড়ালো। তেজ মাথার চুলগুলো ঝাঁকি দিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে সামনে তাকাতেই ইলমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
—”আপনার যে মাথায় জটিল কোনো সমস্যা আছে সে সম্পর্কে কি আপনি জানেন?”
ইলমা কিছুটা মিনমিনে স্বরে বললো….

—”আমার কোনো দোষ নেই। আমি অনেক সময় হলো আপনার জন্য নিচে অপেক্ষা করছিলাম। আপনি নিজ থেকে উঠছেন না দেখেই আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম, জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিলাম। সূর্যের আলো আপনার উপর এসে পড়লো তবুও আপনার ঘুম ভাঙলো না। এরপর আমি নরম স্বরেই আপনাকে ডেকেছি। আপনার ঘুম তবুও ভাঙে নি। তাই তো বাধ্য হয়ে একটু জোড়েই ডেকে ফেলেছি। সরি!”
—”একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক হয় নি আমার। আর আপনি সরি বলেই উড়িয়ে দিতে চাইছেন পুরো বিষয়টা! সরি বললেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়!”
—”আপনি কি কাদের কাক্কুর ফ্যন নাকি!”
তেজ ভ্রু কুঁচকে বললো….

—”হোয়াট? এই কাদের কাক্কুটা আবার কে?”
ইলমা আবারও তেজের দিকে ২কদম এগিয়ে এসে বললো….
—”আরে হাসিনা নানীর স্পেশাল চামুচ যে ছিলো উনি। ওবায়দুল কাদের নাম।”
—”আমি কেনো ঐসব লোকের ফ্যন হতে যাবো? আজব প্রশ্ন করছেন তো!”
—”তাহলে তার ডায়লগ আপনি কিভাবে জানলেন?”
—”মানে?”
—”ঐযে, সরি বললেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়? সরি বললেই সবকিছুর সমাধান হয় না। এটা একটা বড় ধরনের অপরাধ। এই টাইপ কিছু কাদের কাক্কুই বলেছিলেন। তাই মনে হলো আপনি হয়তো তার বড় কোনো ভক্ত হবেন।
তেজকে ঠোঁট কাঁমড়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে দেখে ইলমা হেসে বললো….

—”আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ুন প্লিজ। নাহলে একটা মেয়ের সামনে নাক দিয়ে স্বর্দি জাতীয় উল্টো-পাল্টা কিছু বেরিয়ে গেলে কিন্তু লজ্জায় আপনাকে পড়তে হবে আমায় না।”
তেজ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলললো…
—”আজ আপনার একদিন কি, আমার যতোদিন লাগে!”
এই বলে তেজ বিছানা থেকে নামতে যাবে ওমনি কম্বলের সাথে পা আটকে ধপ করে মেঝেতে উপুর হয়ে পড়লো তেজ। তৎক্ষনাৎ নিজের সম্মান বাঁচাতে পুশআপ করতে লাগলো তেজ।
ইলমা দু’হাতে মুখে চেপে হাসি আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে বললো….
—”আপনাদের ২ ভাইয়ের-ই শরীর নরভরে। একজন ২দিন হলো কোমর ম*চ*কি*য়ে বিছানায় কুঁ*পো কাঁত হয়ে আছেন। আর আপনি নতুন পজিশনে যোগা করে নিজের সম্মান বাঁচাচ্ছেন।”
তেজ দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো। ইলমার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই সে এক দৌড়ে দরজার দিকে ছুটে যেতে যেতে বললো….

—”আপনি নিজের ব্যালেন্স সামলে নিন, আমি নিচে অপেক্ষা করছি আপনার জন্য!”
এই বলে ইলমা নিচে চলে গেলো। তেজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো….
—”ইইইহহ, হয় এই মেয়ে একদিন আমার হাতে মা*রা পরবে নয়তো আমি ম*র*বো এই মেয়ের জন্য।”
পাক্কা আধঘন্টা পর…..
ইলমা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেই আবারও অপেক্ষা করছিলো তেজের নিচে আসার। তেজ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে ডান হাতের আঙুলে বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে। পরণে একটা ক্রিম কালার শার্টের সাথে ওলিভ গ্রিণ কালার প্যন্ট রয়েছে। শার্টের উপরের দু’টো বাটন খোলা থাকায় তেজের জিম করা লোমহীন বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রাখায় হাতের ফুলে ফুলে উঠা শিরাগুলো দেখা যাচ্ছে। ইলমা তেজের উপর থেকে নজর সরিয়ে নিলো।
তেজ নিচে এসে বললো…

—”এখনও বসে আছেন যে? বাহিরে যাবেন জন্য তো সকাল সকাল আমার মাথাটাই পারেন নি খেয়ে ফেলতেন।”
ইলমা বসা থেকে উঠে মুখ বাঁ*কি*য়ে বললো….
—”অন্দরমহল থেকে বেড়িয়ে নিচে আসলেন তো ২সেকেন্ড হলো না গুণে গুণে এতেই এতো তাড়া দিচ্ছেন যে বসা থেকে উঠার সুযোগটুকুও পাচ্ছি না।”
তেজ ওর বাম হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো….
—”আমি রুম থেকে বেড়িয়েছি ১২টা ২২ মিনিটে। এখন গুণে গুণে ১২ টা ২৮ বাজে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে ৩মিনিট। তার মানে আমি পাক্কা ৩ মিনিট হয়ে গিয়েছে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। জানেন কয় সেকেন্ড, কয় ন্যনো সেকেন্ডে ৩মিনিট হয়?”

তেজের এমন কথায় ইলমার ইচ্ছে করছে সোফার পাশে থাকা বিশাল ফুলদানীটা উঠিয়ে যত্নের সহিত ওর মাথা বরাবর ছুঁ*ড়ে মা*র*তে। কিন্তু তা তো করা সম্ভব না। তাই নিজের ইচ্ছেকে নিজের মধ্যেই দাবিয়ে রেখে ইলমা কোনো কথা না বলে হন হন করে বাড়ির বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলো। তেজ ইলমার পিছন পিছন যেতে যেতে দাঁত বের করে হেসে বিরবিরিয়ে বললো….
—”এসেছেন পর থেকে আমাদের মাথা খে*য়ে*ছেন আজগুবি সব কথা বলে। আজ সারাটাদিন আমি আপনার মাথা খা*বো। বি রেডি, মিস.ইলমা।”

তেজ ওর বাইকে করে ইলমাকে নিয়ে ঢাকা শহরের একটি অভিজাত কফিশপে এসেছে একটু আগেই।
প্রায় সময়ই তেজ এখানে আসে কফি পান করার উদ্দেশ্যেই। চারপাশের পরিবেশটা চমৎকার সুন্দর। অনেক নামিদামি মানুষদের আনাগোনা এখানে থাকে সবসময়। তেজের পুরোনো এক বন্ধুর এই কপিশপটা হওয়ায় ইলমাকে এখানে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে কোনো ঝামেলাই হলো না ওর।
তেজের বন্ধু জাকির হাসিমুখে বললো…

—“তোর মুখের উপর কি আর না বলা যায় রে বন্ধু! মেয়েটাকে আগামীকাল থেকেই কাজে জয়েন করতে বলে দিস।”
ইলমা মৃদু হাসি দিয়ে মাথা নিচু করলো। ইলমার চোখে-মুখে তেজের জন্য কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। অতঃপর সেখান থেকে বেরিয়েই তেজ ইলমাকে নিয়ে ওর থাকার জন্য নতুন ছোট পরিসরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকবে এমন একটি বাসা খুঁজতে লাগলো। কফিশপের একেবারে পাশেই বলা চলে দুই রুম বিশিষ্ট রান্নাঘর, দু’টো ওয়াশরুম আর দুই রুমের সাথে দু’টো আলাদা বেলকনি মিলিয়ে ছোট ফ্লাট বাসার সন্ধান ওরা পেয়েও গেলো।
এই বাসার এক রুমে আরেকজন মেয়ে থাকে। সেই মেয়েটা নিজের কাজে বেড়িয়ে গিয়েছে সকালেই। তাই তার সাইডের রুমের দরজায় তালা দেওয়া রয়েছে। আর ইলমার জন্য অপরসাইডের রুমের দরজার তালা এই বাসার মালিক খুলে তেজ আর ইলমাকে দেখিয়ে দিয়েছে। বাসার ভিতরটা অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ায় ইলমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তেজ বাসার মালিকের সাথে কথা বলে পাশের রুমে থাকা সেই মেয়ের সম্পর্কে টুকটাক খোঁজ নিলো। আর ডিটেইলস মেয়েটা বাসায় ফিরলে তার সাথেই সরাসরি কথা বলে জেনে নিতে বললেন মালিক।
তেজ ইলমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—”বাসা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে এখনও বলার সুযোগ আছে আপনার বলুন।”
ইলমা বললো…
—“উহুহ, কোনো অভিযোগ নেই আমার। এইখানে একজন মানুষ খুব সুন্দর ভাবে থাকতে পারবে। তাই আমি এখানেই থাকবো। আপনি ফাইনাল করে দিন।”
তেজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বাসার মালিককে আগামী ৬মাসের বাসা ভাড়া ও যাবতীয় বিল যা লাগবে তা মিটিয়ে দিলো। অতঃপর বাসার মালিক ইলমাকে বাসার চাবি দিয়ে চলে গেলেন। ইলমা বললো….
—”আপনার হিসাবের খাতায় আমার নামে অনেক টাকা জমলো। সব পরিশোধ করতে আমার কয় বছর যে লেগে যাবে আল্লাহ মালুম। দোয়া করেন যেনো ঋণটা পরিশোধ করার পরেই মা*রা যাই। আর তার আগেই যদি পটল তুলি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।”
তেজ মাথা দুলিয়ে হাসলো কেবল। অতঃপর বললো….

—”আপনার রুম তো পুরোই ফাঁকা। এখনও অনেক খরচ করা বাকি আমার। তাই এই হিসাব-নিকাশ এর খাতাটা পরেই খোলা যাবে কোনো এক সময় না হয়!”
ইলমা প্রতিত্তুরে বললো….
—”আজ আমি যেখানে নিয়ে যেতে বলবো সেখানে নিয়ে যেতে হবে আপনাকে। আমার অবিবাহিত জীবনের নতুন ছোট্ট সংসারকে সাজাতে যাবতীয় জিনিস যেমনঃ খাট, টেবিল-চেয়ার, রাইসকুকার, গ্যসের চুলা, একটা মিনি ফ্রিজ, হাঁড়ি-পাতিল, প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি সেখান থেকেই কিনে দিতে হবে আপনার।”
তেজ ভ্রু উঁচিয়ে বললো….

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৩ (২)

—”নিতে তো যাবেন নিশ্চয়ই সেই জায়গায় যেখান থেকে এর আগে জামা-কাপড়ও কিনতে চেয়েছিলেন!”
—”হুম সেখানেই।”
তেজ শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে হাত এগিয়ে ইলমাকে ইশারায় সামনে এগোতে বললো। ইলমা হাসিমুখে বাসা থেকে বের হলো।

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৩ (৪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here