আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৭ (২)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৭ (২)
অরাত্রিকা রহমান

অন্যদিকে…
চৌধুরী বাড়ির দোতালায় রায়ানের রুমের একদম পাশের রুমটাতে মিরায়া। ঘরটা আধো অন্ধকার। জানালার পাশে একটা বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে মিরায়া।
চোখে হালকা ক্লান্তি। সারাদিনের চাপা আনন্দে শরীরটা আজ হালকা গরম গরম লাগছে।
জ্বর ঠিক নেই—তবু শরীর কেমন যেন ভেতরে ভেতরে কাঁপছে।
খেতে ইচ্ছে করেনি। নিচে যাবার মতো শক্তি পাচ্ছিল না।
তাই আজ সে ডাইনিংয়ে নামেনি। তাকে খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল—এটাই স্বাভাবিক। তবে সে নামেনি ।
এবং সে জানেও না, নিচে সেই মানুষটা এসে গিয়েছে, যাকে ১০ বছর আগে কাগজে কলমে তার জীবনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।

রাত – ১২:৪০ মিনিট
ঘুম আসছে না।
মাথাটা ভার ভার লাগছে। মুখ শুকিয়ে আসছে। পেট কেমন যেন কুঁকড়ে আসছে। ক্ষুধা পেয়েছে।
মিরায়া ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
চোখে হালকা ক্লান্তি, হাতে একটা পাতলা শাল। পা টিপে টিপে নিচে নামে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফ্রিজের সামনে – রান্নাঘর
চৌধুরী বাড়ির মেইন কিচেন আধো আলোয় ভরা।
ফ্রিজটা খুলে দেখে– এক পাশের রেকে রাখা আছে ডাল, রোস্ট, ডিম ভুনা। একটা প্লেট টেনে নেয়, পাশে রাখা রাইস কুকারে হাতে গরম ভাত আছে।
সাবধানে নিয়ে মাইক্রোওয়েভে গরম করে।
অল্প ভাত মিরায়া নিজের প্লেটে তুলে বসে পড়ে ডাইনিং টেবিলের কোণে।
একটা নিঃশব্দ রাত…
সবাই ঘুমিয়ে, আর সে চুপচাপ বসে খাচ্ছে একা।
তবু শান্তি লাগছে তার—পেটের ক্ষুধা কমছে, মনটাও একটু হালকা হচ্ছে।
সে জানে না, উপরের ঠিক পাশের রুমেই, দরজার ওপাশে একজোড়া চোখ আজ ঘুমাতে পারেনি, শুধু একজন ভেজা মেয়ের রূপ আর নামহীন টান তাকে ঘুমে ভাসতে দিচ্ছে না, আর সে নাম না জানা সরসী সে নিজেই।
চৌধুরী ভবন, গভীর রাত। একই সময় – ১২:৪৭
ঘুম আসছে না। রায়ান বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছিল।
শরীর ক্লান্ত হলেও মন ছিল অদ্ভুত রকমের ব্যস্ত। তার মাথার ভেতরে যেন একটি দৃশ্য লুপ হয়ে বারবার ফিরে আসছিল।

বৃষ্টির নিচে ঘূর্ণি ঘূর্ণি ঘুরে বেড়ানো এক মেয়ে।
ভেজা কাঁধ, এলোমেলো চুল, খোলা চোখ, আর… ঠোঁটের কোণে এক অসহ্য সুন্দর হাসি। রায়ান আজকে সকালেও বুঝতে পারেনি, সে কী দেখেছে।
“কে ছিল সে?
পাগল? শিল্প? শাস্তি? নাকি… মুক্তি?”
রায়ানের কণ্ঠে ফিসফিস ছিল না, ছিল এক ধরণের পোড়া আকুলতা।
হঠাৎ তার গলা শুকিয়ে আসে।
পানি খেতে ইচ্ছে করে, প্রচণ্ডভাবে।
রুমের পানির জগ খালি।
আস্তে করে দরজার লক খুলে নিচে নামে।

রান্নাঘর
ঘরটা প্রায় অন্ধকার।
শুধু ফ্রিজের আলো আর এক কোণে রাখা ছোট টেবিল ল্যাম্প।
রায়ান প্রথমে বুঝতে পারেনি কেউ সেখানে আছে।
তার পা থেমে যায়। কিছু একটা আলো আটকে পড়েছে তার চোখে।
একটা মেয়ে টেবিলের এক কোণে বসে আছে।
সাদা ঘরের পোশাক, মাথায় হালকা ওড়না টানা, আর হাতের পাতায় ভাত।
সে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। চোখে ক্লান্তি, মুখে শান্তি।
রায়ান প্রথমে তাকিয়ে বুঝতেই পারেনি—ওই মেয়েটিই… সেই রেনড্রপ।

তার মুখের কোণ ঝাপসা, তবু ঠোঁটের সেই মিষ্টি তিলটা, অল্প আলোতে জলজল করছে শান্ত বাদামি চোখ জোড়া—
রায়ার বিস্মিত হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে মিরায়ার খাওয়া দেখছে। হঠাৎই তার মনে পরল- এটা তো চৌধুরী মেনশন এখানে তার হৃদ পাখি কিভাবে আসবে। তবে কি সে ভুল দেখছে।
এমন ভেবে রায়ান নিচে তাকিয়ে মাথা না সূচক নাড়ায় কয়েকবার এবং পরবর্তীতে আবার খেতে থাকা অপরূপ সুন্দরীর দিকে তাকিয়ে দেখে। সে তখন একইভাবে খেয়ে যাচ্ছে।
-“একটা মানুষকে খেতে দেখার দৃশ্য কি এত স্নিগ্ধ হয়? ও কি সত্যিই আমার সকালে দেখা অপ্সরা?”
রায়ান হঠাৎ একটু কেঁপে উঠে পেছনে সরে যায়, যেন নিজের হৃদয়ের শব্দ নিজেই শুনে ফেলেছে। তার ভিতরে কিছু একটা গুঞ্জন তুলল। শরীরো যেন খুব অদ্ভুত আবদার জানাচ্ছে তাকে ছুঁয়ে দেখার, কাছে টেনে নেওয়ার।

সে তাকিয়ে আছে খুব ইচ্ছা নিয়ে যেন পারলে এখনি নিজের ভিতর নিয়ে নেবে মিরায়াকে। তার খুব করে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে তার স্বপ্নের পরীকে।
যেন কেউ তার কামনার ফুটন্ত রক্তের মধ্যে পানি ঢেলে দিচ্ছে। আগুনের মধ্যে আলো জ্বলছে।
> এই মেয়েটি একই মানুষ—যাকে সে বৃষ্টিতে দেখেছিল।
কিন্তু তখন সে ছিল এক রূপক, আর এখন সে এক বাস্তব।
> মুখে ক্লান্তি, কিন্তু সেই মুখে একটা ভয়হীন নিরবতা।
যেন পৃথিবীর সব জোর সে হারিয়েছে, তবু কিছুই ছাড়েনি।
তার চোখে আজ আর ঘূর্ণি নেই, আছে মায়া।
তার হালকা গোলাপি ঠোঁটে আর হাসি নেই, তবু সেই নীরব ঠোঁট কেমন যেন কাঁপছে—একটা নিঃশব্দ মোহ বয়ে বেড়াচ্ছে।

> তার ওড়নার কোণে আলো পড়ে এক ধরণের সফেদ পবিত্রতা তৈরি করছে। সে খাচ্ছে—ভাতের এক চামচ যেন দীর্ঘ অভ্যাসে নয়, এক ধরণের অনিচ্ছার সাথে গিলে নিচ্ছে।
> এবং রায়ান নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।
এ মেয়েকে দেখে কারো মনে কামনার আগুন জ্বলে উঠবে—সে স্বীকার করে। কিন্তু সেই আগুনে আজ একটা অদ্ভুত জলের রেখা এসে ধাক্কা মারছে। যেন এই মেয়েটিকে ছুঁয়ে ফেলার তীব্র ইচ্ছা, তার সুখ যন্ত্রনার কারণ হওয়া জরুরি।
> এই মেয়ে শুধু “সুন্দর” না। এই মেয়ে – অসহ্যকর সুন্দর।
তবে রায়ান এসব চিন্তা বাদ দিয়ে মাথা ঝাঁকায়। রায়ান চট জলদি ফিরে যায়।
কিন্তু কোনো এক অলক্ষ্যে – মিরায়ার হাত থেমে যায় এক চামচ ভাতের আগে।
সেও জানে না কেন। মৃদু আওয়াজ করে-
“কে..কে ওখানে?”
ততক্ষণে রায়ান নিজের রুমে চলে যাওয়ার সে শুনতে পেল না মিরায়ার ডাক।

রায়ান উপরে এসে রুমের দরজা লক করে ভাবতে থাকে- ” আমি কি ওকে নিয়ে এত বেশি ভাবছি যে এখন আমি কল্পনা করছি তাকে আমার বাড়িতে? হ্যালুসিনেশন হচ্ছে আমার?— কল্পনা না বাস্তব?
কাঁধে ভার, চোখে অস্থিরতা। কিন্তু মাথায় তখনো ভাসছে সেই রান্নাঘরের দৃশ্যটা। একটা মেয়ে—চুপচাপ এক কোণে বসে খাচ্ছিল। তবে… এখন মনে হচ্ছে, সবটাই কি কল্পনা?
“না… নাহ্, ওখানে কেউ ছিল না।
আমি হয়তো সকালবেলার বৃষ্টিভেজা মেয়েটাকে এত বেশি ভাবছি… যে কল্পনাতেই রান্নাঘরে বসিয়ে ফেলেছি…”
তার বুকের ভেতর এক অদ্ভুত চাপ অনুভূত হয়।
হয়তো একটু ভয়—এই অনুভূতিটা যদি সত্যিই কেবল কল্পনা হয়? কিন্তু কিছু একটা চঞ্চল করে তুলছে তাকে।
রায়ান আবার নিচে নামে। আস্তে পা ফেলে রান্নাঘরে আসে। তবে এবার—ফ্রিজের আলোয় কেউ নেই।
টেবিল খালি, প্লেট নেই, চামচ নেই, এমনকি কোনো গন্ধও নেই যেন কিছু রান্না হয়েছিল।
সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, নিঃশব্দে।
তারপর ফিসফিস করে নিজেকেই প্রশ্ন করে—
> “সত্যিই কল্পনা করছিলাম… এতটাই কি গভীরে গিয়েছি আমি?”
একটা দীর্ঘশ্বাস তার ঠোঁট ছুঁয়ে বেরিয়ে আসে।

মিরায়া খাওয়া শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে নিজের রুমে ঘুমোতে চলে যায়। বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মিরায়া ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়। তবে পাশের রুমে থাকা তার আইনগত স্বামী নিজের স্ত্রীকেই অন্য মেয়ে হিসেবে ভাবতে ভাবতে এক ঘুমহীন রাত পার করে।

সকাল সাতটা পঁচিশ
চৌধুরী ভবনের সকালটা যেন আজ একটু বেশি হালকা।
রোদের গায়ে ছিল না কোনো তেজ—বরং যেন মোলায়েম এক ছোঁয়া।
সবার ঘুম ভাঙে ধীরে ধীরে।
রায়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। সারারাত একফোঁটা ঘুম হয়নি তার নাম না জানা প্রিয়সীর চক্করে। তার হাতে এক কাপ কফি, চোখে কিছু অনাহুত চিন্তা।
আজকের সকালটা অন্যরকম। আজ মায়ের কাছ থেকে ডিভোর্স পেপারে সই করিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জীবনের এক “অচেনা” সম্পর্ক আজ শেষ হবে।

নাস্তার টেবিলে সকলকে নাস্তার জন্য ডাকা হলো।
রুদ্র এখনো নিচে নামেনি ঘুমাচ্ছে সম্ভবত। রায়হান চৌধুরী ব্যবসার কাজে কাল রাতেই চট্টগ্রাম গেছেন।
রামিলা চৌধুরী চুপচাপ, যেমনটা তার স্বভাব। রায়ানও খুব একটা কিছু বলছে না, তবে সে সুযোগ খুঁজছে কখন বলবে সইয়ের কথা।
নাস্তা শেষ হতেই সে বলে,
-“আম্মু, আমি অফিসে যাবো এক ঘণ্টার মধ্যে। ওর থেকে সইটা করে দাও, আমি নিজে সাইন করে দিয়েছি। কাগজটা তোমার কাছেই থাক।”
রামিলা চৌধুরী চুপ থেকে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বলেন-
“রায়ান বিয়েটা ছেলে খেলা নয়। আমি তোর আব্বুকে তোর এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানিয়েছি। তিনি মোটেও খুশি নন। আমরা দুজনেই চাই তুই আরো একটু ভেবে দেখ।”
রায়ান স্বাভাবিক ভাবেই –
“আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভেবেই নিয়েছি। তা পরিবর্তন হবে না। আশা করি তোমরা দুজন আমার সিদ্ধান্তের সম্মান জানাবে অন্তত্য পক্ষে এখন। কারণ এখন আর আমি ছোট নেই।”
ছেলেকে বোঝাতে ব্যর্থ রামিলা চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-
“ঠিক আছে, তুই যা চাইছিস তাই হক। একটু দাঁড়া আমি মিরাকে ডেকে দিচ্ছি। ও নিচে আসলে সাইন করিয়ে তোকে পেপারস দিয়ে দেব এখনি।”

১০ বছর আগে কাবিননামায় রায়ান তার বাচ্চা বউয়ের নাম পড়েছিল যা সময়ের সাথে সাথেই তার স্মৃতি থেকে লোপ পেয়েছে। আজ আবার মায়ের কাছ থেকে সেই নামটা শুনলো- “মিরা!” (মিরায়া)।
রামিলা চৌধুরী সুউচ্চ গলায় – “মিরা.. মিরা মা..!”
দোতালা থেকে উচ্চ আওয়াজে উত্তর আসে-
“জ্বি, মামণি?”
রায়ান প্রথম মিরায়ার আওয়াজ শুনে আপ্লুত। কি মিষ্টি সেই স্বর। তবে সেই মিষ্টত্ব তার মুখে প্রকাশ পেল না।
রামিলা চৌধুরী- “একটু কাজ আছে নিচে আয় তো মা।”
মিরায়া-“আসছি মামণি।”

উপরে, নিজের ঘর থেকে বের হয় মিরায়া। আজকের দিনটা তার স্বপ্নের প্রথম দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে সে।
মিরায়া আজ পরেছে স্কাই ব্লু কালারের কুর্তি, আর কাঁধে ভার্সিটির ব্যাগ। পায়ে নুপুর, হাতে সাদা চুড়ি,
চুলগুলো খোলা—নরম ঢেউ খেলানো।
কানে ছোট দুল। সাজগোজ প্রায় নেই বললেই চলে।
“তবে সে এতটাই সুন্দর, যেন সাজটাই তার অপমান।”
ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে—একটা হালকা ছন্দে যেন।

সেই মুহূর্তে…
রায়ান, যেই না মাথা ঘুরিয়ে তাকায়,
ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে সেই অপরূপ সুন্দরী নারী যার প্রতি সে আসক্ত হয়ে পরেছে প্রথম ঝলকে।
এক মুহূর্ত—দুই মুহুর্ত শুধু কিছু মুহূর্তেই যেন তার নিঃশ্বাস আটকে যায়।
“এই মেয়েটা…এই চোখ, এই হাঁসি…
যাকে আমি সেদিন বৃষ্টিতে দেখেছিলাম…
আর কল্পনায় হাজারবার চিয়েছি—
এই… মেয়েটাই, মিরা, আমার বিয়ে করা বউ?”
রায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাকে দেখে মিরাও এক ঝলক তাকিয়ে থাকে। বাড়িতে নতুন মুখের আবির্ভাব কখন হলো বুঝে উঠতে পারছে না। তবে
সে চোখ সরিয়ে নেয় না, দেখেই চলেছে যেন সে চেনে তাকে।

রায়ানের চোখ নিচে গিয়ে আটকে যায়…নুপুরের আওয়াজে। তারপর উঠে যায় চুলের দুলুনিতে…
তারপর চোখ, ঠোঁট, মুখ,গলা অবধি এসে দাঁড়ায়।
তার ভেতরটা বলে,
“আরে না! এই মেয়েটা এত সুন্দর, এত স্নিগ্ধ…
ও আমার বউ? আমার নিজের?”
পরবর্তীতে আবার নিজেই মুখে স্নিগ্ধ হাসি মুখে রেখে মনে মনে বলে –
“ধুর! কি সব বলছি। বউ অন্যের হবে কেমনে আমারি তো। আমার বউ জান, আমার হৃদপাখি।”
“…মানে… আমি কাল প্রথম দেখায় যার প্রেমে পরে খুঁজে বেড়ালাম। এখন… হঠাৎই আমার বউ হয়ে হাজির?!?তার মানে এই দাঁড়ায় কাল রাতেও আমি ভুল দেখিনি।আমার হৃদপাখি- আমার বউকেই দেখেছি।”
তার ভেতরের অনুভূতিটা এতটাই বিশ্রী মিষ্টি হয়ে পড়ে,
সে নিজের মনে হাসে । হঠাৎই তার ডিভোর্স এর কথা মাথায় আসে। রায়ান নিজের মনে মনে-—
“না না… এতো সুন্দর স্ত্রীর সাথে কার ডিভোর্স হয়? আমি আমার প্রথম প্রেম কে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি আরো দশ বছর আগে। না অসম্ভব! আমার বউ শুরু থেকে শেষ অব্দি আমার থাকবে।”
” সুতরাং, বউ তুমি আমার। তোমাকে আমি মুক্তি দিচ্ছি না। এই জন্মে অন্তত নয়।”
রায়ান নিজের মনে যেন সংসার বেঁধে ফেলেছে মিরায়াকে নিয়ে। মুখ হাসি দেখা না গেলেও, মন যেন শরীরে নেই- উড়ছে ।

রায়ান আর রামিলা চৌধুরী যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন
মিরা সেদিকে এগিয়ে আসছে। ব্যাগ কাঁধে, চোখে উজ্জ্বলতা। তবে তার চোখ যেন পরছে না রায়ানের থেকে।
মিরায়া নিচে নেমেই সোজা রামিলা চৌধুরীর সামনে এসে দাড়িয়ে বলে-
“Good morning, মামণি। কিছু বলবে?
রামিলা:”good morning, মা। কিছু তো বলবি। আগে এটা বল এত সকালে রেডি হয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
মিরায়া উচ্ছসিত কন্ঠে বলল-
“আমি ভর্তির কাজটা শেষ করতে যাচ্ছি। যদিও সময় আছে এখনো তবে আমি আর দেরি করতে চাই না। আজই ভর্তি হয়ে ঢাবিয়ান হয়ে যাব।”
মিরায়ার কথা গুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিল রায়ান। আশ্চর্যতা, বিস্ময়তার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে সে মিরায়াকে দেখে। তারা সামনেই তার বউ, সেই প্রিয় মুখটা যা একবার দেখে তার আবার দেখার তীব্র ইচ্ছা জেগেছে মনে।
রায়ানের এই সব চিন্তা যেন এক পলকে উধাও হলো মিরায়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কথা শুনে। সে আনমনে বলল-

“ঢাবিয়ান?”
মানে তার সেই পিচ্চি বউটা এখন ভার্সিটিতে পড়তে যাচ্ছে তার আবার ঢাবিতে। খুব সম্ভবত তার মনে এক গৌরবের সৃষ্টি হলো জেনে যে- তার বউ ঢাবিতে পড়ার মতো মেধা রাখে।
রায়ানের প্রশ্ন সূচক প্রতিক্রিয়ায় মিরায়া আবার ফিরে তাকায় রায়ানের দিকে। এবার যেন দুই জোড়া চোখ এক হলো সম্পূর্ণ ভাবে। রায়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিরায়ার দিকে মিরায়াও ঠিক তাই।
দুজনের তাকানোর সময়কাল একটু দীর্ঘ হতেই রামিলা হালকা কাশি দিয়ে তাদের মনোযোগ ভঙ্গ করে বলেন-
“মিরা তোদের আগে কখনো দেখা হয়নি তাই হয়তো চিনতে পারছিস না। ও আমার বড়ো ছেলে রায়ান কাল রাতেই আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে।”

মিরায়া রায়ানের কথা শুনে এক রাশ উত্তেজনায় মুখে হাঁসি নিয়ে রায়ানের দিকে তাকাতেই..রায়ান মায়ের মুখে তার পরিচিতি দেওয়ার পর অত্যন্ত উৎসুক মনে মিরায়ার দিকে তাকায়-
মনে তার এক প্রশ্ন-
“এখন মিরায়া প্রথম বারের মতো তার সাথে কথা বলবে তার উদ্দেশ্যে কিছু বলবে। কি বলবে?”
মিরায়া রায়ানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিরায়া নীরবতা ভেঙে সজোরে বলে উঠলো-
” ওহ! এই তাহলে দ্যা গ্রেট রায়ান চৌধুরী? ফাইনালি দেখা পেয়েই গেলাম।
রায়ানের দিকে মুখ করে-
“আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন রায়ান ভাইয়া?”

রায়ান-” আসতাগফিরুল্লা।”
রায়ানের মিরায়ার মুখে প্রথম দিনেই ভাইয়া ডাক শুনে কাশি উঠে যায়।
মিরায়া আর রামিলা চৌধুরী হকচকিয়ে উঠল।
মিরায়া- “ও মা, হঠাৎ কি হলো আপনার রায়ান ভাইয়া? পানি খাবেন? পানি এনে দিব?”
রায়ান- ” নাউজুবিল্লা।”
বিষ এনেদে ছেমরি! সব আশায় পানি ঢেলে দিয়ে এখন পানি অফার করছে (মনে মনে)।”
রায়ানের কাশির গতি কমে এলে সে নিজেকে শান্ত করে মিরায়ার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়। কারণ না বুঝলেও, মিরায়া রায়ানের তাকানোতে রাগের ঝলক ঠিকই দেখতে পায়।
মিরায়া রায়ানের চোখের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে না পেরে রামিলা চৌধুরীর দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করল-

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৭

“মা.. মামণি, তুমি আমাকে ডাকছিলে কেন কারণ টা তো বললে না।”
রামিলা চৌধুরী হাতে থাকা ডিভোর্স পেপার টা মিরায়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান পেপার টা তার মায়ের হাত থেকে নিয়ে নিল ছৌ মেরে এবং নিজের পিছনে লুকিয়ে ফেলল।
রায়ানের এমন আচরণে মিরায়া ও রামিল চৌধুরী দুজনই আশ্চর্য হয়। তারা একই সাথে রায়ানের দিকে তাকালে রায়ান তাদের দুজনের চোখে পর পর তাকিয়ে তাদের প্রশ্ন সূচক চাহুনি দেখে সে নিজের এহেন কাজের মন গড় কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করতে যাবে…
এমন সময় হঠাৎ….

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here