আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯ (২)
অরাত্রিকা রহমান
সোরায়া, যে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
তার চোখের সামনে প্রথমবারের মতো স্পষ্ট ভেসে উঠেছে মাহির—
উচ্চতা ছ’ফুটের কাছাকাছি, চওড়া কাঁধ, ঘাম ভেজা শার্ট শরীরে আঁকড়ে বসে আছে।
চুলগুলো এলোমেলো, তবু কেমন যেন মানিয়ে গেছে সেই মুহূর্তের সঙ্গে।
মাহিরের প্রতিটা মুভমেন্ট ছিল নিখুঁত—
একটা ঘুষি এড়িয়ে পেছন থেকে ধাক্কা, আবার আরেকজনকে শক্ত হাতে চেপে ধরা…
চারপাশের লোকজন হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কেউ কেউ ফিসফিস করে বলছিল—
“বাহ! একাই তিনজনের সঙ্গে লড়ছে!”
“এই ছেলে যে কী সাহসী!”
কিছুক্ষণ পরেই ওই তিনজন ছেলেই দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ভিড়ের মধ্যে হাততালির শব্দ উঠলো।
কেউ এগিয়ে এসে বললো,
“ভাই, আজকাল আপনার মতো মানুষ কোথায় পাওয়া যায়!”
আরেকজন হেসে বললো,
“আপনি না থাকলে ওই বুড়ো মানুষটার অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। সত্যি, আপনাকে স্যালুট।”
মাহির কেবল হালকা হেসে বৃদ্ধ দম্পতি দাঁড়াতে সাহায্য করলো।
তার কণ্ঠে অদ্ভুত শান্তি—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমি যা করেছি, তা করা উচিত ছিল। অন্যায় দেখেও যদি চুপ থাকি, তবে মানুষ হয়ে লাভ কী?”
সোরায়ার বুকের ভেতর হঠাৎ করেই কেমন যেন ঝড় বয়ে গেল।
প্রথমবারের মতো তার চোখে এক অদ্ভুত আলো ফুটলো।
“এমন মানুষও আছে? অন্যায়ের সামনে দাঁড়ানোর মতো সাহসী… আর কতটা সুন্দর দেখতে! যেন সিনেমার হিরো।”
সে একটু এগিয়ে গিয়েছিল সামনে যাওয়ার জন্য—
মনের ভেতর তীব্র ইচ্ছা হচ্ছিল মাহিরকে ধন্যবাদ দেওয়ার।
কিন্তু চারপাশে ভিড় এমন ঘিরে ধরেছিল যে, সামনে যাওয়া অসম্ভব হয়ে গেল।
তাকে ঠেলাঠেলি করে লোকজন মাহিরকে ঘিরে ধন্যবাদ জানাচ্ছিল।
তারপর ধীরে ধীরে সবাই নিজেদের কাজে ফিরে গেল।
রাস্তা ফাঁকা হলো।
সোরায়া চোখ মেলে চারদিকে তাকালো— কিন্তু মাহির নেই।
এক মুহূর্ত আগে যে মানুষটা চারপাশ আলোকিত করে রেখেছিল, সে যেন বাতাসের মতো মিলিয়ে গেছে।
তার ঠোঁট কেঁপে উঠলো, মৃদু স্বরে—
“একবার অন্তত ধন্যবাদ দিতে পারলে ভালো হতো…”
চোখের ভেতর অদ্ভুত এক শূন্যতা জমলো।
যেন একটা অচেনা আকর্ষণ হঠাৎ করেই ভেঙে পড়লো তার ভেতরে।
ঠিক তখনই রিকশাওয়ালা এগিয়ে এসে ডাক দিল—
“আপা, রাস্তা তো একদম পরিষ্কার। উঠেন, দেরি করলে কলেজে লেট হয়ে যাবে।”
সোরায়া চমকে বাস্তবে ফিরে এলো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনিচ্ছায় রিকশায় উঠে বসল।
রিকশায় বসে সোরায়া কলেজের পথে যাচ্ছিল, কিন্তু মনটা যেন কোথাও আটকে আছে। চারপাশে মানুষের ভিড়, গাড়ির হর্ন, দোকানের ডাকে সাড়া—এসব কিছুই তার কানে আসছে না। মাথার ভেতর বারবার ভেসে উঠছে সেই দৃশ্য—একজন ছেলে তিনজনের সাথে লড়ছে, অথচ তার মুখে অদ্ভুত শান্ত একটা হাসি।
“ওর চোখের ভেতরটা কী অদ্ভুত ছিল! রাগও ছিল, সাহসও ছিল, তবু যেন একটা মায়াও লুকিয়ে ছিল…”
রিকশা কলেজের গেটে এসে থামলো। সোরায়া নামলো ধীরে, যেন পা চলতে চাইছে না। ক্লাসে ঢুকে বেঞ্চে বসে বই বের করলো, কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টানোর পরও শব্দগুলো ধরা পড়ছিল না চোখে। সহপাঠীরা কেউ হাসছিল, কেউ গল্প করছিল, কিন্তু সে কেমন যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেল।
কলম দিয়ে কাগজে অজান্তেই আঁকিবুঁকি করছিল। একসময় বুঝলো, সে একটা চোখ এঁকেছে—ঠিক যেমন মাহিরের চোখে শক্ত অথচ নরম দৃষ্টি ছিল। আঁকাটা দেখে নিজেই হেসে ফেললো, তারপর তাড়াহুড়ো করে খাতা বন্ধ করে দিল।
তার ভেতরে যেন একটা দ্বন্দ্ব চলছিল—
“এভাবে কাকে নিয়ে এত ভাবছি আমি? আমি তো তার নামও জানি না… হয়তো কখনো আর দেখাও হবে না। তবুও কেন মনে হচ্ছে, ওকে আরেকবার দেখতেই হবে?”
ঘণ্টা বেজে উঠলো। সোরায়া খেয়াল করলো স্যারের পড়া শেষ পর্যন্ত কানে ঢুকেইনি। পাশে বসা বান্ধবী জুঁই মজা করে বললো—
“কী রে? এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? কারো প্রেমে পড়েছিস নাকি?”
সোরায়া হেসে উড়িয়ে দিলেও ভেতরে হঠাৎ কেমন ধাক্কা খেল।
“প্রেম? না না… এভাবে হুট করে কি প্রেম হয়? …কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে ছেলেটা অন্যরকম। আজকের মতো ঘটনা তো সিনেমায়ই হয়।”
জুঁই: “ছেলে? কোন ছেলে? ওহ্ এই ব্যাপার তাই তো বলি আজ তোর মনোযোগ কই। আচ্ছা বল না কোন ছেলে?”
সোরায়া তার বান্ধবী কে সব খুলে বলে।
মাহিরের চরিত্রটা তার মনে গেঁথে গেছে একেবারে ভিন্নভাবে।
এমন একজন, যে শক্ত শরীর আর সাহসের জোরে অন্যায়ের সামনে দাঁড়ায়।
তবু অহংকার নেই, বরং কাজটা করার পর খুব সহজভাবে বলে—
“এটা করা উচিত ছিল।”
সোরায়ার চোখের সামনে আবার ভেসে উঠলো মাহিরের লম্বা চেহারা, পরিপাটি শার্ট, হালকা দাড়ি, আর সেই হাসি।
অদ্ভুতভাবে মনে হলো—যেন ভিড়ের ভেতর থেকে শুধু তাকেই আলাদা করে চোখে পড়ে।
ক্লাসের পড়া শেষ হলেও সোরায়া যেন নিজের ভেতরই ডুবে থাকলো।
বুকের ভেতরে ছোট্ট একটা আশা গোপনে জন্ম নিলো—
“হয়তো আবার কোথাও দেখা হবে…”
ক্লাসের শেষে স্যার যাওয়ার পর সবাই ক্লাপষস থেকে বের ডহয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে জুঁই সোরায়াকে খেপায় –
“বান্ধবী আমার রাস্তায় নাগড় জুটিয়ে এসেছে। নাগড়ের নামও জানে না।”
সোরায়া-“উফ্! তুই চুপ করবি? তোকে বলাই ভুল হয়েছে আমরা।”
জুঁই- “দোস্ত যেভাবে বর্ণণা দিলি। মনে তো হলো এক দেখাতেই পা থেকে মাথা অবদি স্কেন করে নিয়েছিস।”
জুঁই কৌতুহলে সোরায়াকে এক কাঁধে একটু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল-
” আচ্ছা দোস্ত, তোর নাগড় দেখতে কেমন ছিল রে?”
সোরায়া জুঁইয়ের কথায় বিরক্ত হলেও মাহিরের কথা উঠতেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
সোরায়া জুঁইয়ের ধাক্কায় সামান্য সামনে ঝুঁকে যায় পরে নিজেকে সামলে মুখে দুষ্টু একটা হাসি নিয়ে পিছনের দিকে ফিরে সজোরে দুই লাইন গান গায়-
“দেখিতে সোনার নাগড়
গো…..
চান্দেরো সমান।”
এই বলে সে সামনের দিকে ফিরে দৌড় দেয় হাসতে হাসতে। পিছন পিছন জুঁই ও দৌড়ায়।
মেইনরোডে নীরবতায় ঘেরা গাড়ি চলছে।
এক পর্যায়ে রায়ান মিরায়া ঢাবির ক্যাম্পাসে পৌছায়। ক্যাম্পাসে পৌঁছে মিরায়া সিট বেল্টটা খুলতে থাকে আর রায়ান নিজের গাড়ি থেকে বের হয়ে মিরায়ার জন্য গাড়ির দরজাটা খুলে দিল।
রায়ানের এমন আচরণে মিরায়ার মনে শান্ত হাওয়া বয়ে গেল। মিরায়া গাড়ি থেকে বের হয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে রায়হানকে বলল-
“ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি এখন আপনার কাছে যেতে পারেন। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে আপনার।”
রায়ান মিরায়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেন এত দেখেও তৃপ্তি পাচ্ছে না সে। সে হালকা দৃঢ় কন্ঠে বলল-
“শোন ভর্তির কাজ শেষ করবে আগে আর কোনো সমস্যা হলে বা সব কাজ শেষ হয়ে গেলে আমাকে কল করবে, ঠিক আছে?”
মিরায়া আশ্চর্য হয়ে-
“কেন?”
রায়ান- “কেন এর উত্তর তোমার জানতে হবে না। যা বলেছি তাই করবে, আমি বলেছি তাই, বুঝতে পেরেছ?”
মিরায়া কথা না বাড়িয়ে শ্বাস নিয়ে বলল-
“হুঁ পেরেছি।”
রায়ান- “গুড গার্ল।”
মিরায়া- “কিন্তু কিভাবে কল দিব আপনার সাথে আজ দেখা আমার কাছে আপনার নাম্বার নেই।”
রায়ান মনে মনে- “ওহ্ শিট! বউয়ের নাম্বারই নেওয়া হয়নি আমার ।”
রায়ান নিজের ফোন বের করে বলল- “তোমার নাম্বার বলো।”
মিরায়া কোনো ভাবনা ও প্রশ্ন ছাড়াই তার নাম্বার বলে। এবং সাথে সাথেই একটা কল ঢুকে। মিরায়া ব্যাগ থেকে তার ফোনটা বের করে দেখে একটা আন-নোউন নাম্বার।
রায়ান- “দ্যেটস মি। সেভ করে রাখ। এই নাম্বার এ কল দিলেই হবে।”
মিরায়া- “ওকে।”
রায়ান- “ঠিক আছে , সময় হয়ে গেছে ভিতরে যাও। ঠিক ভাবে ভর্তির সব কাজ শেষ করবে । সাবধানে থাকবে আর যেটা বললাম – কোনো সমস্যা হলে কিছু না ভেবে আমাকে কল দেবে। আর হ্যাঁ, একা বাড়ি যাবে না । সব শেষে আমাকে কল দেবে আমি নিতে আসবো। এখন যাও।”
মিরায়া রায়ানের কথা গুলো মনে দিয়ে শুনে হকচকিয়ে উঠে রায়ানকে বলল-
” আরে না না। আমাকে নিয়ে আসতে হবে না কষ্ট করে। আমি একাই চলে যেতে পারবো। আপনি চিন্তা করবেন না কোনো সমস্যা হলে কল দেব আমি। আপনি আপনার কাজে মন দিন।”
রায়ান একটু রাগি গলায় মিরায়ার দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে বলল-
“তোমার সংক্রান্ত যেকোনো কাজ আমার কাজ, যে
কোনো সমস্যা আমার সমস্যা, যেকোনো চিন্তা আমার চিন্তা।
তাই বলছি, বেশি বোঝা ছেড়ে, এখন ভিতরে যাও। আমি নিতে আসবো।
রায়ান আরো মালায়ালম কাছে গিয়ে বলল-
“কল না দিলে এমনিই আসবো আর এসে তোমাকে না পেলে ব্যপারটা মোটেও ভালো হবে না হৃদপাখি । মাইন্ড ইট।”
মিরায়ার গলা কেমন যেন হঠাৎ শুকিয়ে গেলো ভয়ে। সে রায়ানের দিকে মায়া মায়া চোখে তাকালো আর রায়ান মিরায়ার তাকানোতে দুর্বল হয়ে গেল। রায়ানের দৃঢ় পা দুর্বল হয়ে হালকা পিছনে চলে যায়।
রায়ান মিরায়ার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নারিয়ে নিজেকে একটু সামলে মিরায়াকে যাওয়ার পথ দিয়ে বলল-
“তাড়াতাড়ি এখান থেকে যাও। ক্যাম্পাসে যার তার সাথে মিশবে না। যাও (একটু উচ্চ স্বরে)।
রায়ানের ধমকে মিরায়া হালকা কেঁপে উঠে দ্রুত রায়ানের দেওয়া খালি জায়গা টুকু দিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে গেল।
এই দিকে রায়ান নিজের চুল এক হাতে খামচে ধরে বলল-
“আর একটু , আর একটু হলেই কন্ট্রোলের মা বাপ এক হয়ে যেত রে। রায়ান শান্ত হো, কন্ট্রোল ইয়োর সেলফ। তোর বউ জানে না সে তোর বউ।”
রায়ান রাগে গাড়ির চাকায় এক লাঠি মেরে বুকের বাম পাশে হাত রেখে –
“উফ্! এমনে কেউ তাকায়। কি মায়া ভরা চোখ। আল্লাহ আমাকে মারার জন্যই ওই চোখ দিয়েছে হয়তো। ওই চোখ আর চোখের মালকিন কবে জানি মেরে ফেলবে আমাকে।”
আকাশের দিকে তাকিয়ে –
“হায় আল্লাহ মাফ চাই। আর বউকে দূরে সড়াবো না । আমার বউটাকে আমাকে দিয়ে দেও। আর শাস্তি দিয় না তোমার এই পাপি বান্দা কে।”
রায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে গাড়িতে বসতে বসতে আজকের কথা গুলো ভেবে একটু বির বির করলো-
“আমার সম্পর্কে তো আমার মিরা কিছু জানে না। ঐ হিসেবে একজন অচেনা ছেলে হয়ে তার প্রতি এমন ব্যবহার কি বেশি বেশি হলো।”
পরবর্তীতে আবার নিজের প্রশ্নের নিজেই উত্তর দেয় –
” আরে ধুর, কিসের বেশি বেশি। আমার বউ আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি, বলতেও পারি। আমার বউ জানেনা তাতে কি! জেনে যাবে শীঘ্রই।”
এই বলে রায়ান গাড়ির ইঞ্জিনে স্টার্ট দেয় এবং সোজা তার কম্পানির সাইটের দিকে রোওনা দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকেই মিরায়া যেন একটু থমকে দাঁড়াল।
শতবর্ষের পুরোনো গেট, বিশাল সবুজ মাঠ, উঁচু উঁচু গাছ, আর চারপাশে শিক্ষার্থীদের ভিড়—সবকিছুতেই এক ধরনের গম্ভীর অথচ প্রাণবন্ত আবহ ছড়িয়ে আছে। মিরায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, যেন এতদিন বই আর টিভিতে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আজ সে প্রথমবার স্পর্শ করলো নিজের চোখে।
চারদিকটা কোলাহলে ভরপুর—কেউ ভর্তি ফরম নিয়ে দৌড়াচ্ছে, কেউ কাগজপত্র চেক করাচ্ছে, কারো মাথায় অজস্র চিন্তা, আবার কারো চোখেমুখে উচ্ছ্বাস।
তাদের মাঝেই মিরায়া একেবারে নতুন এক জগতে এসে দাঁড়িয়েছে।
ঠিক তখনই পেছন থেকে পরিচিত এক কণ্ঠ ভেসে এলো—
“এই মিরা! জান দাঁড়া দাঁড়া… আমি আসছি।”
ঘুরে তাকাতেই দেখলো রিমি ব্যাগ দোলাতে দৌড়ে আসছে।
মিরায়া হেসে হাত নাড়লো, “রিমি! তুই কই ছিলি? আমি তো ভাবলাম তুই আসবি না।”
রিমি একটু হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
“যানজটে আটকে গেছিলাম রে। তুই তো জানিস ঢাকার রাস্তার অবস্থা। ভাগ্য ভালো, শেষমেশ চলে আসতে পারলাম।”
দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করল ।
দু’জনেই একসাথে হাঁটতে শুরু করলো ভর্তি অফিসের দিকে। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে রিমি ফিসফিস করে বললো—
“আমরা কিন্তু যেমন ঠিক করেছিলাম, ঠিক সেভাবেই ফরম জমা দিবো। একসাথে লাইন ধরবো, একসাথে সিট নম্বর নেবো, যাতে আমাদের রোল নাম্বার পাশাপাশি থাকে।”
মিরায়া হেসে মাথা নাড়লো, “অবশ্যই। আমি তোকে ছাড়া ঢাবিতে ক্লাস করতেই চাই না।”
ভর্তি অফিসের সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভিড় যেন আরও বেড়ে গেল। লম্বা লম্বা লাইন, হাতে কাগজপত্র, কেউ আবার তর্ক করছে—কোন কাউন্টারে যাবে, কাকে আগে দেখাবে।
মিরা আর রিমি একে অপরের হাত ধরে দাঁড়ালো, যেন ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে না যায়।
একসময় তাদের কাগজ চেক হলো—এসএসসি, এইচএসসির মার্কশিট, ফটোকপি, ছবি—সবকিছু সুন্দরভাবে মিলিয়ে নিলো অফিসের স্যাররা।
রিমি মজা করে কানে কানে বললো,
“দেখছিস? আমরা যদি আলাদা আলাদা আসতাম, এই ভিড়ের মধ্যে একা কতটা ভয় পেতাম।”
মিরায়া হেসে জবাব দিলো,
“ঠিকই বলছিস। একসাথে থাকায় সবকিছু অনেক সহজ মনে হচ্ছে। এমনিতেই আমার সাবধানতা নিয়ে আজ কাল অনেক মানুষ উৎসাহ দেখাচ্ছে।”
রিমি- ” অনেকের মধ্যে কে কে ?
মিরায়া- “বাদ দে, পরে বলবো।”
কাজ শেষে দু’জনেই বাইরে এসে ক্যাম্পাসের ভেতর একটু হাঁটলো। এক সাথে চা , ফুচকা খেলো।
সোনালি রোদ ছড়িয়ে পড়েছে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে, বাতাসে একটা শান্ত গন্ধ—মাটির আর সবুজের মিশ্রণ। ছাত্রছাত্রীরা কেউ আড্ডা দিচ্ছে, কেউ ক্লাসে যাচ্ছে, কেউ বই হাতে বেঞ্চে বসে পড়ছে।
মিরায়া নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৯
“রিমি, জানিস? আজ মনে হচ্ছে, আমি সত্যি সত্যিই নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করলাম। ঢাবির এই পরিবেশ… আমি কখনো ভুলতে পারব না।”
রিমি হাসলো,
“আমরাই একদিন এই মাঠে আড্ডা দিবো, সেমিনারে যাবো, ক্লাসে বসবো। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।”
দু’জনের চোখেমুখে তখন একরাশ স্বপ্নের উচ্ছ্বাস। ভর্তি প্রক্রিয়াটা হয়তো সাধারণ ছিল, কিন্তু তাদের কাছে সেটা হয়ে উঠলো জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখার সূচনা।
রায়ান ৩০ মিনিট এর মধ্যে তার কম্পানির সাইটে পৌঁছায়। সেখানে রুদ্র তার জন্য অপেক্ষা করছিল।