প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৮
জান্নাত নুসরাত
বৃষ্টির রিনঝিন শব্দে চারিপাশ মুখরিত। বারিধারা নিজ শ্রীয়তা বজায় রেখে অনবরত নিচে পতিত হচ্ছে। ঠান্ডা হিমেল বাতাস কনভেনশন হলের মোটা মোটা দেয়াল ভেদ করে প্রবেশ করতে পারছে না, দেয়ালের ধাক্কায় ফিরে যাচ্ছে বিপরীত দিকে। বাহিরের এই হিমেল বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও কনভেনশন হলের ভেতর এসির ঠান্ডা বাতাসে শীতল হয়ে আছে। খাবারের স্থানজুড়ে কিলবিল করছে মানুষেরা। অতিরিক্ত মানুষের সংস্পর্শে মানুষের গরম লাগার কথা থাকলেও কৃত্রিম বাতাসে শরীর, মন দুটোই শীতল হয়ে আছে।
নুসরাত নিজেও কিলবিল করতে থাকা মানুষের ভেতরের একজন। নিজের প্লেট সুন্দর করে সাজিয়ে হেঁটে সামান্য আগাতেই অসাবধানতা বসোতো ধাক্কা লাগল শক্ত বুকের সাথে তার মাথার। সে চোখ তুলে উপরে না তাকিয়ে সর্বপ্রথম শক্ত করে ধরে রাখা নিজের খাবারের প্লেটের দিকে তাকাল, যখন নিশ্চিত হলো হ্যাঁ খাবার এবং প্লেট দুটোই অক্ষত আছে তখন চোখ তুলে ধীরে সুস্থে উপরে তাকাল। চোখাচোখি হলো আরশের সাথে, যে পকেটে হাত রেখে টানটান হয়ে সামনে দাঁড়ানো। আরশকে দেখতেই কপালে ভাঁজ ফেলল নুসরাত। আরশ নিজেও নুসরাতের দিকে চেয়ে ভ্রু উচাল। সামান্য ভ্রু এর এদিক সেদিক করতেই নুসরাত ও ভ্রু উচাল একই ভঙ্গিমায়। নুসরাত জানে তার ভ্রু উচানো ঠিকঠাক হয়নি তারপরও চেষ্টা করল আরশের মতো। আরশ পকেটে হাত রেখে ঝুঁকে আসলো নুসরাতের দিকে। নিজেদের ভেতরে ইঞ্চি পরিমাণ ফারাক রেখে হিসহিসিয়ে শুধাল,”কী?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নুসরাত নিজের হাতের প্লেট নিজেদের মাঝখানে বাঁধা হিসেবে ধরে রাখল। নিজেও জিজ্ঞেস করল,”কী?
আরশ নিজের জ্বলজ্বল করা শিকারী চোখগুলো বোলাল নুসরাতের আপাদমস্তক। অতঃপর বুদ্ধিদীপ্ত পুরুষালি তীক্ষ্ণ চোখগুলো স্থির হলো মেয়েলি নির্লিপ্ত মুখটায়। হাতের সাহায্যে থুতনি চেপে ধরে দু-পাশে মুখটা ঘুরিয়ে দেখল অনেকক্ষণ যাবত। নুসরাতের চুপচাপ থাকা আরশকে আরেকটু আশকারা দিল, সামান্য এগিয়ে আসতেই সন্তর্পণে প্লেটে থাকা নাইফ নুসরাত চেপে ধরল আরশের গলার কাছে। তার বাচ্চামো কান্ডে পুরুষালি উজ্জ্বল সৌম্য চেহারায় খেলে গেল উপহাসের হাসি। মেয়েলি থুতনি থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ঘাড় বাঁকাল সামান্য। নিজের ধারালো চোয়ালে হাত বুলিয়ে বলে ওঠল,”ইউ থিংক আ’ম গোন্না বি স্কেরেড অফ দিজ লিটেল ফাকিং নাইফ..?
নুসরাত হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। হাতে থাকা ছোটো খাটো বাটার নাইফটা আরশের পুরুষালি গলার খাঁজে আরেকটু দাবিয়ে ধরল। নিজেও হিসহিসিয়ে জানতে চাইল,”আপনার কী মনে হয় এই সামান্য ছুরি দিয়ে আমি আপনাকে আক্রমণ করব?
আরশ ঠোঁট উল্টিয়ে দু-পাশে মাথা নাড়াল। গম্ভীরতার মিশ্রণে বলে ওঠল,”উঁহু, এটা কেন করবেন! আপনি নুসরাত নাছির, আপনি তো সবার থেকে আলাদা..!
আরশ নুসরাতের হাতের খাবার আলগোছে টেনে নিল নিজের হাতে। ঘাড় বাঁকিয়ে খাবারের দিকে চাইল, চোখের সামনে পর্দশন হলো বেশ কিছু খাবার। স্টাটার হিসেবে ছিল চিংড়ির সালাদ, মিনি পেস্ট্রি, চিজ, ব্রুস্কেত্তা, সুপ শর্ট, এসবের সবকিছু টেবিলে টেবিলে দেওয়া হয়েছে। নুসরাত মেইন কোর্সগুলা নিয়েছে। গ্রিলড স্টেক, মেশড পটেটো, পাস্তার সাথে হোয়াইট সস, আর ফ্রুট সালাদ..! আরশ নুসরাতের প্লেট থেকে ছু করে ফর্ক তুলে নিল। ফ্রুট সালাদ থেকে ফ্রুট ফর্কের ডগায় আলগোছে তুলে নিয়ে মুখে ঢোকাল। দাঁতের পাটির নিচে পিষে নিয়ে আরাম করে নুসরাতের পানে তাকাল। বলে ওঠল,”দারুণ ফ্রুট সালাদটা। ইউ ওয়ানা ট্রায়?
নুসরাত চোখ দুটো তীক্ষ্ণ করে চেয়ে রইল। আরশের কথা কানে না তুলে দপদপ করে উঠা মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রেখে, ইশারা করল আরশের উচিয়ে ধরা প্লেটের দিকে। বলে ওঠল,”আমার প্লেট ওইটা, নিজে নিজে প্লেট তৈরি করে খান..!
নুসরাত প্লেট নিতে হাত বাড়াতে যাবে আরশ তা উপরের দিকে তুলে ধরল। নুসরাত হাত বাড়িয়ে নাগালে পেল না, তাই আরশের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াল সামান্য লম্বা হতে। আরশ কিছু বলল না, নিশ্চুপ একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল স্টান হয়ে। শু জুতো পরা পায়ের উপর নিজের পায়ের পাতায় ভর রেখে লাফ মেরে নিজের প্লেটটা ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করল। এতে নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিল, পড়ে যাবে, এমন মুহূর্তে শক্ত সামর্থ একখানা পুরুষালি হাত পেঁচিয়ে ধরল নুসরাতের মেয়েলি কোমর নিজের সাথে।। গায়ে জড়ানো আষ্টেপৃষ্টে থাকা কালো শার্টের বোতাম গলার কাছ থেকে ছুটে গেল টান পড়ায়। গুটিয়ে রাখা শার্টের হাতার উপর দিয়ে ভেসে উঠল পুরুষালি হাতের রগ। নুসরাত পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় ব্যালেন্স রাখতে আরশের গলা পেঁচিয়ে ধরল নিজের বাঁ-হাত দিয়ে। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে হাত বাড়াতে যাবে আরশের গলা কানে আসলো,”আপনি এত ছোট হয়ে পারবেন ওতো উঁচুতে থাকা প্লেট নিজের কব্জায় নিতে?
নুসরাত কটমট করে তাকাল আরশের পানে। পেঁচিয়ে ধরা হাতে আরোকটু শক্তি প্রয়োগ করে আরশের ঘাড় নিজের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসলো। নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গেল তার সংস্পর্শে। ইঞ্চি খানিক ফাঁকা জায়গা নিজেদের ভেতর রেখে হিসহিসিয়ে আওড়াল,”একদম হাইট নিয়ে টানাটানি করবেন না!
“তো তুই খাটো তোকে সেটা বলব না?
” আমি খাটো নই, আপনি একটু বেশি লম্বা।
আরশ নুসরাতকে উপহাস করে হাসল। বলল,
“এত খাটো তুই?
নুসরাত নিজেও খিঁচিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করল,
” এত লম্বা হয়ে কী করেছেন জীবনে আপনি?
আরশ নুসরাতের কথায় প্লেটের দিকে ভ্রু দিয়ে ইশারা করে বলল,”এই যে তোর প্লেট ধরে রেখেছি উপরে..!
“এই কাজ করে নিজেকে খুব শক্তিমান মনে করতেছেন?
“অবশ্যই..!
নুসরাত নিজের প্লেটের দিকে ইশারা করে বলল,
” দিবেন না আমার প্লেট?
“জ্বি না..!
” এত অহংকার কেন আপনার?
আরশ আশপাশ তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে হিম করে দেওয়া শান্ত কন্ঠে জানতে চাইল,”কোথায় অহংকার?
নুসরাত তার ডান-হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে আরশের পুরুষালি ক্লিনসেভ করা ধারালো চোয়ালে ধাক্কা দিল। ইশারা করে বলল,”আপনার পুরো মুখে স্পষ্ট দম্ভ ভেসে আছে। সামান্য সাত ইঞ্চি লম্বা হওয়ায় এত অহংকার দেখাচ্ছেন?
“আমি কখন অহংকার দেখালাম..? আমি শুধু বললাম তুই এতটুকু, আর আমি এতটুকু।
আরশ তর্জনী আর বুড়ো আঙুল একত্রিত করে দেখাল দু-ইঞ্চি নুসরাত আর নিজেকে দেখাল অনেক বড়। নুসরাত খেঁকিয়ে উঠে বলল,” লম্বা হওয়ায় অহংকারে পা মাটিতে পড়ছে না?
“আমি মাটিতেই দাঁড়িয়ে আছি, নিজের দু-পা দিয়ে। চোখে কম দেখেন আপনি?
“আপনি একটুও নিজের ভুল স্বীকার করবেন না? জীবনে নিচে ঝুঁকবেন না, তাই না?
আরশ নিষ্প্রাণ কালো বলয়ের নেত্র ঘোরাল মেয়েলি বিরক্ত মুখটায়। নুসরাতের দিকে ঝুঁকে আসতে আসতে বলল,”আপনার সাথে কথা বলতে হলেই আমার প্রতি সেকেন্ডে নিচের দিকে ঝুঁকতে হয়, আর কত ঝুঁকব?
শেষের কথাটা ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল। নুসরাতের রাগে ইচ্ছে করল এই ব্যাটার পুরো পা লাফিয়ে ভেঙে ফেলতে। নির্লিপ্ততা মুখে বজায় রেখে কড়মড় করে ওঠে বলল,”আবারো অপমান? সামান্য একটু লম্বা হওয়ায় এত অপমান আরশ ভাই..?
আরশ কোনো একটা কথার জের ধরে খেঁকিয়ে উঠল। চোখদুটো ঈগলের মতো করে চেয়ে, মুখটায় রাগ ফুটিয়ে তুলল নিমেষেই।অগ্নিগিরির লাভার ন্যায় ফুলে ফেপে ওঠে চোখ দুটো বৃহৎআকার করে জিজ্ঞেস করল,” এই কে তোর ভাই? আরেকবার ভাই বলে দেখ, ট্রিগার পয়েন্টে রেখে একদম মেরে ফেলব, বেয়াদব..! নিজেকে দেখ, কত বড় নির্লজ্জ হলে স্বামীকে ভাই বলিস?
নুসরাতের কোমরে রাখা আরশের হাতের শক্ততা বাড়ল। পুরুষালি হাতের চাপা পিষ্টনে মুচড়ে উঠল মেয়েলি শরীর। নুসরাত নিজেও আরশের গলার কাছে রাখা হাত কাজে লাগাল। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঘাড়ে নখ দাবিয়ে চেপে ধরল। কঠোর কন্ঠে আরশকে ভেঙ্গিয়ে আওড়াল,”আমি নির্লজ্জ তা আমি জানি, একই কথা কতোবার বলবেন নতুন কিছু বলুন। এই কথা শুনতে শুনতে আমার কান ও লজ্জা পাচ্ছে। আর আপনি আমার কীসের স্বামী, আমি আপনাকে কোন স্বামী-টামি মানি না। আপনাকে আমি বর্তমানে বড় ভাইয়ের চোখে দেখছি, বুঝেছেন আরশ ভাই?
আরশ হিসহিসিয়ে বলল,
“বেয়াদব গলা টিপে মেরে ফেলব..!
নুসরাত আরশের বাহুবন্ধনী থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। পনিটেল করে রাখা চুলগুলো ঝাড়া মেরে যেতে যেতে দম্ভ জাহির করে বলল,” আরশ ভাই, আরশ ভাই, আরশ ভাই, কী করবি দেখে নিব..! স্সালা!
খাবার টেবিলের একপাশ জুড়ে বসে আছে জায়িন ইসরাত, সৌরভি, ইরহাম, আহান, মমো, অনিকা, মাহাদি, মৃন্ময়। নুসরাত এসে নিজের জন্য চেয়ার টেনে বের করে বসতে নিবে আরশ তা টেনে দিল। নুসরাত একবার আরশের দিকে চেয়ে চুপচাপ প্লেট নিয়ে বসে গেল চেয়ারে। আরশ নিজের হাতের প্লেট টেবিলে রেখে সামনে আকস্মিক সবার মাঝখান থেকে দাঁড়িয়ে যাওয়া মৃন্ময়ের দিকে এগিয়ে গেল। টেবিলে বসারত সবাই চোখা দৃষ্টি দিলেও মাহাদি, আর জায়িন নির্লিপ্ত। সে স্পুনের সাহায্যে পাস্তা তুলে নিজের মুখে ঢোকাচ্ছে। আরশ এগিয়ে যেতে যেতে মৃন্ময় দু-হাত মেলে দিল দু-পাশে। দু-জনের দু-জনের সাথে জড়াজড়ি শেষে সামান্য কথা বলল। পরপর আবার চেয়ার টেনে বসে পড়ল দু-জনেই পাশাপাশি। মাহাদির পাশে বসারত নুসরাত দু-জনের দিকে কিৎকাল চেয়ে থেকে ফিসফিস করে শুধাল,”এদের এত পুতুপুতু আমার চোখ সহ্য করতে পারছে না? কী সম্পর্ক এদের মধ্যে? এবার বলবেন না আপনি ওদের মধ্যে কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
মাহাদি নিজের খাবার মুখে ঢুকিয়ে একইভাবে নুসরাতের দিকে ঝুঁকে আসলো। গলার আওয়াজ তার মতো রেখেই বলল,”ওর বন্ধুই..!
নুসরাত বোঝার ন্যায় মাথা নাড়াল। কিছুটা শঙ্কা নিয়ে শুধাল,”কিন্তু বন্ধুত্ব হলো কীভাবে? এই মৃন্ময়ের বাচ্চা গেল বা কী করে ওখানে?
“স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ ছিল ও, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমেরিকা থেকে ঘুরতে এসেছিল প্যারিস তখন দেখা আমাদের সাথে, তারপর সম্পর্ক। পরে জানা যায় যে আঙ্কেলের সাথেও নাকি মৃন্ময়ের বাবার বন্ধুত্ব।
নুসরাত ভ্রু উচিয়ে বাহবা দিল। নিস্প্রভ কন্ঠে বলে ওঠল,” হোয়াট আ কোয়েন্সিডেন্স?
নিজেদের খাবার খেতে ব্যস্ত হলো সবাই। নুসরাতের পাশে বসা আহান কখন থেকে ধাক্কাচ্ছিল তাকে। নুসরাত ফিরে চাইতেই এতক্ষণের সকল উত্তেজনা ফুস করে হাওয়া হয়ে গেল। মিনমিনিয়ে জানতে চাইল,”এই পুলিশ এখানে কেন?
“আরশ নামক বাঁদরের নাকি ওই ব্যাটা মৃন্ময় বন্ধু। দুটোই তো এক, একদম খাইষ্ঠা..!
আহান সহমত পোষণ করল। নিজের কাছে বসা ইরহামকে নুসরাতের কথাগুলো রিপিট করে বলল। নাকের পাটা আকাশে তুলে। ইরহাম মমোর কাছে বলল, মমো বলল সৌরভিকে, সৌরভি বলল ইসরাতকে। অতঃপর সবাই নিজেদের সিগনেচার স্টাইলে মাথা নাড়াল উপর নিচ৷
নীরবতা পালন করে সবাই ধীরে ধীরে খেতে লাগল। হঠাৎ হঠাৎ শোনা গেল নুসরাতের ফিসফিসানো। একবার মাহাদির সাথে তো একবার আহানের সাথে করছে। কিছুক্ষণ পর ইসরাতের খাবার খাওয়া হাত থামল। আশপাশ চোখ বুলিয়ে টেবিল দেখে নিল। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসটা খুঁজে পেতেই হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে ইরহাম তা টেনে নিল। ফ্রাইড চিকেন থাকা প্লেট হতে শেষ চিকেন পিসটা তুলে নিল সে। বোনের বাড়ানো হাত সে দেখেনি। অকপটে তা গাপুসগুপুস করে মুখে পুরে নিল। জায়িন চুপচাপ লক্ষ করল এতক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনা। পাশ ফিরে দেখল চুপসানো মুখ নিয়ে বসে থাকা সহধর্মিণীকে। নিজের প্লেটে থাকা অক্ষত ফ্রাইড চিকেন পিসটা তুলে দিল ইসরাতের প্লেটে। ইসরাত অবাক চোখে চেয়ে নাকচ করতে নিবে জায়িন বলে ওঠল,” চুপচাপ খান! কথা বেশি বলতে আমি বলিনি আপনাকে।
কথায় কিছুটা ধমক আর শাসন মিশানো ছিল। ইসরাত নাইফ দিয়ে কেটে খাবে জায়িন নিজেই ফর্ক দিয়ে চেয়ে ধরে নাইফ দিয়ে ফটাফট কেটে দিল। ইসরাতকে তার পানে বারংবার তাকিয়ে থাকতে দেখে বুদ্ধিদীপ্ত পুরুষালি চোখ দুটো খাবারের দিকে ইশারা করে বলল,”খাবার ওদিকে, আমার দিকে নয়..! তাকিয়ে থাকলে পেট ভরবে না, তাই খাবার খান।
নুসরাত আর আহান পাশাপাশি বসায় দু-জনেই ড্যাবড্যাব করে ওদিকে চেয়ে রইল জায়িন আর ইসরাতের দিকে। আহান বলে ওঠল,”কী ক্যায়ারিং হাজবেন্ড ভাই?
নুসরাত চোখের পাতা হাতের তালু দিয়ে মুছে, নাক টানল। আহানের শার্টে সর্দি মুছে বলল,”ইমোশনাল হয়ে গেলাম ভাই..!
আহান নিজের শার্ট টিস্যু দিয়ে পরিস্কার করে নিল নাক উচিয়ে। নুসরাতকে বিরক্তি সুরে বলল,”ইমোশনাল হলে চোখ দিয়ে পানি পড়বে, তোমার নাক দিয়ে পড়ছে কেন? এবার বলো না নুসরাত নাছির মানেই আলাদা..!
নুসরাত চোখ সরু করে হাসল। ঠোঁট দুটোচোখা করে ফু দিল আহানের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলোকে। বলে ওঠল,”আমি এটাই বলতাম..!
দু-জনেই খিটমিট করে হেসে উঠল। সবাইকে তাদের দিকে তাকাতে দেখে মুখ চুপসে নিয়ে হাসি বন্ধ করল। আড়চোখে ইসরাত আর জায়িনের দিকে তাকিয়ে দু-জনেই হাসল হা হা হি হি করে। আহান জিজ্ঞেস করল নুসরাতকে,”আজ রাতে কিছু করবে?
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৭ (৩)
নুসরাত আড়চোখে দেখল আহানকে। নিষ্পাপ মুখ বানিয়ে বলে ওঠল,”উঁহু না..! দু-সেকেন্ড আগে ভালো হয়ে গেছি!
কথার পৃষ্ঠে লুকিয়ে থাকা শয়তানি টের পেল আহান। দু-জনেই দু-জনের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। বিচ্চুদুটোর ঠোঁট বেয়ে ভয়ে গেল শয়তানি হাসির বাহার!