প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৬

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৬
জান্নাত নুসরাত

উত্তরে হাওয়া বইছে। শীতল হাওয়ায় গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ঠান্ডায় বসে থাকা মানব মানবীদের। এক হাত দিয়ে অন্য হাত ঘর্ষণ করে হাত গরম করছে ছাদে বসে থাকা সবাই। ঠান্ডায় সবার কাছে মনে হচ্ছে দাঁত একটার সাথে আরেকটা খিঁচে লেগে আছে। তবুও চুপচাপ সবাই বসে আছে নুসরাতের পরবর্তী কথা শোনার জন্য।
নুসরাতের ঠান্ডা গলার জবাব,
“কি মানে কি?
ইরহাম থতমত খেয়ে বলল,

” আমি বলতে চাইছে যে, মানে অন্য কেউ কেন নয়?
“একটা প্রশ্ন করার পারমিশন আছে দুটো নয়!।এটা গেইমের রোলসের বিপরীত।
ইরহাম দাঁত খিঁচে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিল নুসরাতের দিকে। আরশ নিজের পুরু ঠোঁট দাঁত দিয়ে চেপে ধরে কিছু ভাবতে লাগলো।
ইরহাম বোতল ঘুরাল। বোতল ঘুরতে ঘুরতে থামল মাহাদির সামনে। ইরহাম হৈ হৈ করে উঠলো।
“ট্রুথ ওর ডেয়ার ভাইয়া?
“ডেয়ার!
আরশ বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমি ডেয়ার দিচ্ছি?
সবাই মাথা নাড়ালো। আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
“এখানে উপস্থিত তোর একজন প্রিয় মানুষকে নিজের মনের কথা বল!
মাহাদি ভ্রু বাঁকিয়ে শাণিত দৃষ্টিতে আরশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” তুই কি আমাকে আদেশ দিচ্ছিস?
আরশের নির্লিপ্ত গলার উত্তর,
“তোর যা মনে হয়।

মাহাদি ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ বসে রইলো। একবার আরশের পানে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল মমোর দিকে। মমোর দিকে শান্ত ও গভীর চোখ রেখে ভারী পুরুষালি গলায় মাহাদি বলল,”আমি আমার জীবনে একজন বেস্ট পার্সনকে দেখেছি, যে আমার বয়সে ছোট কিন্তু আমার থেকে ও ম্যাচুরিটি বেশি।
মমো লজ্জা পেয়ে হালকা হাসল। গালে হাত দিয়ে অপলক নজরে তাকিয়ে রইলো মাহাদির দিকে।
“আমার বয়সে ছোট হওয়া সত্ত্বেও সে বিয়ে করে নিয়েছে। এটা আমার জন্য বিষণ লজ্জার বিষয়। এবং এটা ভাবলেই আমার লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তো যাই হোক, আমি সেই বেস্ট পার্সনের নাম বলবো না। কিন্তু একটা কথা বলতে চাই, অনেক দিন তো হলো বিবাহের তাহলে কবে চাচ্চু ডাক শুনছি আমরা। অপেক্ষায় আছি মামা….

শেষের কথা আরশের চোখে চোখ রেখে কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলল। ইরহাম,অনিকা,মমো,আর নুসরাত হে হে করে হেসে উঠলো। আরশ ঠান্ডা চোখে মাথা কাথ করে মাহাদির দিকে স্থির তাকিয়ে থাকল।
জায়িন নিজের ঠোঁট চেপে বসে রইলো দন্তের নিচে। ইসরাত অগোছালো দৃষ্টি ফেলল আশে পাশে। জায়ান নীরবতা লঙ্ঘন করে বলল,” মাহাদি কুচ তো লেহাজ কার? বড় ভাইয়েরা এখানে উপস্থিত আছে।
মাহাদি শব্দ করে হেসে উঠলো। মমো নিজের অবান্চিত ভাবনায় নিজে লজ্জা পেল। ইরহাম বোতাল ঘুরাল।
বোতল এবার জায়িনের দিকে থামলো।
নুসরাত জিজ্ঞেস করলো,

“ট্রুথ ওর ডেয়ার?
“ডেয়ার!
নুসরাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আপনি ইসরাতের উদ্দেশ্যে একটা রোমান্টিক লাইন বলুন।
জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,
“ওটার জন্য প্রিপারেশন নিতে হয় আমি এমন কিছু করার প্রিপারেশন নেইনি।
নুসরাত পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারিতে ঢুকলো। গ্যালারি থেকে কিছু খুঁজে বের করে জায়িনের মুখের সামনে মোবাইল নিয়ে বলল,”এটা ট্রান্সলেট করে বলুন আবেগ মিশিয়ে।
অনিকা উঁকি ঝুঁকি মারল লাইন গুলো দেখার জন্য। নুসরাত ঝটপট জায়িনকে লাইন গুলো দেখিয়ে মোবাইল অফ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো যত্ন সহকারে।
জায়িন ইসরাতের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো। ইসরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আদেশের স্বরে বলল,
“ইসরাত আমার দিকে তাকাও?

ইসরাত মুখ ঘুরিয়ে রেখে বসে রইলো। ইরহাম ইসরাতকে নড়তে না দেখে ইসরাতের পিঠ ঠেলে জায়িনের দিকে করে বসিয়ে দিল। ইসরাত নাক কুঁচকে একবার তাকাল ইরহামের দিকে। ইরহাম ইসরাতের তাকানো পাত্তা দিল না। ইসরাত চোখ ঘুরিয়ে জায়িনের চোখে চোখ রাখলী। বাতাসের সাথে জায়িনের শরীরে ব্যবহৃত ব্ল্যাক টাই সেলিন ম্যান পারফিউমের কস্তুরি আর ভ্যানিলার গন্ধ তীব্রভাবে এসে ইসরাতের নাকে লাগলো। ইসরাত মাতালের মতো ঘ্রাণটা নিজের নাসারন্ধ্রে টেনে নিল। নিজের খেই হারাতে গিয়ে ইসরাত নিজেকে সামলে নিল। ধূসর বর্ণের পুরুষালি চোখে বাদামির বর্ণের মেয়েলি চোখে মিলিত হলো। চোখা চোখি হতেই মেয়েলি বাদামি বর্ণের চোখের পাপড়ি হালকা হালকা নড়ে উঠলো। ইসরাত ঠোঁট কামড়ে ধরলো। অস্বস্তি কাটানোর জন্য। জায়িন নিজের গলা যতেষ্ট গম্ভীর রেখে রাশভারী গলায় বলল,

❝আমি তোমাকে ভালোবাসব মৃত্যাুর আগ পর্যন্ত,
যদি মৃত্যাুর পর ভালোবাসার সুযোগ থাকে তাহলে
আমি তোমাকেই ভালোবাসব❞
কথা গুলো বলতে বলতে জায়িন ইসরাতের দু-হাত চেপে ধরলো। ডান-হাত বাড়িয়ে সামনের দিকে কাটা ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল। অনিকা গালে হাত দিয়ে জায়িন আর ইসরাতের দিকে চোখ রেখে বলল,” হাও রোমান্টিক! প্রেমে পড়ে গেলাম আমি।
নুসরাত বিরক্তি নিয়ে বলল,

“তুই যারে দেখিস তার প্রেমেই পড়ে যাস। প্রথমে আরশ, দ্বিতীয় মাহাদি ভাইয়া, তৃতীয় আবির, চতুর্থ নাহিদ পঞ্চম জায়িন সবার প্রেমে তুই পড়ে গেলি। এটা তোর মন না প্লাস্টিকের বোতল। যা দেখিস তা দেখেই প্রেমে পড়ে যাস।
অনিকা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকলো হাত দিয়ে। শব্দ করে হেসে বলল, “এটা আপি তুমি ঠিক বলেছ।
নুসরাত ভাবসাব নিয়ে নিজের পরণের শার্টের কলার উপরের দিকে তুলে বলল,”আমি কখন অঠিক কথা বলি,আমি অলওয়েজ সঠিক কথা বলি।
জায়িনের চোখ থেকে ইসরাত চোখ সরিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নুসরাত অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই বলল,
“ভালো লাগছে না! তোমরা খেলো।
ইসরাত ছাদ থেকে এক সিঁড়ি নিচে নামতে পারল না জায়িন উঠে দাঁড়ালো। হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙার মতো করলো।
আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

” তোমার ও কি ভালো লাগছে না?
জায়িন মাথা নাড়ালো হ্যাঁ ভঙ্গিতে। ইসরাতের মতো একই উত্তর দিয়ে অগ্রসর হলো সিঁড়ির দিকে। এক সিঁড়ি নেমে পিছনে একবার তাকিয়ে নিচের দিকে দৌড় দিল।

ইরহাম গিটার আরশের দিকে এগিয়ে দিল। আরশ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ইরহাম হেহে করে হেসে বলল, “ভাইয়া একটা গান গেয়ে শোনান?
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
” পারব না।
নুসরাত বলল,
“এ্যাঁ আমি এখানে থাকতে তুই উনাকে কেন বলছিস গান গেয়ে শোনানোর জন্য। এদিকে দে গিটার আমার কাছে আমি শুনাচ্ছি।
নুসরাত গিটার টেনে নিয়ে এনে একটা একটা তারে আঙুলের সাহায্যে শব্দ তুলতে শুরু করলো। গিটারের শব্দের সাথে মিলিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আরশ গম্ভীর গলায় গেয়ে উঠলো,

“Mere, khwab kehne lage~
Palkon mein rakhle inhein
Thoda chain mil jaaye ga~
Tu ishaara kar de inhein

আরশের গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো। নুসরাত প্রশংসা করতে কিপটেমি করলো না। মন খুলে প্রশংসা করলো আরশের গানের গলার। আসলে প্রশংসা বললে ভুল হবে নুসরাত এডভাইজ দিল আরশকে একটু বেশি।
” আপনি যদি আরকটু সুর টেনে অওঅঅঅঅ বলতেন তাহলে আরো ভালো হতো। আর গলার স্বরটা যদি আরেকটু মসৃণ হতো তাহলে আরো ভালো হতো। তারপর ও ভালো গেয়েছেন কিন্তু আমার থেকে ভালো গান গাননি। আমি আপনার থেকে আরো ভালো গাই।
ইরহাম মিনমিন করে বলল,

“কি গাও তা তো দেখি? গানের ধর্ষণ করে ফেলিস তুই।
” তুই আসলে বলতে কি চাস?
“আমি কিছু বলতে চাই না। তোর গানের গলা অনেক ভালো কাকের মতো।
নুসরাত এসবে পাত্তা দিল না। গিটার গলায় পেঁচিয়ে উঠে দাঁড়াল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আরশ, ইরহাম, অনিকা বোতল আর কাগজের টুকরো যে পাত্রে রাখা তা নিয়ে এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে নুসরাতের পিছন পিছন।

এতক্ষণ বসে থাকায় মমোর পা জিম ধরে গিয়েছে। ধীরে সুস্থে জুতো পরে যেতে চাইলো পিছন থেকে মাহাদি হাত চেপে ধরলো। মমো চিৎকার করতে চাইল পরের সেকেন্ডে নিজেকে সামলে উঠতেই মাহাদি মমোকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। হাত দিয়ে মমোর কপালের সামনের চুল অগোছালো করে দিয়ে কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে আওড়ায়,”মেবি আমি তোমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি নই। কিন্তু, আমি আশা করি, যে তুমি যখন আমার নাম শুনবে তখন হালকা হেসে নিজের মনের ভিতর ফিসফিস করে বলে উঠবে দেটস মাই ম্যান।
মাহাদি হালকা হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে তা মমো দেখলো না। নিজের কথা শেষ মমোকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু,পিছনে স্তব্ধ করে হৃদয়ে ঝড় তুলে দাঁড় করিয়ে রেখে গেল এক একুশ বছরের রমণীকে।

জায়িন পা চালিয়ে নিচে নামলো। ইসরাতকে হেঁটে নিজের রুমের দিকে যেতে দেখে পিছন থেকে গিয়ে হাত চেপে ধরলো। ইসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে ক্রোধ নিয়ে পিছনে তাকালে। পিছনে তাকাতেই জায়িনকে দেখে ক্রোধ হাওয়ার মতো মিলিয়ে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস জারি রাখলো ইসরাত। ইসরাত কিছু বুঝে উঠার আগেই জায়িন কোনো কথা না বলে ইসরাতের মুখ এক হাত দিয়ে চেপে ধরে পাজোকোলে তুলে নিল।
ইসরাত আতঙ্কিত দৃষ্টিতে জায়িনের দিকে তাকালো। জায়িন ইসরাতের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সামনের দিকে তীর্যক নয়নে তাকিয়ে ইসরাতকে নিয়ে দৌড়ে করিডোর পার হয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল।
কোল থেকে ইসরাতকে নামিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা লাগাতে লাগলো। ইসরাত পিছনে দাঁড়িয়ে চুপচাপ জায়িনের এসব অদ্ভুত কর্মকান্ড লক্ষ করছিল। জায়িন দরজার বাহিরের দিকে উঁকি ঝুঁকি মারতে মারতে বিড়বিড় করলো,”তাড়াতাড়ি দরজা লাগা জায়িন, নইলে পাগলটা এসে যাবে।

ইসরাত কৌতূহলি হয়ে জায়িনের পিছন থেকে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। জায়িন দরজা লক করে পর্দা ভালোভাবে টেনে দিল। কাবার্ডের হাতল ধরে মুচড় দিতেই কাবার্ড খুলে গেল। অগোছালো ভঙ্গিতে কিছু হাতড়ে খোঁজতে লাগলো।
“আরে এটা ও খুঁজে পাচ্ছি না। প্রয়োজনের সময় সবকিছু উধাও হয়ে যায়। কখন না জানি ওই হাড্ডিটা চলে আসে।
ইসরাত কৌতূহলের শেষ পর্যায়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” হাড্ডি কে?
জায়িন কাবার্ডের কাপড় অগোছালো হাতে হাতড়াতে হাতড়াতে বলল,”তোমার বোন হলো হাড্ডি।
ইসরাত মাছের মতো মুখ হা করে নিল। কী বলে এই লোক? নুসরাত হাড্ডি! এটা কোন ধরণের রাবিশ কথা?
জায়িন কাঙ্কিত জিনিস খুঁজে পেয়েই দৌড়ে নিয়ে এসে ইসরাতের হাতে পরিয়ে দিল চোখের পলকে। ইসরাত বিস্ময় কাটানোর আগেই জায়িন নিজের বাঁ-হাতে হ্যান্ডকাফ পরে নিয়ে লক করে চাবি ঢিল মেরে বারান্দার বাহিরে ফেলে দিল।

ইসরাত ঢোক গিলে ক্রোধ নিয়ে জায়িনের দিকে তাকালো। বিরক্তির চরম মাত্রায় পৌঁছে গিয়ে ইসরাত চিড়বিড় করে উঠলো। নাক মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,”এই আপনি আমার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়েছেন কেন?
জায়িন নির্লিপ্ত চোখে তুলে তাকালো। কোনো কথা না বলে রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেল। ইসরাত না চাইতে ও জায়িনের সাথে বাহিরে যেতে হলো। ইসরাত পা না বাড়ালে জায়িন হ্যান্ডকাফ ধরে হেচকা টান দেয়। ফলে হাতে ব্যথা পাওয়ার জন্য ইসরাতের ও সামনের দিকে পা বাড়াতে হয়।
জায়িন এক প্রকার নিজের সাথে টেনে ইসরাতকে ডায়নিং টেবিলের দিকে নিয়ে গেল। খাবার টেবিলে মানুষের উপস্থিতি দেখে জায়িন হাত আলগোছে পকেটে ঢুকিয়ে নিল।

ইসরাত চোখ মুখ উল্টে নিজের হাত শাড়ির কোণায় ঢেকে নিল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসতে নেবে জায়িন নিলজ্জের মতো দাঁত কেলিয়য়ে ইসরাতের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,”ঠোঁটে ঠোঁট তুমি চাপছো কেন ইসরাত? আমি থাকতে এতো কষ্ট করার কি? আমি আছি না তোমার হাজবেন্ড!
ইসরাতের কান লজ্জায় ঝা ঝা করে উঠলো। মনে হলো কেউ ওর কানে শিশা ঢেলে দিয়েছে। এই বেডার কথার মানে ইসরাত খুব ভালোই বুঝলো! না শোনার মতো করে, নিজের গরম হয়ে যাওয়া কান বাঁ-হাত দিয়ে ঢাকলো।
“ইসরাত আমি শুধু বললাম এতেই তোমার গাল লাল আভা ধারণ করেছে। আর কিছু করলে কি হবে? তুমি কি স্টিল এই পৃথিবীতে থাকবে?

ইসরাত ঢোক গিলে নিজের লজ্জা কমানোর চেষ্টা করলো। জায়িনের কথা শুনলো না এমন করলো। আশে-পাশে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে লাগলো। লজ্জায় গাল-চোখ-মুখ-কান সব লাল রঙ ধারণ করেছে।
রুমানা খাতুন চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললেন,
“কি জায়িন? কানে কানে বউয়ের সাথে কি কথা হচ্ছে?
জায়িন হেসে মাথা নাড়ালো। যার মানে তেমন কিছু না। লিপি বেগম সবার প্লেটে প্লেটে বিরিয়ানি তুলে দিতে লাগলেন। নুসরাতকে দিতে যাবেন আরশ লিপি বেগমকে তার দিকে ডেকে নিয়ে গেল। মায়ের হাত থেকে বিরিয়ানির বোল হাতে নিয়ে বড় বড় চামচে নুসরাতের প্লেট ভরে খাবার দিতে লাগলো।
লিপি বেগম হায় হায় করে উঠলেন।

“এতো দিচ্ছিস কেন? খেতে পারবে না তো!
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
“পারবে!
জায়িন প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে লাগলো। ইসরাতের ডান হাত বাঁধা থাকায় চুপচাপ প্লেটের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। জায়িন ইসরাতকে খেতে না দেখে মুখে চামচ পুরে দিল। ইসরাত কিছু বলতে নিবে জায়িন বলল,”চুপচাপ খাবার খাও।
ইসরাত কিছু বলতে নিলেই জায়িন চামচ ভর্তি খাবার নিয়ে ইসরাতের মুখে তুলে দিতে লাগলো। রুমানা খাতুন বললেন,”জায়িনের বউ তার হাত দিয়ে খাচ্ছে না কেন? জায়িন মুখে তুলে দিচ্ছো কেন?

“আসলে নানি, হাত কেটে গেছে এক্সিডেন্টলি! খেতে গেলে হাত জ্বালা করছে তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। শুনেছি স্বামীর সাথে খাবার খেলে ভালোবাসা বাড়ে তাই—ভালোবাসা বাড়াচ্ছি দুজনের মাঝে।
রুমানা খাতুন মাথা নাড়ালেন বুঝার মতো করে। নুসরাত চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখতে চাইলো কি হচ্ছে আসলে ওখানে?

রুমানা খাতুন নুসরাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই নুসরাত চোখ মুখ উল্টে বসে গেল। জায়িন আর ইসরাতের ভিতরের আসল রহস্য বের করার জন্য নুসরাত টেবিলের নিচের দিকে ঢুকে গেল। টেবিলের নিচে ঢুকে কিছু তো পেল না উল্টো টেবিলের নিচ থেকে বের হওয়ার সময় মাথা টেবিলের সাথে লেগে আঘাত পেল।
আরশ নুসরাতকে টেবিলে না দেখে আশে-পাশে খোঁজতে লাগলো। বিড়বিড় করলো,”গেল কই? এটা কি গোয়েন্দা হচ্ছে যে সব বিষয় তার জানতে হবে। প্লেটের দিকে চোখ পড়তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। প্লেটের খাবার প্লেটে সব রয়ে গেছে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৫

দাঁত খিঁচে ব্যথা হজম করে যখন উঠতে চাইলো নুসরাত, আরশ নুসরাতকে খোঁজার জন্য তখন হাঁটু ভাঁজ করে নিচের দিকে তাকাতে নিল একই সময়, নুসরাত টেবিল নিচ থেকে আরশের হাঁটুর পাশ ঘেঁষে উঠতে নিল আরশ হাঁটু ঘুরিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকতে নিতেই নুসরাতের নাকের সাথে লেগে গেল। হঠাৎ নুসরাতের নাকের সাথে হাঁটুর সংঘর্ষ লেগে নাক পিটপিট করে উঠলো। চোখে হালকা পানি জমা হয়ে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। নুসরাত শ্বাস নিতে না পেরে টেবিলের নিচ থেকেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
” আম্মা গো আমার নাক ফেটে গেল। এই আরশের বাচ্চার জন্য আমার সেনসেটিভ নাকের আজ বিনাশ হয়ে গেল। আমার নাক আ আম্মা গো আ আ আ….

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here