প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৮

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৮
জান্নাত নুসরাত

পাখির কিচির-মিচিরের সাথে সৈয়দ বাড়িতে শুরু হয়েছে কোলাহল। আর এই কোলাহলের শেষ হবে গিয়ে রাতের নিস্তব্ধতার সাথে।
নুসরাত আর আরশ কেউ কারোর দিকে আজ তাকাচ্ছে না। ঘুম থেকে দেরি করে উঠার জন্য দুজনের নিশানা বর্তমানে ওয়াশরুমের দরজার দিকে। আরশ লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে যাবে নুসরাত পিছন থেকে আরশের পেট চেপে ধরলো। বিরক্ত হয়ে আরশ যখন নুসরাতের দিকে তাকালো তখন নুসরাত সামনের পাটির দাঁত বের করে বলল,”লাস্ট স্টেজ,এখন না গেলে হবে না।

আরশ নাক মুখ কুঁচকে ছি্হ বলে উঠলো। নুসরাত আরশকে ছি্হ বলতে দেখে ভাষণের মতো করে এক আঙুল উপরের দিকে তুলে আরশকে এডভাইজ দিতে দিতে বলল,”ছি্হ বলতেন নেই ওগো স্বামী, পৃথিবীর সকল জীব প্রাকৃতিক কাজটা করতে হয়। এসব বলতে নেই! আমি,আপনি, সবাইকে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়।
আরশ নুসরাতের ভাষণ না শুনে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত এক জায়গায় করে নুসরাতের দিকে মাফ চাওয়ার মতো করে বলল,”মাফ চাই বোন আমার। যা টয়লেটে যা! তোর না লাস্ট স্টেজ চলছে।
নুসরাত মনে হওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। ওয়াশরুমের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে মাথা বের করে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই তো।
” তাহলে যা বা….।
আরশ নিজের মুখ আটকে নিল। নুসরাত দরজা লাগাতে লাগাতে কি মনে হতেই দরজা ফাঁক করে আরশের উদ্দেশ্যে বলল,”আসলে না, ভা…ই…য়া…. নুসরাত একটুক্ষণ হি হি করে হাসল। তারপর কী ভেবে কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দিল।
আরশ দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলো,
“আজব পাবলিক!

সকালের নাস্তার সময় ও জায়িন ইসরাতকে খাবার খাইয়ে দিল মুখে তুলে। নুসরাত সূক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে শুধু দু-জনের গতিবিধি লক্ষ করলো। তারপর চোখ ছোট ছোট করে ইসরাতের পরণের কাপড়ের দিকে তাকালো। গতকাল রাতের সিল্কের শাড়ি পরে আছে। তারপর জায়িনের দিকে তাকালো। গতকাল রাতের কালো শার্ট পরে আছে জায়িন। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে চাইলো কিন্তু মিলল না।

খাবার খাওয়া বাঁধ দিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে আরশ নুসরাতের উরুতে থাপ্পড় মারল। দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বলল,”খাবার খাওয়া বাঁধ দিয়ে বান্দরের মতো ঝুলছিস কেন?
নুসরাত আরশের উরুতে দুটো চিমটি কাটলো। আরশ নুসরাতের হাতের উপর চিমটি কাটলো মুখ-চোখ বিকৃতি করে। নুসরাত আরশের সাথে না পেরে মাথা টেবিলের নিচের দিকে নামিয়ে হাতের পিঠে দাঁত বসিয়ে কামড় মারল যতক্ষণ পর্যন্ত না হাতের উপর চিমটি কাটার জ্বালা না মিটে।

আরশ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে ব্যথা হজম করে নিতে চাইলো কিন্তু নুসরাত একই জায়গায় আবার কামড় মারল। আরশ ফিসফিস করে বলল,”রুমে চল আজ তোর একদিন তো আমার একদিন।
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে চেয়ারে উঠে ঠিক হয়ে বসলো। আরশ নুসরাতের পানে ক্রোধে চোয়াল শক্ত করে তাকালো। নুসরাত না দেখার মতো করলো। কানের কাছে এসে আরশ কিছু বলতে নিবে নুসরাত হাত তুলে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করলো।

আরশ পরে দেখে নিবে ভেবে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল। খাবার খাওয়া শেষে নুসরাত, জায়িন আর ইসরাতের পিছন পিছন সিঁড়ির দিকে গেল, আসল রহস্য উন্মোচন করার জন্য। আরশ পিছন থেকে এসে নুসরাতকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো নুসরাত গো ধরে সিঁড়ির রেলিঙের হাতল ধরে ঝুলে পড়ল। আরশ টানলো নুসরাত সেখান থেকে এক পা নড়লো না।
জায়িন আর ইসরাত রুমে ঢুকতেই জায়িন দরজা লক করে দিতে চাইলো, নুসরাত দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। নুসরাত কে দেখতেই জায়িনের কপালে ভাঁজ পড়ল। বিড়বিড় করে বলল, “এই বিপদ আবার এখানে কেন?
নুসরাতের পিছন পিছন আরশ এসে রুমের ভিতরে ঢুকলো। জায়িন চোখ দিয়ে আরশকে ধমকে নুসরাতকে দেখালো। ইশারা করে বলল,তোর এটাকে নিয়ে যা!
আরশ এগিয়ে এসে নুসরাতের হাত ধরতেই নুসরাত ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল। চোখ তীক্ষ্ণ করে ইসরাত আর জায়িনের হাতের দিকে ইশারা করে বলল,

“রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি,হাত বের করুন তো?
জায়িন নিজের ক্রোধে শক্ত হওয়া চোয়াল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কে? তোমাকে হাত দেখাবো। আর কীসের রহস্যের গন্ধ পাচ্ছো তুমি?
নুসরাত নাক কুঁচকে জায়িনের দিকে তাকালো। আরশের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলল,”এই, দুল্লাভাইকে মুখ বন্ধ করতে বলুন তো স্বামী। আমার কাজে বাঁধা দিচ্ছেন কেন জিজ্ঞেস করুন তো সোয়ামী?
আরশ থতমত খেয়ে অস্বস্তি নিয়ে জায়িনের দিকে তাকাতেই চোখ-চোখি হলো। চোখ সরিয়ে নিয়ে নীরব স্রোতার ভূমিকা পালন করলো। এখন কথা বললেই ফেঁসে যাবে!
নুসরাত ইসরাতের পানে দৃষ্টি দিয়ে চোখের পাতা ফেলতে ফেলতে বলল,”আপা হাতটা বের করুন? দেখি কতটুকু কেটেছে!

ইসরাত হাত বের করতে চাইলো জায়িন চেপে ধরে রাখলো তার পিছনে ইসরাতের হাত। ইসরাত পায়ে পা ভর দিয়ে জায়িনের কানের কাছে পৌঁছাতে চাইলো। খাটো হওয়ার ধরুন পারল না। জায়িনের শার্ট ধরে টেনে নিজের দিকে নামিয়ে নিল। জায়িন কিছুটা কাথ হয়ে কান পাততেই ইসরাত বলল,”হাত দেখিয়ে দিন জায়িন।
জায়িন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হাত দেখাবো কেন? আমাদের স্বামী স্ত্রীর পার্সনাল ব্যাপার ও এতো ইন্টারফেয়ার কেন করছে?
ইসরাত জায়িনকে ভয় দেখিয়ে বলল,

” হাত দেখিয়ে দিন নাহলে আপনি ভাবতে পারবেন না কি হবে?
“কি হবে?
ইসরাত ফিসফিস করে বলল,
“একটা ক্লু দেই, ২০১২ সালের কথা কিছু মনে করুন।
জায়িনের কিছু মনে হতেই ফুস করে সব রাগ উড়ে গেল। তারপর একটু গাইগুই করলো ইসরাত কানে কানে বলল,”হাত দেখিয়ে দিন কিছু হবে না।
জায়িন আর ইসরাত হাত বের করলো পিছন থেকে ধীরে সুস্থে। জায়িনের মুখের অবস্থা ব্যগতিক। বুঝাই যাচ্ছে হাত দেখানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না। এভাবে থাকতে সে বেশ সাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
আরশের চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবে এমনভাবে তাকালো। দু-জনের হাতের দিকে দৃষ্টি রেখে নুসরাত থুতনিতে হাত দিয়ে বুঝার মতো করে বলল,”জটিল ব্যাপার স্যাপার।
তারপর দুজনের দিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলল,

“দু-জন কি হাতে হ্যান্ডকাফ পরে সিক্সটি….
নুসরাত পরের কথা বলার আগেই আরশ বুঝে গেল, কি বলতে চাইছে? ঝড়ের গতিতে মুখ চেপে ধরলো যাতে পরের কথা বলতে না পারে।
নুসরাত কে ফিসফিস করে বলল,
“বোন আমার একটু তো লজ্জা রাখ! আমার সামনে বলিস প্লিজ ওদের সামনে বলিস না। মুখ কন্ট্রোল কর, বাপ আমার! এতো নির্লজ্জ হলে চলে।
নুসরাত মুখ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে! আমি বুঝেছি তো! কিন্তু এটা মুখ চেপে বলতে হবে কেন? এভাবে বললেই তো আমি বলতাম না।
নুসরাত দু-জনের দিকে তাকালো। জায়িন প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”সিক্সটি কি বলছিলে বুঝিনি? আবার বলো।

নুসরাত কথাটা না শুনার মতো করে উড়িয়ে দিল। ইসরাতের হাতের দিকে সূক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে থেকে জায়িনের দিকে চোখা দৃষ্টিতে তাক করলো। চোয়াল শক্ত করে জায়িনকে কিছুটা ধমকে বলল,”শালা আপনি কি মানুষ? এটা আপনি কি করেছেন? একটা মেয়ের হাত এভাবে শক্ত করে কীভাবে বাঁধলেন আপনি? ধিক্কার জানাই আপনাকে।
ইসরাত নুসরাতের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল,”প্লিজ হাতটা খুলে দে, হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে।
নুসরাত সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,”গতকাল রাতে বললি না কেন? এখন বলছে, হাত খুলে দে ব্যথা হচ্ছে! চাবি কোথায় বল? খুলে দিচ্ছি।
ইসরাত জায়িনের দিকে বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকালো। জায়িন চোয়াল ঝুলিয়ে রেখেছে। তার তো এভাবে থাকতেই ভালো লাগছে।

“উনি একটা এক্সপিরিমেন্ট করতে গিয়েছিলেন, তারপর চাবি কোথায় হারিয়ে গিয়েছে?
নুসরাত ভেঙ্গানো স্বরে বলল,
” উনি…..
ইসরাত তিক্ত বিরক্ত হয়ে আদেশ দিয়ে বলল,
“ভেঙ্গানো আর ডং বাঁধ দিয়ে তাড়াতাড়ি কোনো ব্যবস্থা কর।
নুসরাত বুকে হাত দিয়ে বলল,
” যথাআজ্ঞা মহারাণী!
কথাটা শেষ করে দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আরশ চোখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার পানে তাকিয়ে। নুসরাত যে গতিতে গিয়েছিল সেই গতিতে হাতে একটা হ্যামার নিয়ে ফিরে আসলো।
দুজনকে বারান্দায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল,

“টেবিলের উপর হাত রাখুন। আমি আলগোছে লক ভেঙে ফেলবো।
নুসরাত হ্যামার দিয়ে আঘাত করতে লাগলো হ্যান্ডকাফে একের পর এক। জায়িন নিজের মুখ বিকৃত করে নিল, মনে হলো হ্যান্ডকাফে নয় তার হাতে আঘাত করা হচ্ছে। হ্যান্ডকাফ বাঁকা হয়ে গেল তবুও খুলল না। নুসরাত বিড়বিড় করে গালি দিয়ে উঠল,”শালা ভাঙবে তবুও মচকাবে না।
আরশ বলল,
” আমাকে দে?
“আপনি পারবেন?
“পারি কি না পারি তা দেখে নিস!

জায়িন বার বার চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল আরশকে না ভাঙার জন্য। চোখ দিয়ে দেখালো দরজার দিকে। সে তো এভাবেই ভালো আছে। তার ভালো লাগা এদের সহ্য হচ্ছে না। উঠে পরে লেগেছে জামাই বউ তার সুখ নষ্ট করতে। একটু বউকে নিয়ে রোমান্স করবে তা ও এদের জন্য সম্ভব হচ্ছেনা। এভাবে হলে তো চলবে না। কিছু ব্যবস্থা করতে হবে।

আরশ জায়িনের ইশারা পাত্তা না দিয়ে নুসরাতের হাত থেকে হ্যামার নিয়ে আঘাত করলো শক্তি দিয়ে। এক আঘাতেই ভেঙে গেল হ্যান্ডকাফ। চূর্ণ -বিচূর্ণ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। নুসরাত শেষ পর্যন্ত হ্যান্ডকাফ ভাঙতে দেখে খুশিতে লাফ মেরে উঠলো। দেখে মনে হলো কোনো যুদ্ধ জয় করেছে।
আরশ হ্যামার হাতে নিয়ে নুসরাতের পানে তাকাতেই দেখলো বেতের চেয়ারের উপর উঠে লাফ দিচ্ছে। হা হা করে হাসছে হ্যান্ডকাফ ভাঙতে দেখে। খুশি উল্লাস শেষে নুসরাত হাত পাতল ইসরাত আর জায়িনের দিকে।
জায়িন ভ্রু বাঁকাল। ইসরাত ধরতে পারল নুসরাত কি চাচ্ছে?
শান্ত গলায় বলল,

” রুমে আয় দিচ্ছি!
নুসরাত ইসরাতের সামনের হাত গুটিয়ে নিল। জায়িনের সামনের হাত এখনো আছে। জায়িন ঠোঁট কামড়ে বলল,”কি?
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে বলল,
” আমরা স্বামী স্ত্রী এতো কষ্ট করলাম তার পাওনা দেন?
জায়িন বুঝতে পারল নুসরাতের কথা। ঠোঁট বাকিয়ে হাসল।
“তোমার কাছে আমার আমেরিকান এক্সপ্রেস (American Express) রয়েছে। এখনো ফিরত দাওনি তুমি!
নুসরাত মনে হওয়ার মতো মাথা নাড়ালো। আরশ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলল,”তুমি তোমার ব্ল্যাক কার্ড ওকে দিয়েছো?
জায়িন হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়াতেই আরশ চিন্তিত গলায় মৃদু চিৎকার করে উঠলো।

“আরে তোমার সব টাকা এই মহিলা উড়িয়ে দিবে। পাওনি আর মানুষ, এই মহিলাকে দিয়েছো তোমার ব্ল্যাক কার্ড।
জায়িনের রাশভারী গলায় বলল,
” একটাই জীবন, একটু তো ইনজয় করবে করে নিক। একমাত্র শালি আমার, দু-মাত্র ভাইয়ের বউ, ত্রি-মাত্র বোন আমার। এতো এতো সম্পর্ক, একটা তো কিছু দেওয়া উচিত।
নুসরাত খুশি হয়ে জায়িনকে জড়িয়ে ধরতে গেল হাত বাড়িয়ে জায়িন ও সাদরে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু মাঝখান থেকে আরশ এসে দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে গেল। নুসরাত কে একপ্রকার টেনে নিয়ে গিয়ে নিজের পাশে দাঁড় করালো। জায়িনকে কিছুটা আদেশ দিয়ে বলল,”আমার বউকে জড়িয়ে না ধরে, নিজের বউকে জড়িয়ে ধরো। আমি আছি আমার বউকে জড়িয়ে ধরার জন্য। হুহ….
জায়িন ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“এতো জেলাস আরশ! নিজের ভাইয়ের উপর জেলাস। নট বেড। দেখিস জ্বলতে জ্বলতে না নিজেই জ্বলে যাস।
ইসরাত তাড়াহুড়ো করে বের হতে লাগলো জায়িনের রুম থেকে। নুসরাত নিজের হাত আরশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ইসরাতের পিছন পিছন গেল। যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরশের উদ্দেশ্যে চোখ মারতে ভুলল না।

কনাফারেন্স রুমে গম্ভীর মুখ নিয়ে চোখে চশমা এটে আরশ বসে আছে। তার থেকে দুটো চেয়ার পরে ডায়না বসে আছে। আর আরশের ঠিক সামনা বরাবর বসে আছে আরশের বয়সী এক লোক কোট পরে। তার পাশেই বসে আছে স্লিভলেস টপস আর শর্ট স্কার্ট পরিহিত এক রমণী।
আরশ আর লোকটার কথা বলার মাঝেই কনাফেরেন্স রুমের বাহির থেকে কর্কশ গলায় কেউ বলে উঠলো,
” মে আই কামিং?
“ইয়েস কামিং!
নুসরাত হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে ঝড়ের গতিতে ঠুস ঠাস করে এসে কনফারেন্স রুমে ঢুকলো। ব্যাগ গুলো টেবিলের উপরে রেখে দু-জনকে বলল,” হ্যালো মিস্টার এন্ড মিসেস মালহোত্রা।

মিসেস মালহোত্রা হালকা হেসে হাত নাড়ালেন। আরশের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই আরশ উঠে দাঁড়ালো।আরশকে উঠে দাঁড়াতেই দেখে মিস্টার এন্ড মিসেস মালহোত্রা উঠে দাঁড়ালেন, সৌজন্যতা রক্ষাতে।
আরশ ইশারা করে তার কাছে আসার জন্য নুসরাতকে বলল। নুসরাত তো নুসরাত সে এক পা আগালো না আরশের দিকে। এমন অবজ্ঞা আরশ সচরাচর হয় তাই নিজ থেকে পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেল নুসরাতের দিকে।
হাত বাড়িয়ে নুসরাতের কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে এনে তার দিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলল,”মিট মিস্টার এন্ড মিসেস মালহোত্রা, মাই ওয়াইফ এন্ড অলসো মাই বিজনেস পার্টনার মিসেস সৈয়দ আরশ হেলাল।
নুসরাত উপরের পাটির দাঁত বের করে হাসল। মিস্টার মালোহোত্রা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করার জন্য এগিয়ে আসলো আরশ নুসরাতের দু-হাত একত্রিত করে দিল।নুসরাত কিছু বলতে নিবে চোখ দিয়ে ইশারা করলো আদাব বলার জন্য।
আরশ বলল,

“আমার মিসেস পুরুষ মানুষের সাথে হাত মিলাতে অস্বস্তি বোধ করেন।
নুসরাত থতমত খেয়ে আদাব করার পরিবর্তীতে আসসালামু আলাইকুম বলল। মিস্টার মালহোত্রা ব্যঙের মতো মুখ হা করে নিলেন অস্বস্তিতে।
নুসরাত বলে উঠলো,
“স্যরি! লিটেল মিস্টেক, আদাব মিস্টার সারাদ্ মালহোত্রা এন্ড মিসেস বেলা মালহোত্রা।
নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হে হে করে হাসল। মিসেস মালহোত্রা হ্যান্ডসেক করে নুসরাত কে জড়িয়ে ধরলো।
নুসরাত পিছন ফিরে ডেকে উঠল আবির আর রুবাকে। রুবা এবং আবিরের হাতে ও কয়েকটা শপিং ব্যাগ। মিস্টার সারাদ্ মালহোত্রা অবাক হয়ে তাকালেন।
নুসরাত বলল,

” আবির টেবিলের উপর রাখো!
বেলা মালহোত্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“এসব কীসের জন্য?
নুসরাত হাসল ঠোঁট বাঁকিয়ে। দাঁত কেলিয়ে সত্যি বলে দিল।
” আসলে আপনারা ডিল ফাইনাল করার জন্য এগুলো দিয়েছি।
সারাদ্ মালহোত্রা থুতনিতে আঙুল রেখে বললেন,
“যদি আমরা ডিল ফাইনাল না করি মিসেস আরশ? আপনি কি আমাদের এগুলো দিবেন না!
নুসরাতের সোজা সাপ্টা উত্তর,

” না দিব না। এগুলো আবার শপিংমলে রিটার্ন দিয়ে আসবে।
‘শপিংমলে রিটার্ন নিবে?
“অবশ্যই নিবে! আমি নিয়ে আসার সময় জিজ্ঞেস করে নিয়ে এসেছি ব্যাক দেওয়া যাবে কিনা?
সারাদ্ গম্ভীর গলায় বলল,
” বাহ, আমি আপনার উপর ইম্প্রেসড। আপনি কি সবসময়, এরকম সত্য কথা বলেন?
নুসরাত হ্যাঁ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। আরশ বিচলিত হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। সারাদ্ আর বেলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হেসে উঠলো একসাথে। আরশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল সারাদ্। আরশ ভ্রু বাঁকাল। সারাদ্ চোখ দিয়ে হাতের দিকে ইশারা করলো।
নুসরাত আরশের উপর বিরক্ত হয়ে নিজে গিয়ে হ্যান্ডসেক করে নিল। আরশের টনক নড়তেই হালকা হেসে হ্যান্ডসেক করলো। চোখ দিয়ে নুসরাত কে শাসাতে ভুলল না।

“মিস্টার এন্ড মিসেস সৈয়দ, আপনাদের সাথে আশা করি আমাদের জার্নিটা অনেক সুন্দর হবে।
” আমি ও আশা করি সুন্দর একটা জার্নি হবে আপনাদের সাথে মিস্টার এন্ড মিসেস মালহোত্রা ।
“একদিন আপনার স্ত্রীকে নিয়ে আমার বাসায় আসবেন। আপনার স্ত্রী সত্যি একজন আমাজিং পার্সন। তাহলে আজ আসি!
ঢিল ফাইনাল হওয়ার জন্য নুসরাতের দিকে তাকিয়ে কেজুয়ালি হাত মিলাতে চাইলো সারাদ্ নুসরাত ও হাত বাড়ালো কিন্তু আরশ মাঝখানে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে হ্যান্ডশেক করে গম্ভীর মুখ বানিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
সারাদ্ আরশের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে বলল,

” আপনি সত্যি একজন জেলাসি পার্সন। এতো জেলাসি মিস্টার আরশ! এই দেখুন আমার ওয়াইফ আছে আমি কেন আপনার স্ত্রীর দিকে নজর দিব? এতো জেলাস হবেন না।
বেলা সারাদে্র কথায় সারাদ্ কে জড়িয়ে ধরে হেসে উঠলো। সারাদ্ একটু থেমে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “মিসেস সৈয়দ আমি কি এবার জিনিস গুলো নিয়ে যেতে পারি।
নুসরাত মাথা নাড়ালো হ্যাঁ ভঙ্গিতে। তারপর বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল তারা। নুসরাত সামনে এগিয়ে দিতে চাইলো, সামনের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে হাতে টানার মতো অনুভব হলো। চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো আরশ তার হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুখ লটকিয়ে। নুসরাত হাত ছাড়ার কথা বলল আরশ নির্লিপ্ত চোখে একবার তাকিয়ে গ্লাস দিয়ে আবৃত জানালার দিকে এগিয়ে গেল সাথে টেনে নিয়ে নিজের সাথে গেল নুসরাতকে।

জানুয়ারি মাস প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইসরাত জানতো না কি আজ বৃষ্টি হবে তাহলে এই সাদা রঙের কুর্তি পরে আসতো এখানে।
জায়িন ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ইসরাতকে কখন থেকে ধমকে যাচ্ছে। কেন আজ সাদা কাপড় পরেছে? সাদা কাপড়ে বৃষ্টির ফোটা পড়ায় পিছন থেকে অন্তর্বাসের ফিতা দেখা যাচ্ছে। জায়িন ইসরাতকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এরপর ও মানুষের বার বার তাদের দিকে ফিরে তাকাতে দেখে নিজের পরনের গ্রে কালার শার্ট খুলে ইসরাতকে পরিয়ে দিল।

ইসরাত হা করে তাকিয়ে থাকল। জায়িন ইসরাতের এমন দৃষ্টি দেখে টিটকারি মেরে বলল,”এভাবে বেশি হট লাগছে?
ইসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াতে গিয়ে নিজেকে থামালো। ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে রইলো।
জায়িন ইসরাত কে লজ্জা দেওয়ার জন্য বলল,
” হাসছো তার মানে লাগছে।
ইসরাত জায়িনকে ঠান্ডা গলায় বলল,
“নিজেকে কি মনে করেন আপনি?
” হট মনে করি।
“কে বলেছে এটা আপনাকে, যে আপনি হট?
” কেউ বলা লাগে নাকি আমি জানি!
“বললেই হলো মিস্টার জায়িন।
জায়িন ইসরাতের কানের দিকে ঝুঁকে বলল,

” হ্যাঁ বললেই হলো, কারণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আমাকে নিজ মুখে বলেছে এই কথা।
ইসরাত প্রথমে বুঝতে পারল না। যখন বুঝলো জায়িন তার কথা বলছে তখন লজ্জা গাল লাল হয়ে গেল।
জায়িন কথা হাস্যরস মিশিয়ে বলল,
“দেখেছো, আমি ঠিক বলেছি! তুমি আমাকে হট মনে করো, তাই তো গাল লাল হয়ে গেছে।
ইসরাত নির্লজ্জের মতো বলল,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৭

” হ্যাঁ মনে করি! এবার মুখ বন্ধ করুন। কখন থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন—আপনি হট? দুনিয়ার সব মানুষ জেনে গেছে,যে আপনাকে কেউ একজন বলেছে, আপনি হট। আর এরকম সেন্ডো গেঞ্জি পরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন?
জায়িন ঝুঁকে ইসরাতের ঘাড়ের কাছে নিজের থুতনি রাখলো। কোমর থেকে উদর পর্যন্ত দু-হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো। গলার আওয়াজ নিচে নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,”নিজেকে হট প্রমাণ করতে চাইছি।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here