প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৯
জান্নাত নুসরাত
সৈয়দ বাড়িতে পিনপতন নীরবতা। দরজা খোলা আর লাগানোর শুধু ঠাস ঠাস শব্দ হচ্ছে। পর্দা সরিয়ে ইসরাতের রুমে মাথা ঢুকালো নুসরাত, চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে সেখানে ও কিছু পেল না। মুখের অবস্থা বিকৃতি করে বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে চোয়াল ঝুলিয়ে বসে রইলো সোফার উপর। আরশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নামলো। নুসরাত কে চোখ মুখ বিকৃতি ঘটিয়ে বসে থাকতে দেখে চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে? এভাবে নাক-মুখ তুলে বসে আছিস কেন?
নুসরাত কথার উত্তর দিল না। আরশ কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলল,”ভাত খেলে আয়?
নুসরাত দুঃখে ভারাক্রান্ত মুখ নিয়ে মিনমিন করে বলল,
“খাবো না!
“কেন খাবি না? শরীর খারাপ?
“না।
“তাহলে?
নুসরাত প্রচুর সিরিয়াসনেস নিয়ে বলল,
“একটা সিরিয়াস বিষয় হয়েছে?
আরশ কৌতূহল নিয়ে বলল,
” কি সিরিয়াস বিষয়?
“আসলে ইসরাতকে বাড়িতে কোথাও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আরশ নির্লিপ্ত গলায় বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
” এটা কোনো সিরিয়াস বিষয় হলো?
নুসরাত বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলিয়ে ফেলল। এটা সিরিয়াস বিষয় নয়। জায়িন ইসরাত দু-জন বাড়ি থেকে উধাও আর এর কাছে মনে হচ্ছে না সিরিয়াস বিষয়।
নুসরাত ব্যথাতুর গলায় বলল,
“এটা কোনো সিরিয়াস বিষয় আপনার কাছে মনে হচ্ছে না? ইসরাত আর জায়িন বাড়ি থেকে উধাও! দু-জনের রুম খালি পড়ে আছে।
” অবশ্যই না! রুম খালি পড়েই তো থাকবে, কারণ ইসরাত আর জায়িন চা বাগানে ঘুরতে গেছে।
নুসরাত তিনশত ষাট ডিগ্রী এঙ্গেলে চোয়াল ঝুলিয়ে হা করে তাকালো আরশের দিকে। বাংলা সিরিয়ালের মতো চিৎকার করে বলল,”না এ হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি না।
আরশ নুসরাতকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে চলে গেল। প্লেটে ভাত বেড়ে নিজের জন্য নিয়ে এসে সোফায় বসতে যাবে নুসরাত বলল,”আপনি আমাকে আগে বলবেন না।
আরশ অবাক গলায় বলল,
“এটা কেন তোকে বলতে হবে?
নুসরাত রাগী চোখে তাকালো আরশের দিকে। কথা বলল না। আরশ আদেশের স্বরে বলল,”যা ভাত খা গিয়ে? এখানে বসে ডং করা বন্ধ কর।
“খাব না!
“কেন?
নুসরাত পেটের কাছে হাত বেঁধে বলল,
“আপনার ওপর আমি রাগ করেছি।
আরশ বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলিয়ে ফেলল। হা করা মুখ হাত দিয়ে বন্ধ করে বলল,”আমি আবার কি করেছি, যে আমার উপর তুই রাগ করেছিস?
“আপনি কি করেননি বলুন! আপনি বলেননি ওরা চা বাগানে গিয়েছে, আমাকে একবার না সেধে এক প্লেট ভাত নিয়ে চলে আসছেন শুধু নিজে খাওয়ার জন্য। আর কি বলবো আপনাকে? আপনার মানবতা দেখে আমি স্পিচলেস। মনবতা এই পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই।
নুসরাতের এতো কথার পিঠে আরশ জিজ্ঞেস করলো,
“তুই ওরা ওখানে গিয়েছে আগে জানলে কি করতি?
“এটা এখন জিজ্ঞেস করছেন! আগে জিজ্ঞেস করলেন না কেন?
আরশ নুসরাত কে এতো কথা বলতে দেখে হাত জোর করে মুখের সামনে নিয়ে বলল,”মাফ কর আমার মা! তোকে জিজ্ঞেস না করা আমার ভুল হয়েছে—আর এখন জিজ্ঞেস করে ভুল করেছি।
নুসরাত চোখা দৃষ্টিতে তাকালো। আরশের দিকে ভ্রু বাঁকা করে তাকিয়ে বলল,”আচ্ছা এখন বলি—আমি ওদের দুজনের মাঝখানে বসে ওখানে যেতাম। একা একা যে গেল ওদের বিউটিফুল বিউটিফুল কাপল পিক এখন কে তুলে দিবে। আমি গেলে তো দু-একটা পিক তুলে দিতাম।
আরশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
” তুই ওদের মাঝখানে বসে যাবি কেন?
“কাবাব মে হাড্ডি বলে কথা আছে না, আমি ওটাই হতাম। আপনি এই কথা আগে বলেননি কেন, ওরা চা বাগান গিয়েছে, তাই আপনার উপর আমি রাগ করেছি।
” আচ্ছা রাগ করে থাক কিন্তু, ভাত খা গিয়ে। ভাতের উপর রাগ করলে তারা তো ফিরে আসবে না ।
নুসরাত থুতনিতে হাত রেখে ভাবল সত্যি তো সে না খেলে তো ওরা ফিরে আসবে না। আরশ শালাটা ঠিক কথাই বলেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশ শার্টের হাতা গুটাচ্ছে যাতে খাবার খাওয়ার সময় খাবারের মশলা শার্টে না লাগে। নুসরাত হাত বাড়িয়ে আরশের কোল থেকে প্লেট ছু মেরে নিয়ে আসলো।
আরশের কোলের উপর পা রেখে নিজের পিছনে কুশন রেখে আরাম করে বসলো। আরশ হতবিহ্বল হয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে। কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে নুসরাত থামিয়ে দিয়ে বলল,”উঁহু কথা বলবেন না তো। আপনার গলা থেকে কথা বের হলেই মনে হয় আপনি হাউ মাউ করে কথা বলছেন। কান ব্যথা করছে, সাথে এখন কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।
“কিন্তু ,আমার খাবারের প্লেট তুই নিলি কেন?
” কারণ এটা আপনার শাস্তি! এখন আমি আপনার খাবার খাব আর আপনি বসে বসে দেখবেন, আমার খাবার খাওয়া।
আরশ কথা বলতে নিতেই, নুসরাত ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ দেখালো। আরশ মুখ গম্ভীর করে বসে রইলো। নুসরাত পা নাচিয়ে শুয়ে ভাত মাখাতে লাগলো। আরশ গম্ভীর গলায় বলল,”হাত ধুয়ে খা?
নুসরাত মুখে ভাতের লোকমা পুরে বলল,
“আমি এসেই হাত ধুয়েছি। এখন কেন আবার হাত ধুবো? চুপ করে বসুন তো। আর এতো কথা না বলে আমার পা দুটো তো টিপে দিতেই পারেন।
আরশ গম্ভীর চোখে তাকিয়ে চুপচাপ পা টিপে দিতে লাগলো। নুসরাত আরশকে হাতের ইশারা কাছে ডাকলো। আরশ কাছে আসলো না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে কোলের উপর রাখা নুসরাতের পায়ের আঙুল টেনে দিতে লাগলো।
নুসরাত উঠে বসে আরশের কোল থেকে পা নামিয়ে আসন পেতে সোফায় বসলো। এক লোকমা ভাত এগিয়ে দিল আরশের দিকে। আরশ চোখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
” আরে আমি হাত ধুয়েছি! আপনি চিন্তা করবেন না, আমার হাতে একটু ময়লা নেই। যদি সন্দেহ থেকে থাকে তাহলে খাবার খাওয়ার পর, একটু সেনিটাইজার খেয়ে নিবেন কেমন?
আরশ হতবিহ্বল হয়ে গেল। নিজেকে বুঝ দিল, নুসরাতের পক্ষে সবকিছুই সম্ভব। এসব তার জন্য নরমাল ব্যাপার। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হা করতে নিবে নুসরাত নিজেই খেয়ে নিল। তারপর বোকার মতো হেসে বলল, “আসলে আপনি খাচ্ছেন না তো, তাই আমিই খেয়ে নিলাম। এবার এক লোকমা ভাত দিয়ে এক থেকে তিন গুণবো তার মধ্যে খেয়ে নিয়েন।
আরশ বিস্ময়ে কাটিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। নুসরাত ১,২,বলল। আরশ ভাবল তিন বলার পর ভাত খাবে কিন্তু, নুসরাত দুই বলে এই লোকমা খেয়ে নিল।
আরশ ইয়া বড় হা করে বলল,
” এই লোকমা না আমাকে দিবি?
“দিলাম তো আপনি খাননি, সময় শেষ করেছেন হা করে তাকিয়ে! আমার কি দোষ?
” তুই তো তিন পর্যন্ত গুণবি বললি!
“তিন গুণার প্রয়োজন মনে করি না। তিন বলতে বলতে চার সেকেন্ড হয়ে যাবে। এইবার দিব শেষবারের মতো হা করে তাকিয়ে থাকবেন না—ফট করে খেয়ে নিবেন।
নুসরাত ভাত ভালো করে মাখিয়ে আরশের দিকে বাড়িয়ে দিল। আরশ শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকল নুসরাতের বাড়ানো হাতের দিকে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে তার। হৃৎপিন্ডের অস্বাভাবিক ধুক ধুক শব্দ আরশের কানে লাগলো। নুসরাতের দিকে একবার দ্বিধা নিয়ে তাকালো। নুসরাত কি শুনছে তার বুকের ভিতর ধুক ধুক ঢোল পিটিয়ে চলা হৃৎপিন্ডের ধ্বনি। তার এই অস্থিরতা কি নুসরাত অবলোকন করছে। না করলে, না করুক! সে বেঁচে যাবে! হায় আল্লাহ! এসব কি হচ্ছে তার সাথে? বুক কাঁপছে কেন?এ কেমন অনুভূতি?
আরশের ভিতর থেকে কেউ বলল,
“তুই ফেঁসে গিয়েছিস আরশ, এখান থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই তোর। নিজের হারের জন্য প্রস্তুতি শুরু কর৷ সময় শুরু হচ্ছে এখন,এই মুহুর্ত থেকে।
নুসরাত নির্লিপ্ত হয়ে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে ইশারা করছে ভাতের লোকমা মুখে নেওয়ার জন্য।
আরশ বুকের বাঁ-পাশ শার্টের উপর থেকে চেপে ধরলো যাতে শব্দ বাহিরে বের না হয়। বিড়বিড় করল,” আমি ফেঁসে গিয়েছি! যেই সেই ফাঁসা, ফাঁসিনি; কারোর মায়ায় ফেঁসে গিয়েছি।
আরশ নিষ্পলক দৃষ্টিতে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে। নুসরাত বিরক্ত হয়ে হাত নামিয়ে নিল। হাতে ব্যথায় হয়ে গেছে শালাকে খাওয়াতে গিয়ে। আরশের দিকে তাকাতেই নুসরাতের কাছে মনে হলো সময় এখানে থমকে গিয়েছে। চোখের পলক ফিরাতে পারল না। ঠোঁট হালকা কেঁপে উঠলো। নিজ মনে ভাবল, এটা কেমন চেয়ে থাকা? চোখ সরাচ্ছে না কেন? চোখ সরা শালা! চোখ সরাবি না কি কাটা চামচ ঢুকিয়ে দিব তোর চোখে?
নুসরাতের এতো কথার পিঠে আরশ চোখ সরাল না। সরাবে কীভাবে? সে কি শুনতে পাচ্ছে নাকি, নুসরাতের মনোভাব? তাকে নিয়ে কি ভাবছে?
আরশের দৃষ্টির কবলে পড়ে নুসরাতের প্লেটে রাখা হাত থরথর করে কেঁপে উঠলো। পেটের ভিতর এক আলাদা উষ্ণতা অনুভব করলো। ঠোঁট চেপে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করলো। হয়তোবা ঠিক রাখতে পারল না। একই সময় একই দিনে দুই নর-নারী একে অপরের প্রেমে পড়ল।
প্রকৃতিতে গুঞ্জন শুরু হলো। হয়তো বুঝতে পারল দু-জন পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করা, মারামারি করা, একজন আরেকজন কে হেউ মূলক কথাবার্তা বলা, মানব মানবী দুজনের প্রেমে পড়েছে। বাহিরে পাল্লা দিয়ে বাতাস আর ধুলো বইতে লাগলো। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর পর শব্দ করে মেঘ ডেকে উঠলো। মেঘের গুরুম গুরুম শব্দে সোফায় বসে থাকা নুসরাত হালকা কেঁপে উঠে নিজের হুশে ফিরল। বাহিরের দিকে তাকাতেই দেখলো ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আরশকে হা করে এখনো তাকিয়ে থাকতে দেখে নুসরাত বজ্র কন্ঠে চিৎকার করে বলল,”এভাবে তাকিয়ে আমাকে গিলা বন্ধ করুন। চুপচাপ ভাত গিলুন।
আরশ নুসরাতের চোখে গম্ভীর চোখে তাকালো। নুসরাত বিরক্ত আর অস্বস্তিতে নিয়ে আগোছালো দৃষ্টি ফেলতে লাগলো।
“আরে ভাই এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আমার গা রিরি করছে। চোখ ফিরান, ওদিকে তাকান, এভাবে তাকালে মানুষ তো অস্বস্তি বোধ করবে। চোখ খুলে পড়ে যাবে এভাবে তাকালে। চোখ বন্ধ করুন!
আরশ একইভাবে তাকিয়ে রইলো। তার এভাবে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে, এখন থেকে সে এভাবেই তাকিয়ে থাকবে।
নুসরাত বাঁ-হাত বাড়িয়ে আরশের মাথা সোজা করে দিল। বাঁ-হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিল। তারপর ও মনে হলো আরশ চোখ ঢাকা অবস্থায় তার দিকে তাকিয়ে তার পুরো শরীর স্ক্যান করছে।
নুসরাত শক্তি দিয়ে আরশের চোখ চেপে ধরলো। ভাত মুখে দিতেই আরশ কামড় মারল আঙুলের ঢগায়। নুসরাত মুখ-চোখ বিকৃতি করে আরশের চুল টেনে ধরার প্রস্তুতি নিতেই আরশ বলল,”সকালে যে কামড় মেরেছিলি তার শোধ নিলাম।
নুসরাত চোখ ছেড়ে দিয়ে চুল টেনে ধরলো। আরশ প্রচুর বিরক্তির স্বরে বলল,” তুই যেখানে সেখানে চুল টেনে ধরবি না তো, আমার বেড ফিল আসে।
নুসরাত মৃদু চিৎকার করে বলল,
“কি কি? আবার বলুন, বুঝতে পারিনি!
” তুই এভাবে চুল টেনে ধরবি না। if you pull my hair, it gives me an intense sensation of ecstasy.
“ইউ সেইমলেস! ইয়াক…
” কীসের ইয়াক? তুই জিজ্ঞেস করেছিস আমি শুধু বলেছি এখানে ইয়াক বলার কি আছে? ভাত দে খিদে লাগছে।
“নিজে নিজে খাও! আমি পারব না।
নুসরাত উঠে চলে যেতে চাইলো। আরশ নুসরাত কে জোর করে সোফায় বসিয়ে, হাত দিয়ে উরু চেপে ধরলো। হাত টেনে নিজের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে নিল।
” তোকে বলেছি আমি, খাইয়ে দেওয়ার জন্য। তুই খাইয়ে দিয়েছিস এবার তুই পুরো প্লেটের খাবার খাইয়ে দিয়ে যাবি। তার আগে এখান থেকে এক পা নাড়াতে পারবি না।
নুসরাত অনিহা নিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো আরশকে। আরশ খাবার খাওয়ার সময় একবার হলে হাতে কামড় মারে তো একবার হলে আঙুলে এমনভাবে জিহ্বা স্পর্শ করে যে নুসরাতের পুরো শরীর শিরশির করে উঠে।
নুসরাত খাবার খাওয়ানো শেষে প্লেট নিয়ে যাবার সময় বিড়বিড় করে বলল,”শালা বদমাস! সুযোগ সন্ধানী! যখন সুযোগ পায় তখন গালে, ঠোঁটে চুমু খায় নাহলে, কামড় মারে।
আরশ পিছন থেকে চিৎকার করে বলল,
“তুই যদি চাস বেবি, আমি আবার তোর ওই ঠোঁটে চুমু আর কামড় খেতে চাই। আর না চাইলে ও…
কথাটা বলে আরশ অধর প্রসারিত করলো। নুসরাত কিচেন থেকে গালি ছুঁড়ল আরো দু-একটা আরশের উদ্দেশ্যে। আরশ গায়ে মাখল না নুসরাতের গালি গুলো। হেসে উড়িয়ে দিল।
ইসরাত এবং জায়িন অনেক্ষণ ধরে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ প্রায় সবাই চলে গিয়েছে। দু-একজন ছাড়া। জায়িন আর অপেক্ষা করলো না। ইসরাতকে আদেশের স্বরে বলল,”এখানে অপেক্ষা করে আর কোনো কাজ নেই। চলো বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ি ফিরতে হবে।
ইসরাত বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই দেখলো ঠান্ডা বরফ পানি। বুকের ভিতর থরথর করে কেঁপে উঠলো। দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,”না বাবা, প্রয়োজন হলে আজ আমি এখানে থেকে যাব কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ভিজে বাড়িতে যাব না। উফ কি ঠান্ডা পানি?
জায়িন ইসরাতের দিকে গম্ভীর চোখে তাকালো। ভারী গলায় বলল,”আসো কিচ্ছু হবে না। তুমি যতোটা ঠান্ডা পানি ভাবছো ততোটা ঠান্ডা পানি নয় এটা।
ইসরাত এক পা আগালো না। জায়িন ইসরাতের দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে পা বাড়িয়ে এগিয়ে আসলো। ইসরাতকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়ে হাঁটুর নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে পাজোকোলে তুলে নিল। ইসরাত ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। জায়িনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। চোখে বিস্ময় নিয়ে কিছু বলতে যাবে, হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর সংস্পর্শে শরীর কেঁপে উঠলো। ইসরাত মুখ দিয়ে হু হু করে শব্দ করলো।
“ডোন্ট মেইক নয়েজ লাইক দিজ।
ইসরাত কাপতে কাপতে বলল,
” হুয়াই?
“বিকজ,
জায়িন চুপ হয়ে গেল। ইসরাত প্রশ্নবোধক চাহনি দিল। জায়িনকে কথা বলতে না দেখে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো গলা। ঠোঁটের আগায় হাসি এনে বলল,” বিকজ কি? তাড়াতাড়ি বলুন?
জায়িন মাথা কিছুটা ঝুঁকিয়ে ইসরাতের কানে কানে কিছু বলতেই ইসরাতের ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল। জায়িনের পিঠে কিল বসিয়ে বলল,”ছি্হ আপনি কি অশ্লীল আর নির্লজ্জ?
“অশ্লীল আর নির্লজ্জ না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আসবে না? তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটু আকটু অশ্লীল হতেই হবে।
ইসরাত লজ্জায় হেসে উঠলো। জায়িন ইসরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে গম্ভীর গলায় গুণগুন করে মাহি গানের সুর তুলল। ইসরাত হা করে তাকিয়ে থাকল জায়িনের মুখের দিকে। জায়িন ডিপ গলায় গুণগুণ করে ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,
“tujhe milke laga hai ye,
tujhe dhoondhe raha tha mai
tujhe milke laga hai ye,
tujhe dhoondhe raha tha mai
tujhme hai kuch aisi subah sa,
jiski khatir mai tha jaga saa
a tu mere khwab saja ja re,
mahi aaja re mahi aaja re
tujhme hai kuch aisi subah sa,
jiski khatir mai tha jaga saa
a tu mere khawab saja jare
dil roye aaye rahi tu aaja mere mahi
dil roye aaye rahi tu aa ja mere mahi
dil roye aaye rahi tu aaja mere mahi
mere mahi mere mahi tu aaja mere mahi.
প্রকৃতিতে মেঘের ঠান্ডব বেড়ে গেল। জায়িনের গম্ভীর গলার আওয়াজ ঢাকা পড়ল বৃষ্টির পড়ার ছন্দে। দূর থেকে গাছ-পালা এলোমেলো ভাবে ঘূর্ণন করতে লাগলো। বৃষ্টির শীতল পানি ছুঁয়ে দিয়ে যেতে লাগলো ইসরাত আর জায়িনের শরীরকে। জায়িনের গম্ভীর গলার গান চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো ইসরাত। সে সবসময় চাইতো লাইফ পার্টনারের সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টির মাঝে একে অপরের হাত ধরে হাঁটতে,বৃষ্টির মধ্যে নিজেদের অনুভূতি গুলো একে অপরের সাথে ভাগা-ভাগি করে নিতে, নিজেদের দুঃখ গুলো বৃষ্টির পানির সাথে ভিজিয়ে দিয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে। সে এর থেকে বেশি কিছু আশা করেনি। আল্লাহর কাছে সে যা চেয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ বেশি আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনা কারী তা আবার ও প্রমাণ হয়ে গেল।
রাত দশটার সময় ইসরাত আর জায়িন বাড়ির চৌকাঠ পার করলো। বৃষ্টিতে ভিজে দু-জনের অবস্থা নাজেহাল। চোখ-মুখের অবস্থা করুন। দু-জনের চোখ লাল হয়ে জ্বালা করছে, চোখ দিয়ে গরম পানি বের হওয়ার জন্য। লিপি বেগম আদেশ দিলেন ভিজে কাপড় তাড়াতাড়ি ছেড়ে গরম কিছু খাওয়ার জন্য, না হলে জ্বর আসবে। কিন্তু জ্বর সে তো কখন এসে বাসা বেঁধেছে দু-জনের উপর।
পরের দিন সকাল বেলা,
গাকাঁপিয়ে ইসরাত আর জায়িনের জ্বর আসলো। জ্বরে অর্ধজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে রইলো তারপরের দু-দিন। দু-দিনের জ্বরে হালকা রোগা হয়ে গেল জায়িন। ইসরাতের চোখের নিচে গাঢ় ডার্ক সার্কেল পড়ল। এর কয়েকদিন পর একটু একটু করে ইসরাত আর জায়িনের শরীর ঠিক হলো। অসময়ের জ্বর হওয়ায় একটু দেরি করে জ্বর ছাড়লো পিছু দু-জনের।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৮
জ্বরের জন্য সবাই জায়িনকে ধমকালো। কেন সে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে এসেছে? কোনো জায়গায় রুম ভাড়া নিয়ে এক রাতের জন্য স্টে করলেই তো পারতো। এতো তাড়াহুড়া করে বাড়ির ফিরার প্রয়োজন কি ছিল?
ইসরাত আর জায়িন সুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহ পর পারিবারিক ভাবে প্ল্যান হলো আগামী বৃহস্পতিবার ফ্যামেলি ট্যুরে যাওয়া হবে। ফ্যামেলি ট্যুর দেওয়ার আইডিয়া টা হেলাল সাহেব আর নাছির সাহেবের। অনেকদিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হয় না তাই এই প্ল্যান। সবাই রাজি হয়ে গেল পারিবারিক ট্যুরের জন্য। নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিল চট্টগ্রাম সমূদ্র সৈকত ট্যুরের উদ্দেশ্যে।