সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬০

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬০
Jannatul Firdaus Mithila

“ আপনাকে একটা কথা বলবো ডাক্তার সাহেব?”
এহেন কথায় অরিনের মাথাটা নিজের বুক থেকে খানিকটা উঠিয়ে নেয় রৌদ্র। মেয়েটার ছলছল চোখজোড়ার দিকে আবেশিত নয়নে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো ছেলেটা। নিজের সকল মন-খারাপগুলো একপাশে হটিয়ে সে কেমন মুগ্ধ কন্ঠে বললো,
“ একটা কেনো সানশাইন? হাজারটা বল!আমি সব শুনবো বউজান! তুই বল।”
অরিন ভেজা চোখে হাসলো। রৌদ্রের দিকে অনিমেষ দৃষ্টি তাক করে, নিজের ডানহাতটা উঠিয়ে আনলো ছেলেটার বাম-গালের ওপর।অতপর কিয়তক্ষন চুপ করে থেকে নিজেকে খানিক ধাতস্থ করে মেয়েটা কেমন ধরে আসা কন্ঠে কোনমতে বলতে লাগলো,

“ চলে গেলে আমায় ভুলে যাবেন না তো?”
এহেন কথায় রৌদ্রের ঠোঁটের কোণে দেখা মিললো এক অদ্ভুত রকমের ব্যাথাতুর হাসি। ছেলেটা তৎক্ষনাৎ অরিনকে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরলো শক্ত করে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর প্রয়াস চালালো বেশ কিছুক্ষণ। কিন্তু নাহ! কাজের কাজ যেন হচ্ছেই না..বরং বুকের ব্যাথাটা কেমন অদৃভুদভাবে বাড়ছে তার। রৌদ্র চোখবুঁজে আছে, কিন্তু তার বন্ধ চোখের পাতা বেয়ে নিঃশব্দে ঝড়ে পড়ছে নোনাধরা।হয়তো ছেলেটার ভেতরকার কষ্টগুলো অশ্রু রুপেই বেরিয়ে আসছে চোখবেয়ে। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে রৌদ্র ধীমী স্বরে থেমে থেমে বললো,
“ কেউ কি নিশ্বাস না নিয়ে বাঁচতে পারে সানশাইন? যদি না পারে তাহলে আমি কিভাবে তোকে ভুলে যাবো জানবাচ্চা? আমার প্রতিটা নিশ্বাস যেখানে তোর কথা মনে করিয়ে দেয় সেখানে তোকে ভুলে যাওয়া যে অসম্ভব!”
অরিন চুপ করে রইলো। হয়তো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।কিছুক্ষণ বাদেই সে রৌদ্রের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।ধরে আসা কন্ঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ যদি কোনোদিন আমি ভুলে যাই তখন কি করবেন।”
তড়িৎ নিজের সকল ঘোর যেন এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো রৌদ্রের।সে তৎক্ষনাৎ অরিনকে ছেড়ে দিয়ে, শক্ত হাতে মেয়েটার গলা চেপে ধরলো। এদিকে হঠাৎ আক্রমণে একপ্রকার ভড়কে গেলো মেয়েটা। গলাটা এহেন চেপে ধরায় নিশ্বাসটাও যেন জুড়িয়ে আসছে তার। সে মৃদু গুঙিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের রক্তবর্ণ হয়ে আসা চোখদুটোর দিকে। ভাব এমন— এমুহূর্তে ছেলেটার চোখের আগুনেই যেন ঝলসে যাবে মেয়েটা। রৌদ্র দাঁতে দাঁত চেপে অরিনের পানে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার দৃঢ় চোয়ালখানা কেমন শক্ত হয়ে গেছে চোখের পলকে। রৌদ্র রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে একপ্রকার গর্জন তুলে বলতে লাগলো,

“ কসম খোদার অরি, এমনটা হওয়া তো দূর, তুই যদি স্বপ্নেও কোনোদিন এমনটা ভেবে থাকিস তাহলে কান খুলে শুনে রাখ — আমি রৌদ্র সবার আগে তোর কলিজা খুলে হাতে নিয়ে আসবো,নয়তো তোরে জ্যান্ত কবর দিয়ে ফেলবো। তুই আমায় ভুলে যাবি মানে? এতোবড় দুঃসাহস ভুলেও দেখাতে যাস না মেয়ে।অকালে প্রানটা হারাতে হবে তখন। তাছাড়া যে-ই হৃদয়ে এই রৌদ্র থাকবেনা সে-ই হৃদয়টা এ দেহে থাকার কোনো প্রয়োজন নাই। সেটা আমি নিজ দায়িত্বে খুলে নিয়ে আসবো তোর দেহ থেকে।”

কথাটা বলেই রৌদ্র ছেড়ে দিলো অরিনের গলা। মেয়েটা ছাড়া পেয়েই কেমন বুক কাপিয়ে কাশতে লাগলো।মুখ হা করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগলো বুক ভরে। অন্যদিকে রৌদ্র এখনো রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। ছেলেটা এবার হুট করেই মেয়েটার মাথার পেছনের খোলাচুল গুলো মুঠোবন্দি করে নেয়।অরিন আবারও ককিয়ে উঠে। অথচ সেদিকে কোনরূপ পাত্তা দিলো না রৌদ্র। সে অরিনের চুলগুলো চেপে রেখেই মেয়েটার আদুরে মুখটা নিজের একেবারে কাছে নিয়ে আসে। মেয়েটার মুখপানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে, নিজের বৃদ্ধা আঙুলটা উঠিয়ে আনে মেয়েটার তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধরজোড়ার ওপর। অরিনের গোলাপের পাপড়ির ন্যায় নরম অধরজোড়া খানিকক্ষণ আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে রৌদ্র কেমন কামুক দৃষ্টি ফেললো সেথায়। মেয়েটার তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধরজোড়া, বন্ধ চোখের পাপড়ি, ঘনঘন নিশ্বাসের উঠানামা সবটাই যেন পাগল করে দিচ্ছে রৌদ্রকে।ছেলেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। এতক্ষণের রাগগুলো যে কোথায়
ছুটে পালালো তার কে জানে! ছেলেটার আবার এই এক দোষ! মেয়েটার আদুরে মুখখানার দিকে তাকালেই বুঝি নিজেকে কেমন হারিয়ে ফেলে সে! এই যেমন এখন হারাচ্ছে।

রৌদ্র পরপর শুকনো ঢোক গিললো কয়েকটা। বুঝো কারবার! আবারও গলাটায় কেমন শুষ্কতা নেমেছে তার। বুকটাতেও শুরু হয়েছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ধুকপুকানি।বেচারার ভাব এমন, এক্ষুনি বুঝি দেহের খাঁচা ছেড়ে ছুটে বেরিয়ে আসবে বাইরে। রৌদ্র থমকালো।জিভ দিয়ে নিজের শুষ্ক অধরজোড়া খানিক ভিজিয়ে নিলো কোনমতে। অরিনের চুলের গোছায় থাকা হাতটা তার সে-ই কবেই যে ঢিলে হয়ে গেছে সে খবর কি আর আছে বেচারার? বালাইসাট!থাকবেই বা কি করে? মেয়েটার মুগ্ধতার মোহে যেভাবে হারাচ্ছে না ছেলেটা… সেভাবে কি আর ওতো কিছুর দিকে তোয়াক্কা থাকে?
রৌদ্র অরিনের গালে আলতো করে হাত রাখলো।নিচু কন্ঠে বললো,

“ চোখ খোল জানবাচ্চা!”
অরিনের কি হলো কে জানে! মেয়েটা তৎক্ষনাৎ বেহায়া, নির্লজ্জদের মতো চোখদুটো খুলে ফেললো।অথচ কিছুক্ষণ আগেই সে মনে মনে পণ করেছে — আজকে আর কিছুতেই সে তার ডাক্তার সাহেবের কথা কানে তুলবেনা। কিন্তু মনের সে-ই কথাগুলো মানলে তো! অরিন চোখ তুলে চাইলো তার ডাক্তার সাহেবের দিকে। মেয়েটার চোখেমুখে সে কি মায়ার ঝলক! যেন এক ভয়ংকর অদৃশ্য বানে আঁটকে ফেলবে যে কাউকে।রৌদ্র আবারও ঢোক গিললো। তার কেন যেন মনে হচ্ছে — আজ বুঝি নিজেকেই সম্পূর্ণ রুপে হারিয়ে ফেলছে সে। তার বিচক্ষণ মস্তিষ্ক বারেবারে তাকে জাগান দিয়ে বলছে — নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকবার কথা, অন্যদিকে তার বেইমান অবচেতন মনটা বারেবারে বলছে তাকে — মেয়েটার মাঝে হারিয়ে যেতে। রৌদ্র পড়লো এক মহা বিপাকে। একদিকে বিচক্ষণ মস্তিষ্কের কথা অন্যদিকে বেইমান মনটার কথা, কোনদিকে যে যাবে সে….

রৌদ্র যখন নিজের ভাবনায় নিমগ্ন তখনি অরিন তার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ওঠে,
“ ডাক্তার সাহেব! আমার না…গলায় কেমন ব্যাথা করছে।”
ব্যস! এটুকু কথাই যেন যথেষ্ট ছিলো রৌদ্রকে আরেকদফা বিচলিত করে দিতে। ছেলেটা তৎক্ষনাৎ মেয়েটার মুখটা খানিক উঁচু করে তোলে।দৃষ্টি ফেলে অরিনের গৌড় বরণ কন্ঠদেশে। আর মুহুর্তেই ছেলেটার চোখেমুখে কেমন স্পষ্ট ফুটে ওঠে একরাশ অপরাধবোধ। মেয়েটার গলায় ইতোমধ্যেই দাগ বসে গেছে রৌদ্রের শক্তপোক্ত আঙুলের। রৌদ্র মাথা নুইয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। মন তো চাইছে নিজেকেই ইচ্ছেমতো শাসন করতে কিন্তু এমুহূর্তে মেয়েটার সামনে এহেন পাগলামি করলে যে হিতে বিপরীত ঘটবে! তাই রৌদ্র নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে অরিনকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিলো।মেয়েটার ওপর খানিকটা ঝুঁকে এসে বলতে লাগলো,

“ ঘুম পাড়িয়ে দেই বউজান? ঘুমিয়ে গেলে ব্যাথা কমে যাবে সোনা।আমি…আমি খুব সরি জানবাচ্চা!”
অরিন আলতো হাসলো।হাত বাড়িয়ে ছেলেটার কাঁধ আকড়েঁ ধরলো। অতঃপর কেমন ভাঙা ভাঙা গলায় বলতে লাগলো,
“ তারপর!”
রৌদ্র ভ্রু গোটায়। মেয়েটার এমন কথার জ্ঞাতার্থ না বুঝে ফের জিজ্ঞেস করলো,
“ তারপর?”
অরিন আবারও মুগ্ধ হাসলো। সে-ই হাসিতে দেখা মিললো তার দুগালর গর্তগুলো। রৌদ্রের বেড়াল চোখদুটো তো সাথে সাথেই মেয়েটার গালদুটোর চামড়ায় নিবদ্ধ হয়েছে। অরিন খানিকটা সময় নিয়ে বললো,

“ একটুও ভালোবাসবেন না?”
রৌদ্র এবার নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আনলো মেয়েটার চোখ বরাবর। ভ্রূদ্বয়ের মাঝে গোটা ভাজঁ ফেলে সন্দিহান গলায় বললো,
“ কতটুকু সহ্য করার ক্ষমতা আছে তোমার?”
“ যতটুকু দেবার সামর্থ্য আছে আপনার!”
রৌদ্রের কথার পিঠে তৎক্ষনাৎ কথাটা বলে ওঠে অরিন।রৌদ্র মেয়েটার এহেন সোজাসাপটা কথায় অবাক হলো বেশ। তার কন্ঠ ফুড়ে বেরিয়ে এলো অবাক বাক্য!
“ তাহলে একটুখানি নির্লজ্জ হই আমি?”
অরিন লাজুক হাসলো। চোখদুটো নামিয়ে নিলো সঙ্গে সঙ্গে। রৌদ্রও বুঝি পেয়ে গেলো তার কাঙ্ক্ষিত উত্তর। সে ফিচেল হেসে নিজের মুখটা নিচু করে আনে। মেয়েটার ললাটে গভীর চুমু একে, সেথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে রেখেই বলে ওঠে,

“ রেডি থাকিস জানবাচ্চা! কালকে তুই তোর স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ছাড়বি!”
অরিন তৎক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে। নিজের কানে শোনা কথাটা কি আদৌও সঠিক ছিলো কি-না সে নিয়ে পড়লো বিড়ম্বনায়। রৌদ্র ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট সরিয়ে আনে মেয়েটার কপাল হতে। তারপর মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চোখ মেরে বলে,

“ নিজের বউকে একা ফেলে রেখে যাওয়ার মতো মহৎ মানুষ আমি নই সানশাইন। সো তৈরি থেকো।”
অরিন এখনো হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার পেটে বুঝি জমে আছে একরাশ কথা অথচ কপাল মন্দ! মুখে একটাও কথা আসছেনা তার! রৌদ্র বেশ বুঝলো মেয়েটার মনের অবস্থা। সে চট করে মেয়েটার ওপর থেকে উঠে বসলো।হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশে থাকা টেবিলের প্রথম ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে আনলো।অরিন কৌতুহলতায় সে-ই কখন উঠে বসেছে কে জানে! সে তৎক্ষনাৎ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো রৌদ্রের হাতের ফাইলটার দিকে। রৌদ্র মেয়েটার এমন কৌতুহলতা দেখে বাঁকা হাসলো। ধীরেসুস্থে ফাইলটা খুলে সেখান থেকে দুটো পাসপোর্ট এবং দুটো ভিসা এবং বোর্ডিং পাস। একটাতে রৌদ্রের নাম স্পষ্ট জ্বলজ্বল করলেও অন্যটাতে অরিনের নামের স্পষ্ট উপস্থিতি! অরিন যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো।সে হতবুদ্ধিভাব নিয়ে রৌদ্রের দিকে তাকালো। রৌদ্র মেয়েটার এহেন দৃষ্টি দেখে হুট করেই কেমন গা কাপিয়ে হেঁসে ওঠলো।অরিন তখন হতবিহ্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে বসে,

“ এসবের মানে কি ডাক্তার সাহেব?”
রৌদ্র থামলো।কিয়তক্ষন বাদেই নিজের ওমন হাসিটা কোনমতে গিলে নিয়ে সে বলতে লাগলো,
“ মানে তেমন কিছুই না সানশাইন! যখন আমার সামনে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তখন আমার কাছে এই একটাই পথ খোলা ছিলো। তোকে রেখে যাওয়ার চাইতে মরে যাওয়াটা আমি বেশি প্রেফার করি। তাছাড়া.. ”
“ তাছাড়া? থামলেন কেনো? শেষ করুন?”
রৌদ্র নিজের দৃষ্টি এবার সরু করলো।মেয়েটার মুখের ওপর এসে আছড়ে পড়া চুলগুলো আঙুল দিয়ে আলতো করে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলতে লাগলো,
“তাছাড়া আমি জানি তুই কেনো ঐদিন মিথ্যে বলেছিলি। এও জানি আব্বু তোকে কি বলেছে।”
অরিন অবাক হয় বেশ। মেয়েটার চোখেমুখে লেপ্টে গিয়েছে একরাশ অবাকের ছাপ। সে কেমন হতবাক কন্ঠে বললো,
“ মানে? কি জানেন আপনি?”

রৌদ্র মনে মনে বাঁকা হাসলো। অথচ বাইরে থেকে মুখাবয়ব একেবারে গম্ভীর রেখে বললো,
“ জানি, তুই চেয়েছিলি আমি যেন তোকে রেখে অন্য কাওকে বিয়ে করি। তোর না-কি আমার সাথে যায় না।আব্বু না-কি এসব বলে তোকে এবং তোর ইগোকে আঘাত করেছে তাই তুই তার সিদ্ধান্তে অটুট রইলি।এইতো!”
অরিন তৎক্ষনাৎ ফুঁসে ওঠে এহেন কথা শুনে।সে রৌদ্রের দিকে খানিকটা তেড়ে এসে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে ওঠে,

“ কি বললেন? আমি চেয়েছি আপনি অন্য কাওকে বিয়ে করেন? লাইক সিরিয়াসলি? আপনি এতবড় একটা কথা মুখে আনতে পারলেন ডাক্তার সাহেব?”
রৌদ্র মুখভঙ্গিতে কপট ভাব টানলো।হাতের ফাইলটা গুছিয়ে টেবিলের ওপর রেখে খানিক ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,
“ যেটা তুই চেয়েছিলি সেটাই তো আমি বললাম। তাছাড়া আব্বু’ই তো এটা চেয়েছিলো।”
অরিন এবার তেড়ে উঠে।কন্ঠে একরাশ ঝাঁঝ ঢেলে বলে,
“ মিথ্যে কথা। বড় আব্বু আমায় এমন কিছুই বলেননি।তিনি শুধু বলেছিলেন, আমি যদি আপনাকে অস্বীকার না করি তাহলে আপনাকে এ পরিবার থেকে ত্যাজ্য…..”

বাকিটা আর শেষ করতে পারলোনা মেয়েটা।তার আগেই সে দু’হাতে নিজের মুখটা চেপে ধরলো শক্ত করে। যাহ! কি হলো এটা! সে নিজেই কেমন ফটফট করে সবটা বলে দিলো? এবার কি হবে?
অরিন ভয়ে ভয়ে খানিক ঢোক গিললো। চোখ তুলে রৌদ্রের পানে তাকাতেই দেখতে পেলো — ছেলেটা কেমন তাচ্ছিল্যের সাথে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অরিন তৎক্ষনাৎ নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।রৌদ্র দেখলো সবটা। সে এগিয়ে বসলো মেয়েটার দিকে। মেয়েটার থুতনিতে আঙুল ঠেকিয়ে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনলো ছেলেটা।অতঃপর কেমন অদ্ভুত শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,

“ আমাকে ত্যাজ্য করে দেবার ভয়ে আমার কাছ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলি তাইতো? আমাকে সবার কাছ থেকে যেন আলাদা হতে না হয় তাই নিজেকেই আমার কাছ থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলি, আচ্ছা… তুই নিজেই বলতো..যে মানুষ আমাকে এতোটা ভয়ংকরভাবে ভালোবাসতে পারে তাকে আমি কিভাবে ভুল বুঝে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো? এতোটা সাহস কিংবা ক্ষমতা আমার হৃদয়ে আদৌও আছে?”
অরিন থমকায়। চোখদুটোর সামনে বুঝি হুট করেই অন্ধকার দেখছে সে। মাথাটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা ঠেকছে এমুহূর্তে। মেয়েটা অনবরত নিশ্বাস ফেলছে।জুড়িয়ে আসা কন্ঠে কোনমতে বলছে,
“ আপনি..না মানে আমিতো এতোটাও বলিনি।তাহলে..আপনি কিভাবে জানলেন সবটা?”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরে। মেয়েটার সারা মুখে অজস্র চুম্বন একে দিয়ে অশ্রুসজল চোখে একটুখানি হেসে বলে ওঠে,

“ তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস জানবাচ্চা… তুই আমার অর্ধেক। তোর মনে চলতে থাকা সকল কথাবার্তা তোর বলার আগেই বুঝে যা-ই আমি।সেদিন যখন আব্বু হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসেছিলো,তুই আর আব্বু মিলে বাগানে হাঁটছিলি তাইতো? সেদিন আব্বু যখন তোকে সবটা বলছিলো আমিও তখন বাড়িতে ঢুকছিলাম।আর ভাগ্যক্রমে শুনে নেই কিছুটা। তখনি বুঝে যাই যা বোঝার!”
অরিন মাথা উঠায়। অশ্রুসিক্ত আঁখি তুলে রৌদ্রের পানে চায়।ধরে আসা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ সেদিন তো আমি তেমন কিছুই বলিনি! তাহলে আপনি জানলেন কিভাবে সবটা?”
এপর্যায়ে রৌদ্র বাঁকা হাসলো। মেয়েটার দিকে চোখ টিপে বললো,
“ আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছি এভাবে মেইন পয়েন্টে লেগে যাবে ভাবিনি সোনা!”
অরিন এবার নিজের করা বোকামিতে বেজায় অসন্তুষ্ট হলো।মনে মনে নিজেকে কষে ইচ্ছেমতো গালমন্দ করলো কিছুক্ষণ। তাছাড়া এখন এসবে আর কি’বা হবে? রৌদ্রের যা উত্তর পাবার ছিলো তাতো পেয়েই গিয়েছে। মেয়েটা খানিক হাসফাস করতে করতে বললো,

“ এভাবে কথার জালে ফাঁসিয়ে কথা বের করা আপনার মোটেও উচিত হয়নি ডাক্তার সাহেব।”
রৌদ্র মেয়েটার ঠোঁটের ভাঁজে দৃষ্টি রেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। খানিকটা সময় নিয়ে বলে,
“ এভাবে দিনের পর দিন তোর অবহেলার দহনে আমাকে পুড়িয়ে মোটেও ভালো করসনি সানশাইন।ফলাফল স্বরুপ কপালে যে কতকিছু আছে তোর!”
“ মানে?”
“ দেখাচ্ছি হানি!”

বলেই সে মেয়েটাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর নিজেও খানিকটা ঝুঁকে আসে মেয়েটার দিকে। অরিনের ভেজা পল্লবিত চোখদুটো এমুহূর্তে এক অদৃশ্য জালের ন্যায় ঠেকছে রৌদ্রের কাছে। যেই অদৃশ্য জালের বাঁধনে একবার পড়লে নিজেকে অতলে হারিয়ে ফেলবে সে! রৌদ্র মুচকি হাসলো। মেয়েটার নাকের ওপর হালকা চুমু দিয়ে নাক ঘষে দিলো একটু।অরিন নিজের চোখদুটো তৎক্ষনাৎ কুঁচকে নিলো।যাহ! শুরু হয়ে গেলো তার ভেতরকার আবেগের তান্ডব! ছেলেটা কাছে আসলেই কে জানে তার কি হয়! সবটাই কেমন মুহূর্তেই এলোমেলো লাগে তার কাছে। এই যেমন এখন লাগছে।

রৌদ্র ধীরে ধীরে নিজের ওষ্ঠপুট নামিয়ে আনলো মেয়েটার অধরযুগলের ওপর। তারপর সেথায় আলতো করে স্পর্শ দিতেই মেয়েটার ওষ্ঠপুট কেমন তিরতির করে কাঁপতে লাগলো!রৌদ্র বেশ মুগ্ধ হয়ে দেখলো সবটা। ছেলেটা বুঝি আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলোনা। সে তৎক্ষনাৎ অরিনের ওষ্ঠপুট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।প্রথম প্রথম আলতো পরশে মেয়েটার নরম অধরযুগলের ওপর কর্তৃত্ব চালালেও এখন কেমন উম্মাদের মতো ঝাপিয়ে পড়েছে সে। নিজেকে হয়তো বাঁধনহারা করতেই এতোটা তৎপরতা তার! একদিকে রৌদ্রের দৃঢ় ওষ্ঠপুট মেয়েটার ঠোঁটের ভাঁজে মত্ত, অন্যদিকে তার হাতদুটোও যেন নিজেদের কাজে তৎপর! মেয়েটার সর্বাঙ্গ জুড়ে তাদের বেহায়া স্পর্শ লেপ্টে যাচ্ছে। এহেন অবাধ্য স্পর্শের তান্ডবে বরাবরের ন্যায় এবারেও কুপোকাত বেচারি। তার নিশ্বাস জুড়িয়ে আসছে ক্রমাগত। বুক পিঞ্জরে লুকায়িত অঙ্গটা যেন কোনো ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছে। পেটের ভেতরটাতেও কেমন গুড়গুড় করছে! খানিক বাদে মোচড়ও দিচ্ছে!

এদিকে রৌদ্র থামছেনা। সে তার কাজে ভিষণ মনোযোগের সাথে মত্ত। কিয়তক্ষন বাদেই সে টের পেলো — মেয়েটার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটার ওষ্ঠপুট ছেড়ে দিলো।মেয়েটা ছাড়া পেয়েই কেমন হাঁপাচ্ছে! রৌদ্র হয়তো থামলো মিনিট খানেক। পরক্ষণেই সে নিজের মুখ নামিয়ে আনলো মেয়েটার কন্ঠদেশে। অরিনের শীরদাড়া বেয়ে তৎক্ষনাৎ নেমে যায় এক ঠান্ডা স্রোত! তার হাতদুটো কাঁপতে কাঁপতে এসে ঠেকলো রৌদ্রের ঘাড়ে এবং পিঠে।রৌদ্র হাসলো নিঃশব্দে। মেয়েটার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
“ স্ক্র্যাচ মি লাইক আ ওয়াইল্ড ক্যাট বেইব!”

এহেন লাগামহীন কথা কর্নকুহরে পৌঁছাতেই অরিনের নিশ্বাস কেমন আঁটকে আসে! মেয়েটা বুঝি চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গিয়েছে একপ্রকার। রৌদ্র মেয়েটার কানের পিঠে আলতো করে দাঁত বসায়। মৃদু হেসে বলে,
“ নিশ্বাস ফেলো হানি! কেননা আরেকটু পর সেটাও পারবেনা!”
অরিন এবার লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো। দু’হাত দিয়ে রৌদ্রের ঘাড়ে এবং পিঠে খানিকটা নখ দাবিয়ে দিলো আলগোছে। রৌদ্র তখন আবারও শ্লেষাত্মক হেসে বলে ওঠে,
“ এভাবে না বেইব, জাস্ট লাইক আ ওয়াইল্ড ক্যাট!”
অরিন তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের দিকে তাকায় গরম চোখে। রৌদ্র মেয়েটার এহেন দৃষ্টি দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। ঠোঁটে চুমুর ভঙ্গিমা দেখিয়ে বলে,

“ লাভ ইউ!”
বলেই সে আবারও অরিনের কন্ঠদেশে মুখ আনলো।সেথায় ধীরে ধীরে বসিয়ে দিলো মৃদু ঠোঁটের স্পর্শ।প্রতিটি স্পর্শই যেন এক চিলতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে অরিনের সম্পূর্ণ দেহে। কিয়তক্ষন বাদে রৌদ্র মেয়েটার কন্ঠদেশে ঠোঁটের স্পর্শ ভুলে, দাঁত বসাতে লাগলো।অরিন গুঙিয়ে ওঠে খানিকটা। রৌদ্র যেন আরও পাগল হলো এহেন শব্দে। সে সম্পূর্ণ কন্ঠদেশে দাঁত বসিয়ে ছাড়লো।পরমুহূর্তেই সেথায় সরু চোখে তাকিয়ে হাসলো ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটার কন্ঠদেশে আলতো করে জিভের পরশ দিতেই কেঁপে ওঠে অরিন। মেয়েটা কেমন নড়েচড়ে থামাতে চেষ্টা চালাচ্ছে রৌদ্রকে কিন্তু রৌদ্র আজ থামলে তো! সে-তো আজ বাঁধনহারা। রৌদ্র মেয়েটার কন্ঠদেশ বেয়ে খানিকটা নিচে নেমে আসে। তারপর সেথায় ঠোঁটের পরশ রেখেই একহাতে মেয়েটার আচঁল সরিয়ে দেয় অন্যপাশে।অরিন যেন এবার সত্যি সত্যি নিশ্বাস ফেলতে ভুলে গেলো।সে চট করে নিজের চোখদুটো কুঁচকে নিলো।রৌদ্র ধীরে ধীরে নিজের চোখ তুলে। মেয়েটার নারী দেহের প্রতিটি বাঁকে চোখ রাখতেই মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো তার! রৌদ্র আবারও ঢোক গিললো খানিকটা। ঠোঁট কামড়ে মেয়েটার বুকের ওপর আলতো করে মাথা রেখে বললো,

“ নিশ্বাস ফেল সানশাইন!”
তৎক্ষনাৎ নিশ্বাস ফেলে অরিন।সত্যি সত্যি এতক্ষণ নিজের নিশ্বাস আঁটকে রেখেছিলো মেয়েটা। রৌদ্র কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পড়ে রইলো মেয়েটার বুকের ওপর। তার কর্ণকুহরে স্পষ্ট এসে পৌছাচ্ছে মেয়েটার হৃদয়ে বয়ে যাওয়া ধুকপুকানির তাল! রৌদ্র চোখবুঁজে হাসলো।ধীরে ধীরে তার একহাত নেমে গেলো অরিনের মেদহীন মসৃণ উদরে। অরিন আরেকদফা কেঁপে ওঠে। তার হাতদুটো চট করে খামচে ধরে বিছানার চাদর। তা দেখে রৌদ্র কেমন ভ্রু কুঁচকায়।সে তৎক্ষনাৎ ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের। মনে মনে কিছু একটা ভেবে আবারও দৃষ্টি আনে মেয়েটার দিকে। রৌদ্র এবার আর কিছু না বলে অরিনের উদরে মাথা রেখে শুইয়ে পড়লো।তাকে ওমন হুট করেই নির্বিকার ভাবে শুয়ে পড়তে দেখে অরিন খানিকটা উঠে জিজ্ঞেস করে বসে,

“ কি হলো?”
রৌদ্রের কোনরূপ হেলদোল নেই।সে চোখবুঁজে নিশ্চিন্তে নিশ্বাস ফেলছে।কিয়তক্ষন বাদেই সে অরিনের উদরে মুখ চেপে বলে,
“ কালকে ফ্লাইট বেইব! এরচেয়ে বেশি কিছু হলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।এন্ড দ্যান..ইউ নো নাহ?”
এতক্ষণে অরিনের বোধগম্য হলো পুরো ব্যাপারটা।মেয়েটা তৎক্ষনাৎ নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললো,
“ ঠিক আছে! তবে উঠে এসে পাশে শুয়ে পড়ুন!”
রৌদ্র মেয়েটার উম্মুক্ত উদরে নাক-মুখ ঘষতে লাগলো।বললো,
“ এখানেই ভালো লাগছে হানি! আহা! কি সফট!”
অরিন যেন আবার লজ্জায় পড়লো। সে তৎক্ষনাৎ খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে বললল,

“ এভাবে বলার কি আছে নির্লজ্জ কোথাকার!”
রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটা আরেকটু বাজিয়ে দেখতে বললো,
“ আহা এটুকুতেই নির্লজ্জ বলছো হানি? বাকিটুকুও নাহয় শুনে নিতে!”
“ আর কি বাকি আছে?”
রৌদ্র এবার মেয়েটার উদরে আঙুল স্লাইড করতে লাগলো। ওদিকে অরিনের অবস্থা যায় যায়।রৌদ্র তা দেখে বাঁকা হেসে দুষ্ট কন্ঠে বলতে লাগলো,
“ হানি! তুমি জানো বাসরে কি হয়?”
অরিন ভ্রু কুঁচকায়। গলায় খানিক ঝাঁঝ ঢেলে বলে,
“ আমি কি এর আগে দুয়েকটা বাসর সেরেছি না-কি যে জানবো?”

এহেন কথায় রৌদ্র বুঝি ভারি নাখোশ হলো।সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটার উদরে হালকা চাপ দিয়ে শক্ত গলায় বললো,
“ থাপ্পড় দিয়ে কান ফাটিয়ে ফেলবো বেয়াদব! কি থেকে কি বলিস হুঁশ থাকে না?”
অরিন হকচকিয়ে ওঠে এহেন ধমকে।সে তৎক্ষনাৎ ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“ ইয়ে..মানে সরি।আসলে..”
বাকিটা শেষ করতে পারলোনা মেয়েটা। তার আগেই রৌদ্র এসে তার পাশে শুয়ে পড়লো।হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বলতে লাগলো,
“ আর কিছু বলতে হবে না.. ঘুমাও!”
অগত্যা এমন কথায় একেবারেই চুপসে গেলো মেয়েটা। সেও আর কিছু না বলে পড়ে রইলো রৌদ্রের বুকে।আর রৌদ্র? সে আলতো করে সযত্নে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

পাখিদের কিচিরমিচিরের শব্দে ঘুম কাঁচা হয়ে আসলো রৌদ্রের। সম্পূর্ণ ঘরজুড়ে ইতোমধ্যেই সকালের আলো এসে হানা দিয়েছে। রৌদ্র ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। আর তক্ষুনি তার সামনে ফুটে ওঠে তার প্রিয় আদুরে মুখখানা। অরিনটা কি সুন্দর আদুরে বিড়ালছানার ন্যায় তার বুকের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। রৌদ্র আলতো হাসলো।মেয়েটার কপাল বরাবর আলগোছে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।অতঃপর মেয়েটাকে ধীরে ধীরে নিজের বাহুডোর থেকে উঠিয়ে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে শোয়া ছেড়ে উঠে বসে। লম্বা একটা হামি টেনে খানিকটা আড়মোড়া ভেঙে নিজের সম্পূর্ণ শরীরকে জাগান দিলো রৌদ্র। ছেলেটা ব্ল্যাঙ্কেট থেকে সরে মাটিতে পা রাখতেই তার চোখদুটো যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। কি ব্যাপার? তার গায়ে কোনো কাপড় নেই কেনো? রৌদ্র নিজের দিকে একপলক তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ জিভে কামড় দিয়ে ফের ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে ঢুকে পড়লো। মৃদু কপাল চাপড়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,

“ আসতাগফিরুল্লাহ! শেষ সব শেষ আমার! আআআ!”
তার ওমন বিরবির করা শব্দে অরিনের ঘুমটাও যেন হালকা হয়ে এলো।মেয়েটাকে খানিক নড়চড় করতে দেখে রৌদ্র কেমন হকচকিয়ে ওঠলো।সে তড়িৎ আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিজের রক্ষাকবচটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু নাহ! হতচ্ছাড়াটা কোথায় গিয়েছে কে জানে! রৌদ্র একবার ব্ল্যাঙ্কেটের নিচেও দৃষ্টি ফেললো।আর তক্ষুনি দেখতে পেলো — অরিনের পায়ের কাছে লেপ্টে আছে তারই তোয়ালেটা। রৌদ্র খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যেইনা অরিনের পায়ের দিকে হাত বাড়াবে ওমনি ঘুম থেকে জেগে গেলো অরিন। মেয়েটা ঘুমুঘুমু চোখে হাসলো রৌদ্রকে দেখে।দু’হাত রৌদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,

“ গুড মর্নিং ডাক্তার সাহেব!”
অন্য কোনো সময় হলে এতক্ষণে বোধহয় রৌদ্র মেয়েটার এহেন ডাক শুনে খুশিতে নেচে-কুঁদে উঠতো কিন্তু আজ যে ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। আজকে তার নিজের অবস্থাই যেন যায় যায়।ইজ্জতটা যেন একদম গাছের আগায় ঝুলছে তার! রৌদ্র খানিক ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসি টানলো ঠোঁটের কোণে। তা দেখে অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করে বসে,

“ কি ব্যাপার? কাছে আসছেন না যে!”
রৌদ্র কি বলবে এখন? তার অবস্থাটা কি আর মুখে বলার মতো? সে চুপ করে আবারও হাসলো একটুখানি। অরিন এবার নিজের হাতদুটো গুটিয়ে নিয়ে উঠতে লাগলো।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“ এই..না না উঠবি না জানবাচ্চা! প্লিজ শুয়ে থাক।”
অরিন ঘাবড়ে গেলো একপ্রকার। সে কেমন বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেনো?”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ব্ল্যাঙ্কেটটা নিজের সঙ্গে চেপে ধরে। অরিন দেখলো ব্যাপারটা।সে দৃষ্টি সরু করে বিচক্ষণতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো,
“ কি ব্যাপার? খুলে গিয়েছে?”

রৌদ্র যেন হা হয়ে গেলো এমন কথায়। সে অবাক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। অরিন হাসলো ঠোঁট কামড়ে।মেয়েটা এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে লাগলো রৌদ্রের তোয়ালেটা।কিয়তক্ষন বাদে সেটা পেয়েও গেলো নিজের পায়ের কাছে। অরিন বাঁকা হেসে তোয়ালেটা হাতে টেনে নিলো।তারপর রৌদ্রের দিকে এগিয়ে দিলো,রৌদ্র কৃতজ্ঞ হেসে যে-ই না সেটা হাতে নিবে ওমনি অরিন হাতটা সরিয়ে নিলো।রৌদ্র অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। হয়তো সে বুঝতে চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়েটার এহেন কর্মকাণ্ডের কারণ। অরিন মুচকি হেসে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর রৌদ্রের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে দুষ্ট হেসে বলে,
“ পারলে নিয়ে দেখাও হানি!”

রৌদ্র বুঝলো মেয়েটা তাকে জ্বালাতন করতে চাইছে।সে কেমন গম্ভীর মুখে বললো,
“ এমন করে না বউজান! দিয়ে দাও সোনা!”
অরিন দু’দিকে মাথা নাড়ায়। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বলে,
“ উহুম! তুমি পারলে এসে নিয়ে যাও হানি! আ’ম ইয়েগারলি ওয়েটিং!”
রৌদ্র এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেয়েটার ওপর। দুষ্ট কন্ঠে বলতে থাকে,
“ আমি এভাবে উঠলে সহ্য করতে পারবে হানি?”

অরিন মুখ টিপে হাসলো।রৌদ্রের তোয়ালেটা গলায় ঝুলিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বললো,
“ এখন থেকে তো রোজরোজ এমন ভিউ পাবো হানি! তাই আগে থেকেই অভ্যাস করে নেওয়াটা ভালো নয়কি?”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ব্ল্যাঙ্কেটের ওপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।তারপর ইচ্ছে করে মেয়েটাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আড়মোড়া ভাঙে।আড়মোড়া ভাঙার দরুন ছেলেটার মাসলসগুলো কেমন ফুলেফেঁপে উঠেছে। উম্মুক্ত লোমহীন চওড়া কাধের ওপরটাও কেমন নজরকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারি! অরিন মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো সেথায়।রৌদ্র এবার দুষ্ট চোখে মেয়েটার দিকে তাকায়।গায়ের ব্ল্যাঙ্কেটটা পেট থেকে আরেকটু নামিয়ে দিয়ে পেটানো দেহখানা সম্পূর্ণ রুপে দৃশ্যমান করলো অরিনের দিকে।

রৌদ্রের বুকটা যথেষ্ট প্রশস্ত, হালকা ঘাম জমে আছে বুকের উপর। চওড়া কাঁধ আর সেগুলোর ওপর থেকে নেমে আসা পেশিবহুল বাহু। বোঝাই যাচ্ছে — ছেলেটা বুঝি বেশ হেলথ কন্সাশ!ছেলেটার ফুলেফেঁপে থাকা বাইসেপসগুলো হালকা নড়লেই কেমন তীক্ষ্ণভাবে ফুটে ওঠছে।অরিনের বেশ ইচ্ছে করলো, একটুখানি ছুয়ে দিতে সেথায়।কিন্তু মনের এহেন লাগামহীন ইচ্ছে আর পূরণ হলো কই? তার হাতদুটো বুঝি জমে গিয়েছে হুট করে।
রৌদ্রের মেদহীন পেট— সেথায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ছয়টি শক্ত পেশির রেখা যেন কোনো মার্বেল আর্ট। ভি-লাইনটা নিচের দিকে নামতে নামতে একরকম নিষিদ্ধ কৌতূহল জাগাচ্ছে অরিনের মনে।অরিন বারবার শুকনো ঢোক গিলে। ইশশ্ গলাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার। রৌদ্র ইচ্ছে করে হাত দিয়ে নিজের বুকটা ম্যাসাজ করতে লাগলো। তারপর মেয়েটার দিকে কামুক দৃষ্টি ফেলে বললো,

“ উফফ! সামবাডি ইজ লুকিং হট টুডে!”
অরিন হা হয়ে গেলো লোকটার ওমন ভয়ংকর কথা শুনে।ইশশ্ কই সে ভেবেছিলাা সে তাকে একটুখানি জব্দ করবে কিন্তু তা না…এখন তো মনে হচ্ছে রৌদ্রই তাকে আচ্ছামতো জব্দ করছে।অরিন ভয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। রৌদ্র তখন নিজের মাথার পেছনে দু’হাত নিয়ে নিজের বুকটা উঁচিয়ে তুললো ঠিক যেমনটা জিম ট্রেইনাররা করে! রৌদ্র ফের বাঁকা হেসে বললো,
“ হানি! আর ইউ রেডি?”

অরিন ওপর নিচ মাথা ঝাকাতে গিয়েও থেমে গেলো।যাহ! কি বলতে গিয়েছিল সে? রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের। সে ব্ল্যাঙ্কেটটা থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসতে লাগলেই অরিন চট করে পেছনের দিকে ঘুরে তাকালো।হকচকিয়ে হাতের তোয়ালেটা রৌদ্রের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
“ প্লিজ প্লিজ..এভাবে উঠবেন না।দয়া করে এটা পড়ে নিন।”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৫৯

রৌদ্র এবার হো হো করে হেঁসে ওঠলো। সে তৎক্ষনাৎ তোয়ালেটা নিজের কোমরে বেঁধে অরিনের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তারপর মেয়েটার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
“ রোজ রোজ এমন একটা ভিউ পেলে খুব একটা মন্দ হয়না। তাই-না বউজান?”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here