প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪
জান্নাত নুসরাত

দীর্ঘ রমজানের মাসের পর ঈদের দেখা। এই ঈদের জন্য পুরো মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক অপেক্ষায় বসে থাকে। যেমন রমজান আসার এক মাস আগে রমজানের আমেজ চলে আসে তেমনি সাতাশ রোজার পর থেকে রোজার ঈদের আমেজ চলে আসে।
নুসরাত ঈদের জন্য এতো অপেক্ষা করে বসে ছিল কিন্তু ঈদের দিন তার ঘুম ভাঙল সবার শেষে। যখন বাড়ির সবাই নামাজে চলে গিয়েছে।
ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে নিচে গেল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে দেখল আরিশা মায়ের কানের গোড়ায় প্যান প্যান করছে তাকে আগে ঘুম থেকে তোলা হলো না কেন?
নুসরাত একবার তাকিয়ে কিচেনে চলে গেল। নাজমিন বেগম আর লিপি বেগম পিঠা বানাচ্ছেন। আর ঝর্ণা পিঠা গুলো তৈলে ভাজছেন।

নুসরাত মুখ দোয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। নিজের মালিকানাত থাকা কাপ নিয়ে পানি খেল। বেসিনের মধ্যে কুলি করে মুখের মধ্যে পানির ঝাপটা দিল।
ভেজে রাখা পিঠা হাতে নিতেই হাতের তালুতে গরম লাগলো। তাই গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য পিঠা কাপড়ের মধ্যে পেঁচিয়ে নিল। নাজমিন বেগম এটা দেখে হায় হায় করে উঠলেন। হাত তুলে এসে নুসরাতের পিঠে কিল বসালেন।
নুসরাত পিঠে হাত বুলিয়ে ব্যথাতুর শব্দ মুখ দিয়ে বের করলো। নাজমিন বেগমের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল।
লিপি বেগম হাত ধুতে ধুতে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ঈদের দিন মা-মেয়ে মিলে মারামারি শুরু করছিস কেন?
” খচ্চর টা কি করছে দেখো বড় ভাবি? পিঠার তৈল নিয়ে কাপড়ের মাঝে মুছে ফেলেছে। এই দাগ কি যাবে আর?
নুসরাত চোখ মুখ উল্টে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। পিছন থেকে নাজমিন বেগমের হুংকার ভেসে আসলো।
“কাপড় থেকে ময়লার দাগ না ছুটলে,আমি তোকে ময়লার বস্তায় ঢুকিয়ে দিব। নিজে তো কাপড় পানিতে ভিজায় আর পানি থেকে তুলে,কাপড় ধুয়ার কষ্ট কি বুঝবে?
নুসরাত দেখল আরিশা এখনো প্যান প্যান করছে। রুহিনির সাথে কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক করছে। নুসরাত পিছন থেকে গিয়ে আরিশার মাথায় গাট্টা মারল। মেয়েটা মাথায় হাত বুলিয়ে উফ শব্দ করে উঠলো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সহিত বলল,”কি হয়েছে? মারছো কেন আপি?

“বেয়াদবি করছিলি কেন?
আরিশা চোখ মুখ অন্ধকার করে বলল,
” তুমি তো মেজ আব্বুর সাথে তর্ক করো তাহলে তখন বেয়াদবি হয় না।
নুসরাত গাল টেনে দিল আরিশার। গাল টানল বললে ভুল হবে, গাল চেপে ধরলো। বেশি কথা বলার জন্য গালে একটা চিমটি কাটলো।
নুসরাত মুখ গম্ভীর করে বলল,
“আমি করলে ওটা অন্য বিষয়! আমি হলাম আমাদের চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে দ্যা গ্রেটেস্ট বেয়াদব। সবাই আমাকে বেয়াদব নামেই চেনে। তাই ওসব তর্ক একটু আকটু করতে হয়,জীবনে বেঁচে থাকার জন্য!
নুসরাত নিজের বদনাম করতে গিয়ে নিজের গর্বে বুক ফুলে উঠলো। নিজেই নিজেকে বাহবা দিল সে এতো ভালো কেন? বাহবা দেওয়া হলো না আর, নাজমিন বেগম পিঠে থাপ্পড় বসালেন সেই মুহুর্তে।
চোখ মুখের বিকৃতি করে বললেন,

” দেখো উনার অবস্থা,নিজের কূ-কীর্তির কথা কি গর্ব নিয়ে বলছেন? যেন, আমাজন জয় করে এসেছেন।
“তো, এটা আমাজন জয় করা নয় আম্মা। সবাই তো অবেয়াদব হয়ে বেঁচে থাকতে পারে, কত জন মানুষ বেয়াদব হয়ে নাম কামাতে পারে। আমার জন্য আব্বা আর তুমি দু-জনেই তোমার শশুড় বাড়িতে ভাইরাল বেয়াদবের মা-বাবা হিসেবে। শুকরিয়া না করে আরো চিড়বিড় করছো আম্মা।
নাজমিন বেগম নুসরাতের ফালতু লজিক শুনতে শুনতে মাথা গরম হয়ে গেল। পা থেকে জুতো খুলে হাতে নিলেন। নুসরাত একবার তাকালো নাজমিন বেগমের জুতোর দিকে। চামড়ার স্যান্ডেল যদি পিঠে পড়ে, তাহলে দু-দিন পর্যন্ত ব্যথা থাকবে।
নাজমিন বেগম হম্বিতম্বি করে এগিয়ে এলেন নুসরাতের দিকে। নুসরাত দৌড়ে গেল সিঁড়ির দিকে। নাজমিন বেগমের পায়ের গতি বাড়লো। নুসরাত পা চালিয়ে উপরে যেতে যেতে শুনল নাজমিন বেগমের চেঁচানোর আওয়াজ।

” তুই গোসল কর গিয়ে যা,এই ঈদের দিন ও আমাকে শান্তি দিলি না। এতো কথা তুই বলিস কীভাবে? একটার কথার উত্তর এক কথায় শেষ না করে দশটা কথা বলিস। আজকে পর যদি তোকে এতো কথা বলতে দেখি এই জুতো তোর পিঠে পড়বে। তোর জন্য মরে গিয়ে শান্তি পাবো না।
“যাও দোয়া করে দিলাম মরে গিয়ে শান্তি পাও!
নুসরাত হেলেদুলে রুমে যাওয়ার পথে ইসরাতের রুমে একবার উঁকি দিল। ইসরাত কাপড় পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল। নুসরাতের প্রতিবিম্ব আয়নায় ভাসতেই ইসরাত পিছন ফিরে তাকালো।মৃদু হেসে বলল,” ভিতরে আয়!

“এখন না, পরে আসবো। সালামি রেডি রাখ বেডি!
ইসরাতের কপালে ভাঁজ পড়ল। নুসরাত ইসরাত কে কেচ বলেই পিঠে ছুঁড়ে মারল। ইসরাত কেচ করলো।
নুসরাত ঠোঁট নাড়িয়ে গুড বলল। তারপর হেলতে দুলতে চলে গেল আরশের রুমে। ইসরাত এখনো বুঝতে পারল না হলো টা কি? তারপর মাথা দু-দিকে নাড়িয়ে সব কিছু ঝেড়ে ফেলল, এই পাগলের কারবারে মন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

নুসরাত আরশের রুমের বাহিরে দরজার নব ঘুরিয়ে রুমে ঢুকলো। সে আসলে আরশকে ঘুম থেকে উঠে পায়নি বলে নাজমিন বেগমের পিছু লাগছিল এখন, কিন্তু পিছু লাগা যে ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে তা তার চিন্তায় ছিল না। এই দুই ব্যক্তি কে জ্বালাতে তার এতো মজা লাগে কেন? এই কেন এর উত্তর তার কাছে নেই। ইসরাত টা কে আগে জ্বালাতে ভালো লাগতো, কিন্তু এখন এটা দিন দিন মহিলা হয়ে যাচ্ছে তাই এটাকে জ্বালাতে ইচ্ছা হয়না। রাগ না করলে কি জ্বালানো যায়? উঁহু একদম না! শালি বিয়ে করে অত্যাধিক ম্যাচিউর হয়ে গেছে!

নুসরাত নিজের চিন্তা সাইড করে কুর্তি আর কার্গো প্যান্ট নিয়ে বাথরুমে হেলেদুলে যেতে লাগলো। পাঁচ মিনিটের মাথায় গোসল শেষ করে কাঁপতে কাঁপতে বের হলো। বের হতে গিয়ে বাথরুমের দরজার সাথে পা আটকে ব্যথা পেল। চোখ মুখ বিকৃতি করে অনুচ্চ-স্বরে ব্যথা প্রকাশ করলো। চোখ মুখ কুঁচকে পা টেনে এসে বিছানায় বসলো। ঠোঁট চোখা করে ফু দিল ব্যথা পাওয়া স্থানে। চোখের কোণে জল জমা হলো তা আবার নিমেষেই চোখের ভিতরে উধাও হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর যখন ব্যথা স্বাভাবিক হলো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মাথায় বাঁধা টাওয়াল খুলল না। এক ঘন্টার আগে খোলা যাবে না। পরে দেখা যাবে চুল থেকে পানি পরে কাপড় ভিজে গিয়েছে। নুসরাত একবার বারান্দায় গেল একবার রুমে আসলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো সকাল নয়টা ত্রিশ।
পনেরো মিনিটের মতো বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খেল। তারপর উঠে বসে মাথা থেকে টাওয়াল খুলে বারান্দায় নেড়ে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখে ভাসলো আতরের শিশি। নাকের কাছে নিয়ে সুগন্ধি টেনে নিল নাসারন্ধ্রের ভিতরে। মনে মনে বলল,”আহ কি সুঘ্রাণ?

চোখে ভাসলো ছোট বেলার ঝাপসা কিছু স্মৃতি। নুসরাত ভাবতে লাগলো গালে হাত দিয়ে। জুম্মার দিন নামাজে যাওয়ার সময় নাছির সাহেব আতর তার আর ইসরাতের হাতে লাগিয়ে দিতেন। তারপর নিজের হাতে লাগিয়ে দুজনের নাকে আর কপালে ডলে দিতেন। ঈদের দিন ও একই কাজ করতেন। সেসব দিন এখন স্মৃতি মাত্র! কত কি বদলেছে এখন? সময়,কাল, যুগ সব বদলেছে, সাথে বদলেছে মানুষ!
নুসরাতের চোখের কোণে জমা হলো সূক্ষ্ম জল। মাথা ঝেড়ে ফেলে দিল কথাগুলো। ঠোঁট এলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। শালার মুড দিছে খারাপ করে!
চুল কোনো রকম আঁচড়ে বিছানায় হাত পা মেলে মাঝে শুয়ে পড়ল। নিচে আহানের হইচই শোনা যাচ্ছে। হেলাল সাহেবের বড় গলার কথা কানে আসছে। সাথে শোহেব সোহেদের কথা কানে আসছে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। বিড়বিড় করলো নিজ মনে মেয়েটা,

” আজ শ্যামলা না হয়ে, যদি একটু সুন্দর হতাম তাহলে জীবনে এতো ঝঞ্জাট থাকতো না। মায়াবী মুখ দিয়ে কি হবে? মানুষ তো সুন্দরের পূজারী! মানুষের কথা কি বলব? নিজের ঘরের মানুষ ও তো তাই!
নুসরাত নিজেই নিজের মাথায় থাপ্পড় মারল। এসব ফালতু চিন্তা করার জন্য,আজকে এসব চিন্তা আসতে হলো। উফ তার মতো হাসি খুশি মানুষের এসব চিন্তা করাই ভুল।
নুসরাত ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। মুখে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে বিউটি ব্লেন্ডার দিয়ে স্মুথলি মুখে ব্লেন্ড করে নিল। ঠোঁটে নুড কালার লিপিস্টিক দিয়ে গালে হালকা গোলাপি ব্লাশন মেখে রেডি হয়ে গেল। চুল গুলো খোপা করে সামনে দু গাছি চুল এনে রাখলো। মাথায় ওড়না সুন্দর করে রাখল। চোখে চশমা এঁটে পায়ের মধ্যে স্লিপার পরে নিল। রুম থেকে গুণগুণ করে বের হতে নিবে দরজা ধরে মোচড় মারতেই দরজার সামনে আরশের সাথে দেখা হলো।
নুসরাত শত্রুতা আজ সাইড করলো। মন থেকে হাসতে চাইলো, হয়তো বা হাসল। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে দরজার সামনে আরশের পা ধরে সালাম করে নিচে বসা অবস্থায় হাত উপরের দিকে বাড়িয়ে দিল।
আরশ চোখ বাঁকা করে তাকিয়ে বলল,

“এই রকম হাত পেতে বসে আছিস কেন? হাত পাততে হলে রাস্তায় যা, আমার সামনে থেকে সর।
আরশ সাইড কাটিয়ে চলে আসতে চাইলো, নুসরাত দরজার চারিদিকে হাত পা ছড়িয়ে বসে গেল। আরশের কথায় কিছু মনে করলো না। আজকের মিশন হলো কোনো ভাবে রাগ করা যাবে না।
আরশ নুসরাতকে হাত পা মেলে দরজার সামনে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। চোয়াল শক্ত করে নুসরাত কে ডিঙ্গিয়ে তার উপর দিয়ে চলে গেল।

আরশ ও-পাশে গিয়ে অধর প্রসারিত করে হাসল।নুসরাত হতবম্ব হয়ে বসে রইলো। কি হলো? কিভাবে তাকে ডিঙ্গিয়ে চলে গেল! এতো বড় অপমান সে কীভাবে মেনে নিবে? মেনে নিতে হবে!,সালামি পেতে হলে কত কি আত্মত্যাগ করতে হয়! এটা তেমন কি? নিজেকে বুঝ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আরশের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল,
” আরশ ভাইয়া, সালামি টা!
আরশ চোখ মুখে অবাকতা নিয়ে এসে এমন করলো যেন ও এই মুহুর্তে আকাশ থেকে পড়েছে। সে বুঝেইনি নুসরাত কীসের কথা বলছে?

“সালামি কি?
” আরে আপনাকে সালাম করলাম না তার সালামি!
“ও তুই সালাম করেছিস!
নুসরাত মাথা উপর নিচ নাড়ালো।
” কিন্তু সালাম কোথায় করলি? আমি তো শুনতে পেলাম না।
নুসরাত চোয়াল ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মিনমিন করে বলল,”সালাম করেছি সালামি দিন!
“আবার সালাম কর! আগেরবার কীভাবে সালাম করেছিস শুনতেই পাইনি?
নুসরাত চুপচাপ হজম করে নিল। তার তো আরো কাজ আছে। এখনো হেলাল সাহেব, নাছির সাহেব, শোহেব, সোহেদ, জায়িন, জায়ান, ইসরাত, ইরহাম সবার কাছ থেকে সালামি আনা বাকি। এরপরে রয়ে গেল চাচিরা। এই বেটার চক্করে পরে এখন লেট হয়ে যাচ্ছে।
নুসরাত ঝটপট হাঁটু মুড়ে বসলো। পা ধরে সালাম করলো।

” আসসালামু আলাইকুম জামাই! এবার সালামিটা দিন।
আরশ সালামি দেওয়ার জন্য পকেটে হাত ঢুকালো না। হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙলো।
ঈদের দিন সে গালা গালি করে মুখ নষ্ট করতে চায় না। তাই ঢোক গিলে আরশের হেয়ালিপনা হজম করে নিল। দাঁত কামড়ে শ্বাস টেনে নিল।
আরশ নুসরাতের দিকে আড়চোখে চেয়ে নিল। মুচকি হাসল! রেগে যাচ্ছে নুসরাত। তার মিশন সাকসেসফুল! আরশ মুখ আবার গম্ভীর করে পা বাড়াতে নিবে নুসরাত পা টেনে ধরলো। আরশ পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলল,”কি?
নুসরাত রাগে মুখ লাল করে বলল,

“সালামি দিন!
” লেছি না ঘুম দিয়ে উঠে দিব!
“তাহলে ঘুম থেকে উঠার পর বললেন না কেন সালাম করার কথা? সালামি না দিলে আজ এখানে আরাফাতের ময়দান হয়ে যাবে।
আরশ কপালে গাঢ় ভাঁজ ফেলে নুসরাতের দিকে তাকালো।
” পা ছাড়, সালামি হলো মানুষ নিজ ইচ্ছায় যা দিবে তাই, এখন আমি চাইলে তোকে সালামি দিব নাই চাইলে নেই। তুই কি কিছু করতে পারবি?
নুসরাত আরশের পা ছাড়লো না। ধরে মেঝেতে বসে রইলো। আজ তাকে সালামি না দিলে এই পা সে ছাড়বে না।
আরশ নুসরাত সহ পা টেনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। আরাম করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। নুসরাত সালামি না পেয়ে রাগে আরশের পায়ে দু-তিনটের মতো চিমটি কাটলো। আরশের পা থেকে এক হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এসে নিজের পা থেকে স্লিপার খুলে আরশের দিকে ছুঁড়ে মারল।
আরশ মাথা সরিয়ে নিল কিছুটা। মাথা না সড়ালে এই জুতো তার মুখে পড়তো। নুসরাতের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো।

“সালামি না দেওয়ার জন্য তুই পুরুষ নির্যাতন করছিস। সেইম অন ইউ! জামাইয়ের দিকে তুই স্লিপার ছুঁড়ে মারিস। তোর এই অধপতন আমি মেনে নিতে পারলাম না, স্বামী হিসেবে।
নুসরাত শুনলো না এসব কথা। মুখ গোমড়া করে বসে রইলো আরশের পা চেপে ধরে। আরশ কিছুক্ষণ পর উঠলো ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য। নুসরাত তখন ও পা চেপে ধরে বসে আছে। পা টেনে টেনে হেঁটে গেল ওয়াশরুমের দরজার সামনে।
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তুই কি আমার সাথে ওয়াশরুমে যেতে চাচ্ছিস?
নুসরাত কথা বলল না। আরশের পা জড়িয়ে ধরে মাথা ঠেস দিয়ে বসে রইলো।
আরশ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“নিশ্চুপতা সম্মতির লক্ষণ!।
নুসরাত নড়লো না। পা ধরে বসে রইলো।
” আমার পা ছাড়,ওয়াশরুমে যেতে দে,নইলে এখানে হয়ে যাবে।

নুসরাতের ভিতর থেকে কথা বের হলো এবার। নাক ফুলিয়ে বলল,”করে দিন,আমার কি?
আরশ নুসরাতের পাশ ঘেঁষে ধুম করে বসে গেল। নুসরাতের হাত পা থেকে ছাড়াতে চাইলো নুসরাত ছাড়লো না।
আরশ হার মানল,ওয়াশরুমে যেতে হলে তাকে টাকা দিতে হবে। নুসরাতের হাতে পাঁচ টাকার দুটো নোট গুজে দিল।
নুসরাতের পাঁচ টাকা দেখে মাথা আরো গরম হয়ে গেল। রাগে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে আরশের পা ছেড়ে দিয়ে পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো। পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে নিয়ে এসে গালে কামড় মেরে দিল।
আরশ দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো। নুসরাতের যতক্ষণ পর্যন্ত রাগ মিটলো না, ততক্ষণ পর্যন্ত গালে কামড় মেরে বসে রইলো। ধীরে ধীরে আরশের গাল ছেড়ে দিল সে। আরশ হাস্কি গলায় বলল,”শেষ! রাগ কমেছে!
নুসরাত আরশের গাল খামচে ধরলো। চুলের মুঠি ধরে মাথা এদিক-সেদিক ঝাঁকাল। নুসরাত শ্বাস ফেলে আরশকে ছেড়ে দিল। আরশ শব্দ করে হেসে নুসরাতের মুখ নিজের দু-হাতের তালুতে চেপে ধরলো। গাল ছেড়ে এক হাত চলে গেল কানের লতি বেয়ে পিছনের দিকে ঘাড়ে। হাত দিয়ে নুসরাতের মাথা টেনে কাছে আনলো, নিজের মুখের সামনে। গম্ভীর গলায় বলল,”আমি একা কেন লাভ বাইট নিয়ে ঘুরবো?

কথা শেষ করে নুসরাতের গলার মধ্যে হামলা করলো। সূচালো দাঁতের সংঘর্ষে নরম ত্বক কেটে গিয়ে রক্ত বের হলো। আরশের মুখে যখন নুনতা নুনতা লাগলো তখন গলা ছেড়ে দিল।
নুসরাত দাঁত কামড়ে বসে রইলো। ব্যথা পাওয়ার জন্য চোখের কোণ লাল হয়ে আছে। আরশের গালের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো কামড়ের দাগ বসে গেছে।
আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে গম্ভীর গলায়,”দ্যা মার্ক আই লেফট অন ইউ্যের নেক, লুক’স বিউটিফুল অন ইউ ভলকেনো?

নুসরাত কথা বলল না। পকেট হাতড়ে পাঁচশত টাকার দুটো নোট বের করে আরশের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলল,
” আপনার মতো গরীব কে আমি সালামি দিয়ে দিলাম। এসব গরীবই কেন আমার ভাগ্যে জুটল।
আরশ নুসরাতের কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে নুসরাতের মুখে শিহরণ জাগানো শ্বাস ফেলল। নুসরাত ভিতরে ভিতরে কম্পিত হলো তবুও নড়লো না। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। আরশ নুসরাতকে জড়িয়ে ধরলো বুকের মাঝে। নুসরাত ছটফট করলো ছাড়া পাওয়ার জন্য আরশ ছাড়লো না।

ইসরাত আর জায়িন নিচে নেমে বাপ চাচা সবাইকে একসাথে সালাম করলো। সবাই মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিলেন। আরশ আর নুসরাত আসলো নিচে দু-জনের অবস্থা দেখে সবাই আঁতকে উঠলো। আরশের গালে ওয়ান-টাইম লাগানো। নুসরাতের গলায় ও ওয়ান-টাইম লাগানো। দু-জনের দিকে হেলাল সাহেব সন্দেহি নজরে তাকিয়ে বললেন,”দু-জনে কি এবার একজন আরেকজন নাইফ দিয়ে মেরে দিয়েছো,তোমাদের কি কোনো উন্নতি হবে না।
আরশ নুসরাত কথা বলল না। পায়ের নখ খুটতে লাগলো মেঝেতে। নুসরাত গম্ভীর মুখ করে নাছির সাহেবকে গিয়ে পা ধরে সালাম করলো। হাত পেতে দিল উপরে। নাছির সাহেব পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে হাতে গুজে দিলেন।

নুসরাত জানে কত টাকা? হাতের মুঠ খুলে চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। সবাইকে মুখ দিয়ে সালাম দিল। সোহেদ আর শোহেব দুইশত টাকা দিলেন। বললেন,”ক্যাশ নেই আমাদের কাছে।
নুসরাত কথা বাড়ালো না মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে রইল। আরশের দিকে হেলাল সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”সালামি দিয়েছো ওকে?
“জি!
হেলাল সাহেব নুসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কত টাকা দিয়েছে?
নুসরাত নাক মুখ ছিটকে বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল,
” জি দশ টাকা দিয়েছেন! আমি উনাকে এক হাজার টাকা সালামি দিয়েছি। সালাম করেননি আমাকে তবুও দিলাম।বুঝতে হবে না,বড়লোক্স মানুষ আমি।
হেলাল সাহেব হেসে উঠলেন হা হা করে। জায়িনের দিকে তাকাতেই জায়িন মাথা নাড়ালো সে সালামি দিয়েছে।
ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৩

“সালামি পেয়ে খুশি!
ইসরাত মাথা নাড়ালো। ইরহাম সিঁড়ি দিয়ে হৈ হুল্লোড় করে নিচে নেমে আসলো সাথে আহান, আরিশা, অনিকা। আহান এসে আরশকে সালাম করলো। সালামির জন্য হাত পাতলো। আরশ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে নিবে আহান বলল,” ভাইয়া, তোমার গাল এভাবে ফুলে গেল কেন? আর মুখ লাল হয়ে আছে কেন?
আহানের কথা শুনে সবাই আরশের দিকে দৃষ্টি দিল।আরশ সকলের দৃষ্টির কবলে পড়ে থতমত খেয়ে বলল,”কি? এভাবে তাকানোর কি আছে?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here