প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৫

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৫
জান্নাত নুসরাত

শরীরে মৃদু ধাক্কা অনুভব হলো। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় চোখ খুলে নুসরাত নিভু নিভু তাকাল সামনের দিকে।চোখের সামনে অগ্নি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরশকে দেখে এক নিমেষে চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল। চোয়াল শক্ত, রাগে নাক- মুখ কাঁপছে আরশের।
নুসরাত ধীরে সুস্থে উঠে বসল। চুপচাপ তাকিয়ে রইল আরশের দিকে। আরশ হাত মুঠ করে রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কার পারমিশন নিয়ে তুই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিস?
নুসরাত নির্লিপ্ত! আরশ মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরল।
” কথা বলছিস না কেন? বোবা হয়ে গিয়েছিস!
নেই কোনো জবাব। আরশ রাগে দুঃখে চুল টেনে ধরল। থাপ্পড় মারতে গিয়ে হাত পকেটে পুরে নিল। নাক ফুলিয়ে শ্বাস নিল।
“দেখ,
আরশের গলা কাঁদো কাঁদো। মনে হলো নুসরাত কথা না বললে মেয়েদের মতো কান্না করে দিবে। দু-হাতের তালুতে নুসরাতের মুখ চেপে ধরল। চোখ ঝাপটে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। তবুও কান্না চলে আসলো! নিজের এই কাজে নিজে বিরক্ত হলো! মেয়ে মানুষের মতো কান্না করছে কেন সে? তারপর সূদরে নিয়ে বলল,” বউ যদি এমন পাথর হয় তাহলে নিজে তো একটু নরম হতে হবে।
আরশ কান্না গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“দেখ, নুসরাত আমি তো বলছি, তুই যা ইচ্ছা তাই করবি! আমি কি? আমার বাপ তোকে বাঁধা দিবে না! তাহলে আবার ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিস কেন?
নুসরাত বিদ্রুপ করে হাসল। আরশ এবার কেঁদে দিল। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরল পানির ফোয়ারা। হাত দিয়ে চোখ মুছে নিল। আবার পানি বের হলো! আবার মুছল! আবার বের হলো!
দু-হাত দিয়ে চোখ ঢলতে লাগলো আরশ। নুসরাতকে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে গেল নুসরাত বিছানার পিছন দিকে সরে গেল। আরশ নুসরাতের হাত চেপে ধরে নিজের চোখে স্পর্শ করালো। নুসরাতের হাতে চোখ মুছল।
নাক টেনে ভাঙা গলায় বলল,

” দেখ, আমি আমি তোর পায়ে ধরব! তুই যদি বলিস তাহলে আমি পুরো ফ্যামেলির সামনে পায়ে ধরব! এখানে যদি বলিস তাহলে তোর নানার বাসার সবার সামনে পায়ে ধরব! তুই একবার আমাকে দেখ! নিজে তো আরাম করে ঘুমাচ্ছিস! আমার কি হবে? আমি ঘুমাতে পারি না! খেতে পারিনা! তোর দুঃখে এখন কাজে মন বসে না।
নুসরাত নির্লিপ্ত! আরশ তাকিয়ে দেখল! একটা মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে সামনে একজন মানুষ কেঁদে চলেছে আর সে রোবট হয়ে বসে আছে। চোখে কোনো দুঃখের চিহ্ন নেই। একটু তো আরশের জন্য মায়া হওয়া উচিত নুসরাতের।
“আচ্ছা এক কাজ কর! আমাকে, আমাকে আগের আরশ বানিয়ে দে! যে তোকে পছন্দ করত না! তোকে দেখলে বিরক্ত হতো, অসহ্য লাগতো! তাকে বানিয়ে দে! আমি তোর পেছন ছেড়ে দিব।
নুসরাতের দুই হাত ঝাঁকিয়ে বলল আরশ। নুসরাত কথা বলল না।চুপচাপ তাকিয়ে রইল। সে বিরক্ত হতে চাচ্ছে কিন্তু বিরক্তি আসছে না! ভিতরে কিছু একটা দলা পাকাচ্ছে!
আরশ নুসরাতকে চুপচাপ তাকিয়ে তাকতে দেখে জড়িয়ে ধরল। কাধে মাথা রাখল! চোখ ঘষে মুছল! নাক টেনে কাঁদল!

” বানিয়ে দে নাহলে গলা টিপে মেরে দে! তোর মজা লাগছে না! আমাকে এরকম দেখতে! আচ্ছা, মজা নে তবুও আমাকে আগের মতো বানিয়ে দে!
আরশের কান্নার তোড়ে সারা শরীর নড়ছে। নুসরাত কে জড়িয়ে ধরায় সাথে তার ও শরীর নড়ছে। চোখ জ্বালা করে উঠল নুসরাতের! আরশকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আপনি উম্মাদ হয়ে গেছেন?
” হ্যাঁ! হ্যাঁ, আমি বদ্ধ উম্মাদ হয়ে গিয়েছে! তুই করেছিস! সব দোষ তোর! তুই দোষী! আমার দোষী! আমার অপরাধী তুই! দেখ, নুসরাত আমরা সুন্দর একটা জীবন তৈরি করতে পারি! তুই কেন আগের জিনিস নিয়ে এখনো পড়ে আছিস? নুসরাত আমাকে দেখ, আমি ভুলে গিয়েছি না সবকিছু তুই ও ভুলে যা!
“এতো সহজ সবকিছু ভুলা!

আরশ চোখ মুখ মুছে নিল দুই হাত দিয়ে ভালো করে। কান্নার তোড়ে নাকের পাটা বার বার ফুলে উঠছে! শ্বাস ফেলছে ধীরে ধীরে! চোখ বুজে বলল,”চেষ্টা করলে অবশ্যই সহজ।
নুসরাতের মুখ হাতের তালুতে নিয়ে কপালে কপাল চেপে ধরল।
” দেখ, আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! তুই চাচ্ছিস আমি মরে যাই! নুসরাত আমার ব্যথাটা বুঝ! আমার কষ্ট বুঝ! আমি তো হার মেনে নিয়েছি! এবার তুই চলে আয় আমার কাছে! ডিভোর্স তো কোনো কিছুর সমাধান নয়! প্লিজ! একটু ভাব! আমাদের পরিবারে ফাটল ধরবে। পুরো পরিবার ভেঙে চূরে নষ্ট হয়ে যাবে।একটু ভেবে দেখ। দেখ, নুসরাত তোর একটা সিদ্ধান্ত সব গড়তে পারে আবার ধ্বংস করতে পারে।
নুসরাত চুপচাপ বসে রইল। ভাবগতি বুঝা দায়! হয়তো একটু নরম হলো! আরশের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল,”আপনি আসুন! আমি ভেবে কিছু জানাচ্ছি।

আরশ কান্না চোখে হাসল। নুসরাতের কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। সে নুসরাত কে জোর করতে পারত। কিন্তু করবে না! এতো দিনে যা বুঝেছে এই মেয়ে নিজে যা বুঝে তাই! তুমি দেয়ালে মাথা টুকে মাথা ফাটিয়ে ফেলো তবুও এই মেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে। তাই নুসরাতের সাথে বুঝে কথা বলতে হবে। ওর মতো করে ওকে ছেড়ে দিতে হবে।
নুসরাতের নানার সাথে দেখা হলো রুম থেকে বের হয়ে। তিনি সোফায় বসে অপেক্ষা করছিলেন আরশের।
আরশের নাক-মুখের অবস্থা ব্যগতিক! কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলেন না। সময় হলে সব জানা যাবে। আপনা-আপনি সব ঠিক হবে।
আরশকে তার সামনে দাঁড়াতে দেখে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরশ মাথা উপর নিচ নাড়াল। ঠোঁট কামড়ে বলল,

“আজ তাহলে আসি নানাভাই!
” থেকে যাও!
“অন্য একদিন থাকব! কিছু কাজ আছে।
নুসরাতের নানা আর জোর করলেন না। গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলেন। চিন্তিত স্বরে বললেন,
” সাবধানে গাড়ি চালিয়ে যেও!

নুসরাতের মন খারাপ! কি করবে সে? বলল তো কিছু ভেবে জানাবে কিন্তু কি বলবে? শালা তাকে কত অপমান করল আর এখন তার বেইমান হৃদয় টা আরইশ্শার সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদছে। এরকম ধড়ফড় করছিল কেন তখন? বেটার কান্নাটা ও ইনজয় করতে পারল না। নিজের চোখ দিয়ে জল বের হতে হতে হলো না। তার কি নরম মাংস পিন্ডে কোনো সমস্যা হয়েছে! না না তেমন হবে না! আরশের হৃদয় নিয়ে খেলতে গিয়ে নিজে না হৃদয়ে জায়গা দিয়ে দিল।

হেঁটে হেঁটে বারান্দায় গেল। চেয়ারে বসে চুপচাপ হিসাব মিলাতে লাগল! যতোই সে বলুক, ডিভোর্স দিবে সেটা জীবনে ও দিতে পারবে না। নাছির নামক যুবক আর নাজমিন নামক যুবতী তাকে গলা টিপে হত্যা করবে তবুও ডিভোর্স দিতে দিবে না। প্রয়োজন হলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
কিন্তু এতো সহজে তো মাফ করা যায় না। একটু তো নাকানি চুবানি খাওয়াতে হবে!
হঠাৎ মাথায় আইডিয়া আসলো একটা লটারি মারলে কেমন হয়? যদি আরশ জিতে তাহলে সে আরশকে সুযোগ দিবে। না জিতলে… পরে ভাবা যাবে!

কলম খাতা নিয়ে এসে বসল মেঝেতে। হ্যাঁ লিখল আটানব্বই বার আর না লিখল দুই বার। তারপর উপরের দিকে ছুঁড়ে ফেলল। সেগুলো এসে মাটিতে পড়তেই হাতে নিল।
প্রথম বার উঠল হ্যাঁ, দ্বিতীয় বার হ্যাঁ, তৃতীয় বার বাজি পালটে গেল। নুসরাতের হাতে উঠল না! নুসরাত নিজেকে ধমক দিল না লিখল কেন? তারপর না টা বারান্দা দিয়ে নিচে ফেলে দিল। আবার মারল! এবার ও উঠল না! নুসরাত পাল্টে ফেলল। না ফেলে দিয়ে হ্যাঁ হাতে নিল।
“হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে!
ফোনের কর্কশ শব্দে কানে লাগল। মোবাইল পকেট থেকে বের করে হু বলতেই ইসরাত বলল,” এই তাড়াতাড়ি বাসা আয়! আগামীকাল সকাল পাঁচটায় আমার ফ্লাইট।
নুসরাত স্বাভাবিক গলায় বলল,

“ভালো থাকিস আল্লাহ হাফেজ। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। আল্লাহর ভরসা! সুন্দর করে সংসার করিস! জামাইয়ের সাথে ঝগড়া বিবাদ করিস না! জামাইয়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিস। জামাই যা বলবে তা করিস। জামাই যা বলে তা চুপচাপ মানবি। ওকে…
নুসরাত ইসরাতের মুখের উপর ফোন রেখে দিল। ঠোঁটের কোণে ফোটে উঠল মৃদু হাসির ঝলক। মাথায় আইডিয়া এসেছে আরশকে শাস্তি দেওয়ার। এবার বুঝবে নুসরাতের সাথে পাঙ্গা নেওয়া! সারা জীবনের মতো গুচিয়ে দিবে। হাহ….! নুসরাত তুই এতো ভালো কেন? তোর মতো ভালো মানুষ ঘরে ঘরে জন্মানো উচিত নয়! আহ, মেসেজ কাকে যেন পাঠাব? ওহ আমার জামাইকে! কল লিস্ট খুঁজে নাম্বার পেল না। ব্লক নাম্বারে ঢুকল অলস ভঙ্গিতে! হাজবেন্ড লেখে সেইভ করা নাম্বার আনব্লক করে ওয়াট’সঅ্যাপে মেসেজ পাঠাল আগামীকাল দেখা করুন। আমি টাইম আর লকেশন সেন্ড করে দিব।
মেসেজ সেন্ড হতেই নাম্বার ব্লক মেরে দিল। ঠোঁটে কোণ উঁচু হয়ে গেল বিকৃতি হাসির তোড়ে।

ইসরাত জার্নি করে এসেই শুয়ে পরেছিল। জায়িন এসে রুম ঝাড়ু, মোছা, কাপড় ধোয়া সব শেষে রান্না করল।
রান্না করা শেষ করে রুমে গিয়ে হট শাওয়ার নেওয়ার জন্য কাপড় বের করতে লাগলো। বিছানায় একবার তাকিয়ে দেখল ঘুমিয়ে থাকা ইসরাত কে। হালকা হেসে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
প্রায় একঘন্টা পর ওয়াশরুমের বাহিরে আসলো। জায়িনের পরণে সাদা কালার টাউজার আর সাদা কালার গেঞ্জি।
ইসরাতের মুখের সামনে গিয়ে চুল ঝাড়া দিল। পানি ছিটা চোখে লাগতেই ইসরাত চোখ মেলে তাকাল। হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙল। জায়িনের দিকে তাকিয়ে অধর বাঁকিয়ে হাসল। জায়িন বুকের বাঁ-পাশে চেপে ধরে বলল,”হায় মে মার জাবা!
ইসরাত উঠে বসল। জায়িনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ফ্রেশ হয়ে গিয়েছেন!
জায়িন বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
” দেখতে পাচ্ছ না!
ভিজে চুলের পানি এনে ইসরাতের মুখে ছিটিয়ে দিল। ইসরাত হাসল।
“যেটা আমার করার কথা ছিল ওইটা আপনি করছেন!
” বউ যদি এমন আনরোমান্টিক হয়! তাহলে স্বামীকে তো পদক্ষেপ নিতেই হবে। তাই না আমার আত্মা!
ইসরাত দাঁড়িয়ে জায়িনের গলা জড়িয়ে ধরল। জায়িন হাত নিয়ে এসে ইসরাতের কোমর চেপে ধরল। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,”কি?
ইসরাত মাথা নাড়াল। মুখ দিয়ে বলল,
“নাথিং!

জায়িন মাথা নামিয়ে ইসরাতের থুতনিতে চুমু খেল। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি?
ইসরাত দু-দিকে মাথা নাড়াল না ভঙ্গিতে। জায়িন কোমর ছেড়ে দিল। ইসরাত কে বলল,”যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো!
ইসরাত অলস ভঙ্গিতে না করতে গেল, জায়িন চোখ রাঙ্গাল। মুখ লটকে চলে গেল ওয়াশরুমে। জায়িন খাবার সাজাতে চলে গেল কিচেনে।
খাবার টেবিলে চুপচাপ খাবার খাচ্ছিল ইসরাত। জায়িন গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,”পড়াশোনা করতে চাও! চাইলে আমি কোনো ভার্সিটি তে তোমাকে এডমিশন করিয়ে দিতে পারি।
ইসরাত মুখে ভাতের লোকমা নিয়ে বসে রইল। জায়িনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। জায়িন ভাত খাওয়া থামিয়ে বলল,”কি? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
ইসরাত গম্ভীর গলায় বলল,

“আমি যতটুকু পড়েছি ততটুকু অনেক! আমি এখন সংসার করতে চাই। আপনি কাজ করবেন আমি আপনার টাকায় খাব। আপনার বাচ্চা পালন করব। এই তো বেশ! আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই!
জায়িন মৃদু হাসল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমি কিন্তু বলছি না, তুমি নিজেই বলছ এটা।তোমের শশুড়কে কল দিয়ে জানিয়ে দিও! নইলে আমাকে কল দিয়ে ক্যাট ক্যাট করবে।

বিকেল পাঁচটায়,
নুসরাতের দেওয়া লকেশনে গত আধঘন্টা যাবত আরশ বসে আছে। নুসরাতের দেখা নেই! তাকে কি এভাবে বসিয়ে রেখে শাস্তি দিবে ভেবে মেয়েটা আসছে না? হতে পারে! এটা তাকে স্বামী ভাবে না! ভাবে শত্র! তাই তো এতো জ্বালাচ্ছে! আগে একটা শত্রুতার সম্পর্ক ছিল কিন্তু এখন তোনেই! আর থাকলে সেটা তো আরশ ভুলে গিয়েছে। তাহলে এই মেয়ে আগের কথা ভুলে যাচ্ছে না কেন?
আরশের চিন্তা ভাবনার মাঝে বোরকা পরা একটা মেয়ে এসে ভিতরে ঢুকল। আরশ বিরক্ত হয়ে নুসরাত কে কল দিতে যাবে মেয়েটা এসে আরশের সামনের চেয়ারে বসল। টেবিলের উপর রাখা আরশের হাত টেনে ধরল।
আরশ আতঙ্কিত চোখে তাকাল। হাত ছাড়িয়ে এনে উঠে যেতে নিবে মেয়েটা আরশের সামনে এসে দাঁড়াল।

“আপনি এরকম করছেন কেন আন্টি?
নেকাবের নিচ থেকে নুসরাত হেসে উঠল। আরশ নুসরাতের হাসির শব্দে চিনতে পেরে নিজে ও বোকার মতো নুসরাতের সাথে তাল মিলিয়ে হাসল হে হে করে।
আরশ হাসি থামিয়ে নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকাল। এই গরমের দিনে নুসরাত হাত মোজা, পা মোজা, নেকাব, বোরকা, চোখে চশমা, হিজাব, সাথে আন্টিদের মতো বড় একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে।
” এই অবস্থা কেন তোর?
নুসরাত সে কথার উত্তর দিল না। চেয়ারে বসতে বসতে বলল,”আসল কথায় আসি! ফালতু কথা বলে সময় ওয়েস্ট করার প্রয়োজন নেই।
ব্যাগ হাতড়ে কাগজ বের করল। যেখানে কিছু শর্ত লেখা আছে। স্টাম্প বসানো! নিচে লেখা শর্তে রাজি থাকলে সাক্ষর করুন।

আরশ তাকাল না। নুসরাতের হাত থেকে কলম ছিনিয়ে নিয়ে সাক্ষর করে দিল। নুসরাত হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। সে কিছু বলার আগেই আরশ সাইন দিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হাসল। নুসরাত নিজের মাথা দু-দিকে নাড়িয়ে বলল,”আগে পড়ে নিতেন।
” পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই! এবার বাসায় চল! আর এই সব হাত মোজা, পা মোজা খুল!
নুসরাত হাসল নেকাবের নিচে। শর্তের পেপার হাতে তোলে নিয়ে পড়ে শোনাতে লাগল।
আমার প্রথম শর্ত : পুরো একবছর আমার সাথে কোনো ধরণের দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে না।
আরশ কিছু বলতে নিবে নুসরাত মুখে আঙ্গুল রেখে চুপ দেখাল।
“যদি কোনো রুপ শর্ত ভেঙে দেখা করার চেষ্টা করেন তাহলে ডিভোর্স লেটার ওখানেই পাঠানো হবে।
আরশ ডিভোর্সের কথা শোনে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল। নুসরাতের দিকে অসহায় চোখে তাকাল।
দ্বিতীয় শর্ত : ভবিষ্যৎে যদি কোনো বাচ্চা হয় তাহলে তার নাম আমি রাখব। এবং যদি ওর চেহারা বিন্দুমাত্র আপনার সাথে মিলে বাচ্চাটা আপনি বড় করবেন। আমি এই বিষয়ে কোনো মতামত রাখতে পারছি না! যদি ইচ্ছে হয় পরে ভেবে দেখব।
তৃতীয় শর্ত : আমি খুব তাড়াতাড়ি ফ্রান্স যাচ্ছি।
আরশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

” কেন?
নুসরাত আঙ্গুল রাখল ঠোঁটে। চোখ দিয়ে যেন শাসাল আরশকে।
“আপনাকে না করেছি কথা বলতে তাহলে কথা বলছেন কেন? চুপ করে বসে থাকবেন! বেশি কথা বললে ব্যাগে ডিভোর্স পেপার আছে সাইন এক্ষুণি করে ডিভোর্স দিয়ে দিব। তাহলে ফিরে যাই শর্তে!
নুসরাত ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিল। বুকের ভিতর কম্পন হচ্ছে। ও যতোটা বাইরে শক্ত ততোটা ও নয়!
ঠোঁট কামড়ে বলল,” ফ্রান্স থাকা অবস্থায় আপনার ভাই, বা বোনের কাছ থেকে কোনো কথা জানতে চাইবেন না আমার বিষয়ে। ওরা যদি জোর করে আমার বিষয়ে কিছু বলতে চায় তাহলে আপনি মুখের উপর কল কেটে দিবেন। রাজি!
আরশ উপর নিচ মাথা নাড়াল। সে রাজি!
নুসরাত খুশি হয়ে বলল,

“গুড বয়!
“তাহলে আজকে মুখটা দেখা?
” আজ থেকে তো শর্ত কার্যকর করা হলো। এখানে থাকলে যেখানে সেখানে আপনার সাথে আমার দেখা হতে পারে তাই এই আইডিয়া। তাহলে আজ আসি! শর্ত গুলো মেনে চলবেন। দেখা হবে তাহলে এক বছর পর!
নুসরাত উঠে চলে গেল। স্লাইডিং ডোর ঠেলে বের হবে পিছন থেকে আরশ হাত টেনে ধরল। নুসরাত মিছি মিছি বিরক্তি নিয়ে তাকাল। রাগী কন্ঠে বলল,”কি?
“চাচা-চাচি জানে!
” কেউ জানে না! যাওয়ার পর জানাব।
আরশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“যেদিন যাবি আমাকে একটা টেক্স করিস!
নুসরাতের রুঢ় গলা,
” পারব না!

আরশ অসহায় চোখে তাকাল। এই নিষ্ঠুর মানবীর মায়ায় পড়তে হলো। দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব আছে?
নুসরাত হাত টেনে ছাড়িয়ে নিল। পা বাড়াল অন্যদিকে! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। নুসরাত পা চালিয়ে চলে গেল সামনের দিকে। এক প্রকার আরশের সামনে থেকে পালিয়ে গেল।

আরশ মোবাইল বের করে তারিখ দেখল। ২২-০৪-২৫! এখনো ৩৬৪ দিন বাকি! অপেক্ষা আর অপেক্ষা! আরশ সামনে তাকাতেই দেখল নিষ্ঠুর মানবী নেই কোথাও? চলে গিয়েছে! একবার ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করল না। চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। বুক ফাটা আর্তনাদ করে উঠল আরশ ভিতরে ভিতরে। সে কেন শব্দ করে কান্না করতে পারে না। আজ শব্দ করে কান্না করতে পারলে তো বুক এতো ভার হতো না। আরশ কপালে হাত রেখে গাড়ির দিকে দৌড়ে চলে গেল।
যদি একবার ভালো করে সামনে তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো রাস্তা ওপারে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ চোখে চেয়ে আছে এক রমণী। সে পাথর নয়! সে নিষ্ঠুর নয়! তার ও কষ্ট হয়! কিন্তু, সে প্রকাশ করতে পারে না। সে চেপে যায় নিজের ভিতর!

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪ (৩)

গাড়ি টা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃষ্টি সীমার বাইরে গেল না ততক্ষণ নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রইল গাড়ি যাওয়ার পথে। গাড়ি উদাও হতেই নুসরাত উল্টো পথে অসাড় পা বাড়াল। টাল মাটাল পা ফেলে এগিয়ে গেল নিজ গন্তব্যে।
দু-জন দু-দিকের পথে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। নুসরাতের এই সিদ্ধান্ত কি ভবিষ্যৎে ঝড় বয়ে আনবে? না কি দু-জনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে? তা সময়,কাল, বলে দিবে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here