সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬১

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬১
Jannatul Firdaus Mithila

“ রোজ রোজ এমন একটা ভিউ পেলে খুব একটা মন্দ হয়না। তাই-না বউজান?”
এহেন কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই সারা অঙ্গজুড়ে এক মৃদু শিহরণ বয়ে গেলো অরিনের। মেয়েটা কাঁপা কাঁপা বদনে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো নিজ জায়গায়।মানুষটা যে কেনো তাকে এতো জ্বালায় কে জানে! অরিন মাথা নুইয়ে রেখেছে। বুকটায় কেমন ধড়াস ধড়াস শব্দ হচ্ছে তার! মনে হচ্ছে — এক্ষুণি বোধহয় লোকটা সব শুনে ফেলবে কায়দা করে। রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মেয়েটার ডানহাতের কনুই চেপে,তাকে নিজের দিকে ঘুরালো। অরিনটা এখনো আগের ন্যায় মাথা নুইয়ে রেখেছে। ইশশ্! এটুকুতেই মেয়েটার সেকি লজ্জালু ভাব! চোখদুটোর পাতায় যেন অদৃশ্য পাথর জুড়ে দিয়েছে কেউ যার দরুন চোখদুটো তুলতেই পারছেনা সে। রৌদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার নতমুখের দিকে। কিয়তক্ষন বাদে,রৌদ্র মেয়েটার থুতনিতে আঙুল ঠেকিয়ে

মুখটা খানিক উঁচু করে তুললো। অরিন মাথা তুললো ঠিকই কিন্তু চোখদুটো কেন যেন তৎক্ষনাৎ কুঁচকে ফেললো। রৌদ্র এবার আলতো হাসলো। মেয়েটার তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধরজোড়ার ওপর মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে থেকে হাস্কি স্বরে বললো,
“ ইউ আর লুকিং ড্যাম সেক্সি হানি! উফফ…”
তৎক্ষনাৎ নিশ্বাস আঁটকে আসে মেয়েটার। বুকটায় শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত তান্ডব। তার পুরো বদনে ছড়িয়ে যায় মৃদু ঝংকার। কি বললো লোকটা? এতোটা লাগামহীন, ভয়ংকর কথা কেও কাওকে বলে? এসব শুনলে মেয়েটা লজ্জায় মরে যাবে না! কেনো এসব বোঝে না লোকটা?
রৌদ্র কিয়তক্ষন চুপ করে থেকে নিজের মুখটা খানিক এগিয়ে এনে, মেয়েটার নাকে নাক ঘষে দিলো।অরিন ফের কেঁপে ওঠে খানিকটা। রৌদ্র স্পষ্ট টের পেলো মেয়েটার সে-ই কম্পন। সে হালকা হেসে হাস্কি স্বরে বললো,
“ নিশ্বাস ফেল জানবাচ্চা!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তৎক্ষনাৎ ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে অরিন। রৌদ্র তখন হাত বাড়িয়ে মেয়েটার নরম মুখখানা নিজের দু’হাতের তালুতে নিয়ে নেয়। তারপর মেয়েটার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অরিন থমকায়। ছেলেটার চোখদুটোতে কেমন মাদকতা লেপ্টে আছে মনে হচ্ছে। সে বহু চেষ্টা চালালো ছেলেটার চোখ হতে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আনতে কিন্তু বেহায়াগুলো ফের নিজেদের অকাদে চলে এলো বোধহয়। এই যে এখনও তারা কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রৌদ্রের বেড়াল চোখদুটোর পানে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎই রৌদ্র কেমন অদ্ভুত শান্ত কন্ঠে আবদারের সুরে বলে ওঠে,
“ শাওয়ার নিবে আমার সাথে বউজান?”

ব্যাস! এটুকু কথাই যেন যথেষ্ট ছিলো মেয়েটাকে লজ্জায় কুপোকাত করে ফেলতে। অরিনটা কেমন হাসফাস করতে লাগলো লজ্জায়।কানদুটো থেকেও বোধহয় গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে এখন। গালদুটোর কথা আর নাই-বা বলি! সেথায় বুঝি কেউ এক খাবলা লাল রং লেপ্টে দিয়েছে আয়েশ করে। অরিনের দৃষ্টি এলোমেলো। পাদু’টোও কেমন অস্থিতিশীল! রৌদ্র আড়চোখে দেখলো সবটা। সে ফের মেয়েটার গালে আঙুল বুলিয়ে বলতে লাগলো,
“ চলো না… প্লিজ!”

অরিন তৎক্ষনাৎ গরম চোখে তাকালো রৌদ্রের দিকে। মন তো চাইছে ইচ্ছেমতো দুটো শক্ত কথা শুনিয়ে দিতে এই বেহায়া,নির্লজ্জ লোকটাকে।কিন্তু মনের এহেন আকাশচুম্বী ইচ্ছেটা পূরণ হলে তো! তার কি আর ওতো সাধ্যি আছে লোকটাকে শক্ত কথা শোনাবার? অরিন নিজের মনে ওঠা একরাশ ঝাঁঝালো কথাগুলো একপ্রকার গিলে নিলো। অতঃপর খানিকক্ষণ চুপ থেকে কন্ঠে বেশ ঝাঁঝ ঢেলে বলতে লাগলো,
“ সকাল সকাল কি শুরু করলেন আপনি? আরেকটু পরই বাড়ির সকলে জেগে যাবে। তখন যদি কেউ আমাদের একসঙ্গে দেখে ফেলে? কি হবে ভেবেছেন?”

রৌদ্র ওপর নিচ মাথা নাড়ায়।হাত বাড়িয়ে মেয়েটার কোমর চেপে নিজের কাছে টেনে আনে। তারপর মেয়েটার সুশ্রী মুখখানার দিকে তাকায় নেশালো চোখে। মেয়েটার মুখের ওপর আছড়ে পড়ছে অসংখ্য ছোট ছোট অবাধ্য চুল। এমুহূর্তে যাদের দেখে মনে মনে এক আকাশসম হিংসে হচ্ছে রৌদ্রের। তার হিংসের কারণ একটাই — কেনো এই চুলগুলো তার সানশাইনের মুখের ওপর লেপ্টে যাচ্ছে বারংবার যেখানে তার লেপ্টে থাকার কথা! রৌদ্র বিরক্ত মুখে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার মুখের ওপর এসে আছড়েঁ পড়া চুলগুলোকে আলতো করে কানের পিঠে গুঁজে দিলো। তারপর নিজের মুখ নামিয়ে আনলো মেয়েটার কান বরাবর। সেথায় শব্দ করে চুমুও খেলো পরপর দুটো। অরিনের বুঝি সুড়সুড়ি লাগছে কিছুটা! মেয়েটা তৎক্ষনাৎ নড়েচড়ে উঠে। রৌদ্র তখন নিজের ঠোঁট সরিয়ে আনে মেয়েটার গালের ওপর। সেথায় ধীরে ধীরে একে দিলো অধরযুগলের উষ্ণ স্পর্শ। অরিন আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। রৌদ্র থামলো না। ধীরে ধীরে নিজের ওষ্ঠপুটের ভেজা পরশ একেঁ দিতে লাগলো মেয়েটার সমগ্র মুখমণ্ডল জুড়ে। অরিন এখনো চোখবুঁজে আছে। এমুহূর্তে চোখদুটো খুলে রাখার সাধ্যি আছে তার?

রৌদ্র থামলো এবার।মেয়েটার নরম গোলাপি অধরজোড়ার পানে তাকালো তৃষ্ণার্থ চোখে। গলাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার! মনে হচ্ছে — এমুহূর্তে গলাটা খানিক ভেজাতে না পারলে নির্ঘাৎ মরণ হবে তার। সে আর কিছু না ভেবে চট করে আঁকড়ে ধরলো মেয়েটার নরম ওষ্ঠপুট। আশ্লেষে সেগুলোকে টেনে নিতে লাগলো নিজের ঠোঁটের ভাঁজে। অরিন তৎক্ষনাৎ খামচে ধরে রৌদ্রের কাঁধ। রৌদ্র ধীরে ধীরে মেয়েটার অধরযুগল শুষে নিচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে থেমে গিয়ে মৃদু দাঁতও বসিয়ে দিচ্ছে সেথায়। অরিনটা তো বরাবরের মতো এবারেও কুপোকাত। ছেলেটার এহেন পাগলামির সাথে তালে তাল মেলাতেই যেন ভিষণ বেগ পেতে হচ্ছে বেচারির। তবুও আর কি করার?

ওষ্ঠপুটের কাজ বহাল রেখেই রৌদ্র এবার ঘটালো আরেক কান্ড! সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। অরিন ঘাবড়ে গেলো এহেন কান্ডে। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রৌদ্রের ঘাড়।রৌদ্র একমুহূর্তের জন্য থামলো। মেয়েটার চোখে চোখ রেখে হাসলো ঠোঁট কামড়ে। অরিন যেন হতভম্ব হয়ে গেলো তার ওমন হাসি দেখে। মেয়েটা কেমন জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে রৌদ্রের দিকে। অথচ রৌদ্রকে দেখো! ছেলেটার নজর যেনো ঐ একই জায়গায় আঁটকে আছে। অরিন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রৌদ্র ফের আঁকড়ে ধরে মেয়েটার ওষ্ঠপুট। এবার যেন গভীরভাবে মেয়েটার নরম অধরযুগলের ওপর নিজের কর্তৃত্ব চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ছেলেটা।

সে একবার অরিনের নিচের ঠোঁটটা টেনে ধরলো নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে তারপর আবারও ছেড়ে দিলো সেটা। পরক্ষণেই ওপরের ঠোঁটের সঙ্গেও করলো একই কাজ। কিয়তক্ষন বাদেই উম্মাদ ছেলেটা অরিনের সম্পূর্ণ ওষ্ঠপুট টেনে ধরলো নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে। অতঃপর সেগুলো খানিক শুষে নিয়ে আবারও ছেড়ে দিলো। তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো রৌদ্র। এদিকে ছেলেটার এহেন পাগলামিতে জানটা বুঝি যায় যায় অবস্থা হচ্ছে অরিনের! মেয়েটার বুঝি চোখ খুলে রাখাও দায় হয়ে পড়েছে এখন! রৌদ্র মেয়েটার এহেন অবস্থা দেখে দুষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,

“ ওহ হানি! কি হলো তোমার? মজা পেয়েছো? আরেকটু করি?”
তৎক্ষনাৎ কটমট দৃষ্টি নিয়ে তাকালো অরিন। তা দেখে রৌদ্র কেমন ঠোঁট উল্টে বলতে লাগলো,
“ এভাবে তাকায়না বউজান! মনে ফিলিংস উঠে তো। আর একবার ফিলিংস উঠে গেলে, মনটা তখন শুধু বাসর বাসর করে গো!”
এহেন কথায় মুখটা কেমন হা হয়ে গেলো অরিনের। মেয়েটা হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে। কিয়তক্ষন বাদেই তার হতবাক কন্ঠ ফুড়ে বেরিয়ে আসে,
“ কিসব বলছেন আপনি?”
রৌদ্র মুচকি হাসলো। অরিনের ঠোঁটের ওপর শব্দ করে চুমু খেয়ে সুর টেনে বলতে লাগলো,
“ কতকিছু…….. ”

অরিন ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো এবার। লোকটা যে এমুহূর্তে পাগল হয়ে গিয়েছে তা বেশ ভালো করেই বুঝে গিয়েছে মেয়েটা।অরিন চুপ করে পড়ে রইলো রৌদ্রের কোলে। রৌদ্র তখন বাঁকা হেসে, মেয়েটাকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিকে এগোতে লাগলো।তা দেখে অরিন কেমন হকচকিয়ে ওঠলো। সে তৎক্ষনাৎ অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“ সেকি! ওদিকে যাচ্ছেন কেনো?”
রৌদ্রের কদম থামলো।ছেলেটা অরিনের দিকে দুষ্ট চোখে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবারও। অরিন ফাঁকা ঢোক গিললো কয়েকটা। মিনমিনে স্বরে কোনমতে বলতে লাগলো,
“ এমন করছেন কেনো?”
রৌদ্র তেমন কিছু না বলে এগিয়ে যেতে লাগলো নিজের মতো। খানিকক্ষণ সময় বাদে নিজ থেকেই বলে ওঠলো,
“ ঘরের পরিবেশ গরম হয়ে গিয়েছে বউজান,তাই ঠান্ডা করতে যাচ্ছি!”

রৌদ্র মেয়েটাকে কোলে করে নিয়ে এলো বাথরুমে।তারপর খানিকটা এগিয়ে এসে মেয়েটাকে বাথটবে এনে রাখলো সযত্নে। অরিনটা বেশ জড়সড় হয়ে বসে আছে। ক্ষনে ক্ষনে নিজের পড়নের শাড়িটাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরছে শক্ত করে। রৌদ্র বাঁকা চোখে মেয়েটাকে আপাদমস্তক পরোখ করে নিলো একবার। তারপর ধীরে ধীরে মেয়েটার পাশে বসে পড়লো বাথটবের গা ঘেঁষে। অরিনের দেহের বেশিরভাগটাই পানিতে ডুবে আছে। রৌদ্র বসে আছে বাথটাবের বাইরে। তার নির্লজ্জ চোখদুটো মেয়েটার দেহের সমস্ত উম্মোচিত, লুকায়িত বাঁকগুলো পরোখ করতে ব্যস্ত যেন। অরিন মাথা নিচু করে বসে আছে। তার পাদু’টো বুকের কাছে এনে চেপে ধরে রাখা।রৌদ্র নেশালো চোখে মেয়েটার উম্মুক্ত কলারবোনের দিকে তাকায়। সেথায় জমে আছে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা। মাঝেমধ্যে কয়েকটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে নিষিদ্ধ স্থানের দিকে। রৌদ্রের নিশ্বাসটা তৎক্ষনাৎ ভারি হয়ে গেলো।

সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার বুকের কাছ হতে পাদু’টো আলতো করে নিচে নামিয়ে দিলো। অরিন বাধ্যের ন্যায় রৌদ্রের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার ফর্সা মসৃণ পাদু’টো বাথটাবের স্বচ্ছ পানিতে ডুবে গেলো মুহুর্তেই। রৌদ্র এবার নিখাঁদ দৃষ্টি ফেলে মেয়েটার কলারবোনের খানিকটা নিচের দিকে। হঠাৎ করেই ছেলেটার মনে কি উঠলো কে জানে, সে হাত বাড়িয়ে একটু পানি নিয়ে, আলতো করে মেয়েটার ঘাড়ে ছেড়ে দিলো। পানি তো তরল! সেকি আর এক জায়গায় স্থির থাকে? রৌদ্রের দেওয়া মুঠো ভর্তি পানিটাও কেমন ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে মেয়েটার কাঁধ বেয়ে। রৌদ্র অনিমেষ চোখে দেখছে সেই গড়িয়ে পড়া। খানিকক্ষণ বাদে ছেলেটা হাত বাড়িয়ে মেয়েটার কাঁধ হতে আঁচলটা সরিয়ে দিতে লাগলো। ওমনি তার হাতটা চেপে ধরে অরিন। মেয়েটা কেমন ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।ঘনঘন নিশ্বাস ফেলার দরুন তার বক্ষপিঞ্জরের উঠানামার গতি যথেষ্ট তীব্র। রৌদ্র বুঝি পাগল হলো আরেকটু। সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটার মাথার পেছনের চুলগুলো আলতো করে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘোরায়। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে থেমে থেমে বলে ওঠে,

“ আটকাঁস না মেয়ে! যা করছি চুপচাপ সয়ে যা! জাস্ট কো-অপারেট উইথ মি!”
থামলো রৌদ্র কিন্তু তার বক্ষপিঞ্জরের মাঝে লুকায়িত অঙ্গখানা যেন কঠিন নৃত্য তুলতে ব্যস্ত।সে আর নিজেকে আঁটকে রাখতে না পেরে মেয়েটার অধরযুগল টেনে ধরলো গভীর আশ্লেষে। ওষ্ঠপুটের কাজ বহাল রেখেই হাত বাড়িয়ে পাশে থাকা শাওয়ার ওয়াল মাউন্টেড সুইচটা অন করে দিলো আলগোছে। আর পরমুহূর্তেই ঝপঝপিয়ে পানি পড়তে লাগলো দুজনের ওপর। পানির তীব্র ফোঁটাগুলো এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে অরিনের ঘন কেশ, রৌদ্রের সর্বাঙ্গ।অথচ সেদিকে কোনরূপ পাত্তা আছে এ দু’জনের? তারা তো নিজেদের ওষ্ঠের মাঝেই ব্যস্ত হয়ে আছে!

প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর রৌদ্র ছাড়লো মেয়েটার ওষ্ঠপুট। অরিন তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি নত করে ফেললো।ইশশ্! ঠোঁটদুটো যা জ্বলছে না তার! মনে হচ্ছে কেও যেন বেশ কয়েকটা মরিচ ঘষে দিয়েছে সেথায়! রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। এগিয়ে এসে বসলো বাথটাবের মধ্যে। সে বসতেই বাথটাবের পানিগুলো কেমন আন্দোলিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো! রৌদ্র বাথটাবের দু’ধারে হাত রেখে গা এলিয়ে বসলো। তার নেশালো দৃষ্টি অরিনের পানে নিবদ্ধ। আর অরিন? সেও তো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার ডাক্তার সাহেবের দিকে। রৌদ্রের প্রশস্ত বুকটার সমগ্র অংশে পানির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা! কাঁধ দু’টো উঁচিয়ে রাখার দরুন মেদহীন পেটের ৬টি শক্ত পেশির রেখাও কেমন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। চওড়া কাধ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানির ফোঁটা। অরিনের তখন কি হলো কে জানে! মেয়েটা নিজের সকল লাজলজ্জা একপ্রকার চুলোয় চড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো রৌদ্রের কাছে।রৌদ্র বাঁকা হাসলো।

নিজের পাদু’টো ছড়িয়ে দিলো দু’দিকে।অরিন ছেলেটার বুকের কাছে এসে বসলো। ধীরে ধীরে একহাত বাড়িয়ে দিলো রৌদ্রের বুকের ওপর। রৌদ্রের নিশ্বাস ক্রমাগত ভারি হয়ে আসতে লাগলো। তবুও সে নিজেকে সামলানোর প্রয়াস চালাতে তৎপর! অরিন তখন হুট করেই রৌদ্রের বুক বরাবর ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ একে দিলো। একটা,দুটো পরপর কয়েকটা! রৌদ্রের চোখ বুঁজে এলো আবেশে। অরিন ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁট নামিয়ে আনলো ছেলেটার পেট বরাবর। সেথায়ও একে দিলো কয়েকটা উষ্ণ স্পর্শ। কিয়তক্ষন বাদেই সে মুখ তুললো।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসলো আবেদনময়ী। তারপর সে ছেলেটার কন্ঠদেশে মুখ গুঁজে দিলো। সেথায় একের পর এক দাতঁ বসিয়ে দিলো। রৌদ্রের হাতদুটো আপনা-আপনি মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। অরিন কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো দাঁত বসানো জায়গায়। তারপর লালচে হয়ে আসা জায়গাগুলো খানিকটা শুষে দিলো! রৌদ্র তখন তৎক্ষনাৎ চেপে ধরে অরিনের ঘাড়। হিসহিসিয়ে বলে,

“ দাঁতে জোর নেই তোর? এভাবে ইদুরের মতো কামড়াচ্ছিস কেনো? জোরে দাঁত বসা!”
অগত্যা এমন কথায় বাঁকা চোখে তাকায় অরিন।মেয়েটা খানিক নাক ফুলিয়ে রৌদ্রের কন্ঠদেশে দাঁত বসিয়ে দিলো সজোরে। রৌদ্র চোখমুখ কুঁচকে, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো এহেন ব্যাথা! অরিনটা শুধু একটা কামড় দিয়েই থামলোনা, সে-তো একের পর এক দাঁত বসিয়েই যাচ্ছে ছেলেটার সমগ্র কন্ঠদেশে। রৌদ্র তাকে থামালো না।ছেলেটা কেমন দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো সবটা।
প্রায় খানিকক্ষণ বাদে অরিন থামলো।ঠোঁটের কোণে বিজয়ের হাসি টেনে বলতে লাগলো,
“ কেমন দিলাম হানি?”
রৌদ্র চোখ মেলে। মেয়েটার দিকে গাঢ় দৃষ্টি ফেলে বলে,
“ আমি একটা দেই হানি?”

অরিন হকচকিয়ে ওঠে এহেন কথায়। কি বললো এই লোক? সে-ও তার মতোই কামড় দিবে? হায় হায়… এমন ব্যাথা কি আর আদৌও সহ্য করতে পারবে সে? অরিন তৎক্ষনাৎ খানিকটা সরে আসতে নিলেই রৌদ্র তার কোমর চেপে ধরে দু’হাতে। মেয়েটাকে এক ঝটকায় নিজের বুকের ওপর এনে আছড়ে ফেলে একপ্রকার! অরিন হকচকায়। মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে না বলতে থাকে মেয়েটা।অথচ সেদিকে কোনরূপ তোয়াক্কা নেই রৌদ্রের।সে ধীরে ধীরে মেয়েটার কাঁধের নিচ অংশ উম্মুক্ত করতে ব্যস্ত! খানিকক্ষণ বাদে সফলও হয়ে যায় ছেলেটা! সে অরিনের কাঁধের নিচে মুখ নামিয়ে আনতেই অরিন কেমন কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ওঠে,

“ প্লিজ প্লিজ না! আমি খুব ব্যাথা পাবো!”
রৌদ্র ফিচেল হাসলো। নিচু কন্ঠে বললো,
“ একবারই দিবো, বেশি না!”
বলেই সে তৎক্ষনাৎ দাঁত বসায় মেয়েটার কাঁধের নিম্নাংশে।অরিন খানিকটা চেচিয়ে উঠতে নিলেই রৌদ্র তার মুখের ওপর হাত দিয়ে চেপে ধরে। ফলস্বরূপ মেয়েটা কেমন গোঙাচ্ছে! রৌদ্র কিয়তক্ষন বাদেই দাঁত সরালো সেখান থেকে। দেখলো, জায়গাটায় কেমন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দাঁতের চিহ্ন গুলো। এখনি যা লাল হয়ে গিয়েছে না… পরবর্তীতে নির্ঘাৎ কালচে হয়ে যাবে জায়গাটা! রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটার কুঁচকে রাখা চোখের পাতায় পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে,

“ কেমন দিলাম হানি?”
অরিন চোখ তুলে এবার। রৌদ্রকে দু’হাত দিয়ে খানিকটা দূরে ঠেলে দেবার চেষ্টা চালালো অথচ সেগুড়ে বালি! ছেলেটা তো দূরে সরা দূর,একটুখানি নড়লোও না অব্দি। অরিনের এবার বেশ মেজাজ খারাপ লাগছে। সে কন্ঠে ঝাঁঝ ঢেলে বলে,
“ সরুন, আমি চলে যাবো।”
রৌদ্র আরেকটু এগিয়ে আসে। মেয়েটার দিকে নিচু হয়ে বলে,
“ যার কোলে চড়ে এসেছিলেন, তার কোলে চড়েই যাবেন।এর আগে কোনো কথা নয়!”

অগত্যা এহেন কথায় চুপ করে গেলো অরিন। রৌদ্র নিরব চোখে মেয়েটার দিকে তাকায়। তারপর হাত বাড়িয়ে মেয়েটার ডানহাতটা টেনে ধরলো সে। অরিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রৌদ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকেই ধীরে ধীরে মেয়েটার হাত এনে রাখলো তার কাঁধে, তারপর সেটি গড়াতে গড়াতে নিয়ে গেলো নিজের বুকের কাছে। যেথায় স্পর্শ পড়তেই অরিনের চক্ষু চড়কগাছ! কেননা ছেলেটার হৃৎপিণ্ডটা কেমন তীব্রভাবে স্পন্দন তুলছে। অরিনের ভ্রুদ্বয় ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে এলো।তার চোখেমুখে লেপ্টে গেলো একরাশ মাদকতা। রৌদ্র এবারেও দুষ্ট হাসলো।সে মেয়েটার হাত নামিয়ে আনলো নিজের পেটের ওপর। এবার যেন অরিনেরও নিশ্বাস জুড়িয়ে আসতে লাগলো। রৌদ্র মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে জুড়িয়ে আসা কন্ঠে কোনমতে বললো,

“ যা করবো জাস্ট কথা ছাড়া সায় দিয়ে যাবি ওকে?”
অরিনের কি হলো কে জানে! সে রৌদ্রের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়লো ওপর নিচ।রৌদ্র মৃদু হাসলো।তারপর ধীরে ধীরে মেয়েটার হাতটা টেনে নিয়ে গেলো কোন এক নিষিদ্ধ স্থানে। অরিন তৎক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে হাত সরিয়ে নিতে নিলেই রৌদ্র দিলো এক ধমক।বললো,
“ স্টে কা’ম,এন্ড ডু হোয়াটএভার আই ওয়ান্ট!”

সকাল সাড়ে দশটা!
অন্যান্য দিনগুলোর মতো আজকে তেমন সাড়াশব্দ নেই এহসান বাড়ি জুড়ে। বাড়ির গৃহিনীরা রান্নাঘর ছেড়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন মনমরা হয়ে। মাইমুনা বেগম সকাল থেকে এ নিয়ে দুবার কেঁদে কেটে জ্ঞান হারাবার দশায় গিয়েও কোনমতে ফিরে এসেছেন।এতো বেলা হয়ে গেলেও বাড়ির কর্তাদের কোনরূপ তাড়াহুড়ো নেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যাবার। তায়েফ সাহেব গম্ভীর মুখে কোমরের পিঠে দু- হাত আঁটকে পুরো ড্রয়িং জুড়ে পায়চারি চালাচ্ছেন। সাব্বির সাহেব ফ্যাকাশে মুখে বসে আছেন ড্রয়িং রুমের বড় সোফাটার এক কোণে।মানুষটার চোখেমুখে সে কি ক্লান্তির ছাপ! ভাব এমন — তিনি বুঝি গত কয়েকটা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন। তাশরিক সাহেব নিজের ঘরে দোর দিয়ে বসে আছেন।মানুষটার আবার মেজাজ চড়ে গিয়েছে সপ্তম আসমানে।

কখন না জানি কাকে কি কটু বাক্য বলে ফেলেন সে-ই ভয়ে ঘরে নিজেকে আঁটকে রেখেছেন।ডাইনিং এ অনিকের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছেন জুবাইদা বেগম। মানুষটার বুক চিঁড়ে ক্ষনে ক্ষনে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘ নিশ্বাস। কিভাবে যে ছেলেটাকে আটকাবেন তা নিয়েই যত রাজ্যের চিন্তা তার! রাফিয়া বেগম একহাত টেবিলের ওপর ছড়িয়ে রেখে তার ওপর মাথা রেখে শুয়ে-বসে আছেন। প্রেসার ফল করেছে মানুষটার।পাশেই মাইমুনা বেগম সে-ই কখন থেকে এক গ্লাস গ্লুকোজ গুলে খাওয়াতে চেষ্টা চালাচ্ছেন মেজো জা’কে অথচ তিনি তা পারছেন কই? রাইসা বেগম শক্ত মুখে বসে আছেন অন্য পাশের চেয়ারটায়। ঠিক সে-ই সময় রুহি আসে ক্লান্ত মুখে। রেহান তাকে ধরে ধরে আনছে।মেয়েটার আবার হুট করে কি হলো কে জানে! সেই গত ক’দিন ধরে কিচ্ছু খেতে-নিতে পারছেনা সে। কোনো কিছুর গন্ধ নাকে গেলেই বুঝি গা গুলিয়ে উঠছে তার।এইতো সকাল থেকে এ নিয়ে দুবার বমি-টমি করে একাকার অবস্থা মেয়েটার! রেহান তো তার সাধের বউকে নিয়ে বেজায় চিন্তিত। এখানে আসবার আগেই মেয়েটাকে ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে এসেছিলো যদিও কয়েকটা টেস্ট করিয়েছে কিন্তু এতো-শতো ব্যস্ততায় রিপোর্ট গুলো আর আনা হয়নি তার।

রেহান রুহিকে ধরে ধরে চেয়ারে বসালো।অতঃপর একগ্লাস পানি নিয়ে মেয়েটাকে খাইয়ে দিতে লাগলো ধীরে ধীরে। এই পানিটুকুই যা খেতে পারছে মেয়েটা! নয়তো এতদিনে কি যে হাল হতো না তার! জুবাইদা বেগম মেয়েকে দেখে খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন।তার বিচক্ষণ মস্তিষ্ক অন্যকিছু বলছে মেয়ের এহেন অবস্থা দেখে। তিনি চেয়েওছিলেন একবার আড়ালে জিজ্ঞেস করবেন মেয়েকে কিন্তু বাড়ির ওমন অবস্থায় একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন ব্যাপারটা তিনি। রেহান মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ক্ষনে ক্ষনে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে,
“ কি খাবে বউ? এটা দিবো? ওটা দিবো?”
অন্যসময় হলে রুহি হাসতো হয়তো কিন্তু ইদানীং কেন যেন তার মুড সুইং হচ্ছে বেশি বেশি! কেউ ভালো কিছু বললেই হুটহাট চটে যাচ্ছে মেয়েটা। এই যেমন এখন চটছে!

সময় বেলা ১১:৩০।
আর আধঘন্টা পর রৌদ্র রওনা দিবে। কবির সাহেব গম্ভীর মুখে এসে বসলেন সোফায়। তার দৃষ্টি আঁটকে আছে সিঁড়ির দিকে।হয়তো তিনি খুঁজে চলছেন ছেলেকে।

‘ হেচুওওওও!”
অরিনটা একের পর এক হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে। বেশিক্ষণ পানিতে থাকার দরুনই হয়তো এই হাল তার।রৌদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে সযত্নে মেয়েটার ভেজা চুলগুলো মুছিয়ে দিচ্ছে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় তা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট! অরিন মাথা নুইয়ে রেখেছে কেন যেন।মেয়েটার পুরো মুখটাই কেমন লাল হয়ে আছে।সেটা কি ঠান্ডা লাগার দরুন না-কি লজ্জায় কে জানে! রৌদ্রের ঠোঁটের কোণে স্পষ্ট বাঁকা হাসির রেশ। ছেলেটা হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে হেয়ার ড্রায়ার আর চিরুনিটা তুলে নিলো।তারপর মেয়েটার কোমর সমান চুলগুলো একটু একটু করে আঁচড়ে, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকাতে লাগলো।

প্রায় মিনিট দশেক পর হাতের কাজ শেষে রৌদ্র কেমন ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো। বাব্বাহ! এই চুল শুকাতেই তার আধঘন্টা লাগবে রোজ! রৌদ্র এবার আয়নায় মেয়েটার নতমুখের পানে তাকালো। মেয়েটার পরনে তারই ওভারসাইজ বাথরোবটা।যেটা কিনা পরিধিতে মেয়েটার পা অবধি! অরিন কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে সেটা পড়ে।রৌদ্র দুষ্ট হাসলো। মেয়েটার মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,

“ আর কত লজ্জা পাবে বউজান? হাফ বাসর তো কমপ্লিট করেই ফেললাম! এখনও লজ্জা ভাঙলো না তোমার?”
এহেন কথায় নুইয়ে রাখা মাথাটা যেন আরেকটু নুইয়ে গেলো মেয়েটার। রৌদ্র হাসলো ঠোঁট পিষে। সে চট করে এগিয়ে গেলো নিজের কাভার্ডের দিকে।সেখান থেকে দুটো শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে দাঁড়ালো অরিনের পিছনে। ব্যাগদুটো মেয়েটার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ এখান থেকে যেটা ভালো লাগে সেটা পড়ে নে জানবাচ্চা! আমি আসছি!”
কথাটা বলেই রৌদ্র গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ভাগ্যিস,সকালে উঠেই আগে অনিককে বলে দিয়েছিলো, কেউ যেন দোতলার দিকে না আসে! না বললে কি যে হতো! রৌদ্র মনে মনে বেশ স্বস্তি অনুভব করলো অনিকের মতো একটা সম্বন্ধি পেয়ে।

পরনে কালো রঙা চেক শার্ট, তার সঙ্গে এ্যাশ রঙা ঢিলে গ্যাবাডিন প্যান্ট। গলার কাছে শার্টের দুটো বোতাম হা করে খুলে রাখা যেখান দিয়ে স্পষ্ট দৃশ্যমান লোমহীন সুদর্শন বুকখানার কিছু অংশ। শার্টের বোতামে ঝুলছে কালো রঙের রোদচশমা।দু’হাতের শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখা কনুই থেকে চার আঙুল নিচ অব্ধি। ডানহাতে শোভা পাচ্ছে সিলভার রঙের ঘড়িটা। সুদর্শন যুবকটি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পারফিউম ছড়াচ্ছে। আর ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ রেখে তার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরিন। মেয়েটা মনে মনে কে জানে কি ভাবছে! তার ঠোঁটের কোণে কি সুন্দর করে ফুটে উঠেছে মুচকি হাসির রেশ। রৌদ্র একপলক আয়নার দিকে তাকায়। হালকা হেসে বলে ওঠে,

“ স্টপ থিংকিং মি লাইক দেট হানি! এখন চাইলেও মুডে আসা সম্ভব না!”
অরিন তৎক্ষনাৎ মুখ বাঁকায়। তা দেখে রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। সে পেছনে ফিরে মেয়েটার কোমর চেপে তাকে নিজের কাছে টেনে আনে।মেয়েটার গালে ঠোঁট রেখে বলে ওঠে,
“ আমার সানশাইন! আই লাভ ইউ জানবাচ্চা!”
অরিন হাসলো গালভরে।সেও রৌদ্রের গলায় হাত ঝুলিয়ে সুর টেনে বলে,
“ আই লাভ ইউ ইনফিনিটি আমার ডাক্তার সাহেব!!”
মেয়েটার এহেন কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে ওঠে রৌদ্র। মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
“ তুমি এখানেই থাকো।আমি যতক্ষণ না বলবো ততক্ষণ এখান থেকে বের হবে না কেমন?”
অরিন ভ্রু কুঁচকায়। সন্দিহান গলায় বলে ওঠে,
“ কেনো? আমি যাবো না আপনার সঙ্গে?”
রৌদ্র মাথা নাড়ায়। গলা থেকে মেয়েটার হাতদুটো নামিয়ে দিয়ে বললো,
“ অবশ্যই যাবে বউজান কিন্তু এর আগে লাস্ট একটা খেলা এখনো বাকি আছে। আশা করি এটাতেই কাজ হবে।তাই তুমি এখানে থাকো আমি যাচ্ছি নিচে!”
পুরো ব্যাপারটা অরিন খুব একটা না বুঝলেও কোনমতে মাথা নাড়ালো। রৌদ্রকে বিদায় দিয়ে বিষন্ন মুখে বসে পড়লো বিছানায়। না জানি এখন আবার কি ঘটবে!

রৌদ্র সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।তার হাতে বড় একটা লাগেজ। তাকে দেখামাত্রই বাড়ির সকলে নড়েচড়ে দাঁড়ালো। সাব্বির সাহেব আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মেয়েকে খুঁজছেন।সারাদিন মেয়েটাকে দেখা যায়নি একটিবারের জন্যও। তিনি মনে মনে ধরেই নিয়েছেন — তার মেয়েটা বুঝি রৌদ্রের চলে যাওয়াতে মুষড়ে পড়েছে যার জন্য একটিবারের জন্যও আসেনি এখানে।
কবির সাহেব আড়চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। রৌদ্র মায়ের কাছে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। জুবাইদা বেগম ছেলেকে দেখেই কান্না জুড়ে দিলেন হাউমাউ করে। রৌদ্র আলগোছে মা’কে বুকে টেনে নিলো।মায়ের মাথাটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

“ কাঁদছো কেনো এভাবে আম্মু? তুমি ডাকলেই তো চলে আসবো আমি! হুঁশ! থামো এবার। আর কেঁদো না।”
কে শুনে কার কথা! জুবাইদা বেগম তো বুক ভাসিয়ে কাঁদছেন।রৌদ্র মা’কে বুকে চেপে রেখেই সকলের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে নিলো।অবশেষে বাকি রইলো কবির সাহেব। রৌদ্র মা’কে ছেড়ে দিয়ে বাবার কাছে এগিয়ে গেলো।বাবার পায়ের কাছে একহাঁটু গেড়ে বসে নিচু কন্ঠে বললো,
“ ভালো থেকো আব্বু!”

কবির সাহেব চোখ তুলে চাইলেন ছেলের দিকে। আশ্চর্য! মানুষটার চোখদুটো কেমন চকচক করছে! আচ্ছা… তিনি কি কাঁদতে চাইছেন? তার কি মন খারাপ? কবির সাহেব কিছু না বলে ওঠে দাঁড়ালেন।রৌদ্রও সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। কবির সাহেব খানিকটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ছেলের কাঁধে হাত রেখে ভেঙে আসা কন্ঠে কোনমতে বললেন,
“ বাবা হয়ে ছেলের খাঁটিয়া কাঁধে তুলবো, এতোবড় কলিজা নিয়ে আমি জন্মাইনি বাপ! তোর অরিকে লাগবে তাইতো? ঠিক আছে! ও তোর। কিন্তু তবুও মরার কথা আর কোনোদিন মুখে আনিসনা বাপ! সইতে পারবো না আমি।”

হঠাৎ এহেন বাক্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো পুরো এহসান পরিবার। প্রতিটি মানুষের চোখেমুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অবিশ্বাসের ছাপ! সাব্বির সাহেব তৎক্ষনাৎ বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন।মানুষটা বেজার মুখে হঠাৎ করেই যেন খানিকটা হাসির ঝলক দেখা গেলো।তাশরিক সাহেব তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।কনুই দিয়ে পাশে দাঁড়ানো তায়েফ সাহেবের পেটে খানিকটা গুঁতো দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
“ ভাইজান! আমি কি স্বপ্ন দেখছি? আমায় একটা চিমটি কাটো তো!”
এমন একটা ক্লাইমেক্সের সিনে হুটহাট খোঁচাখুচিঁতে যেন বেশ বিরক্ত হলেন তায়েফ সাহেব। তিনি কপাল কুঁচকে ধীর হাতে ছোট ভাইয়ের গালে চড় বসালেন। তাশরিক সাহেব তৎক্ষনাৎ খানিকটা ককিয়ে উঠেন।হাত দিয়ে গাল ডলতে ডলতে বললেন,

“ সুযোগ বুঝে হাত সাফ করে নিলে? একটা চিমটি দিলে কি হতো?”
তায়েফ সাহেব বাঁকা হাসলেন।ফিসফিস করে প্রতিত্তোরে বললেন,
“ চিমটি দিলে যদি তোর মনে হতো তুই ঘুমিয়ে আছিস তাই তো চড় দিলাম।কেন ভালো করিনি?”
তাশরিক সাহেব মুখ কুঁচকে সামনে তাকালেন। এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সিনারিটা দেখা প্রয়োজন!
এদিকে রৌদ্র বাইরে থেকে নির্বিকার হলেও ভেতর থেকে যেন নাচছে ছেলেটা! সে-তো এটাই চেয়েছিলো। যাক অবশেষে তার প্ল্যান কাজ করলো তবে।

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬০

কবির সাহেব ভেজা চোখে হাসলেন একটুখানি। ছেলের কাধঁ চাপড়ে গলা উঁচিয়ে ভাইদের উদ্দেশ্যে বললেন,
“ সাব্বির, তায়েফ,তাশরিক! বিয়ের ব্যবস্থা কর! পুরো শহর দেখুক — এহসান বাড়ির ছেলে-মেয়েদের বিয়ে!”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৬২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here