লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ২৩

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ২৩
Fatima Fariyal

সন্ধ্যার আভা গোধূলির রঙে মিশে গিয়ে গুলশানের নিস্তব্ধ এরিয়াটাকে একরকম রহস্যে ঢেকে দিয়েছে। বাতাসে মৃদু পাতার শব্দ তবুও হঠাৎ সেই নীরবতা ভেঙে পড়ল এক অদ্ভুত গর্জনে। মীর হাউজের লোহার গেট পেরিয়ে একে একে ঢুকছে আহাদ রাজার চারটা কালো রঙের গাড়ি। গাড়ির দরজা খুলতেই কয়েকজন গার্ড ছুটে এসে আহাদের পাশে সার দিলো। আহাদ গাড়ি থেকে নেমে মাথা ঝাঁকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে এলোমেলো চুল ঠিক করার চেষ্টা করল। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিয়ে একবার চোখ তুলে চারপাশটা দেখে নেয়। চোখে স্বাভাবিক ঠাণ্ডা জ্যোতি, তার মুখের সেই দৃঢ়তা যেন মুহূর্তেই আশেপাশের বাতাসটাকে কাঁপিয়ে দিলো। নাদিমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

“কি খবর?”
নাদিম এক পা এগিয়ে এসে কণ্ঠে দৃঢ়তার সঙ্গে বললো,
“ভাই, আপনার শিকার ডেমো ঘরে আছে। দু’জনকে ধরতে পেরেছি, বাকি দু’জন পলাতক।”
মূহুর্তেই আহাদের কপালে ভাঁজ পরলো। গার্ডদের দিকে তাকিয়ে হায়েনার মতো হুংকার ছাড়লো,
“পালিয়ে যায় কি করে! একটা কাজও ঠিকঠাক করতে পারিস না? তোদের সবকটাকে পুষেছি কি সাধে? আমার টাকা কি গাছে ধরে, যে তোদের প্রতি মাসে মাগনা টাকা দিবো? ইডিয়েট কতগুলো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গার্ডরা অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ সাহস পেলো না চোখ তুলতে। তাদের চোখে ভী’তি আর লজ্জা মিশে আছে। আহাদ একে একে প্রত্যেকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ করলো। অতঃপর ডান হাতটা পাঞ্জাবির পকেটে পুরে গটগট করে চলে গেলো ডেমো ঘরের দিকে। তাকে অনুসরন করে পিছু পিছু ছুটলো নাদিম, শাহীন আর শাওন। ডেমো ঘরের অন্ধকার আবছা আলোয় দুজন অভিযুক্তকে ঝু’লি’য়ে বে’ধে রাখা হয়েছে। আহাদ ভিতরে ঢুকেই একটা চেয়ারকে গড়গড় করে টেনে তাদের সামনে নিয়ে, এক পা তুলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। আগুনে ঝলসে যাওয়া দৃষ্টি ছুড়ে দেয় তাদের দিকে। তার সেই দৃষ্টিতে দুই অভিযুক্ত কেঁপে উঠল। আহাদ এবার এক হাত শাওনের দিকে বাড়িয়ে দিতেই শাওন একটা ধাতব পি’স্ত’ল তুলে দেয় আহাদের হাতে। আহাদ পি’স্ত’ল’টা হাতে নিয়ে ওজন মাপার মতো একবার ঘুরিয়ে দেখলো। তারপর ধীরে পা ফেলে এগিয়ে গেলো। প্রতিটা পদক্ষেপের সঙ্গে ঠকঠক করে মেঝেতে তার জুতার শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো। সে হঠাৎ করেই একজনের গলায় পি’স্ত’ল চেপে ধরলো। চোয়াল শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে ঠাণ্ডা অথচ ভয়ংকর গলায় বলে উঠলো,

“তোদের আমি উড়তে দিয়েছিলাম বলে, এতো উপড়ে উঠে গেছিস! যে এটাই ভুলে গেছিস। তোদের লাটাই আহাদ রাজার হাতে।”
এই বলে আহাদ পি’স্ত’ল’টা আরো জোড়ে চে’পে ধরলো।ছেলেটার মুখ থেকে একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। আহাদ এবার তাকে এক ঝটকায় ছেড়ে দিয়ে আরেকজনের চোয়াল চে’পে ধরে। এতো জোড়ে, যে মনে হলো তার চোয়াল ভেঙ্গে সব দাঁত খুলে বেড়িয়ে আসবে। আহাদ তার দিকে জলন্ত দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে সিংহের মতো গর্জন করে উঠলো,

“তোদের সাহস কী করে হলো। এই আহাদ রাজার উপর আক্রমন করার?”
তার চিৎকারে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো। এবার সে পি’স্ত’ল হাতেই একটা ঘু’ষি বসিয়ে দিলো ছেলেটার নাক বরাবর। সাথে সাথে ছেলেটা চি’ৎ’কা’র করে উঠে। তার নাক ফেঁ’টে গলগল করে র’ক্ত বেড়িয়ে আসে। আহাদ তাকে ছেড়ে দিয়ে বা হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা নিজের নাকটা ঘষে নিয়ে চেয়ার টেনে বসে। অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভয়ামিশ্রিত গলায় বললো,

“মাতব্বরের চামচাগিরি করতে করতে তোরা নিজেদের অস্তিত্বই ভুলে গেছিস। অথচ দেখ! তোদের মাতব্বর তোদের বাঁচাতেও এলো না। আমার আফসোস হচ্ছে তোদের জন্য।”
অভিযুক্ত দুজন কাতর চোখে আহাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহাদ দু আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে ইশারা করতেই শাওন আর নাদিম গিয়ে দ্রুত তাদের হাতের বাঁ’ধ’ন খুলে দিলো। সাথে সাথে দুজনে এসে আহাদের পায়ের কাছে বসে পড়লো। হাত জোড় করে অনুনয় করে বললো,
“ভাই, ভাই! এবারের মত মাফ কইরা দেন, ভাই। এমন ভূল আর জীবনেও করবো না। আমাদের খলিল মাতব্বর বলছিলো, যেনো ওইখানে গিয়ে ঝামেলা করি আর আপনার উপর গু’লি ছুড়ে ভ’য় দেখাই। তাইলে নাকি আপনি দূর্বল হয়ে তার পথ থেইক্কা সইরা যাইবেন।”
আহাদ তাদের কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেঁটে পরলো। তার হাসি প্রতিটা দেয়ালে প্রতিব্ধনিত হয়ে আবার ফিরে এলো। মূহুর্তেই আবার হাসি বন্ধ করে তাদের সামনে সামান্য ঝুঁকে, দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

“আহাদ রাজা ভ’য় পেয়ে সরে যায়না, বরং সরায়। আমি চাইলেই ওই মাতব্বরের বংশ নির্বংশ করে দিতে পারতাম দুই মিনিটে।”
এরপর আবার সোজা হয়ে বসে। কন্ঠে একটু অভিনয় মিশিয়ে বললো,
“কিন্তু কি বলতো, আমার মনটা আবার বড্ড নরম, তুলতুলে। একদম হাওয়াই মিঠার মতো। তাই ওকে সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু ও আমার নরম মনটা গরম করে দিলো। এবার কি করা যায় বল তো?”
এই বলে গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলিয়ে ভাবনাসূচক ভঙ্গি খেলালেন। তার কণ্ঠে জমে থাকা ঠাণ্ডা অভিনয়, ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

“হ্যাঁআআআ, ওর ওই টাকলা মাথাটার ভাষ্কর্য বানায়া শাহাবাগ চত্বরে ঝুলায়া রাখলে কেমন হয়?”
তার এই কথায় পাশে থাকা শাহীন, নাদিম আর শাওন মুখ টিপে হেসে ফেললো। তবে সেই হাসি নিজেদের ভিতরে সংযত করে নিলো। তখনই ছেলে দুটো আবার অসহায়ের মতো উতলা হয়ে বলে উঠলো,
“ভাই আপনি যাই করবেন, আমরা আইজ থেইক্কা আপনার লগে আছি ভাই। আমাদের ভূল হয়ে গেছে ভাই, আমাদের এবারের মতো মাফ কইরা দেন ভাই।”

আহাদ তড়াক করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। চোখ রক্তবর্ণ, দাঁত কিড়মিড় করে গর্জে উঠলো,
“এই মাতব্বরের চামচা এই, আমি তোদের কোন মায়ের পেটের ভাই হেহ? আরেকবার ভাই বললে তোদের চান্দিনা ফুটা কইরা দিবো। আর ক্ষমা? আহাদ রাজার কাছে ভুলের কোন ক্ষমা নাই।”
নাদিম আর শাওনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তারা দুই মিনিটের মধ্যে পাশের কক্ষে থেকে দুটো বড় বরফের খণ্ড এনে রাখলো মেঝেতে। ছেলে দুটো অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে, কি হচ্ছে বুঝতে পারলো না। আহাদ অভিযুক্ত ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে আদেশ করলো,

“ওই বরফের উপর উঠে দাড়া, কুইক!”
তারা দুজন আবারও একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। এরপর আবার আহাদের জলন্ত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ধড়ফড় করে খালি পায়ে উঠে দাঁড়ালো বরফের উপর। পা রাখতেই কেঁপে উঠল শরীর, শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। আহাদ আবার গর্জে উঠলো,
“এবার কান ধর।”
দু’জন হতভম্ব হয়ে তাকালো, কিন্তু আহাদের ভ’য়ং’কর দৃষ্টি লক্ষ্য করে কাঁপা কাঁপা হাতে কান ধরল। তখনই আহাদ কর্কশ গলায় বললো,

“এভাবে না! মুরগি হইতে পারোছ? না পারলে আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। হাটুর নিচে দিয়ে হাত নিয়ে কান ধরবি। যতক্ষণ না আমি বলবো কান ছাড়া যাবে না। তা না হলে আবার প্রথম থেকে মিনিট কাউন্ট করা হবে। এখন দ্রুত কান ধর।”
অভিযুক্ত দুজন বাধ্য হয়ে আহাদের বলা নিয়মে কাঁপা হাতে হাটুর নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরল। আর ইতিমধ্যে তাদের হাত কয়েকবার ছুটেও গেলো তবে কেঁপে কেঁপে আবারও কান ধরলো। এদিকে তাদের শরীর শীতল হয়ে গেলো। মুখ নীলচে বর্ন ধারন করলো। ঘরের বাতাসেও তখন নিঃশব্দ ভ’য় ঝুলে আছে। আহাদ চেয়ারে বসে সেদিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়, নির্মম হাসি খেলে দিলো। অতঃপর চেয়ার থেকে উঠে শাওনের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো,

“শাওন! নেক্সট ডেমো রেডি কর। এইটা শেষ হলে পরেরটা শুরু করবি। ওদের খাতিরদারিতে যেনো কোন কমতি না থাকে। আহাদ রাজার ডেমো ঘরে এসেছে, সবগুলো ডেমো প্রয়োগ না করলে মান ইজ্জতের দফারফা হয়ে যাবে। আমি যাচ্ছি! জরুরি কাজ আছে। কোন ছোটখাটো ভুলও যেনো না হয়। আন্ডারস্ট্যান্ড!”
শাওন মথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললো,,
“ঠিক আছে ভাই, আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার মুরগি আমরা সামলে নেবো।”
“গুউউউডড!”
একটা বাঁকা হাসি টেনে বললো আহাদ। এরপর শাহীনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। তাকে অুনসরন করে শাহীনও পিছু নেয়। বাইরে তখন গোধূলি ঘনিয়ে এসেছে, আকাশটা গাঢ় চ্যানের মতো। মীর হাউজের পাথরের দেয়ালে পড়েছে লালচে আভা, আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষমতার সেই অদৃশ্য মুখ আহাদ রাজা।

পরেরদিনের সকালের রোদটা ছিলো একটু তীব্র। সূর্যের আলো পাতলা পর্দার ফাঁকা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে সোজা গিয়ে পড়েছে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে রিদিতার চোখে মুখে এসে পড়তেই সে বিরক্ত হয়ে কপাল গুঁজে নিলো। জানালার দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে পর্দাটা টেনে দিয়ে আবার নিজের সাজগোজে মন দিলো। চুলগুলো পেছনে নিয়ে রাবার ব্যান্ডে বেঁধে নিলো। সামান্য এলোমেলো গুচ্ছগুলো কানপাশে গুঁজে ওড়নাটা মাথায় টেনে নিলো নিখুঁতভাবে। আয়নায় নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো। একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ঠিক তখনই, কলিংবেল বেজে উঠলো। রিদিতা হালকা হাসলো, সে আগে থেকেই জানতো কে আসতে পারে। তাই তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই তার পুরো পরিবার যেন একসাথে ফ্রেমে ধরা পড়লো। রিদিতা মুখে হালকা হাসি টেনে সালাম দিলো,

“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
খুবই নম্রভাবে জবাব দিলো তারেক রায়ান। শব্দ পেয়ে তড়িঘড়ি করে পাশের ঘর থেকে ছুটে এলো ঈশানী। ব্যাগপত্র নিয়ে ভিতরে এসে ড্রইং রুমে বসলো সবাই। দীর্ঘ জার্নির পর ক্লান্ত দেহটাকে একটু বিশ্রাম দেয়ার চেষ্টা করলো। এমন সময় পিছন থেকে রিদির মাথায় একটা টোকা পরলো। রিদি কপাল গুছিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে বত্রিশটা পাটি বের করে দাঁড়িয়ে আছে তানভীর। রিদি সাথে সাথেই কটমট করে চেঁচিয়ে উঠলো,
“ও এখানে কি করছে? ওকে আনছো কেনো? এই বদের হাড্ডিরে কেনো আনছো!”
তানভীর ঠোঁট বাকিয়ে বললো,

“আমাকে কেউ কোলে করে আনে নাই। এই যে দেখ, আমার দুইটা পা, দুইটা হাত আছে। আমি একাই আসতে পারি।”
রিদিতা মুখে একখানা কুটিল হাসি টেনে বললো,
“হ্যাঁ, কিন্তু ব্রেন নাই। মস্তিষ্কহীন হাফ লেডিস একটা।”
“কী বললি তুই?”
“ঠিকই তো বলেছি।”
তানভীর এবার রাগে তেড়ে গেলো তার দিকে। ঠিক তখনই রিদিতার মা, ফরিদা বেগম তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে ধমক দিলেন,
“তানভীর! মার খাবি কিন্তু এবার! এজন্যই তোকে আনতে চাইনি আমি।”
তানভীর প্রতিবাদী মুখে বললো,

“ফুফু! তোমার মেয়ে কি বললো শুনোনি? কোথায় একটু লেবুর শরবত টরবত বানিয়ে খাওয়াবে, এতো কষ্ট করে এলাম। তা না করে, আমার মতো সাদাসিধা ছেলেটাকে উল্টাপাল্টা বলছে।”
রাইসা পাশ থেকে জোড়ে হেসে উঠে বললো,
“ও নাকি সাদাসিধা! হা হাহাহ!”
রিদি বিরক্তিতে তানভীরের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বললো,
“বাসায় লেবু নাই!”
“লেবু নাই তো কী ভীমও নাই? অত্যন্ত ভীম দিয়ে শরবত বানিয়ে দিতে পারতি। শুনিস নাই ভীমে এক হাজার লেবুর শক্তি থাকে।”
“ভীম কেনো, তোর কপালে বিষের শরবতও মিটবে না। বদের হাড্ডি।”
দাঁতে দাঁত চেপে বলে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
তারেক রায়ান এবার ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

“কোথায় যাচ্ছো?”
রিদিতা জুতা পরতে পরতে এককথায় উত্তর দিলো,
“ভার্সিটি।”
“যাওয়ার দরকার নাই।”
তারেক রায়ানের গলায় গাম্ভীর্য বাক্যটা যেন দেয়ালে আছড়ে পড়লো। ঘরের ভেতর হঠাৎ একটা নিস্তব্ধতা। ঈশানী ফ্রিজ থেকে পানি করছিলো, তার হাতও মাঝপথে থেমে গেলো। দু’বোনের চোখে চোখ পড়লো যেন তারা নীরবে কোনো পরামর্শ করছে। অতঃপর ঈশানী ঠাণ্ডা পানি ঢেলে গ্লাসটা বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আব্বু… এতো দূর এসে ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া টা কী ঠিক হবে! আমার পড়াশোনাও মাঝপথে থেমে গেলো। এখন রিদিকে অত্যন্ত…”

তারেক রায়ান ঈশানীর কথা কেটে দিয়ে গ্লাস থেকে চুমুক তুলে বললেন,
“আহহ, ওর পড়া কে বন্ধ করছে? আমি তো শুধু আজ যেতে বারণ করেছি কারন বাইরের পরিস্থিতি ভালো না। কয়েকদিন যাক, সব শান্ত হলে তখন না হয় রেগুলার ক্লাসে যাবে।”
তার কণ্ঠে ক্লান্তি, কিন্তু তাতে একধরনের স্নেহও লুকিয়ে আছে। বাবার কথায় দু’বোন যেনো স্বস্তি ফিরে পেলো। রিদিতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাদ্য মেয়ের মতো ধীর পায়ে আবার নিজের রুমে ফিরে গেলো। পর্দা সরিয়ে আবার জানালা খুলে দিলো, সূর্যের আলোটা ঝিলিক দিয়ে ঘরে ঢুকে। রিদি জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে। বাইরের আলো তখনো ছড়ানো, কিন্তু তার চোখে যেন আলো নেই। মনটা কেমন অদ্ভুতভাবে ভারী লাগছে।

আহিয়া উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে ধাপধাপ শব্দে নেমে আসে। প্রতিটা ধাপে তার পায়ের শব্দ স্পষ্ট, যেন সে নিজেই নিজের উপস্থিতি বুঝে নিচ্ছে। কিন্তু নিচে আসতেই চোখে পড়লো ডাইনিং টেবিলে বসা আদনানের দিকে। হালকা আকাশি রঙের শার্টের হাতা গোটানো, ঘন কালো চুলগুলো পরিপাটি করে সেট করা। নিজের স্বভাব শুলভ ভঙ্গিতে চুপচাপ বসে সকালের নাস্তা করছে। আহিয়া এক মুহূর্ত থেমে গেলো। ঠোঁট কামড়ে দ্বীধা নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে সোজা গিয়ে সোফায় পা তুলে বসে। হালিমা বেগম সেদিকে তাকিয়ে ডাকলেন,

“আহিয়া, নাস্তা করবি না? এদিকে আয়।”
তখনই আদনান চোখ তুলে তাকালো, আর সঙ্গে সঙ্গে তার দৃষ্টি গিয়ে আটকে গেলো আহিয়ার চোখে। মুহূর্তটা স্থির হয়ে গেলো। আহিয়ার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে যায়, চোখে চোখ পড়তেই কেমন অদ্ভুত অনূভতি হলো। সে আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না।, দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,
“না চাচি আম্মু, এখন ভালো লাগছে না। পরে খাবো।”
হালিমা বেগম কপাল কুঁচকে বললেন,
“পরে কখন করবি? ভার্সিটি যাবি না আজ?”
“না।”
“সে কি! শরীর খারাপ নাকি?”

বলেই সে উদ্বেগ নিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলেন তার দিকে। কাছে গিয়ে কপালে হাত রাখে বললেন,
“কই, শরীর তো ঠাণ্ডাই মনে হচ্ছে। তাহলে ঘামছিস কেনো?”
আদনান তখন নাস্তার চামচটা নামিয়ে রাখলো। দু’বাহু ঘুড়িয়ে নিয়ে সোজা হয়ে বসে। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে ড্রইংরুমে। আহিয়া হালিমা বেগমের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার কিছু হয়নি চাচি আম্মু। আমি ঠিক আছি। তুমি শুধু এক কাপ কফি দাও।”
“ঠিক আছে, বস আমি নিয়ে আসছি।”

হালিমা বেগম চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে। ঘরটা আবার নিস্তব্ধ, শুধু ঘড়ির টিকটিক শব্দ। আহিয়া ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গিমা করে পাশের টেবিল থেকে একটা গল্পের বই তুলে নিয়ে পড়ার ভান করলো। একটু পর টের পেলো, তার কানে ভেসে আসছে পদচারণার শব্দ। নিঃশব্দে, মেপে মেপে, কিন্তু কাছে আসছে নিশ্চিতভাবে। নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ নিজেরই কানে বাজছে ধকধক করে। চোখ তুলে দেখে আদনান ঠিক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আহিয়ার বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় শুরু হলো। বইয়ের পাতায় চোখ রাখার চেষ্টা করলো, কিন্তু হাত কাঁপছে। আদনান সামান্য ঝুঁকে এল, তার মুখ ঠিক আহিয়ার সমান উচ্চতায়। আহিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো, গলা শুকিয়ে আসছে। কণ্ঠ ভারী হয়ে গেলো, অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“ক… কী করছেন আদনান ভাই?”
আদনান তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এক মূহুর্ত। এরপর ধীরে হাত বাড়িয়ে পিছন থেকে তার ডাক্তারি কোর্ট’টা টেনে নিলো। আদনান চোখে তখন একরকম ঠান্ডা দুষ্টুমি, ঠোঁটে অর্ধেক বাঁকা হাসি টেনে শান্ত স্বরে বললো,
“এইটা নিচ্ছিলাম, এমনভাবে তাকাচ্ছিস যেনো অনেক বড় অপরাধ করেছি।”
আহিয়া দ্রুত নজড় সরিয়ে চোখ পিটপিট করে আবারও বইয়ে মনোযগ হওয়ার ভান ধরে। এটা দেখে আদনান ঠোঁট কামড়ে এক চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে বললো,
“এতো ব্রিলিয়ান্ট কবে হলি আহি?”
আহিয়া তড়াক করে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ম.. মানে।”
আদনান হাত বাড়িয়ে আহিয়ার বইটা সোজা করে দিয়ে বললো,

“বই উল্টো ধরেও খুব মনোযগ দিয়ে পরছিস! তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি!”
আহিয়া মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলো। চোখ নিচে নামিয়ে দেখে বইটা সত্যিই উল্টো ধরা! তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে নিলো, যেন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে। আদনান মৃদু হেসে ফেললো। আহিয়া কানে বাজছে সেই হাসির মৃদু প্রতিধ্বনি। ঠিক তখনই পাশের ঘর থেকে আফরোজা শেখ বেরিয়ে এলেন। আদনান সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুখে নিরপেক্ষ ভাব আনলো। আফরোজা শেখ নিজের নির্দিষ্ট চেয়ারে বসতে বসতে তাকালেন আদনানের দিকে। আদনান তড়িঘড়ি করে চলে যেতে নিলেই তিনি পিছু ডাকলেন,

“আদনান।”
আদনান ঘুরে তাকায় আফরোজা শেখের দিকে। এরপর দু’কদম এগিয়ে যায়। আফরোজা শেখ নিজের নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন,
“আজ বিকেলে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো। সন্ধ্যায় ও বাড়ি থেকে মেহমান আসবে। আশা করি আজ কোনো গড়বড় করবে না।”
আদনান মাথা নিচু করে বললো,
“ঠিক আছে, ছোট আম্মা। আমি সময় মতো চলে আসবো।”
আফরোজা শেখ চোখের ইশারায় যাওয়ার জন্য সম্মতি দিতেই আদনান গটগট করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো। পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো বাতাসে। আর আহিয়া অবচেতনভাবে আদনানের চলে যাওয়া পিঠের দিকে তাকিয়ে রইলো।

সূর্য তখন ঠিক মাথার উপরে। বাইরের রাস্তাগুলো ঝলসে উঠেছে তপ্ত রোদের আঁচে। বাতাস নেই বললেই চলে। রিদিতা জানালার পাশে বসে রাইসার সাথে গল্প করছিলো। অনেক দিন পর দুই বোন একসাথে হয়েছে, অথচ আগের মতো সেই ঝগড়া, খুনসুটি, মজা তামাশা কিছুই নেই। দূরুত্ব তাদের সম্পর্কের মাঝখানে অচেনা দেয়াল তুলে দিয়েছে। হঠাৎ রাইসা কথার মাঝখানেই গম্ভীর মুখে বলে উঠলো,
“আপু, তুমি জানো? আব্বু আর মামা তোমার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিলো।”
মুহূর্তেই রিদির শরীরটা শক্ত হয়ে গেলো। মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো এক ঝটকায়। চোখ বড় বড় করে এক রকম চেঁচিয়ে উঠলো,

“কীহহহ।”
রাইসা তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,
“আস্তে বলো আপু! আম্মু যদি জানে আমি তোমাকে আগে থেকে বলে দিছি। তাহলে আমার খবর আছে।”
রিদির মুখের রঙ এক মুহূর্তে লালচে হয়ে উঠলো। রাইসার হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আগে বল কার সাথে? মূসা ভাইয়ের সাথে?”
“আরে না!”
“তাহলে?”

“আমি তো শিওর কিছু জানি না, কিন্তু শুনেছি ছেলে নাকি ডাক্তার। আব্বু বললো দেখতেও নাকি সুন্দর আছে। আমার তো ডাক্তার শুনেই, খুব খুশি লাগতেছে, উফ!”
রাইসার চোখে হালকা ঝিলিক। কিন্তু রিদির চোখে তখন শুধু রাগ আর অবিশ্বাস। রাইসা যেভাবে বলছে, তার মানে বিয়ের কথা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ভাবতেই রিদির রাগ মাথায় চরে উঠলো। সে আর এক মুহূর্তও সহ্য করতে পারলো না। দাঁত কিড়মিড় করে উঠে ড্রইংরুমে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
“আম্মুউউউ! তোমরা আমার বিয়ের কথা বলছো অথচ আমি কিছুই জানি না?”
তার চিৎকার শুনে ঈশানীও রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো। ফরিদা বেগম ধীর ভঙ্গিতে তাকালেন মেয়ের দিকে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন,

“জানানোর জন্যই তো আসছি।”
“তার মানে রাইসা যা বলেছে সব সত্যি?”
ফরিদা বেগমের তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি পড়তেই রাইসা গুটিয়ে গেলো ঈশানীর পেছনে। রিদি এবার ঈশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমিও জানতে তাই না?”
ঈশানী দ্রুত মাথা নেড়ে বললো,
“না, আমিও আজকে শুনছি, একটু আগেই আম্মু বলছে। এর আগে সত্যিই আমি কিছু জানতাম না।”
রিদি আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। রেগে গিয়ে পায়ের কাছে থাকা ময়লার ঝুড়িতে একটা লাথি মেরে চিৎকার করে উঠলো,

“আমার মতামত ছাড়া, আমার বিয়ে কী করে ঠিক করতে পারো তোমরা!”
ফরিদা বেগম রিদির দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললেন,
“যেভাবে তোর মতামত ছাড়াই তোরে দুনিয়াতে আনছি, সেভাবে।”
কথাটা ছুরি হয়ে বিঁধলো রিদির বুকের ভেতর। কিন্তুু কোন উওর দিতে পারলো না। ছোটবেলা থেকেই রিদির স্বভাব, যখন খুব রেগে যায় তখন তার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হয় না। ঠিক তখনই দরজার কলিংবেল বাজলো। রাইসা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই, ভিতরে ঢুকলেন তারেক রায়ান পাশে সুমন ও তানভীর। ড্রইংরুমে এমন ভারী নীরবতা দেখে সুমন ঈশানীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে?”
ঈশানী হালকা চোখের ইশারায় রিদির দিকে দেখালো। সুমন সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলো। তারেক রায়ান ধীরে ধীরে সোফায় বসলেন। স্নেহভরা চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারা করে কাছে ডাকলেন,
“এদিকে আসো।”
রিদিতা মাথা নিচু করে ধীরেধীরে গিয়ে বাবার পাশে বসলো। তারেক রায়ান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,
“আমি জানি তুুমি আমার কথার অবাধ্য কখনো হবে না। তবুও তোমার নিজস্ব একটা মতামত আছে। তাই সরাসরি বলছি, তোমার বান্ধবি আহিয়ার মা আফরোজা শেখ, তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সে তোমাকে তাদের পরিবারে বউ করে নিতে চায়। আমি এখনো সিদ্ধান্ত জানাইনি, তোমার মতামত নিয়ে তবেই জানাবো।”
রিদিতা এক মূহুর্তের জন্য শীতল হয়ে যায়। আহিয়ার মা বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে? তাকে বউ করে নিতে চায় মানে? রিদি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

“আ.. আ আহাদ রাজা? কিন্তু রাইসা যে বললো ডাক্তার!”
তারেক রায়ান মাথা নেড়ে বললেন,
“না, না আহাদ রাজা মীরের জন্য হলে তো আমি কখনোই মত দিতাম না। আদনান মীরের জন্য চেয়েছে।”
রিদির বুকটা ধক করে নিচে নেমে গেলো, বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হলো। যেনো সব কিছু এক নিমিষেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। তার বাবার কথায় ঈশানীও এবার চট করে দাঁড়িয়ে পরলো। রিদি ঢোক গিলতে পারছে না। মনে হলো কেউ গলা চেপে ধরেছে। সে ঈশানীর দিকে তাকালো অসহায়ের মতো। ঈশানী তার দৃষ্টির ভাষা বুঝতে পেরে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আব্বু, রিদি এখনো পড়াশোনা করছে। ওর অনার্সটা শেষ হোক আগে। তারপর না হয় বিয়ে কথা ভেবো।”
তারেক রায়ান শান্তভাবে উত্তর দিলেন,
“বিয়ে হলেই তো আর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে না। আর আদনান মীর এতোটাও মূর্খ না যে বিয়ের পর নিজের বউয়ের পড়াশুনা বন্ধ করে দিবে।”
সুমন পাশ থেকে নরম গলায় বললো,
“তবুও বাবা, আরেকবার একটু ভেবে দেখলে ভালো হতো না।”
তারেক রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন। সুমনের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললেন,

“তোমার কি মনে হয় বাবা। আমি চিন্তা ভাবনা না করেই হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি? নাহ, আমি এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি, খোঁজ খবর নিয়ে তবেই এ পর্যন্ত এসেছি। তোমার মা আর মামাও চায় এ বিয়েটা হোক। এখন শুধু রিদিতা মতামত দিলে, আজই আমরা মীর হাউজ যাবো।”
রিদির গলা ভাষ্পে ঢেকে গেলো। কোন কথাই বেড় হতে চাইল না মুখ দিয়ে। চোখ টলমল করে কয়েক ফোঁটা গরম অশ্রু গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে। প্যাচপ্যাচ করে নাক টেনে, বহু কষ্টে সাহস যুগিয়ে বললো,
“আআ..মি এ বিয়ে করবো না আব্বু। আ আমি এখন বিয়ে করবো না…”
কথাটা উচ্চারণের সাথে সাথেই ফরিদা বেগম গর্জে উঠলেন,

“কেনো করবি না? কারো সাথে সম্পর্ক আছে তোর? কাউকে পছন্দ করিস? তাহলে বল!”
রিদি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে তাকালো মায়ের দিকে। তখনই তারেক রায়ান কড়া গলায় বললেন,
“কি আজেবাজে বলছো ফরিদা! আমার মেয়ের প্রতি আমার ভরসা আছে। ও এমন কিছু করবে না, যাতে তার বাবাকে সমাজে মাথা নিচু করে চলতে হয়। তাই না মা?”
শেষ কথাটা বলেই তিনি মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। রিদি মাথা নিচু করে বসে রইলো, কোন কথা বলতে পারলো না। চোখ থেকে টপটপ করে গরম অশ্রু ঝরছে, তার মনের অবস্থা সে কি করে বোঝাবে সবাইকে। কী করে তার বাবার এই আত্নবিশ্বাষ ভাঙ্গবে। বুকের ভেতরে মনে হলো কোন ভারী পাথরের চাপা পরেছে। যন্ত্রণা হচ্ছে তার, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে!

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ২২

সেই যন্ত্রণার ভাড় সামাল দিতে পারলো না রিদি, কোন রকম উঠে নিজের রুমের দিকে দৌড়ে গিয়ে ভিতর থেকে ঠাস করে দরজাটা বন্ধে করে দেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে, এক মূহুর্ত দ্বীধার পর আহাদ রাজাকে কল দিলো। এই প্রথম সে আহাদ রাজাকে কল করছে, আহাদ রিসিভ করলে কি বলবে সে নিজেও জানে না। তবুও কল দিলো, কিন্তু রিসিভ হলো না। রিদি বুঝতে পারলো, হয়তো কোন সভা কিংবা মিছিল, মিটিংয়ে আছে। তবুও রিদি সেটার পরোয়া না করে আরো কয়েকবার কল দেয়। কিন্তু একবারও রিসিভ হলো না। শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে রাগে আর ক্ষোভে ফোনটা ছুড়ে মারে বিছানায়। এরপর বেডের পাশে মেঝেতে বসে বিছানায় মুখ গুজে হু হু করে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। একটা চাপা কান্না অথচ তার ভিতরের সবকিছুকে তছনছ করে দিচ্ছে।

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here