আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ১৭
অরাত্রিকা রহমান
ঘর নিস্তব্ধ। বাইরের আকাশে চাঁদ আধো আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে, জানালা দিয়ে আসা বাতাসে পর্দা দুলছে। শীতল বাতাসে একটা হালকা শিরশিরানি ভাব, কিন্তু ঘরের ভেতর পরিবেশ যেন গরম, ভারী আর অদ্ভুত আবেগে ভরা।
রায়ান হাঁটু গেড়ে বসে আছে মিরায়ার ঘুমন্ত মুখের সামনে। তার বুক ধকধক করছে, কানে নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।
মিরায়ার নিস্পাপ ঘুমন্ত মুখে এক অদ্ভুত টান। চোখদুটো বন্ধ, পাপড়ি কাঁপছে। নিঃশ্বাসের ওঠানামা খুব নরম ছন্দে চলছে। ঠোঁটগুলো আধখোলা অবস্থাতেই এখনো, গোলাপি আভায় ভরা।
রায়ানের হাত আবার মিরায়ার মুখ ছুঁলো। তারপর হঠাৎ ঝুঁকে আবার একদফা ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকলো মিরায়ার নরম অবয়ব। কপালে রাখল একটা নরম চুমু। কপালে ঠোঁট ছোঁয়া মাত্রই বুকের ভেতর ঝড় বইতে শুরু করল আবার।
এরপর চোখের পাতায়—একটু করে দু’চোখে চুমু।
তারপর গালের ডান পাশে, আবার বাম পাশে। প্রতিটা চুমুর পর তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।
মিরায়ার গায়ের হালকা গন্ধ তার মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
তারপর… তার চোখ বরাবরের মতো আটকে গেল ঠোঁটে।
সে থেমে গেল। নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরল, যেন সামলানোর চেষ্টা করছে। মনের ভেতর দ্বন্দ্ব—
“না… এটা ঠিক না। কিন্তু… ওই ঠোঁটগুলো… কেন এভাবে কাঁপছে? কেন মনে হচ্ছে আমাকেই ডাকছে?”
মিরায়ার ঠোঁটগুলো আসলেই কেঁপে উঠছিল হাওয়ার ছোঁয়ায়। সেই কাঁপন রায়ানের বুকের ভেতর আগুন ধরিয়ে দিল। মনে হলো, ঠোঁটগুলো যেন ফিসফিস করছে—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এসো…”
রায়ান নিজের নিঃশ্বাস গিলে নিল, কিন্তু চোখ সরাতে পারল না। মুহূর্তটা এত ভারী হয়ে উঠল, যেন ঘরের সব বাতাস আটকে গেছে।
অবশেষে সে ধীরে ধীরে ঝুঁকল। কপাল থেকে নেমে এল, গাল পেরিয়ে এল… আর থেমে গেল মিরায়ার ঠোঁটের এক নিঃশ্বাস দূরে। তার ঠোঁট কাঁপছিল, হাতও হালকা কাঁপছিল।
মনে হচ্ছিল—“না, পারব না।”
কিন্তু পরের মুহূর্তেই সমস্ত দ্বিধা ভেঙে গেল।
হালকা করে, খুব আস্তে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল মিরায়ার ঠোঁটে।
সেই ছোঁয়া এতটাই কোমল, তবু মনে হলো যেন পৃথিবী কেঁপে উঠল। এক সেকেন্ড… দুই সেকেন্ড… তারপরই তাড়াহুড়ো করে ঠোঁট সরিয়ে নিল সে, যেন নিজের অপরাধ ধরা পড়ে যাবে। তবে মিরায়ার কোনো হেলদোল নেই থাকবেই বা কিভাবে- না খাওয়ার জন্য ঘুম না আসায় বাধ্য হয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ছিল সে। মিরায়ার সামান্য মাইগ্রেন জাতীয় সমস্যা আছে হঠাৎ প্রচুর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় কখনো কখনো। তাই একটু ঘুমানোর জন্য সে সময় ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়। আজও তাই করেছে।
কিন্তু সেই সামান্য চুমুই রায়ানের বুকের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে দিল। মিরায়ার ঠোঁটের স্পর্শ তার মনে এমন এক স্বাদ রেখে গেল, যা তাকে আরও তৃষ্ণার্ত করে তুলল। সে চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নিল, মনে মনে ফিসফিস করল—
“হায় আল্লাহ… আমার বউটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।”
ঘরের বাতাস যেন ভারী গরম হয়ে উঠল। পর্দা আবার দুলল, ধমকা হাওয়া ঢুকল, কিন্তু রায়ান আর টেরই পেল না। তার সমস্ত মনোযোগ আটকে রইল সেই ঠোঁটের স্বাদে, সেই মুহূর্তে।
রায়ান মিরায়ার ঠোঁট ছুঁয়ে নেওয়ার পর নিজের বুকের ভেতর আগুনের শিখা অনুভব করল। সেই আগুন শুধু কামনার নয়, তাতে এক অদ্ভুত মায়া, আসক্তি আর অপরিসীম ভালোবাসা মিশে ছিল।সে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল নিজের মনেই—
“তুই আমাকে শেষ করে দিচ্ছিস,হৃদপাখি।”
তার চোখে উন্মাদনা ঝিলিক দিল।
“জান বাচ্চা তোর এই ঠোঁট… আহ, যেন বিষ আর মধু একসাথে। একবার ছুঁইলে বারবার ছুঁতে ইচ্ছে করে।”
সে মিরায়খর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।
“কোথায় আমি ভেবেছিলাম আমি তোকে সামলাবো, কিন্তু… তুই-ই আমাকে এমন আসক্ত করে ফেলেছিস যে নিজের উপরই কন্ট্রোল রাখতে পারছি না।”
এক মুহূর্তে সে আরও ঝুঁকে ফিসফিস করল মিরায়ার কানে—
“আমি চাইলে হাজারো মেয়ের দিকে তাকাতে পারি, কিন্তু এক সেকেন্ডও পারি না তোর থেকে চোখ সরাতে। এই আসক্তি… এই মোহ… এটাই আমার ভাগ্য হয়ে গেছে। আমি যে পারছি না আর তোকে ছাড়া থাকতে হৃদপাখি। খোদা এভাবে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে কে জানতো।”
তার বুক থেকে চাপা শ্বাস বেরিয়ে এলো।
“আল্লাহ… আমার বউটাকে আমি কেমন করে সামলাই? এভাবে কাছে পেলে তো পাগল হয়ে যাবো আমি।”
তারপর আবার কিছুক্ষণ মিরায়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইল। মিরায়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছে, অথচ রায়ানের মনের ভিতর আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়ছে। ঠোঁট ছাড়িয়ে নিলেও তার বুক কাঁপছিল—মনে হচ্ছিল ভেতরে ভেতরে যেন হাজারটা আগুনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।
সে চোখ বন্ধ করল কিছুক্ষণ, গভীর নিঃশ্বাস নিল।
“না… না, এভাবে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো। কন্ট্রোল রাখতে হবে…”
কিন্তু চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেই গোলাপি ঠোঁট, সেই মায়াবী মুখ। তার নিজের ঠোঁট যেন জেদ করছিল—“ফিরে যা, আবার ছুঁয়ে দে! ওটা তোরই বউ।”
রায়ানের কণ্ঠে মৃদু আর্তি ফিসফিস করে বের হলো—
“আল্লাহ… এই মেয়েটা আমার সর্বনাশ করে দিচ্ছে। চোখ সরাতে চাই, কিন্তু পারি না। ঠোঁট ছুঁয়েছি একবার… তবুও মন ভরছে না।”
সে আবার ধীরে ধীরে ঝুঁকে এল। এবার আরও কাছে।
তার আঙুল আলতো করে মিরায়ার চিবুক ছুঁলো, যেন বউটাকে আরও নিজের দিকে টেনে আনতে চাইছে।
তারপর দ্বিধার সব বাঁধ ভেঙে গেল—
রায়ানের ঠোঁট আবারও ছুঁয়ে গেল মিরায়ার ঠোঁটে। এবার আর শুধু হালকা ছোঁয়া নয়—একটা দীর্ঘ, মায়াভরা অথচ তীব্র চুমু। মিরায়ার ঠোঁট নরম, উষ্ণ, আর তাতে লুকানো অদ্ভুত এক আসক্তিতে মেতে আছে রায়ান।
রায়ান এমন তীব্র চুমুতে মিরায়ার ঘুম ভেঙে যেতে পারে ভেবে আবার সড়ে এলো। রায়ান হাঁপাতে লাগল, তার বুকের ভেতর ধপাধপ শব্দ হচ্ছিল। তার চোখে তখন উন্মাদনা ঝলক দিচ্ছিল। তবে মিরায়া আগের ন্যায় এখনো ঘুমাচ্ছে। ঘুমের ঔষধ যেন নিজের কাজ অবলীলায় বেশ ভালোই করেছে।
সে মিরায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল—
“আমি বুঝতে পারি না আমি ভালোবাসায় পাগল হচ্ছি নাকি তোর মোহে দিশেহারা হচ্ছি। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত—তোর ঠোঁট, তোর গন্ধ, তোর শরীরের উষ্ণতা… সব আমার মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে।”
তার ঠোঁটে একরকম পরাজিত হাসি ফুটল।
“আমি ভেবেছিলাম আমি শক্ত… আমি কন্ট্রোলড মানুষ। কিন্তু না… তুই-ই আমার একমাত্র দুর্বলতা, আমার আসক্তি।”
রায়ান আবার মিরায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিল, ধীরে ধীরে মিরায়ার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল—
“তুই যদি জানতিস আমি তোকে কতটা চাই… তুই যদি জানতিস আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে শুধু তোর নাম বাজে…”
তারপরও চোখ সরাতে পারল না। ঠোঁট আবারও মিরায়ার ঠোঁটের ওপর ভেসে উঠল, যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে।
আবারও চুমু… এবার আরও আবেগী, আরও দীর্ঘ, যেন ভেতরের সমস্ত দহন ঠোঁটের ভেতর ঢেলে দিচ্ছে সে।
ঘরটা ভারী হয়ে উঠল, চারপাশের বাতাস যেন আগুনে গরম হয়ে গেল।
বাইরে আবারও হিমেল বাতাস বইল, জানালার পর্দা উড়ে উঠল—
আর রায়ানের ভেতরে সেই হাওয়ার প্রতিযোগিতা,
“ওই হাওয়া আমার বউকে ছুঁয়েছে… কিন্তু আমি চাই আরও গভীরভাবে ছুঁতে, আরও নিজের করে নিতে।”
সে শেষবার নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে মিরায়ার উদ্দেশ্যে বলল- “তুই আমার সর্বনাশ হৃদপাখি… আর আমি খুশি খুশি তোর সর্বনাশে ডুবে মরতে রাজি।”
রায়ান শেষবারের মতো ঠোঁট সরিয়ে নিলেও তার বুকের ভেতর যেন অগ্নিকুণ্ড জ্বলছিল। ঘরের নীরবতা আরও ভারী হয়ে উঠল। মিরায়ার শান্ত নিঃশ্বাস, তার শরীরের উষ্ণতা, ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ—সব মিলিয়ে রায়ানের পুরো শরীর কাঁপছিল।
মনে মনে বলল—
“না… আর সামলানো যাচ্ছে না। আমি কি থামব? নাকি… একবারে নিজের করে নেব?”
তার চোখ বারবার মিরায়ার ঠোঁটে চলে যাচ্ছিল, আবার ফিরছিল মিরায়ার গলার কাছে, পাতলা টি-শার্টের ফাঁকে দৃশ্যমান রেখাগুলোতে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল, ঠোঁট কামড়ে ধরল।
কিছুক্ষণ পর আবার ফিসফিস করে বলল—
“আমি জানি , তুই ঘুমিয়ে আছিস… কিছুই টের পাচ্ছিস না। কিন্তু তোর এই শান্ত মুখ আমাকে আরও পাগল করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে তুই আমাকেই ডাকছিস…”
তার আঙুল ধীরে ধীরে মিরায়ার গাল বেয়ে নামল, চিবুক ছুঁয়ে থেমে রইল। এক মুহূর্ত সে নিজের চোখ বন্ধ করল, যেন নিজেকে থামাতে চাইছে।
কিন্তু পরের মুহূর্তেই আবার চোখ খুলল।
তার ভেতরে তীব্র দ্বন্দ্ব—
“আমি কি এর চেয়ে বেশি কিছু করব? নাকি এখানেই থামব? আমি যদি আরেক ধাপ এগোই, তবে হয়তো আর থামতে পারব না।”
তার ঠোঁট আবার মিরাৎআর ঠোঁটের ওপর hovering করছিল। কেবল এক ইঞ্চি দূরে। বুকের ভেতরে ধকধক শব্দ হচ্ছিল, যেন চারপাশ কাঁপছে।
রায়ান নিজের মাথায় হাত বুলাল, কপাল ঘষল—
“আল্লাহ, আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? এই মেয়ে আমাকে শেষ করে ফেলবে।”
সে আবার ঝুঁকে পড়ল। মিরায়ার ঠোঁটে হালকা একটা চুমু দিল, কিন্তু এবার সেটা ছোট। নিজেকে প্রায় সামলেই নিয়ে ছিল এমন সময় আকস্মিকভাবে মিরায়া ঘুমের ঘোরে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা বিয়ে নিল যেন এতক্ষন ঠোঁট গুলো শুকিয়ে ছিল।
ব্যাস! রায়ানের এমন আবেগ প্রবণ অবস্থার প্রকৃত সুযোগের আগুনে যেন মিরায়ার এমন আকস্মিক কাজটা ঘি এর আজ করল।
রায়ান বহু’বার মিরায়ার ঠোঁট ছুঁয়ে আসার পরও শান্ত হতে পারল না। তার বুকের ভেতর আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়লো।
সে নিজেকে থামাতে পারল না অবশেষে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল, হাত কাঁপতে লাগল।
মনের ভেতর একটাই কথা ঘুরছিল—
“না… আর নয়। এবার আমি বাঁচব না। একবার… আরেকবার চুমু খেতেই হবে।”
ধীরে ধীরে আবার ঝুঁকে এল। এবার ঠোঁট ছোঁয়ার সাথে সাথেই তার সমস্ত সংযম ভেঙে গেল।
প্রথমে খুব ধীরে মিরায়ার উপরের ঠোঁটটা নিজের ঠোঁটের ভেতর নিয়ে আস্তে চুষতে লাগল। তারপর ছেড়ে দিয়ে নিচের ঠোঁটটা নিল। একই ভাবে শুষে নিতে লাগল ঠোঁটের সব মিষ্টত্ব তবু যেন এর শেষ নেই। আবার উপরেরটা, আবার নিচেরটা।
এমন পালা করে ঠোঁটের খেলা চলতে থাকল – এক ক্ষুধার্ত প্রাণ যেন তার খাবার পেয়েছে বহু বছর পর।
রায়ান বুঝতে পারছিল—সে আর নিজেকে সামলাতে পারছে না। মিরায়ার ঠোঁটের নরম মিষ্টি স্বাদ তাকে একেবারে মাতাল করে ফেলেছে। তার আঙুল মিরায়ার গাল চেপে ধরল, যেন আরও কাছে টেনে নিতে চাইছে।
হঠাৎই তীব্র আবেগে সে মিরায়ার ঠোঁটে কামড় দিয়ে বসল—সরাসরি মিরায়খর নিচের ঠোঁটে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই মিরায়া কেঁপে উঠল। ঘুমন্ত অবস্থাতেই ব্যথার চাপে হালকা কণ্ঠে ককিয়ে উঠল—
“উমম্…!”
শব্দটা যেন রায়ানের বুক বিদ্ধ করল। সে সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট সরিয়ে নিল। চোখ বড় বড় করে মিরায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নিচের ঠোঁট লাল হয়ে উঠেছে। আর তার মাথা রীতিমতো ঘুরছে। কি করছে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
তার বুক কেঁপে উঠল, নিঃশ্বাস আটকে গেল।
“ইশ্… আমি এটা কি করে ফেললাম! আমি কি এতটা পাগল হয়ে গেছি যে বউটা কষ্ট পেল?”
অপরাধবোধে সে আস্তে আস্তে আঙুল বাড়াল। মিরায়ার লাল হয়ে যাওয়া নিচের ঠোঁটের উপর খুব কোমলভাবে আঙুল বুলিয়ে দিল। যেন ব্যথাটা নিজের আঙুলে টেনে নিতে চাইছে।
তারপর ঝুঁকে গিয়ে ছোট্ট, খুব ছোট্ট একটা চুমু দিল সেই লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটের উপর। চুমুর ভেতরে ছিল ক্ষমা, মায়া আর নিজের উপর রাগ—সব একসাথে।
“সরি জান… আমার ছোট্ট বউ খুব করে সরি। তোমার স্বামী নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।…” ফিসফিস করে বলল সে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মিরায়ার দিকে। মিরায়া আবার শান্ত ঘুমে ডুবে গেছে, কেবল নিঃশ্বাস ধীরে ওঠানামা করছে।
রায়ান গভীর নিঃশ্বাস নিল, মাথা ঝাঁকালো।
“না… আর এক সেকেন্ডও থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারব না। নিজের আদরের হৃদপাখির কষ্টের কারণ হতে হবে আমাকে পরে।”
সে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে হেঁটে গেল।
রায়ান দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। মনটা ভারী, ঠোঁট কামড়ে অপরাধবোধে ভুগছিল।
“ আর থাকলে সর্বনাশ করে ফেলব আমি…”
ঠিক তখনই হঠাৎ পিছন থেকে—
“মিয়াউউউ…”
অল্পস্বরে ডেকে উঠল কেউ।
রায়ান এক লাফে চমকে উঠল। দ্রুত ঘুরে তাকিয়ে দেখল—বিছানার পাশের ছায়ায় জুলিয়েট দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । তার চোখ যেন বলছে—
“পাপা, সব দেখেছি আমি।”
রায়ানের গলা শুকিয়ে গেল। মাথার ভেতর বাজ পড়ার মতো অবস্থা। ঠিক যেন চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা খাওয়া!
সে ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলল—
“ও মা! আমার বউ দেখি… গুপ্ত পাহাড় দার নিয়ে থাকে!”
জুলিয়েট আবার ধীরে ধীরে উঠে এসে গুটি গুটি পায়ে তার দিকে হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সরাসরি এসে দাঁড়াল রায়ানের পায়ের কাছে।
রায়ান আর দাঁড়াতে পারল না। হাঁটু গেড়ে বসল, হাত বাড়িয়ে ছোট্ট বিড়ালটাকে তুলে নিল কোলের ভেতর। জুলিয়েট তার বুকের কাছে এসে আরাম করে শুয়ে পড়ল।
রায়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হেসে উঠল।
“আচ্ছা, ততমি তো মাম্মার মেয়ে… মানে, আমারও মেয়ে হলে না? হুম, জুলিয়েট?”
জুলিয়েট “মিয়াউ” করে সাড়া দিল।
রায়ান নরম গলায় আদুরে সুরে বলল—
“বাহ্! খুব বুদ্ধি আছে তো আমার মেয়ের… কিন্তু আজ যা যা দেখলে, মাম্মাকে কিন্তু কিছু বলবে না! ওকে? মাম্মা ভাববে তোমার পাপা আবার দুষ্টুমি করেছি।”
আঙুল দিয়ে আলতো করে জুলিয়েটের কানে টোকা দিয়ে বলল—
“শোন, মাম্মা আর পাপা একটু আগে রোম্যান্স করছিল। পাপা তোমার জন্য ঠিক একটা রোমিও এনে দেবে। নো প্রবলেম । তখন তুমিও করবে। প্রমিস এনে দেব?”
জুলিয়েট আবার “মিয়াউউ…” করল, যেন সম্মতি দিল।
রায়ান দুষ্টু হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল—
“বাহ্! একদম পারফেক্ট ডটার… মাম্মার থেকেও ভালো সিক্রেট কিপার।”
তারপর ছোট্ট করে কপালে চুমু খেল জুলিয়েটের।
“আমার জুলিয়েট, মাম্মা যদি জানে পাপা কি করেছি, তখন তো বকবে… তাই আজ রাতের জন্য আমার সেভিয়ার হয়ে যাও।”
জুলিয়েট নরমভাবে ঘুমঘুম চোখে মাথা ঘষে দিল তার বুকের সাথে। রায়ান হেসে উঠল—
“এত আদর করিস না, না হলে তোকে আমার ঘরে নিয়ে যাবো। কিন্তু তখন মাম্মা রাগ করবে, তাই না?”
আরেকবার “মিয়াউ” করল জুলিয়েট, যেন সব বুঝে গেছে।
রায়ান আদুরে গলায় শেষবার বলল—
“চলো পাপা, এখন ঘুমোতে দেও তোমার মাম্মাকে। পাপা যাচ্ছি নিজের ঘরে… কিন্তু শোন, মাম্মাকে কিন্তু কিছু টের পেতে দেবে না। ওকে?”
সে জুলিয়েটকে আবার বিছানার কোণে আলতো করে শুইয়ে দিল। তারপর শেষবার মিরায়ার দিকে তাকিয়ে নীরবে তার ঠোঁটে অসহায় এক হাসি ফুটল—
“তুমি আমার দুর্বলতা… তুমি আমার সবকিছু। কিন্তু আমি তোমাকে জাগাতে চাই না, ভয় দেখাতে চাই না। সময় আসুক… তুমি নিজে যখন আমাকে চাইবে, তখন আর কিছুই আটকাতে পারবে না আমাকে বউজান, আমি নিজেও না।”
সে নিঃশব্দে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ঘরে থেকে গেল কেবল মিরায়ার শান্ত নিঃশ্বাস আর জুলিয়েটের মিষ্টি মিউমিউ আওয়াজ।
রাতটা রায়ান একফোঁটা চোখ না লাগিয়েই পার করল। এপাশ-ওপাশ করতে করতে ভোরের আলো জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল। তার চোখের নিচে হালকা ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি। বুকের ভেতরে একটাই উপলব্ধি ঘুরছে
“নিজের অজান্তেই হোক, প্রথমবারের মতো আমার হৃদপাখি সত্যিই আমার বুকে একটু হলেও ধরা দিয়েছে।”
সকাল গড়িয়ে প্রায় সাতটা। বাড়ির চারপাশে পাখির ডাক, হালকা মেঘ ভেদ করে রোদ এসে পড়েছে। বাতাসে ভেজা মাটির ঘ্রাণ।
এই সময়ে মিরায়া ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠল। তার মুখে এখনো অলসতা, চোখে ঘুমের ঝুল ঘুমের ঔষধের রেশ এখনো কাটে নি। পাশের টেবিলের পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুক খেলো, তারপর ভোরের আলোয় নিজেকে দেখতে গেল আয়নার সামনে।
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে এক মুহূর্ত থমকে গেল।
নিচের ঠোঁটটা সামান্য ফোলা। অবাক হয়ে হাত দিয়ে ঠোঁটটা ছুঁয়ে দেখল—
“এটা আবার কিভাবে হল?”
স্পর্শ দিতেই হালকা ব্যথার সাড়া পেল। ভুরু কুঁচকে গেল মিরায়ার। নিজের মাঝেই ভাবলো-
“ঘুমাতে যাওয়ার সময় তো একদম নরমাল ছিল… এখন হঠাৎ ফুলে গেল কীভাবে?”
মাথা ঘুরিয়ে খাটের দিকে তাকাতেই তার চোখে পড়ল জুলিয়েট চুপচাপ গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।
মিরায়া হেসে উঠল মৃদুস্বরে—
“মনে হয়, আমার এই দুষ্টু মেয়ের নখের আচড় খেয়েছি ঘুমের মাঝে… অথবা কোনো পোকা কামড়েছে।”
একটু ভেবে কাঁধ ঝাঁকাল, আর নিজেকে বোঝাল—
“যা-ই হোক, বড় কিছু না।”
তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল।
সকাল আটটা-নয়টার দিকে সবাই একে একে নিচে নামল। রামিলা চৌধুরী নিচে থেকে সবাইকে ডেকেছেন নাস্তার জন্য।
প্রথমে রুদ্র, তারপর সোরায়া,… সবাই নাস্তার টেবিলে বসে পড়ল। সবশেষে এলো রায়ান। মিরায়া তখনো নামে নি। রায়ান নিচে নেমে মিরায়াকে না দেখে মনে মনে ভাবলো- “রাতের ঘুম কি এখনো ভাঙেনি ওর।”
এদিকে রায়ানের চোখে ঘুমঘুম ভাব, মুখে সারারাত জেগে থাকার ক্লান্তি স্পষ্ট। তবুও তার ঠোঁটের কোণে এক শান্ত হাসি, চোখে সন্তুষ্টি।
যেন সারারাত না ঘুমিয়েও তার ভেতরে এক তৃপ্তির আলো জ্বলছে—
“রাতে আমি বউটাকে একটু হলেও নিজের কাছে পেয়েছিলাম…।”
সকালের নাস্তার টেবিলে সবাই প্রায় বসে পড়েছে। টেবিল ভর্তি গরম পরোটা, ডিমভাজি, ফল আর চা।
রুদ্র এক হাতে কাপ তুলে চা খেতে খেতেই চোখ কুঁচকে রায়ানের দিকে তাকাল।
“ভাইয়া, কি ব্যাপার তোমার এত হ্যান্ডসাম মুখখানা এমন দেখাচ্ছে আজ? সারারাত ঘুমাও নি নাকি?”
সোরায়া দুষ্টুমি করে যোগ করল,
“না গো রুদ্র ভাইয়া, আমি বুঝতেছি। রায়ান ভাইয়া আজ নির্ঘাত অনেক খুশি তাই হজম করতে না পেরে ঘুম হয় নি । এমন আই রাইট, মিস্টার আমেরিকা ফেরত?”
রায়ান হেঁসে উওর করল- ” ইয়েস , মাই মিসেসেস লিটল ভার্সন।”
সবাই মুচকি হেসে উঠল।
রামিলা চৌধুরী রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে হেসে বললেন,
“দেখি, কার কারণে এমন শান্তি মুখে? বল তো, রায়ান, কাহিনি কী?”
রায়ান চুপ করে হাসল, কিছু না বলে প্লেটে কাঁটা–চামচ নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার ভান করল। তবু তার চোখে–মুখে স্পষ্ট আনন্দ ঝিলিক দিচ্ছিল।
ঠিক তখনই মিরায়ার প্রবেশ। সিড়ি দিয়ে নামছিল আপন ছন্দে। সাদা–হালকা রঙের কুর্তি পরে, চুল উপরে বাধা, ঘুমভাঙা সকালবেলার সতেজতা নিয়ে।
ড্রয়িং রুমে এসেই সবার দিকে ভদ্র হাসি দিয়ে বলল,
“গুড মর্নিং, এভরিওয়ান।”
সবাই উত্তর দিলো “গুড মর্নিং।”
মিরায়া চেয়ার টেনে বসতে গেল, আর রায়ানের পাশের খালি চেয়ারটাই একমাত্র জায়গা থাকায় বাধ্য হয়েই সেখানে বসল।
কিন্তু বসেই সে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে রাখল। একবারও রায়ানের দিকে তাকালো না।
তার হাতের কাজ, প্লেটে খাবার তোলা, চায়ের কাপে নজর—সবকিছুই এমনভাবে করছিল যেন পাশের মানুষটা তার জন্য একদম অচেনা।
রায়ান চুপচাপ তাকিয়ে রইল মিরায়ার দিকে। মিরায়ার অঙ্গ ভঙ্গি তার অস্তিত্বকে প্রশ্ন করছে। ভাবতে শুরু করে-
“আমাকে কি তার চোখে পড়ছে না।” তার বুকের ভেতরে রাগে আগুন ধরছে।
“কাল রাতের পরও… এই মেয়েটা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না? যদিও সব তার অগোচরে ঘটেছে। তবুও আমি তো ভাবছিলাম আজ হয়তো অন্যরকম হবে… আর এ তো এমনভাবে বসে আছে যেন আমি অস্তিত্বহীন।”
তার ভেতরে ইগোতে আঘাত লাগল মিরায়ার এহেন আচরণ।
মনের মধ্যে যেন গর্জে উঠল—
“আমাকে উপেক্ষা করার সাহস হলো? আমার দিকেই তাকাচ্ছে না? মাই মিসেস, তোমার এমন আচরণ আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি এমন হতে দেব না।”
রায়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, আঙুলগুলো কাঁটা–চামচে আঁকড়ে ধরল। মুখে সে কিছু বলল না, কিন্তু তার চোখে স্পষ্ট রাগ জমে উঠল।
নাস্তার টেবিলে খাবারের মধ্যে হালকা আড্ডা চলছে। রুদ্র মিরায়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“এই মিরা, তোর ঠোঁটটা দেখি ফুলে গেছে? কিছু হয়েছে?”
সোরায়া মুচকি হেসে যোগ করল,
“কই দেখি আপু। ও মা তাই তো ফুলে লাল হয়ে আছে ঠোঁট টা। মনে হয় কিছু কামড়েছে।”
মিরায়া ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলল,
“আমি জানি না কিভাবে হলো, হঠাৎ এমন হয়েছে… সকালে উঠেই আয়নায় দেখি এমন হয়ে আছে । কাল রাতে জুলিয়েট আমার সাথে শুয়ে ছিল। মনে হয় ওর না লেগেছে। কোনরকম ইচ্ছাকৃত নয়। বাদ দাও।”
রুদ্র তখন সন্দেহভরে রায়ানের দিকে তাকাল। চোখে মনে হচ্ছিল,
“এটা কোনো ভাবে ভাইয়ার…! ”
রায়ান রুদ্রের তাকানোর উদ্দেশ্যে বুঝতে পারে। হালকা করে দুই হাত তুলে দেখালো, যেন বলছে,
“আমি কিছু জানি না। আমি কোন অপরাধ করিনি।”
রুদ্র তাতে কিছুটা আশ্বস্ত হলো, হালকা করে মাথা নাড়ল। রায়ান মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছিল।
মিরায়া খাবার খেতে বসল। কিন্তু খেতে গিয়ে ঠোঁটের জ্বালায় অল্প মৃদু গোঙাল –
“আহ্…”
রায়ান একটু অপরাধ বোধ নিয়ে, মুখে শান্ত ভাব রেখেই ফিসফিস করে বলল,
“বেশি জ্বলছে, হৃদপাখি…?”
কেউ শুনল না, শুধু দুজনের মধ্যেই যেন পরিবেশটা স্থির।
মিরায়া বিরক্ত হয়ে রায়ানের পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল, ব্যাগ ঝুলিয়ে বলল,
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে, আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি।”
এই বলে সে নিজ ছন্দে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেল।
রায়ান হতবাক হয়ে দেখল, কি হলো বুঝতে পারছে না। চোখে মিশ্রিত হতাশা, মনে গভীর বিস্ময়।
সবার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের মন নিজের খাবার প্লেটে ফেরালো তবে খাবার আর খাওয়া হলো না।
সবার সাথে হালকা চুপচাপ নাস্তা শেষ করল। তবে মনে হচ্ছিল, রায়ানের মাথায় শুধু একটাই ভাব—
“আজকের ঘটনা… কেন এমন আচরণ করছে তার হৃদপাখি? কোনো ভাবে কি সে আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে?”
চৌধুরী বাড়ির সকালের পরিবেশ তখনও পুরোপুরি সরগরম হয়নি। চারপাশে একধরনের স্থিরতা, কেবল পাখির ডাক আর দূরে ভেসে আসা গাড়ির হর্নে সেই নীরবতা ভাঙছিল। ঠিক তখনই, এক চকচকে সাদা গাড়ি ধীরে ধীরে এসে ঢুকল বাড়ির মূল ফটক দিয়ে।
গাড়ি প্রবেশ করার মুহূর্তে সোরায়া দাঁড়িয়ে ছিল তার রুমের বারান্দায়। সদ্য গোসল সেরে এসেছে, কলেজে যাবে তাই ফ্রেস হয়ে নিয়েছে। ভেজা চুল ছড়িয়ে দিয়ে রোদে শুকাচ্ছিল। হাতে তোয়ালে, চুল মুছতে মুছতে অলস ভঙ্গিতে তাকাল বাড়ির গেটের দিকে।
হঠাৎ সাদা গাড়ি ঢুকতে দেখে তার বুক একবার কেঁপে উঠল। মুহূর্তের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। কেন জানি না, কিন্তু অজান্তেই তার চোখ বড় হয়ে উঠল।
এক ঝটকায় বাস্তবতায় ফিরে এলো সোরায়া। তখনই টের পেল তার গায়ে কোনো ওড়না নেই। বুক ধক করে উঠল, চমকে দ্রুত ঘরের ভেতরে দৌড়ে চলে গেল। বারান্দা খালি হয়ে গেল।
এদিকে মাহির গাড়ির দরজা খুলে বাইরে নামল। চোখ স্বাভাবিকভাবেই বারান্দার দিকে উঠল তার। যেন মুহূর্তখানেক আগে কেউ তাকে দেখছিল। কারও ছায়া টের পেয়েছিল সে। কপাল কুঁচকে চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকেই আর দেখা গেল না। মাথা একটু দুলিয়ে হেসে ফেলল নিজের মনে—
“অভ্যাসটা বোধহয় এখনো গেল না আমার, সবসময় মনে হয় কেউ আমাকে দেখছে।”
সে আবার গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল, রায়ানের অপেক্ষায়। হাত তার চাকরির প্রথম দিন। বিসিএস সম্পূর্ণ করার পর নিজের ইচ্ছেতেই শিক্ষকতা করতে চেয়েছিল সে। তারই ধারাবাহিকতায় একটা কলেজে সে এখন লেকচারার হিসেবে যোগদান করবে। আজ তারই প্রথম দিন। চাকরির প্রথম দিন হিসেবে নিজের প্রিয় বন্ধুর সাথে সকাল তাকানোর জন্য সে আগে থেকে রায়ানকে বলে রেখেছিল তার সাথে যেতে।
কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে রায়ান বেরিয়ে এল। হাতে অফিস ব্যাগ, চোখ-মুখে ঘুমহীনতার চিহ্ন থাকলেও পোশাকের ক্ষেত্রে সব সময়ের মত নিখুঁত।
মাহির তাকে দেখেই ছুটে গেল।
“ওই শালা! একদিন পরে দেখা একটা তো কলও দিস না!”
দুজনেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল একে অপরকে। কিন্তু রায়ানের মুখটা কিছুটা গম্ভীর। জড়িয়ে ধরা থেকে বেরিয়ে এসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল—
“কি সব সময় গায়ের উপর উঠিস, হ্যাঁ? আমি বিবাহিত মানুষ, জানিস না?”
মাহির হতভম্ব হয়ে তাকাল। চোখ বিস্ফারিত। সামান্য চেঁচিয়ে
“কি?! তুই কি বললি? আবার বল।”
রায়ান একরকম রাগী ভঙ্গিতে ব্যাগটা গাড়ির সিটে রাখল।
“শুনতে পেলিনা নাকি? আমি বিবাহিত। তাই আর এইসব নাটক করবি না বউ দেখলে অন্য কিছু ভাববে। এমনিতেই কলি যুগ চলতেছে এখন কে কি বুঝা দায় পরে ভুল বুঝে বসে থাকবে । বেডি মানুষ জন্মগতভাবেই বেশি বুঝে।”
মাহির অবিশ্বাস ভরা চোখে কিছুক্ষণ রায়ানের দিকে তাকিয়ে রইল ফ্যালফ্যাল করে। তার মনে পড়ে গেল আগের দিনের কথা। যতবারই সে রায়ানের বিয়ের কথা তুলেছে, ততবারই রায়ান রেগে গিয়ে তাকে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে মানা করেছে, বলেছে এসব নিয়ে আর একটা শব্দও না বলতে। কিন্তু আজ সেই রায়ান নিজে থেকে বলছে সে বিবাহিত! আর বউ ? বউ শব্দটা তো বিষের মতো লাগতো ওর এখন কি হলো?
মাহির কণ্ঠে মিশে গেল বিস্ময় আর একরকম ঠাট্টা—
“রে বাবা! আজ সূর্য কোন দিক থেকে উঠলো? তুই নিজেই বউ-সংক্রান্ত কথা বলছিস? আমার কানেই ভুল শোনলো নাকি?”
রায়ান চুপচাপ গাড়িতে বসে সিটবেল্ট বাঁধতে লাগল, মুখে অদ্ভুত এক তৃপ্তির ছায়া। রায়ান চেঁচিয়ে বলল-
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ১৬
“তুই কি উঠবি না ? নাহলে বল আমি ড্রাইভ করে চলে যাই আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।”
মাহির চুপ করে গিয়ে দৌড়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলল-
“আমাকে ছাঢড়া কিভাবে যাবি। অনেক কিছু জানার আছে আমার। চল রাস্তায় সব বলবি।”
এই বলে মাহির গাড়ি স্টার্ট দেয়।