তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৬
নীল মণি
অন্তরাত্মা ছুঁয়ে যাওয়া এক নিষিদ্ধ বিকেলে, যখন সূর্যের অপসৃত কিরণ ধীরে ধীরে পড়ছিল চৌধুরী ভবনের ছাদের কার্নিশে, পাখিদের ক্ষীন কলতান মিলে যাচ্ছিল নীলাভ নীরবতায়। সূর্য অস্তচলে গমনরত,বিকেলের কোমল আলোয় চৌধুরী ভবনের বারান্দা যেন নাস্তার ঘ্রাণে মোহাচ্ছন্ন । ঠিক সেই সময় আগমন ঘটলো অতিথিদের। এনারা হলেন জায়ন এর নানুর বাড়ির লোক। চায়ের অদৃশ্য ধোয়া ও সদ্য ভাজা পেঁয়াজির সুবাসে ভেসে উঠলো এক অকল্পিত আমের।
আর পরিবারের প্রতিটি কোণে ছড়ালো কৌতুহল, উচ্ছ্বাস ও অতিথি আপ্যায়ন। বহুদিন পরে চিরচেনা মানুষেরা আবারো এক হয়েছে , ব্যস্ততার খাতিরে মেহজাবীন বেগমের তেমন তার বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়া হয় না।
অনেক দিন পর দেখা হলো তার ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে । মেহজাবীন বেগমের বাবা , মা অনেক আগেই গত হয়েছেন। এনারা দুই ভাই বোন – ভাই ছোট ( রহমত তালুকদার পেশায় তিনি ব্যবসায়ী ওনার স্ত্রী সুনিতা তালুকদার ও ওনার দুই ছেলে ,অয়ন তালুকদার(২২ বছর) পেশায় পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সবে সবে বাবার ব্যবসার হালচাল ধরেছে অনেক উন্নতি ও করছে , ছোট ছেলে নয়ন তালুকদার( ২০ বছর ) ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষ।সবাই উপস্থিত হয়েছেন বিয়ের জন্য , এদিকে আয়েশা বেগম ও এসে পড়েছে তার পরিবার সহ। বাসায় যেন খুশির ফোয়ারা জমেছে, উপস্থিত নেই শুধু বাড়ির কর্তারা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সবাই একে অপরকে সালাম দিলেন। জ্যুস, দই মিষ্টি, ফালুদা , কাটলেট, পেয়াজি কাবাব আরো কত কি সুরেহা বেগম সাজিয়ে রাখলেন টেবিলে।
“তো আমাদের বৃষ্টি আম্মু কোথায় ?, বুবু ডাক রে আমাদের হবু বৌমাকে সেই কবে দেখেছি ওদের ।”
রহমত সাহেব হাসতে হাসতে মেহজাবীন এর উদ্দেশ্যে বললেন ।
মেহজাবীন বেগম রুহেনা বেগম কে বললেন উপর থেকে বাচ্চা দের নিচে ডেকে নিয়ে আসতে। রূহেনা বেগম চলে গেলেন উপরে । এদিকে মেহজাবীন বেগম তার আদরের দুই ভাতিজা কে নিয়ে আত্নহারা।
” বাবা তুই তো একটু ফুপি কে দেখতে আসতে পরিস ?
সেই বছর খানেক আগে গেলাম তখন তো বাড়িতে ও ছিলিস না ।”
মেহজাবীন বেগম বললেন তার বড় ভাতিজা কে অয়ন কে । অয়ন ও হেসে প্রতুত্তরে উত্তর দিল –
” ফুপি ব্যবসার কাজে এত ব্যস্ত যে মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয় । সময় হয়ে ওঠে না, যখন সময় হবে নিশ্চই আসবো ফুফি।”
” তো বাবা মেয়ে থেয়ে দেখেছিস? বল তো তোর ভাইয়ার সঙ্গে তোর ও হিল্লে করে দেই ।”
” না না ফুপি এখন ও কিছু ভাবি নি।”
এর মধ্যেই নয়ন বলে উঠল —
” ফুপি আমার করিয়ে দাও , আমার আর ভালো লাগে না পড়া শোনা করতে ।”
এর মধ্যেই সুনিতা তালুকদার নয়ন এর কান ধরে বলল
” আয় তোকে বিয়ে করাচ্ছি।”
নয়ন এর কাণ্ড কারখনা দেখে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলেন।
” ফুপি ভাইয়ারা কখন আসবে?”
অয়ন বলল তার ফুপিকে…
“এইতো একটু পরেই চলে আসবে । তোর সঙ্গে কথা হয় নাকি মাঝে মাঝে তোর ভাইয়া বলছিল।”
” হ্যাঁ ফুপি ভাইয়া ইউ এস থাকতে হহয়েছে কয়েক বার।
দেশে আসে এক দুবার কথা হয়েছে।”
এইভাবেই ড্রয়িং রুমের কিছুটা সময় কেটে গেল ।
এদিকে উপরে এই বাড়ির তিন কন্যা আর আরোহী মিলে বৃষ্টির রুমে আড্ডা দিচ্ছিল। বৃষ্টির মনটা একটু খারাপ , এদের কথা তে তেমন একটা মনোযোগ নেই তার।
এর মধ্যেই রূহেনা বেগম এর স্বর ভেসে আসল —
” এই মেয়ে গুলো একটু তৈরি হয়ে নে , নিচে রহমত ভাইয়ারা এসেছেন। তারাতারি আয় আর বৃষ্টি আম্মু তুই একটা শাড়ি পরে আয়। ” এই বলে সে বেরিয়ে গেল।
আরোহী টিপ্পনী দিয়ে তিয়াশাকে জিজ্ঞেস করল —
” হ্যা রে রোদ এই রহমত ভাইয়া টা আবার কে ?”
তখন তিয়াশাকে বাধা দিয়ে অনন্যা বলে উঠল –
” আরে রুহী আপু উনি হলেন বড় আম্মুর একমাত্র ভাই।”
“আচ্ছা তা তাদের জন্য আবার আমাদের ঘটা করে তৈরি হতে হবে কেন , শুধু বৃষ্টি আপু কেই রেডী হয়ে যেতে বলত । ”
বৃষ্টি বলল এবার একটু হেসে বলল–
” আমিও রেডী হব কি করতে এই ভাবেই যাই।”
তিয়াশা এবার উঠে বলল —
” বেশি না বকে রেডি হও সবাই , এই অনু যা তুই ও ।”
সিঁড়ি দিয়ে নামছে চৌধুরী বাড়ির ফুলেরা , বৃষ্টি কে পিচ রঙের শাড়ীতে ভীষন মিষ্টি লাগছে এমনিতেই সুন্দর , শাড়িতে তাকে যেন আরো সুন্দরী লাগছে। অনন্যার পরণে ছিল সবুজ রঙের লং আনার কলি চুরিদার, অনু আর বৃষ্টি একই সঙ্গে সিঁড়ির ধাপ বেয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসছে , পেছনে ছিল তিয়াশা আর অনন্যা এই দুজো নেও পড়েছিল লং আনারকলি চুড়িদার, যেন তাদের কোমল উপস্থিতি ও নির্মল সৌন্দর্য্য একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে উঠেছে ।
ড্রইং রুমে আসতেই রহমত সাহেব ও সুনিতা বেগম বলে উঠলেন — ” মাশাল্লাহ।”
সালাম জানালেন একে অপরকে….
কিন্তু এদিকে যে অয়ন আর নয়ন দৃষ্টি আটকালো যেন আরোহী আর তিয়াশার দিকে , চোঁখ যেন বারবার ফিরেও আর ফিরছিল না । তাদের সৌন্দর্যে মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়েছিল অয়ন আর নয়ন ।
বৃষ্টি কে নিজেদের পাশে বসিয়ে , সুনিতা বেগম বৃষ্টির চিবুক ছুঁয়ে বললেন —
” না বুবু বৃষ্টি আম্মুকে মাশাল্লাহ আমাদের জায়ন এর জন্যই আল্লাহতালাহ বানিয়েছেন। কি মিষ্টি দেখতে হয়েছে গো । সেই কবে দেখেছিলাম।”
সুনিতা বেগম এর এই কথায় কারো একজনের হৃদয়ে ছোট্ট ঝড় হয়ে গেল।
তিয়াশা রাগে হাত চেপে বসেছে আরোহীর
তিয়াশার দিকে রহমাত সাহেব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন —
” মেজ বুবু এইটা আমাদের রোদ না ? ”
রুহেনা বেগম মিষ্টির প্লেট টা এগিয়ে দিতে দিতে বলেলন –
” জী ভাইয়া । ”
অনন্যা কে দেখেও তাদের চোখের দৃষ্টি যেন খুশি তে ভরে গেল।
মেহজাবীন কে উদ্যেশ্য করে রহমত সাহেব বললেন –
“” না সত্যি বুবু বলতে হবে মাশাল্লাহ সব যেন পরি এই চৌধুরী বাড়িতেই ।”
নয়ন তখন পাশে বসে থাকা রায়ান কে বলল —
” রায়ান ঐটা কে তিয়াশার পাশে ?”
” ও ঐটা তো রোদ আপুর ফ্রেন্ড আরোহী আপু ।”
” ও মিস আরোহী ।”
” জী ভাইয়া মিস আরোহী।”
একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে তাই রুহেনা বেগম তিয়াশা , অনন্যা , রায়ান কে বললেন অয়ন আর নয়ন কে একটু সামনের ফুলের বাগান টা ঘুরিয়ে দেখাতে সেখানে একটা ফয়ারাও উপস্থিত আছে , আছে অনেক রকমের নাম না জানা পাখির অবস্থান যা বাড়িয়ে তোলে চৌধূরী বাড়ির দ্বিগুণ সৌন্দর্য।
বৃষ্টি কে রেখে অয়ন আর নয়ন কে নিয়ে তারা বাগানের দিকে পা বাড়াল ।
আরোহীর পাশে গিয়ে নয়ন বলল —
” তো আপনি মিস আরোহী?”
আরোহী একটু ভ্রু কুচকে বলল —
” না সকিনা আমার নাম কিন্তু আমার নাম যায়না আপনার কি কাম ?”
নয়ন বুঝতে পারল এখন বেশি কিছু বলা যাবে না । কারন মিস আরোহীর যে খুব তেজ তা সে এক কথা তেই বুঝতে পারলো, হালকা স্বরে বলল –
” না কিছু না। ”
অনন্যা আর রায়ান ওদের সঙ্গে এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে । অয়ন ও এদিকে বার বার আর চোঁখে তিয়াশার
দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে। তাদের সবার মধ্যে চলে আলাপ আলোচনা , এই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেয় একে অপরের কথা , কে কি করে ?কে কোন ক্লাসে পড়ে?কে কোন স্কুল যায় । বাগানে ঘুরতে ঘুরতে তাদের মধ্যে ভালই ভাব জমে ওঠে ।
তিয়াশা সবার উদ্দেশ্যে বললেন বাসায় ফেরার কথা, সবাই যে যার মত পা এগালো বাসার দিকে । কিন্তু অয়নের খানিকক্ষণ আগে একটা কল আসায় এক কোণে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ,অয়ন কে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিয়াশা ধীর পায়ে তার কাছে গিয়ে বলল
” অয়ন ভাইয়া সন্ধ্যা নামছে এবার বাসায় ফেরা যাক ।”
অয়ন ফোন টা কেটে বলল –
” জী চলেন”
বাকিরা আগেই বাসার দিকে চলে গেছে , পিছনে পরে রইল অয়ন আর তিয়াশা।
” অয়ন ভাইয়া আপনি আমার থেকে অনেক বড়ো, তাই আমার নাম ধরেই ডাকবেন।”
অয়ন একটু হেসে উত্তর দিল —
” আচ্ছা জী তাই হবে ।”
তাদের মধ্যে এই নিয়ে একটু হাসা হাসি চলছে। কিন্তু সেই নির্ভার মুহূর্তটাই বিদ্ধ করল এক জোড়া তীক্ষ্ণ
চোঁখ —
কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে বাসায় ফিরল জায়ন আর ইউভি । গাড়ি পার্কিং করে বেরোতেই জায়ন এর চোঁখ পড়ল সন্ধ্যা নামার বাগানের দিকে। তার দৃষ্টি কেড়ে ছিল তিয়াশার হাসি কিন্তু পাশে অয়ন কে দেখেই
জায়ন এর মস্তিষ্ক রাগে জ্বলে চরমে পৌঁছালো।
ইউভির নজর ও এড়ালো না কিছু সময়ে বলল যাওয়া জায়ন এর এই ভেতরকার অশান্তি আর তার চোখে বেড়ে ওঠা রাগের মাত্রা । সে বুঝতে পারছে কি হতে চলেছে , আর তার ছোট বনুর উপর কি ঝড় আসতে চলেছে ।
অয়ন আর তিয়াশা হেঁটে বাগান থেকে বেরোতেই যাবে তখনই তিয়াশার পাটা একটা ছোট্ট ইট এ বেঁধে তিয়াশা পরে যায় মাটিতে। তেমন একটা লাগেনি কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে অয়ন ও হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে জিজ্ঞেস করে তিয়াশা ঠিক আছে কিনা , অয়ন তিয়াশার পায়ে হাত দিয়ে দেখতে লাগল সব ঠিক আছে কিনা ।
ব্যাস এটুকুই বাকি ছিল জায়ন এর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে ।
রাগে চকচক করছিল তার দৃষ্টি, যেন চোঁখ দিয়েই তাদের ছেঁচে তুলে নিবে । বুকের ভেতর জমে থাকা এক ধরনের আগুন নিঃশব্দে ফুঁসে উঠছে — হাতের পেশীগুলো উত্তেজনায় টানটান , দাঁত চেপে ধরা ঠোঁট আর চোখে এক অনাহুত লালচে ঝলক ।
এক মুহুর্ত নিজে কে আর থামাতে পারল না ।
অয়ন রোদ এর পা ধরতেই রোদ বাধা দিয়েছিল —
” অয়ন ভাইয়া কিছু হয়নি ঠিক আছি।”
” আচ্ছা উঠতে পারবে , তা না হলে আমার হাত টা ধরো।”
” থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া ” — বলে হাত টা ধরতে যাবে ।
তখনই ভেসে আসল এক গভীর কন্ঠস্বর —
“কি হচ্ছে এখানে?”
” আরে ভাইয়া যে আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”
জায়ন এর তীক্ষ্ম দৃষ্টি এখনো তিয়াশার দিকে , যেন মনে হচ্ছে এক্ষুনি গিলে খাবে তাকে। এই চাহনিতে তিয়াশার বুক কেঁপে উঠল হঠাৎ করে সৃষ্টি হল শরীরে এক ভয়ার্ত কম্পন।
জায়ন গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল —
” ওয়ালাইকুম সালাম ।”
“আসলে ভাইয়া তিয়াশা….”
বাক্য শেষ করার আগেই জায়ন বলল —
“বাসায় যা”
তিয়াশা মনে মনে ভাবল যাক বাঘের বাচ্চা তাহলে কিছুই বলবেনা। কিন্তু উনি এরকম ভাবে কেন তাকিয়ে আছে , ওই চাহনি দিয়ে আমায় ভষ্ম করে দিবে । বাবা রে এখান থেকে মানে মানে কেটে পড়লেই বাচি।
অয়ন আবার ও তিয়াশার হাত টা ধরতে যাবে তৎক্ষনাৎ বাঘের থাবার মত এক থাবা অয়ন এর হাত টা ছুঁড়ে দিল।
জায়ন এবার রক্ত গোলা চোখে তীব্র চিৎকার করে বলে উঠলো অয়ন এর দিকে তাকিয়ে —
” বললাম না বাসায় যেতে।”
জায়ন এর চিৎকারে যেন আকাশ ফেটে বজ্রপাত ঘটলো।
” কিন্ত ভাইয়া তিয়া…. ”
অয়ন এর কথা আবার ও অসম্পূর্ণ রয়ে গেল —
” ইউভি অয়ন কে নিয়ে বাসায় যা।”
এই শুনে রোদ এর একটু জ্বলে ওঠা আসার ক্যাথায় এক বালতি জল ঢেলে দিল । শীর্ণতায় গুটিয়ে যাচ্ছে সে , কপালে জমে উঠেছে এক অজানা চিন্তার নোনা জল ।
ইউভি ও বুঝতে পারছে কি হতে চলেছে । কি হবে তাও একবার সাহস নিয়ে বলে উঠলো —
” ভাইয়া….”
” আই সে গেট আউট ফ্রম হেয়ার বোথ অফ ইউ। আই ক্যান্ট রিপিট এনিমোর। জাস্ট গো ।”
জায়ন এর ভয়ংকর চিৎকারে দুজনেই আর কোন কথা না বাড়িয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল ।
এদিকে তিয়াশা একটু পা টা খুঁড়িয়ে , জায়ন এর থেকে পালাতে যাচ্ছে , তৎক্ষনাৎ জায়ন এর থাবা পরল তিয়াশার নরম তুল তুলে গালে , সঙ্গে সঙ্গে চার আঙুলের দাগ ছেপে গেল গালে ।
তিয়াশা গালে হাত দিয়ে জায়ন এর দিকে তাকাতেই ভয়ে গুটিয়ে নিল নিজেকে । ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বলে উঠল —
” আ আমাকে মারলেন কেন ?”
জায়ন বাঘের থাবার ন্যায় তিয়াশার হাত টা ধরে চোঁখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল —
” চোখে কাজল কেন ? ঠোঁটে লিপস্টিক কেন? সেঝেছিস কেন?”
” আ আ আম্মু বলল তো। ”
” কেন তোর বিয়ে লেগেছে ?”
” কার কাছ থেকে পারমিসন নিয়েছিস অন্য পুরুষের ছোঁয়া লাগানোর ? ভালো লাগে বল অন্য পুরুষের ছোঁয়া পেতে? ”
তিয়াশা ছোট্ট শরীর টা ভয়ে কেঁপেই যাচ্ছে মাথা নিচু করে রয়েছে ।
” এই বয়সে জ্বালা উঠেছে? মিটিয়ে দেব ?
” (….)
তিয়াশা পিছিয়ে যাচ্ছে ভয়ে , জায়ন ও তার রক্ত গলা দৃষ্টী দিয়ে আগাচ্ছে
” কি রে বলছিস না কেন বল ? এতক্ষণ তো হাসি দিয়ে মন জোগাচ্ছিলিস অন্য পুরুষের ?
“কি বলে এই বাঘের বাচ্চা মাথা গেছে নাকি ? আর ওনার কি ?আমি কারো সঙ্গে হেসে বলি না কেঁদে কথা বলি “এই কথা গুলো মাথায় এসে রয়ে গেল মুখে আর বুলি ফুটলো না তার। জায়ন এর চিৎকারে আবার ও
কান ফেটে গেলো, ভয়ে সিটিয়ে উঠলো–
” আনসার মি । সকালে বলে ছিলাম না ছেলে দের থেকে দূরে থাকতে? আমি ওয়ার্নিং দেই না সিধা মাটিতে পুঁতে দেব তোকে শা*ল**র বাচ্চা । ”
তিয়াশা কেঁদে কেঁদে ভয়ে ভয়ে বলল–
” আর হবে না, আর হবে না ।আমি যাবো এখন?”
” হ্যাঁ যাবি তো , তোর না পায়ে ব্যথা লেগেছে হাঁটতে পারবি না তো পুরুষের ছোঁয়ার সাহায্য নিচ্ছিলিস । আয় আমার কাছে ।”
এই বলেই তিয়াশাকে কোলে নিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল — ” এবার দেখ তোর সব ব্যথা দুর হয়ে যাবে ।”
” ছাড়ুন আমাকে প্লিজ । ”
” কেন আমার ছোঁয়া ভালো লাগছে না? শা*ল*র বাচ্চা তোর মরার পাঁয়তারা জমিয়ে এখন নাটক মারাচ্ছিস , সব নাটক ঘুচিয়ে দেবে ।”
এই বলে পাশের সুইমিং পুলে তিয়াশাকে ছুঁড়ে মারল । তিয়াশা সুইমিং পুল এ পরতেই নিমেষেই সম্পূর্ণ শরীর ভিজে উঠল, পরণে হালকা হলদে রাঙা চুড়িদারটি স্নাত হয়ে অঙ্গের রেখাচিত্রকে আবছা ভাবে প্রকাশ করতে লাগল । সেই মুহূর্তে তিয়াশার দৃষ্টিতে মিলেমিশে গেল বিস্ময়, লজ্জা ও একপ্রকার অন্তর্লীন অপমানবোধ , যা তাকে নিঃশব্দে কুঁকিয়ে যেতে বাধ্য করল।
জায়ন তার পড়নের ব্লেজার টা খুলে হাঁটু গেড়ে বসতে বসতে বলল —
” সাবধানে থাকিস নিজের ও অপরের মৃত্যু ডেকে আনিস না । পর পূরুষের ছোঁয়া ভালো করে ধুয়ে নিজেকে সুদ্ধ করে ওঠ , এর পর ও যদি না শুধরাস তাহলে দেখে নে এইটা শুধু ট্রেলার। ”
“তোকে এই ভিজে অবস্থায় এখন কে দেখছে রোদ?”
“(…..)
” আনসার মী, রাইট নাউ হু ইস ওয়াচিং ইউ রোদ? ”
তিয়াশা ভয়ে মাথা নিচু করে দুবাহু দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে কম্পিত শুড়ে বললো—
” আপনি।”
ব্লেজার টা ছুঁড়ে মেরে তিয়া শার দিকে গম্ভির কন্ঠে একটু ঠোঁট উল্টে হেসে বলল —
” আই এম দা অনলি অন হু ক্যান সী ইউ লাইক দিস, নো অন্ এলস। ”
পকেট এ হাত দিয়ে চলে যেতেই পেছন ফিরে পুনরায় তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল —
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৫
“আর তুই এখান থেকে কি করে যাবি সেটা তুই জানিস।
কিন্তু তোকে এই ভিজে অবস্থায় যদি কেউ দেখে ইউ ইউল ডেড।
আই রিপিট নো অন্ এলস অ্যালাউড টু সি ইউ লাইক দিস। ”
জায়ন চলে যেতেই সেই দিকেই এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রয়েছে তিয়াশা, জায়ন শুধু রেখে গেল হাজারো প্রস্ন আর কিছু ধমকি ।