তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৭
নীল মণি
সন্ধ্যার স্নিগ্ধ আকাশের নিচে, ভেজা শরীরে নিয়ে তিয়াশা নিশ্চল দাড়িয়ে ছিল সুইমিং পুলের ধারে —
জায়নের গায়ে থাকা ব্লেজারটি তখন তার কাঁধে ঝুলে আছে নিঃশব্দ সান্ত্বনার মতো। জলভেজা কাপড়ের নিচে শিরশিরে বাতাসে সে যেন খানিকটা কেঁপে উঠছিল, আর চারপাশে নেমে আসা অন্ধকারে তার চোখে লুকানো তার শখের পুরুষের দেওয়া অপমান, অভিমান আর একরাশ নির্বাক হতচকিত অভিব্যক্তি মিলেমিশে তৈরি করছিল এক বিষণ্ণ নৈঃশব্দ্য।
কিন্ত ব্লেজারের থেকে নিঃসৃত হচ্ছিল জায়ানের গন্ধ এক ধরণের নিঃশব্দ পুরুষালী ঘ্রাণ, যা তিয়াশার ভেজা অনুভবের সঙ্গে মিশে গিয়ে যেন এক অদ্ভুত মাদকতায় তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল। সে ঠিক বুঝতে পারছিল না শরীরের শীতলতা, না কি সেই ঘ্রাণের ঘনতা কোনটা বেশি তাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবে, সে মুহূর্তে নিজেকে জায়ানের ঘ্রাণে মোহাচ্ছন্ন এক নিঃশব্দ নেশাগ্রস্ত অনুভব করছিল, যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো ইচ্ছেও যেন নেই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কেটে গেল প্রায় পনের মিনিট এর বেশি —–
ঠিক তখন ই আরোহী ছুটে এল তিয়াশার কাছে একটা টাওয়াল নিয়ে এসে জড়িয়ে দিল তিয়াশাকে । তিয়াশা
এখনো এক চিন্তার সাগরে ডুবে আছে । তার পাশে যে
আরোহী দাঁড়িয়ে তা তার খেয়ালের বাইরে।
” এই ফাযিল মাইয়া এই সন্ধ্যায় তুই সুইমিং পুলে পরলি কি করে?”
আরোহীর কন্ঠস্বর শুনে তিয়াশা নিজেকে মুক্ত করল চিন্তার জগৎ থেকে।
তিয়াশা একটু হতভম্ব হয়ে উত্তর দিল –
” মানে?”
“ইউভি ভাইয়া কি একটা দেখাতে সবাই কে নিজের রুমে নিয়ে গেল । আর আমাকে আড়ালে বলল তুই নাকি সুইমিং পুলে পরে গেছিস , তোকে যেন তারাতারি নিয়ে উপড়ে যাই।”
তিয়াশার চোঁখ জোড়া বড় বড় হয়ে তাকিয়ে আছে আরোহীর দিকে , এরপর নিজেই প্রশ্ন করল —
” ভাইয়া তোকে বলেছে? আমি পরে গেছি?”
” হ্যাঁ তো আমারা বাসায় গেলাম , একটু পর অয়ন ভাই আর ইউভি ভাই আসল । আন্টি জিজ্ঞেস করছিল তুই কোথায় তখন ইউভি ভাইয়া বলল তুই নাকি একটু ব্যথা পেয়েছিস , আমরা আসতে যাচ্ছিলাম কিন্তু ইউভি ভাই বলল জায়ন ভাই আছে আসতে হবে না কারো। একটু পরে জায়ন ভাই এসে ইউভি ভাইয়া কে কি যেন একটা বলল তারপর সবাই ইউভি ভাইয়ের রুমে চলে গেল কিছু। দেখাবে তাই।
তিয়াশা এবার রাগে ক্রোধে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না —
” শা**লা ইবলিস , বদমাশ, বদজাত , হা**মজাদা বাঘের বাচ্চা আপনারে যদি বুড়ি গঙ্গায় না পাঠাইছি তো দেখেন।”
আরোহী অবাক হয়ে প্রশ্ন করল —
” আরে দোস্ত এই গা**লির বর্ষণ কার উপর । যার উপরেই হোক আগে বাসার ভেতর চল ।
তিয়াশা কিছু একটা ভেবে আরোহীর হাত টা ধরে দৌড়ে বাসায় প্রবেশ করল ।
” হ্যাঁ রে ইউভি তুই আমাদের সবাইকে এই দেখানোর জন্য নিচে থেকে ডেকে নিয়ে এসেছিস? ”
রুহেনা বেগম নিজের ভ্রু কুচকে প্রশ্ন ছুড়ল ইউভির দিকে ।
ইউভি মাথায় হাত দিয়ে একটু চুলকে বলল —
” ইয়ে মানে আম্মু আমার এক মাত্র বড় ভাইয়ের বিয়ে তো কোন রঙের পাঞ্জাবি পড়বো তার জন্য সবার একটা রিভিউ দরকার আছে না , কি বলেন রহমত মামু হি হি ?”
” জী জী বাবা একদম ঠিক বলছো তুমি , আরে মেজো বুবু ও তো ঠিক ই বলছে ।”
” তাই বলে বাসার সবাই কে উপড়ে ডেকে আনবে । তোর বড় আব্বু , আব্বু, চাচু বাসায় আসলে ওনাদের রিভিউ নিবি নাকি?”
মেহজাবীন বেগম বললেন এবার একটু মুচকি হেসে —
” মেজো তুই ও না , ভালোই তো করেছে সবাই কে এনে দেখিয়েছে । কিন্তু যার বিয়েতে পড়বি সেই বড় ভাইকে তো নিয়ে এসে দেখালি না ? ”
ইউভি মনে মনে বিরবির করল —
” আমার বড় ভাইয়া যা খেল দেখাচ্ছে , তাকে এই দেখিয়ে কি হবে ? তোমাদের ও যে এখানে কি করতে এনেছি সে আর কি করে বলবো আমি ,আমি যে কোন ফাটা বাঁশে পা দিয়ে হাঁটছি আমিই জানি বড় আম্মু ।
না যাইতে পারছি এদিক না যাইতে পারি ওদিক হে
আল্লাহ আমিতো জীবনে কারো বাগানের আম চুরি করি নাই , না কোন পরনাড়ির দিকে নজর দেছি তাহলে এই
পানা পুকুরে আইনা আমায় কেন ফেললা।”
” আরে এই ইউভি কি ভাবিস বাবা ?”
” না না বড় আম্মু ভাইয়ার এইসব বিষয়ে ইন্টারেস্ট নেই জানো তো ।
” হ্যাঁ সেও ঠিক বলছিস।”
জায়ন নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল শাওয়ারের নিচে–
প্রতিটি জল ধারায় তার শরীর বেয়ে নেমে আসছিল যেন জমে থাকা ক্লান্তি দহন আর অজানা এক ক্ষোভের।
তার চিবুক নিচু, চোখ বুজে–তার শরীরের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে গেলেও মনের ভেতরের আগুন নিভছিল না।
তীক্ষ্ণ চোয়াল আর কাঁধের পেশীতে জমে থাকা টান
স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সে নিরবতায়, কেন ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজের ভেতরে যুদ্ধ থেকে সে নিস্তার খুঁজছিল,
অথচ সে জানত নীরব বৃষ্টির মতো শাওয়ার ও তাকে মুক্তি দিতে পারবে না ।
জায়ানের চোখের সামনে বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠছিল সেই দৃশ্য তিয়াশা কেমন জায়ন এর মামাতো ভাইয়ের সামনে কী অকৃত্রিম স্বাচ্ছন্দ্যে হাসছিল, কী নিখুঁত আত্মবিশ্বাসে তার হাসির ঝলকে চারপাশ আলোকিত করে তুলছিল। যেই হাসি ছিল অতি সাধারণ কিন্তু এই অতি সাধারণ হাসির রেখায় যেন লুকিয়ে ছিল জায়ানের অন্তর্গত ক্রোধে ঘি ঢালছিল নিরবধি। আর অয়নের সেই স্পর্শ যখন সে অনায়াসে তিয়াশার পায়ে হাত রাখছিল, স্বভাবসিদ্ধ চঞ্চলতায়, যেন কিছুই না সেই মুহূর্ত জায়নের অন্তরকে আঘাত করছিল ধারালো অসহ্যতার শলাকায়। এক অদ্ভুত জ্বলন ছড়িয়ে পড়ছিল তার শরীরে, আর হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা একরাশ অজানা অনুভূতি যেন অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল।
জায়নের বুকের ভেতরটা তখন জ্বলছিল ক্রোধে, কিন্তু সেই রাগের মাঝেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল সুইমিং পুলের সেই মুহূর্ত তিয়াশা ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে আছে, তার নিজের দেওয়া ব্লেজারে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। চুড়িদারটা ভিজে গিয়ে গায়ে লেপ্টে ছিল, আর সেই নীরব দৃশ্যটা চোখের সামনে যেন নতুন করে জ্বালিয়ে দিল তার ভেতরের আগুন।
শরীর কেঁপে উঠল হালকা কম্পনে, উত্তেজনায় রক্তের স্রোত গলায় গিয়ে আটকে গেল, চোখ চটপট করে উঠল, মুখটা অজান্তেই থমকে গেল চোখ বুজে ফেলল সে।
নিজের ভেতরেই গর্জে উঠল জায়ন,
“আর কত? আর কত রূপের ঝলসানি দেখাবি তুই? কতবার আগুন লাগাবি আমার ভিতরে? তুই বুঝিস না আমি আর পারছি না… এইভাবে চললে, আমি সত্যিই একদিন পাগল হয়ে যাব রোদ…ওহ ফ**ক হাউ ক্যান আই হ্যান্ডেল দিস নাউ।”
তিয়াশা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে —
” হ্যাঁ রে দোস্ত এবার বল দেখি পরলি কি করে ?”
” আমি পরি নাই , আমায় ছুঁড়ে ফেলছে ওই শয়তান বাঘের বাচ্চা। ”
” অ্যাঁআআআআআ… মানে জায়ন ভাই? ”
” হ্যাঁ উনি, ওনায় আমি নাকি শখের পুরুষ বানিয়েছি। ব**লের পুরুষ আমার ।”
” কিন্তু ফেলছে কেন দোস্ত ? ”
” তা ওই বদজাত বেয়াদব ব্যাটা জানে।”
রাগে ফুসছে তিয়াশা মনে হচ্ছে জায়ন কে পেলে এক্ষুনি মাথা ফাটিয়ে দেবে ।
” দোস্ত রাঙ্গা মূলো কোথায় রে , বিকেল দিয়ে দেখছি না।”
তিয়াশা এমনি ই রাগে ঝলসে যাচ্ছ তারমধ্যে আরোহীর এরকম প্রশ্ন এই রাগের ঝলসানি তে আরেকটু আগুন ছড়িয়ে দিল। চিৎকার করে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকোতে শুকোতে বলল —
” আমায় ভাইয়া বলে গেছে বল। কোথায় গেছে ?”
আরোহী একটু চমকে বলল —
” না বিকালের পরে দেখিনি তাই ।”
” তুই তো আমার ভাইয়া কে দেখতে পাস না তো তোর দেখে কি হবে ।”
” না কিছু না, জানিস বেবি ওই নয়ন টা কেমন পেছন পেছন ছুক ছুক করছিল।”
তিয়াশা মনে মনে আওড়ালো —
” আর নয়ন শ*লা এক অয়নের জ্বালায় আমায় এই সন্ধ্যা বেলায় সুইমিং পুলে স্নান করল সঙ্গে বাঘের থাবা তো ফ্রী ।”
” দূরে থাক রুহী এই নয়ন অয়ন দিয়ে , বাবারে ।”
আরোহী কিছু বলতে যাবে তখনই হঠাৎ দরজা ঠাসসসস করে খোলার এক আওয়াজ আসলো ।
তীব্র ধাপে কেউ রুমে ঢুকলো ।
” Out”
একটা তীব্র, কঠিন স্বর ছুঁড়ে দিল আরোহীর দিকে। জ্বলন্ত চোখ দুটো দেখে আরোহী যেন স্তব্ধ হয়ে গেল, ভয়ে আরোহী কিছু না বুঝে না ভেবে ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
দরজাটা আবার ও ঠাসসস আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে গেল।
ঘরের দরজা বন্ধ হতেই, ঘরের বাতাস যেন হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল।
তিয়াশা পিছিয়ে গেল এক পা… চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। জায়ানের চোখে সেই আগুন চেনা নয়, ভয়ংকর। ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠছে সে।
তিয়াশা থরথর করে কাঁপছে ভয়, বিস্ময় আর অনিশ্চয়তায়। চোখ বড় বড় করে ভাবছে, এবার বুঝি শেষ… এই ভাবনার মাঝেই
জায়ান হঠাৎই তার দিকে ধেয়ে আসে।
মুহূর্তের মধ্যে কোনো শব্দ, কোনো সতর্কতা ছাড়াই তার হাত শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে তিয়াশার মেদহীন কোমর।
চুলের ভেতর আঙুল গুঁজে দিয়ে, সে তার মুখটা এক ঝটকায় কাছে টেনে আনে, ঝাঁপিয়ে পড়ে তিয়াশার অধর যুগলের উপর।
তিয়াশা হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। শরীর কাঁপছে, চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে… কিন্তু পারছে না। কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা কি হচ্ছে তার সঙ্গে কেন হচ্ছে ? আতঙ্কে জমে যায় তিয়াশা।
তিয়াশা যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ততই যেন জায়ন তিয়াশাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরছে , নিঃশব্দ দ্রুত স্বাস প্রশ্বাসের এর গভীরতা বাড়ছে প্রবল ।বাড়ছে উন্মদত্তা কোন ক্ষুধার্ত পুরুষের বিস্ফোরন যেন ঝড়ে পড়ছে তিয়াশার গোলাপি কোমল অধরের উপর। তিয়াশার চোঁখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে
নোনাজল ।
১০, ১৫ মিনিট সময় পার হয়ে গেল তাও জায়ন এর উন্মদতা শেষ হওয়ার কোন নাম নেই ।
জায়ন এর ঠোঁট একটু আলগা হতেই , তিয়াশা নিজের অধর যুগল জায়ন এর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগে , ক্রোধে, কান্নায় বলে উঠলো —
” আপনি কি পাগল ? কি করলেন এটা? ”
জায়ন তিয়াশার কোমর আরো কাছে টেনে নিয়ে এসে জোড়ে জোড়ে স্বাস ছেড়ে বলে উঠল —
” আমাকে উত্তেজিত করবি তো আরো কিছু দেখতে পাবি , বয়স এর কথা ভেবে নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করেছি কিন্তু তুই তো চাস না আমি ঠিক থাকি ।
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৬
সো বেবী গার্ল যত কথা শুনবি ততোই তোর জন্য ভালো আমাকে উন্মাদ করবি তো বয়স দেখব না সিধা তোর আব্বু কে তার নাতি নাতনী গিফ্ট করে দেবো । ”
এই বলে উল্ট হাসি দিয়ে আবারও ঠাস স স করে রুম ত্যাগ করল ।
আবার ও তিয়াশাকে রেখে গেল এক অজানা বজ্রপাতের মধ্যে ।