তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৮
নীল মণি
কখনো কখনো মানুষ নিজের কাছে নিজেই প্রশ্নের কোন উত্তরের সন্ধান খুঁজে পায়না, সময় কেটে যায় একের পর এক ব্যাকুলতায় , সেই ব্যাকুলতার হাত ধরে নিজের মাঝে সৃষ্টি করে তোলে অজানা এক ব্যাধী। যেই ব্যাধির পরিষেধক একমাএ সেই প্রশ্নের উত্তরের অধিপতি।
কিন্তু প্রতিভাষ যখন সামনেই থাকে তবুও কেন তা অনুসন্ধান রূপে ফিরে আসে।
সেই এক প্রশ্নের সঙ্গি হয়েছে ছোট্ট ১৬ বছর বয়সী কিশোরী তিয়াশা । তার এই কিশোরী বয়সের শখের পুরুষ তো তাকে চায়না তবুও কেন তার স্পর্শ, তার বলা প্রতিটি শব্দ,প্রকৃত অর্থে যা বলা হয়নি, তা-ই যেন বলবার চেষ্টা করছিল।সব কথার আড়ালে লুকানো ইঙ্গিত,স্পর্শের তলে জড়িয়ে থাকা এক অনুক্ত দাবি
সবকিছুই যেন প্রকাশের বদলে চাপা এক আকাঙ্ক্ষার দিকেই ইশারা করছিল।
” কিসের এত দাবি জায়ন ভাই , কিসের ? আর কেনোই বা আপনি তো আমাকে চান না কেন কেন?”
নিঃশব্দ রুমের এক কোণে সঙ্কুচিত হয়ে বসে ছিল তিয়াশা চোখের কোণে জল থমকে আছে , ঠোঁটে অজানা এক শিহরণ,আর আত্মার গভীরে জমে থাকা এক অব্যক্ত বিস্ময়।কোনো আওয়াজ নেই, নেই কান্নার উচ্চারণ,
তবুও যেন তার সমস্ত অস্তিত্ব নিঃশব্দে চিৎকার করে উঠছে।
” কি ছিল এটা জায়ন ভাই , এবার আপনাকে যে আমার এই অনুসন্ধানের প্রতিভাষা দিতেই হবে । সে হোক আপনি আমার দুলাভাই বা জায়ন ভাইয়া । আমি আপনার হাতের পুতুল নৈ।”
জায়ন তার নিজের রুমে জেতেই দরজা পেছন থেকেই বন্ধ করে করে দিল।
একহাত কোমরে স্থির, অপর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ডগা দিয়ে আলতোভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতে করতে ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে
নিযেকে তাকিয়ে দেখলো বার বার দাঁড়াল চোখে ক্লান্ত দৃষ্টি, একটু ঠোঁট উল্টানো টানা হাসি দিয়ে
বলল —
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” সরি বেবি আমি চায়নি এরম কিছু হোক। কিন্তু কি করবো বল আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি কিটি । তোকে আঘাত করে যে আমি নিজে আঘাত পাই কিন্তু এই যে এক বালের জ্বালা এই বুকে হয় তোকে অন্য
কারো সঙ্গে দেখলে মনে হয় দুটোকেই জানেজা দিয়ে দেই। তোকে আমি আমার ইমিউনিটি সিস্টেম বানিয়ে নিয়েছি , তুই ঠিক ঠাক থাকলে আমিও থাকবো , তুই বিগড়ালে আমার বিগড়াতেও সময় লাগবে না । আজকে তোর ঠোঁট টেস্টে করেছি, এখনো তোকে টেস্ট করিনি যেদিন করব সেদিন বুঝবি আবরার জায়ন চৌধুরী ঠিক কতটা নিজেকে সামলেছে।।।
আই ওয়ান্ট টু টেষ্ট ইউ মোর বেবি সিরিয়াসলি ইউ জাষ্ট টেস্টে লাইক ওনলি মাইন কিটি , ওনলি মাইন ।
” ভাইয়া আসবো? ”
জায়ন এর এই ভাবনার মাঝেই দরজার ওপাশ থেকে ইউভির আওয়াজ ভেসে আসলো ।
জায়ন একটু নিজেকে সামলে চুল ব্যাকব্রাশ করতে করতে বলল —
” হ্যাঁ আয় ।”
ইউভি ধীর পায়ে রূমে প্রবেশ করল । জায়ন ডেভিনের পাশে রাখা চেয়ার টি টেনে নিজের জন্য ইউভি কে আরেকটি চেয়ার এ বসতে বলল —
জায়ন একটা সিগারেট ধরিয়ে উপর দিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল —
” সময় নষ্ট না করে যা বলতে এসেছিস সেটা বল”
ইউভি হালকা একটু কেশে দুই হাত দিয়ে পড়নের ট্রাউজার টা খামচে ধরে বললো —
” ভাইয়া বনু কে কেন পুলে ফেলেছিলে? ও তো ছোট তেমন কিছু বোঝেনা । তো বলছিলাম……”
“পরে বলবি আগে তুই আমাকে বল কখনো জেলাস হয়েছিস ?”
ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ইউভির দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন টা ছুঁড়ে দিল ।
” মানে ভাইয়া?”
” এই টুকো মনে বুঝছিস না তুই আবার হৃদয়পাখি হৃদয়পাখি করিস, মানে টা হলো ভাব তোর হৃদয়পাখিকে অন্য কোন ব্যাক্তি নিজের নিজের কোকিলপাখি বানানোর পাঁয়তারা করছে । তখন তোর কেমন লাগবে?”
ইউভি হঠাৎ করে বসা থেকে উঠে রাগে ক্ষোভে বলল —
” আমার হৃদয়পাখি শুধু আমারই পাখি অন্য কোন ব্যাক্তি কে তার কোকিল পাখি তো দূরে থাক তার নজর ও পরতে দেবো না ।”
এবার জায়ন তার শেষ সিগারেটর অংশ টুকু নিভিয়ে এস্ট্রে তে ফেলে একটু হেসে উত্তর দিল —
” তোমার জিনিস তুমি কাউকে দেখতেও দিতে চাও না ছোট ভাই , আর আমার জিনিসে পর পূরুষের হাত পড়েছে সেইটা আমি কি করে মানবো তাও আবার আবরার জায়ন চৌধুরীর কলিজা সে , আর তুমি এখানে এসেচো বিচার চালাতে । ”
“(……….) ।
” নিজের মামাতো ভাই তাতে কি হয়েছে ইচ্ছে তো করছিল শা**র বাচ্চাকে ওখানেই পুঁতে দেই । শুধুমাত্র
মা এর খুব কষ্ট হবে তার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। আর তুই তো জানিস আমি আমার মায়েদের জন্য কত কিছু সফর করতে পারি । তবে চিন্তা নেই পুঁতে না দিতে এখন কিন্তু ওকে তো আমি মারবোই , শা**র বাচ্চাকে আমার জিনিসে হাত দাওয়ার সাধ মিটিয়ে দেব।”
ইউভি কি বলবে বুঝতে পারছে না সে ভুলেই গেছিল সে কোথায় এসেছে , কার সামনে বসে আছে , সে কি করে ভুলে গেলো যে তার ভাইয়ার কাছে এসে প্রশ্ন করবে আর তার ভাইয়ার কাছে জবাব থাকবে না । এ তো আবরার জায়ন চৌধুরী তার কাছে জবাব চাওয়া তো দূর প্রশ্ন করাই ভুল। তাই আবারো নিশ্চুপ রয়ে গেলো।
“( ………..)।”
” প্রথম বার জবাব চাইতে এসেছিস ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিলাম। দ্বিতীয় বার ভালো কিছু আশা রাখবি না, তোর জন্য নিজের জান টা দিতে দুবার ভাববো না কিন্তু আমার আর তোর বনূর মধ্যে কেচলা করতে আসবি তো তোর জান টা নিতে জিরো সেকেন্ড সময় নিব না ।
আমার চোখ যবে থেকে আমার কিটি ক্যাট এর উপর পরেছে তবে থেকে সে জায়ন এর কলিজার মালিকিন হয়েছে ।”
ইউভি ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলল —
” ভাইয়া মাফ করো , আর হবে না ভুল হইছে আমার ।”
জায়ন চেয়ার থেকে উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ইশারা করে ইউভি কে ডেকে নিল । তারপর একহাত নিজের ট্রাউজার এর পকেট এ রেখে আরেক হাত ইউভির কাধে রেখে বলল —
” ভয় পাচ্ছিস কেন আমায় পাগল , ভয় পাস না আমি কি বাঘ বা ভাল্লুক যে তোকে খেয়ে ফেলবো তোর বোনটাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি এই কদিনে কবে কবে যে পিচ্ছি টাকে নিজের কলিজা বানিয়ে নিলাম নিজেও জানিনা , তুই শুধু আমাকে ওকে পেতে সাহায্য কর তোর জন্য নিজের জান হাজির ভাই।”
ইউভি ভেবে পায় না তার ভাইয়ের এই অপরিসীম ভালোবাসা তার বোনের জন্য যেমন পৃথিবীর সর্বসুখ নিজের অধিকার করবে তেমন চিন্তাও পিছু ছাড়বে না ,
বৃষ্টির বিয়ে যদি ভাইয়ার সঙ্গে ঠিক না হতো তাহলে সে তার ছোট বোন কে তার ভাইয়ার হাতে তুলে দেবার জন্য একবারও ভাবতো না , কিন্তু বৃষ্টি? ভালোবাসা তো এসব দেখে না সে তো একান্তই আপন যা জোর করে কেউ হওয়াতে পারবেনা । এতো ভাবনার পর ইউভি একটু নিজেকে হালকা করে হাসি মুখে বলল —
” ভাইয়া তোমার জান চাওয়ার আগে যেন আমার জান যায় , তুমি আমার বড় ভাই এসব মনে আনাও হারাম। কিন্তু বৃষ্টি আর রোদ এর ভাই , বৃষ্টির কথা চিন্তা করেই একটু বিচলিত হই। ”
” তোকে তো সেদিন বললাম বৃষ্টির দায়িত্ব আমার যতদিন না সে নিজের জন্য সঠিক মানুষ খুঁজে না নেয়।
আর বৃষ্টি আমাকে ভালোবাসে না সেটা আমি প্রথম দিন ওর সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি , তাও আমি ওকে একবার সব ক্লিয়ার করে দেবো। মেনে নিলে নেবে না মানলে আমার বা…..”
” ভাইয়া গালি দেবা না কিন্তু।”
” আরে গালি কই দিলাম ? ”
” এই তো দিতে যাচ্ছিলে। কিন্তু ভাইয়া একটা কথা মাথায় আসছে না।”
” কি বল ?”
“তোমায় যখন ড্রয়িং রুমে দেখলাম তখন তো মনে হচ্ছিল দুনিয়া জ্বালায় দিবা। এখন এত খুশি খুশি কেন ভাইয়া ।”
জায়ন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল —
” কিছু না , আমার ফেভারিট ডেসার্ট টা টেষ্ট করেছি বুঝলি।”
” অ্যাঅ্যাআআ….. কোন ডেজার্ট আমায় একটু টেস্ট করাও তো।”
“সসসস মা***র্ডার করে দেবো… এইটা আমার পার্সোনাল ডেজার্ট যা শুধু আমি একাই টেষ্ট করবো লাইফ টাইম।”
ইউভি এদিকে বুঝে পায় না , তার ভাইয়া কি বলে । এই ভাবে চোললো কিছু সময় দুই ভাইয়ের মাঝে……
“এই বেবি এইভাবে বসে আছিস কেন ? আর ভাইয়া তোকে কি বলে গেলো রে? জানিস আমি তো ওনাকে দেখে ভয়ে দিয়েছি ছুঁট। আল্লাহ ভাইয়া যেমন হ্যান্ডসাম তেমন ভয়ানক । ”
তিয়াশা জানলায় বসে কিছু ভাবছিল তারমধ্যে আরোহীর কন্ঠস্বর ভেসে উঠল।আরোহীর কথা যেন তিয়াশার কান পর্যন্ত গেলো না , সে তো এক ভাবনার জোয়ারে তড়ি বইছে।
” আরে এই হারামজাদি , এইদিক ফের কোন দুনিয়ায় যাস মাঝে মাঝে বলত?”
তবুও সারা দিল না সে…..
এবার আরোহী নিজের রাগ সামলাতে না পেরে পেছন থেকে তিয়াশার বাহু ঝাকিয়ে বলল —
” এই বেবি ।”
তখনই তিয়াশা তার ভাবনার জগৎ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চুপ চাপ পেছনে ফিরে তাকাল —
তিয়াশার চোঁখ মুখ ও ঠোঁটের অস্বাভাবিক রূপ দেখে আরোহী যেন মুহূর্তেই অবশ হয়ে গেল।
যে চেহারাটা এতক্ষণ তার চোখের আড়ালে ছিল,
সে চেহারার প্রতিটি রেখায় তখন ছাপ ফেলে রেখেছিল কোনো অকথিত ঝড়ের বিষণ্ন ছায়া।
তিয়াশার পেছন ফিরে থাকা অবস্থায় সে কিছুই টের পায়নি,
কিন্তু এবার… চোখের পাতা ফোলা , ঠোঁটের কোণায় হালকা রক্তের ছাপ, শুকনো ভেজা অশ্রুর দাগ—
সবকিছু মিলিয়ে আরোহীর মনে একটা তীব্র শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ল।
চমকে উঠে প্রশ্ন করলো —
” একি অবস্থা তোর ? কি হয়েছে ?”
তিয়াশা আবার ও জানলার দীকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ধিমী স্বরে বলল —
” সে তার রাজত্ব চালিয়েছে। আমি তার রাজ্যের কাঠের কাঠের পুতুল তাই সে তার মতন করে রাজত্ব চালিয়েছে।”
” আরে কি বলিস কিসের রাজত্ব কোন রাজ্যে ?”
তিয়াশা ধীরে ধীরে,
জায়ানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই সব ঘটনা বিস্তারিতভাবে আরোহীর সামনে উদ্ঘাটন করল।
প্রতিটি বাক্যে কাঁপন ছিল,
প্রতিটি উচ্চারণে লুকানো ছিল একরাশ লজ্জা, বেদনা ও অসমাপ্ত প্রশ্নের ভার।
তার বলা প্রতিটি শব্দ যেন নিজেকেই বারবার ছুরির মতো বিদ্ধ করছিল,
আর আরোহী—সে স্থির, স্তব্ধ হয়ে শুনছিল।
আরোহী মুহূর্তে থমকে গেল। চোখ বড় বড় করে চমকে উঠলেও, নিজেকে সামলে নেওয়ার ভাব দেখিয়ে ঠোঁটের কোণে এক মুচকি হাসি দিয়ে মরিয়া ভাবে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল—
“তুই… তুই কি ঠিক আছিস? ভাইয়া তোরে কিস করছে ?
ওহ মাঈ গড ।
তিয়াশার এবার আরোহীর উপর প্রচণ্ড রাগ উঠল —
” তোর হাসি পাচ্ছে?”
” ও মা তা কাঁদবো নাকি? আমার বেবি টার ফাস্ট কিস ওরে বেবি…. আমার কপাল টাই খারাপ।”
তিয়াশার সেই মুহূর্তের কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে, মনে মনে ভাবছে —
” ওই টা কিস ছিল ? নাকি আমার ঠোঁটের পিন্ডি চটকানো ছিলো?”
তিয়াশা এবার আরোহীর কান টেনে বলল —
” তুই পাগল হইসিস , উনার আমার আপুর সঙ্গে দুইদিন পর বিয়ে । আর উনি আমার সঙ্গে এইটা করতে পারল ? আর তুই তাতে হাসছিস গাধী?”
আরোহী নিজের কান থেকে তিয়াশার হাত ছাড়িয়ে বলল —
” দোস্ত শোন তোর সব কথা শুনে আমার মনে হয়েছে শুধু তুই না ভাইয়াও তোকে নিয়ে কিছু ফিল করে নইলে অয়ন ভাইয়ার উপর জেলাস হয়ে তোকে আঘাত কেন করবে ?”
তিয়াশা আরোহীর কথা কিছু না বুঝে প্রশ্ন করে বসল —
” জেলাস মনে , কিসের জেলাস? ”
আরোহী হেসে লুটপাট হয়ে বলল —
” আরে গাধী বুঝিস না তোরে ভাইয়া ভাইয়া কেন ছেলেদের সঙ্গে কথা বলছে , আর সেইখানে অয়ন ভাইয়া তোর পায়ে হাত দিসে। হি হি কি রোমান্টিক ভাইয়া কাশ আমার একটা এরম জামাই হয়তো।”
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৭
” অ্যাঅ্যাঅ্যাআ…”
” অ্যাঅ্যাআ না হ্যাঁ দোস্ত , শোন না দোস্ত শুধু কি কিস ই হইসে ?
এই বলে হেসে রুম থেকে ছুট দিল আরোহী….
” তুই দারা হা**মজাদি আজকে তোরে পাই , শয়তান বদজাত বেটি।”………