প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৭ (৩)
জান্নাত নুসরাত
দীর্ঘ পনেরো মিনিটের মাথায় আরশ লাফ দিয়ে উঠে বসল। হাতের মধ্যে ক্যানেল লাগানো ছিল টেনে খুলে ফেলে দিল। ক্যানেল টেনে হিচড়ে খোলার জন্য হাতের মধ্যে রক্ত ফুটে ফুটে বের হতে লাগলো। আরশ তোয়াক্কা করল না রক্তের, এগিয়ে গেল কেবিনের বাহিরের দিকে। হাঁটতে গিয়ে পা টলমল করে উঠল। দরজার সামনে যেতেই মাথা ঘুরে উঠল। দেয়ালে ভর দিয়ে হেঁটে গেল সামনের দিকে। ওয়েটিং রুমে জায়িনকে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে আরশ ক্ষোভ নিয়ে পা বাড়াল। জায়িনের শার্টের কলার চেপে ধরে নাকে ঘুষি মারল।
নুসরাতের উপরের রাগ জায়িনের উপর প্রকাশ করল। জায়িন হাত দিয়ে ঠেলে দূরে সরাতে চাইল আরশ সরল না। জায়িনের নাকে আরেকটা ঘুষি পড়ল। জায়িনের মুখ এক পাশ থেকে অন্য পাশে ঘুরে গেল ঘুষির জন্য। জায়িনের নাক থেকে তরল কিছু বের হওয়ার অনুভূতি হতেই বাঁ-হাত দিয়ে নাক স্পর্শ করল। চোখের সামনে এনে ধরতেই ভেসে উঠল লাল তরল রঞ্জক পদার্থ।
আরশের মাথা আবার ঘুরে উঠল। ইসরাত ডেলিভারি রুমের সামনে থেকে হু হু করে কান্না করে এগিয়ে আসলো। জায়িনের নাক থেকে রক্ত বের হতে দেখে গলার আওয়াজ আরেকটু বেড়ে গেল। হাত বাড়িয়ে জায়িনের নাকে স্পর্শ করে কেঁদে উঠল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
জায়িন ইসরাতের দিকে বিরক্তির চোখে তাকাল। তার শিক্ষা হয়ে গিয়েছে! তার প্রয়োজন নেই বাচ্চার! এতো স্ট্রাগল করে যদি বাচ্চা পৃথিবীতে আনতে হয় তাহলে না আনাই বেটার। একে তো এতো দিন এতো কষ্ট তারপর আবার ডেলিভারির দিন টেনশন! এসব নেওয়া অসম্ভব! একে এতো টেনশন তার উপর আবার এই মহিলার কান্না!
ইসরাত কে ধমকে উঠল জায়িন। ডেলিভারি রুম সামনে হওয়ায় গুঙ্গানির আওয়াজ ভেসে আসছে ভিতর থেকে। আরশ মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসে গেল। চোখে অন্ধকার দেখল।
জায়িন রেগে ইসরাতকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল। ইসরাত জায়িনের পাশ ঘেষতেই জায়িন বলল,”এই, মহিলাকে আর মহিলার ভাইকে কেউ এখান থেকে সরাও দুটো মাথা খেয়ে নিচ্ছে। ডেলিভারি ওদের হচ্ছে না ওদের বোনের হচ্ছে।
জায়িন মাথা চেপে ধরে বাহিরে চলে গেল। এখানে কোনো ভালো মানুষ থাকা ইম্পসিবল। ভালো মানুষ যদি এখানে স্টে করে তাহলে দুই মিনিটের মাথায় পাগল হয়ে যাবে।
ডেলিভারি রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। বাচ্চার মৃদু স্বরে কান্নার আওয়াজ ভিতর থেকে ভেসে আসছে।
আরশ চোখ তুলে আশা নিয়ে সামনের দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে ডেলিভারি রুমের দরজা খোলে বের হয়ে আসলো নার্স। যার কোলে টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো ছোট্ট একটি দেহ।
ইসরাত চোখ মুছে ঝলমল চোখে তাকিয়ে আছে বাচ্চার দিকে। নার্স ইশারা করল বাচ্চাকে নেওয়ার জন্য। আরশ স্তম্বিত! এক দৃষ্টিতে কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট পোটলির দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চার এক ভ্রু কুঁচকে আছে। কপালে নুসরাতের মতো ভাঁজ ফেলা। নিভু নিভু চোখে আরশের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে নিল ছোট্ট শিশুটা। তারপর আবার গগণ ফাটিয়ে কান্না করল।
“কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার আরশ! আপনার ছেলে হয়েছে! মা এবং সন্তান দু-জনেই সুস্থ আছেন।
নার্সের কথায় আরশের ধ্যান ভাঙ্গল। ঠোঁট কামড়ে টলমল পানি চোখে হাত বাড়িয়ে কোলে নিল ছোট্ট দেহটাকে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আরশের হাত থরথর করে কেঁপে উঠল। পিঠ বেয়ে শিরশির করে কিছু একটা বয়ে গেল। বুকের ধুকপুক শব্দ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। বুকের ভিতর আলাদা এক শান্তি এসে ভর করল। আরশ শিশুটির ছোট্ট কপালটায় চুমু খেল।
আরশের হাত আর শরীর কাঁপুনি দেখে ইসরাতের ভয় লাগলো। যদি হাত থেকে পড়ে যায় মেঝেতে ছোট্ট শরীর টা।
“ভাইয়া বসুন! আপনার হাত পা কাঁপছে।
আরশ বসল না। শিশুটির কানের কাছে মুখ নিয়ে আজান দিল। আজান দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠল। আরশ চোখ ঘষে মুছল ছোট্ট শরীরটায়।
আজান দিতে গিয়ে কান্নার জন্য আজান গলায় আটকে গেল। আজান শেষ করে বাচ্চাকে ইসরাতের কোলে দিয়ে দৌড়ে গেল ডেলিভারি রুমে। তার বাচ্চার মা কে তো দেখতে হবে?,ডেলিভারি রুমে নুসরাত নেই! নার্সকে আরশ জিজ্ঞেস করল,” আমার ওয়াইফ কোথায়?
নার্স আরশের দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর হাসি মুখে বলল,”এই রুম থেকে বের হওয়ার পর যে কেবিন ওইটায় আপনার স্ত্রীকে রাখে হয়েছে রেস্টের জন্য।
আরশ বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল কেবিনের দিকে। চাপানো দরজা ধাক্কা দিতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল ক্লান্ত মুখশ্রী নিয়ে শুয়ে থাকা এক রমণী কে। আরশের রাগ এক নিমেষে উড়ে গেল! এতো বড় একটা উপহারের জন্য এই সামান্য ভুলটা সে মাফ করে দিল। নিজের ভিতর থেকে কেউ বিদ্রুপ করে বলল, “ছোট্ট ভুল! অবশ্যই না এটা কোনো ছোট্ট ভুল নয় আরশ এটা অনেক বড় ভুল।
আরশ নিজের ভিতরে তর্ক বিতর্ক করে ধীর পা বাড়াল বেডের দিকে। হাতে স্যালাইন লাগানো নুসরাতের। কপাল ঘেমে আছে এখনো! কপালে তা চিকচিক করে ভাসছে।
আরশ লুকিয়ে লুকিয়ে চেক করল নুসরাত ঘুমিয়ে আছে কি না? যখন দেখল কোনো প্রকার নড়চড় নেই মনে করল ঘুমিয়ে আছে। ধীরে ধীরে গিয়ে নুসরাতের পাশ ঘেঁষে বসল। বেডে ফেলে রাখা হাত চেপে ধরে ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুমু খেল। গালে হাত বুলিয়ে দিল। চুপচাপ কিছুক্ষণ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে নীরবে কান্না করে দিল। হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,”এতো অপছন্দ করিস আমাকে! যে, আমাকে আমার সন্তানের কথা জানালি না! আমি ও তোকে আর কিছু জানাব না। তোকে আমি ঘৃণা করি! তুই একটা স্বার্থপর। আই হেট ইউ! আই হেট ইউ নুসরাত নাছির!
আরশ কান্না করল হাউ মাউ করে। মাথা দিয়ে নুসরাতের কপালে দু-একটা ধুম ধাম করে বারি দিল। তারপর আবার কাঁদল। পানি চোখ থেকে মুছে নুসরাতের দিকে ঝুঁকে কপালে চুমু খেল। নুসরাতের কানের কাছে মুখ নিতেই আবার চোখে পানি জমা হলো। মুখ কানের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে আরশ চোখ নুসরাতের গালে মুছল। নাক টেনে বলল,”বাবা হওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতির সাথে পরিচিত করানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এরোগেন্ট নুসরাত নাছির।
হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে গালে চুমু খেল। তারপর সূক্ষ্ম ঠোঁটে নজর পড়ল। সেখানে ও আলগোছে চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়াল। ফিরে যেতে গিয়ে আবার দরজার কাছ থেকে ঝড়ের গতিতে এসে পেট জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। নুসরাত ব্যথায় দাঁত কামড়ে চোখ বুজে শুয়ে রইল। এতোক্ষণ ধরে চোখ বন্ধ করে শুনছিল আরশের কথা। শালা এভাবে এসে জড়িয়ে ধরবে ভাবতে ও পারেনি। পেট ব্যথায় পা হাত অসাড় হয়ে গেল।
আরশ নুসরাতের গালে হালকা হালকা থাপ্পড় মেরে বলল,”এই থাকা আমার দিকে! এতো ঘুম কিসের তোর? চোখ খোল! অনেক ঘুমিয়েছিস! এই, এই তাকা আমার দিকে! তুই একা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিস আর কেউ দেয়নি! এতো ঘুমানোর কি আছে? এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরার পর একটা মানুষ কীভাবে ঘুমাতে পারে?
নুসরাত দাঁত কামড়ে হাসি আটকালো। একে তো ব্যথা শরীরে তার উপর আবার আরেক জলহস্তি এসে উপরে পড়ে গেছে। আরশ নুসরাতের গলার মাঝে মাথা রেখে কান্না করল। নুসরাতের পেটের চারপাশে হাত বুলালো। গালে, নাকে, থুতনিতে চুমু খেল। হাত দিয়ে অগোছালো চুল গুলো কপালের উপর থেকে গুছিয়ে দিল।
কাচের গ্লাসের অপাশে দাঁড়ানো জায়িন আর ইসরাত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ছোট্ট দেহটাকে নিয়ে চলে গেল। আরশ এক ঘন্টা পর বের হলো কেবিন থেকে। নাক, মুখ, চোখ লাল তখন! হাতের তালু দিয়ে নাক ঘষল। নাক পিটপিট করছে। অনেক্ক্ষণ কান্না করার জন্য।
আরশ এগিয়ে আসতেই জায়িন আরশের কোলে তুলে দিল ছোট্ট দেহটাকে। আরশ বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক কোণের দিকে হাঁটা ধরল।
করিডোরের এক কোণে গিয়ে আরশ বাচ্চাকে নিয়ে বসে গেল পিঠ ঘেষে দেয়ালে। কপালে কপাল লাগিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠল। তার আজ কাঁদতে ইচ্ছে করছে। গত নয়মাস ধরে জমানো কান্না একদিনে কেঁদে নিচ্ছে। বাচ্চাটা হয়তো আরশের কান্না দেখে বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে নিল।
জায়িন আরশের পিছু পিছু এসেছিল। করিডোরের এক পাশে বসে লুকিয়ে আরশকে শব্দ করে কান্না করতে দেখে হেসে উঠল। হঠাৎ জায়িনের হাসির শব্দ শোনে আরশ পিছু ফিরে তাকাল। জায়িন পারে না তো হাসতে হাসতে মেঝেতে পড়ে যায়।
আরশ লজ্জা পেয়ে ওখানে থেকে বাচ্চা নিয়ে পালালো। পিছন থেকে ভেসে আসলো জায়িনের উচ্চ শব্দের হাসি।
সেদিন রাতেই নুসরাত কে নিয়ে আসা হলো এপার্টমেন্টে। রাতে ঘুমানোর সময় বাঁধল বিপত্তি। আরশ তার বাচ্চার কাছে শুতে চায় এদিকে ইসরাত ও শুতে চায়! জায়িন ইসরাত কে ছাড়া ঘুমাবে না। আর ইসরাত ও বাচ্চা ছাড়া ঘুমাবে না। আরশ আর জায়িনের মধ্যে তুমুল তর্ক বিতর্ক লেগে গেল। এই সুযোগে ইসরাত নুসরাতের রুমে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে লক করে দিল। যখন তর্কা তর্কি শেষ করে দু-জন সিদ্ধান্তে পৌঁছাল তখন দরজার দিকে তাকাতেই দেখল দরজা ভিতর থেকে লাগানো। আর ইসরাত ও উধাও! জায়িন আর আরশ দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আরশ এক দৌড় দিয়ে জায়িনের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সে জায়িনের সাথে শুবে না, আর জায়িনকে ও এই রুমে জায়গা দিবে না। জায়িন আবার নিজের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আজকের দিন তার জীবনের একটা বড়ই কষ্টের দিন! সে আজকের দিনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলতে ফেলতে শেষ করেছে। বিড়বিড় করে বলল,”জীবন যুদ্ধে আরশের থেকে পিছিয়ে গেলাম। আগে বিয়ে করে কি হলো? জীবন যুদ্ধে বউ আর সন্তান নিয়ে তো আরশ সামনে এগিয়ে গেল।
সৈয়দ বাড়িতে কাউকে জানানো হয়নি এখনো বাচ্চার জন্ম হওয়ার কথা। যখন দেশে যাবে তখন সারপ্রাইজ দিবে সবাইকে। শুধু জায়ানকে আর ইরহাম কে জানানো হয়েছে! জায়ান কথাটা জানার পর ইয়া বড় হা করে বসে রয়েছিল। তারপর লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”তুই ছোট হয়ে আগে কেন ছক্কা মেরে দিলি? তোর থেকে বড় বড় ভাই বোন এখনো বিবাহিত সিঙ্গেল আর তুই বাচ্চার বাবা হয়ে গেলি? লজ্জা লাগে না তোর?
আরশের নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিল,
“আশিকের ও তো ছেলে হয়েছে। ও আমাদের সবার থেকে ছোট তখন কিছু বললে না আর এখন আমার পেছন পরছ কেন? আমার বাচ্চা হলেই দোষ?
জায়ান ভেংচি কাটল। এসব কথা এক পাশে রেখে আরশ বলল,”ভাই একটা গরু কোরবানি দিয়ে দিও! আমি দেশে আসার পর সবাই মিলে তখন আকিকা করব। এখন তুমি জাস্ট এই কাজ করো!
জায়ান জিজ্ঞেস করল,
” বাবুর নাম কি রেখেছিস?
আরশ মুখ লটকে বলল,
আইজান!
জায়ান সামান্য খিঁচানো মেজাজে বলে ওঠল,
“পুরো নাম বলতে বলছি গাঁধা?
আরশ চুপসানো মুখে বলল,
“তেহবিন আইজান !
জায়ান আবার শুধাল,
” নাম কে রেখেছে?
আরশ এবার মুখ কালো করে ফেলল। নুসরাতের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ব্যথিত গলায় বলল,”তোর বোন রেখেছে!
আরশের কথা শেষ হতেই জায়ান হই হই করে উঠল। কন্ঠে ভৎসনা রেখে বলে ওঠল,”মাশা-আল্লাহ! এই জন্য বলি এতো সুন্দর নাম কে রাখল? তোর তো চয়েস ইয়াক্! রাখলে বাবুর নাম রাখতি রকি, জনি নাহয় বান্টি ঘন্টি! ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে আসছে? আমার বোন নাম রাখায় একটা ভালো নাম রেখেছে।
জায়ান আরশকে অপমান করতে পেরে দাঁত কেলিয়ে ফোন রেখে দিল। আরশ ফোন পকেটে পুরে নুসরাতের দিকে লুকিয়ে তাকাল। নুসরাত মোবাইলে নিজের ফটো বের করে বাচ্চার সাথে নিজের মুখ মিলাচ্ছে। কপাল মিলাতে গিয়ে নাক কুঁচকে গেল না মিলেনি তার সাথে! কপালে ঘাঢ় ভাঁজ ফেলে আরশের দিকে তাকাল তীক্ষ্ণ চোখে। হ্যাঁ আরশের সাথে মিলছে!
তারপর নাক মিলাল নিজের সাথে! হ্যাঁ, এটা মিলছে! থুতনি মিলেনি! আবার গাল তার সাথে মিলছে! আর রঙ কার পেয়েছে। তখন ইসরাত হেঁটে এসে বসল। নুসরাত গভীর চোখে তাকাল ইসরাতের দিকে। হ্যাঁ ইসরাতের রং পেয়েছে। আল্লাহ বাঁচিয়েছে! যদি ওই বেডার রং পাইতো তাহলে তো সে অজ্ঞান হয়ে যেত আজ। তার হার্ট অ্যাটাক আজকের মতো হলো না।
নুসরাতের এখনকার রোজকার কাজ হলো বাবুকে সোফায় শুয়েয়ি নিজের সাথে মিলানো। আরশ এসব দেখে আর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তার আর নুসরাতের কথা হয় না! শুধু আইজানের প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া! নুসরাত মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। সারাদিন রুমে বসে আইজানের সাথে কথা বলে। বাচ্চাটা ও মায়ের দিকে সারাদিন তাকিয়ে থাকে। মায়ের নেওটা হয়েছে! দেখলে মনে হয়, বাচ্চাটা মায়ের একেকটা কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে।
৪০ দিন পরের কথা,
গাড়ি এসে থামল সৈয়দ বাড়িতে। জায়ান আর ইরহাম আলগোছে বের হয়ে গেটের সামনে আসলো। নুসরাতের কোল থেকে আইজান কে নিয়ে অগ্রসর হলো বাড়ির ভিতরের দিকে জায়ান। ইরহাম অবাক হয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে! গাল ফোলে, মুখ, নাক, শরীর ফোলে রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে।
আরশ নুসরাতের হাত চেপে ধরে গাড়ির বাহিরে নিয়ে আসলো। নুসরাত হাত ছাড়িয়ে নিল। শক্ত গলায় বলল, “আমি যেতে পারি!
” কিন্তু তোর শরীর এখনো দূর্বল!
নুসরাত বিরক্তির চোখে তাকিয়ে বলল,
“কিসের শরীর দূর্বল? আমি যতেষ্ট ফিট এন্ড ফাইন! আপনার কাছেই মনে হচ্ছে শুধু আমি দূর্বল! আর দুনিয়ার কারোর কাছে না।
আরশ অসহায় চোখে তাকিয়ে তাকল। নুসরাত কিছুক্ষণ বাহিরে হেঁটে, হাঁটা ধরল বাড়ির ভিতরে। আরশ নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল নুসরাত কে হাঁটতে দেখে নুসরাতের সাথে পা বাড়াল বাড়ির ভিতরে। এক সাথে পা রাখল ড্রয়িং রুমে।
সৈয়দ বাড়ির ভিতরে এক প্রকার হই চই লেগে আছে। শিশু টা কার এই রবে মুখরিত চারপাশ? জায়িন সবাইকে শান্ত হতে বলল।
” আপনারা সবাই চুপ করুন! বলছি কার বাবু এটা?
জায়ানের কথায় সবাই চুপ হলেন।
“আপনারা সবাই বসুন চুপচাপ!
মেহেরুন নেছা, হেলাল সাহেব, লিপি বেগম, নাছির সাহেব, নাজমিন বেগম, শোহেব সাহেব, ঝর্ণা বেগম, সোহেদ সাহেদ, রুহিনি বেগম। অনিকা, ইরহাম, আহান, আরিশা, সবাই বসল।
নুসরাত আর আরশ ভিতরে ঢুকতেই সবাই অবাক হয়ে তাকাল। নাজমিন বেগম বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলেন। গত দশ মাস ধরে নুসরাতের সাথে তার কোনো কথা নেই। কল দিলে কারোর কল ধরে না। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে নাজমিন বেগমের চোখের কোণে পানি জমা হলো।
নুসরাত স্বাভাবিক ভাবে ড্রয়িং রুমে বসা সবাইকে সালাম দিল। নাজমিন বেগম উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখছেন মেয়েটাকে। তার রোগা মেয়েটা এতো স্বাস্থ্যবান হলো কীভাবে? হাতের তালুতে চোখ মুছলেন। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন নুসরাত কে। নুসরাত মায়ের পিঠে হাত রাখল। নাজমিন বেগম হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
অনেক্ক্ষণ কান্না করার পর কান্না থামল নাজমিন বেগমের। আরশ জায়ানের কাছ থেকে গিয়ে আইজানকে কোলে নিয়ে আসলো। সবাই আইজান আর আরশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আরশ গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিল।
” আমি এখন যা বলব, তার জন্য আপনারা সবাই মেন্টালি প্রিপায়ার থাকবেন।
হেলাল সাহেব আরশের কথায় পাত্তা দিলেন না। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ নিয়ে বললেন,
“এতো দিন কল ধরোনি কেন? আর হঠাৎ করে ফ্রান্স গেলে কীভাবে? আর পাসপোর্ট বা কোথায় পেলে তুমি?
নুসরাত ঠোঁট কামড়ে হাসল। আড় চোখে একবার ইরহামের দিকে তাকাল। ইরহাম চুরের মতো মুখ করে বসে আছে! ভয় লাগছে যদি বলে দে সে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে তাহলে তো একটা মার মাটিতে পরবে না। শোহেব তাকে পিটিয়ে তক্তা বানাবেন।
নুসরাত হেসে উড়িয়ে দিল হেলাল সাহেবের কথা। দ্বিতীয় বার কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ দিল না। নাজমিন বেগম সতর্ক দৃষ্টিতে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি যা ভাবছেন তা যদি সত্যি হয় নুসরাতের পিঠে ছাল আজ উঠবে তার হাতে।
আরশ রাগী গলায় বলল,
” আপনারা আমার কথা না শোনে অন্যদিকে মন দিচ্ছেন কেন? আগে শুনুন আমি কি বলতে চাই?
হেলাল সাহেব কর্কশ গলায় বললেন,
“কি, কি বলতে চাও? ভালো কিছু বলবেন না তা আমি জানি! মুখ দিয়ে বের হলে হবে ফালতু কথা আর এসব ফালতু কথা শোনার আমাদের টাইম নেই।
লিপি বেগম স্বামীকে বললেন,
” আহ, আগে শুনুন না কি বলতে চায়? পরে না হয় আপনার কথা বলবেন!
নাছির সাহেব নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠলেন।
“গত এক মাস ধরে কল দিচ্ছি কল ধরছ না কেন? অনেক বড় হয়ে গিয়েছ! বাপের কল ধরছ না।
নুসরাত কথার উত্তর দিল না। মুখে কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়ে রইল। তার কথা বলতে ইচ্ছে হয় না এখন কারোর সাথে! সে একমাত্র তেহবিনের সাথে কথা বলে নয়তো কারোর সাথে কথা বলে না।
আরশের রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল। আইজান চুপচাপ কোলে বসে আছে। নুসরাত ছোটো বেলা যেরকম শান্ত শিষ্ট ছিল ওইরকম শান্ত শিষ্ট হয়েছে আইজান।
আরশ আর কারোর তোয়াক্কা না করে চিৎকার করে বলল,” এই যে, আমার কোলে যে বাচ্চা দেখছ সেটা আমার বাচ্চা!
আরশের কথা বোমের মতো কাজ করল। পুরো বাড়ি এক মুহুর্তে জন্য নিস্তব্ধতে গেড়ে বসল। চার ভাই এক সাথে চিৎকার করে উঠলেন,”কীভাবে?
হেলাল সাহেব, নাছির সাহেব, শোহেব সাহেব, সোহেদ সাহেব চার ভাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে থতমত খেয়ে গেল নিজেদের প্রশ্নে। অতিরিক্ত শক নিতে না পেরে ব্যঙের মতো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন।
মেহেরুন নেছা অতিরিক্ত শক নিতে না পেরে এক জায়গায় ধ্যান মেরে বসে রইলেন। কথা বলার ভাষা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। বাড়ির কর্তীদের মাথায় হাত! চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে। এই বয়সে এসে উনাদের স্বামীরা কীভাবে বাচ্চা হয়েছে এসব জিজ্ঞেস করেছেন!
নুসরাত আইজানকে কোলে নিয়ে চলে গেল সিঁড়ির দিকে। আরশের দিকে সবাই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। আরশ কিছু বলতে না পেরে তব্ধুল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে নিজে জানতো না! আর তার দিকে এরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে উত্তর জানার জন্য। নিজেরই তো কত কি জানা এখনো বাকি?
আরশ বাপ চাচার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার জন্য সিঁড়ি বেয়ে পালালো। অনিকা, আরিশা পিছন থেকে ডেকে উঠল।
আরিশা ডাকল,
“ভাইয়া!
অনিকা অবাক চোখে সিঁড়ির দিকে চেয়ে বলল,
“আরে ভাই, বলে যাও তো কীভাবে কি?
আরশ উত্তর দিল না! এক দৌড়ে নিজের রুমে সামনে এসে দাঁড়াল। ভিতর থেকে নুসরাতের ধীরে ধীরে কথা বলার শব্দ আসছে। আরশ কান পাতল কি কথা বলছে শোনার জন্য?
নুসরাত ভিতর থেকে আরশের ছায়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ বন্ধ করে ফেলল। আরশ কিছু শুনতে না পেয়ে গলা ঝেড়ে রুমে প্রবেশ করল। মা ছেলের সাথে ভাব করতে চাইল দু-জনের একজন ও পাত্তা দিল না আরশকে।
ছয় মাস পরের কথা,
আইজান এখন হামাগুড়ি দেওয়া শিখে গিয়েছে। বসতে ও পারে ! নুসরাত আইজানকে বিছানায় বসিয়ে রাখল। আরশ তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
সামনের সপ্তাহে ইনায়াকে অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসা হবে সৈয়দ বাড়িতে। দুই হাজার চব্বিশ সালে শেষের দিকে বিয়ের কথা থাকলে ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য দুই হাজার পঁচিশ সালে নেওয়া হয়েছিল। দুই হাজার পঁচিশ সাল ও কেমন চোখের পলকে কেটে গেল? সময় বের করতে পারলেন না বিয়ের জন্য। এখন দুই হাজার ছাব্বিশ সালে জুলাই মাসে গিয়ে ঠিক হলো ডেইট।
” আব্বা এখানে বসো, মা ওয়াশরুম থেকে আসছি! নড়া চড়া করো না।
আইজান কি বুঝল আল্লাহ ভালো জানে, মায়ের কথায় মাথা নাড়িয়ে হাসল। নুসরাত আইজানকে বিছানার উপর বসিয়ে ওয়াশরুমে গেল। একবার বারান্দায় তাকিয়ে আরশকে দেখল।
নুসরাত ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে হতে হঠাৎ ধুম করে শব্দ হলো তারপর কান্নার শব্দ আসলো আইজানের। আরশ দৌড়ে রুমে এসে দেখল আইজান মাটিতে পড়ে আছে আর নুসরাত নেই রুমে! ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল ভিতর থেকে লাগানো। রাগে ওয়াশরুমের দরজার মধ্যে লাত্তি মারল। তাকে বলে গেলে কি মুখ পড়ে যেত? আচ্ছা কথা বলে না, ঠিক আছে বাচ্চা একটা ছেলেকে এভাবে বসিয়ে রেখে একা ও চলে যাবে এরকম ওয়াশরুমে! কান্ডজ্ঞান হীনের মতো কাজটা করা কি ঠিক হলো এই ছাগলটার?
আরশ মুখ দিয়ে হিসহিস শব্দ বের করে আইজানকে কোলে তুলে নিল। আইজান গলা ফাটিয়ে কাঁদছে। আরশ পিঠে হাত বুলিয়ে আল্লাহ, আল্লাহ বলতে লাগলো।
নুসরাত ওয়াশরুমের ভিতর থেকে পাগলের মতো বের হয়ে আসলো। হাত বাড়িয়ে আইজান কে নিতে যাবে আরশ দিল না। নুসরাত আরশের শার্ট টেনে ধরে বলল,”তেহবিন কে আমার কাছে দিন?
আরশ রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমার ছেলেকে তুই হাত লাগাবি না! যা সর এখান থেকে!
নুসরাত হাত দিয়ে ধরতে গেল আইজানকে আরশ ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে দিল। নুসরাত কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,” আমার কাছে দিন কান্না করবে না।
“তুই কে তোর কাছে আমার ছেলেকে দিব? সর এখান থেকে! হাত লাগাবি না আমার ছেলেকে! তোর জন্য আমার ছেলেটা বিছানা থেকে পরে এতো জোরে ব্যথা পেল। আমি একা বড় করতে পারব আমার ছেলেকে তোর দরকার নেই আমার ছেলের।
নুসরাত হাত দিয়ে স্পর্শ করতে গেলেই আরশ সরিয়ে দিল হাত।
” এরকম করছেন কেন? আমার কোলে দিলে কান্না করবে না, শান্ত হয়ে যাবে।
“শান্ত হওয়ার দরকার নেই। আমি একা মানুষ করতে পারব। তুই আমার ছেলেকে ফেলে দিয়েছিস এখন সর এখান থেকে। তোকে বলছি না আমার আর আমার ছেলের তোর প্রয়োজন নেই।
রাগ নুসরাতের মাথায় চড়ে বসল। আইজানের দিকে একবার তাকিয়ে সরে আসলো আরশের কাছ থেকে। তার একার সন্তান যখন সামলাক! আমি কে? তেহবিন আমার কেউ না! দেখি কতটুকু সময় সামলায়!
আইজানের কান্না করতে করতে গলা ভেঙে গেল। চোখ নাক লাল হয়ে গিয়েছে। ঠোঁট ফুলিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকল তাকে কোলে নেওয়ার জন্য। নুসরাত পাষাণের মতো চোখ ফিরিয়ে নিল আইজানের কাছ থেকে। নুসরাত কে চোখ ফিরিয়ে নিতে দেখেই ঠোঁট টেনে কেঁদে উঠল আবার।
আরশ আইজানকে নিয়ে বারান্দায় হাঁটল অনেকক্ষণ। লিপি বেগম কান্নার শব্দ শোনে আসলেন নুসরাতের রুমে। নুসরাত কে বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপাতে দেখলের আর আরশকে দেখলেন আইজানকে নিয়ে বারান্দায় হাঁটছে। বাবা আমার বাবা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে আইজানের। কিন্তু আইজান থামছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে লিপি বেগম জিজ্ঞেস করলেন,” কি হয়েছে নুসরাত? আইজান কাঁদছে কেন?
নুসরাত পাষাণের মতো উত্তর দিল।,
“ওর বাপকে জিজ্ঞেস করুন আম্মা! আমি কি জানি?
লিপি বেগম কিছুক্ষণ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় গেলেন। আরশের কাছ থেকে আইজনকে নিজের কোলে নিলেন। লিপি বেগমের কোলে গিয়ে শান্ত হয়ে গেল আইজান। আরশের কোলে এতোক্ষণ ধরে ফুঁপাচ্ছিল। আইজানের পিঠে হাত বুলিয়ে রুম থেকে নিয়ে চলে গেলেন বাহিরে। নুসরাত একবার ও চোখ তুলে তাকাল না।
যেদিক ইচ্ছে নিয়ে যাক! যার সন্তান সে সামলাক! আমাকে স্পর্শ করতে দেয়নি, আমি ও আর স্পর্শ করব না। নুসরাতের কে তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে!
আরশ বারান্দা থেকে তাকিয়ে রইল নুসরাতের দিকে। বিড়বিড় করল,” মায়েরা এতো পাষাণ হয় তোকে না দেখলে জানতে পারতাম না। সামান্য না ছোঁয়ার কথা বলায় তুই বাচ্চাটাকে একবার ও ছুঁবি না নুসরাত। এতো জেদ ভালো নয় নুসরাত!
সন্ধ্যার দিকে নাজমিন বেগম আইজানকে নিয়ে আসলেন। আরশের কোলে দিয়ে বললেন,
“খিদে পেয়েছে! ওর মা কে বল কিছু খাওয়াতে। দুপুরে জাউ বানিয়ে খাইয়েছিলাম আর কিছু মুখে নেয়নি।
দুপুর থেকে একবার ও চোখে দেখা যায়নি আইজানকে। সেই যে লিপি বেগম নিয়ে গিয়েছিলেন তারপর এই কোল থেকে ওই কোল হয়ে এখন আসছে। সচারাচর আইজানকে পাওয়া যায় না। এতো মানুষ বাড়িতে সবাই মিলে আইজানকে সামলে নে। শুধু রাতের বেলা নুসরাত কে ছাড়া থাকতে পারে না তাই রাতে নুসরাতের কাছে থাকে নাহলে রাতে ও দাদি, নানি, চাচার কাছে থাকত।
আরশ উশখুশ করছিল নুসরাত কে ফিডিং করানোর কথা বলতে গিয়ে। তার কেমন লজ্জা লাগছে? নুসরাত আইজানের দিকে একবার ও চোখ তুলে তাকাল না। আইজান বার বার নুসরাতের দিকে তাকিয়ে মায়ের আকর্ষণ নিতে চাইল। নুসরাত আড় চোখে দেখে ও পাত্তা দিল না। মোবাইল দেখার ভান করে পরে রইল বিছানায়।
আরশ নুসরাত কে ডাক দিতে গিয়ে থেমে গেল। দুপুরের বলা সব কথা এক এক করে মনে হয়ে গেল। নিজেকে নিজে গালি দিল। আরে গাঁধা তুই একা কীভাবে বড় করবি? আবেগের বশর্বতী হয়ে যা মুখ দিয়ে আসলো তাই বলে দিলি! গাঁধা কোথাকার?
আরশ আজ ঝুঁকল না। প্রতিবার সে কেন ঝুঁকবে?তার একার ছেলে না নুসরাতের ও!
আইজানকে কোলে নিয়ে বিছানার এক পাশে বসল। ঠোঁট কামড়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সার্চ করল মা ছাড়া বাচ্চাকে কীভাবে ফিডিং করাতে হয়?
ফাইভ মিনিট ক্রাফটের একটা ভিডিও আসলো আরশের সামনে। ভিডিও টা দেখে আরশের নাক কুঁচকে গেল। আইজানকে নিয়ে কিচেনে আনতে গেল ফিডার। সে এই আইডিয়া জীবনে কাজে লাগাবে না! কী অস্বস্তিকর এটা? নুসরাত কে দেখেছিল ফিডারে সেরেলাক্স ঢুকিয়ে আইজানের মুখে দিতে। সে ও ফিডারে সেরেলাক্স ঢুকিয়ে আইজানের মুখে দিল। আইজান সেরেলাক্স একটু মুখে নিয়ে জিহ্বা বের করে থু থু করে ফেলে দিল সব।
আরশ ঠোঁট কামড়ে রুমে গেল। ফাইভ মিনিট ক্রাফটে দেখা টিপস টা কাজে লাগাতে হবে ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আইজানকে বিছানায় শুয়েয়ি রেখে কাবার্ড খুলে একটা নুসরাতের টি-শার্ট বের করল। বুকের কাছে কাচি দিয়ে কেটে ওটা পরে নিল। নুসরাত আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে আরশ কি করছে? আরশ আইজানকে কোলে নিয়ে সোফায় বসল। নুসরাতের টি-শার্টের যেখানে কাচি দিয়ে কেটে ছিল সেখানে ফিডার ঢুকিয়ে নুসরাতের মতো ফিডিং করাতে চেষ্টা করল।
নুসরাত আরশের কান্ড দেখে হা হা করে হেসে উঠল পুরো রুম কাঁপিয়ে। আরশ আর আইজান দু-জন কেঁপে উঠল নুসরাতের হাসির শব্দে। আইজান মাথা উলটে মায়ের দিকে তাকাল। গালে হাত রেখে বলল,
“আঙ্গে!
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৭ (২)
নুসরাত আইজানের দিকে তাকাল একবার। তারপর আবার হাসল। আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে নিজে ও বোকার মতো হাসল। আইজানকে এগিয়ে দিল নুসরাতের দিকে। নুসরাত নিল না! বড় করতে পারবে একা বলেছে তাহলে একদিন রাখুক, খাওয়াক! বড় করুক! একটু বুঝুক মায়েদের কষ্টটা। ধুম করে বলে দিল মুখের উপর তুই আমার ছেলেকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিস! আমি ফেলে দিয়েছি তাহলে এখন আমি কেন নিব? নিজে বড় করুক! একটা শিক্ষা হোক! নুসরাতের এসব দেখতে মজাই লাগছে।
আরশ নুসরাতকে আইজানকে নিতে না দেখে মুখ কালো করে ফেলল। চোখ মুখ অন্ধকার করে ফিডিং করানোর চেষ্টা করতে লাগলো।